অধ্যায়-৩৩ ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত: কী, কেন এবং কীভাবে এর শুরু?
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত বর্তমান সময়ের চলমান দীর্ঘতম সংঘাত। কিন্তু কেন, কীভাবে এ সংঘাতের সূচনা তা আমরা অনেকেই জানি না। তবে যারা সকল মুসলিম দুর্ভাগ্যের আড়ালে ইহুদী বা খ্রিস্টান চক্রান্ত খুঁজে পেতে চান, হয়তো এ লেখাটা তাদেরকে ঐতিহাসিক অর্থেই ভিন্ন একটা আঙ্গিকে পথ দেখাবে। আর যারা সত্যি সত্যি এ সংঘাতের উৎস জানতে এ লেখাটি পড়ছেন, আশা করি খুব সহজ সরল ভাষায় পুরো সংঘাতের একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা পেয়ে যাবেন। এ অধ্যায়টি পড়তে গিয়ে এ বইয়ের একটি সারাংশও হয়ে যাবে, এবং এরপর হবে বাকি ইতিহাস সংক্ষেপে। কিন্তু বিস্তারিত ইতিহাসটুকু যে আরও গভীরে যাবার দাবি রাখে তা বলবার অপেক্ষা রাখে না।
সংঘাতের পুরোনো ‘ইতিহাস’ জানতে হলে আমাদের নজর দিতে হবে ধর্মগ্রন্থে। কারণ প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে সমর্থিত হোক বা না হোক, ধর্মীয়ভাবে ইসরাইল (ইহুদী) আর ফিলিস্তিন (বর্তমানে মুসলিম) জাতি নিজেরা কী বিশ্বাস করে তাদের ধর্মীয় ঐতিহ্য নিয়ে, সেটা তাদের এই পবিত্র ভূমি নিয়ে কাড়াকাড়িতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খেয়াল করে দেখেছেন কি, আমি ফিলিস্তিনের পাশে লিখেছি, ‘বর্তমানে’ মুসলিম। কেন বর্তমানে কথাটা ব্যবহার করলাম? কারণ যখন ইসরাইলের ইহুদী জাতি তুঙ্গে ছিল সেই হাজার হাজার বছর আগে, তখন ফিলিস্তিন জাতি ছিল পৌত্তলিক। সুতরাং ইসরাইলের চোখে তারা ছিল ‘খলনায়ক’।
প্রথমে আমাদের জানা দরকার ইসরাইলের ধর্মীয় ইতিহাস কী। হিব্রু বাইবেল এবং ইসলামী ধর্মীয় ইতিহাস মোতাবেক, নবী হযরত ইব্রাহিম (আ) ঈশ্বর ইয়াহওয়েহ (হিব্রুতে ঈশ্বরকে এ নামেই ডাকা হয়, আর আরবিতে আল্লাহ) তাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে পবিত্র ভূমি কেনান তার সন্তানাদিকে দেয়া হবে (যেটা এখন ইসরাইল ফিলিস্তিন অঞ্চল)। অর্থাৎ তার বংশধররা এ এলাকার মালিক হবে।
ইব্রাহিম (আ) এর প্রধান দুই পুত্র ইসমাইল (আ) আর ইসহাক (আ)। ভাগ্যক্রমে, ইসমাইল (আ) ও তাঁর মা হাজেরাকে আরবের মক্কায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। আর ওদিকে কেনান দেশে রয়ে যান ইসহাক (আ) [আইজ্যাক]। তার পুত্র ছিলেন ইয়াকুব (আ) [জ্যাকব]। ইয়াকুব (আ) এর আরেক নাম ছিল ইসরাইল, তার বারো সন্তানের নামে ইসরায়েলের বারো গোত্রের নাম হয়।
ঘটনাক্রমে ১২ পুত্রের একজন ইউসুফ (আ) ভাইদের চক্রান্তে মিসরে উপনীত হয় দাস হিসেবে। জেলের ভাত খেয়ে সাত বছর পর ভাগ্যের চাকা ঘুরে নিজেকে মিসরকর্তার ডান হাত হিসেবে আবিষ্কার করেন, এবং একইসাথে তিনি হন নবী। দুর্ভিক্ষপীড়িত অন্য ভাইরা তারই কাছে তখন সাহায্য চাইতে মিসরে আসে। কালের পরিক্রমায় শত শত বছর বাদে এই ইসরাইলীরা মিসরের ফারাওয়ের দাসে পরিণত হয়, যখন এক মিসরীয় যুবরাজ (পালিত পুত্র) রাজপরিবারের সমস্ত আয়েশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বহু বছর বাদে ইসরাইলের নির্যাতিতদের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন, তিনি আর কেউ নন, নবী হযরত মূসা (আ)। লোহিত সাগর পার করে তিনি ইসরাইল জাতিকে নিয়ে যান ওপারে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করে।
নবী মূসা (আ) পেলেন আসমানী কিতাব তাওরাত, কিন্তু তখন একেশ্বরবাদী ইহুদীরা পৌত্তলিকতায় মগ্ন হয়ে পড়ায় ৪০ বছর শাস্তি দেন আল্লাহ তাদেরকে। মরুর বুকে ঘুরপাক খেতে থাকে তারা। অবশেষে নবী ইউশা (আ) এর নেতৃত্বে তারা কেনান দেশে উপনীত হয়। এবার তাদের কেনান জয়ের পালা।
এখানে এসেই আমরা বুঝতে পারি, কেনান দেশের আদি নাগরিক কারা ছিল। তারা আর কেউ নয়, এখন আমরা যাদের ফিলিস্তিনি বলি, বলা চলে তারাই। তবে ফিলিস্তিনিরাও এখানে আসে ইসরাইলীরা আসার কিছু আগে, খ্রিস্টপূর্ব ১২ শতকে। ফিলিস্তিনিরা মূলত অবমবধহ অরিজিনের। তারা এসেছিল কাফতর থেকে। তার আগে এখানে ছিল হিভাইট, জেবুসাইট, এমরাইট, হিট্টাইট, পেরিসাইট— এরা। তারা পৌত্তলিক ছিল এবং বা’আল, আশেরা ইত্যাদি দেব- দেবীর পূজা করত।
