অন্তর্যামী – ৩২

বত্রিশ

কাগজটার দিকে তাকিয়ে কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ বসে রইল রানা। মনে পড়ে যাচ্ছে, শিকাগোর অ্যাপার্টমেন্টে লাঞ্চের সময় হওয়া আলোচনার কথা। টিফানির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল অ্যালি। এলিনা তখন বলেছিল, আগামী এক সপ্তাহের ভেতরে কোনও বিপদ হবে না তার। কেন অতটা নিশ্চিত হয়ে বলছিল, সেটা বুঝতে পারছে এবার। টিফানির বিপদ আসলে লিয়ারির তরফ থেকে নয়, স্বয়ং অ্যালির তরফ থেকে আসবে। স্মৃতি ফিরতে যেহেতু এক সপ্তাহ লাগবে ওর, সে-সময়টায় বিপদ না হবারই কথা।

‘গল্পটা এখনও শেষ হয়নি।’ লিয়ারির কথায় সংবিৎ ফিরল রানার। ‘ফোর্ট ডেট্রিকের ঘটনার এক সপ্তাহ পর, ওয়াশিংটন ডি.সি. ও তার আশপাশে, রিসার্চের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু মানুষ আত্মহত্যা করতে শুরু করলেন। এঁদের প্রত্যেকেই প্রজেক্টটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন, বিশেষ করে ওখানে কী ঘটেছে, সেটা ঠিকমত বুঝবার জন্যে… পাল্টা ব্যবস্থা নেবার জন্যে এঁদেরকে খুব প্রয়োজন ছিল সরকারের। এলিনা আর ভেরোনিকার প্রশংসা করতেই হয়—মাঠ থেকে খুব দ্রুত মূল খেলোয়াড়দের সরিয়ে ফেলছিল ওরা, যাতে পুরো প্রজেক্টটাই বন্ধ হয়ে যায়। তা-ই হয়েছিল। এরপরেও থামেনি ওরা, নজরদারি চালিয়ে গেছে। যখনই সরকার রিসার্চটা চালু করার চেষ্টা করেছে, আঘাত হেনেছে। শেষে আমার কোম্পানি আর সাদার্ন অ্যাসোশিয়েটসকে মাঠে নামানো হয়। ওদেরকে ফাঁকি দেবার কৌশল আবিষ্কার করি আমরা।’

‘কৌশলটা কী? খুন?’ ভুরু নাচাল রানা।

‘না, মি. রানা। খুন করা গেলে তো বহু আগেই করা হতো। ওদেরকে নাগালেই পাওয়া যায়নি। আমরা একটা বিকল্প খুঁজে বের করি। মাইওরিডিঙের মাধ্যমে সব জেনে নেয় ওরা, কাজেই সেটাকে ট্যাকেল করার দিকে মনোযোগ দিই। ঢেলে সাজাই আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো—অসংখ্য স্তর ও শাখা-প্রশাখা দিয়ে। নিজের কাজের বাইরে কেউই তেমন কিছু জানবে না; টপ লেভেলের যারা বিস্তারিত জ্ঞান রাখে, তাদের পরিচয় থাকবে গোপন। রিসার্চ সাইটগুলো দাঁড় করানো হলো দুর্গম, প্রত্যন্ত সব এলাকায়, যেখানে, সহজে পৌঁছুনো যায় না; নতুন কেউ তার ধারেকাছে গেলে চোখে পড়ে যাবে। সোজা কথায়, প্যারানয়েডের মত চলতে শুরু করলাম আমরা। এদিক থেকে ডা. ক্যানট্রেল অবশ্য আমাদের চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে ছিলেন।’

চকিতে টিফানির দিকে তাকাল রানা। বুকের ওপর দু’হাত ভাঁজ করে চেয়ারে বসে আছে সে।

‘ফোর্ট ডেট্রিকের ঘটনার এক ঘণ্টার ভেতর ওখান থেকে পালিয়ে যান ডা. ক্যানট্রেল,’ বলল লিয়ারি। ‘কারও সঙ্গে কথা বলেননি, পুলিশ বা মিলিটারির জন্যে অপেক্ষা করেননি কাউকে কিছু না বলে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। সম্ভবত সে- কারণেই আজও বেঁচে আছেন তিনি।’

‘ফ্লোরিডায় আমার এক বন্ধুর ভ্যাকেশন হোম ছিল, ‘ জানাল টিফানি। ‘ওখানে গিয়ে উঠি আমি। ছ’মাসের জন্যে অদৃশ্য হয়ে যাই পরিচিত দুনিয়া থেকে। কেউ জানত না ওখানকার কথা। তাই অ্যালি কিংবা ওর দুই সঙ্গিনী খোঁজ পায়নি আমার। পেলে বাঁচতে দিত না।’

‘আমার তা মনে হয় না,’ রানা মাথা নাড়ল। ‘তোমাকে খুন করতে চাইলে ফোর্ট ডেট্রিকেই খুন করতে পারত অ্যালি আত্মহত্যা করাতে পারত। তিন নম্বর নোটটা লেখাত না।’

‘এ-নিয়ে আমিও ভেবেছি,’ টিফানি বলল। ‘আমাকে ও ঘৃণা করে, সন্দেহ নেই… কিন্তু খুন করার মত না। অন্তত তখন সে-ধরনের চিন্তা ছিল না ওর মাঝে। কাউকেই খুন করার মত মানুষ ছিল না ও। কিন্তু ওর সঙ্গে রয়েছে এলিনা আর ভেরোনিকার মত দুটো সাইকোপ্যাথ। এরা ওর মন বিষিয়ে তুলেছে, ওকে দিয়ে খারাপ কাজগুলো করিয়ে নিচ্ছে। নিজেদের ক্ষমতা তো খুব বেশি কিছু না, স্রেফ মাইওরিডিং পর্যন্ত। কিন্তু স্বার্থোদ্ধারের জন্যে অ্যালি একটা মোক্ষম অস্ত্র। বাচ্চা একটা মেয়ে, ভালমন্দ বিচারের বয়স হয়নি, ওকে যা বোঝানো হচ্ছে তা-ই করছে। আর ওকে মোটিভেটেড রাখার জন্যে আমাকে বেছে নিয়েছে ওরা। এমনভাবে ব্রেইনওয়াশ করেছে ওর, অ্যালির জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য এখন আমাকে খুন করে প্রতিশোধ নেয়া… বাকি যা করানো হচ্ছে ওকে দিয়ে, সবই আমার কাছে পৌঁছুনোর জন্যে। স্লিপ ইন্টারোগেশনে এসবই বলেছে অ্যালি।’

‘পাঁচ বছরে তোমাকে ও খুঁজে পায়নি কেন?’

‘কারণ, ফ্লোরিডায় ছ’মাস লুকিয়ে থাকার পর ডা. ক্যানট্রেল যখন আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, তাঁকে রক্ষার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়,’ বলল লিয়ারি। ‘নামধাম পাল্টে তাঁকে পাঠিয়ে দেয়া হয় অ্যামারিলোতে। হাতেগোনা দু’চারজন ছাড়া কেউ সে-খবর জানত না।’

টিফানির দিকে তাকিয়ে মায়া হলো রানার। পাঁচ বছরের সার্বক্ষণিক আতঙ্কের ছাপ পড়েছে চেহারায়। অ্যালির আতঙ্ক। ডাইনোসরের পুতুল জড়িয়ে ধরে থাকা নিষ্পাপ এক কিশোরীর সঙ্গে তা কিছুতেই মেলাতে পারছে না ও।

‘অ্যালি যদি এতই শক্তিশালী হয়ে থাকে,’ লিয়ারিকে জিজ্ঞেস করল ও, ‘দু’মাস আগে ওকে আপনারা ধরলেন কীভাবে?’

বিব্রত দেখাল লিয়ারিকে। ‘ইয়ে… ডা. ক্যানট্রেলকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করি আমরা… তাঁকে কিছু না জানিয়ে। তাঁর ঠিকানা খুঁজে বের করি আমি, এরপর যাদের ওপর এলিনা আর ভেরোনিকা নিয়মিত নজর রাখছে, তেমন একজনকে কৌশলে জানিয়ে দিই ঠিকানাটা। এমনভাবে, যেন সে ঘটনাক্রমে ওটা জানতে পেরেছে। জানতাম, কোনোভাবে ঠিকানাটা পেলে অ্যালি আর চুপ করে বসে থাকবে না, হামলা করতে আসবে।’

‘প্ল্যানটা ঠিক পছন্দ হলো না আমার,’ রানা বলল। ‘এক মাইল দূর থেকে মাইণ্ড কন্ট্রোল করতে পারে অ্যালি। আপনারা ওকে লোকেট করার আগেই টিফানিকে আত্মহত্যা করাতে পারত!’

‘ওঁরা আসলে আমার বাঁচামরা নিয়ে মাথা ঘামাননি,’ ক্ষুব্ধ সুরে বলল টিফানি। ‘ভেবেছেন, আত্মহত্যা করালেই ভাল। তা হলে শিয়োর হতে পারবেন, ওকে এক মাইলের ভেতর পাওয়া যাবে। অপারেশন চালাতে পারবেন সেই মোতাবেক।’

‘না, না, আমরা আপনার মৃত্যু চাইনি,’ তাড়াতাড়ি বলল লিয়ারি। কৈফিয়ত দিল, ‘ঝুঁকি একটু বেশি নিয়েছিলাম বটে, কিন্তু ওকে ধরার জন্যে ওটুকু না নিয়ে উপায় ছিল না। তা ছাড়া, আপনার নিরাপত্তার জন্যে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। বাড়ি, গাড়ি, অফিস… সবখানে ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। অ্যামারিলোর ওপরে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা আধ ডজন ড্রোন উড়েছে, মিরাণ্ডা স্যাটেলাইট ফিক্স করে রাখা হয়েছে। আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ যেন আপনার কাছাকাছি পৌছুতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রেখেছিলাম আমরা।’

‘ধরে নিচ্ছি, ওতে কাজ হয়েছিল?’ জিজ্ঞেস করল রানা। ‘হ্যাঁ। ফাঁদ পাতার এক মাসের মাথায়, ডা. ক্যানট্রেলের বাড়ির দু’ব্লক দূরে, একটা পার্কে অ্যালিকে খুঁজে পায় একটা ড্রোন। সব ড্রোনেই আমরা লো-পাওয়ারের মিসাইল বসিয়েছিলাম, মেয়েটাকে দেখতে পাওয়ামাত্র একটা মিসাইল ছোঁড়া হয়। ওর শরীরের পাঁচ মিটার দূরে সেটার বিস্ফোরণ ঘটাই আমরা। শকওয়েভে ছিটকে পড়ে অ্যালি, পাঁজরের তিনটা হাড় ভেঙে যায়, জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর আমাদের টিম গিয়ে কবজা করে ওকে। জ্ঞান যাতে না ফেরে, তার জন্যে নারকোটিক্স ব্যবহার করা হয়েছিল।’

‘বাকি দু’জন ছিল না ওর সঙ্গে?’

‘থাকলেও কাছাকাছি ছিল না। আমরা ওদের হদিস পাইনি। অপারেশনের ওটাই ছিল একমাত্র দুর্বলতা।’

‘দুর্বলতা তো বটেই,’ টিফানি বলল। ‘ওদের ভয়ে গত দু’মাস ধরে আমাকে বডিগার্ড নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে: ওরা আমার মন পড়ছে কি না। দু’জনেই খুব চালু, জানো? নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব থেকে যদি মাইণ্ডরিডিং করে, মাথায় কোনও ব্যথা হয় না। তাই বোঝাও যায় না, ওরা আশপাশে আছে কি না।’

সত্যিই টিফানির ওপর নজর রাখছিল ওরা, ভাবল রানা। কেন, তা অনুমান করা কঠিন নয়। অ্যালিকে হারিয়ে নিশ্চয়ই অস্থির হয়ে উঠেছিল। ভেবেছিল, টিফানির মাধ্যমে খোঁজ পাওয়া যাবে অ্যালির… ওকে উদ্ধার করা যাবে।

‘হুম, সবই পরিষ্কার,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল রানা। ‘এবার তোমাকে শেষ একটা প্রশ্ন করব, টিফানি। তুমি কি সত্যিই অ্যালিকে বাঁচাতে চাও?’

‘অবশ্যই!’ জোর গলায় বলল টিফানি। ‘ওর কোনও দোষ নেই। এসবের কিছুই ও স্বেচ্ছায় করেনি।’

‘কিন্তু মেয়েটা বিপজ্জনক!’ প্রতিবাদ করল লিয়ারি। ‘শুধু আপনার জন্যে নয়, অনেক মানুষের জন্যে।’

‘সমস্যাটার একটা সমাধান আছে!’

বিরক্ত হলো লিয়ারি। কীসের কথা বলছে টিফানি, তা বুঝতে পেরেছে।

‘কী সমাধান?’ জিজ্ঞেস করল রানা।

‘সমস্যার সূচনা যা দিয়ে হয়েছে, সেটাই,’ বলল টিফানি। ‘জিনেটিক ম্যানিপুলেশন। পাঁচ বছর সময় পেয়েছি আমরা এটা নিয়ে কাজ করতে। যে-ড্রাগের প্রভাবে অ্যালি তার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা পেয়েছে, সেটার প্রতিষেধক তৈরি করা হয়েছে। চাইলেই পুরো প্রক্রিয়াটা রিভার্স করে দিতে পারি আমরা।’

অপলকে চেয়ে রইল রানা।

‘সময় লাগবে প্রচুর, কিন্তু কাজ হবে ওতে, দৃঢ়কণ্ঠে বলল টিফানি। ‘অ্যালিকে যদি আরেকবার জীবন্ত ধরা যায় আর কী।’

এভাবে বলা উচিত হচ্ছে না আপনার,’ লিয়ারি মাথা নাড়ল। ‘অ্যানিমেল ট্রায়ালে কাজ হয়েছে মানে এ-ই নয় যে…’

‘কাজ হবে, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি,’ তাকে থামিয়ে দিল টিফানি। ‘ক্ষমতাটা হারানোর পর কী ঘটবে, তা বলতে পারি না। হয়তো মানসিক বিপর্যয় হবে ওর, দীর্ঘদিন থেরাপি দিতে হবে। কিন্তু তারপরেও ছোট্ট একটা সম্ভাবনা থেকে যায়—কোনোদিন সুস্থ হবে ও, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। আমাদেরকে সে-চেষ্টা করতেই হবে।’

‘অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন আর মেজর জেনারেল রাহাত খানও একই মত দিয়েছেন,’ মুরল্যাণ্ড জানাল।

হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল লিয়ারি।

‘বেশ,’ বলল রানা। ‘তা হলে প্ল্যানটা কী? কিছু একটা নিশ্চয়ই ঠিক করেছ তোমরা?’

‘করেছি।’

‘শোনাও।’

দৃষ্টি বিনিময় করল মুরল্যাণ্ড আর লিয়ারি।

‘কী হলো?’ রানা তাড়া দিল ওদেরকে।

‘আরেকটা ফাঁদ পাতব আমরা,’ লিয়ারি বলল। ‘এবার টোপ হিসেবে ডা. ক্যানট্রেল আর আপনি… দু’জনেই থাকবেন। এতে কোনও জোরাজুরি নেই। চাইলে আপনি এতে অংশ না-ও নিতে পারেন। আপনার নামে যে-ম্যানহান্ট শুরু করা হয়েছিল, সেটা ইতিমধ্যে বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জনসাধারণকে বলা হবে, বোমাবাজ লোকটাকে খুঁজে পাওয়া গেছে, ধরা পড়ার ভয়ে আত্মহত্যা করেছে সে। মানে, আপনি মুক্ত। যেখানে খুশি চলে যেতে পারেন।’

‘এসব শুনতে চাই না,’ বলল রানা। ‘আমি থাকছি। প্ল্যানটা খুলে বলুন আমাকে।’

‘সরি, দোস্ত,’ মুরল্যাণ্ড বলল, ‘ওটাই জানানো যাবে না তোমাকে। অন্ধকারে থাকতে হবে, নইলে তোমার মাথা থেকে সব জেনে নেবে অ্যালি।’

ঠোঁট কামড়াল রানা। অভিজ্ঞতাটা নতুন। অন্ধের মত কোনও কাজে নামতে অভ্যস্ত নয় ও। তবে মিনিট দুয়েক ‘ভেবেই বুঝতে পারল, আর কোনও উপায়ও নেই।

‘শুধু এটুকু বলতে পারি,’ লিয়ারি বলল, ‘একটা বাড়িতে রাখা হবে আপনাদের-পূর্ব ক্যানসাসের ফার্ম ল্যাণ্ডে। বাড়ির আধমাইল দূরে একটা ব্যস্ত রাস্তা থাকবে, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট আর স্টোর। চব্বিশ ঘণ্টাই মানুষ আনাগোনা করে ওখানে।’

প্ল্যানের একটু আভাস পেল রানা। ‘হুম! আপনারা তা হলে অ্যালিকে আশ্বস্ত করতে চাইছেন যে, ভিড়ভাট্টার কাভার নিয়ে ওর পক্ষে আমাদের কাছাকাছি পৌছানো সম্ভব… লকিঙের রেঞ্জের মধ্যে।’

‘আমরা চাই, ও আরও কাছাকাছি পৌঁছাক, হেঁয়ালি করল লিয়ারি। ‘একদম কাছে!’

‘মানে?’

টিফানি দিল জবাবটা। ‘আমাকে অ্যালি কতটা ঘৃণা করে, তা তুমি জানো না, রানা। ঘৃণাটা এতই বেশি যে, আমাকে আত্মহত্যা করালে তৃপ্তি পাবে না ও। এল্ সেডেরোর ইন্টারোগেশনের সময় বলেছে, আমাকে ও নিজ হাতে খুন করতে চায়। জীবনের শেষ মুহূর্তটায় আমি যেন ওর চোখে চোখ রেখে মরি।’ গলা ভেঙে গেল ওর।

কয়েক মুহূর্তের নীরবতা নেমে এল কামরায়।

গলা খাঁকারি দিল রানা। ‘এসব জেনেও তুমি টোপ হতে চাইছ?’

‘আমি নিরুপায়, রানা। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যে, অ্যালিকে সুস্থ করে তোলার জন্যে… ঝুঁকিটা আমাকে নিতেই হবে।’

মাথা নিচু করে ফেলল টিফানি।

‘ব্রিফিং এখানেই শেষ,’ বলল লিয়ারি। ‘ডা. ক্যানট্রেল, মি. রানা, তৈরি হয়ে নিন। আপনাদেরকে আমরা ওই বাড়িতে নিয়ে যাব। ডা. ক্যানট্রেলের বসকে কৌশলে বাড়ির ঠিকানা, আর ওখানে যাবার একটা মিথ্যে অজুহাত জানিয়ে দেয়া হবে। অ্যালি যখন স্মৃতি ফিরে পাবে, নিশ্চয়ই খুঁজতে বেরুবে ডা. ক্যানট্রেলকে। ঠিকানাটা জেনে নেবে সে। ততক্ষণ আমরা ওর অপেক্ষায় থাকব।’

‘প্ল্যানটা মোটেই জুৎসই নয়,’ মন্তব্য করল রানা। ‘ফার্মহাউসটা যে একটা ফাঁদ, সেটা ও সহজেই বুঝতে পারবে।’

‘তা তো পারবেই,’ স্বীকার করল লিয়ারি। ‘শুরুতে যদি না-ও বোঝে, আপনাদেরকে লক করামাত্র জেনে যাবে।’

‘তা হলে ফাঁদে পা দেবে কেন সে?’

‘হয়তো দেবে না। আবার দিতেও পারে। ফাঁদের ব্যাপারটা জেনে ফেলায়, ওভার-কনফিডেন্ট হয়ে উঠতে পারে। হয়তো ভাববে, আমাদেরকে বোকা বানানো সম্ভব।’

‘ভাবলে একেবারে ভুল ভাববে না।’

কাঁধ ঝাঁকাল লিয়ারি। ‘ঝুঁকি তো থাকেই।’

‘ভেরোনিকা ওকে বাধা দেবে না?’

‘দিলেও শুনবে ভেবেছেন?’ হাসল লিয়ারি। ‘এখন আর কচি খুকি নয় অ্যালি। এলিনা না থাকায় ভেরোনিকা একা। কেন ওর কথায় উঠবে-বসবে সে? শক্তির দিক থেকেও ভেরোনিকা ওর সামনে চুনোপুঁটি। এখন বরং ওর কথাতেই চলতে হবে ভেরোনিকাকে।’

চোখের সামনে অ্যালির নিষ্পাপ মুখটা ভেসে উঠল রানার। হিংস্র এক খুনির মত যে-চেহারা ওর সামনে তুলে `ধরছে এরা, তা মানতে পারছে না কিছুতেই।

রানার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে লিয়ারি। শীতল গলায় বলল, ‘ওকে আপনি চেনেন না, মি. রানা। সত্যিকার অ্যালিকে ডা. ক্যানট্রেল চেনেন… আমি চিনি। ও কী করতে চায়, আর ওর পক্ষে কী করা সম্ভব, তা জানি শুধু আমরা। আমি এখনও বলব, এতসব ঝামেলায় না গিয়ে ওকে খতম করে দেয়াই ভাল।

‘কক্ষণো না!’ প্রায় চেঁচিয়ে উঠল রানা।

‘আমিও তোমার সঙ্গে একমত,’ সুর মেলাল টিফানি। ‘এসব ঘটার আগে অ্যালির চেহারা আমি দেখেছি। জানি, ও কী হতে পারত। এখনও ওকে সে-জীবনে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব।’

হাল ছেড়ে দিল লিয়ারি। ‘বেশ, তা হলে উঠুন। রওনা হওয়া যাক।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *