অধ্যায় ৫ : দুই নবীর হত্যাকাণ্ড
ইহুদী ধর্মবেত্তাগণ পারতপক্ষে যীশু খ্রিস্টের ব্যাপারে কথা বলেন না। তাকে খ্রিস্ট বা মেসায়া হিসেবে স্বীকার করা তো দূরের কথা, নবী হিসেবেই স্বীকার করেন না। এ বইয়ের লেখক ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইসলামের শুভাকাঙ্ক্ষী একজন র্যাবাইয়ের সাথে অনলাইনে আলাপ করে জানতে পারেন, ইসলাম মতে ঈসা (আ) ও মুহাম্মাদ (সা)-এর নবী হওয়ার ব্যাপারটি ইহুদী ধর্মমতে অবিশ্বাসের কিছু নয়। কিন্তু ইহুদীদের কেন্দ্রীয় যে কাউন্সিল কারও নবীত্বের সত্যতা ঘোষণা করতো, সে কাউন্সিল বহু আগেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। তাই এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে নবী মানার সুযোগ নেই। তবে ইসলামে কুরআনে যে ঈসা (আ)-এর কথা এসেছে, তাকে নবী মানতে সমস্যা না হলেও, খ্রিস্টানদের ঈশ্বরপুত্র যীশুকে নবী মানতে সঙ্গত কারণেই কড়া আপত্তি আছে ইহুদীদের।
ঈসা (আ) বা যীশু খ্রিস্টের কথা বলতে গেলে, তার আগে অবধারিতভাবেই দুজন নবীর কথা বলা লাগে। তারা হলেন জাকারিয়া (আ) ও ইয়াহিয়া (আ)। জাকারিয়া (Si)-কে হিব্রুতে ‘জেকারায়াহ’ (7,7২৩) ডাকা হয়, যার মানে ‘ইয়াহ’ বা আল্লাহকে জেকার বা স্মরণ করা। তিনি মূসা (আ)-এর ভাই হারুন (আ)-এর বংশের একজন ইমামও ছিলেন। ইসলামে তাকে নবী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তার স্ত্রী ছিলেন হারুন বংশের এলিজাবেথ বা এলিসাথে (প্রয়া ali) / (২8)। বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা হন তারা। তাদের সন্তানই নবী ইয়াহিয়া (আ)।
বাইবেল তাদের শেষ বয়সের সন্তানলাভের ঘটনাকে এভাবে বর্ণনা করে, এহুদিয়ার (জুদাহ) বাদশাহ্ হেরোদের সময়ে জাকারিয়া নামে এক জন ইমাম ছিলেন; তার স্ত্রী হারুন-বংশীয়া, তার নাম এলিজাবেথ। তারা দুজন ধার্মিক ছিলেন, প্রভুর সমস্ত হুকুম ও নিয়ম অনুসারে নির্দোষভাবে চলতেন। তাদের কোনো সন্তান ছিল না। কেননা এলিজাবেত বন্ধ্যা ছিলেন এবং দুজনেরই অনেক বয়স হয়েছিল। একদিন জাকারিয়া যখন নিজের পালা অনুসারে ইমামের দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন প্রথানুসারে গুলিবাঁট ক্রমে তাকে প্রভুর পবিত্র স্থানে প্রবেশ করে ধূপ জ্বালাতে হলো। সেই ধূপ জ্বালাবার সময় সমস্ত লোক বাইরে থেকে মুনাজাত করছিল। তখন প্রভুর একজন ফেরেশতা ধূপ-গাহের ডান পাশে দাঁড়িয়ে তাকে দর্শন দিলেন। তাকে দেখে জাকারিয়ার মন অস্থির হয়ে উঠলো, ভীষণ ভয় তাকে পেয়ে বসলো। কিন্তু ফেরেশতা তাকে বললেন, জাকারিয়া, ভয় করো না, কেননা তোমার ফরিয়াদ গ্রাহ্য হয়েছে। তোমার স্ত্রী এলিজাবেত তোমার জন্য পুত্র প্রসব করবেন ও তুমি তার নাম ইয়াহিয়া রাখবে। তোমার আনন্দ ও উল্লাস হবে এবং তার জন্মে অনেকে আনন্দিত হবে। কারণ, সে প্রভুর সামনে মহান হবে এবং মদ পান করবে না; আর সে মায়ের গর্ভ থেকেই পাক-রূহে পরিপূর্ণ হবে; এবং বনী ইসরাইলদের মধ্যে অনেককে সে তাদের আল্লাহ্ মালিকের প্রতি ফেরাবে। তখন জাকারিয়া ফেরেশতাকে বললেন, কেমন করে আমি তা জানতে পারব? কেননা আমি বৃদ্ধ এবং আমার স্ত্রীরও অনেক বয়স হয়েছে। ফেরেশতা জবাবে তাকে বললেন, আমি জিবরাইল, তোমার সঙ্গে কথা বলার ও তোমাকে এসব বিষয়ের সুখবর দেবার জন্য প্রেরিত হয়েছি। আর দেখ, এসব যেদিন ঘটবে, সেদিন পর্যন্ত তুমি নীরব থাকবে, কথা বলতে পারবে না। যেহেতু আমার এই সকল বাক্য যা যথাসময়ে সফল হবে, তাতে তুমি বিশ্বাস করলে না।” (গসপেল অফ লুক, ১:৫-২০ )
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, জাকারিয়া (আ) ছিলেন জেরুজালেমে বাইতুল মুকাদ্দাসের ইমাম। তিনি এ উপাসনালয়ের যাবতীয় কাজকর্ম দেখা শোনা করতেন, আর আল্লাহর প্রতি সদা অনুগত ছিলেন।
বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছাবার পর তিনি ভয় করতে লাগলেন, তার বংশে আর বাতি জ্বলবে না। তিনি চাইতেন, তার কোনো পুত্র হোক, যে আল্লাহওয়ালা হবে, মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকবে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, ইসরাইল সেই ইয়াকুব (আ)-এর স্বর্ণযুগে ফিরে যাবে।
কুরআনে জাকারিয়া (আ) দম্পতির কথা উল্লেখ আছে ঠিক এভাবে, “এটা তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের বিবরণ তাঁর বান্দা জাকারিয়ার প্রতি, যখন সে তার প্রতিপালককে গোপনে ডেকেছিল। সে বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে, আর বার্ধক্যে আমার মস্তক সাদা হয়ে গেছে। হে আমার প্রতিপালক! আপনাকে ডেকে আমি কখনো বিফল হইনি। আর আমার পরে স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে আমি আশংকাবোধ করছি। আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন। যে আমার উত্তরাধিকারী হবে আর উত্তরাধিকারী হবে ইয়াকুব পরিবারের; আর হে আমার প্রতিপালক! তাকে করুন আপনার সন্তুষ্টির পাত্র। আল্লাহ (ফেরেশতা মারফত) বললেন, হে জাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি যার নাম হবে ইয়াহিয়া, পূর্বে এ নামে আমি কাউকে আখ্যায়িত করিনি। সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার পুত্র হবে কেমন করে, আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, আর আমি বার্ধক্যের শেষ স্তরে পৌঁছে গেছি। তিনি বললেন, এভাবেই হবে, তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এটা আমার পক্ষে সহজ। ইতোপূর্বে আমিই তোমাকে সৃষ্টি করেছি, যখন তুমি কিছুই ছিলে না। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য একটি নিদর্শন ঠিক করে দিন। তিনি বললেন, তোমার জন্য এটাই নিদর্শন যে, তুমি সুস্থ থেকেও তিন রাত কারো সাথে কথা বলবে না। অতঃপর সে মিহরাব হতে বেরিয়ে তার লোকদের সামনে আসল এবং ইশারায় তাদেরকে বলল যে, তোমরা সকাল ও সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠ করো।” (কুরআন, সুরা মারিয়াম, ১৯:২-১১)
“অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহিয়া, আর তার জন্য তার স্ত্রীকে (গর্ভধারণের) যোগ্য করেছিলাম। তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর তারা আমাকে ডাকত আগ্রহ ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট ভীত-অবনত।” (কুরআন, সুরা আম্বিয়া ২১:৯০)
বাইবেলে জাকারিয়া (আ)-এর কথা বলার অক্ষমতাকে শাস্তির মতো করে উল্লেখ করা হলেও, কুরআনে এ ঘটনাকে নিদর্শন বলা হয়েছে। কেউ বলেন, তার বয়স তখন ছিল বিরানব্বই, কেউ বা বলেন সাতাত্তর বা তারও বেশি। তার এ ঘটনার সাথে ইব্রাহিম (আ)-এর বৃদ্ধ বয়সে সন্তান হবার ঘটনার মিল রয়েছে।
ইয়াহিয়া (আ)-কে খ্রিস্টধর্মে ‘জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট’ ডাকা হয়, আর হিব্রুতে ‘ইউহানা’। পানিতে অবগাহন করিয়ে তিনি লোকদেরকে তরিকা দিতেন দেখে তাকে ব্যাপ্টিস্ট ডাকা হয় খ্রিস্টধর্মে। ইতিহাসবিদ জোসেফাসও তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ইয়াহিয়া (আ)-এর কথা। তাকে অনেকে মেসায়া বলে মনে করত, যদিও তিনি মেসায়া আগমনের পথ প্রস্তুত করতে এসেছেন বলে কথিত আছে।
হেরোদ দ্য গ্রেটের মৃত্যুর পর, সম্রাট অগাস্টাস এহুদিয়া বা জুদাহ রাজ্যকে হেরোদের তিন সন্তানের মাঝে ভাগ করে দেন। সামারিয়া আর মধ্য-জুদাহের ভাগ পড়ে পুত্র আর্কেলাউসের ওপর, ফিলিপ পান দক্ষিণ সিরিয়া, আর গালিলির দায়িত্ব পান হেরোদ অ্যান্টিপাস, ইতিহাসে তিনি হেরোদপুত্র হেরোদ নামেই পরিচিত। এই হেরোদই ইয়াহিয়া (আ)-এর খুনী। উল্লেখ্য, আর্কেলাউসের শাসন টেকে দশ বছর মাত্র, ইহুদী আর সামারিটানদের কাছ থেকে অনেক অভিযোগ পেয়ে অগাস্টাস তাকে নির্বাসিত করেন। ফলে জুদাহ প্রদেশ রোমানদের অধীনে চলে এলো বেশি করে, একজন রোমান গভর্নর ‘প্রিফেক্ট’ উপাধি নিয়ে শাসন করতেন এ এলাকা।
হেরোদ দ্য গ্রেট তার দুই পুত্রকে খ্রিস্টপূর্ব ৭ সালে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর তিনি নিজের এক পুত্রের সাথে বিয়ে দিলেন রাজকন্যা হেরোদিয়াসের, কিন্তু সেই পুত্র আবার হেরোদিয়াসের সৎ-চাচা। হেরোদের বড় ছেলে অ্যান্টিপ্যাটার এ বিয়ের বিরোধিতা করেন, কিন্তু তাকে তিন বছর পরে মৃত্যুদণ্ড দেন হেরোদ দ্য গ্রেট তাকে বিষ প্রয়োগ করে মারতে চাওয়ার অভিযোগে। হেরোদিয়াস স্বামী ফিলিপের কাছ থেকে তালাক নিয়ে নিলেন। এ ঘরে তার এক মেয়ে ছিল, যার নাম সালোমি।
হেরোদিয়াস এবার বিয়ে করলেন তার স্বামীর ভাই হেরোদ অ্যান্টিপাসকে। হেরোদিয়াসকে খুশি করতে এই হেরোদ নিজের প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন।
এই ঘটনা মেনে নিতে পারেননি নবী ইয়াহিয়া (আ)। তিনি হেরোদের এ কর্মকে অন্যায় ও ঘৃণ্য বলে প্রচার করতে লাগলেন। ব্যাপারটা হেরোদ পছন্দ করলেন না।
হেরোদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে, হেরোদিয়াসের কন্যা সালোমি রাজা আর অতিথিদের সামনে চমৎকার নাচলো। তার নাচে মুগ্ধ হলেন হেরোদ, মাতাল অবস্থায় তিনি সালোমিকে জিজ্ঞেস করলেন, কী চায় সে, দরকার হলে রাজত্বের অর্ধেক দিয়ে দিতে রাজি। সালোমি জিজ্ঞেস করলো তার মাকে, কী চাওয়া উচিৎ তার। মা হেরোদিয়াস শিখিয়ে দিলেন তাকে, কী বলতে হবে। সালোমি হেরোদকে বলল, সে একটি থালায় করে জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট অর্থাৎ ইয়াহিয়া (আ)-এর কাটা মাথা চায়। হেরোদ প্রথমে দুঃখিত হলেন, কিন্তু পরে রাজি হলেন। হেরোদ সাথে সাথেই এক সেনাকে পাঠিয়ে জেলবন্দী ইয়াহিয়া (আ)-এর কাটা মাথা নিয়ে আসতে বললেন। সেই কাটা মাথা সালোমির সামনে থালায় করে উপস্থাপন করা হলো।
খবর পেয়ে ইয়াহিয়া (আ)-এর সাহাবীরা লাশ নিয়ে গিয়ে দাফন করলেন। খ্রিস্টানরা আজও এ দিনটি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে প্রতি বছর ২৯ আগস্ট। কথিত আছে, তাকে দাফন করা হয় আজকের পশ্চিম তীরের নাবলুসে। ইতিহাসবিদরা বলেন, ৩৬২ সালে রোমান সম্রাট জুলিয়ান তার কবর ধ্বংস করে দেন, তার দেহাবশেষের অংশবিশেষ পুড়িয়ে ফেলা হয়। বাকিটুকু নিয়ে যাওয়া হয় জেরুজালেম, এরপর আলেক্সান্দ্রিয়ায়। নাবলুসের কাছে নবী ইয়াহিয়া মসজিদকেই তার আদি কবর বলা হয়। আবার দামেস্কের উমাইয়া মসজিদেও তার দেহাবশেষ রয়েছে বলে দাবি করা হয়।
কিন্তু ইয়াহিয়া (আ)-এর সেই কাটা মাথা কোথায় হারিয়ে যায়, তা নিয়ে রয়েছে নানা কিংবদন্তি। রোমান ক্যাথলিকরা বিশ্বাস করেন, রোমে সেইন্ট সিলভেস্টার ব্যাসিলিকায় প্রদর্শিত মাথাই জন দ্য ব্যাপ্টিস্টের মাথা। এ কথায় সমর্থন দিয়েছেন পোপ বেনেডিক্টও। কথিত আছে, মধ্যযুগে টেম্পলার নাইটরা এ কাটা মাথা খুঁজে পেয়েছিল। তবে ইসলামের কথ্য কিংবদন্তি অনুযায়ী, জন দ্য ব্যাস্টিস্টের মাথা সিরিয়ার দামেস্কের উমাইয়া মসজিদে রয়েছে; পোপ জন পল দ্য সেকেন্ড এ কবর ঘুরে গিয়েছিলেন ২০০১ সালে। মুসলিমদের মাঝে এ বিশ্বাসও প্রচলিত আছে যে, এ মসজিদেই ঈসা (আ) নেমে আসবেন কেয়ামতের আগে।
কুরআন অনুযায়ী, ইয়াহিয়া (আ) ছিলেন নিষ্পাপ এবং বাল্যকালেই তাকে কিতাবের জ্ঞান দান করা হয়। “হে ইয়াহিয়া! এ কিতাব (তাওরাত) সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর। আমি তাকে বাল্যকালেই জ্ঞান দান করেছিলাম। আর তাকে দিয়েছিলাম আমার পক্ষ থেকে দয়া-মায়া ও পবিত্রতা। সে ছিল আল্লাহভীরু। আর সে ছিল তার পিতা-মাতার সাথে সদাচারী, ছিল না অহংকারী, অবাধ্য। তার প্রতি শান্তি ছিল যেদিন সে জন্মগ্রহণ করে এবং শান্তি যেদিন তার মৃত্যু হয় এবং যেদিন সে পুনরুজ্জীবিত হবে।” (কুরআন, সুরা মারিয়াম ১৯:১২-১৫)
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া কিতাবে উল্লেখিত আছে, পুত্র ইয়াহিয়া (আ) এর সন্ধানে পিতা জাকারিয়া (আ) দামেস্কের বুসাইনাতে গিয়েছিলেন। এমনকি ইয়াহিয়া (আ)-এর হত্যার সময় জাকারিয়া (আ) দামেস্কেই অবস্থান করছিলেন। তবে কেন তিনি জেরুজালেম বা জুদাহ বাদ দিয়ে সিরিয়াতে ছিলেন, তার ব্যাখ্যা উল্লেখ নেই। একটি অতি দুর্বল বর্ণনায় আছে, জাকারিয়া (আ)-এর পুত্র ইয়াহিয়া (আ)-এর হত্যার পর রাজা ও রানী প্রাসাদসমেত ধ্বংস হয়ে যান। তা দেখে ইহুদীরা বলল, আমাদের রাজাকে জাকারিয়ার প্রভু ধ্বংস করে দিয়েছেন, আমরাও তাহলে জাকারিয়াকে ধ্বংস করে দিই। তারা জাকারিয়া (আ)-এর খোঁজে বের হলো তাকে হত্যা করতে। জাকারিয়া (আ) পালাতে লাগলেন এবং এক পর্যায়ে একটি গাছের ভেতরে আশ্রয় নেন। ইহুদীরা করাত দিয়ে সে গাছকে দুখণ্ড করে ফেলে। ফলে জাকারিয়া (আ) মারা যান। এ অদ্ভুত বর্ণনার বড় সমস্যা হলো, হেরোদ দামেস্কে থাকতেন না বা তার প্রাসাদও ধ্বংস হয়নি, তার স্ত্রীরও কিছু হয়নি। তারা আরও বহু বছর বেঁচে ছিলেন। ইতিহাসে তা ভালোভাবেই লিপিবদ্ধ আছে। ইবনে কাসির বলেন, এ হাদিস বড়ই অপ্রাসঙ্গিক, বিস্ময়কর এবং নবী (সা) থেকে বর্ণিত নয়। অন্যান্য মতে, জাকারিয়া (আ) স্বাভাবিকভাবেই মারা যান। তার কবর কোথায়, তা নিশ্চিত করে জানা যায় না।
তবে জাকারিয়া (আ)-এর আরেকটি পরিচয় ছিল, তিনি ভার্জিন মেরি বা কুমারী মারিয়ামের অভিভাবকও ছিলেন। সম্পর্কে জাকারিয়া (আ) ছিলেন ঈসা (আ)-এর মা মারিয়াম (রা)-এর আত্মীয়। ঈসা (আ) ছিলেন ইয়াহিয়া (আ)-এর খালাত ভাই। ইয়াহিয়া (আ) ছিলেন ছয় মাসের বড়।