অধ্যায়-১৪ – প্রোটনের স্থায়িত্ব
এই অধ্যায়ে আমি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন বিবেচনা করব। প্রশ্নটি হচ্ছে প্রোটন স্থায়ী কি না? প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নটি পদার্থবিদ্যার অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি। মহাবিশ্বের অতি সুদীর্ঘ ভবিষ্যৎ প্রোটনের স্থায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সম্প্রতি অবধি পদার্থবিদগণ ধরে নিয়েছিলেন যে, প্রোটন স্থিতিশীল ছিল অর্থাৎ একটি প্রোটন নিজের মতই চিরকাল স্থায়ী থাকবে। কিন্তু সম্প্রতি মৌলিক কণাসমূহ সম্পর্কে কিছু তত্ত্ব পেশ হয়েছে। এসব তত্ত্ব ইঙ্গিত দেয় যে, প্রোটন অস্থায়ী। কিন্তু এদের জীবনকাল অতি দীর্ঘ। এই অধ্যায়ে আমরা দেখতে চেষ্টা করব কী উপায়ে এই তত্ত্বগুলো উদ্ভূত হয়? আর প্রোটনের ক্ষয়ের ফলে কী পরিণতি দাঁড়ায়? নতুন তত্ত্বগুলো কোথায় উপযুক্ত তা জানার পূর্বে আমাদেরকে মৌলিক কণাসমূহের তত্ত্ব সম্পর্কে কিছুটা জানতে হবে। চতুর্থ অধ্যায়ে মৌলিক কণাদের সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছিল। পাঠককে স্মরণ করানোর জন্য পূর্বোল্লিখিত কিছু বিষয় পুনরাবৃত্তি করতে পারি। বস্তুর চূড়ান্ত প্রকৃতি কী হতে পারে এ নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রাচীন গ্রিকদের বিস্ময়বোধ ছিল। তারা বস্তুর চূড়ান্ত উপাদানসমূহ এবং এদের আচার-আচরণ সম্পর্কে কৌতূহল প্রকাশ করেছিলেন। বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বস্তুর উপাদানসমূহের পরস্পরের ওপর প্রভাব বিস্তার বা মিথস্ক্রিয়া নিয়ে। গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস যিনি ৪৬০ খ্রিস্টপূর্বে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে, সমস্ত বস্তুই পরমাণু দিয়ে গঠিত। এসব পরমাণু অবিনশ্বর, অবিভাজ্য এবং অদৃশ্য। গত শতবর্ষে বিশেষ করে গত তিন চার দশকে এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণের একটি অসাধারণ উদ্যোগ তৈরি হয়েছে। যতটা সম্ভব কিছু মৌলিক উপাদান বিবেচনা সাপেক্ষে প্রকৃতিকে বর্ণনা করতে হয়। মৌলিক উপাদানের সংখ্যার ছাঁটাই প্রক্রিয়া এখনও চলমান। এটি প্রতিভাত হয় যে, কিছু মৌলিক কণা বিবেচনায় এবং এদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়তার শর্তে প্রকৃতিকে বর্ণনা করা যেতে পারে। যেমনটি পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছিল যে, দৈনন্দিন জীবনের সকল বস্তুই ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে গঠিত। এই কণাগুলো বস্তুর পরমাণু তৈরি করে। একটি পরমাণুর কেন্দ্রীণ প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে তৈরি এবং কেন্দ্রীণের চারপাশের কক্ষপথে রয়েছে ইলেকট্রন। সাধারণত পরমাণুর কেন্দ্রীণের ইলেকট্রন ও প্রোটন সংখ্যা একই। ইলেকট্রন ও প্রোটন উভয় কণাদের বৈদ্যুতিক আধান রয়েছে। ইলেকট্রন ঋণাত্মক আধান বিশিষ্ট এবং প্রোটনের ঠিক সম পরিমাণ ধনাত্মক আধান রয়েছে। নিউট্রনের কোনও আধান নেই অর্থাৎ এটি আধান নিরপেক্ষ। সম আধান বিশিষ্ট কণাগুলো পরস্পরকে বিকর্ষণ করে তার বিপরীত আধানযুক্ত কণাগুলো পরস্পরকে আকর্ষণ করে। সুতরাং আধানযুক্ত সকল কণা পরস্পরের ওপর একটি বলপ্রয়োগ করে। এই বলকে তড়িৎ চুম্বকীয় বল বলা হয়। গতিশীল অবস্থায় আধানগুলো পরস্পরের ওপর বিভিন্ন প্রকার বল প্রয়োগ করে। ফলে চুম্বকীয় অংশের সৃষ্টি হয়। এই ধরনের বল এক অর্থে চৌম্বকত্বের অনুরূপ। মূলত সকল চৌম্বকীয় বিষয়, যেমন একটি চৌম্বকীয় লোহার অন্য একটি লোহার জন্য যে আকর্ষণ তৈরি হয় তা আধানসমূহের গতি থেকে সৃষ্টি হয়।
পরমাণুর কেন্দ্রীণ বৈদ্যুতিক আকর্ষণের দরুন ইলেকট্রনকে তার চতুর্দিকের কক্ষপথে রেখে দেয়। সামগ্রিক পরমাণুটি হয় আধান নিরপেক্ষ কারণ এতে সমপরিমাণ ইলেকট্রন ও প্রোটন থাকে। যদি পরমাণু একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে তবে প্রতি ক্ষেত্রে এক একক আধানের সঙ্গে ঋণাত্মক আধানযুক্ত হয় আর যদি একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে তবে এটি ধনাত্মক আধানযুক্ত হয়। এই অবস্থায় পরমাণুটিকে আয়ন বলা হয়।
বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড আবিষ্কার করেছিলেন যে, একটি পরমাণুর কেন্দ্রীণ স্বয়ং পরমাণুটির তুলনায় অতি ক্ষুদ্র এবং এতে ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট প্রোটন কণারা রয়েছে। এই আবিষ্কারের পরপরই প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছিল যে, কেন কেন্দ্রীণের মধ্যে প্রোটন কণাগুলো পরস্পরকে বিকর্ষণ করে না এবং কেন্দ্রীণটির সংহতি নষ্ট হয় না? অবশেষে ১৯৩৫ সালে জাপানের পদার্থবিদ হিদেকি ইউকাওয়া (১৯০৭- ১৯৮১) এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি উত্থাপন করেছিলেন যে, এখানে এক নতুন ধরনের বল রয়েছে। এই বল প্রোটন ও প্রোটনের মধ্যে, প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে এবং নিউট্রন ও নিউট্রনের মধ্যে কাজ করে। এই বলের অস্তিত্ব বহু পরীক্ষায় বহু আগে নিশ্চিত হয়েছে। এই বলকে ‘পারমাণবিক বল’ বা শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ার বল বলা হয়। একে শক্তিশালী বলা হয় কারণ এটি আধানযুক্ত কণাগুলোর মধ্যকার তড়িৎবলের চেয়ে অনেক বেশি প্রবল। কিন্তু এই শক্তিশালী বল কেবল প্রায় ১০^-১৩ সে. মিটারের মত অতি অল্প পরিসরে কাজ করে। এই পরিসর একটি কেন্দ্রীণের আকৃতির সমান। এই সীমার বাহিরে এই পারমাণবিক বল প্রায় শূন্যতে হ্রাস পায়। পক্ষান্তরে আধানযুক্ত কণাগুলোর মধ্যকার তড়িৎবলের পরিসর দীর্ঘ অর্থাৎ দীর্ঘ পরিসরে এটি কাজ করতে পারে। এই বল দূরত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়।
চূড়ান্ত সত্যটি কী ছিল যা মানুষকে উপলব্ধি করিয়েছিল যে, ইউকাওয়া সঠিক ছিল? ঘটনাটি ছিল ইউকাওয়ার পূর্বাভাসিত একটি মৌলিক কণার আবিষ্কার। মৌলিক কণাসমূহের গবেষণা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, এই কণাগুলো পরস্পরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সময়ে এরা এক প্রকার মৌলিক কণা বিনিময় করে। একটি ইলেকট্রন ও একটি প্রোটন একটি আলোক কণা বিনিময়ের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে ক্রিয়া করে। এই আলোক কণা বা তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণকে বলা হয় ‘ফোটন’। পূর্ববর্তী অধ্যায়ে এই ফোটন কণার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৪.১ (a) চিত্রে এই বিনিময় প্রক্রিয়ার একটি সহজ উদাহরণ দেওয়া হল। মূলত সকল আধানযুক্ত কণা ফোটন আদান-প্রদানের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় আবদ্ধ হয়। দেখানো যেতে পারে যে, তড়িৎবল জনিত সকল বিষয়ের উৎপত্তি হয় এই ধরনের আদান-প্রদান থেকে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ফোটনের শক্তি আছে তবে এর ভর শূন্য। ফোটনের ভর শূন্য হওয়ায় তড়িৎবলের পরিসর অসীম। যদিও এই বল দূরত্বের সঙ্গে কমতে থাকে তবে কখনই শূন্য হয় না। সুতরাং ফোটন কণার এই বলের পরিসর অসীম। মূলত তড়িৎ চুম্বকীয় বল দূরত্বের পূরক হিসেবে কমতে থাকে। মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, বলের পরিসর বা মাত্রা সবচেয়ে হালকা কণাটির ভরের ব্যস্তানুপাতিক যে কণা সংশ্লিষ্ট বলের ক্ষেত্রে বিনিময় হচ্ছে। আমরা দেখেছি যে কেন্দ্রীণ বলের পরিসর ১০^-১৩ সেন্টিমিটার। এই বিষয়টি থেকে ইউকাওয়া অনুমান করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, প্রকৃতিতে অবশ্যই এমন একটি কণার অস্তিত্ব আছে যার ভর ইলেকট্রন কণার ভরের চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি। এই কণার বিনিময়ের দরুন দুটি প্রোটন কণার মধ্যে ক্ষুদ্র পরিসরের কেন্দ্রীণ বা পারমাণবিক বলের সৃষ্টি হয় (চিত্র-১৪.১ (b) দেখুন)। ১৯৩৭ সালে মিউয়ন নামে একটি নতুন কণা আবিষ্কৃত হয়েছিল। এই মিউয়ন কণার ভর ইলেকট্রন কণার ভরের ২০৬.৮ গুণ। কিন্তু এই কণাটির বৈশিষ্ট্য ইউকাওয়ার পূর্বাভাসিত কণাটির সঙ্গে মিল নেই। মূলত ইউকাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সালে নিশ্চিত হয়েছিল। ১৯৪৬ সালে তিনটি কণা আবিষ্কৃত হয়েছিল যাদের মধ্যে ইউকাওয়ার প্রত্যাশিত কণার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল।