ইসরাইলীরা যখন কেনান দেশে থাকত, তখন তারা স্থানীয়দের বিয়ে করে। ফলে পরবর্তী বংশধর এমনভাবে বাড়তে থাকে যে, ৮৭.৫%-ই হলো কেনানীয় রক্ত। আর ফিলিস্তিনিরা নিজেদের কেনানীদের বংশধর বলেই জানে। তাই জিনগতভাবে তারা আসলে প্রায় একই। কেবল ধর্মবিশ্বাসে ছিল আলাদা। ইসরাইলীরা যেখানে উপাসনা করত এক ঈশ্বরের, সেখানে ফিলিস্তিনিরা ছিল পৌত্তলিক।
ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রথম রাজা হন তালুত, যাকে বাইবেলে বলে সল (Saul)। বেথেলহেমের জেসির ছোট ছেলে দাউদ [ডেভিড] তালুতের সেনাবাহিনী থেকে ফিলিস্তিনের জালুত/গোলায়াথ-কে পরাজিত করে একক যুদ্ধে এবং তখনই সকলের নজরে আসে। কালক্রমে তিনি ইসরাইলের জনপ্রিয় রাজা কিং ডেভিড/দাউদ (আ) হন [এবং ইসলাম মতে, নবীও]। তার পুত্র সলোমন বা সুলাইমান (আ) তার রাজ্যকে আরো প্রসারিত করেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন টেম্পল অফ সলোমন বা বাইতুল মুকাদ্দাস।
সুলাইমান (আ) বা সলোমনের মারা যাবার পর পুত্র রেহোবামের রাজত্বকালে ইসরাইলের পতন শুরু হয়, পৌত্তলিকতায় ডুবে যেতে থাকে। শক্তিমান ব্যাবিলন রাজ্যের আক্রমণে ইসরাইলীরা বন্দি হয়ে পড়ে। তাদের নির্বাসন শুরু হয়, আর ওদিকে ইসরাইল রাষ্ট্র ধুলায় মিশে যায়।
কিন্তু আল্লাহর চোখে শাস্তি শেষ হলে, পারস্যের রাজা সাইরাস তাদের ব্যাবিলন থেকে মুক্ত করেন। এ সময় নবী হযরত দানিয়েল (আ) এর কীর্তি উল্লেখযোগ্য। ফিরে এসে তারা পুনরায় বানায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাইতুল মুকাদ্দাস। আর নবী/পাকব্যক্তি হজরত উজাইর (আ) [এজরা] আর নেহেমিয়া (আ) এর নেতৃত্বে ইসরাইল আবার ভালোর দিকে ফিরতে থাকে। তাছাড়া সাহায্য করেন হজরত হিজকীল (আ) [এজেকিয়েল]।
সুলাইমানপুত্র রেহোবামের সময় রাজ্য দু’ভাগ হবার কথা বলছিলাম। উত্তরের রাষ্ট্র ইসরাইল, আর দক্ষিণের রাষ্ট্র জুদাহ। এটা মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৯ম-১০ম শতকের কথা। আর মাঝখানে এত কাহিনী গিয়ে রাজা সাইরাসের হাতে উদ্ধার পাবার সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ সাল। যখন খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ সালে অ্যালেক্সান্ডার দ্য গ্রেট মারা গেলেন, তখন তার জেনারেলরা কামড়াকামড়ি শুরু করে দেন রীতিমতো। যেমন- টলেমি নিয়ে নিলেন পুরো ইহুদী অঞ্চলের দখল। যদিও পরে সিরিয়ার সেলুচিদদের হাতে খ্রিস্টপূর্ব ১৯৮ সালে হারিয়ে ফেলেন এ অঞ্চল। ওদিকে গ্রিক সভ্যতার সংস্পর্শে এসে ইহুদী ধর্ম প্রভাবিত হয়ে নতুন এক সেক্ট গড়ে ওঠে, যারা পরিচিত হয় হেলেনিস্টিক জ্যু (ইহুদী) নামে। তাদের মাঝে ছিল গ্রিক সংস্কৃতির ছোঁয়া। মূল ধারার ইহুদীরা তাদের ধর্মচ্যুত মনে করত।
খ্রিস্টপূর্ব ৬৩ সালে রোমান জেনারেল পম্পেই জেরুজালেম দখল করে নেন। যীশুর জন্মের ৪৭ বছর আগে আলেক্সান্দ্রিয়ার যুদ্ধে ৩,০০০ ইহুদী সেনা পাঠানো হয় যারা জুলিয়াস সিজার আর ক্লিওপেট্রাকে রক্ষা করে।
রোমান সংসদ হেরোদ নামের একজনকে ইহুদীদের রাজা হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরকম সময়ে এই ইহুদী অঞ্চল যখন রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে, তখন জন্মগ্রহণ করেন যীশু খ্রিস্ট [ঈসা (আ)]। তিনি ছিলেন ‘মসীহ’ (অভিষিক্ত ত্রাতা), যিনি কি না এই হতভাগ্য ইহুদী রাষ্ট্রকে উদ্ধার করবেন, নতুন আলোর পথ দেখাবেন। কিন্তু যখন যীশু ইহুদী ইমামদের (র্যাবাইদের) দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে লাগলেন তখন ইহুদিরা চক্রান্ত করল যেন রোমান শাসককে বুঝিয়ে যীশুকে ক্রুশে দিয়ে মেরে ফেলা যায়, এবং তা-ই তারা করে। ইহুদী মতে, তারা যীশুকে ক্রুশে দিয়ে মেরে ফেলে। যদিও ইসলাম মতে, আল্লাহ হযরত ঈসা (আ)-কে অক্ষত রাখেন এবং তুলে নেন, যিনি শেষ সময়ে আবার ফেরত আসবেন।
৬৪ সালে ইহুদী নিয়ম জারি করা হয় যে, সকল ইহুদীকে ৬ বছর বয়স থেকেই লেখাপড়া শিখতে হবে। তখন থেকেই ইহুদীরা লেখাপড়াকে খুবই গুরুত্ব সহকারে নিত।
৬৬ সালে রোমান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বাধীন রাষ্ট্র ইসরাইল ঘোষণা করে বসে ইহুদীরা। তখন তাদের শায়েস্তা করা হয়, প্রায় ১ মিলিয়ন ইহুদী মারা যায়।
১৩১ সালে সম্রাট হাদ্রিয়ান ইহুদী ধর্ম নিষিদ্ধ করেন। জেরুজালেমের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ইলিয়া কাপিতোলিনা। বাইতুল মুকাদ্দাসের জায়গা জুপিটার মন্দির বসান। আর ইহুদী প্রদেশের নাম চেঞ্জ করে রাখেন ‘প্যালেস্টাইন’ বা আরবিতে ‘ফিলিস্তিন’। তখন আবারো বিদ্রোহ করে ইহুদীরা, কিন্তু লাভ হয়নি।
৪র্থ শতকে সম্রাট কন্সটান্টিনোপল জাতীয় ধর্ম হিসেবে খ্রিস্ট ধর্ম ঘোষণা করার পর মরণাঘাত পায় ইহুদী ধর্ম। মোটামুটি বড় নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে ইহুদীদের উপর।
৬১১ সালের দিকে পারস্য সাম্রাজ্যের অধীনে পড়ে ইহুদীরা। ওদিকে বাইজান্টিন সম্রাট হেরাক্লিয়াস/হারকিউলিস কথা দেন তিনি ইহুদী অধিকার ফিরিয়ে দেবেন, কিন্তু দেননি।
ইসলামী বিশ্বাস মতে, ৬১১ সালের এক রাতে মুহাম্মাদ (স) মিরাজে জেরুজালেম গিয়েছিলেন, এবং সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত জেরুজালেমের বাইতুল মুকাদ্দাসের ওখানে নামাজ পড়েন। ৬৩৪-৩৬ সালে মুসলিম বাহিনী জেরুজালেম অধিকার করে নেয়। ক্রুসেডের আগ পর্যন্ত জেরুজালেম মুসলিম শাসকদের অধীনেই ছিল। ৬৯১ সালে আব্দুল মালিক আজকের সেই সোনালি গম্বুজ নির্মাণ করেন। আর ৭০৫ সালে বানানো হয় মসজিদুল আকসা।
১০৯৯ সালে প্রথম ক্রুসেডে খ্রিস্টানরা জেরুজালেম দখল করে নেয়। কিন্তু ১১৮৭ সালে সুলতান সালাহুদ্দিন (সালাদিন) আইয়ুবি আবার দখল করে নেন জেরুজালেম। এ সময় পর্যন্তও ইহুদীরা ওখানেই থাকত। কিন্তু ধীরে ধীরে ইউরোপে জায়গা করে নিতে থাকে তারা।
ইউরোপের ব্ল্যাক ডেথ মহামারির সময় ইহুদীদের অনেককেই খুন করা হয়, সন্দেহ ছিল- তারা বুঝি কুয়ার পানিতে বিষ মেশাচ্ছে। আর স্পেনে খ্রিস্টান রাজত্বে মুসলিম আর ইহুদী দু’ধর্মের মানুষকেই মারা শুরু হয়ে যায়, যেটার নাম কুখ্যাত স্প্যানিশ ইনকুইজিশন। ততদিনে ১৪৯৭ সাল চলে এলো। ইহুদীরা পালিয়ে রোম, পোল্যান্ড, কিংবা উসমানী সাম্রাজ্যে চলে গেলো।
১৫৩৮ সালে সুলতান সুলেমান জেরুজালেম ঘিরে বিখ্যাত দেয়াল তুলে দেন, যেটা এখন ওয়াল অফ জেরুজালেম নামে পরিচিত।
এরপর কালের বিবর্তনে ১৯ শতকে ইহুদীরা ইউরোপে অধিকার পেতে শুরু করল। তখন অর্ধেক ইহুদীই থাকতো রুশ রাজ্যে। এই রাশিয়ান ইহুদীরা ১৮৮২ সালে ‘হোভেভেই জিওন’ (জিওনের জন্য ভালোবাসা) নামের আন্দোলন শুরু করে। জিওন বা জায়ন হলো জেরুজালেমের এক পাহাড়। মূলত জেরুজালেম ফিরে পাবার জন্য এক আন্দোলনের সূচনা সেটা, জায়োনিস্ট আন্দোলন। তারা মৃত হিব্রু ভাষা জীবিত করতে শুরু করল।
১৯০২ সালের মাঝে ৩৫,০০০ ইহুদী এখন চলে আসে ফিলিস্তিনে, যেটা এখন ইসরাইল নামে পরিচিত। তখন সেটা অবশ্য মুসলিম অধিকারে। এটাকে বলা হয় প্রথম আলিয়া, আলিয়া হলো ইহুদী পুনর্বাসন, যখন অনেক ইহুদী একসাথে সরে আসে। তখন মুসলিম প্রধান ফিলিস্তিনে দেখা গেল, জেরুজালেমের সিংহভাগই হঠাৎ করে ফিরে আসা ইহুদী।
১৮৯৬ সালে থিওডর হার্জল দ্য জুইশ স্টেট নামে এক লেখনি প্রকাশ করেন, যাতে তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান ইউরোপীয় ইহুদীবিদ্বেষের একমাত্র সমাধান আলাদা এক ইহুদী রাষ্ট্র। ১৮৯৭ সালে জায়োনিস্ট সংঘ গড়ে তোলা হয়। প্রথম জায়োনিস্ট কংগ্রেসে লক্ষ্য ধার্য করা হয়, প্যালেস্টাইনে ইহুদী রাষ্ট্র করে তুলতে হবে।
১৯১৪ সালের মাঝে দ্বিতীয় আলিয়া হয়ে গেল, ৪০,০০০ ইহুদী এ এলাকায় চলে এলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীরা সমর্থন দেয় জার্মানিকে, কারণ তারা শত্রু রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছিল। খুবই আইরনিক, না? কারণ পরের বিশ্বযুদ্ধেই এই জার্মানি ইহুদীদের একদম নিশ্চিহ্ন করতে নেমে পড়েছিল!
জায়োনিজম আন্দোলনকারীরা চাচ্ছিল আমেরিকা আর ব্রিটেনের সমর্থন পেতে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ ইতোমধ্যে সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোর ইহুদী কমিউনিটির নেতা রথসচাইল্ডকে চিঠি দেন, যা বেলফোর ডিক্লেরেশন নামে পরিচিত। এতে বলা হয়, ব্রিটিশ সরকারের এই ইহুদী রাষ্ট্রের ব্যাপারে সমর্থন আছে। ব্রিটিশ আর ফরাসি ব্যুরোক্রেটরা মিলে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন সীমা নির্ধারণ করে। বিনিময়ে জায়োনিস্ট স্পাই নেটওয়ার্ক ব্রিটিশ সরকারকে ওসমানি সৈন্যসামন্ত নিয়ে তথ্য পাচার করত।
বেলফোর ঘোষণার পরোক্ষ সমর্থন ১৯২২ সালে লিগ অফ ন্যাশন্স দিয়ে দেয়। ১৯২৩ সালের মাঝে ৩য় আলিয়া হয়, এবং আরো ৪০,০০০ ইহুদী আসে ফিলিস্তিনে। আর ১৯২৯ সালের মাঝে ৪র্থ আলিয়া হয়, যখন আরও ৮২,০০০ ইহুদী চলে আসে। খরচপাতিতে সাহায্য করত জ্যুইশ ন্যাশনাল ফান্ড। বিদেশি জায়োনিস্টরাও এতে সাহায্য করত।
১৯২৮ সালে JNC ( Jewish National Council) গঠিত হয় ফিলিস্তিনে। ১৯২৯ সালে প্রথম বড় ইহুদী-মুসলিম দাঙ্গা হলো জেরুজালেমের ওয়েইলিং ওয়াল (বুরাক দেয়াল) নিয়ে। ফলে ১৯৩১ সালে জায়োনিস্টরা ইর্গুন জাই লিউমি নামে এক মিলিশিয়া প্রতিষ্ঠা করে। এই ইহুদী সন্ত্রাসী সংগঠন ১৯৪৬ সালে জেরুজালেমের কিং ডেভিড হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ করে এবং ১৯৪৮ সালে ইহুদী অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দেইর ইয়াসিন গ্রামে গণহত্যা সংঘটিত করে।
১৯৩৩ সালে নাৎসিদের সাথে চুক্তিতে আরো ৫০ হাজার ইহুদী ফিলিস্তিনে চলে আসে। ১৯৩৮ সালের মাঝে ৫ম আলিয়া হয়ে গেল, প্রায় আড়াই লাখ ইহুদী এলো ফিলিস্তিনে।
এরপর শুরু হয়ে গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, প্রায় ছয় মিলিয়ন ইহুদী হত্যা করে নাৎসিরা। মোটামুটি এই দ্বৈরথের টাইম লাইন যুদ্ধ শেষ হবার মধ্য দিয়ে আমেরিকার ইহুদীরা জায়োনিস্ট মুভমেন্টের মাথা হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৪৬ সালের জুলাইতে সন্ত্রাসী দল ইর্গুন কিং ডেভিড হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে ফিলিস্তিনের ব্রিটিসগ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ হেডকোয়ার্টার ছিল। সেই হামলায় মারা যায় ৯১ জন মানুষ, আর আহত হয় ৪৬ জন। ইর্গুন সন্ত্রাসীরা আরবদেশীয় ওয়ার্কার আর ওয়েইটার সেজে বোম পেতে আসে। বিস্ফোরণে পুরো দক্ষিণ পাশ ভেঙে পড়ে। তখন তেলআবিব (যেটা বর্তমানে ইসরাইলের রাজধানী) শহরে কারফিউ জারি করা হয়। ফিলিস্তিনের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ইহুদীকে জেরা করা হয়।
১৯৪৭ সালের ১৫ মে গঠিত হয় United Nations Special Committee on Palestine (UNSCOP) যা পরে প্রস্তাব দেয় “স্বাধীন এক আরব রাষ্ট্র, স্বাধীন এক ইহুদী রাষ্ট্র এবং জেরুজালেম শহর”- এই তিন ভাগ। সামান্য কিছু এদিক- ওদিকের মাধ্যমে জাতিসংঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে এই প্রস্তাব বিষয়ে ভোট হয়। ফলস্বরূপ, ইহুদী সমাজে উচ্ছ্বাস আর আরব সমাজে অসন্তুষ্টি ছড়িয়ে পড়ে।
ঐ অঞ্চলে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। প্রায় ১ লাখ আরব ইহুদীপ্রধান এলাকা ছেড়ে চলে যায়। আমেরিকা তখন ফিলিস্তিন ভাগ করার প্রস্তাব থেকে সমর্থন গুটিয়ে নেয়, কিন্তু ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ তারিখে ব্রিটেন নতুন সমর্থন ব্যক্ত করে।
জায়নিস্ট নেতা ডেভিড বেনগুরিওন বাধ্যতামূলক করলেন যে, সকল ইহুদী নারী-পুরুষকে মিলিটারি ট্রেনিং নিতে হবে। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে, শেষ ব্রিটিশ সামন্ত এই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। সেদিন তেলআবিব মিউজিয়ামে জ্যুইশ পিপলস কাউন্সিল জড়ো হয় এবং ইসরাইল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ঘোষণা করে। সাথে সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান এবং সোভিয়েতের স্টালিন স্বীকৃতি দেয় ইসরাইলকে। তবে আরব লিগের মিসর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক তা প্রত্যাখ্যান করে।
আরব রাষ্ট্রগুলো তখন ফিলিস্তিনের দিকে এগিয়ে যায় এবং শুরু হয় প্রথম আরব-ইসরাইল যুদ্ধ। আরব রাষ্ট্রগুলো আক্রমণ করে, কিন্তু সদ্যোজাত ইসরাইলের তখনও কোনো ভারি অস্ত্র ছিল না। তখন জাতিসংঘ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে এ অঞ্চলে ইসরাইলকে রক্ষা করতে। কিন্তু চেকোস্লোভাকিয়া সেই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করে। ১১ জুন এক মাসের শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করে জাতিসংঘ।
তবে মারা যায় ইসরায়েলের ৬,০০০ মানুষ, যেখানে মোট জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ছ লাখ। ৭ লাখ ২৬ হাজার ফিলিস্তিনি দেশছাড়া হয়। ১৯৪৯ সালের ১১ মে জাতিসংঘের সদস্যপদ পেয়ে যায় ইসরাইল।
ইসরাইলের সংসদ ‘কেনেসেত’ (Knesset) প্রথম মিলিত হয় তেলআবিবে। এরপর ১৯৪৯ সালের সিজফায়ারের পর চলে যায় জেরুজালেমে। জানুয়ারিতে প্রথম নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ডেভিড বেনগুরিওন। ১৯৫১ সালের মাঝেই ইমিগ্রেশনের কারণে ইসরাইলের জনসংখ্যা হয়ে গেল দ্বিগুণ। ১৯৫৮ সালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় বিশ লাখে।
এ সময়টাতে ইজরায়েল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদী হত্যাকারী নাৎসিদের খুঁজে বের করে হত্যা করতে থাকে, বা মৃত্যুদণ্ড দিতে থাকে। দুর্ধর্ষ ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের তৎপরতা ওঠে তুঙ্গে।
১৯৫৬ সালে সুয়েজ খালজনিত জটিলতায় ইসরাইল মিসর আক্রমণ করে বসে। ইসরাইলের মিত্র ছিল ব্রিটেন আর ফ্রান্স। এতে প্রবল নিন্দার ঝড় ওঠে।
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ চলছিল। ৮ জুন ইসরাইল এয়ার ফোর্স আর নেভি মোটর টর্পেডো বোট মার্কিন জাহাজ ইউএসএস লিবার্টি আক্রমণ করে বসে। মারা যায় ৩৪ ক্রু, আহত হয় ১৭১ ক্রু। জাহাজটা ছিল মিসরীয় শহর আরিশ থেকে ২৫ নটিক্যাল মাইল দূরে। ইসরাইল দুঃখ প্রকাশ করে বলে, মিসরীয় জাহাজ ভেবে আক্রমণ করে ফেলেছিল। এখনকার হিসাব মতে ইজরায়েল সরকার তিন দফায় ২২.৯, ২৩.৩ এবং ১৭.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয় সেই ঘটনায় নিহতদের জন্য। যদিও তদন্ত রিপোর্ট বলে এটা ভুল ছিল, তবুও বেঁচে যাওয়া আক্রান্তদের মতে, এটা নাকি ইচ্ছাকৃত ছিল!
১৯৬৮ সালের মার্চে ইসরাইলি বাহিনী আক্রমণ করে ফিলিস্তিনি বাহিনী ফাতাহকে। তবে ফাতাহ আর পিএলও (Palestine Liberation Organization) তখন আরব জুড়ে নাম করে ফেলে। ১৯৬৯-৭০ সালে আবারও মিসরের সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ লেগে যায়।
১৯৬৯ এর ডিসেম্বরে ইসরাইলের নেভি ৫ জন সোভিয়েত সেনাকে মেরে ফেলে যারা সাহায্য করছিল মিসরকে। তখন পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায় ইসরাইলের জন্য। পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করতে আমেরিকা কাজ করতে থাকে। ১৯৭০ সালের আগস্টে সিজফায়ারে রাজি হয় উভয় পক্ষ। তখন মিসরের প্রেসিডেন্ট নাসের।
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকের সময় ইসরাইল দলের ১১ জনকে ফিলিস্তিনি Black September Organization (BSO) জিম্মি করে। জার্মান তৎপরতায় আটজন কিডন্যাপারের পাঁচজনই মারা যায়, আর সাথে খেলোয়াড়রাও। তবে বাকি ফিলিস্তিনিদের জার্মান সরকার ছেড়ে দেয় এক হাইজ্যাক হওয়া বিমানের হোস্টেজ মুক্ত করতে। ইসরাইল সরকার এর জবাব দেয় বোমা বিস্ফোরণ, গুপ্তহত্যা আর লেবাননে পিএলও হেডকোয়ার্টারে হামলার দ্বারা। হামলার নেতৃত্ব দেন এহুদ বারাক, যিনি পরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন।
১৯৭২ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট হয়ে এলেন আনোয়ার সাদাত। এরপর ইয়ম কিপুর যুদ্ধে মিসর আর সিরিয়া মিলে অকস্মাৎ আক্রমণ করে বসে ইসরাইলে। তবে মিত্রের সহায়তায় ইসরাইল ভালোমতোই যুদ্ধে ফেরত আসে। এ যুদ্ধের ফলে সৌদি সরকার ১৯৭৩ এর তেল সংকট সূচনা করে। ১৯৭৪ এর মে-তে মা’লোত গ্রামের ১০২ শিশুকে স্কুলে জিম্মি করে ফিলিস্তিনিরা, মারা পড়ে ২২ শিশু। সেই বছরই পিএলও জাতিসংঘে অবজার্ভার স্ট্যাটাস পায়, আর ইয়াসির আরাফাত জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে ভাষণ দেন।
১৯৭৪ এর শেষ দিকে ইছহাক রাবিন প্রধানমন্ত্রী হন। ‘৭৬ এর জুলাইতে ফ্রান্সের ২৬০ যাত্রীসহ বিমান ছিনতাই করে ফিলিস্তিনি আর জার্মান সন্ত্রাসীরা, সেটা উগান্ডায় উড়িয়ে নেয় তারা। জার্মানরা তখন অইহুদী যাত্রীদের ছেড়ে দেয়, কিন্তু হত্যার হুমকি দেয় প্রায় ১০০ ইহুদী যাত্রীকে। প্রধানমন্ত্রী রাবিন তখন এক রেস্কিউ অপারেশন অর্ডার করেন, এবং সত্যি সত্যিই ইহুদী যাত্রীদের উদ্ধার করে ইসরাইলী বাহিনী। কিন্তু উগান্ডার মতো জাতিসংঘের এক রাষ্ট্রে এরকম উদ্ধার অভিযান সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘের সেক্রেটারি ওয়াল্ডহাইম, যিনি কি না আবার আগে নিজে নাৎসি ছিলেন।
১৯৭৭ সালে রাবিন এক কেলেংকারিতে সরে দাঁড়ান আর শিমন পেরেজ প্রধানমন্ত্রী হন। তবে নির্বাচনে জিতে মেনাখেম বেগিন প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। ৩০ বছরের শত্রুতা ঝেড়ে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত জেরুজালেম ভ্রমণে যান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সাদাত আর বেগিনের সাথে মিলিত হয়ে ক্যাম ডেভিডে এক শান্তিচুক্তির রূপরেখা অংকন শুরু করেন। পশ্চিম তীর আর গাজা এলাকা ফিলিস্তিনের অধিকারে থাকবে। ওদিকে ১৯৭৯ সালে ইরানি ইসলামি বিপ্লব থেকে পালিয়ে আসে ৪০ হাজার ইহুদী। ১৯৮৪ সালে ইথিওপিয়াতে দুর্ভিক্ষ চলাকালে ৮,০০০ ইথিপিয়ান ইহুদীকে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয় ইসরাইলে। ১৯৮৫ সালে লেবানন থেকে সব ইসরাইলী সামন্ত সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯৯২ সালে আবারো জয়ী হন রাবিন।
১৯৯৩ সালের জুলাইতে, এক সপ্তাহ ধরে ইসরাইল লেবাননে হামলা চালায়, লেবাননের শিয়া হিজবুল্লাহ পার্টিকে দুর্বল করে দিতে। ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইসরাইলের মৌলবাদী ইহুদী কাখ পার্টির সমর্থক বারুখ গোল্ডস্টাইন হেব্রনের পবিত্র প্যাট্রিয়ার্ক গুহাতে ২৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে, আহত করে ১২৫ জনকে (সেই গুহায় নবী হযরত ইব্রাহিম (আ) এর কবর আছে বলে কথিত)। ১৯৯৪ সালে ওয়াশিংটন ডিক্লারেশনে সাইন করে জর্ডান আর ইসরাইল, সাক্ষী ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ফলে, দীর্ঘদিনের এক যুদ্ধ পরিস্থিতি শেষ হয়, যেটা এ দুই দেশের মাঝে ছিল। ওদিকে রাবিন আর পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতও শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন [অসলো অ্যাকর্ড]। কিন্তু ফিলিস্তিনি সুন্নি সংগঠন হামাস এর বিরোধিতা করে।
‘৯৬ সালের নির্বাচনে নেতানিয়াহু জেতেন, আর হামাস বোমা হামলা চালায় কিছু। সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনি দাঙ্গায় ৮০ জন মারা যায়। ‘৯৯ এর জুলাইয়ের নির্বাচনে এহুদ বারাক জিতে যান। কিন্তু ২০০১ সালে নির্বাচনে জেতেন এরিয়েল শ্যারন।
তিনি ২০০২ সালে পশ্চিম তীরে ব্যারিয়ার বানানো শুরু করলেন। এর প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের গাজা থেকে সেখানে মর্টার হামলা হতে লাগল। আর লেবানন থেকে হিজবুল্লার আক্রমণ অব্যাহত ছিল। ২০০৪ সাল থেকে একদম পুরোদমে গাজায় প্রতিশোধ নিতে নামে ইসরাইল। চলতে থাকে অপারেশন।
