অধ্যায়-৮ : জেরুজালেমের পতন

অধ্যায় ৮ : জেরুজালেমের পতন

এতক্ষণ যে হেরোদের কথা বলা হলো, তিনি হেরোদ দ্য গ্রেটের নাতি হেরোদ আগরিপাহ (১৯৯৪) দ্য ফার্স্ট (Hpóons Aypurnac)। তিনি মারা যাবার পর রাজা হন তার ছেলে হেরোদ আগরিপাহ দ্য সেকেন্ড। তিনিই হেরোদীয় রাজবংশের পঞ্চম ও শেষ রাজা (‘রাজা’ হিসেবে না নিলে, হেরোদ বংশীয় শাসক ছিলেন মোট আট জন)।

পরবর্তী প্রসঙ্গে যাবার আগে ইহুদী প্রধান ইমাম বা হাই প্রিস্ট জোনাথানের মৃত্যুর ঘটনা না তুললেই নয়। যে কজন ইহুদী হাই প্রিস্টের নাম ভালো করে জানি আমরা, তার মাঝে একজন ছিলেন আনানুসের ছেলে তরুণ জোনাথান। তিনি যখন প্রাণ হারান, তখন চলছে সবে ৫৮ সাল।

যখন ইহুদীদের ঈদুল ফিসাখের সময় হতো, মানে পাসওভার আরকি, তখন দূর দূরান্ত থেকে ইহুদীরা ছুটে আসত এই পবিত্র জায়গায়। শুধু পাসওভার না, অন্যান্য ঈদেও একই অবস্থা। সে সময় এখানে ব্যবসা হতো দারুণ। জেরুজালেমের জনসংখ্যা তখন এক ধাক্কায় হয়ে যেত প্রায় দশ লাখ। ফটকের বাইরে ব্যবসায়ীরা বসে থাকতো, দূর থেকে আসা তীর্থযাত্রীরা এখানে এসে বাইতুল মুকাদ্দাসে কুরবানি করতো। কিন্তু যা-ই কুরবানি দিক না কেন, পশু কিনতে হবে ইসরাইলি মুদ্রা শেকেল দিয়ে; ধর্মীয় মাহাত্ম্যের কারণে অন্য কোনো বিজাতীয় মুদ্রা তারা গ্রহণই করবে না, ফটকে বসে থাকা খুচরা ব্যবসায়ীদের অধীনেই ছিল সেই কুরবানির পশু। বিদেশি মুদ্রা বদলে তারা শেকেল দিতো তীর্থযাত্রীদের হাতে, বিনিময়ে মোটা অংকের পারিশ্রমিকও রেখে দিত। কেউ তো আর না করত না।

ইমামদের বেঁধে দেয়া নিয়ম- বাইতুল মুকাদ্দাসের উঠানের একটা সীমানা পর্যন্ত হলো জেন্টাইলদের কোর্ট, এটা পার হতে পারবে কেবল ইহুদীরা, বিধর্মী অর্থাৎ জেন্টাইলরা থাকবে এ সীমানার বাইরে। একটু দূরে গিয়ে আরেকটা সীমানা, মহিলাদের কোর্ট, এর চেয়ে ভেতরে মহিলাদের যাওয়া নিষেধ, গেলে কপালে তার মৃত্যুদণ্ড। এরপর শেষ সীমানাটা অর্ধবৃত্তাকার, এটার নাম ইসরাইলি কোর্ট, এ পর্যন্ত সাধারণ পুরুষ ইহুদীরা আসতে পারত, নাইকানোর গেট পেরিয়ে কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে সেই সীমানা শেষ। ঈশ্বরের উপস্থিতির সবচেয়ে কাছে এ পর্যন্তই যেতে পারত সাধারণ মানুষেরা, এর বেশি না। কারণ, ঠিক ওপারে বাইতুল মুকাদ্দাসের পবিত্রতম স্থান হোলি অফ দ্য হোলি’জ, যেখানে স্রষ্টার উপস্থিতি আছে বলে বিশ্বাস করত ইহুদীরা। এ কারণে, একে আল্লাহর ঘরও বলতো।

বছরে মাত্র একদিন প্রধান ইমাম সেই কক্ষে প্রবেশ করতে পারেন, সেটি হলো পাপমোচনের দিন, ইয়ম কিপুর। তাদের বিশ্বাস, সেদিন ইসরাইল জাতির পাপ মোচন করেন স্রষ্টা। একটি দড়ি তার শরীরে শক্ত করে পেঁচিয়ে দেয়া হতো, সে অবস্থায় তিনি পবিত্র কক্ষে প্রবেশ করতেন। যদি তিনি জীবিত বেরিয়ে আসেন, তাহলে ঈশ্বর সবার পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন প্রধান ইমামের প্রার্থনার বদৌলতে। আর যদি তিনি যোগ্য না হন, তাহলে ইহুদীদের বিশ্বাস ছিল, তাকে সেখানেই আল্লাহ মৃত্যু দেবেন। তিনি যদি মারা যান, মৃতদেহ বয়ে আনার জন্য যেন আর কাউকে সে কক্ষে প্রবেশ করতে না হয়, সেজন্যই তার কোমরের দড়ি, ওটা দিয়েই টেনে আনবে তাকে লোকে।

তো সে বছর, মানে ৫৮ সালে, ইমাম জোনাথানের দায়িত্ব পড়লো পবিত্র কক্ষে প্রবেশ করার। উঠানে তাকে দেখামাত্রই লোকে তাকে একবার স্পর্শ করার জন্য পাগল হয়ে যেত। এই মানুষটি যে একটু পর ঈশ্বরের কক্ষে ঢুকতে পারবেন! সেই ভীড় ঠেকাতে প্রহরীরা ব্যূহ তৈরি করে তাকে ঘিরে রাখত। কিন্তু সেই অল্পক্ষণের ছুঁয়ে দেয়ার মুহূর্তটা, সেটি শেষ হয়ে যাওয়া মাত্রই হাজার হাজার মানুষ অবাক হয়ে দেখলো, মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন ইমাম জোনাথান। তার দেহ থেকে রক্তবন্যা গড়িয়ে যাচ্ছে। কোনো এক কারণে এই ভীড়ের সুযোগে এত মানুষের সামনে কে বা কারা হত্যা করে গিয়েছে জোনাথানকে।

এখন আমরা জানি কে তাকে খুন করান। খুনের নির্দেশদাতা ছিলেন তৎকালীন জুদাহ প্রদেশের রোমান প্রকিউরেটর বা প্রিফেক্ট অ্যান্টনিয়াস ফেলিক্স (৫২-৬০)। ফেলিক্স এক গ্রেফতারকৃত ইহুদী ডাকাত এলিয়েৎসার বিন দিনিয়াসের সাথে চুক্তি করেন যে তাকে তিনি মুক্ত করে দেবেন, যদি সে তার কথা শোনে। সেই ডাকাত তার সাথে দেখা করতে এলে ফেলিক্স তাকে বন্দী করে রোমে পাঠিয়ে দেন। কিছুদিন পর ফেলিক্স প্রধান ইমামকে হত্যা করতে চাইলেন। কারণ জোনাথান বারবার তাকে তিরস্কার করতেন, তিনি নাকি ভালোভাবে শাসন করতে পারেন না ইহুদীদের। জোনাথান হলে আরও ভালো পারতেন, ইত্যাদি। ফেলিক্স তার বন্ধু ডোরাসের সাথে আলাপ করে এক ডাকাতদলকে ঠিক করলেন, যারা তীর্থযাত্রীর বেশে যাবে জেরুজালেমে, কাপড়ের নিচে ছুরি লুকিয়ে, এবং সুযোগ বুঝে খুন করবে জোনাথানকে। তারা তাই করেছিল। বলা হয়, এ ডাকাত দলের নেতা করা হয় সেই রোমে পাঠানো ডাকাত এলিয়েৎসারকে। এই খুনের কখনও বদলা নেয়া হয়নি, তাই এ ডাকাতদল খুনের পরে নিরাপত্তার অভাবে ভোগেনি, ফেলিক্স তাদের জন্য সেই ব্যবস্থা করে দেন।

যাক গে, এবার হেরোদের কথায় ফেরা যাক। হেরোদ আগরিপাহ দ্য ফার্স্ট মারা যাবার পর টানা দুই দশক ধরে চলে প্রিফেক্টদের শাসন, নামে রাজা ছিলেন অন্য কেউ। এ সময়টাতে রোমান শাসক আর ইহুদীদের মাঝে সারাক্ষণ হাঙ্গামা বেঁধেই থাকত। রোমান প্রিফেক্ট ফ্লোরাসের আমলে সিজারিয়া ম্যারিটিমা-তে গ্রিক আর ইহুদীদের যুদ্ধ হয়। এই জায়গাটাই ছিল রোমান শাসিত জুদাহ প্রদেশের রাজধানী, জেরুজালেম নয়! ৬৪০ সালে মুসলিম বাহিনীর বিজয়ের পর এ শহর ধ্বংস হয়, এবং গুরুত্ব হারায়। আরবিতে এ শহর কায়সারিয়া নামে পরিচিত, হিব্রুতে সোরিয়া। বর্তমানে ইসরাইলের হাইফা জেলায় পড়েছে এটি, সাবেক রাজধানী তেলআবিব যাওয়ার পথে পড়ে।

যা বলছিলাম, প্রিফেক্ট ফ্লোরাস এ হাঙ্গামায় ইহুদী বিরোধী মনোভাব ধরে রাখলেন। তিনি তার বাহিনীকে জেরুজালেমে দাঙ্গা করতে অনুমতি দিলেন। তারা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ইহুদী ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলল। উল্লেখ্য, এ সময় ইহুদীদের মধ্যেও রোমানপন্থী লোকজন ছিল। যেই না প্রিফেক্টের বাহিনী জেরুজালেম ত্যাগ করল, সাথে সাথেই ইহুদী বিদ্রোহীরা সেই রোমানপন্থী ইহুদীদের হত্যা করে ফেলল। সেই সাথে জুদাহ রাজ্যের কিছু রোমান সেনাকেও হত্যা করল তারা। ফলে রোমানদের পক্ষে উঠে দাঁড়াতে আর কোনো ইহুদী সাহস পেল না। এ ব্যাপারটা সামাল দিতে সিরিয়ার রোমান গভর্নর ও তার বাহিনী জেরুজালেম অভিযানের জন্য প্রস্তুত হলো। তারা বাইতুল মুকাদ্দাস অবরোধ করল। কিন্তু ইহুদীদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে ফিরে গিয়ে সমুদ্র তীরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলো তারা।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ইহুদীদের যে আন্দোলন শুরু হয়, তা ‘ইহুদী মহাবিদ্রোহ’ বা ‘ইহুদী যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। ৬৬ সাল থেকে ৭৩ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয় এ মহাবিদ্রোহ। ঘটনাটা কেন ঘটলো, সেটা ব্যাখ্যা করা যাক।

৬৬ সালে বিদ্রোহ শুরু হবার সময় প্রখ্যাত বা কুখ্যাত রোমান সম্রাট নিরোর (৫৪-৬৮) শাসনের দ্বাদশ বছর চলছে। না, রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন না। ওটা লোককথাই। তো, রোমান আর ইহুদীদের মাঝে বেশ অনেক বছর ধরেই চলে আসছিল ধর্মীয় নীতিগত দ্বৈরথ। কফিনের শেষ পেরেক হিসেবে কাজ করে রোমানদের কর-নীতির বিরুদ্ধে ইহুদীদের আন্দোলন। ইহুদীরা রোমান নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করে বসে এ আন্দোলনের সময়। স্বভাবতই, একদমই ভালোভাবে নেয়নি ব্যাপারটাকে রোম।

রোমান গভর্নর ফ্লোরাস বাইতুল মুকাদ্দাস লুটপাট করলেন এর প্রতিশোধ হিসেবে। তার দাবি, এ টাকাপয়সা আসলে সম্রাট নিরোর জন্য বরাদ্দ। পরদিন তিনি জেরুজালেম শহরের ওপর আক্রমণ চালিয়ে শহরের গণ্যমান্য ইহুদীদের গ্রেফতার করলেন। ইহুদীরা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

৬ সালেই রোমানরা উত্তরের সামারিয়া, মাঝের জুদাহ আর দক্ষিণের ইদুমিয়া অঞ্চল মিলিয়ে এহুদিয়া রাজ্য ঘোষণা করেছিল। এহুদিয়া রাজ্যের উত্তরে ছিল গালিলি অঞ্চল। এ ভূগোলটুকু মনে রাখতে হবে।

এহুদিয়া রাজ্যের ইহুদীরা বিশাল আকারে বিদ্রোহ শুরু করে এবং এ রাজ্যের রোমান ব্যারাক থেকে তাড়িয়ে দেয় রোমান সেনাদেরকে। রোমানদের পক্ষে ছিলেন ইহুদীদের রাজা হেরোদ আগরিপাহ দ্য সেকেন্ড। ভয়ে তিনি রোমান কর্মকর্তাদের সাথে পালিয়ে যান জেরুজালেম থেকে।

যখন দেখা গেল বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন সিরিয়ার রোমান সেনানায়ক সেস্টিয়াস গ্যালাস সিরিয়ান বাহিনী নিয়ে এলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল বিদ্রোহ দমন করা। শুরুতে বন্দর-নগরী ইয়াফা দখল করার মাধ্যমে কিছুটা সাফল্য পেলেও, বেথ হোরনের যুদ্ধে ইহুদীদের কাছে হেরে যায় সিরিয়ান রোমান বাহিনী। ৬,০০০ রোমান সেনা নিহত হয়।

৬৬ সালে জেরুজালেমে একটি অস্থায়ী সরকার গঠিত হলো। নেতা ছিলেন তিনজন— প্রধান ইমাম আনানুস বেন আনানুস, জোসেফ বেন গুরিয়ন আর জশুয়া বেন গামলা। উত্তরে গালিলি অঞ্চলে বিদ্রোহীদের নেতা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো ইয়োসেফ বেন মাতিতিয়াহুকে, আর দক্ষিণে ইদোমের কমান্ডার করা হলো এলিয়েৎসার বেন হানানিয়াকে।

কিছুক্ষণ আগে সিকারি নামের একটি সশস্ত্র দলের কথা বলা হয়েছিল। তারা একবার মেনাহেম বেন ইয়েহুদার নেতৃত্বে চেষ্টা চালায় জেরুজালেম দখল করে নেয়ার, কিন্তু ব্যর্থ হয়। মেনাহেমকে মৃত্যুদণ্ড দেয় নতুন সরকার, সিকারির সকল সদস্যকে জেরুজালেম থেকে বহিষ্কার করা হয়। সাইমন নামের আরেক কৃষক নেতাকেও বহিষ্কার করে সরকার।

কিছুতেই কিছু হচ্ছে না দেখে এবার সম্রাট নিরো এহুদিয়া প্রদেশের বিদ্রোহ দমনের দায়িত্ব দিলেন রোমান জেনারেল ভেসপাসিয়ানের ওপর। ভেসপাসিয়ানের ছেলে টাইটাস তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। রাজা আগরিপাহ দ্য সেকেন্ডের বাহিনী আর নিজেদের বড় রোমান বাহিনী নিয়ে ভেসপাসিয়ান গালিলি আক্রমণ করলেন ৬৭ সালে। তিনি মূল শহর জেরুজালেমে সরাসরি আক্রমণ চালাতে চাননি, তাই আগে গালিলিকে বেছে নেয়া হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই ভেসপাসিয়ান গালিলির প্রধান জায়গাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলেন। গালিলির বিদ্রোহ দমন করা হয়ে গেল।

গালিলি থেকে তখন জেলট বিদ্রোহীরা পালিয়ে চলে এলো জেরুজালেমে, সাথে হাজার হাজার গালিলির শরণার্থী। জেরুজালেম তখন এক বড় রাজনৈতিক ফ্যাসাদে পড়লো। সদ্য জড়ো হওয়া উত্তরের জেলট বিদ্রোহীদের সাথে জেরুজালেমের সাদুকিদের যুদ্ধে রক্তবন্যা বয়ে গেল। দক্ষিণ থেকে ইদুমীরা এসে জেলটদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে লাগলো। প্রধান ইমাম আনানুস বেন আনানুস নিহত হলেন। দুপক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি হলো ব্যাপক। সেই যে এক কৃষক নেতা সাইমনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাকে এবারে সাদুকি নেতারা ডেকে আনলেন। সাইমন এলেন ১৫,০০০ যোদ্ধা নিয়ে জেরুজালেমে। জেলট বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে খুব দ্রুতই শহরের দখল নিয়ে নিলেন তিনি।

এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলে পুরো ৬৯ সাল জুড়ে।

এই ৬৯ সালটা ভেসপাসিয়ানের জন্য আবার কপাল খুলে যাওয়ার বছর। আগের বছর সম্রাট নিরো আত্মহত্যা করায় রোমের রাজনৈতিক অস্থিরতা তখন তুঙ্গে। ভেসপাসিয়ান ও আরও দুই জেনারেলকে ডেকে পাঠানো হলো খোদ রোমে। সেখানে গিয়ে জানলেন, তিনি এখন রোমান সম্রাট! ভেসপাসিয়ান যেহেতু এখন আর নেই, তাই ছেলে টাইটাসের কাঁধেই পড়লো সেনাবাহিনীর দায়িত্ব। টাইটাস এগিয়ে গেলেন জেরুজালেম দখলের জন্য।

৭০ সালের পাসওভার বা ঈদুল ফিসাখের ঠিক তিন দিন আগে, ১৪ এপ্রিল জেরুজালেম অবরোধ করলেন ভবিষ্যৎ রোমান সম্রাট টাইটাস। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে ছিলেন টাইবেরিয়াস জুলিয়াস আলেকজান্ডার।

টাইটাস জেরুজালেমের সীমানের বাইরে শিবির গাড়লেন। মে মাসের শেষ দিকে রোমানরা জেরুজালেমের ভেতরে ঢুকে শহরের নতুন অংশের দখল নিয়ে নিল। এই অংশটা বাইতুল মুকাদ্দাসের উত্তর দিকে। জুলাই মাস শেষ হবার আগেই তারা বাইতুল মুকাদ্দাসের পাশের দুর্গ দখল করে নিল। আগস্টের ৬ তারিখ উপাসনালয়ে সব কুরবানি বন্ধ হয়ে গেল। তার এক সপ্তাহ পরে বাইতুল মুকাদ্দাসের উঠানগুলো পুড়তে শুরু করলো, আর ২৮ আগস্ট পুরো বাইতুল মুকাদ্দাসেই আগুন ধরে গেল যুদ্ধ চলাকালীন। আরেক মাস পর বাইতুল মুকাদ্দাসের পশ্চিমে অবস্থিত মূল শহরটুকু দখল করে নিল রোমানরা। অর্থাৎ, শেষমেশ বহু চেষ্টার পর পুরো জেরুজালেম টাইটাস জয় করে নিলেন।

রোমানদের বাধা দেবার মতো আর কেউ অবশিষ্ট রইলো না জেরুজালেমে। টাইটাস নির্দেশ দিলেন পুরো জেরুজালেম শহর ধ্বংস করে দিতে। বললেন, কেবল হেরোদের প্রাসাদের মিনারগুলো অক্ষত রাখা হবে।

তিশা বেআভ ( ২8২ ) দিবস হিসেবে এ দিনটিকে স্মরণ করে ইহুদীরা, যেমন আশুরাকে স্মরণ করা হয়। তিশা বেআভ মানে হিব্রু আভ মাসের নয় তারিখ। এ দিন যেমন ফার্স্ট টেম্পল অফ সলোমন নব্য ব্যবিলনীয়রা ধ্বংস করে দেয়, ঠিক তেমনই ৭০ সালে রোমানরা ধ্বংস করে দেয় সেকেন্ড টেম্পল অফ সলোমন। অর্থাৎ, একই দিনে বাইতুল মুকাদ্দাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণ ধ্বংস হয়। আজও সেই আদি নকশায় বাইতুল মুকাদ্দাস ভবন নির্মাণ করা হয়নি। ইহুদীরা অপেক্ষায় আছে থার্ড টেম্পল বা তৃতীয় বাইতুল মুকাদ্দাসের। আপাতত যে ভূমির ওপর এ উপাসনালয় দাঁড়িয়ে ছিল, সেটিকেই বাইতুল মুকাদ্দাস হিসেবে ডাকা হয়, যেখানে আজ মসজিদুল আকসা ও সোনালি গম্বুজের ডোম অফ দ্য রক বা কুব্বাতস সাখরা দাঁড়িয়ে আছে।

এ দিনের স্মরণে ২৫ ঘণ্টা রোজা রাখে ইহুদীরা। বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংসের পাশাপাশি আরও কিছু দুর্যোগ এদিন ঘটেছিল বলে ইহুদীরা বিশ্বাস করে থাকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *