অন্ধকারে

অন্ধকারে

বছর কয়েক আগে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি একটা রাত্রিতে যে ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি হইয়া কলিকাতা শহরটা দেখিতে দেখিতে দুই হাত জলের নীচে ডুবিয়া গিয়াছিল তাহা বোধ করি এখনো অনেকের স্মরণ আছে। অবশ্য কলিকাতার জলনিকাশের যেরূপ সুব্যবস্থা তাহাতে শহরের কোনও কোনও অংশে আধ ঘন্টা বৃষ্টি হইবার পরই এক হাঁটু জল জমিয়া যাওয়া কিছু নূতন নয়। কিন্তু সেবারের দুর্যোগ এতই ভয়ানক হইয়াছিল যে, বোধ করি গত চল্লিশ বছরের মধ্যে এমনটা দেখা যায় নাই। ইলেক্‌ট্রিক তার ছিঁড়িয়া রাস্তায় গ্যাসবাতি নিভিয়া সমস্ত রাত্রির জন্য মহানগরী একেবারে অন্ধকার হইয়া গিয়াছিল। সত্য-মিথ্যা বলিতে পারি না, কিন্তু শুনিয়াছি সেই এক রাত্রের জন্য একটা মোমবাতির দাম পাঁচ পয়সা হইতে দুই টাকায় দাঁড়াইয়াছিল।

বাদুড়বাগানে আমার বাসা। সেদিন সন্ধ্যাবেলা একটা জরুরী কাজে শহরের উল্টাদিকে হাওড়ার অভিমুখে গিয়াছিলাম। কাজ শেষ করিতে সাতটা বাজিয়া গেল। ফিরিবার পথে চা খাইবার জন্য দর্মাহাটার কাছাকাছি একটা ছোট্ট দোকানে ঢুকিলাম। বাহিরে তখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আরম্ভ হইয়াছে। রাস্তায় গ্যাসের আলো কাচের উপরকার বৃষ্টিবিন্দু ভেদ করিয়া ঝাপসাভাবে বাহির হইতেছে। আমার দুর্ভাবনার বিশেষ হেতু ছিল না—সঙ্গে ছাতা ছিল। আরাম করিয়া বসিয়া চা খাইতে লাগিলাম।

দোকানে বেশী লোকজন ছিল না। দুটি লোক—একজন আধবয়সী ও একজন কর্ণমূল পর্যন্ত জুলপি বিশিষ্ট যুবক—অয়েলক্লথ-মোড়া টেবিলের উপর কনুই রাখিয়া দানীবাবু এবং শিশির কুমার ভাদুড়ীর পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করিবার আপেক্ষিক কৃতিত্ব সম্বন্ধে উত্তপ্তভাবে আলোচনা করিতেছিল। চা খাওয়া অনেকক্ষণ তাহাদের শেষ হইয়া গিয়াছে, কিন্তু তর্কের ভালরকম নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্যই বোধ করি, তাহারা উঠিতে পারিতেছে না।

যুবক বলিল, ‘জানেন মশায়, শিশির ভাদুড়ী আগাগোড়া বুড়ো আলমগীরের পার্ট করে, একবারও দাঁত বেরোয় না।’

আধবয়সী লোকটি দাঁত খিঁচাইয়া বলিলেন, ‘ভারী কেরামতি! দাঁত নেই তো বেরুবে কোত্থেকে? আর দাঁত না বেরুলেই বড় অ্যাক্টর হয় নাকি?’

যুবক চটিয়া উঠিয়া বলিল, ‘আপনিও তো বুড়ো হয়েছেন, দাঁত না বার করে একটা কথা বলুন না দেখি!’

তর্ক শুনিতে শুনিতে ও চা খাইতে খাইতে প্রায় মিনিট পনের কাটিয়া গেল। চা শেষ করিয়া দাম দিয়া দোকান হইতে বাহির হইতেছি—যুবক তখন দানীবাবু সম্বন্ধে অত্যন্ত মানহানিকর কথাবার্তা বলিতেছে—এমন সময় সোঁ সোঁ করিয়া একটা উন্মত্ত হাওয়া কোথা হইতে আসিয়া দরজা জানালাগুলাকে আছড়াইয়া দিয়া ছুটিয়া চলিয়া গেল। আকাশের দিকে চোখ তুলিতেই নীল রঙের ভয়ঙ্কর আলোতে দু’ চোখ একেবারে ধাঁধিয়া গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে কড় কড় শব্দে বাজ পড়িয়া কানদুটাকে যেন বধির করিয়া দিল। তাহারি মধ্যে অস্পষ্টভাবে দেখিতে পাইলাম, আকাশের গায়ে যেন কালি ঢালিয়া দিয়াছে। দিগন্ত ব্যাপিয়া নিকষকালো মেঘের উপর আরও কালো মেঘ জমিয়া যেন নিরেট নিভাঁজ হইয়া গিয়াছে—অন্য জিনিসের একতিল সেখানে জায়গা নাই।