২০০৬ সালে ফিলিস্তিনে জিতে আসে হামাস, এসেই তারা আগের সকল স্বাক্ষর করা চুক্তি বাতিল বলে গণ্য করে। এমনকি ইসরাইল এর প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা থেকে তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদী গণহত্যাকে জায়োনিস্টদের বানানো মিথ বলেও প্রচার করে বসে। এটা তাদের বেশ বড় একটা ভুল ছিল। ২০০৬ সালে শ্যারন স্ট্রোক করায় প্রধানমন্ত্রী হন এহুদ ওলমার্ট।
২০০৬ সালের ১৪ মার্চ এক ফিলিস্তিনি জেলে অপারেশন চালায় ইসরাইল। জুন মাসে ফিলিস্তিনের হামাস গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে ট্যাঙ্ক আক্রমণ করে ইসরাইলী সেনাকে ধরে নিয়ে আসে। লেবাননের হিজবুল্লাও প্রায় একই কাজ করে, দুজন ইসরাইলী সেনা ধরে নিয়ে আসে। ফলে ইসরাইল দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধ শুরু করে দেয়। ২০০৭ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হামাস।
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরাইলী বিমান বাহিনী সিরিয়ার নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর ধ্বংস করে দেয়। ২০০৮ সালে হামাসকে শায়েস্তা করতে গাজায় অভিযান চালায় ইসরাইল।
২০০৯ সালে নেতানিয়াহু ক্ষমতায় আসেন, এবং এখনো আছেন। ২০১১ সালে হামাস আর ইসরাইলের চুক্তি হয়, যার ফলে সেই অপহরণ করা ইসরাইলী সেনার বিনিময়ে ইসরাইল ১০২৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেয়।
নেতা আহমেদ জাবারিকে হত্যা করতে ইসরাইল গাজায় হামলা শুরু করে। যখন ২০১৪ সালে ফাতাহ আর হামাস একত্রে সরকার গঠন করতে রাজি হয়, তখন ইসরাইল শান্তিচুক্তি করতে বসতে অস্বীকৃতি জানায়।
২০১৪ সালের ৮ জুলাই হামাসের রকেট হামলার উত্তরে ইসরায়েল গাজা এলাকায় বড় আকারের আক্রমণ শুরু করে। গত ২০১৯ সালে এসেও ইজরায়েল- ফিলিস্তিন দ্বৈরথ চলেছেই। ২০১৬ সাল থেকে নেতানিয়াহু ইসরাইল পুলিশের তদন্তাধীন ছিলেন। ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর তার নামে ঘুষ ও অনৈতিকতার অভিযোগ আনা হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। যার ফলে পরে তিনি ক্ষমতা হারান।
বেশ কয়েকটি বছর পরিস্থিতি আগের চাইতে কিছুটা ম্রিয়মাণ থাকলেও, ২০২১ সালে করোনাকালে এসে পরিস্থিতি হঠাৎ তুঙ্গে ওঠে। ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে বৈষম্যের পাশাপাশি এবার শুরু হলো আবারও সশস্ত্র সংঘাত।
হঠাৎ কেন গাজায় নারকীয় আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল? চলুন জেনে নেয়া যাক ২০২১ পেছনের ঘটনাগুলো, নির্যাতিত ফিলিস্তিনের আর্তনাদ আর কিংবদন্তিতুল্য ইসরাইলের আয়রন ডোমের বাস্তবতা।
ইসরাইল অনেক যুদ্ধেই জড়িয়েছে, যেমন ১৯৪৮ সালে প্রথম আরব- ইসরাইল যুদ্ধ, ১৯৫৬ সালে সুয়েজ সংকট বা দ্বিতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধ, ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধ বা তৃতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধ, ইত্যাদি। আর ওদিকে গাজা ও পশ্চিম তীরে ধীরে ধীরে জায়গা দখল বাড়ছেই। এদেরকে আমরা বলি দখলদার ইসরাইলি, ইংরেজিতে বলে ইসরাইলি সেটলার, যারা অকুপাই করছে। শুরুর দিকে স্বল্প সংখ্যক ইহুদী হাজির হলেও, ধীরে ধীরে পুরো পৃথিবী থেকে ইহুদীদেরকে ‘আলিয়া’র মাধ্যমে জড়ো করে ইহুদী জনসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, যেন একটি পর্যায়ে পবিত্র ভূমির দাবি আদায় করা যায় স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে।
২০২১ সালের মে মাসে রমজানের মাসের শুরুর থেকেই পরিস্থিতি ছিল থমথমে। ইসরাইলি পুলিশ জেরুজালেমের ইহুদী অধ্যুষিত ওল্ড সিটির বাইরে ডামেস্কাস গেটে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের জমায়েত নিষিদ্ধ করে।
ডামেস্কাস গেট কেন? ১৩০-১৩১ সালের দিকে রোমান সম্রাট হ্যাড্রিয়ান জেরুজালেম এলাকা পরিদর্শনে আসেন। এখানে একটি বিজয়স্তম্ভ ছিল, যার ওপরে সম্রাট হ্যাড্রিয়ানের ভাস্কর্য। কালের বিবর্তনে এ ভাস্কর্য আর স্তম্ভ ধ্বংস হয়ে গেলেও, লোকে এখানে থাকা ফটকের আরবি নামের মধ্য দিয়ে মনে রাখে সে ঘটনা। আরবি নামটি বাব আল-আমুদ (asabal) obas) বা স্তম্ভ ফটক। পরবর্তী সময়ে এ গেট দিয়ে বের হয়ে লোকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে যেত বিধায় এর বিকল্প নাম হয়ে দাঁড়ায় ‘দামেস্ক গেট’। ইংরেজিতে এটিই প্রচলিত হয়- ডামেস্কাস গেট। এই দামেস্ক গেটটি ফিলিস্তিনি জাতিগত আন্দোলনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনি আর ইসরাইলি সেনা ও পুলিশদের মাঝে সংঘর্ষগুলো এই দামেস্ক গেট এলাকা ঘিরেই হয়ে আসছে, কারণ এখানেই ফিলিস্তিনিরা আন্দোলন আর প্রতিবাদের জন্য জড়ো হয়ে থাকেন। এজন্য কোনো প্রতিবাদের আভাস পেলেই এ এলাকায় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়।