চিত্র-১৪.১ : এই প্রতীকী চিত্রে দেখানো হল যে, কণা আদান-প্রদানের মাধ্যমে কীভাবে বলসমূহ মধ্যস্থিত হয়। দৃশ্য (a) তে একটি ইলেকট্রন (e) এবং একটি প্রোটনের মিথস্ক্রিয়ায় ফোটন (γ) বিনিময় হয়। (b) তে একটি নিউট্রন মেসন (π ̄) ত্যাগ করে প্রোটনে পরিণত হয় আর এই মেসন (π ̄) কে অন্য একটি প্রোটন শোষণ করে নেয় এবং পরবর্তীকালে এটি নিউট্রনে পরিণত হয়। দৃশ্য (c) তে একটি মধ্যস্থিত ভেক্টর মেসন w ̄ নিঃসরণের মাধ্যমে নিউট্রনের বিটা ভাঙন ঘটে। আবার এই ভেক্টর মেসন w ̄ ভেঙে গিয়ে একটি ইলেকট্রন এবং একটি ইলেকট্রন এন্টিনিউট্রিনোতে পরিণত হয়।
এই কণাগুলো ছিল নিরপেক্ষ পাইয়ন π0 (পূর্বে ব্যবহৃত সম্পূর্ণ আলাদা) এদের ভর ২৬৪.১ ইলেকট্রন ভরের সমান। ধনাত্মক আধান বিশিষ্ট পাইয়ন (π+) এর ভর ২৭৩.১ ইলেকট্রন ভরের সমান এবং ঋণাত্মক আধানযুক্ত পাইয়ন (π ̄) এর ভরও একই। এই আবিষ্কার ইউকাওয়ার যুক্তির সত্যতা নিশ্চিত হয়েছিল আর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নতুন এক ধরনের বলের অস্তিত্ব। যার নাম হয় ‘পারমাণবিক বল’।
এই বল প্রোটন কণাদের স্থির তড়িৎ বিকর্ষণ অতিক্রম করে কেন্দ্রীণের মধ্যে প্রোটন ও নিউট্রনকে একত্রে আষ্টেপৃষ্ঠে রাখে। আমরা এ পর্যন্ত দুটি বলের মুখোমুখি হয়েছি। যেমন—তড়িৎবল ও পারমাণবিক (কেন্দ্রীণ) বল বা শক্তিশালী বল। এই বলগুলো ছাড়াও অন্য আরেকটি বল রয়েছে। এই বলটিও মৌলিক কণাদের মধ্যে কাজ করে। এই বলটি হল তথাকথিত দুর্বল বল বা দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার বল। এই বলকে দুর্বল বলার কারণ এই বল তড়িৎবল বা শক্তিশালী বলের চেয়ে অধিকতর দুর্বল। এই বলের পরিসর শক্তিশালী বলের পরিসরের চেয়ে অনেক কম। এই দুর্বল বলের পরিসর প্রায় ১০^-১৫ সেন্টিমিটার। একটি দুর্বল বলের উদাহরণ হচ্ছে নিউট্রনের বিটা ভাঙন যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছিল। স্মরণ করা যাক, একটি মুক্ত নিউট্রনের কথা যে নিউট্রনটি কেন্দ্রীণ থেকে মুক্ত। এই নিউট্রনটি অল্প কয়েক মিনিটে ভেঙে গিয়ে একটি প্রোটন, ইলেকট্রন এবং একটি ইলেকট্রন এন্টিনিউট্রিনো হয়ে যায়। আমরা যদি নিউট্রনকে ‘n’ দ্বারা, প্রোটনকে ‘p’ দ্বারা, ইলেকট্রনকে ‘e’ দ্বারা এবং ইলেকট্রন-এন্টিনিউট্রিনোকে νe দ্বারা সূচিত করি তবে নিউট্রনের ভিটা ভাঙনকে নিম্নরূপে লেখা যেতে পারে –
এখানে e ̄ (ই মাইনাস) দ্বারা ঋণাত্মক আধানকে বোঝায় এবং e+ আবার ধনাত্মক আধানযুক্ত পজিট্রনকে (ইলেকট্রনের প্রতি কণা) বোঝায়। νe এর উপর খিল বা দণ্ডটি (̄) চিহ্নিত করে যে এটি একটি প্রতিকণা বা বিপরীত কণা। ‘ν’ একটি গ্রিক বর্ণ ‘নিউ (nu)’।
হয়ত প্রতীয়মান হয় না যে, নিউট্রনের বিটা ভাঙনটি একটি বলের দরুন ঘটে, কিন্তু বাস্তবে এটিই ঘটে। নিচের প্রক্রিয়াটিকে উপরেরটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে বিবেচনা করলে বলের প্রভাবটি দেখা যায়।
এখানে একটি ইলেকট্রন ও প্রোটনের মিথস্ক্রিয়ায় একটি নিউট্রন এবং একটি ইলেকট্রন নিউট্রিনো সৃষ্টি হয়। একটি দুর্বল বলের দরুন এই প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হয় এবং বিটা ভাঙন ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, এই ধরনের প্রক্রিযা সূর্যের কেন্দ্রে অনবরত ঘটে চলেছে।
গত দুই তিন দশকে অনেক মৌলিক কণার বিশাল একটি তালিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৪.১ নম্বর সারণিতে অধিক পরিচিত কয়েকটিকে দেখানো হল। টাউ লেপ্টন (tau-lapton) এই সারণিতে দেখানো হয়নি। কেবল যে সব কণার জীবনকাল ১০^-১৭ সেকেন্ডের চেয়ে বেশি এ কণাদেরকেই এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হল। লেপ্টনগুলো কেবল দুর্বল এবং তড়িৎ চুম্বকীয় মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেয়; কিন্তু শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। এই সারণির মেসনগুলো প্রোটনদের চেয়ে অধিকতর হালকা। এরা শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় বিনিময় হয়। এদের সবার স্পিন সংখ্যা শূন্য এবং এরা বোসন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
সারণি-১৪.১। এই সারণিতে অধিক পরিচিত কণাগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হল। কণা এবং এদের প্রতি কণাদের ভর একই, জীবনকালও একই, কিন্তু আধান ভিন্ন। তাই এদেরকে একই সারিতে রাখা হল। ‘খিল বা দণ্ড’ প্রতীকটি দ্বারা প্রতি কণা নির্দেশ করা হয়। সুতরাং νμ একটি মিউয়ন প্রতিনিউট্রিনো। লেপ্টন কণাগুলো দুর্বল মিথষ্ক্রিয়ায় অংশ নেয়। এরা শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। সকল হ্যাড্রন (ħadrons) শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। তারা মেসন এবং বেরিয়ন দ্বারা গঠিত। সকল মেসন আবার বোসনের অন্তর্ভুক্ত এবং বেরিয়নগুলো হচ্ছে ফার্মিয়ন। সকল হ্যাড্রন আবার দুর্বল মিথস্ক্রিয়ায়ও অংশ নেয়। প্রোটন ও নিউট্রন ছাড়া অন্যান্য বেরিয়ন কণাগুলোকে আবার হাইপারন বলা হয়।
সারণি : ১৪.২ : এই সারণি একটি নিউট্রনের বিটা ভাঙনের পূর্বের এবং পরের আধান, বেরিয়ন সংখ্যা ও লেপ্টন সংখ্যা নির্দেশ করছে।
ব্যারিয়নগুলোর স্পিন অর্ধ বিজোড়পূর্ণ সংখ্যা। এরা ফার্মিয়ন এবং এরা শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। হ্যাড্রন কণাগুলো শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেয়। হ্যাড্রনগুলো দুই শ্রেণিতে বিভক্ত–মেসন ও ব্যারিয়ন। নিউট্রন ও প্রোটন ছাড়া সকল ব্যারিয়নকে আবার হাইপারন বলা হয়। যে কোনও প্রক্রিয়ায় কণার ব্যারিয়ন সংখ্যা ও লেপ্টন সংখ্যা সংরক্ষিত থাকে। ১৪.২ নম্বর সারণিতে এর একটি উদাহরণ দেখানো হল। এই সারণিতে বিটা ভাঙন প্রক্রিয়া শেষে লেপ্টন সংখ্যা ও ব্যারিয়ন সংখ্যার সংরক্ষণ দেখানো হল। একটি প্রতিকণার লেপ্টন ও ব্যারিয়ন সংখ্যা তার সংশ্লিষ্ট কণার বিপরীত অর্থাৎ ঋণাত্মক হয়। উদাহরণস্বরূপ প্রোটনের ব্যারিয়ন সংখ্যা ১ যেখানে তার প্রতি প্রোটনের ব্যারিয়ন সংখ্যা-১।
আমরা তিন ধরনের বলের মুখোমুখি হয়েছি যাদের প্রভাবে মৌলিক কণাগুলো পরস্পরের ওপর ক্রিয়া করে। এই বলগুলো হচ্ছে তড়িৎ চুম্বকীয় বল, শক্তিশালী বল বা কেন্দ্রীণ বল এবং দুর্বল বল। এসব বল ছাড়াও প্রকৃতিতে চতুর্থ আরেকটি বল রয়েছে যার দ্বারা কণাগুলো পরস্পরের ওপর ক্রিয়া করে। এই বলটি হচ্ছে আমাদের পরিচিত মহাকর্ষীয় বল। এই বল আমাদেরকে পৃথিবীর সঙ্গে আবদ্ধ রাখে। এই বলের প্রভাবেই পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। কিন্তু এই মহাকর্ষীয় বল আণুবীক্ষণিক কাঠামোতে প্রায় কোনও ভূমিকা রাখে না এবং সাধারণ বস্তুর প্রক্রিয়াতেও একই অবস্থা। কারণ এই বল অত্যন্ত দুর্বল। মূলত প্রোটন এবং প্রোটনের মধ্যে এই বল তড়িৎ চুম্বকীয় বলের তুলনায় ১০^-36 গুণ দুর্বল। কিন্তু মহাকর্ষীয় বলের পরিসর দীর্ঘ। দুর্বল বা শক্তিশালী বলের মত না। মহাকর্ষীয় বলের আকর্ষণ সর্বদাই বলবত। তাই এ বল সকল জ্যোতির্মণ্ডলীয় প্রক্রিয়াকে একত্রিত করে এবং এসব প্রক্রিয়ায় প্রভুত্ব করে। পদার্থবিদগণ এখনও পর্যন্ত প্রকৃতিতে এই চার ধরনের বলের সন্ধান পেয়েছেন।
সারণি ১৪.৩ : প্রকৃতিতে এখনও পর্যন্ত চার ধরনের বল শনাক্ত হয়েছে। এদের কিছু বৈশিষ্ট্য এই সারণিতে দেখানো হয়েছে। ‘কণা বিনিময়ের’ মাধ্যমে মৌলিক কণাদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বল মধ্যস্থতা করে। মহাকর্ষীয় বল মধ্যস্থতা করে প্রকল্পিত কণা ‘গ্র্যাভিটন’ বিনিময়ের মাধ্যমে।
পদার্থবিদগণ এখনও পর্যন্ত প্রকৃতিতে এই চার ধরনের বলের সন্ধান পেয়েছেন। ১৪.৩ নম্বর সারণিতে আমরা এই বলগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।
লক্ষ করুন যে, ফোটন, নিউট্রিনো, ইলেকট্রন ও প্রোটন কণাগুলো ছাড়া সকল কণাই অস্থায়ী। অন্য অস্থায়ী কণাগুলো হয় দুর্বল মিথস্ক্রিয়ায় বা তড়িৎ চুম্বকীয় মিথস্ক্রিয়ায় ভেঙে গিয়ে অতি হালকা কণায় পরিণত হয়। সুতরাং নিউট্রন আলাদা অবস্থায় ভেঙে গিয়ে প্রোটন, ইলেকট্রন এবং ইলেকট্রন এন্টিনিউট্রিনো এসব স্থায়ী কণায় পরিণত হয়। প্রোটন কণা স্থায়ী। প্রোটন ভেঙে গিয়ে আরও হালকা বা ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয় না। কারণ প্রোটন সবচেয়ে হালকা ব্যারিয়ন। প্রোটনের ব্যারিয়ন সংখ্যা সংরক্ষিত থাকে। একটি কণা অবশ্যই ভেঙে গিয়ে ভারী কণায় পরিণত হতে পারে না, কারণ তখন ভর-শক্তি সংরক্ষিত থাকতে পারে না। ভর এবং শক্তি আন্তঃপরিবর্তনীয়। ঠিক একইভাবে ইলেকট্রন ও স্থায়ী। কারণ এটি সবচেয়ে হালকা আধানবিশিষ্ট কণা এবং এর আধান সংরক্ষিত থাকে।
১৪.১ নম্বর সারণিতে তালিকাভুক্ত কণাগুলো ছাড়াও আরও অনেক কণা রয়েছে যেগুলো শক্তিশালী বলের সম্মুখে অস্থায়ী। অর্থাৎ এরা ১০ সেকেন্ড অণুক্রমিক সময়ের পরিসরে ভেঙে যায়। দীর্ঘায়ুপ্রাপ্ত কণাদের মত ফটোগ্রাফিক ফলকে এসব কণার কোনও চিহ্ন পড়ে না। কারণ এদের জীবনকালের ব্যাপ্তি খুবই কম। কিন্তু অন্যান্য কণার মিথস্ক্রিয়া থেকে এদের অস্তিত্ব অনুমান করা যেতে পারে। যেসব : কণা ১০^-২৩ সেকেন্ড বা এরকম সময়ই স্থায়ী হয় তাদেরকে প্রায়শ ‘রেজোন্যান্স বা অনুনাদ’ বলা হয়।
যে মৌলিক তত্ত্ব মৌলিক কণাদের এবং এদের মিথস্ক্রিয়ার বর্ণনা করে তাকে বলা হয় ‘কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব’। এই তত্ত্বটির কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও আপেক্ষিকতার একটি সমন্বয়। এই তত্ত্বটির অনেক সফলতা থাকলেও কিছু মৌলিক জটিলতাও রয়েছে। আমেরিকার দুই পদার্থবিদ আর. পি. ফাইনম্যান এবং জুলিয়ান শুইঙার এবং জাপানের পদার্থবিদ এস. তোমোনাগা আলাদাভাবে বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে তড়িৎ চুম্বকীয় মিথস্ক্রিয়ায় এই তত্ত্বটি প্রয়োগ করেছিলেন। ১৯৩০ সালের দিকে এস. ভেইনবার্গ এবং অন্যান্যও এই বিষয়টি বিবেচনা করেছিলেন। ডাইসন দেখিয়েছিলেন যে ফাইনম্যান, শুইঙার এবং তোমোনাগা এদের তত্ত্ব সমতুল্য ছিল। এই তত্ত্বগুলো কোয়ান্টাম তড়িৎবিদ্যা নামে পরিচিত। যখন অনেকেই আধানযুক্ত কণাসমূহের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়তার হার হিসাব করতে চেষ্টা করেন, তারা একটি ক্ষুদ্র সংখ্যার পরিবর্তে একটি অসীম ফলাফল পেলেন। পরবর্তীকালে গাণিতিক পদ্ধতি অগ্রগতি লাভ করেছিল। এই উন্নতি সাধনে ডাইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই গাণিতিক পদ্ধতি ‘পুনরাদর্শিকরণ বা রিনরম্যালাইজেশন’ নামে পরিচিত যা দ্বারা হিসেবে অসীমত্বের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল। পাওয়া গিয়েছিল সসীম বোধগম্য একটি সংখ্যা। যদিও এই পদ্ধতিটি সন্তুষ্টিজনক ছিল না তবু এটি পরীক্ষণের সঙ্গে একটি চমৎকার সমঝোতা সৃষ্টি করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, ইলেকট্রনের চৌম্বক সন্ধিক্ষণ বা চৌম্বক মুহূর্ত নামক বৈশিষ্ট্যটি ধরে নেওয়া যাক। মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, এই চৌম্বক মুহূর্তটি সৃষ্টি হয় ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের দরুন। ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের জন্য এটিকে প্রবাহিত বিদ্যুতের একটি ক্ষুদ্র বিট হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আর সমস্ত প্রবাহিত বিদ্যুৎ একটি তড়িৎক্ষেত্র সৃষ্টি করে। ইলেকট্রন দ্বারা সৃষ্ট চুম্বকত্ব এর চৌম্বক মুহূর্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কোয়ান্টাম তড়িৎবিদ্যা উপযুক্ত এককে ইলেকট্রনের তড়িৎ মুহূর্তের যে মান বের করে তা হচ্ছে ১.০০১৫৯৬৫৫৩ যেখানে পর্যবেক্ষণকৃত মান হচ্ছে ১.০০১১৫৯৬৫৭৭। এই মানগুলো একটি উল্লেখযোগ্য সমঝোতায় রয়েছে।
