প্রথম খণ্ড - মানুষের ঘরবাড়ি
দ্বিতীয় খণ্ড - মৃন্ময়ী
তৃতীয় খণ্ড - অন্নভোগ

অন্নভোগ – ১

এক 

সকালে ঘুম থেকে উঠেই পিলুর বুক ধড়াস করে উঠল। 

দাদা বিছানায় নেই। 

বাড়িতে সবার আগে ওঠেন বাবা। ব্রাহ্ম মুহূর্তে তিনি ঘুম থেকে ওঠেন। অবশ্য পিলুর মনে হয় বাবার বোধ হয় শেষ রাতের দিকে বিছানায় পড়ে থাকতে কষ্ট হয়। রাত থাকতেই বাবা শুয়ে শুয়ে স্তোস্ত্র পাঠ করেন। বেশ জোরে। ভোর রাতের ঘুম কার না প্রিয়! সে যে এত ঘুমাতে পারে, তারও ঘুম কোনো কোনো দিন বাবার স্তোস্ত্র পাঠে ভেঙ্গে যায়। আর আশ্চর্য বাবার সেই স্তোস্ত্র পাঠ শুনতে শুনতে সে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। গীতার সব শ্লোক বাবার মুখস্থ। সে দু-একটা শ্লোকের অর্থও জেনে নিয়েছে। ঠিক জেনে নেওয়া নয়, যেন নানা কাজে কর্মে দাদাকে উপলক্ষ্য করে বলা—বুঝলে কেহ আত্মাকে আশ্চর্যবৎ মনে করে—কেহ বা আশ্চর্যবৎ বলিয়া আত্মাকে বর্ণনা করে, আবার কেহ আশ্চর্য বলিয়া শোনে। কিন্তু ইহার বিষয় শুনেও কেহ ইহাকে বোঝে না। 

দাদাটা তার দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে। বাবাও। কাল যা গেল! দাদার সেই আর্তনাদ সহসা বুকে বেজে উঠল, মা আর কেউ বিশ্বাস না করুক, তুমি বিশ্বাস কর পরীকে আমি মারিনি। মারতে পারি না। 

.

সে দেখল দরজা খোলা। ক্যাচা বাঁশের বেড়ায় খোপ কাটা জানালা। বাবা পূজার ফুল তুলছেন। কাল বাবা দাদার অবিমৃষ্যকারিতায় ক্ষোভে রাতে অন্ন গ্রহণ করেননি। বাবা তাদের এরকমেরই। পুত্র- কন্যা কিংবা যে কেউ কোনো অশান্তির কারণ ঘটলে, বাবা সব সময় সংস্কৃত ঘেঁসা শব্দ ব্যবহার করেন। তার কাছে শুধু না, বাবার কাছে, পরীদির দাদামশাইয়ের কাছে দাদার উন্মাদের মতো আচরণ অবিমৃষ্যকারিতার সামিল মনে হয়েছিল। 

সেই দাদা বিছানায় নেই। 

রাতে মা এত সাদাসাধি করল দাদা কিছুতেই খেল না। দু’জন দু-ঘরে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে, কাউকে টলানো যায়নি। 

বাবার আক্ষেপ, শেষে এই ছিল কপালে! নারী হল গে শক্তিরূপিণী দেবী। সে-ই মানুষের শক্তির উৎস। যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা। তার গায়ে হাত! মাকে ডেকে বলেছিলেন, এ-যে ধনবৌ মহাপাপ। এ পাপের কোনো ক্ষমা নেই। প্রায়শ্চিত্তের বিধান কী আছে জানি না, স্থির করেছি, দু-দিন উপবাস। স্থির করেছি দু-দিন অহোরাত্র চন্ডীপাঠ। 

বাবা এতে হয়তো বুঝেছিলেন দেবী প্রসন্না হবেন। 

বাবা গৃহ দেবতার ফুল তুলছেন। তাঁকে কিছুটা ক্লিষ্ট দেখাচ্ছে। পায়ে খড়ম। খটাখট শব্দ হচ্ছে- সে এ-সব দেখতে দেখতে সহসা ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে গেল। ঘুম থেকে মা উঠেছে—কারণ সে দেখছে, পূজার বাসন নিয়ে পুকুর ঘাটে যাচ্ছে মা। নবমী বুড়ি ওঠেনি। তার দরজা বন্ধ। 

সকাল হয়নি ভাল করে। 

পিলু দৌড়ে গিয়ে মাকে বলল, দাদা কোথায় 

মা বলল, কেন, দাদা কোথায় আমি কী করে জানব। তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস কর! ঘরে নেই!

