অধ্যায় ২০ : ইহুদীদের আমেরিকা গমন
বেশ তো আলাপ হলো ইউরোপীয় ইহুদীদের নিয়ে। কিন্তু এই ফাঁকে আমেরিকায় ইহুদীরা পাড়ি জমালো কবে? সে প্রসঙ্গেই আসা যাক এবার।
আমেরিকা মহাদেশে ইহুদীরা ছিল সেই ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক যুগ থেকেই। তবে তাদের অভিবাসনের মূল কারণ ছিল আমেরিকায় নতুন সুযোগকে কাজে লাগানো। আর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ইহুদী আমেরিকায় পাড়ি দেয় যখন থেকে ইউরোপে ইহুদী বিরোধী মনোভাব বেশি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
১৭৯০ সালে মোটে ১,০০০ কি ২,০০০ ইহুদী ছিলো আমেরিকায়, যারা ব্রিটেন এবং হল্যান্ড থেকে ওখানে গিয়েছে। তারা বেশিরভাগই ছিল সেফার্দি ইহুদী। কিন্তু ১৮৪০ সালের মাঝে সেই সংখ্যা ১৫,০০০-এ উন্নীত হয়। ১৮৩০ সালের আগ পর্যন্ত তাদের অবস্থান মূলত চার্লসটন অর্থাৎ সাউথ ক্যারোলাইনায় ছিল।
১৮৮০ সালে দেখা যায়, আমেরিকান ইহুদী জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ! এরা বেশিরভাগই আশকেনাজি ইহুদী। উনিশ শতকের মাঝামাঝি তারা এসেছে জার্মান অঞ্চলগুলো থেকে। তারা মূলত ব্যবসা, পণ্য উৎপাদন এবং শুকনো কাপড়ের কাজ কারবার করত।
১৮৮০ সাল থেকে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পূর্ব ইউরোপ থেকে প্রায় ২০ লাখ আশকেনাজি ইহুদী আমেরিকায় চলে আসে। মূলত তারা রাশিয়া, পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেইন ও মলদোভা অঞ্চল থেকে আসা। পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদীরা নিউইয়র্ক শহরে গার্মেন্ট ব্যবসায় লেগে পড়ে। আমেরিকায় তারাই জায়োনিস্ট আন্দোলন জনপ্রিয় করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই ইহুদীরা আমেরিকার সংস্কৃতির অংশ হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৫ লাখ আমেরিকান ইহুদী দেশটির হয়ে যুদ্ধে যোগ দানের জন্য নাম লেখায়, যাদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৫০ বছরের মাঝে। লসঅ্যাঞ্জেলেস ও মায়ামি শহরে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। ইহুদীরা স্কুল কলেজগামী হওয়ায় খ্রিস্টানদের সাথে পরিচয় ও বিবাহ শুরু হয়।
চল্লিশের দশকে আমেরিকার জনসংখ্যার ৩.৭% ছিল ইহুদী। করোনা মহামারির আগে, ২০১৯ সালে ইহুদী জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ লক্ষে, যা জাতীয় লোকসংখ্যার ২%। নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, মায়ামি, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো এবং ফিলাডেলফিয়া শহরে ইহুদীর সংখ্যা বেশি। নোবেল পুরস্কার জেতা আমেরিকানদের মাঝে ৩৭% ইহুদী!