এইবার ভীষণ বেগে বৃষ্টি আরম্ভ হইল। বড় বড় ফোঁটা তির্যক্‌ভাবে নিরবচ্ছিন্ন মুষলধারে পড়িতে শুরু করিল। রাস্তার আলোগুলা জলের পুরু পর্দার অন্তরালে পড়িয়া নিস্তেজ হইয়া গেল, শুধু তাহাদের চারিদিক হইতে একটা মণ্ডলাকার প্রভা বাহির হইতে লাগিল।

দোকানে ফিরিয়া আসিয়া বসিলাম; চাকরটাকে ডাকিয়া বলিলাম, ‘আর এক পেয়ালা চা দাও তো হে!’

মেঘের আকস্মিক ধমকে তার্কিক দু’জনের বিসম্বাদ সহসা থামিয়া গিয়াছিল। তাহারা আবার আরম্ভ করিল, ‘দানী ঘোষ যদি ইচ্ছে করে, অমন পাঁচটা শিশির ভাদুড়ীকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে!’

জুলপি বিশিষ্ট ছোকরা কড়া রকম একটা যুক্তি প্রয়োগ করিতে যাইতেছিল, আমি বাধা দিয়া বলিলাম, ‘থাক না মশায়! পৃথিবীতে দানী ঘোষ আর শিশির ভাদুড়ী ছাড়া আর কি লোক নেই? অন্য কিছু আলোচনা করুন না।’

জুলপি সিংহবিক্রমে আমার দিকে ফিরিয়া বলিল, ‘চা খাচ্ছেন চা খান। মেলা ফ্যাচ্‌ ফ্যাচ্‌ করবেন না।’

আমি চা খাইতে লাগিলাম।

ক্রমে আটটা বাজিল। বৃষ্টির বিরাম নাই—সমভাবে সতেজে চলিয়াছে। তার সঙ্গে ঠাণ্ডা এলোমেলো বাতাস। রাস্তার লোক চলাচল কমিয়া আসিল।

নয়টা বাজিল। বাহিরে বৃষ্টি ও ভিতরে তর্ক একভাবে চলিয়াছে। অদ্ভুত একনিষ্ঠা এই দুটি লোকের, তখনো দানী ঘোষ ও শিশির ভাদুড়ীকে লইয়া কামড়াকামড়ি করিতেছে। পৃথিবীতে যেন অন্য প্রসঙ্গ নাই।

সাড়ে নয়টায় আর সহ্য করিতে না পারিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলাম। যে করিয়া হোক রাত্রে বাড়ি পৌঁছিতেই হইবে। কিন্তু যাই কি করিয়া? ছাতায় এ বৃষ্টি আটকাইবে না—পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভিজিয়া কাদা হইয়া যাইব। একে আমার সর্দির ধাত—তখন নিউমোনিয়া ঠেকাইবে কে? এই সময় বৃষ্টি আরও চাপিয়া আসিল; হঠাৎ হাওয়ার বেগ যেন বাড়িয়া গেল।

একবার বাহিরের দিকে উঁকিঝুঁকি মারিয়া আবার ফিরিয়া আসিয়া বসিলাম।

দোকানের চাকরটা নিস্পন্দভাবে নিবন্ত উনানের পাশে উপু হইয়া দেয়াল-ঠেস দিয়া বসিয়া আছে। মাথার উপর ধূঁয়ায় মলিন ইলেক্‌ট্রিক বাতিটা পীতবর্ণের আলো বিকীর্ণ করিতেছে। বাহিরে আশেপাশের দোকান-পাট সব বন্ধ হইয়া গিয়াছে—মোটরের হর্ন ও ট্রামের ঢং ঢং আর শুনা যাইতেছে না।

যুবক বলিল, ‘শিশির ভাদুড়ী—’

ঠিক এই সময় হঠাৎ আলো নিভিয়া গেল।

কিছুক্ষণ সব নিস্তব্ধ।

দোকানের চাকর ভাঙা গলায় বলিল, ‘তার ছিঁড়ে গেছে—আজ রাতে আর মেরামত হবে না। দেশলাই দেবেন বাবু—ল্যাম্পোটা জ্বালি!’

অন্ধকারে হাতড়াইয়া দেশলাই দিলাম। ল্যাম্পো জ্বলিল। মিটমিটে আলো ও দুর্গন্ধ ধূঁয়ায় ঘর ভরিয়া উঠিল।

প্রৌঢ় ভদ্রলোক এতক্ষণে প্রথম অন্য কথা কহিলেন, বলিলেন, ‘নীলমণি, কেটলিটা আর একবার চড়াও—আর এক পেয়ালা চা হোক।’

জুলপিধারী যুবক তীব্রভাবে আমার দিকে একবার তাকাইয়া গর্বিতস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, ‘সিগারেট আছে?’

