অধ্যায় ২৫ : ভৌগোলিক ইসরাইল-ফিলিস্তিন
বর্তমান ইসরাইলের সীমা পরিসীমা নিয়ে একটু আলোচনা করে নেয়া যাক। দেশটি আসলে কোথায়, কী কী এর অন্তর্গত, কী কী নয়, ইত্যাদি।
মিসর, জর্ডান, সিরিয়া ও লেবানন পরিবেষ্টিত এ দেশটির রয়েছে স্মৃতিবিজড়িত নানা শহর আর গ্রাম, যেখানে ইহুদী, খ্রিস্টান ও ইসলাম তিন সেমিটিক ধর্মেরই পবিত্র কিছু স্মৃতি আছে। আপনি নিচের মানচিত্রের দিকে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা রয়েছে।
যেমন, ‘আক্কা’ শহরটি উত্তর ইসরাইলে অবস্থিত, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন মানব-অধ্যুষিত শহরগুলোর একটি।
হাইফা হলো ইসরাইলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর, কেবল জেরুজালেম আর তেলআবিব এর চাইতে আকারে বড়। নবী হযরত ইলিয়াস (আ)-এর স্মৃতি বিজড়িত মাউন্ট কার্মেল বা ‘জাবাল মার ইলিয়াস’ এখানেই অবস্থিত, উত্তর ইসরাইল থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চলে গিয়েছে এই পর্বতমালা।
গালিলি সাগর বা লেক টাইবেরিয়াস হলো পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু মিঠাপানির হ্রদ। এর চাইতে কেবল একটি জলাশয় রয়েছে নিচুতে অবস্থিত, তা হলো মৃত সাগর বা ডেড সি, তবে সেটা নোনা পানির। এই গালিলি সাগরের উৎস হলো জর্ডান নদী। বাইবেল মতে, এই পানির ওপর দিয়ে যীশু খ্রিস্ট হেঁটে যান, ঝড় থামান, বিপুল পরিমাণ মাছ ধরেন, হাজার হাজার লোককে খাওয়ান, ইত্যাদি অলৌকিক সব ব্যাপার করে দেখান।
নাজারেথ, বা নাসরত গ্রাম, বা এখন মফস্বল বলতে পারেন। বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট অনুযায়ী, এটি যীশুর শৈশবের গ্রাম। এখান থেকে তিনি এসেছিলেন, তাই তার অনুসারীদের শুরুর দিকে ‘নাসারা’ ডাকা হতো, বা নাজারিন। এটাকে ইসরাইলের আরব রাজধানী ডাকা হয়। এখানে ৬৯% মুসলিম, আর ৩০.৯% খ্রিস্টান।
তেলআবিব-ইয়াফো নামের শহরে আসা যাক। যদি পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরাইলের অংশ ধরা হয়, তাহলে তেলআবিব হলো জেরুজালেমের পর দ্বিতীয় জনবহুল শহর। আর যদি ইসরাইলের অংশ না ধরেন, তাহলে তেলআবিবই সবচেয়ে জনবহুল। ইসরাইলের এ শহরটি সম্পর্কে বলা হয়, এটি কখনও ঘুমায় না। এটি একটি প্রাচীন বন্দরনগরী। এর কোনো ধর্মীয় ইতিহাস নেই। শহরটির গোড়া পত্তন করাই হয় আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য।
জেরিকোর অন্তত ১১,০০০ বছরের ইতিহাস আছে। এর সুজলা সুফলা ভূমি অনাদিকাল থেকেই জনপদ গড়ায় সাহায্য করে এসেছে, বাইবেলে ইউশা (আ) সংক্রান্ত ঘটনায় জেরিকোর বিবরণ আসে। হিব্রু বাইবেলে একে ‘পাম গাছের শহর’ বলে ডাকা হয়েছে।
বেথেলহেম, আরবিতে ডাকা হয় বাইত লাহম, মানে ‘মাংসের ঘর’। অবশ্য এ জায়গার আদি নাম কানানীয় উর্বরতার দেবতা লেহেমের নাম থেকে এসেছে। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের মাঝেমাঝিতে জেরুজালেম থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এ শহর অবস্থিত। এ শহর থেকেই ডেভিড বা দাউদ (আ) এসেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়, এখানেই তাকে রাজা করা হয় ইসরাইলের। বাইবেল অনুযায়ী, এখানে জন্ম হয় যীশু খ্রিস্টের। দ্বিতীয় শতকে ইহুদীদের বার-কহবা বিদ্রোহের সময় এ শহর একবার ধ্বংস করে দিয়েছিলেন রোমান সম্রাট হ্যাড্রিয়ান।
জেরুজালেমের পর ইহুদীদের কাছে দ্বিতীয় পবিত্রতম শহর হলো হেন। মুসলিমদের কাছেও পবিত্রজ্ঞান করা হয়, কারণ এখানে ধারণা করা হয় কেইভ অফ দ্য প্যাট্রিয়ার্কে ইব্রাহিম (আ) এর কবর রয়েছে। একে আল-হারাম আল- ইব্রাহিমি ডাকা হয়। ইব্রাহিম (আ) ও তার স্ত্রী সারাহ, ইসহাক (আ) ও তার স্ত্রী রেবেকা, এবং ইয়াকুব (আ) ও তার স্ত্রী লেয়ার কবর নাকি এখানেই। ইহুদী কিংবদন্তি আছে, আদম হাওয়ার কবরও এখানে আছে।
যাক গে, সবশেষে আসি জেরুজালেম আর গাজার ব্যাপারে। জেরুজালেম ইহুদীদের কাছে পবিত্রতম শহর, পবিত্র খ্রিস্টান ও মুসলিমদের কাছেও। ইয়ার- উস-সালাম বা ‘শান্তির শহর’ বা ‘দাউদের শহর’ নামে পরিচিত জেরুজালেম আজ পর্যন্ত দুবার পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে, ২৩ বার অবরোধ করা হয়েছে, দখল-বেদখল হয়েছে ৪৪ বার এবং আক্রমণ করা হয়েছে ৫২ বার।
গাজা হলো ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীরে স্বায়ত্তশাসিত ফিলিস্তিনি অঞ্চল। মিসরের সাথে এর সীমানা রয়েছে প্রায় ১১ কিলোমিটার জুড়ে। গাজা আর পশ্চিম তীরই হলো বর্তমানে ফিলিস্তিনি এলাকা, অর্থাৎ এখনো ইসরাইলের হাতে চলে যায়নি।
পরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ১৯৪৭ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে কীভাবে ফিলিস্তিনের অঞ্চলগুলো ইসরাইলের দখলে চলে যেতে থাকে।