—না না ঘরে নেই। 

মা কী ভাবল কে জানে, বাসন নামিয়ে নিজেই ছুটে এল। পিলু ততক্ষণে বাবার কাছে হাজির। 

—বাবা, দাদা বিছানায় নেই। 

—উঠে কোথাও গেছে। 

তা যেতেই পারে। চারপাশে এখনও কিছু জঙ্গল আছে-কিংবা দাদা যদি বাদশাহী সড়কে উঠে যায় ঘুরে বেড়াবার জন্য। কারণ কাল রাতে সে বুঝেছে দাদা ঘুমাতে পারছিল না। কেবল ছটফট করছে। বৃষ্টি হয়নি কিছুদিন। শরৎকাল এসে গেছে—মাঠে মাঠে ধানের চাষ। রোয়া ধান বড় হয়ে গেছে—এবং চারপাশে শরতের এক ছবি — যেমন শেফালি গাছটার নিচে সাদা ফুল, স্থলপদ্ম গাছে ফুলের কুঁড়ি, ফুটবে ফুটবে করছে—রাস্তার পাশে আমগাছগুলি ঘন সবুজ। ফড়িং উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। এক ঝাঁক প্রজাপতিও বাড়ির এধার ওধার জঙ্গলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। 

পিলু ছুটে আবার তার ঘরে চলে এল। সে কী করবে ঠিক করতে পারছে না।

একবার খালপাড়ে ছুটে যাচ্ছে, একবার পুলিশ ক্যাম্পের দিকে। আর ডাকছে, দাদারে!

সকাল বেলায় এ-যে কী আতঙ্ক পিলু ভালই জানে। তার ক্ষোভ হচ্ছে বাবার উপর।

কী দরকার ছিল পরীদির দাদুর কাছে যাওয়ার! 

ডাকলেই যেতে হবে। বড়লোকেদের সে দু চোখে দেখতে পারত না। তার বাবা গরীব। বাবা গরীব হলে বাড়ির আর সবাই গরীব থাকে। বাবাকে গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে গেছে। বোঝো এবার সমাদরের ঠ্যালা! 

—সাধন কাকা, দাদাকে দেখেছো। পিলু খুঁজছে। 

সাধন সরকার মিল থেকে ফিরছিল রাতের ডিউটি সেরে। যদি দাদা লাল সড়কের দিকে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায়। রাস্তায় দেখা হয়ে যেতে পারে। 

ইস তোর দাদা এত চাপা স্বভাবের। কাউকে কিছু না বলে আবার হাওয়া! সেই বছর তিন আগেও ঠিক একবার হাওয়া হয়ে গেছিল। বাড়িতে কেন যে মন বসছে না। 

কিন্তু কাল যা গেল—! বাবার যে কী দরকার ছিল বলার, এ-যে মহাপাপ ধনবৌ। এ পাপের কী প্রায়শ্চিত্তের বিধান আমার জানা নেই। 

আর বলি পরীদির দাদুই বা কী বাড়ির কলঙ্ক রটাতে আছে! পরীদি তো হজম করে গেছে।

পিলু বাড়ি ফিরলে দেখল মায়া মা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। এত সকালে, কে আর বলতে চায়, বিলুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

মা বলল, কীরে পেলি? 

—না। 

—কোথায় গেল। বাবা, ঠাকুরঘরে ফুলের সাজি রেখে বের হয়ে কিছু বলতেই ক্ষিপ্ত হয়ে গেল মা। এ-বাড়িতে কেউ থাকবে না বলে দিলাম। কালকে তোমার নাটক করার কী দরকার ছিল। কই পরী তো এসেছিল, বিলুর খোঁজ নিতেই এসেছিল। মারলে, কেউ কাউকে খুঁজতে আসে। বল, চুপ করে থাকলে কেন। রায়বাহাদুর ডেকে বললেন, আর তুমি বিশ্বাস করে ফেললে। অহোরাত্র চন্ডীপাঠই সার তোমার বলে দিলাম। 

বাবা যেন কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন। কী ভেবে বললেন, দেখতো সাইকেলটা আছে কি না। পিলুর মনেই হয়নি, দাদা কোথাও বের হলে সাইকেল ছাড়া বের হয় না! দাদা আছে সাইকেল নেই তা যেমন তার বন্ধুরাও ভাবতে পারে না, বাড়িতেও এটা কেউ অনুমান করতে পারে না। পিলু দেখল সাইকেলটা ঠিকই আছে। ওর কেমন বুক ফেটে কান্না বের হয়ে আসছে। যেন এক্ষুনি বের হয়ে যাওয়া দরকার-লাইনের ধারে দেখে আসা—পরীদিকে দাদা এমনি এমনি মারতে পারে না। 

আর পরীদিও যত দূরেই থাক ঠিক চিনতে পারে, কে ডাকে! বিলুর ছোট ভাইটা। শ্যামলা রঙ, বিলুর মতো গায়ের রঙ পায়নি, তবু ভারি মিষ্টি মুখের ছেলেটি ডাকলে পরী থেমে পড়ত। বাড়ির কুশল নিত। চুপি চুপি বলত, আমি যে তোদের বাড়ি যাই, তোর দাদাকে কিন্তু বলিস না। কেমন লক্ষ্মী ছেলে! 

পিলু সাইকেলে চেপে বসতেই বাবা বললেন, কোথায় যাচ্ছ। রায়বাহাদুরের বাড়িতে খবর দিতে যেও না। দেখ না অপেক্ষা করে। অমন খারাপ কথা কিছু আমি বলিনি। আর আমি অমন কোনও পাপ করিনি, আমার ছেলে কিছু করে বসবে। আর একটু দেখে যাও। 

মন মানে! 

আজকাল শুধু দাদা না, সেও বাবার কথা অগ্রাহ্য করতে শিখেছে। সে সাইকেল চালিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পঞ্চাননতলায় উঠে গেল। রেল বরাবর সে যাচ্ছে। কিন্তু সব স্বাভাবিক। দোকান পাট খুলতে শুরু করেছে। ভাবল এক ফাঁকে বোস্টাল জেলের পাশ দিয়ে শহরে ঢুকে যাবে কি না। পরীদিকে খবর দেবে কি না—কিন্তু বাড়ি ফিরে যদি দেখে দাদা হাজির, দাদা নিজেই হম্বিতম্বি হয়তো করছে— এ কীরে বাবা, এক দন্ড বাড়ি ছিলাম না, আর পিলু দক্ষযজ্ঞ বাধিয়ে দিয়েছে! 

তার ভয় দাদাকে এ-জায়গাটিতেই। 

সে নাকি তার দাদাকে নিয়ে বড় বেশি উচাটনে থাকে। 

দাদাই বলেছিল, একদিন, শোন পিলু। 

পিলু কাছে গেলে বলেছিল, তুই তোর দাদাটাকে কী ভাবিস বলত! 

—কী ভাবি—বারে, তুই আমাকে দাদা বাজে কথা বলবি না বলে দিলাম। খুব খারাপ হবে। আমি কী করেছি! 

—করিসনি। আমি বিলাসপুরে রেলে চাকরি নিয়ে চলে যাচ্ছি, কে বলেছে সবাইকে বলে বেড়াতে। যেখানে যাই এক কথা, কী ঠাকুর, তুমি রেলে চাকরি পেয়ছো! যাক, ঠাকুরমশাইয়ের এবার কষ্ট দূর হবে। কী বিলু, আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছ শুনলাম। রেলে চাকরি হয়েছে। ইস কত বড় কথা। 

আমাদের কলোনির ছেলে রেলে চাকরি পেয়েছে সোজা কথা! 

বিলুর তখন এক প্রশ্ন, কে বলল? 

—পিলু। 

—কে বলল!—তোমার পিতাঠাকুর। 

পিতাঠাকুরটিকে তো আর ধমক দেওয়া যায় না। বিলাসপুরে চলে যাচ্ছে, প্রথমে, এপ্রেন্টিস, পরে জুনিয়ার অফিসার রেলের—কলোনির একজন গরীব বামুনের কাছে এর চেয়ে আর কী বড় খবর থাকতে পারে। 

পিলু রেগে বলেছিল, শুধু আমাকে দুষছিস—বাবা যে মনসা পূজায় বেরিয়ে বাড়ি বাড়ি বলে এল—আসনে বসে ঘন্টা নাড়ার সঙ্গেই কথা শুরু, বুঝলে কালীপদ, বিলু তো রেলে চাকরি নিয়ে চলে যাচ্ছে। আসলে পিলু বুঝত এই বলে দাদা শুধু তাকে না বাবাকেও আভাসে জানিয়ে দিত— 

সে তার চাকরি নিয়ে, তার কৃতিত্ব নিয়ে এমন কী তার কবিতা লেখা নিয়েও কোনও বাড়াবাড়ি পছন্দ করে না। 

দাদা বলেছিল, খুব মজা না, রেলে চাকরি নিয়ে চলে যাব, আর তুমি বাড়ির সব মজা একলা ভোগ করবে। পিলু ভেবে পায় না দাদা রেলের চাকরির নাম শুনলেই ক্ষেপে যেত কেন। 

এটা কী দাদার বনবাস। 

চাকরি নিয়েও দাদা বলেছে, বাবা, রায়বাহাদুর নিশ্চয় পারেন। জমিদারি গেছে ঠিক, তবু যা আছে, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি— মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান, ছেলেরা কৃতী। রেলে বড় ছেলে তাঁর বড় কাজ করে—কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হয় দেখুন! আসলে কী দাদা বাবাকে বলতে চেয়েছিল, পরীদির দাদুর এটা চাল-দাদাকে দূরে পাঠিয়ে দিলে পরীদি একা হয়ে যাবে কিংবা দাদা একা হয়ে যাবে। এটা কী দু’জনকে বিচ্ছিন্ন করে দেবার জন্য পরীদির দাদু বাবার উপর চাল চেলেছে। পিলু একদিন পরীদিকে বলতেই অবাক— কী বললি! বিলু বিলাসপুরে রেলে চাকরি নিচ্ছে! কৈ আমাকে তো ও কিছু বলেনি। 

পিলু পড়েছিল মহাফাঁপরে। পরীদির বাবার দৌলতে দাদার চাকরি। আর পরীদিই জানে না। সে কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিল। 

পরীদির এক কথা, গিয়ে দেখুক না তোর দাদা। কী ভেবেছে। পড়াশোনা বন্ধ করে বাবু চললেন চাকরি করতে। 

পিলু ঠিক বোঝে না, পরীদির দাদুর এই লুকোচুরি খেলা কেন! বাবাকেও বলেছে, দেখবেন যেন দু-কান না হয়। দু-কান হবে না, তা হলেই হয়েছে। আসলে পরীদির দাদু খরবটা গোপন রাখতে চাইছে নাতনির কাছ থেকে। 

দাদাও বোধ হয় গোপনে যাওয়া আসা করছিল—পরীদি আবার টের না পায়। কী যে হয়েছিল ঠিক জানে না। সে যেন কীভাবে একদিন শুনেছিল—মাকে বাবা বলছিলেন, বুঝলে এ-সব সাময়িক দুর্বলতা। 

সে যে কিছু বোঝে না তা নয়। আসলে এতবড় ঘরের মেয়ে পরীদি — ভীমরতি না হলে হয়?

এমন কী দাদার প্রাইমারী স্কুলের চাকরি নিয়েও কম অশান্তি হয়নি পরীদির সঙ্গে দাদার।

রাস্তার ধারে, আমগাছতলায় পরীদি ফুঁসছে। 

—কী বললে, প্রাইমারী স্কুলে? তোমার কী মান অপমান বোধ নেই। পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছ। ‘গরীব বলে কী উচ্চাশা থাকতে নেই। 

দাদারও জেদনা আর পড়ছি না। পড়াটা বিলাসিতা। হাতের কাছে এত বড় সুযোগ ছাড়তে রাজি না। আমার এর চেয়ে বেশি কিছু হবে না পরী। কেন মিছিমিছি জেদ করছ। 

—আর তো দুটো বছর। 

দাদা বলেছিল, তারপর কী হবে। 

—কিছু একটা হবেই। 

দাদাও কম যায় না। বলেছিল, হবে কচু। আমাদের এখন দু-বেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকা দরকার। তোমার স্বপ্ন থাকতে পারে—আমার কোনও স্বপ্ন নেই। 

খটাখটি শেষে এমন যে সে দেখেছে, পরীদি বাড়ি এলেই দাদা সাইকেলে বের হয়ে যেত। কোথায় যেত কে জানে। হয়তো মুকুলদার কাছে। ‘অপরূপা’ কাগজ নিয়ে দাদা মেতে আছে তখন। পরীদির কী আক্ষেপ, মাসিমা বিলু সত্যি আর পড়বে না! পড়া ছেড়ে দেবে। 

মা’রও কম আক্ষেপ নয়, কে বোঝায় বল। যেমন তোমার মেসোমশাই তেমনি তার পুত্র। আমরা সংসারে কে বল! 

পরীদি বাবাকেও অভিযোগ করেছিল, মেসোমশাই বিলু নাকি আর পড়বে না! প্রাইমারী স্কুলে মাস্টারি নিচ্ছে। 

—আগে পাক। কথা হচ্ছে। মুকুলের জামাইবাবুকে চেন! তিনিই চেষ্টা করছেন। হয়ে যাবে মনে হয়। ঠাকুরকে তো তুলসি দিচ্ছি রোজ। দরখাস্ত করেছে। রিফুজিদের জন্য কী নাকি স্পেশাল ক্যাডার হচ্ছে! তাতেই ঢুকিয়ে দেবে। ঠাকুরের কী ইচ্ছে তা জানব কী করে! 

—তাই বলে পড়া ছেড়ে দেবে! পরীদি কেমন হতবাক হয়ে গেছিল বাবার কথায়। 

বাবা বলেছিলেন, মানু তো বলল, বিলুর মেধা কম। বি-এ, এম-এ পড়ে কিছু হবে না। চাকরি পেলে যেন না ছাড়ে। দিনকাল বড় খারাপ। 

তবে পরীদিকে দাদা কেন যে মারল—এই রহস্যটা সে বুঝতে পারছে না। 

সাইকেলে লাইনের ধারে চক্কর মেরে বাড়ি ফিরে এল না অন্তত আর যাই করুক দাদা ক্ষোভে অভিমানে জীবন নাশ করেনি। বাড়িতে ফিরতেই সে দেখল, বাবা পঞ্জিকা খুঁজছেন। 

তা হলে কী দাদা ফিরে এসেছে। সব কেমন স্বাভাবিক। না হলে বাবা পঞ্জিকা খুঁজতে যাবেন কেন! মা কোথায়! সে ফিরে আসতেই বাবা বললেন, বিলু রাতের ট্রেনে কোথায় চলে গেছে। তোমাকে একটা চিঠি লিখে রেখে গেছে। বলেই তার দিকে বাবা একটা ভাঁজ করা কাগজ এগিয়ে দেবার সময় বললেন, যাক বাবুর যে দয়া করে এবারে কর্তব্যজ্ঞান বেড়েছে। সেবারে উধাও হলেন, ফিরে এলেন তিন মাস বাদে। এবারে কতদিন পর ফেরে দেখ। 

পিলু জানে বাবা তাদের এরকমেরই। সে তাড়াতাড়ি চিঠিটা হাত বাড়িয়ে নিতে গেলে বাবা বললেন, বয়সের দোষ। এ নিয়ে মন খারাপ করবে না। তোমার মা কান্নাকাটি করছিলেন, সুদামের বৌ তাকে নিয়ে গেছে। তোমার মা তো বোঝে না, ছেলে আর তার নেই। তার মায়া মমতা অন্য জায়গায় শেকড় চালাবার চেষ্টা করছে। 

সাইকেলটা তুলে রাখল পিলু। দাদা তাকে কী খবর দিয়ে গেল! বাবা কী চিঠি পড়েই জানতে পেরেছে! সে উঠোনে নেমে গেল। চিঠি লিখে রেখে গেছে দাদা। আর কাউকে না, শুধু তাকে। দাদার কথা ভেবে তার চোখ ছল ছল করছিল। সে চিঠিটা পড়তেও সাহস পাচ্ছিল না। যেন পড়লেই সে দাদার দুঃখটা টের পাবে—তারপর সবার সামনেই কেঁদে ফেলবে। 

সে জানে, বাবা এখন দাদার যাত্রার সময় নিয়ে ব্যস্ত। রাতের কোন সময়ে দাদা গেছে—যাত্রা শুভ, না নাস্তি এটুকু জানতে পারলেই বাবা নিশ্চিন্ত হবেন। এত বেশি নিশ্চিন্ত যে মনেই হবে না, বাড়ির বড় পুত্রটি নিখোঁজ। মেজ পুত্র লায়েক নয়—লায়েক হলে সেও যে নিখোঁজ হয়ে যাবে, কেউ ঘরে থাকে না। মানুষ অহরহ নিখোঁজ হচ্ছে, নিজের কাছ থেকেও। বাবার এ-সব আপ্তবাক্য তাদের জানা আছে বলে, পিলু ঘরে ঢুকে তক্তপোষে বসল। দাদা প্রথমে বাবাকে লিখেছে। 

‘বাবা, আপনার কু-পুত্রের মুখ দর্শন করে কষ্ট পান, সেটা আর চাই না। আমি চলে যাচ্ছি। ভাল হয়ে ফিরব। জানবেন এটা আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত। আপনার কোনো পাপ নেই বাবা।’ 

তারপরই দাদা তাকে লিখেছে। 

‘সকালে উঠেই চেঁচামেচি শুরু করিস না। দাদা নেই, দাদা কোথায়। তুই তো আমাকে নিয়ে জলে পড়ে গেছিস বুঝি। দাদা ফিরবে বলে তুই স্টেশনে গিয়েও বসে থাকিস না।’ 

এটা ঠিক, সেবারে পিলু দাদা ফিরবে বলে সড়কে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। কখনও হেঁটে হেঁটে স্টেশনে। বাড়ি ফিরলে বাবা রেগে বলতেন, বড়টা নিখোঁজ তুমিও সারাদিন বাড়ির বাইরে। ভেবেছ কী! রোজ এমন বললে, সে একদিন কেঁদে ফেলেছিল, দাদা আসছে না কেন। কতদিন হয়ে গেল! তুমি যে বললে আসবে। সময় হলেই ফিরে আসবে। আমি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি দাদা যদি ফেরে। 

তারপর দাদা লিখেছে—’তোর দাদা একদিন না একদিন ঠিক ফিরবে। মা-বাবাকে দেখিস। স্কুল কামাই করিস না। পরীর সঙ্গে দেখা হলে বলিস, আমার জন্য সে তার প্রিয় শহর ছেড়ে যেন চলে না যায়। আমিই চলে গেলাম।’ 

—আবার পরী এসেছিল। 

বাবা দাদার ক্ষোভের কারণ বুঝতে পারতেন না। বিরক্ত হয়ে বলতেন, তোমার এত রাগ কেন বুঝি না। মৃন্ময়ী এলে ক্ষেপে যাও কেন বুঝি না। 

দাদা কী ভেবে যে বলত, জনসংযোগ করছে। পার্টির হয়ে জনসংযোগ! এস ডি ও সাবের গাড়িতে এসে নেমেছে। বাড়ির কুল, আচার খেয়ে কত ভাল মেয়ে দেখিয়েছে—তারপরই ক্ষিপ্ত হয়ে দাদা একদিন চিৎকার করে বলেছিল, আমরা কত গরীব দেখতে আসে আপনি বোঝেন না। পরী ভাল মেয়ে! এস ডি ও পরেশচন্দ্র নামিয়ে দিয়ে গেছে তা জানেন। আমাদের দারিদ্র্য দেখে সে মজা পায়। 

—তুমি কী বলছ বিশ্ব! 

বাবা ক্ষোভ থেকে কথা বললে, সেই সাধু বাক্য। বিলু তখন বিশ্ব হয়ে যায়। 

—আমি ঠিকই বলছি বাবা। 

পিলু চিঠিটা পড়তে গিয়ে শেষ করতে পারছে না। দাদার ভেতরে আগুন জ্বলছে। কে যে জ্বালিয়ে দিল। তার চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে। দাদা যেন এক বিন্দুও মিছে অভিযোগ করেনি। পরীদির দাদু রেলের চাকরির লোভ দেখিয়ে দু’জনকে আলাদা করে দিতে চেয়েছিল। কী ভাবে যে শেষে দাদার রেলের চাকরিটা ভেস্তে গেল সে জানে না। দাদাকে বিলাসপুরে শেষ পর্যন্ত কেন পাঠানো গেল না, তাও সে জানে না। তবে পরীদিকে বিলাসপুরে তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বাবা অহোরাত্র চন্ডীপাঠের সঙ্গে মাকে এ-খবরটাও দিয়েছিলেন। 

কেন পরীদিকে বিলাসপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে টের পেয়ে দাদা নিজেই উধাও হয়ে গেল।

দাদা লিখেছে, ‘আমিই চলে গেলাম। পরীকে বলিস সে চলে গেলে, কখনও যদি ফিরে আসি, শহরটাকে আমি আর ঠিক ঠিক চিনতে পারব না। শহরটাকে আগের মতো আর ভালবাসতে পারব না। ইতি তোর দাদা।’ 

পিলু চিঠিটা ভাঁজ করে রাখল। 

কী করবে এখন কিছু বুঝতে পারছে না। পরীদিকে খবরটা দেওয়া দরকার। 

কারণ সব চেয়ে যেন দাদার খবর রাখার অধিকার পরীদিরই বেশি। 

আজ সে টের পেল, পরীদি দাদার ভবিষ্যত নিয়ে কেন এত বেশি উতলা ছিল। দাদা প্রাইমারী স্কুলের মাস্টারি নিলে কেন এত ক্ষেপে গিয়েছিল। 

সে চিঠিটা হারিয়ে না যায়, কারণ তার বাবা হয়তো বলবেন, কী পড়া হল! চিঠিটা দাও। রেখে দি। তারপর কোথায় রেখে দেবেন কে জানে। চিঠিটা পরীদিকে না দেখানো পর্যন্ত তার শান্তি হচ্ছে না। 

তখনই সে শুনতে পেল, বাবা বারান্দায় বসে কাকে যেন বলছেন, যাত্রা শুভ। অমঙ্গলের কোনো আশংকাই নেই। 

পিলু জানে, হয়ে গেল বাবার। রাতের ট্রেনেই গেছে—বাবার এমনই বদ্ধমুল ধারণা। বাড়ি ফিরে হাতে চিঠিটা পাবার পর মনে হয়েছে, দাদা কোথাও চলে গেছে—কিন্তু কখন গেছে, কোনদিকে গেছে, যেতে হলে সঙ্গে কিছু নিতে হয়, দাদা তা নিয়েছে কি না, টাকা পয়সা কার কাছ থেকে নিল— এসব অনেক প্রশ্ন তার মাথায় এল। 

সে বের হয়ে বড় ঘরের বারান্দায় উঠে গেল। বাবার সামনে রাজেন কর্মকার বসে। কোনো পূজাপাঠ থাকতে পারে। সকাল বেলায় বাবার কাজই হাত মুখ ধুয়ে পূজার ফুল তুলে, বারান্দার জলচৌকিতে বসে এক ছিলিম তামাক টানা, নয় পঞ্জিকা নিয়ে বসা। কী খাওয়া যাবে না যাবে তার এক প্রস্ত নির্দেশ রান্নঘরের প্রতি। কখনও মনে হয় পিলুর আসলে বাবার এটা দোকান সাজিয়ে বসা। 

জঙ্গল থেকে নবমী বুড়িকে বাড়ি তুলে আনার পর বাড়তি কিছু কাজ জমে গেছে তাঁর হাতে। ইটখোলায় ঘুরে এসেছেন-কিন্তু নিবারণ দাস বলেছে—আলের মাটি থেকে ভাল ইঁট হতে পারে। বাড়িতেই ইট পুড়িয়ে নিলে অর্ধেক দামে হয়ে যাবে। ইটের কারিগরদের সঙ্গেও কথা বলতে হয় সকালের দিকটায়। কাঠ কিনবেন, না নিজের লাগানো গাছ কেটে করবেন এই নিয়ে দ্বিধায় আছেন। শত হলেও হাতে করে গাছগুলিকে এত বড় করে তুলেছেন। এক একটা গাছ লেগে যেতেই কম সময় লাগেনি।

কাটলে কোন কোন গাছ কাটা হবে এই নিয়ে মায়ের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করার সময় বলেছেন, মায়া হয় কাটতে। গাছের ঠিকমতো যৌবনই এল না, কেটে ফেলব। তবে গৃহ দেবতার পাকা মন্দির নির্মাণ—বুঝলে না ধনবৌ তার ইট কাটা হচ্ছে, তার জন্য কাঠ লাগে—আর যদি গাছগুলো ঠাকুরের কাজে লেগে যায়—সেও কম বড় সৌভাগ্য না! 

পিলু জানে, তার মা আর আগের মতো বাবাকে হেনস্থা করে না। সবই ভাগ্য। ভাগ্য যে এখন প্রসন্ন নবমী বুড়িকে তুলে আনায় মা এটা আরও বেশি টের পেয়েছেন। শেষ দিকটায় বুড়িকে সে বাড়ি থেকে দু-বেলা খাবারও দিয়ে আসত। সেই বুড়ি যে এত গুপ্তধনের মালিক, কে জানত! তা না হলে ঠাকুরের নামে এক লপ্তে এত ধানিজমিও কেনা যেত না। গৃহ দেবতার জন্য পাকা কোঠার কথাও ভাবা যেত না। পক্ষকালের মধ্যে তার দাদারও মাথায় আসত না প্রাইমারী ইস্কুলের চাকরি না করলেও বাবার ভালই চলে যাবে। বাবাকে আর দাদার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হবে না। 

এত সব ভেবেই হয়তো দাদা শেষ পর্যন্ত উধাও হয়ে গেল। কিংবা বাবার যে চোটপাট দাদার উপর তাও যেন সেই এক মনোবাসনা থেকে, ভেব না, তুমি না থাকলে আমাদের কোনো গতি নেই। তোমার এত আস্পর্ধা, তুমি শেষে মৃন্ময়ীর গায়ে হাত তুললে! 

বাবা দাদার সম্পর্কে এতটা নির্বিকার ভেবে তার খারাপ লাগছিল। বাবা রাজেন কর্মকারের সঙ্গে দুর্গাষ্টমী ব্রত নিয়ে কথা বলছেন। তালিকা করে দিচ্ছেন, কী কী লাগবে। এখন কিছু বললেই বাবার সেই এক কথা—ঈশ্বর নিয়ে কথা হচ্ছে। সারাটা দিন তো বাড়িই থাক না। তোমার সব জানার সময় এখন হল। 

সে মায়াকে খুঁজল। মায়াও বাড়ি নেই। সে বুঝতে পারল মায়া মা’র সঙ্গেই গেছে। নবমী বুড়ি লাঠি ভর দিয়ে এসে সামনে বসলে বাবা বললেন, ইষ্টনাম জপ করেছ তো। না ভুলে যাচ্ছ। 

—ভুল হইয়ে যাচ্ছে। বড় দাদাঠাকুর নাকি কোথায় চইলে গেছে! 

নবমী বুড়ি কানে কম শোনে। সকাল বেলায় উঠে তার কাজ লাঠি ভর দিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ানো। পাঁচ বিঘে জমির উপর এত সব গাছপালা যে নবমীর মাঝে মাঝে নাকি মনে হয় সে তার পূর্বেকার বনভূমিতে বসবাস করছে। বাবার নির্দেশেই নবমীকে সকালে হেঁটে বেড়াতে হয়। শত হলেও বাবাঠাকুরের বিধান — প্রকৃতির মধ্যে হেঁটে বেড়াও, বসে থেক না। বসে থাকলে শরীরে ঘুণ ধরে। যাতে শরীরে ঘুণ না ধরে তার জন্যই সে হাঁটে। কোনো গাছের নিচে বসে থাকে। পাখ-পাখালি দেখে। 

