বারো
ঘুরে দাঁড়াল মাসুদ রানা। অদ্ভুতরকম ধীরস্থির দেখাচ্ছে ওকে। ‘লোকাল পুলিস স্টেশনে চলো।’ ধারেকাছের যে কোন এয়ারবেস থেকে হেলিকপ্টার আনিয়ে ওকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই।’
বেরিয়ে এল ওরা। পাঁচ মিনিটের পথ পেরিয়ে গ্রোভ লেনের পুলিস স্টেশনে পৌছল। ফ্রন্ট অফিসে একজন ডিউটি কনস্টেবলকে পাওয়া গেল। ভেতরে আছে আরেক সার্জেন্ট, চা পানে ব্যস্ত। নিজের পরিচয় এবং আগমনের কারণ ব্যাখ্যা করল রানা ফ্রন্ট অফিসে। সব শুনে ঘাবড়ে গেল কনস্টেবল। ছুটে গিয়ে সার্জেন্টকে ডেকে নিয়ে এল। এই ফাঁকে রিসিভার তুলে ডায়াল করতে শুরু করে দিয়েছে রানা। কথা বলতে চায় বিএসএস চীফের সঙ্গে।
গিলটি মিয়া ভেতরে ঢোকেনি। দাঁড়িয়ে রয়েছে বাইরে। দুনিয়ার সব দেশের পুলিসের ওপরই তার সমান বিতৃষ্ণা। এই জাতটা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকাই ভাল মনে করে সে।
সার্জেন্টকে এক পাশে টেনে নিয়ে গেল হ্যারি নিগেল, নতুন করে ব্যাখ্যা করতে লাগল ঘটনা। হাতে রানার তোলা তাতায়েভের পোস্ট কার্ড সাইজের একটা ছবি রয়েছে, ওটা দেখাল সে তাকে। সেই সঙ্গে মুখ চলছে দ্রুত। এই সময় থেটফোর্ড মোটর সাইকেল পেট্রোল টীমের এক কনস্টেবল স্টেশনের সামনে তার মোটর সাইকেল দাঁড় করিয়ে ভেতরে ঢুকল। ঘরের মধ্যে অচেনা মুখগুলো দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল লোকটা।
পাশ থেকে মাসুদ রানাকে দেখল সে কয়েক মুহূর্ত। তারপর আলাপরত নিগেল আর সার্জেন্টের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ শুনেই বুঝে লি লোকটা কি নিয়ে আলোচনা চলছে ওদের। সার্জেন্টের হাতে রয়েছে এখন তাতায়েভের ছবি। ওটায় চোখ বোলাল কনস্টেবল। পরক্ষণেই চরম বিস্ময় ফুটে উঠতে দেখা গেল তার চোখেমুখে।
‘আপনারা এই ভদ্রলোককে খুঁজছেন?’ নিজেকে সামলাতে না পেরে কথার মাঝে কথা বলে উঠল কনস্টেবল।
‘হ্যাঁ,’ কথা থামিয়ে অবাক হয়ে ফিরে তাকাল নিগেল। ‘কেন?’
‘লোকটিকে একটু আগেই দেখেছি আমি।’
‘কোথায়!’
‘ইক্সওয়ার্থ থর্পের সামান্য ওপাশে। আটকে গেছেন গাড়ি নিয়ে। মিছিলের জন্যে এগোতে পারছেন না।
‘কিসের মিছিল?’ জানতে চাইল রানা। কথা শেষ করে উঠে এসেছেও।
‘সেকি!’ অবাক হলো কনস্টেবল। ‘আজ যে লেবার পার্টির অ্যান্টি নিউক্লিয়ার মিছিল হওয়ার কথা, জানেন না?’
‘আপনি শিওর যে একেই দেখেছেন?’
‘অফকোর্স, শিওর! আমি নিজেই তো থামিয়েছি তাকে। মিছিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত নড়ার উপায় নেই কোন গাড়ির। আর যে মিছিল, বাপরে! কয় ঘণ্টা লাগবে শেষ হতে কে জানে!’
দ্বিগুণ হয়েছে বেড়ে মিছিলের আকার। সহস্র কামানের মত গর্জন করছে জনতা অনবরত। সামনের লিটল ফেকেনহ্যাম নামে ছোট একটা গ্রাম তাদের গন্তব্য। ওখানকার হনিংটন ইঙ্গ-মার্কিন এয়ার ফোর্স বেজ ঘেরাও করা হবে। ব্যানারে ব্যানারে ছেয়ে আছে মিছিলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত। সবগুলোর বক্তব্য প্রায় একই—ইয়াঙ্কস আউট!