তবে যাই হোক, ফিলিস্তিনিরা সেখানে জড়ো হয়ই, এবং প্রতিবাদও হয়। সংঘর্ষ হয়। একটা পর্যায়ে ইসরাইলি পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়। কিন্তু তখন পরিস্থিতি খারাপের দিকেই। ওদিকে, ইফতারের পর ফিলিস্তিনি জমায়েত এমনিতেই নিষিদ্ধ।
২০২১ সালের রমজানের শেষ সপ্তাহে এসে ইহুদী অধ্যুষিত পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকা থেকে বাদবাকি মুসলিম পরিবারকে উৎখাতের পরিকল্পনায় আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। এই এলাকায় ত্রয়োদশ শতকের সুলতান সালাহউদ্দিন বা সালাদিনের চিকিৎসক শেখ জাররাহ’র সমাধি রয়েছে। সেখান থেকেই এলাকার এ নাম। পূর্ব জেরুজালেমের এ অংশে মুসলিম বেশি, মানে ফিলিস্তিনি বেশি। একটা সময় জেরুজালেমের বনেদি মুসলিমদের কেন্দ্র ছিল শেখ জাররা। কিন্তু ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখলে চলে যায় ইসরাইলের। এখন এই শেখ জাররাহ থেকেও তাদের বিতারণ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। ইহুদী জায়োনিস্টদের দাবি, ১৮৮৫ সালেই নাকি তারা এ এলাকা কিনে নিয়েছিল।
৭ মে রাত্রে শত শত ফিলিস্তিনির প্রতিবাদে বাধা দেয় পুলিশ। শেখ জাররাহ’র চার ফিলিস্তিনি মুসলিম পরিবারকে উৎখাতের বিষয়ে পূর্ব জেরুজালেমে কেন্দ্রীয় কোর্ট ইসরাইলের পক্ষে রায় দেয়। শুনানির তারিখ তারা ফেলে মে মাসের ১০ তারিখে। বিশেষ এক দিন।
১০ মে ইসরাইল পালন করে জেরুজালেম দিবস হিসেবে; ইয়ম ইয়েরুশালায়িম। ইসরাইলের জাতীয় ছুটির এ দিনটি আসলে সেই যে ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইল আরবকে পরাজিত করেছিল, সেটির উদযাপন। এদিন জেরুজালেমের পুরনো শহর ইসরাইলিদের দখলে আসে। প্রতি বছর ইহুদীদের পতাকা মিছিল শুরু হয় সেই দামেস্ক গেট থেকে, আর শেষ হয় আল আকসা কম্পাউন্ড বা ইহুদীদের টেম্পল মাউন্ট তথা বাইতুল মুকাদ্দাস এলাকার পশ্চিম দেয়ালে এসে, মাঝে দিয়ে তারা মুসলিম এলাকা পার হয়। এ বিশেষ দিনে শুনানির কারণ এদিন মুসলিমরা বাধা দিতে পারবে না, রাস্তাঘাট ইহুদীদের দ্বারাই পূর্ণ থাকবে।
কিন্তু বড় আকারের আন্দোলনের ভয়ে শেষমেশ এ পরিকল্পনা থেকেও সরে আসে ইসরাইল সরকার; মিছিলের গতিপথ বদলে দেয়ার নির্দেশ আসে। সুপ্রিম কোর্ট পিছিয়ে দেয় শুনানির তারিখ। পবিত্র রমজানে আল-আকসা মসজিদে জড়ো হওয়া শত শত ফিলিস্তিনি প্রতিবাদকারীদের ওপর আক্রমণ করে ইসরাইলি ফোর্স। আহত হয় অসংখ্য ফিলিস্তিনি। সেটি মে মাসের ১০ তারিখ, ২০২১।
গাজা উপত্যকার হামাস আল্টিমেটাম দিল, আল-আকসা আর শেখ জাররাহ থেকে ইসরাইলি ফোর্সকে চলে যেতে হবে, নাহলে আক্রমণ চালাবে তারা। সন্ধ্যার দিকে অনেক বছর পর ইহুদী অধ্যুষিত জেরুজালেম আর দক্ষিণ ইসরাইলের দিকে পালটা আক্রমণ চালায় হামাস মিসাইল ছুঁড়ে। হামাসের ভাষ্য জানা নেই, তবে ইসরাইলের মতে, প্রতি তিন মিনিটে নাকি একটি করে রকেট ছোঁড়া হয়েছে।
ইসরাইল তখন গাজায় এয়ারস্ট্রাইক চালাতে শুরু করে। হামাসের আক্রমণ বিপুল পরিমাণে হলেও ইসরাইলের আক্রমণের ফলাফলের মতো ভয়ংকর নয়। কারণ, মুসলিম অধ্যুষিত এ এলাকা অর্থাৎ ফিলিস্তিনের ডিফেন্স সিস্টেমের অভাব। এয়ারস্ট্রাইকগুলোর কারণে ১৩ তলার আবাসিক ভবন পর্যন্ত ধূলিসাৎ হয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত, আগেই বেরিয়ে যেতে পেরেছিলেন অধিবাসীরা। কিন্তু তাই বলে সবাই এত ভাগ্যবান নয়। প্রতিনিয়তই আক্রমণ চলছে আর ইসরাইলের মতে, হামাস না থামলে তারা যুদ্ধে যেতেও প্রস্তুত। যদি এটাকে ইতোমধ্যে যুদ্ধ না ডাকা হয় আর কি।
কিন্তু এই কাউন্টার-অ্যাটাকে কেন কিছু হয় না ইসরাইলের? কারণ তাদের অসম্ভব শক্তিশালী ‘আয়রন ডোম’ নামের এয়ার ডিফেন্স। এখন বলি আয়রন ডোম কীভাবে কাজ করে।
ইসরাইলের নানা জায়গা জুড়ে বিরাজমান জালের মতো র্যাডার আর মিসাইল লঞ্চারের সমষ্টি হলো এই আয়রন ডোম। কোনো জায়গা থেকে মিসাইল উৎক্ষেপিত হলে সাথে সাথে আয়রন ডোম সেটিকে চিহ্নিত করে এবং ক্যালকুলেট শুরু করে এটি কোথায় গিয়ে আঘাত করবে সেটি বের করতে। যদি সেটি কোনো জনবিরল এলাকায় পড়বে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে আয়রন ডোম কিছুই করে না। আর যদি দেখা যায় এটি অধ্যুষিত এলাকার দিকে আসছে তাহলে সংশ্লিষ্ট এলাকা বা যেখান থেকে সুবিধা সেখান থেকে কাউন্টার মিসাইল উৎক্ষেপিত হয়, সেগুলো আকাশে গিয়ে পিছু নেয় ইনকামিং মিসাইলের এবং সেটিকে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়। ২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে ৯০% মিসাইলকে ইন্টারসেপ্ট বা ধ্বংস করে দিয়েছে আয়রন ডোম। প্রতিটি রকেটের পেছনে ইসরাইলের খরচ ২০,০০০ ডলার। এই বড় প্রক্রিয়াটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই সমাপ্ত হয়। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো হামাস এত রকেট একবারে ছেড়েছে যে, আয়রন ডোমকেও হিমশিম খেতে হয়েছে; এই অতিমাত্রায় মিসাইল ছোঁড়াই আয়রন ডোমের উইকপয়েন্ট আপাতত। আয়রন ডোমের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে দিয়ে ঢুকে পড়ে হামাসের মিসাইল।
আয়রন ডোমকে হিব্রুতে ডাকা হয় ‘কিফাত বারজেল’। রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস আর ইসরাইল অ্যারোস্পেসের যৌথ উদ্যোগে এটি নির্মিত। ইব্রাহিম (আ) ও তার পুত্র ইসহাক (আ) এর স্মৃতিবিজড়িত বিরশেবা এলাকায় ইসরাইল এটির প্রথম লঞ্চ করেছিল ২০১১ সালে। ইহুদী ধর্মীয় নামের সাথে তাদের সামরিক জিনিসগুলোর নাম দিতে দেখা যায় ইসরাইলের। যেমন গোলায়াথ বা জালুতের সাথে যুদ্ধে ডেভিড বা দাউদ (আ) গুলতির সাহায্যে পাথর ছুঁড়ে মেরে তৎকালীন ফিলিস্তিনিদের ওপর বনী ইসরাইলের বিজয় নিশ্চিত করেন। সেই ঘটনা থেকে আয়রন ডোমের চাইতেও শক্তিশালী ডিফেন্স আর অফেন্স সিস্টেম বানিয়ে চলেছে ইসরাইল, যার একটির নাম ‘কেলা ডেভিড’ বা ‘দাউদের গুলতি’ (২০১৭)। এরকম অনেকগুলো ডিফেন্স সিস্টেমের একটি হলো আয়রন ডোম। আপাতত ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে আসা মিসাইল থেকে ইসরাইলকে নিরাপত্তা দিলেও, ভবিষ্যতে সেটি ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত করার পরিকল্পনা তাদের। এখানে আরেকটা বিষয় বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র শুরুতে আয়রন ডোম কাজ করবে না বললেও, ২০২১ সালে তারাই ইসরাইল থেকে দুটো আয়রন ডোম সিস্টেম নিয়েছে বসানোর জন্য।
৬ থেকে ২১ মে পর্যন্ত চলা এ রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ২৮২ জন ফিলিস্তিনি মারা যায়, চলে যেতে হয় ৭২,০০০ জনকে। আর এরপর চলে গণগ্রেফতার। ২৮২ জনের বিপরীতে ইসরাইলের মারা যায় ১২ জন। তবে অবাক করা ব্যাপার, অন্যবার যেখানে বেশিরভাগ পশ্চিমা মিডিয়াই চুপ থাকে, সেখানে এবার গাজা আক্রমণ নিয়ে বেশ প্রতিবাদমুখর দেখা যায় তাদের!
প্রশ্ন হলো, কেন অনেক দেশই তাদের এমন কাণ্ড কারখানা সমর্থন করে? প্রো-ইসরাইলি পলিটিকাল একটি প্রভাব কাজ করে অনেক দেশেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আইপ্যাকের কথা, American Israel Public Affairs Committee; ওয়াশিংটন ডিসিতে আইপ্যাক বার্ষিক কনফারেন্স করে থাকে, সেখানে যোগদান করেন উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদেরা, প্রেসিডেন্টরাও। ইসরাইলি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু সেখানে নিয়মিত যেতেন। প্রো-ইসরাইল গ্রুপগুলো ভালো ফান্ডিং করে, ডোনেশন করে, স্পন্সর করে। এর ফলে বিজয় লাভের পর আসলে তাদের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না বা চান না নির্বাচিতরা। আমেরিকার ক্ষেত্রে দুই পক্ষকেই কিন্তু তারা ডোনেট করে থাকে। যেমন, ২০২০ সালের ক্যাম্পেইনে ৬৩% গিয়েছিলো ডেমোক্র্যাটদের কাছে, ৩৬%, রিপাবলিকান।
জাতিসংঘের ১৯২টি দেশের মাঝে ১৬৪টি দেশের সাথেই কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে ইসরাইলের। আরব দেশগুলো এখন ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে, যেমন বাহরাইন, আরব আমিরাত, সুদান, মরক্কো। আর আগে থেকেই প্রতিবেশী দেশ মিসর ও জর্ডান তো ছিলই। ইসরাইলের নেতৃত্বে বদল এসেছে বেশিদিন হয়নি; বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ১৯৯৬-৯৯ এবং ২০০৯- ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ১৫ বছর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এবং শেষমেশ দুর্নীতি মামলায় অপসারিত হলেন বলা যায়। এ বই লেখার সময় নাফতালি বেনেট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী
জেরুজালেম খ্রিস্টান, ইহুদী আর মুসলিম তিন ধর্মাবলম্বীদেরই তীর্থস্থান। এই পবিত্র ভূমি নিয়ে মারামারির পেছনে কারণ সেই একটাই- কারা এর আসল মালিক?
হিব্রু বাইবেলকে সূত্র ধরে ইহুদীদের দাবি হলো সেই প্রাচীনকালেই তারা এখানে ছিল। মাঝে অন্যত্র নির্বাসিত হলেও এ জায়গার আসল অধিকার তাদেরই। কিন্তু তাদের সেই ধর্মগ্রন্থমতেই ফিলিস্তিনিরা ছিল ইহুদীরা আসবার আগে থেকেই এ অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা। তাই ইহুদীদের এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসা ব্যাপারটা এই অঞ্চলের মুসলিমরা মেনে নিতে রাজি নয় একদমই। এবং ধর্মগতভাবেই সারা বিশ্বের মুসলিমরা তাদের এ দাবিকে সমর্থন জানায়। তবে মার্কিন মিত্র হওয়ায় ইসরাইলের ক্ষমতা যে সুবিশাল সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই।
ফিলিস্তিনিদের ওপর অবিরাম চলতে থাকা হামলাগুলো বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়ে যায়- বিশেষ করে গাজার হামলাগুলো। মিশরের সিনাই আর সিরিয়ার গোলান মরুভূমির দখল রাখা ইসরাইলের চরম হঠকারিতার পরিচয় গোধূলি লগ্নে পবিত্র নগরী জেরুজালেম দেয়। প্রতিনিয়ত সেখানে নিরীহ নারী-শিশু মারা যাচ্ছে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এ দ্বৈরথ মিটে যাবার কোনো ক্ষীণ আশাও দেখা যায় না।
এ অধ্যায়টির লেখাতে সহস্র বছরের ইতিহাস অতি সংক্ষেপে লিখতে গিয়ে অনেক ভুল হয়ে থাকতে পারে, আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন পাঠক। তাছাড়া খাজার, আশকেনাজি- কত ইহুদী গোত্রের ব্যাপারই বিস্তারিত বলা যায়নি, তবে আশা রাখি পরবর্তীতে সবই লেখা যাবে।