আবার হাঁটতে থাকে। কখনও বাঁশ ঝাড়ের ভিতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফেরে। সে ঘুম থেকে ওঠে সবার আগে। সে কী করে জানবে, এত বড় একটা দুঃসংবাদের কথা। কার কাছে শুনে ধেয়ে এসে যেই দেখেছে, বাবাঠাকুর বড়ই নিস্পৃহ-তখনই না বলে পারেনি, গেল কোথায় বড় দাদাঠাকুর। 

—গেছে কোথাও। সময় হলেই ফিরবে। 

পিলু আর পারল না। বলল, দাদা কোথায় গেছে তুমি জানো! 

বাবা খুবই গম্ভীর গলায় বললেন, আরবারে কোথায় গেছিল দাদা তোমারা জানতে!

সে তবু বলল, তুমি যে বললে যাত্রা শুভ। 

—শুভই তো। পাঁজি তো তাই বলে। 

—দাদা কোনদিকে গেছে জানলে কী করে। 

বাবা এবার কী মনে করে উঠে দাঁড়ালেন। রাজেন কর্মকারের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার মা-র কোমরে ব্যথা, উঠতে বসতে কষ্ট। এটা নিয়ে যাও। বলে বাবা ঘর থেকে কলাপাতায় মোড়া কী বের করে এনে কর্মকারের হাতে দিলেন। ঘুনসিতে পরিয়ে দিতে বল। দুর্গাষ্টমীর শেষে যেন পরেন। নির্জলা উপবাসে থাকে যেন। 

বাবা এবার তার দিকে তাকিয়ে বললেন, দাদার এখন তোমার অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু। বুঝলে। এই যজ্ঞই মানুষকে সারাজীবন তাড়া করে। তিনি এখন ঘোড়ায় চড়ে ছুটছেন। রাজ্য জয়ে বের হয়েছেন। তাকে কে নিরস্ত্র করবে। বড় হলে সবারই শুরু হয়। শেষ হয়, তোমার বাবা, নয় এই নবমী বুড়িকে দিয়ে। বুঝলে কিছু! 

সে সত্যি কিছু বুঝতে পারছে না। 

দাদার ন’টি বিষয়ে পাশ কেন কথাটা উঠল পিলু তাও বোঝে। সে এবার পরীক্ষায় পাশ করলে ক্লাশ এইটে উঠবে। সেও আর ছোটটি নেই। সে বোঝে দাদার শেষ বিষয়ে পাশটার এখন কী পরিণতি। অন্তত বাবা তাকে কী অর্থে কথাটা বলতে চাইলেন সে বোঝে 

—তোমার দাদা আর শুধু তোমাদের নেই। 

ভাবতেই পিলুর মনটা দমে গেল। 

—আমরা তার কেউ না! আমাদের কষ্ট বুঝলি না! বাবা মা-র কষ্ট বুঝলি না! অভিমানে দেশান্তরী হলি। বাবা কী খারাপ কথা বলেছে বল। পরীদির দাদু আসলে ডেকে নিয়ে বলতে গেলে বাবাকে অপমানই করেছে। যে-বাবা পুত্র গৌরবে এতদিন এতটা দুঃখ কষ্ট সয়ে থিতু হলেন, সেই বাবাকে ডেকে পুত্রের অপমান গাইলে কোন বাবার মনে না লাগে তুই বল। তোর জন্য পরীদিকে শেষে বিলাসপুরে পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে! বাবা এমন অভিযোগ শুনলে মাথা কী করে ঠিক রাখতে পারেন বল। ক্ষোভে না-হয় বলেছেনই।—তোমার জন্য শেষে অন্নপূর্ণাকে বনবাসে যেতে হচ্ছে? আর তাতেই তোর এত অপমান। চিঠি রেখে গেলি, পরীদি যেন শহর ছেড়ে না যায়। তুই নিজেই চলে যাচ্ছিস! 

পিলু বাবার দিকে তাকিয়ে আর কোনো কথা বলতে সাহস পেল না। সংসারের আর দশটা কাজে বাবা ক’দিন নিজেকে খুবই যে ব্যস্ত রাখবেন তাও সে বোঝে। আসলে পুত্রের এই নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টা তাঁকে ভিতরে যতই কষ্টে ফেলে দিক, উপরে তিনি সব সময় স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবেন। সংসার ধর্ম বাবার কাছে এ-রকমেরই। কখন কী ঘটবে কেউ বলতে পারে না। আগে থেকেই তার জন্য প্রস্তুত থাকা ভাল। বাবার এই স্বভাবই তাঁকে যে কিছুটা নির্বিকার করে দেয় পিলু তা ভালই জানে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *