অধ্যায়-২ – আমাদের গ্যালাক্সি

অধ্যায়-২ – আমাদের গ্যালাক্সি

জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যবহৃত সময় ও দূরত্ব পার্থিব দূরত্ব ও সময়ের তুলনায় বহুগুণ বেশি। ইংরেজি ভাষায় ‘অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল’ শব্দটি বিশাল পরিমাণকেই ইঙ্গিত দেয়। সমগ্র মহাবিশ্বকে নিয়ে আলোচনা করার সময় যে সময় ও দূরত্বের প্রয়োগ করা হয় তা প্রচলিত সাধারণ জ্যোতির্বিদ্যার সময় ও দূরত্বের চেয়ে বেশি।

জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্ব পরিমাপের একক মাইল বা কিলোমিটার নয় বরং আলোকবর্ষ। আলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার বেগে ১ বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে। কিলোমিটারের হিসেবে ১ আলোকবর্ষ সমান গড়পড়তায় ৯×১০^১২ কিলোমিটার বা ৯ মিলিয়ন মিলিয়ন কিলোমিটার। আলোকবর্ষ সম্পর্কে ধারণা পেতে কিছু পরিচিত দূরত্ব বিবেচনা করা যাক। এসব দূরত্বকে ‘আলোক ভ্রমণ কাল’ হিসেবে রূপান্তর করা যাক। আমরা জানি পৃথিবীর পরিধি হচ্ছে প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার। আলো প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীর চারপাশে সাতবারেরও বেশি বার প্রদক্ষিণ করতে পারে। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩৭১০০০ কিলোমিটার। তাই পৃথিবী থেকে আলো চাঁদে পৌঁছতে সময় নেয় এক সেকেন্ড থেকে দেড় সেকেন্ড। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটারের কাছাকাছি। আলো আট থেকে সাড়ে আট মিনিটে এ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। সূর্য থেকে পুটোর দূরত্ব প্রায় ৫৯০০ মিলিয়ন কিলোমিটার। পুটো সূর্য থেকে সৌরজগতের সর্বাধিক দূরত্বে অবস্থিত। এই দূরত্ব ভ্রমণ করতে আলো সময় নেয় ৫.৫ ঘণ্টা। এ থেকে বোঝা যায় যে, সূর্য থেকে পুটোর দূরত্ব ১৬০০ আলোকবর্ষ

সৌরজগতের দূরত্বসমূহ পরিমাপের বেলায় আলোকবর্ষ অতি দীর্ঘ, তাই এক্ষেত্রে জ্যোতির্বিদগণ অন্য একটি একক ব্যবহার করেন। একে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট বা একক বলা হয়। সংক্ষেপে একে এ.ইউ দ্বারা প্রকাশ হয়। প্রায় ষাট হাজার (৬০০০০) এ ইউ-তে হয় এক আলোকবর্ষ।

জ্যোতির্বিদগণ আলোকবর্ষের পরিবর্তে প্রায়শ আরও একটি একক ব্যবহার করেন। আর তা হচ্ছে ‘পারসেক’ যা প্রায় ৩.২৬ আলোকবর্ষের সমান। পৃথিবী যেমন সূর্যের চারপাশে ঘুরছে তেমনই আকাশে নিকটবর্তী নক্ষত্রগুলো অতি দূরের নক্ষত্রদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাপেক্ষে উপবৃত্তাকার পথ অনুসরণ করছে। কিন্তু ওই দূরের নক্ষত্রদের দিক পরিবর্তন হয় না। এরকম উপবৃত্তের সর্বোচ্চ কৌণিক ব্যাসার্ধকে যখন আর্ক-সেকেন্ডে প্রকাশ করা হয় তখন একে ত্রিকোণমিতিক প্যারালাক্স (লম্বণ) বা নক্ষত্রের প্যারালক্স বলা হয়। দেখানো যেতে পারে যে, সেকেন্ডে পরিমাপকৃত এই প্যারালাক্সের পূরক থেকে নক্ষত্রের দূরত্বের পারসেক হিসাব পাওয়া যায়। সুতরাং, ১ পারসেক দূরত্বে একটি নক্ষত্রের ১ সেকেন্ড আর্কের একটি প্যারালাক্স রয়েছে এবং নক্ষত্রটি ২ পারসেক দূরত্বে হলে তার প্যারালাক্স হবে ০.৫ সেকেন্ড আর্কের প্যারালাক্স। এই পদ্ধতিতে নিকটবর্তী নক্ষত্রদের দূরত্ব পরিমাপ করা হয়। তাই এই সংখ্যার পূরকই হচ্ছে নক্ষত্রটির দূরত্ব অর্থাৎ ১.৩৩ পারসেক। সুতরাং, পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪.৩৪ আলোকবর্ষের সমান। ১ মিলিয়ন পারসেক ১ ম্যাগাপারসেক বলা হয়।

চাঁদহীন রাতের আকাশে হাজার হাজার নক্ষত্র দেখতে পাওয়া যায়। মনে হয় যেন আলোর উজ্জ্বল প্রণালি আকাশপানে বিস্তৃত রয়েছে। প্রাচীনকালের মানুষেরাও এই উজ্জ্বল প্রণালি নিয়ে ভাবতো এবং এটিই এক সময় ‘মিল্কিওয়ে’ নামে পরিচিত হয়। খোলা চোখে এবং একটি সাধারণ টেলিস্কোপে যেসব নক্ষত্র দেখা যায় এরা সবাই আমাদের গ্যালাক্সির অধিবাসী। এরা আমাদের সূর্য ও সৌরজগতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই গ্যালাক্সি বিভিন্ন নামে পরিচিত— মিল্কিওয়ে বা গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ। মূলত গ্যালাক্সি শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘galaxias Kyklos’ থেকে এসেছে যার অর্থ দুগ্ধ প্ৰণালি।

আমাদের গ্যালাক্সির আকৃতি গোলাকার চ্যাপ্টা চাকতির মত। এই চাকতির কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত পথের দুই-তৃতীয়াংশে আমাদের সূর্য ও সৌরজগতের অবস্থান। গ্যালাক্সির সমতলের বাইরে দূর থেকে তাকালে যে পরিমাণ নক্ষত্র আমরা দেখতে পারব তার চেয়ে অধিকতর নক্ষত্র লক্ষ করতে পারব সমতলে থাকালে। আকাশের বুকে গ্যালাক্সির সমতলে অসংখ্য নক্ষত্রকে ‘মিল্কিওয়ে’র মত দেখা যায়। যে গ্যালাক্সিকে আমরা চাকতি ধরে নিয়েছি তার ব্যাসরেখার দূরত্ব প্রায় ৮০ হাজার আলোকবর্ষ এবং তার পুরুত্ব প্রায় ৬ হাজার আলোকবর্ষ। চাকতির চারপাশে অসংখ্য নক্ষত্রের গোলাকার বলয় (হ্যালো) রয়েছে। এই বলয়টি ১ লক্ষ আলোকবর্ষ ব্যাসবিশিষ্ট। চাকতির ঘনত্বের তুলনায় বলয়ের মধ্যে নক্ষত্রের ঘনত্ব অনেক কম। ১৭৫০ সালে থমাস রাইট নামে একজন ইংরেজ যন্ত্র কারিগর প্রথম তাঁর লেখা Original theory or new hypothesis of the universe নামক বইটিতে উল্লেখ করেছিলেন মিল্কিওয়ে অসংখ্য নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত। আর এসব নক্ষত্র সমতলে বিরাজমান। তিনি এ সমতলকে চাকতি সদৃশ সমতল পাথরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, ওই সব নক্ষত্র সমতলটিতে পরস্পর থেকে অতি দূর দূর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

যে কেউ একটি টেলিস্কোপ দ্বারা আকাশে অনুজ্জ্বল ও মেঘবৎ অনেক বস্তু লক্ষ করতে পারেন। ১৭৮১ সালের শুরুর দিকে ফ্রান্সের জ্যোতির্বিদ ও ধূমকেতু গবেষক চার্লস মেসিয়র (১৭৩০-১৮১৭) একক ১০৩টি বস্তুর একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। তালিকাটি একজন ধূমকেতু পর্যবেক্ষকে সাহায্য করতে পারে অর্থাৎ কেউ যাতে এদেরকে ধূমকেতু ভেবে ভুল না করেন। এমনকি বর্তমানে জ্যোতির্বিদগণ মেসিয়রের তালিকায় লিপিবদ্ধ বস্তুগুলোকে মেসিয়েরের নামের আদ্যাক্ষর এম (M) এর শেষে সংখ্যা যুক্ত করে সূচিত করেন। M-এর সঙ্গে যুক্ত সংখ্যা নির্দেশ করে যে, মেসিয়রের মূল তালিকায় এর অবস্থান কত।

উদাহরণস্বরূপ, ক্লাব নীহারিকাকে M, বলা হয়। এটি একটি বিদীর্ণ নক্ষত্রের দেহাবশেষ। যেহেতু এই নীহারিকাটি মেসিয়রের তালিকায় প্রথমেই স্থান পেয়েছিল তাই একে M; দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

পরবর্তীকালে জার্মান বংশোদ্ভূত ইংরেজ জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেল (১৭৩৮- ১৮২২) ও তাঁর সন্তান জন হার্শেল (১৭৯২-১৮৭১) তালিকাটিতে আরও কিছু বস্তু যুক্ত করেছিলেন যাদেরকে বলা হত ‘নেব্যুলেই’। উইলিয়াম হার্শেল প্রকৃতপক্ষে একজন সংগীতশিল্পী ছিলেন। ১৯৮১ সালে তিনি প্রথম ইউরেনাস গ্রহটি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি ওই সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এনেছিলেন। উইলিয়াম হার্শেল প্রায় ২০০০ নতুন নীহারিকার একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। জন হার্শেল তাঁর বাবার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিলেন। জন হার্শেল ১৮৬৪ সালে ‘The General Catalogue of Nebulae’ নামে একটি তালিকা প্রকাশ করেছিলেন। তালিকাটিতে ৫০৭৯টি অনুজ্জ্বল বস্তু অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীকালে ড্যানিশ জ্যোতির্বিদ লুই ড্ৰেয়্যার (১৮৫২-১৯২৬) ১৮৮৮ সালে জন হার্শেলের তালিকাকে আরও উন্নত করেছিলেন। তিনি উন্নয়নকৃত তালিকাটির নাম দিয়েছিলেন The New General Catalogue of Nebulae and Cluster of Stars.’। পরবর্তীকালে ১৮৯৫ ও ১৯০৮ সালে তালিকাটির বর্ধিত রূপও প্রকাশ করেছিলেন। তালিকাটিতে প্রায় ১৫,০০০ নীহারিকা ও নক্ষত্র স্তবক অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তালিকাটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক অসাধারণ অর্জন। এটি বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শেষ পর্যন্ত একটি আদর্শ কাজ ছিল। কোনও প্রকার ফটোগ্রাফিক যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই এগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল কেবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে।

মেসিয়রের তালিকার অনেক বস্তু ছিল আমাদের গ্যালাক্সির। তাঁর তালিকায় অনেক নক্ষত্রস্তবক ছিল। এরা আকাশে মেঘবৎ দৃশ্যের সৃষ্টি করে কারণ এদের মধ্যে অতি বেশি সংখ্যক নক্ষত্র রয়েছে। তালিকার নক্ষত্র স্তবগুলো দুই ধরনের ছিল। প্রথমটি হল ‘ওপেন ক্লাস্টার (মুক্ত বা বিচ্ছিন্ন স্তবক) এই মুক্ত স্তবকে কয়েক শত নক্ষত্র দূর দূর অবস্থান করে দলবদ্ধ হয়। উদাহরণস্বরূপ M67 একটি মুক্ত স্তবক। এটি মেসিয়রের তালিকার ৬৭তম বস্তু। এটি কর্কট মণ্ডলে অবস্থিত। দ্বিতীয় প্রকার স্তবক হচ্ছে ‘গ্লোবিউলার’ স্তবক যাতে প্রায় এক লক্ষ নক্ষত্র ঘন-দলবদ্ধ অবস্থায় আছে। আর এরা গোলাকার আকৃতি নিয়ে ছড়িয়ে আছে। ওপেন ক্লাস্টার ও গ্লোবিউলার ক্লাস্টার দুটিকে যথাক্রমে NGC2682 এবং NGC হচ্ছে ‘New General Catalogue’- সংক্ষিপ্ত রূপ। ডেয়্যারের এই তালিকার নামানুসারে ওই দুটি স্তবকের নামকরণ করা হয়েছিল। তাছাড়া মেসিয়রের তালিকায় নীহারিকাদেরও উল্লেখ রয়েছে যেগুলো সত্যিকারই নীহারিকা। এরা মূলত ধূলি ও গ্যাস দ্বারা আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ। আমাদের গ্যালাক্সির কিছু কিছু স্থানে ধূলি, গ্যাসের মেঘ রয়েছে যেখানে রয়েছে নবীন নক্ষত্রের দল। ওইসব স্থানে নক্ষত্রদের জন্ম প্রক্রিয়া শুরু হয়। এইরকম একটি নীহারিকা হল কালপুরুষ নীহারিকা। এই কালপুরুষ নীহারিকাকে M42 ev NGC1976 নামেও ডাকা হয়। এই নীহারিকাটি খালি চোখেই দেখা যায়। এর অবস্থান কালপুরুষ মণ্ডলীর তলোয়ার স্থানে

আনুমানিকভাবে আমাদের গ্যালাক্সিটি সর্পিলাকার। ২.১ নম্বর চিত্রে এর আকৃতি দেখানো হয়েছে। সামগ্রিক সর্পিলাকারটি নিজ তলে কেন্দ্র করে ঘুরছে। গ্যালাক্সির কেন্দ্রীণ অংশটি স্ফীত। গ্যালাক্সির ভেতরের অংশে অর্থাৎ কেন্দ্ৰীণ অংশে নক্ষত্রের ঘনত্ব অনেক বেশি। এই অংশটি কম বেশি অনমনীয় দেহে ঘুরছে। সূর্য এবং অন্যান্য দৃশ্যমান অর্থাৎ পর্যবেক্ষণযোগ্য নক্ষত্রসহ চাকতির বাহিরের অংশে কেন্দ্র থেকে কৌণিক বেগ হ্রাস পায়। অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে দূরের নক্ষত্রগুলো কাছের নক্ষত্রগুলো থেকে পিছিয়ে কিছুটা আমাদের সৌরজগতের গ্রহদের মত। সূর্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরছে। সূর্য প্রতি সেকেন্ডে ২৫০০ কিলোমিটার বেগে ২০০ বছর সময় নেয় তার ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে।

গ্যালাক্সির কেন্দ্রভাগ ধূলি ও মেঘে আবৃত। তাই এই অংশটির অপটিক্যাল পর্যবেক্ষণ খুবই কঠিন। রেডিও তরঙ্গের সাহায্যে কেন্দ্রভাগের গঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা গেছে যে, গ্যালাক্সির অধিকাংশ বস্তুই নক্ষত্র আকৃতির এবং এরা বিভিন্ন প্রকারের। গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় একশত বিলিয়নের কাছাকাছি। এসব নক্ষত্র ছাড়াও গ্যাসীয় মেঘ আকৃতির আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু রয়েছে।

গ্যালাক্সির দৃশ্য

চিত্র-২.১ : a-তে গ্যালাক্সির সমতলের দৃশ্য এবং b-তে গ্যালাক্সির সমতলের বাইরে দূর থেকে যে দৃশ্য দেখা যায়।

এসব আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুতে আকর্ষণপূর্ণ অনেক জৈব ও অজৈব যৌগ রয়েছে। এই সব আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুর সঠিক গঠন জানাটা একটি কার্যকর গবেষণার বিষয়। আমাদের গ্যালাক্সিতে একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রও রয়েছে। কিন্তু গ্যালাক্সির যথাযথ গঠন ও নিখুঁত বিবরণ খুবই জটিল বিষয়। এই সমস্যা এখনও অমীমাংসিতই রয়েছে। যাই হোক, মহাবিশ্বের বৃহৎ পরিসরের গঠন নিয়ে ভাবতে গ্যালাক্সির গঠন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করা এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *