অন্তরে বাহিরে দাসত্বের রজ্জু
একটি দেশের সবচেয়ে আধুনিক মানুষ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা। তারা জ্ঞানী। রুচিতে, মননে, চিন্তায় তারা। আধুনিক। তারা কালোত্তীর্ণ হতে চান। জরা-জীর্ণকে দূর করে নতনকে আলিঙ্গন করতে চান। সমাজকে তারা বদলে দিতে চান। কালের আধুনিকতায়। দেশের প্রতি তাদের অকৃত্রিম প্রেম থাকে। আর এজন্যই তারা আধুনিক।
পৃথিবীর প্রতিটি সমাজ সমস্যাসংকুল। আর সেসব সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরাই বেশি ভাবেন। তারা তর্ক করেন। মত প্রকাশ করেন। আধুনিক মতবাদ দাঁড় করান। প্রতিবাদ করেন। তাঁদের প্রতিবাদ হয় অহিংস কিন্তু সে প্রতিবাদে মসনদ ঝাঁকুনি খায়। আমাদের সমাজেও কালে কালে সমস্যার সৃষ্টি হবে। সংকট তৈরি হবে। একটা সমাজ ও রাষ্ট্র হলো চলমান, সেখানে একটি সংকট নিরসনের পর অন্য আরেকটি তৈরি হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের তাই যেকোনো সংকটে অগ্রসর ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের প্রশ্নে এক হতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। গলা ছেড়ে বলতে হবে, লিখতে হবে। প্রতিবাদে গাইতে হবে। তুলির আঁচড়ে আঁকতে হবে। অনেক তরুণ ভাবেন, আমার কথায় কী হবে! আমি বললেই বা কী আসে-যায়! অন্যদিকে, তরুণদের একটা অংশ তাঁদের মস্কিষ্ককে বর্গা দিয়েছেন পুচ্ছ পোঁছা রাজনীতির বড় ভাইদের কাছে। সে বড় ভাইগুলো হলো জগতের শ্রেষ্ঠ মূর্খ। অথচ সেই মত, নাক গুঁজে রেখে রেখে ওরা যে ঘাণেন্দ্রিয় হারাচ্ছে সে হুঁশ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা যখন দলান্ধ হয়ে চুপ থাকেন। তখন খুব কষ্ট হয়। তাদের মৌনতায় একটি সমাজ কাঁদে। ঝিমিয়ে পড়ে। সে সমাজে অন্যায়-অপরাধ বাড়তে থাকে। সে দায়ভার তরুণদের ওপর পড়ে। তোমার বলায়-লেখায় হুট করে হয়তো সমাজ বদলায় না। কিন্তু একজন কথা বললে, পাশের জন। কথা বলার সাহস পান। অন্য একজন কথা বলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যূথবদ্ধ হন।
যারা দাসত্বের রাজনীতির রজ্জুতে হাত-পা বেঁধে রেখেছ, তোমরা একদিন অনুতাপ করবে খুব। নীরবে-নিভৃতে আত্মদহনে পুড়বে। মগজকে যে মুক্তভাবে বিকশিত হতে দিচ্ছ না, সেটার জন্য খুব জ্বালাপোড়া করবে তোমার হৃদয়। দাসত্বের রঞ্জু থেকে নিজেকে মুক্ত করো। মানুষের জন্য প্রতিবাদ করো। দলের সংকীর্ণতা থেকে উর্ধ্বে উঠে দেশের পাশে দাঁড়াও। অন্যের দাস হয়ে থাকার চেয়ে আপন ভুবনে রাজা হওয়া শ্রেষ্ঠতম। আর যারা ভাবছ, তুমি একা, তোমার প্রতিবাদে কী আসে যায়, তারা ভুল করছ। নিজেকে ক্ষুদ্র মনে করাই ক্ষুদ্রতা। তুমি ক্ষুদ্র নও। আফ্রিকান একটি প্রবাদ আছে, If you think you are too small to make a difference, try sleeping with a mosquito. একটা মশা তোমার চেয়েও ক্ষুদ্র, তবে তোমার ঘুম হারাম করে দিতে পারে। মানুষ ক্ষুদ্র হয় তার কর্মে ও ভাবনায়। বড়ও হয় কর্মে ও ভাবনায়। মানুষের ক্ষুদ্রতা আকারে কিংবা সংখ্যায় নয়। অন্তরে-বাইরে দাসত্বের রজ্জ খুলে দিয়ে হৃদয়কে অনুসরণ করো। সত্য সুন্দরের জন্য কণ্ঠ তোলো। দেশের জন্য দাঁড়াও।