অন্ধকারের অন্তরালে – সরোজকুমার রায়চৌধুরী
আমার পাশের বাড়িতে কতগুলি পরিবার বাস করে জানি না, তবে অনেকগুলিই আছে। এক একখানি ঘর নিয়ে তারা থাকে। কলরব, গোলযোগ, বিবাদ মাঝে মাঝে যে হয় না তা নয়। কিন্তু তা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় কদাচিৎ। অনেকগুলি অলিখিত নিয়ম-কানুনের বন্ধনে তাদের ছোট গণতন্ত্র মোটের ওপর সুশৃঙ্খলেই চলে।
কিন্তু আমার রান্নাঘরের কাছে নীচের তালার ঘরখানিতে ভাড়াটে আসতে কখনও দেখিনি। ঘরখানি যেমন সংকীর্ণ, তেমনি অন্ধকার, তেমনি স্যাঁৎসেতে। বোধ করি সেই কারণেই গত দু’বৎসরের মধ্যে বাড়িতে ভাড়াটে জোটেনি। ইন্দুর এবং আরশুলার আশ্রয়স্থলরূপে ওটা অমনি পড়ে থাকে। কাউকে ওঘরে পা দিতেও দেখা যায়নি।
ইতিমধ্যে একদিন দেখা গেল, ঘরে চুনকাম হচ্ছে। সেই সঙ্গে জঞ্জালও পরিষ্কার করা হল। এতদিন পরে কি ওঘরে ভাড়াটে এল?
আমরা মনে মনে হাসলাম। কদিন থাকবে ও ভাড়াটে? ঘরে একখানি চৌকি কোন রকমে পাতা চলে। অন্ধকার। রোদ কোন দিক দিয়ে আসবার পথ নেই। এই পায়রার খোপের মধ্যে দুরন্ত শীতে কদিন থাকতে পারে লোকে। বাঁচবার ইচ্ছা আর কার নেই?
পরের দিন ভাড়াটে এল।
একটি বছর ত্রিশের ভদ্রলোক। পাতলা ছিপছিপে চেহারা। মাথায় বড় বড় কোঁকড়া চুল। বেশভূষায় বেশ পরিপাট্য আছে। স্ত্রীটি রুগ্না, সুন্দর রং কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। শীর্ণ করপ্রকোষ্ঠে শীর্ণতর কয়গাছি চুড়ি ঢল ঢল করছে। দেহে অলংকারের বাহুল্য কোথাও নেই। কোলে ফুটফুটে একটি ছেলে।
বউটির বয়স বেশি নয়, চব্বিশের মধ্যে। বেশ চটপটে মনে হল। স্বামী ভদ্রলোক এসেই খালি চৌকির উপরই গুটানো বিছানায় মাথা রেখে গা এলিয়ে দিলে। আজ রবিবার। তার বোধ হয় আপিস নেই।
কিন্তু বউটি কোলের ছেলেটিকে স্বামীর কাছে নামিয়ে দিলে। পায়ের স্যান্ডাল খুলে ঝেড়ে একটা খবরের কাগজ মুড়ে এক কোণে রেখে দিলে। রঙিন কাপড় ছেড়ে একখানি আটপৌরে কাপড় কোমরে বেশ করে জড়িয়ে ঘর গুছোতে লেগে গেল। জিনিসপত্রের বাহুল্য অবশ্য ছিল না। কিন্তু যা ছিল তা এই সংকীর্ণ ঘরখানির পক্ষে যথেষ্টই বলতে হবে। ছোট-বড়-মাঝারি কৌটো আছে অনেক। মাটির বিভিন্ন আকারের হাঁড়ির সংখ্যাও কম নয়। বাসন-কোসন, তাও দুচারখানা আছে। এর ওপর একটা দোলনাও এসে জুটেছে। ওইটুকু ঘরের মধ্যে সে সমস্ত গুছিয়ে রাখা সহজ নয়। কতকগুলি দেওয়ালের তাকে, কতকগুলি চৌকির নীচে; আবার কোনটি বা ছাদে ঝুলবে। আশ্চর্য ক্ষিপ্রতায় বউটি অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্ত গুছিয়ে ফেললে।
তারপর ছোট একটি হাতবাক্স থেকে কিছু পয়সা বের করে তন্দ্রাচ্ছন্ন স্বামীকে ওঠালে। বললে, বেলা আর নেই। উঠে বাজারটা শিগগির করে নিয়ে এস। আসবার সময় দেখলাম, মোড়ের ওপরই কয়লার দোকান আছে। কয়লাও আনতে হবে আধ মণ। চাল, ডাল আছে, শুধু তরকারি কিছু আনলেই হবে। আমি রান্নাঘরটা একবার দেখি।
—একটু চা হত না?
বউটি কৃত্রিম কোপে ভ্রু বেঁকিয়ে বললে, না। উনোন ধরবে, তবে তো! রাস্তায় খেয়ে নিয়ো বরং।
—তুমি?
বউটি হাসল। বললে, আমার জন্যে ভাবতে হবে না। তুমি ওঠ দেখি। কি কুড়েই হয়েছ।
স্বামী বেচারা হাসতে হাসতে উঠল।
এতক্ষণে বুঝা গেল, লোকটির বাঁ পা অত্যন্ত সরু। খোঁড়াতে খোঁড়াতে উঠে, বাঁ হাত দিয়ে কফুর্টারটা আলনা থেকে নিয়ে গলায় জড়িয়ে নিলে।
বললে, বাজারের থলিটা আবার কোথায় রাখলে?
বউটি সে কথার জবাব দিলে না। উদ্বিগ্নভাবে জিজ্ঞাসা করলে, ব্যথাটা কি আবার বাড়ল না কি?
লোকটি শীর্ণ হাসি দিয়ে কথাটা যেন ফুয়ে উড়িয়ে দিলে। বললে, তেমন কিছু নয়। দাও থলিটা।
বউটি কিন্তু তাতে ভুললে না। বললে, থাক, বরং বাজার। দুটো পোস্ত যেন ছিল মনে হচ্ছে।
লোকটি ওর ভয় দেখে আবার হাসলে। বললে, থেকে কি হবে? ব্যথা যদি বাত্রে বাড়েই কাল কি আর বাজার যেতে পারব? এর নাম বাত। তিনটি দিন শুইয়ে রেখে দেবে।
লোকটি নিজেই থলিটা খুঁজে নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাজার চলে গেল। যাবার সময় আড় চোখে চেয়ে হেসে বলে গেল, একটা মোটর না কিনলে আর চলছে না। রোজ রোজ বেতে পা নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাজার যাওয়া পোষায় না। বুঝেছ নির্মলা!
নির্মলা এত দুঃখেও হেসে ফেলে। তারপর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে গৃহকর্মে মন দিলে।
একটি বেতো রোগী এবং একটি চিররুগ্না মেয়ে একটি অবিরত ক্ৰনপরায়ণ ছোট শিশুকে কেন্দ্র করে দু’দিনেই চমৎকার জমিয়ে ফেললে।
খবর নিয়ে জানলাম, লোকটির নাম প্রকাশ ঘোষ। বড় রাস্তার মোড়ে যে ঔষধের দোকান আছে সেইখানে সে কম্পাউন্ডারি করে। পঁচিশটি টাকা মাইনে পায়।
লোকটি নিতান্ত নিরীহ এবং গো-বেচারি। মুখে হাসিটুকু লেগেই আছে, আর কথায় কথায় গান। কিন্তু বাতের যন্ত্রণা আরম্ভ হলে মেজাজ একেবারে উলটে যায়।
সেটা পরের দিনই বোঝা গেল।
অপ্রকাশ সমস্ত দিন এমন অস্ফুট আর্তনাদ করতে লাগল যে, আমাদের পর্যন্ত কষ্ট হতে লাগল। সময় বুঝে ছেলেটির কান্নাও সেই দিনই বেড়ে গেল। বউটি একবার রান্নাঘরে যায়, একবার স্বামীর বিছানার কাছে এসে বসে। তাও ভাল করে বসতে পারছে না। ছেলেটি আজ কিছুতেই তাকে ছাড়ছে না, আর সমস্তক্ষণই কাঁদছে। তার কান্নায় অপ্রকাশ বিরক্ত হচ্ছে। নির্মলা তাকে শান্ত কবাব বহু চেষ্টা করছে। তাতে হয়তো একটুখানি সে চুপ করছে। কিন্তু সেও বেশিক্ষণের জন্যে নয়।
—মালিশের সেই ঔষুধটা একবার দিলে হত? —কুণ্ঠিত পীড়িত কণ্ঠে নির্মলা বলে।
—দিলে হত যদি তো দিচ্ছ না কেন? আমি মরে গেলে দেবে?
নির্মলা মালিশটা নিয়ে এসে পায়ের দিকে বসল।
—উঃ!
—কি হল?—নির্মলা ত্ৰস্তে পা থেকে হাতটা সরিয়ে নিলে।
—তুমি কি দিন দিন কচি খুকি হচ্ছ?
—লেগেছে?
অপ্রকাশ বেগে চুপ করে রইল।
—থাক, হয়েছে। এতে কিছু হয় না, কিছুই না। শুধু শুধু যন্ত্রণা বৃদ্ধি। ইচ্ছে করে ওটা এক চুমুকে খেয়ে নিয়ে সমস্ত যন্ত্রণা জুড়োই।
ভয়ে ভয়ে নির্মল শিশিটাকে অপ্রকাশের হাতের নাগালের বাইরে সরিয়ে রাখলে। রোগের যন্ত্রণায় পাগল হয়ে বিষ খাওয়া মানুষের পক্ষে কিছুমাত্র অসম্ভব নয়।
বাইরে কে যেন ওকে ডাকলে।
নির্মলা বাইরে থেকে একটু পরেই ঘরের মধ্যে ফিরে এল। অপ্রকাশ ওর পায়ের শব্দে চোখ মেলে চাইলে। জবাফুলের মতো লাল চোখ দেখে নির্মলা শিউরে উঠল। তাড়াতাড়ি এসে একখানা হাত ওর মুঠোর মধ্যে নিলে।
—খুব কষ্ট হচ্ছে?
—থাক। আর ভালবাসা জানাতে হবে না।
অপ্রকাশ ছিটকে ওর হাতখানা ফেলে দিলে। দাঁতে দাঁত ঘষে জিজ্ঞাসা করলে, বাইরে ডাকছিল কে?
—ও মন্টুর না। তোমার খবর নিতে এসেছিলেন।
—ন্যাকামি পেয়েছ, না? আমার কাছে বসে থাকতে ভাল লাগছে না?
বিবর্ণ মুখে নির্মলা বললে, তুমি কি বলছ?
নেকড়ে বাঘের মতো দাঁত বের করে অপ্রকাশ বললে, ঠিকই বলছি। একবারে হাড়ে গিয়ে বিঁধছে, বুঝতে পারছ না? যাও তুমি এখানে থেকে। তোমাকে দেখলে আমার বিষ লাগছে!
নির্মলা গেল না। সেই শয্যার একাংশে মুখ ফিরিয়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
নির্মলা মেয়েটি বড় ভাল। এ বাড়ির মেয়েদের সঙ্গে দুদিনেই বেশ ভাব হয়ে গেল। যে বাড়িতে ও থাকে সে বাড়িও সকলে ওর সুখ্যাতি করে। ওর রোগজীর্ণ পাণ্ডুর মুখে হাসিটুকু সর্বক্ষণই লেগে আছে। আমাকে বলত কাকিমা।
দুপুরের দিকে প্রকাশ চলে গেলে তাদের বাড়ি ও প্রায়ই আসে আমার মেয়েদের সঙ্গে গল্প করতে। মেয়েরা ওকে বলে বউদি। এই স্বল্পভাষিণী, কুণ্ঠিতা বউটিকে ওরা অত্যন্ত ভালবেসে ফেলেছে। একবার পেলে আর ছাড়ে না। ওকে লুডো খেলা শেখাবে, ক্যারম খেলা শেখাবে, সেলাইয়ের কলের মেকানিজম দেখাবে, সূচের কাজ দেখাবে, ওদের কলেজের প্রোফেসরদের অঙ্গভঙ্গির নকল করবে, কি যে করবে ‘ওকে নিয়ে তা ভেবে পায় না। মেয়েটি কুণ্ঠিত আনন্দে ওদের স্নেহেব অত্যাচার সহ্য কবে। সাগ্রহে ওদের কথা শোনে। ওসব যেন তার কাছে একটা নতুন জগৎ, —তার হাতবেড়ি—ঘরকন্না, রুগ্ন, সন্তান, অভাবগ্রস্ত সংসার এবং বাতগ্রস্ত স্বামী, এ সবের বাইরে। সে জগতে যেন সবই আনন্দ, মানুষ সেখানে কারও গায়ে ধাক্কা না দিয়ে অবলীলায় হেসে বেড়াতে পারে।
আমি জিজ্ঞাসা করি, কি রান্না হল বউমা।
—ওঁর তো আজ একাদশী। আমার জন্যে আর কিছুই রাঁধিনি।
—ওমা, সে কি বউমা! ওর একাদশী বলে তুমিও উপোস করবে? তুমি যেন কি বউমা! এমনি করেই শরীরে ওই দশা হয়েছে।
—না, উপোস কেন করব? কালকের পান্তাভাত দুটি ছিল। ছোলার ছাতু দিয়ে তাই দুটি খেলাম।
—আচ্ছা, রাঁধতেই যদি বিরক্ত লাগছিল, —লাগে জানি, শুধু নিজের জন্যে রাঁধতে মেয়েদের বিরক্তই লাগে, —কিন্তু আমাকেও তো একবার বলতে পারতে?
লজ্জিত কণ্ঠে নির্মলা বললে, পান্তাভাত আমার খুব ভাল লাগে কাকিমা, তাই বলিনি। নইলে নিশ্চয় বলতাম। আপনাদের তো আমি পর ভাবি না।
—ভাল লাগে বলেই খেতে হবে? এই দুরন্ত শীত, ওই রোগা কচি ছেলে। এখন পান্তাভাত খায়?
হাতের কাছে না চাইতেই নানাবিধ খাবার পেয়ে পেয়ে আমার মেয়েদের খাবার বিষয়ে উৎসাহ এবং আগ্রই কম। তারা ওকে আমার জেরার মুখে আর থাকতে দিলে না, টানতে টানতে উপরে নিয়ে গেল।
এর কদিন পরেই আমার বড় মেয়ে এসে বললে, দুটো টাকা দাও তো মা।
বিরক্তভাবে বললাম, কেন?
—কাজ আছে। তুমি দাও না।
সিনেমায় যাবে হয়তো, নয়তো কতকগুলো ছিট কিনবে। বললাম, নেই টাকা।
মেয়েটি দুবার এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে বললে, তুমি এদিকে এস একবার। দেখে যাও, কি হচ্ছে।
—কোথায়?
—এস না তুমি।
আমাকে টানাটানি করে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালে নির্মলার অর্ধোন্মুক্ত জানালার আড়ালে। চুপি চুপি বললে, শোন কি কথা হচ্ছে?
—ও-পাড়ায় যে মুদি ধারে দিত তার কাছে গেলে না কেন?
—তখন ও-পাড়ায় থাকতাম দিত। এখন এ-পাড়ায় এসেছি, দেবে কেন? (হাস্য)। (কিছুক্ষণ চুপচাপ)।
—তোমার বন্ধুদের কাছে গেলে না কেন?
—মাসের শেষ, সকলেরই অবস্থা সমান। তুমি এক কাজ কর।
—কি?
—আমি মনে করি, আজকে একাদশী। আর তুমি মনে কর…
জ্বর হয়েছে। একশো চার জ্বর। কি বল?
(দুজনে উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠল)।
—পরশু পয়লা, নয়?
—তাই তো ক্যালেন্ডারে দেখছি।
—তাই তো কাল কি হবে?
—অর্থাৎ তুমি বলছ উপরি উপরি দুদিন একাদশী হয় না?
—হয়?
—হওয়া উচিত নয়। পঞ্জিকাতে তা লেখে না। তবে তেমন তেমন বেকায়দায় পড়লে তাই বা হবে না কেন?
আমি আস্তে আস্তে উপরে উঠে এসে মেয়ের হাতে দুটো টাকা দিলাম। এর বেশি আমার করবারও কিছু ছিল না।
ওরা দুজনে ওইটুকু সংকীর্ণ ঘরের মধ্যে অভাবে-অনটনে, সুখে-দুঃখে দিন কাটাতে লাগল। নির্মলার মাঝে মাঝে অল্প অল্প জ্বর হয়। দুদিন ভোগে। তারই মধ্যে স্বামীর জন্যে দুটো ভাতে ভাতে ফুটিয়ে দেয়। গোটা কয়েক উপবাস দিয়ে আবার সেরে ওঠে। অপ্রকাশের বাতের আক্রমণ যখন আরম্ভ হয়, তখন একটা ডামাডোল হয়। দুদিন পরে সেও সেরে ওঠে। তারপরে এক দিন হয়তো দেখা যায়, দুটিতে সন্ধ্যায় সিনেমায় যাচ্ছে। নয়তো বাড়িতেই কোনও একটি বন্ধুর গ্রামোফোন চেয়ে নিয়ে এসে বাজাচ্ছে।
মাঝে মাঝে অর্থাভাবে রান্না বন্ধ হয়। মাঝে মাঝে দু একটি আত্মীয়-আত্মীয়াও আসে, সেদিন একটু খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে। এক ফোঁটা দুধের অভাবে ছেলেটাকে মাঝে মাঝে কাঁদতেও শুনি, আবার কখনও দেখি, জানালার ধারে নেচে নেচে চকোলেট খাচ্ছে।
এমনি করে ওদের সংসার এঁকে বেঁকে চলে।
কর্তা বলেন, আমরা যা ভাবি তা নাকি নয়। ওরা বেশ আছে। আকাঙক্ষার নিবৃত্তিই হল সুখ। ওদের সেই নিবৃত্তি ঘটেছে। অন্ধকার, স্যাঁৎসেঁতে সংকীর্ণ ঘরে রুগ্ন দেহ নিয়ে ওরা নাকি মন্দ নেই।
অসম্ভব নয়। ওদের হাসি, ওদের চাল-চলন দেখে আমারও তাই মনে হয়। ওদের উচ্চাশা নেই, অভাবজনিত দুঃখও নেই।
ইতিমধ্যে একটা ঘটনা ঘটল।
আমার বড় মেয়ের হাত ধরে নির্মলা এক দিন হাসতে হাসতে এসে আমায় প্রণাম করলে।
আমার মেয়ে বললে, ওরা কাল ভোরেই চলে যাবেন না। তাই প্রণাম করতে এলেন।
—হঠাৎ চলে যাচ্ছে
—হঠাৎ নয় মা। অনেক দিন থেকেই কথা হয়েছে। আমি জানতাম। বড় মন কেমন করবে, নয় মা?
—করবেই তো। তা বেশ তো ছিলে বউমা। আবার চলে যাচ্ছ কেন?
নির্মলা কুষ্ঠিত হাস্যে বলল, বেশ ছিলাম শুধু আপনাদের জন্যে কাকিমা। নইলে ঘরখানা যেমন অন্ধকার, তেমনি স্যাঁৎসেঁতে। সত্যি বড় কষ্ট হচ্ছিল। গেল মাসে ওঁর পাঁচ টাকা মাইনে বাড়ল। তাই ভাবলাম, তবে আর কেন? আর দুটাকা বেশি দিয়ে যদি একটু ভাল ঘর পাওয়া যাই তাই দেখি।
—কত দূরে যাচ্ছ বউমা?
—দূরে নয় কাকিমা, ওই সামনের গলিটার মধ্যে। আমি আসব মধ্যে মধ্যে।
—আসবে বই কি মা।
খাবার খেয়ে নির্মলা চলে গেল। ওখানটায় ওদের সত্যিই কষ্ট হচ্ছিল তা হলে?
২৮ জানুয়ারি ১৯৪০