আমি পকেট হইতে সিগারেট কেসটা বাহির করিয়া দিলাম। গোটা কয়েক সিগারেট বাহির করিয়া লইয়া যুবক কেসটা তাচ্ছিল্যভরে আমায় ফেলিয়া দিল। তারপর এমনভাবে আমার দিকে পিছু করিয়া বসিল, যেন আমার বাঁচিয়া থাকার সমস্ত প্রয়োজন শেষ হইয়া গিয়াছে—আর আমি কাহারও কোনও কাজেই লাগিব না।

প্রৌঢ় ব্যক্তি বাহিরের দিকে একটা উদাসীন দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া কহিলেন, ‘এ বৃষ্টিতে বেরুনো যাবে না। গ্যাসগুলোও নিভে গেছে দেখছি! যা বাবা! বলিয়া নিশ্চিন্তভাবে আবার সেই একমাত্র এবং অদ্বিতীয় প্রসঙ্গ আরম্ভ করিলেন।

আমিও বাহিরের দিকে উঁকি মারিয়া দেখিলাম—সত্যই তো! রাস্তার গ্যাস-বাতি একটাও জ্বলিতেছে না। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, কোথাও জনমানব নাই। কেবল অবিশ্রান্ত বারি পতনের ঝুপঝুপ ঝম্‌ঝম্ শব্দ।

আর এক পেয়ালা চা খাইলাম। প্রৌঢ় লোকটি বলিলেন, ‘আজ রাত্রে বাড়ি যাওয়া হল না দেখছি। নীলমণি, বিষ্টি থামলে আমাকে তুলে দিও।’ বলিয়া বেঞ্চির উপর লম্বা হইয়া শুইয়া পড়িলেন। যুবক কোনও দিকে দৃষ্টিপাত না করিয়া আমার সিগারেট টানিতে লাগিল।

কিন্তু আমার তো বেঞ্চির উপর রাত কাটাইলে চলিবে না, বাড়ি যাওয়াই চাই। বাড়িতে স্ত্রী দুটি ছোট ছেলে-মেয়ে লইয়া একলা আছেন। ঝিও হয়তো বাড়ি চলিয়া গিয়াছে। অথচ বৃষ্টি না ধরিলে যাই বা কেমন করিয়া?

ঘড়ির দিকে চাহিয়া দেখি—এগারোটা!

প্রৌঢ় ব্যক্তির নাকের ভিতর হইতে মাঝে মাঝে একটা অনৈসর্গিক শব্দ বাহির হইতেছে। যুবক স্থিরভাবে প্রতীক্ষা করিয়া আছে, তাঁহার ঘুম ভাঙিলেই আবার যুদ্ধ আরম্ভ করিবে।

রাত্রি যত গভীর হইতেছে, আমার মনের উদ্বেগ ও অস্থিরতা ততই বাড়িতেছে। এদিকে ঝড়বৃষ্টির উদ্দাম নৃত্যে কিছুমাত্র শ্রান্তির লক্ষণ নাই।

ঘড়ির কাঁটা সরিয়া সরিয়া পৌনে বারোটায় পৌঁছিল। নীলমণির ল্যাম্পোর জ্যোতি নিষ্প্রভ হইয়া আসিল। সে উঠিয়া বাতিটা একবার নাড়িয়া বলিল, ‘তেল ফুরিয়ে গেছে—আর পাঁচ মিনিট।’

প্রৌঢ় ব্যক্তির নাসিকা-নিঃসৃত একটি ধ্বনি অর্ধপথে রুখিয়া গেল। তিনি উঠিয়া বসিয়া বলিলেন, ‘অ্যাঁ, থেমেছে?’

নীলমণি বলিল, ‘না বাবু, আলো নিভে যাচ্ছে।’

‘ওঃ,’ বলিয়া নিরুদ্বেগে প্রৌঢ় আবার শুইবার উপক্রম করিলেন।

শিকার ফস্কায় দেখিয়া যুবক বলিল, ‘আমি তখন বলছিলুম শিশি—’

আমার মাথায় খুন চাপিয়া গেল। চিৎকার করিয়া বলিলাম, ‘খবরদার বলছি! ফের যদি ওদের নাম করেছ ছোকরা, তোমার জুলপি ছিঁড়ে নেব।’

আমার এই আকস্মিক উগ্রতায় যুবক ও প্রৌঢ় দু’জনেই স্তম্ভিতবৎ আমার মুখের দিকে নিষ্পলক নেত্রে তাকাইয়া রহিল।

নীলমণি ভগ্নস্বরে কহিল, ‘বিষ্টি ধরে আসছে বাবু, এই বেলা বেরিয়ে পড়ুন। আমি দোকান বন্ধ করি।’

সাগ্রহে বাহিরের দিকে গলা বাড়াইয়া দেখি সত্যই বৃষ্টির বেগ প্রায় অর্ধেক কমিয়া গিয়াছে—ঝড়ও যেন থামিয়াছে। একাদিক্রমে পাঁচ ঘন্টা দাপাদাপি করিয়া বুঝি তাহারা অবসন্ন হইয়া আসিতেছে।

ছাতাটা তুলিয়া লইয়া উঠিয়া পড়িলাম। আর দেরি নয়। যাইতে হয় তো এই সময়!

পশ্চাৎ হইতে যুবকের কণ্ঠস্বর আসিল, ‘মশায়, দেশলাই-এর গোটাকয়েক কাঠি দেবেন কি?’

রাগে সর্বাঙ্গ জ্বলিয়া গেল। এই সময় পিছু ডাক! পকেট হইতে দেশলাই-এর বাক্সটা বাহির করিয়া টেবিলের উপর ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিয়া বাহির হইয়া পড়িলাম।

ল্যাম্প দপ্‌ দপ্‌ করিয়া দু’বার খাবি খাইয়া নিভিয়া গেল।

কি অন্ধকার! একটা প্রকাণ্ড শহর বর্ষার রাত্রিকালে সহসা আলোকহীন হইয়া গেলে যে কিরূপ ভয়ানক অন্ধকার হয়, তাহা কল্পনা করা দুঃসাধ্য। খুব শক্ত করিয়া চোখ বাঁধিয়া দিলে কিংবা অন্ধ করিয়া দিলেও বোধ করি এর চেয়ে বেশী অন্ধকার হয় না। নিষ্পলক চক্ষু দুটা কোথাও আশ্রয় না পাইয়া বিস্ফারিত হইয়া থাকে—এবং অন্য ইন্দ্রিয়গুলা অতিশয় তীক্ষ্ণ ও সতর্ক হইয়া উঠে।

প্রথম ঝোঁকে খুব খানিকটা চলিয়া আসিয়া থমকিয়া পড়িলাম। কোথায় যাইতেছি—কোন্‌ দিকে যাইতেছি? বাড়ি গিয়া পৌঁছিবার একান্ত আগ্রহে অগ্রপশ্চাৎ না ভাবিয়া বাহির হইয়া পড়িয়াছি বটে, কিন্তু এই বিদ্‌ঘুটে অন্ধকারে পথ চিনিয়া যাইব কি প্রকারে? দোকান হইতে বাহির হইয়া ঠিক যে কোন্‌ মুখে আসিয়াছি তাহাও স্মরণ করিতে পারিতেছি না। হয়তো বা যেদিকে বাড়ি তাহার উল্টা পথেই গিয়াছি। এখন উপায়!

কিন্তু পথের মাঝখানে চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিলে এ সমস্যার সমাধান হইবে না। যে দিকে হোক চলা দরকার, যদি এমনিভাবে চলিতে চলিতে কোথাও একটা আলো বা মানুষের সাক্ষাৎ পাই। সুতরাং আবার সম্মুখ দিকে চলিতে আরম্ভ করিলাম।

বৃষ্টি ও ঝড় ক্রমে কমিয়া কমিয়া একটা বিষাদপূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া থামিয়া গেল। তখন এই অন্ধকারের বুকের উপর আর একটা জিনিস চাপিয়া বসিল—সেটা এই মধ্যরাত্রির ভয়াবহ নীরবতা। এতক্ষণ বৃষ্টির ঝপ্‌ ঝপ্‌ শব্দ ও বাতাসের গোঙানিতে যাহা চাপা ছিল, এখন তাহা উলঙ্গ মূর্তি ধরিয়া দেখা দিল। পৃথিবীর সব মানুষ যেন মরিয়া গিয়াছে, শুধু আমি একা বাঁচিয়া আছি। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে আমি একা—একেবারে নিঃসঙ্গ।

দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া ছুটিয়া চলিলাম। মনের গূঢ়তম প্রদেশে বোধ করি এই আকাঙ্ক্ষাটাই দুর্নিবার হইয়া উঠিয়াছিল যে মানুষ চাই, সঙ্গী চাই, কোনও প্রকারে এই দুঃসহ নিঃসঙ্গতার হাত হইতে পরিত্রাণ পাওয়া দরকার। কিন্তু বেশী দূর যাইতে হইল না। খানিক দূর গিয়াই প্রচণ্ড একটা হোঁচট লাগিয়া হুমড়ি খাইয়া একেবারে এক কোমর জলের মধ্যে পড়িয়া গেলাম। ছাতাটা হাত হইতে কোথায় ছিট্‌কাইয়া পড়িল।

হাঁচোড়-পাঁচোড় করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইতে দেখিলাম,—না, এক কোমর নয়, তবে জল এক হাঁটু বটে। আন্দাজে বুঝিলাম বোধ হয় এতক্ষণ ফুটপাথে চলিতেছিলাম, এবার রাস্তায় নামিয়াছি। কিন্তু এই অবতরণটি যেমন সুখকর নয়, ফুটপাথে ফিরিয়া যাওয়াও তেমনি অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। কারণ ফুটপাথ যে কোন্‌ দিকে তাহা জলে পতনের সঙ্গে সঙ্গে গুলাইয়া গিয়াছে।

পাঁচ ঘণ্টা ক্রমান্বয়ে বৃষ্টি হইবার পর যে রাস্তায় জল জমিতে পারে এ সম্ভাবনাটা তখন পর্যন্ত মাথায় আসে নাই। কিন্তু ভগবান যখন চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিলেন, তখন দুশ্চিন্তা হইল—না জানি কোথায় অথৈ গভীর জল আমার জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে, হয়তো এক পা অগ্রসর হইলেই হুস করিয়া ডুবিয়া যাইব।

এক হাঁটু জলের মধ্যে এক পা এক পা করিয়া সাবধানে অগ্রগামী হইতে লাগিলাম। বুক ফাটিয়া কান্না আসিতে লাগিল। হায় ভগবান! এ আমার কি দুর্দশা করিলে। কেন মরিতে আজ ঘরের বাহির হইয়াছিলাম। যদি বাহির হইয়াই ছিলাম তবে চায়ের দোকানে রাত্রিটা কাটাইয়া দিলাম না কেন?

কিন্তু পশ্চাত্তাপে কোনও ফল হইবে না। আমি মাথা ঠাণ্ডা করিয়া একটু ভাবিতে চেষ্টা করিলাম—এরূপ ক্ষেত্রে কি করা উচিত। প্রথমত কোনও রকমে ফুটপাথে ওঠা চাই—মাঝ রাস্তায় জলের মধ্যে দিয়া দশ ক্রোশ পথ হাঁটিয়া গেলেও কোনও একটা লক্ষ্যে পৌঁছানো যাইবে না। ফুটপাথে উঠিতে পারিলে, কোনও একটা বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিয়া লোক জাগাইয়া রাত্রির মতো আশ্রয় পাওয়া যাইতে পারে কিংবা অন্য কোনও ব্যবস্থা করা সম্ভব। মোট কথা যে উপায়েই হোক, নরললাকের সহিত সম্বন্ধস্থাপন করা দরকার। এই অন্ধকার সমুদ্রের মধ্যে বেশী নয়, আপাতত একটা মানুষের দেখা পাইলেও যে সাক্ষাৎ চাঁদ হাতে পাইব তাহাতে আর সন্দেহ রহিল না।

শামুকের মতো হাঁটিয়া হাঁটিয়া কিন্তু কোনও দিকেই এমন একটা বিশিষ্ট কিছু ধরিতে পারিলাম না যেখান হইতে আমার যাত্রাটাকে সুনিশ্চিত করিতে পারি। এক হাঁটু জল কখনো কমিয়া আধ হাঁটুতে নামিতেছে, কখন উরুত পর্যন্ত পৌঁছিতেছে। এ ছাড়া, দিগ্‌দর্শন করিবার কিংবা আবার যাত্রা নিয়ন্ত্রিত করিবার আর কোনও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য চিহ্নই নাই।

সৃষ্টির প্রথম জীব বোধকরি এমনি অন্ধভাবে প্রলয়পয়োধির অতলতলের মহা স্তব্ধতার মধ্যে অদৃষ্ট পরিচালিত হইয়া হাঁটিয়া বেড়াইত; এবং আবার মহাপ্রলয়ের দিন যখন সূর্যচন্দ্রের আলো নিভিয়া যাইবে, তখন সৃষ্টির শেষ জীব এমনি নিরুপায় দিশাহারা হইয়া ঘুরিয়া বেড়াইবে।

এইভাবে কতক্ষণ চলিয়াছিলাম বলিতে পারি না—সময়ের ধারণাও এই ঘোর নীরবতার মধ্যে ডুবিয়া গিয়াছিল। হঠাৎ পায়ের আঙুলে একটা শক্ত বস্তু ঠেকিল। অনুভবে সিঁড়ির ধাপের মতো বোধ হইল। তাহার উপর উঠিয়া দু’চার পা এদিক ওদিক ঘুরিবার পর বুঝিলাম এতক্ষণে আমার সেই ঈপ্সিত ফুটপাথে পৌঁছিয়াছি।

যাক—তবু তো কিছু পাইয়াছি! দুই হাত বাড়াইয়া হাত্‌ড়াইতে হাত্‌ড়াইতে কিছুক্ষণ চলিলাম। একটা ভিজা দেয়াল হাতে ঠেকিল। তখন সেই দেয়াল ধরিয়া চলিতে আরম্ভ করিলাম। কিছুকাল এইভাবে যাইবার পর কাঠের দরজায় হাত পড়িল। সশব্দে একটা নিশ্বাস ফেলিলাম—এতক্ষণে বুঝি দুঃখ সাগরে কূল মিলিল।

দরজায় সজোরে ধাক্কা দিলাম। তারপরে চিৎকার করিয়া ডাকিতে লাগিলাম—‘কে আছ দোর খোল’ ‘মশায়, দয়া করে একটিবার দোর খুলুন’ ‘ওহে কেউ শুন্‌তে পাচ্ছ, একবার দরজাটি খুলবে?’ কিন্তু কোথায় কে? দরজা যেমন বন্ধ ছিল, তেমনি বন্ধই রহিল। বাড়ির ভিতর হইতে কোন জবাব আসিল না। শুধু আমার আগ্রহ-ব্যাকুল কণ্ঠস্বর কোথাও আশ্রয় না পাইয়া একটা নিঃসঙ্গ প্রেতযোনির মতো এই বিরাট নিস্তব্ধতার মধ্যে গুমরিয়া কাঁদিয়া বেড়াইতে লাগিল।

পূর্ববৎ দেয়াল ধরিয়া আবার আর একটা দরজার সম্মুখে উপস্থিত হইয়া ঠেলাঠেলি হাঁকাহাঁকি করিলাম, কিন্তু কোনই ফল হইল না। দরজা খুলিল না,—এমন কি দরজার অন্তরালে কোথাও যে লোক আছে, তাহার চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া গেল না। আরও দুই তিনটা দরজা এমনিভাবে চেষ্টা করিয়া দেখিলাম, কিন্তু যথা পূর্বং তথা পরং—ফলের কোনও তারতম্য হইল না।

শরীর অবসন্ন হইয়া আসিল,—মনও উদ্‌ভ্রান্ত উদাসীন হইয়া গেল। যদি কলিকাতার সবাই মরিয়া গিয়া থাকে, তবে আমার বাঁচিয়া থাকিয়াই বা লাভ কি? এখন কোথাও একটু শুইবার জায়গা পাইলে আর কিছুরই আমার দরকার নাই। জলের মধ্যে হাঁটিয়া হাঁটিয়া পা দু’টা যেন ভাঙিয়া পড়িতেছে—যদি মরিতেই হয় তবে কোনও একটা শুষ্ক স্থানে পা ছড়াইয়া শুইয়া মরিতে পারিলেই ভাল।

কিন্তু পা ছড়াইয়া শুইবার মতো স্থান এই প্রলয়-প্লাবিত কলিকাতা শহরটার মধ্যে কোথায় পাওয়া যায়? ফুটপাথের ওপরেও তো প্রায় এক ফুট জল!

যা হোক, এরকমভাবে হাল ছাড়িয়া দিলে চলিবে না। মন যতই অবসাদে ডুবিয়া যাইতে চাহিল, ততই তাহাকে জোর করিয়া চাঙ্গা করিয়া তুলিতে লাগিলাম। একটা কিছু সুরাহা হইবেই। এমন কখনো হইতে পারে যে কোনও বাড়ির লোক সাড়া দিবে না? হয়তো এখনই একটা বিলম্বিত ভাড়াটে গাড়ি কিংবা একজন আলোকধারী পথিক আসিয়া পড়িবে।

হঠাৎ আমার মনে একটা দারুণ সন্দেহ উপস্থিত হইল। কোনও অভাবনীয় উপায়ে অন্ধ হইয়া যাই নাই তো! নহিলে একি সম্ভব যে এতক্ষণ ধরিয়া এই দু’চক্ষে একটা কোনও কিছুই দেখিতে পাইতেছি না? এত অন্ধকার কি হইতে পারে? হয়তো সেই যখন জলে পড়িয়া গিয়াছিলাম—

দু’চক্ষু সজোরে কচ্‌লাইতে আরম্ভ করিলাম—কিন্তু চক্ষুর দুর্ভেদ্য তিমির দূর হইল না। হঠাৎ মনে হইল দেশলাই জ্বলিয়া দেখি না কেন! দু’পকেট খুঁজিলাম, দেশলাই নাই। দেশলাই যে জুলপিকে দিয়া আসিয়াছি, তাহা তখন কিছুতেই মনে করিতে পারিলাম না।

যেন পাগলের মতো হইয়া গেলাম। অন্ধ হইয়া গিয়াছি কিনা এ সন্দেহটা তখনি যেমন করিয়া হোক ভঞ্জন করিতেই হইবে—মুহূর্ত বিলম্ব সহে না! আর একটা দরজার সম্মুখে গিয়া দু’হাতে তক্তার উপর চাপড়াইতে লাগিলাম, ‘ও মশায়, কে আছেন একটিবার দোর খুলুন না। ও মশায়!’

পিছন হইতে শান্তস্বরে কে বলিল, ‘মিছে চেঁচামেচি করছেন—এখানে কি লোক আছে যে উত্তর দেবে! এগুলো সব দোকান।’

আমি যেন আঁতকাইয়া উঠিলাম; ‘অ্যাঁ—কে—কে—কে?’

‘কোনও ভয় নেই, আসুন আমার সঙ্গে। আমার হাত ধরুন।’

আমি হাত বাড়াইয়া দিলাম। একখানা হাত—বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা—আমার আঙুলগুলা চাপিয়া ধরিল। আমার পা হইতে চুলের ডগা পর্যন্ত যেন একবার অসহ্য শীতে কাঁপিয়া উঠিল। দাঁতে দাঁতে ঠুকিয়া ঠক্‌ ঠক্‌ শব্দ হইতে লাগিল।

আমি বুদ্ধিভ্রষ্টের মতো জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘আমি কি অন্ধ হয়ে গেছি?’

ছোট্ট একটি হাসির শব্দ হইল।

‘না, ভারি অন্ধকার তাই চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। ভয় পাবেন না, আমি আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।’

আমি বলিলাম, ‘আমার বাড়ি বাদুড়বাগানে।’

‘আচ্ছা।’

কিছুক্ষণ দু’জনেই নীরব। অদৃশ্য আগন্তুক স্বচ্ছন্দে অবলীলাক্রমে আমাকে সব রকম বাধা-বিঘ্ন বাঁচাইয়া লইয়া চলিল। আমার বুদ্ধিশক্তি ক্রমশ ফিরিয়া আসিতে লাগিল।

আমি বলিলাম, ‘আচ্ছা, এই অন্ধকারে আপনি তো বেশ দেখতে পাচ্ছেন।’

কোনও উত্তর পাইলাম না।

কিছুক্ষণ পরে আবার জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘আমি দর্মাহাটার একটা দোকানে চা খেতে ঢুকেছিলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে কোথায় এসে পড়েছিলাম, বলতে পারেন!’

উত্তর হইল, ‘আপনি নিমতলা ঘাটের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন।’

নিমতলা ঘাট! সর্বাঙ্গের রক্ত যেন জল হইয়া গেল। আরও কিছুক্ষণ দুইজনে নিস্তব্ধ।

হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘আপনি কে? আপনার নাম কি?’

‘আমার নাম—শুনে আপনার লাভ নেই। —এদিক দিয়ে ঘুরে আসুন, ওখানে একটা ম্যানহোল খোলা আছে। জলের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন না? ওর মধ্যে যদি আপনি গিয়ে পড়েন তাহলে আর—’

সভয়ে সরিয়া আসিলাম।

অল্পকাল পরে আমার দিব্যচক্ষুষ্মান পথ-প্রদর্শক বলিল, ‘অনেকটা ঘুরে যেতে হবে। শহরের মাঝখানে, ঠন্‌ঠনের কালীবাড়ি ঘিরে প্রায় দেড় মানুষ জল জমেছে। আপনি সে পথ দিয়ে যেতে পারবেন না।’

আমি নিঃশব্দে পথ চলিলাম। মিনিট পাঁচেক পরে বলিলাম, ‘কলকাতা শহরটা মনে হচ্ছে যেন শ্মশান হয়ে গেছে। কোথাও আলো নেই, শব্দ নেই, মানুষ নেই—’

‘ও রকমটা মনে হয়। শহরের প্রাণ হচ্ছে তার রাস্তাঘাট। সেখানে মানুষ না থাকলে শ্মশান আর শহরে কোনও তফাৎ থাকে না।’

আমি কতকটা নিজের মনেই বলিলাম, ‘মনে হচ্ছে যেন এটা ভূতের রাজ্য।’

হাসির শব্দ হইল।

‘এই রকম রাত্রে ভূতেদের ভারি ফুর্তি হয়—কি বলেন?—আচ্ছা, আপনি যখন একলা দরজা হাত্‌ড়ে বেড়াচ্ছিলেন তখন যদি একটা ভূতের সঙ্গে দেখা হত, আপনি কি করতেন বলুন দেখি?’

‘কি করতাম? বোধহয় দাঁতকপাটি লেগে মারা যেতাম।’

‘হা হা হা হা! ভাগ্যে আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল! আচ্ছা, ভূতকে এত ভয় কিসের বলুন দেখি? একটা লোক মরে গেছে বৈ তো নয়?’

‘বলেন কি মশায়! ভূত হল গিয়ে একটা—প্রেতাত্মা। তার চালচলন রীতিনীতি স্বভাবচরিত্র কিছুই জানা নেই—ভয় করবে না?’

‘তা বটে। —আচ্ছা, মনে করুন—না থাক—’

আমার বুকের ভিতরটা হঠাৎ গুর্‌গুর্‌ করিয়া উঠিল। এ কাহার হাত ধরিয়া চলিয়াছি?

তবু মনে সাহস আনিবার চেষ্টা করিয়া বলিলাম, ‘আপনার নাম তো বললেন না। কোথায় থাকেন বলবেন কি?

‘কোথায় থাকি? যেখানে দেখা হয়েছিল, তারই কাছাকাছি থাকি।’

‘আজ আমার যে উপকার করলেন, জন্মেও তা ভুলব না। আবার আমাদের দেখা হবে নিশ্চয়!’

‘দেখা—বোধহয়—আর হবে না—তবে যদি আবার কখনো এমনি বিপদে পড়েন—হয়তো…’

‘আচ্ছা, আপনি কি করেন? কোনও কাজকর্ম করেন নিশ্চয়—তাও কি বলতে দোষ আছে?’

‘আমি কিছু করি না, এমনি ঘুরে বেড়াই—বেকার।’

খানিকক্ষণ আবার চুপচাপ।…

‘আপনার স্ত্রী ছেলে-মেয়ে সব ভাল আছে—কোনও ভাবনা নেই।’

‘আমি চমকাইয়া উঠিলাম।

‘আপনি আমার মনের কথা জানলেন কি করে?’

আবার হাসির শব্দ হইল।

‘এ রকম অবস্থায় পড়লে মানুষের মনে স্বভাবত কি চিন্তা আসে তা আন্দাজ করা কি খুব শক্ত?’

‘না—তা বটে। কিন্তু—কিন্তু—আমার স্ত্রী ছেলে-মেয়ে আছে, আপনি জানলেন কি করে?’

‘ওটাও আন্দাজ।’

দীর্ঘ নীরবতা। এ কে? কোন জগতের অধিবাসী?

আমি মরীয়া হইয়া আরম্ভ করিলাম, ‘দেখুন—’

‘ওকথা জিজ্ঞাসা করবেন না।’

আমার সর্বাঙ্গ থর থর করিয়া কাঁপিতে লাগিল। হাত ছাড়াইবার চেষ্টা করিয়া বলিলাম, ‘আ—আ—আমায় ছেড়ে দিন—আমি—’ গলা দিয়া আর আওয়াজ বাহির হইল না।

‘ভয় পাবেন না—এতক্ষণ যখন এসেছেন, তখন আরও খানিকটা আসুন। আপনার বাড়ি প্রায় এসে পড়েছে।’

পায়ে পায়ে জড়াইয়া যাইতে লাগিল, গলা এমনভাবে বুজিয়া গেল যেন শত চেষ্টা করিয়াও একটা কথা পর্যন্ত বলিতে পারিব না। বরফের মতো হাতখানা আমাকে টানিয়া লইয়া চলিল। …

সহসা শেষ রাত্রের ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগিল। সে দাঁড়াইল, আমার হাত ছাড়িয়া দিল।

‘এইবার আপনি একলাই যেতে পারবেন। এখান থেকে গুণে একশ’ পা এগিয়ে যান, গিয়ে ডানদিকে ফিরলে সামনেই পাবেন—সেই আপনার বাড়ি। ভোর হয়ে আসছে,—এবার আমাকে যেতে হবে।’

আমি অর্ধমূৰ্ছিতের মতো নির্বাক হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলাম।

পুনরায় হাসির শব্দ হইল। কিন্তু এবার যেন শব্দটা বড় ব্যথাপূর্ণ।

সে বলিল, ‘আপনি বড় ভয় পেয়েছেন। আচ্ছা চললাম তবে, এই নিন আপনার ছাতা, জলের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। ভোর হতে আর দেরি নেই—আচ্ছা—বিদায়।’ শেষ কথাটা যেন গভীর দীর্ঘশ্বাসের মতো মিলাইয়া গেল।

আমি আমার সমস্ত শক্তি একত্র করিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘আছেন কি?’

উত্তর আসিল না।

মুখ তুলিয়া দেখিলাম—অতি দূরে পূর্ব আকাশের পুঞ্জিত মেঘ ভেদ করিয়া অল্প একটুখানি ফ্যাকাসে আলো দেখা দিয়েছে।

১৩৩৭

1 Comment
Collapse Comments

অমায়িক হয়েছে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *