তখন তরুণ রবি প্রভাতকালে আনিছে উষার পূজা সোনার থালে । সীমাহীন নীল জল করিতেছে থলথল্ , রাঙা রেখা জ্বলজ্বল্ কিরণমালে । তখন উঠিছে রবি গগনভালে । গাঁথিতেছিলাম জাল বসিয়া তীরে । বারেক অতল-পানে চাহিনু ধীরে — শুনিনু কাহার বাণী পরান লইল টানি , যতনে সে জালখানি তুলিয়া শিরে ঘুরায়ে ফেলিয়া দিনু সুদূর নীরে । নাহি জানি কত কী যে উঠিল জালে । কোনোটা হাসির মতো কিরণ ঢালে , কোনোটা বা টলটল্ কঠিন নয়নজল , কোনোটা শরম-ছল বধূর গালে — সেদিন সাগরতীরে প্রভাতকালে । বেলা বেড়ে ওঠে , রবি ছাড়ি পুরবে গগনের মাঝখানে ওঠে গরবে । ক্ষুধাতৃষ্ণা সব ভুলি জাল ফেলে টেনে তুলি — উঠিল গোধূলি-ধূলি ধূসর নভে , গাভীগণ গৃহে ধায় হরষ-রবে । লয়ে দিবসের ভার ফিরিনু ঘরে , তখন উঠিছে চাঁদ আকাশ- ' পরে । গ্রামপথে নাহি লোক , পড়ে আছে ছায়ালোক , মুদে আসে দুটি চোখ স্বপনভরে ; ডাকিছে বিরহী পাখি কাতর স্বরে । সে তখন গৃহকাজ সমাধা করি কাননে বসিয়া ছিল মালাটি পরি । কুসুম একটি দুটি তরু হতে পড়ে টুটি , সে করিছে কুটিকুটি নখেতে ধরি ; আলসে আপন মনে সময় হরি । বারেক আগিয়ে যাই , বারেক পিছু । কাছে গিয়ে দাঁড়ালেম , নয়ন নিচু । যা ছিল চরণে রেখে ভূমিতল দিনু ঢেকে , সে কহিল দেখে দেখে , ‘ চিনি নে কিছু । ' — শুনি রহিলাম শির করিয়া নিচু । ভাবিলাম , সারাদিন সারাটি বেলা বসে বসে করিয়াছি কী ছেলেখেলা! না জানি কী মোহে ভুলে গেনু অকূলের কূলে , ঝাঁপ দিনু কুতূহলে — আনিনু মেলা অজানা সাগর হতে অজানা ঢেলা । যুঝি নাই , খুঁজি নাই হাটের মাঝে — এমন হেলার ধন দেওয়া কি সাজে! কোনো দুখ নাহি যার কোনো তৃষা বাসনার এ-সব লাগিবে তার কিসের কাজে! কুড়ায়ে লইনু পুন মনের লাজে । সারাটি রজনী বসি দুয়ারদেশে একে একে ফেলে দিনু পথের শেষে । সুখহীন ধনহীন চলে গেনু উদাসীন — প্রভাতে পরের দিন পথিকে এসে সব তুলে নিয়ে গেল আপন দেশে ।