কয়েক বছর আগে হনিংটন আরএএফ বেজের কোন গুরুত্ব ছিল না। হাতে গোনা কয়েকটা টর্নেডো স্ট্রাইক বম্বার থাকত তখন এখানে। গুরুত্ব পাওয়ার মত তেমন কিছু নয়। কিন্তু হঠাৎ করেই গুরুত্ব বেড়ে গেছে এই ঘাঁটির, সারা দেশের নজর পড়ে গেছে ওর ওপর, যেদিন ইউএস এয়ার ফোর্সের গ্যালাক্সি ট্র্যান্সপোর্ট বিমান ক্রুজ মিজাইল নিয়ে অবতরণ করে ওই ঘাঁটিতে।
টর্নেডো বম্বার পরে আস্তে আস্তে সরে গেছে এখান থেকে স্কটল্যাণ্ডে। তার স্থান দখল করেছে মার্কিন এফ-একশো এগারো স্ট্রাইকার। সারাদিন এই এলাকা সরগরম থাকে ওদের গগনবিদারী হুঙ্কারে। কিছুদিন পরই শুরু হয়ে যায় স্থানীয়দের প্রতিবাদ বিক্ষোভ। এসব আগেও অনেক হয়েছে। কিন্তু আজকের মিছিল যেন বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। কোলের শিশু নিয়ে গৃহিণীরা থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ আছে ওতে। প্রেস, টিভি ক্যামেরার মিছিলটি সবার আগে। তাল রাখতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা ক্যামেরাম্যানদের। তবে কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা নেই। কারও মধ্যে জনসাধারণের সম্পত্তি ধ্বংস করার আগ্রহ দেখা গেল না। এত বড় এক মিছিলকে পাহারা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছে পুলিসের দু’জন মাত্র মোটরসাইকেল আউটরাইডার।
থেটফোর্ড থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক গতিতে ইপসউইচগামী বড় রাস্তায় উঠে এল ভ্যালেরি তাতায়েভ। ক্লান্ত সে। বাসায় ফিরে ঘুম দেবে টানা। ইউসটন হল বর্ডার পার হয়ে সাফোকে ঢুকল মেজর। মাইলখানেক এগোতে পথের পাশে দাঁড়ানো পুলিসের এক মোটরসাইকেল আউটরাইডারের ওপর চোখ পড়ল তার। পথের পাশে বাইক স্ট্যাণ্ডে দাঁড় করিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে লোকটা।
শক্ত হয়ে গেল তাতায়েভ। কি ব্যাপার! এ পথে বহুবার আশা-যাওয়া করেছে সে, কখনও কোন রাইডারকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেনি। কেন দাঁড়িয়ে আছে লোকটা? ওকে থামাবার জন্যে? কিন্তু না। ওকে দেখল কেবল লোকটা, থেমে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিল না। সাঁ করে জায়গাটা পেরিয়ে এল তাতায়েভ। এক মাইল পেরিয়ে লিটল ফেকেনহ্যাম পৌঁছল!
গ্রামের উত্তর প্রান্তে দুটো সাদা রঙের রোভার পুলিস কার পার্ক করা আছে পথের পাশে। কাছেই জটলা করছে একদল সিনিয়র অফিসার। গাড়ির শব্দে মুখ তুলে চাইল লোকগুলো। এখানেও বাধা দেয়া হলো না তাতায়েভকে। ব্যাপারটা কি? ভাবছে সে, এত পুলিস কেন রাস্তায়? ফেকেনহ্যাম ছাড়িয়ে এসে ইক্সওয়ার্থ থর্প পৌঁছল সে, গির্জা ডানে রেখে এগোচ্ছে, আচমকা কলজে লাফিয়ে উঠল তার।
পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পুলিসের এক কনস্টেবল, তাকে থামতেবলছে। গতি কমাতে শুরু করল তাতায়েভ। করণীয় ঠিক করে ফেলেছে মুহূর্তে। ডোর প্যানেলের নিচের দিকের পকেটে ঢুকিয়ে দিল সে ডান হাত। ভেতরে উলের সোয়েটারে মোড়া রয়েছে তার ফিনিশ সাকো। ধারেকাছে আর কেউ নেই। এই সুযোগে লোকটাকে শেষ করে পালাবে সে।
এটা যে একটা ফাঁদ, তাতে কোন সন্দেহ নেই ভ্যালেরি তাতায়েভের। কিন্তু তাহলে আর লোকজন কোথায়? ভাবতে ভাবতে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ফেলল সে, টান টান হয়ে আছে স্নায়ু।
‘সমস্যাটা কি, অফিসার?’
‘সামনের রাস্তা বন্ধ, স্যার। যেতে পারবেন না। দেরি হবে।’
‘কেন? বন্ধ কেন?’
‘বড় একটা মিছিল আসছে এদিকে। ওটা ক্লিয়ার না হওয়া পর্যন্ত…ওই চার্চের সামনে গাড়ি পার্ক করতে হবে আপনাকে, স্যার। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ঝামেলা বিদেয় হবে আশা করি।
ব্যাটা চালাকি করছে না তো? ভাবতে ভাবতে ধীরগতিতে গজ পঞ্চাশেক এগোল ভ্যালেরি তাতায়েভ। গির্জার সামনের খোলা জায়গায় সেলুন দাঁড় করাল। তারপর লুকিং গ্লাসের ভেতর দিয়ে পিছনে তাকাল। না, ওর দিকে কোন খেয়াল নেই পুলিসটির। আরেকটা গাড়ির গতিরোধ করতে ব্যস্ত সে। দু’মিনিট পর ওটাও দাঁড়াল এসে তাতায়েভের পিছনে। হুঁম! ভাবল সে, তার মানে সত্যি কথাই বলেছে লোকটা।
কিন্তু ঝামেলা তাতে কমল না তার। ভেবেছিল তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে বিশ্রাম নেবে, হলো না তা। গ্লাসে চোখ রেখে বসে থাকল তাতায়েভ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দশ বারোটা গাড়ি জমে গেল তার পিছনে। ওদিকে আরেক আউট রাইডার এসে পৌঁছল। প্রথমজনকে কি যেন বলল সে। দু’জনে হাসল খানিক। তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে থেটফোর্ডের দিকে ফিরে গেলু প্রথমজন। পরেরজন রইল তার জায়গায়। শিফট্ হলো বোধহয়, ভাবল তাতায়েভ।
পাক খেয়ে আরও খানিকটা ওপরে উঠল ‘কপ্টারটা। পাইলট এবং ওপাশের জানালা ঘেঁষে বসা মাসুদ রানার মাঝখানে বসে আছে কনস্টেবল। সবার নজর নিচের জনস্রোতের ওপর। অবাক হলো মাসুদ রানা। এতবড় মিছিল আগে কখনও দেখেছে বলে মনে পড়ল না।
‘ওই যে সেই গির্জা,’ হাত তুলে দেখাতে যাচ্ছিল কনস্টেবল, ধরে ফেলল রানা হাতটা।
‘হাত দেখাতে হবে না। মুখে বলুন।’
‘উই যে, একদম আগের সেলুনটা, ওটাই।’
ভাল করে তাকাল মাসুদ রানা। মিছিলের প্রায় সিকি অংশ ততক্ষণে গির্জার এদিকে পৌঁছে গেছে। ওটার আকার দেখে খানিক সাহস এল বুকে ওর, কম করেও আরও এক ঘণ্টা আটকে থাকতে হবে লোকটাকে। কাছে চলে এসেছে গির্জা। এবার তাকে দেখতে পেল রানা। গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জনতার দিকে চেয়ে আছে।
হ্যাঁ, এই-ই সেই। বিনকিউলারে মুখটা একবার দেখে নিয়েই ঝট্ করে ওটা নামিয়ে নিল মাসুদ রানা। এক পলকেই তাকে চিনতে পেরেছে ও। ইশারায় পাইলটকে ‘কপ্টার ঘোরাতে বলল রানা। ফিরে চলল ওটা থেটফোর্ড।
‘ইপসউইচ পুলিসকে কি জানাব, স্যার?’ প্রশ্ন করল সার্জেন্ট। মাসুদ রানার ওপর রীতিমত শ্রদ্ধা জন্মে গেছে তার। এখানে ওখানে ফোন করে যে হুলস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে দিয়েছে লোকটা, রীতিমত অবিশ্বাস্য।
নিমগ্ন হয়ে ম্যাপ দেখছে মাসুদ রানা। আকাশে কয়েক চক্কর দিয়েএইমাত্র ফিরে এসেছে ও। ইক্সওয়ার্থে যখন আটকেছে লোকটা, তখন ছাড়া পাওয়ার পর হয় স্টোমার্কেট অথবা ইপসউইচ যাবে সে। তবে যেদিকেই যাক, রাস্তা একটাই পরেরটায় যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, ভাবল রানা। কারণ জায়গাটা একজন ইললিগ্যালের গা ঢাকা দেয়ার জন্যে আদর্শ স্থান। ‘বলবেন, স্টোমার্কেটে আমার জন্যে একটা গাড়ি আর দুটো মোটর সাইকেল রেডি রাখতে। এখনই রওনা হব আমরা।’
রানার বক্তব্য দ্রুত রিলে করল সার্জেন্ট টেলিফোনে। বিএসএস চীফের সরাসরি নির্দেশ পেয়েছে সে মাসুদ রানাকে যতরকম সহায়তা প্রয়োজন, করতে। কাজেই রানা যা বলছে, বিনা প্রশ্নে তাই করে যাচ্ছে সে। একই নির্দেশ ইপসউইচ পুলিসও পেয়েছে লণ্ডন থেকে। সার্জেন্টকে জানাল তারা, এখনই পালন করতে যাচ্ছে তারা মাসুদ রানার নির্দেশ।
রিসিভার রেখে বিনয়ের সঙ্গে রানার আর কিছু প্রয়োজন কি না, জানতে চাইল সার্জেন্ট। ‘চেস্টারফিল্ডের পুলিস সুপার স্যাম রসটনের সঙ্গে কথা বলতে চাই,’ বলল রানা।
দুই মিনিটে জানা হয়ে গেল যা জানতে চেয়েছিল ও। হ্যাঁ, জানালেন উচ্ছ্বসিত সুপার, আপনার ধারণাই ঠিক। ফ্ল্যানারির ঠিকানাটা ব্লাইণ্ড। ওই ঠিকানায় নেই কেউ ও নামে। তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিসিভার সার্জেন্টের হাতে তুলে দিল রানা।
সকাল নয়টা। রাস্তার পাশে গাড়ির এঞ্জিন কভার তুলে দাঁড়িয়ে আছে মাসুদ রানা। গত আধ ঘণ্টা ধরেই দাঁড়িয়ে আছে ও, একের পর এক সিগারেট টেনে সময় পার করছে। গিলটি মিয়া ভেতরে বসা। ওরা রয়েছে স্টোমার্কেটের এপাশে। ওদিকে ব্রায়ান স্মিথ আর হ্যারি নিগেল দুই মোটর সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছে সামনে।
সাড়ে ন’টার দিকে দূর থেকে চোখে কাঁচের প্রতিফলিত আলো পড়ল মাসুদ রানার। আসছে ইপসউইচ বাউণ্ড ট্রাফিক! ঝুঁকে পড়ল ও এঞ্জিনের ওপর। ঠিক চার মিনিট পর হুশ্-শ্ করে ওকে পাশ কাটাল ভ্যালেরি তাতায়েভ। মাঝখানে আরেকটা গাড়ি না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করল রানা, তারপর এঞ্জিন কভার বন্ধ করে ঝটপট্ উঠে পড়ল গাড়িতে। মাঝের বাধাটার জন্যে এখন তাকে দেখতে পাচ্ছে না তাতায়েভ। ছুট্ লাগাল মাসুদ রানা।
স্টোমার্কেট পেরিয়ে এসে পথে আরও দুটো মোটর সাইকেলকে পাশ কাটাল ভ্যালেরি। কিন্তু এখন ওসব দিকে নজর দেয়ার সময় নেই তার, তুমুল গতিতে ধেয়ে চলেছে সে। হুইটনের সামান্য আগে ডানে বাঁক নিয়ে শিভালিয়ার স্ট্রীটে ঢুকে পড়ল তাতায়েভ। তারপর অঁরওয়েল নদীর ওপরকার হ্যাণ্ডফোর্ড ব্রিজ পেরিয়ে রেনেলাগ রোডে পড়ল।
ব্যাটা ইপসউইচ থামছে না, ভাবল মাসুদ রানা। বেলস্টেড রোডে গিয়ে পড়েছে তখন সেলুন। ইপসউইচ থেকে সোজা দক্ষিণে চলে গেছে রাস্তাটা, কলচেস্টারের দিকে। শেষ মুহূর্তে আচমকা বাঁক নিল গাড়িটা বাঁয়ে, ঢুকে পড়ল ইপসউইচ হাউজিং এস্টেট কমপ্লেক্সে। কয়েকশো গজ পিছনে খুদে একটা ‘মার্কেটের সামনে গাড়ি দাঁড় করাল মাসুদ রানা। সামনের রাস্তা প্রায় ফাঁকা। কোন বাড়িতে ঢুকল সেলুনটা বুঝতে বেগ পেতে হলো না ওর।
একটার দিকে ঘুম ভেঙে গেল ভ্যালেরি তাতায়েভের। ভাল ঘুম হয়নি। অথচ যে ধকল গেছে গত প্রায় বারো ঘণ্টা, হওয়া উচিত ছিল। বিছানায় উঠে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকল সে ঝাড়া দশ মিনিট। নেটের পর্দার ভেতর দিয়ে উল্টোদিকের বাড়িটার সামনে চার-লোককে দেখতে পেল তাতায়েভ। কারা ওরা?
পরক্ষণে ওদের অতি বিনয়ী ভাব-সাব দেখে বুঝল, নিশ্চয়ইক্যানভাসার। ভোট চাইতে এসেছে। মুচকে হাসল তাতায়েভ। বাথরূমে ঢুকে গোসল-শেভ সেরে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এল। নিচতলার কিচেনে এসে হালকা কিছু খাবার তৈরি করে পেটে চালান করল। ওর ফাঁকে মাঝে মাঝে চোখ তুলে পিছনের খুদে বাগানটার দিকে তাকাল সে কয়েকবার।
বাগানে ঢোকার পিছনের গেটের ভেতরদিকে, বাগানের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত একটা মিহি, প্রায় অদৃশ্য ফিশিং লাইন বাঁধা আছে। তাতায়েভ নিজেই বেঁধেছে। হাঁটু সমান উচ্চতায়। যেখানে যেখানে ফুলের গাছ আছে, ঠিক তার আড়ালে আবডালে; যাতে বাইরে থেকে কিছুই টের না পাওয়া যায়, এক ইঞ্চি ব্যবধানে বেশ কিছু খালি টিন ক্যান ঝুলিয়ে রেখেছে সে ওই লাইনের সঙ্গে।
কেউ যদি ওই পথে প্রবেশ করতে চায়, নিঃসন্দেহে ফাঁদটায় পা দিয়ে ফেলবে সে। ক্যানের সংঘর্ষের আওয়াজে সতর্ক হয়ে উঠবে তাতায়েভ। বেরিয়ে যাওয়ার সময় লাইনের এক প্রান্ত খুলে রেখে যায় সে। যখন বাসায় থাকে, তখনই ওটা টানা থাকে। যেমন থাকার কথা, ওটা তেমনি আছে দেখে নিশ্চিন্ত হলো ভ্যালেরি।
সাঁঝ গড়িয়ে গেছে। বারো নম্বর চেরিহে’জ ক্লোজের পিছনে বাগানের বাইরে, একটু দূরে মাটিতে বসে আছে মাসুদ রানা, গিলটি মিয়া এবং আরেকজন- জিম প্রেসন। জায়গাটা পুরোপুরি অন্ধকার। জরুরি তলব দিয়ে লণ্ডন থেকে আনিয়ে নিয়েছে ওকে মাসুদ রানা। যা-তা কথা নয়, হেলিকপ্টার নিয়ে ওস্তাদ নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছে তাকে। নিজেকে খুব বড় কেউকেটা মনে হচ্ছে জিম প্রেসটনের।
এই মুহূর্তে নাইটগ্লাস দিয়ে বাড়িটার পিছনের বাগান পর্যবেক্ষণ করছে সে। দোতলার বেডরূমে আলো জ্বলছে বাড়িটার। জানালার পর্দায় মাঝেমধ্যে ছায়া দেখা যাচ্ছে একটা, হাঁটাহাঁটি করছে। লোকটা এ বাড়ির বাসিন্দা-মার্টিন ফ্ল্যানারি।
‘একটা কিছু আছে ‘মনে হয়, স্যার,’ নাইটগ্লাস নামিয়ে রানার দিকে তাকাল প্রেসটন।
‘কি ধরনের’
মাথা চুলকাল লোকটা। ‘আমরা একে বলি লাইন-ট্র্যাপ। সরু, মজবুত সুতোয় বেঁধে খালি ক্যান টিন ঝুলিয়ে রাখা। অসাবধানে ক্রস করতে গেলে পায়ে লেগে শব্দ ওঠে, সেই জন্যে পাতা হয় এ-ফাঁদ।’
‘লাইনটা দেখতে পেয়েছ?’
‘না, স্যার। তবে কয়েকটা ক্যান দেখেছি। লাইন খোঁজার প্রয়োজন নেই, ডিঙিয়েই চলে যেতে পারব আমি।’
সন্দেহ গেল না মাসুদ রানার। ‘পারবে তো! না হলে কিন্তু…।’
যেন লজ্জা পেয়ে গেছে, মুখ নামিয়ে আবার মাথা চুলকাল প্রেসটন। আড়চোখে ওস্তাদের দিকে তাকাল একবার।
‘ও হলো, স্যার, বাগের বাচ্চা,’ ওকালতি করল গিলটি মিয়া। ‘ওসব কোন ব্যাপারই নয় ওর কাচে।’
‘বেশ। তৈরি হও।’
কাঁধের ঝোলাটা টেনে সামনে নিয়ে এল প্রেসটন, ধরে থাকল একহাতে। তারপর পা বাড়াল আড়ালে আড়ালে। নজর দোতলায়, বেডরূষের জানালায়। আবার দেখা গেল ছায়াটা। এখনও হাঁটাহাঁটির ওপরেই আছে লোকটা। নেটের বেড়া ডিঙিয়ে সন্তর্পণে ঢুকে পড়ল প্রেসটন বাগানে। ক্যানগুলোর ওপর সতর্ক চোখ রেখে লাইনটা টপকাল। পর মুহূর্তে মিশে গেল অন্ধকারে।
দরজার সামনে বোঁচকাটা নামিয়ে বসে পড়ল সে হাঁটু গেড়ে। লেগে পড়ল কাজে। দরজার তালাটা দেখে হাসি পেল প্রেসটনের। একেবারে সাধারণ ইয়েল লক। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে বলে সময় একটু বেশি লাগল। বিশ মিনিট পর ফিরে এল সে। তুলে দিল চাবিটা মাসুদ রানার হাতে। তার পিঠ চাপড়ে দিল রানা। ‘ওয়েল ডান।’
থুতনি নেড়ে আদর করল গিলটি মিয়া শিস্যকে। ‘কেমন, স্যার, বলিনি, ও হচ্চে’ গে বাগের বাচ্চা!’
নিচে নেমে এল মেজর ভ্যালেরি তাতায়েভ। কেন যেন অস্থির লাগছে। টিভি অন করে তাতে মন বসাতে চাইল, হলো না। কিছুই ভাল লাগছে না। কেন যেন টান-টান হয়ে আছে স্নায়ুগুলো। বাইরের রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ি গেলেই চমকে উঠছে সে। সাকো অটোমেটিকটা সামনের সেন্টার টেবিলে রেখেছিল তাতায়েভ, তুলে নিল আবার।
আমি কি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি? নিজেকেই প্রশ্ন করল সে, কিন্তু কেন? দূর! নিজের ওপর চটে উঠল সে। হাতঘড়ি দেখল, দশটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। বরং মস্কো রেডিওর কমার্শিয়াল শোনা যাক। দেখা যাক, কোন সংবাদ থাকে কি না ওর জন্যে। থাকতে পারে। কারণ তাতায়েভ ওর তরফ থেকে শেষ খবর জানিয়ে দিয়েছে ওদের।
টিভি অফ্ করে রেডিও খুলল সে। সেই একই সময়ে, পিছনের দরজার তালা খুলে ফেলেছে মাসুদ রানা। সময় নির্ধারণ করেই দুদিক থেকে এগিয়েছে ওরা। ঠিক দু’মিনিট পর প্রকাণ্ড একটা ঢিল এসে পড়ল বাড়ির সামনের কাঁচের দরজায়। ঝন্ ঝন্ করে ভেঙে ছড়িয়ে পড়ল কাঁচ।
তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ভ্যালেরি তাতায়েভ। হতভম্বের মত ঘুরে তাকাল। পর মুহূর্তে পড়ল আরেকটা ঢিল। পিছনে নিঃশব্দ পায়ে ঢুকে পড়ল ঘরে মাসুদ রানা। ওয়ালথার বাগিয়ে পায়ে পায়ে এগোল। কোথায়, নিশ্চয়ই দোতলায় আছে লোকটা, ছুটে আসবে এখনই।
আরও দু’পা এগোতেই লোকটাকে দেখতে পেল ও। প্রচণ্ড রাগে টকটকে মুখটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে তাতায়েভের। ছুটে বেরিয়ে আসছে সীটিংরূম থেকে। হিসেবে সামান্য ভুল হয়ে গেল। রানা ভেবেছে দোতলায় আছে সে। কাঁচ ভাঙার শব্দে নেমে আসবে, তখনই পিছন থেকে তাকে কাবু করবে ও। কিন্তু লোকটা যে নিচে থাকবে, ভাবেনি। পলকে সব গণ্ডগোল হয়ে গেল।
চোখের কোণ দিয়ে রানাকে দেখেই ভূত দেখার মত চমকে উঠল সে, বিদ্যুৎগতিতে অস্ত্র তুলেই টেনে দিল ট্রিগার। কিন্তু আগেই বসে পড়েছে রানা ঝপ করে। ওর অন্তত এক সেকেণ্ড আগে শত্রুকে দেখতে পেয়েছে রানা, সময়টা কাজে লাগাতে ভুল হয়নি ওর।
রানা জানে লোকটা ‘স্পেৎজ’, কেজিবির সর্বোচ্চ ট্রেনিং পাওয়া এলিট স্যাবোটিয়ার। একে বিন্দুমাত্র আণ্ডারএস্টিমেট করা মানেই পলকে মৃত্যু। কাজেই তাকে কোন সুযোগ দিতে পারে না ও। পিস্তল তুলেই গুলি করল মাসুদ রানা। তাতায়েভের বাঁ দিকের বুকে ছোট্ট একটা ফুটো করে ঢুকে গেল বুলেটটা।
প্রচণ্ড একটা ঝাঁকি খেল ভ্যালেরি, পলকে বিকৃত হয়ে উঠল চেহারা। বুলেটের ধাক্কায় পিছিয়ে গেল এক পা। ওই অবস্থায়ই আবার গুলি করল সে, গর্জে উঠল সাকো অটোমেটিক। রানার কানের পাশ দিয়ে ‘বিঙ’ শব্দ তুলে বেরিয়ে গেল বিষাক্ত বুলেট। পর পর আরও দুটো গুলি করল মাসুদ রানা, উড়ে গিয়ে পিছনের সোফার ওপর আছড়ে পড়ল তাতায়েভ।
ওই অবস্থায়ই শূন্যে উঠে গেল তার মুষ্টিবদ্ধ ডান হাত, অস্ত্রটা নেই ওখানে, পড়ে গেছে। প্রচণ্ড আক্ষেপে চেঁচিয়ে কি যেন বলতে গেল লোকটা, কিন্তু শেষ করতে পারল না। এক ঝলক রক্ত বেরিয়ে এল মুখ দিয়ে, আটকে দিল কথাটা। শিথিল হাতটা থপ করে দেহের পাশে নেতিয়ে পড়ল। মারা গেছে মেজর ভ্যালেরি আলেক্সেইভিচ তাতায়েভ।
মৃত মেজরের কানের কাছে বাজছে রেডিও। ‘রেডিও মস্কোর ইংরেজি ভাষার অনুষ্ঠান থেকে প্রিয় শ্রোতাদের জানাই শুভরাত্রি। এখন শুনুন দশটার খবর। প্রথমে শিরোনাম। তেরি…, আমি দুঃখিত, তেহরান থেকে পাওয়া খবরে…।’
এগিয়ে এসে সেটটা অফ করে দিল মাসুদ রানা। কয়েক মুহূর্ত অপলক চেয়ে থাকল তাতায়েভের খোলা চোখের দিকে। কী এক অব্যক্ত বেদনা, হতাশা যেন রয়েছে ওখানে।
আপনা থেকেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ওর বুক চিরে।
•
জেনেভা। সাত দিন পরের ঘটনা। কেজিবির এক সেফ হাউস। চার তলার জানালা দিয়ে নিচের রাস্তা দেখছেন জেনারেল ভ্লাদিমিরোভিচ বরিসভ। ঠিক সময়মতই পৌঁছল যুবক। সেফ হাউসের সামনে এসে দাঁড়াল একটা নীল কটিনা। পিছনের দরজা খুলে বেরিয়ে এল সে।
দীর্ঘদেহী। পরনে চমৎকার ছাঁটের গ্রে স্যুট। সাদা শার্ট। হাতে বোনা লাল টাই। চুল ব্যাক ব্রাশ করা। হাতে একটা ব্রিফকেস। তিন মিনিট পর জেনারেলের মুখোমুখি বসা দেখা গেল যুবককে। ব্রিফকেস খুলে একটা ফাইল জেনারেলের দিকে এগিয়ে দিল আগন্তুক।
‘এর মধ্যে আপনি যা যা চেয়েছিলেন সব পাবেন, কমরেড জেনারেল।’
‘ধন্যবাদ, মিস্টার মাসুদ রানা,’ অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে ফাইলে চোখ বোলাতে শুরু করলেন জেনারেল। খস্ খস্ করে দু’তিনটে পৃষ্ঠা উল্টে গেলেন। পড়লেন না, কেবল দেখে অনুমান করে নিলেন কি আছে এতে। সশব্দে ফাইল বন্ধ করে আবার বললেন, ‘অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।’
চেয়ে থাকল রানা জেনারেলের দিকে। ওই ফাইলে আছে মেজর ভ্যালেরি তাতায়েভের ‘জবানবন্দী’। ‘ধরা পড়ার’ পর বিএসএসকে বাধ্য হয়েছে সে ‘সব জানাতে’। লিপিবদ্ধ আছে তা এই ফাইলে। প্ল্যান অরোরার সম্পূর্ণ খুঁটিনাটি। যার পূর্ণ বিবরণ ক’দিন আগে জেনারেল নিজেই রানার হাতে পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁর এক লণ্ডন রেসিডেন্টুরার সাহায্যে। এই জবানবন্দীর’ একটি কপি নিয়ম অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে মাসুদ রানা।
তবে যে জন্যেই হোক, ব্রিটিশ সরকার এমন দুনিয়া কাঁপানো ষড়যন্ত্রের খবরটি এখনও চেপে রেখেছে। প্রেসকে জানায়নি।
‘আপনার উদ্দেশ্য কি জেনারেল? এগুলো দিয়ে কি করতে চাইছেন?’ ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন জেনারেল। ‘তার আগে বলুন, এগুলো, কাগজগুলো খাঁটি কি না।’
‘সম্পূর্ণ খাঁটি। ব্রিটিশ ডিফেন্স মিনিস্ট্রির এক্সপার্টরা নিজ হাতে ডকুমেন্টগুলো তৈরি করেছেন আমার অনুরোধে।’
‘আমি যে এগুলো চেয়েছিলাম, আপনি আর জেনারেল রাহাত খান ছাড়া আর ক’জন জানে?’
‘বিএসএস চীফ আর মিনিস্ট্রির দুই এক্সপার্ট। আপনি যা ভাবছেন, তার কোন সম্ভাবনাই নেই। কোনমতেই এর গোপনীয়তা ফাঁস হবে না। নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।’
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলেন জেনারেল কিছুক্ষণ। অন্যমনস্ক। ‘মেজর ভ্যালেরির জন্যে খুব খারাপ লাগছে, মিস্টার রানা। ওর মত খাঁটি হীরে জীবনে খুব কমই নজরে পড়েছে আমার।’
‘আমি দুঃখিত, কমরেড জেনারেল। ওরকম পরিস্থিতিতে…’
‘আমি বুঝি, ইয়াং ম্যান। বুঝি। আপনি যা করেছেন ঠিকই করেছেন। আমি ভাবি তাদের কথা যারা ওকে এ কাজে পাঠিয়েছিল। সে যাকগে, কি যেন জানতে চেয়েছিলেন? ও, হ্যাঁ। কি করব ওগুলো দিয়ে, না? মেজর বাষট্টির কিউবা মিজাইল সঙ্কটের কথা মনে আছে আপনার?’
‘আছে।’
‘সঙ্কটটা সৃষ্টি করেছিলেন নিকিতা ক্রুশ্চভ। পুরো বিশ্বকে প্রায় ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল তাঁর সেই হঠকারী সিদ্ধান্ত। এই অভিযোগে চৌষট্টিতে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন মিখাইল সুসলভ। এই দলিলগুলোর সাহায্যে সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চলেছি আমি।’
‘আপনাদের জেনারেল সেক্রেটারি এমন একটা কাজ কেন করতে গিয়েছিলেন?’
‘শুধুই নাম কেনার আশায়। নিজেকে অমর করে রাখার জন্যে। অবশ্য তাঁকে ইন্ধন জুগিয়েছিল অন্যরা।’ চেহারা কঠোর হয়ে উঠল জেনারেলের। ‘ওদের একজনকেও আমি ছাড়ব না।
‘ধরে নিতে পারি আপনি এর পিছনে রাজনৈতিক সমর্থন পাবেন?
‘একশোবার! পলিটব্যুরো সমর্থন দেবে আমাকে। তবে আগে তাদের এগুলো,’ ফাইলের গায়ে টোকা দিলেন তিনি, ‘দেখাতে হবে। তারপর। আমি মস্কো ফিরে যাওয়ার আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে সোভিয়েত ইতিহাসের নতুন অধ্যায় লিখিত হবে।
‘আরেকটা প্রশ্ন। অস্ট্রিয়ান ফ্রানজ ওসনিয়াক কেন গিয়েছিল চেস্টারফিল্ডে?’
‘নিয়মিত মিশনে। ট্র্যান্সমিটার এবং তার দুই রক্ষকের খোঁজ-খবর নিতে প্রতি মাসে একবার ওখানে যেত সে।’
এই লোক যদি না যেত চেস্টারফিল্ড, মাসুদ রানা নিশ্চিত, ও কেন, কারও পক্ষেই কিছু করা সম্ভব হত না। ‘অল রাইট, কমরেড জেনারেল, ‘ উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে হাত মেলাল ও। ‘আশা করছি আপনার মিশন সফল হবে। চলি।’
‘থ্যাঙ্ক ইউ, জেন্টলম্যান, অ্যাণ্ড গুড বাই। আবার দেখা হবে।’
দরজার কাছে এসে পিছনে তাকাল মাসুদ রানা। হ্যাঁ, হয়তো হবে, ভাবল ও। হয়তো আর কোথাও। হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে তখনকার পরিবেশ। আমার বুকে অস্ত্র ধরবেন হয়তো তখন আপনি, অথবা আমি আপনার। দায়িত্ব ও কর্তব্যের কী বিচিত্র খেলা।
বেরিয়ে এল মাসুদ রানা।