এস. গ্লাশোর পূর্বের কিছু কাজকে অনুসরণ করে ১৯৬৭ সালে স্টিভেন ভেইনবার্গ তড়িৎ চুম্বকীয় বল এবং দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার বলসমূহের একটি সমন্বিত তত্ত্ব প্রণয়ন করেন। ১৯৬৮ সালে স্বতন্ত্রভাবে আবদুস সালাম এই তত্ত্বটি প্রণয়ন করেন। এই সমন্বিত তত্ত্বটি ‘গেজ তত্ত্ব’ হিসেবে পরিচিত এক ধরনের কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বের অন্তর্গত। ১৯৫৪ সালে আর. ডব্লিউ মিলস্ এবং সি. এন ইয়াং এই গেজ তত্ত্বের একটি উদাহরণ প্রণয়ন করেছিলেন। পিটার হিগস, জি. টি হুট এবং টি.ডব্লিউ কিববল গ্ল্যাশো-সালাম-ভেইনবার্গ তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো সরবরাহ করেছিলেন।
আধানযুক্ত কণাগুলোর মধ্যে তড়িৎ চুম্বকীয় বল মধ্যস্থিত হয় ফোটন কণা বিনিময়ের মাধ্যমে। ফোটনের স্পিন হয় ১ħ। সমন্বিত গ্ল্যাশো-সালাম-ভেইনবার্গ তত্ত্বে w+, w-, z0 এই তিন কণা দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার মধ্যস্ততা করে। এই কণাগুলো ħ ঘূর্ণন লাভ করে। w’ কণাটির এক একক ধনাত্মক আধান রয়েছে, w এর এক একক ঋণাত্মক আধান এবং z° কণাটি আধান নিরপেক্ষ। এই কণাগুলো ‘মধ্যবর্তী ভেক্টর বোসন’ হিসেবে পরিচিত। এদের ঘূর্ণ পূর্ণ সাংখ্যিক তাই এরা বোসন। আর এখানে ভেক্টর শব্দটি ħ এর এক একক ইউনিট স্পিনকে বোঝায়। w+ এবং w- কণা দুটির অনুমান করা হয়েছিল z° আবিষ্কারের দুই দশক পূৰ্বে। সালাম এবং ভেইনবার্গ কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব বা কোয়ান্টাম তড়িৎবিদ্যাকে ‘রিনরম্যালাইজ’ করার সময়। এই পুনরাদর্শিকরণ বা রিনরম্যালাইজেশন’ এর মাধ্যমে অসীম সংখ্যার পরিবর্তে একটি বোধগম্য সসীম ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। z° কণার আবিষ্কার কিছু সংখ্যক কণার মধ্যে নতুন দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার প্রক্রিয়াকে সূচিত করে। এই প্রক্রিয়াগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। স্বয়ং w+, w- ও z0 এই তিনটি কণাকে এতদূর পর্যবেক্ষণ করা যায়নি। কারণ অল্প পরিসরের দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার দরুন এরা খুব ভারী মনে হয়। w (w+, w-) কণাগুলো অবশ্যই কমপক্ষে প্রায় ৪০টি প্রোটনের সমান ভারী আর z° কণাটি অবশ্যই প্রায় ৮০টি প্রোটনের সমান ভারী। এই কণাগুলোকে উৎপন্ন করতে বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৪.১ নম্বর চিত্রের দৃশ্য c-তে দেখানো হয়েছিল কীভাবে মধ্যবর্তী w- কণার মাধ্যমে নিউট্রনের বিটা ভাঙন প্রভাবিত হয়। এরকম একটি ভারী কণা w- সৃষ্টিতে কীভাবে নিউট্রন শক্তি লাভ করে? ১৪.১ এর (c) তে দেখানো প্রক্রিয়ায় w- কণাটি অবাস্তব। কারণ এটি খুব অল্প সময়ের জন্য অস্তিত্বমান থাকে। এই কণা তার এই অস্তিত্বের জন্য অনিশ্চয়তার নীতি থেকে শক্তি ধার করে। এ শক্তি ভরের সমমান।
সুতরাং তড়িৎ চুম্বকীয় মিথস্ক্রিয়ার এবং দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার বলগুলোর একটি সন্তুষ্টিজনক সমন্বিত তত্ত্ব পাওয়া গেছে। কিন্তু শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ার জন্য যদিও গত কয়েক বছরে একটি সম্ভাব্য তত্ত্ব হাজির হয়েছে, তবে এখনও পর্যন্ত কোনও সন্তুষ্টিজনক তত্ত্ব নেই। এই সম্ভাব্য তত্ত্বটিতে বলা হয় ‘কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক’ তত্ত্ব। অধিক বুনিয়াদি সত্তা ‘কোয়ার্ক’ দ্বারা সকল হ্যাড্রন (ব্যারিয়ন এবং মেসন) সৃষ্টি এই অনুমানটিই হচ্ছে এই তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রথমে কোয়ার্কদের উপস্থাপন করেন এম. জেল ম্যান এবং স্বতন্ত্রভাবে পরে কারণ জর্জ উইগ। এখনও পর্যন্ত পাঁচ ধরনের কোয়ার্ক রয়েছে (১৯৯৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত। কারণ ‘টপ’ নামের যে কোয়ার্কটির ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল এটিও সম্প্রতি ১৯৯৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়নে অবস্থিত ফ্যার্মিল্যাবে আবিষ্কৃত হয়)। কোয়ার্কের ছয়টি ফ্লেভার রয়েছে ‘আপ’, ‘ডাউন’, ‘স্ট্রেঞ্জ’, ‘চামড’ বটম ও ‘টপ’। এই ৬ প্রকারের কোয়ার্কদের যথাক্রমে u, d, s, c, b এবং t দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। বটম (b) কোয়ার্ককে কখনও কখনও বিউটি কোয়ার্ক বলা হয়। আর টপ (t) কোয়ার্ককে ট্রুথ কোয়ার্কও বলা হয়। কোয়ার্কদের তড়িৎ আধান, ভর, রং এবং ঘূর্ণনসহ বিভিন্ন অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রত্যেক কোয়ার্ক তিনটি কালারের হতে পারে বলে মনে করা হয়। এদের রং বা কালার দৃশ্যমান রংকে নির্দেশ করে না। এই ‘রং’ একটি রূপক ধারণা।
কোয়ার্কের আধান ভগ্নাংশ অর্থাৎ পূর্ণ সাংখ্যিক গুণিতক নয়। আপ (u) কোয়ার্কের আধান প্রোটন আধানের ২/৩, অংশ এবং ডাউন (d) কোয়ার্কের আধান
১/৩ অংশের সমান।
স্বতন্ত্রভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে এখনও পর্যন্ত কোনও কোয়ার্ক পর্যবেক্ষণ হয়নি। কিন্তু জোরালো ইঙ্গিত রয়েছে যে, ব্যারিয়ন ও মেসন কণাগুলো এমন আচরণ করে যেন মনে হয় তারা কোয়ার্ক ও প্রতি কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত। উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক কোয়ার্কেরই আবার প্রতি কোয়ার্ক রয়েছে। ‘গ্লূওন’ নামক অন্য একটি কণার বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যারিওন ও মেসন কণার মধ্যে কোয়ার্কগুলো পরস্পরের সঙ্গে ক্রিয়া করে। ‘গ্লূওন’ তাদের বর্ণ মিশ্রণের ওপর ভিত্তি করে ৮ প্রকারের হয়ে থাকে। প্রত্যেক গুওনের আবার প্রতি গুওন রয়েছে। প্রোটনের +১ একক আধানের ক্ষেত্রে কোয়ার্কদের সংমিশ্রণ ও তাদের চার্জ দাঁড়ায় uud = (২/৩) + (২/৩) + (- ১/৩) অর্থাৎ প্রোটন +১ চার্জপ্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে নিউট্রনের চার্জ বা আধান শূন্য। সুতরাং এতে কোয়ার্ক সংমিশ্রণ uud যেগুলো নিউট্রনকে (২/৩) + (- ১/৩) + (- ১/৩) বা শূন্য ইউনিট চার্জ প্রদান করে। পাইয়ন π+ কণা একটি আপ (u) কোয়ার্ক ও একটি ডাউন প্রতি কোয়ার্ক (d) দিয়ে গঠিত। ‘কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্স’-এ ক্রোমো (chromo) শব্দটি কোয়ার্ক এবং গুওনের কালার বা বর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে নির্দেশ করে। এটি একটি জটিল ধারণা যাতে প্রবেশ করতে আমি প্রস্তাব করি না।
গ্লাশো-সালাম-ভেইনবার্গ তত্ত্বটি তড়িৎ চুম্বকীয় এবং দুর্বল মিথস্ক্রিয়াগুলোকে সমন্বিত করে। এই বিষয়টি নিম্নোক্ত উপায়ে লক্ষ করা যায়।
সারণি-১৪.৪ : আদর্শ সমন্বিত তত্ত্বে লেপ্টনদের এবং কোয়ার্কদের মধ্যে একটি মিল দেখানো হয়েছে। কোয়ার্কগুলো তিনটি জেনারেশনে বা প্রজন্মে বিভক্ত। লেপ্টনগুলোও কোয়ার্কের মত তিনটি জেনারেশনে বিভক্ত। উভয়েই ফার্মিয়ান শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। লেপ্টন ও কোয়ার্কদের এই সম্পর্ক এই সারণিতে দেখানো হয়েছে। এখানে ‘τ’ দ্বারা টাউ-লেপ্টনকে বোঝায় এবং ‘ντ’ দ্বারা বোঝানো হয় টাউ নিউট্রিনোকে।
উচ্চ শক্তিসমূহে মধ্যবর্তী ভেক্টর বোসনগুলো ১ħ স্পিন বিশিষ্ট শূন্য ভরের কণার মত আচরণ করে অর্থাৎ ফোটনের মত। সুতরাং উচ্চ শক্তিসমূহে দুর্বল মিথস্ক্রিয়াগুলো তড়িৎ চুম্বকীয় মিথস্ক্রিয়াদের মত আচরণ করে। সম্প্রতি তড়িৎ চুম্বকীয় বল, দুর্বল বল এবং শক্তিশালী বল এই তিনটি বলকে সমন্বিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আদর্শ/পরম সমন্বিত তত্ত্বগুলোর একটি গঠনে লেপ্টনদের এবং কোয়ার্কদের মধ্যে একটি সম্পর্ক দেখানো হয়েছে যা ১৪.৪ নম্বর সারণিতে দেখানো হল। সুতরাং ইলেকট্রন (e-) এবং ইলেকট্রন নিউট্রিনোর (νe) যথাক্রমে আপ (u) কোয়ার্ক এবং ডাউন (d) কোয়ার্কের সঙ্গে মিল রয়েছে। খুব উচ্চশক্তিতে লেপ্টনরা এবং কোয়ার্করা একই রকম আচরণ করে। এদিকে কোয়ার্ক লেপ্টনে রূপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু সাধারণ পর্যায়কাল ব্যাপী সাধারণ শক্তিতে এরকমটি কখনই ঘটে না। তার মানে দাঁড়ালো এই যে, এ যাবৎ পর্যন্ত যে প্রোটনকে পুরোপুরিভাবে স্থায়ী ধরে নেওয়া হয়েছে সেই প্রোটন ভেঙে গিয়ে লেপ্টনে পরিণত হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে দীর্ঘ জীবনকাল অতিবাহিত করবে প্রোটন। এই পরম সমন্বিত তত্ত্বগুলোর একটিতে প্রাথমিকভাবে এইচ. জর্জি এবং এস. এল গ্ল্যাশো পেশ করেছিলেন যে, প্রোটনের জীবনকাল প্রায় ১০^৩১ বছর। তার মানে এই নয় যে, এই তত্ত্বের সত্যতা খুঁজে বের করতে ১০১ বছর অপেক্ষা করতে হবে। স্মরণ করা যাক ‘বিগ ব্যাং’-এর পর থেকে মহাবিশ্বের বয়স ১০১০ বছর। ১০^৩১ সময়টি হচ্ছে প্রোটনের গড় জীবনকাল। সুতরাং এর মানে দাঁড়ায় এই যে, বছরে একবার একটি ধ্বংস হওয়া উচিত। এক হাজার (১০০০) টন বস্তুতে প্রায় ৫×১০^৩২ টি প্রোটন ও নিউট্রন রয়েছে। সুতরাং আনুমানিক তাদের পঞ্চাশটি প্রতি বছর ধ্বংস হতে পারে। বলে রাখা উচিত যদি প্রোটন ধ্বংস হয় তবে নিউট্রনের ধ্বংসও স্বাভাবিক।
এই সময়সীমার ওপর অনেকেই পরীক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ঢাকোটায় স্বর্ণখনিতে এবং দক্ষিণ ভারতে ব্যাঙ্গালুর থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ভূ-পৃষ্ঠের ২৩০০ মিটার নিচে কোলার স্বর্ণখনিতে ছোটোখাটো পরীক্ষণ প্রক্রিয়াধীন আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ডের কাছে একটি লবণ খনিতে বড়ো ধরনের পরীক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইউটায় রুপার খনিতে এবং মিনেসোটায় লোহার খনিতে বড়ো ধরনের পরীক্ষণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই পরীক্ষণগুলো ভূ-পৃষ্ঠের গভীর নিচে করতে হয় পদার্থের মধ্যে মহাজাগতিক রশ্মির বিকিরণ কমিয়ে আনতে। মহাজাগতিক রশ্মিগুলো হচ্ছে উচ্চ শক্তি বিশিষ্ট কণা যাদের দ্বারা পৃথিবীর বাইর দিক থেকে অবিরত গোলা নিক্ষিপ্ত হয়। প্রোটন ধ্বংসের জন্য মহাজাগতিক রশ্মির অঘটন ঘটতে পারে বলে গভীর নিচে রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে পদার্থকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রোটনের স্থায়িত্বের বর্তমান পরীক্ষামূলক সীমা অর্থাৎ প্রোটনের জীবনকাল কমপক্ষে প্রায় ১০^২৯ বছর। সুতরাং, প্রোটনের বয়স যদি প্রকৃতপক্ষে ১০^৩১ থেকে ১০^৩৩ বছর বা এরকমই হয় তবে আগামী কয়েক দশকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ হয়ে যাবে। সুতরাং পরম একীভূত তত্ত্বগুলোও সঠিক কি-না তা নির্ধারণ হয়ে যাবে।
মহাকর্ষীয় তত্ত্ব ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, প্রায় ১০^৪৫ থেকে ১০^৫০ বছর সময়সীমায় প্রোটন ভেঙে গিয়ে লেপ্টনে পরিণত হওয়া উচিত। এমনকি যদি পরম একীভূত তত্ত্বগুলো ভুলও হয়। এই বিষয়টি নিম্নরূপ : একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোলের ভর, কৌণিক ভরবেগ এবং আধান এই তিনটি বৈশিষ্ট্য বা প্যারামিটার দিয়ে ব্ল্যাকহোলটিকে পুরোপুরিভাবে বর্ণনা করা হয়। ব্ল্যাকহোলের কোনও স্মৃতি নেই। তার ভিতরে যে বস্তুটি প্রবেশ করেছিল সেটি কী ব্যারিয়ন বা প্রতি-ব্যারিয়ন কণাদের দিয়ে তৈরি ছিল অথবা কী লেপ্টন বা প্রতিলেপ্টন কণাগুলো দিয়ে তৈরি ছিল? সেগুলো আর সংরক্ষিত নেই। এবার কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বলে যে, শূন্যস্থান অবাস্তব যুগ্ম কণা-প্রতিকণাদের দিয়ে পূর্ণ রয়েছে। তাই মহাকর্ষীয় কোয়ান্টাম তত্ত্ব ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, শূন্যস্থানে অবাস্তব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্ল্যাকহোলসহ বিভিন্ন আকৃতির অবাস্তব ব্ল্যাকহোল রয়েছে। এই অবাস্তব ছোটো ব্ল্যাকহোলগুলোর কোনও একটি প্রোটনকে ভক্ষণ করতে পারে, যদি প্রোটনটি বিচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘসময়ে নিজের মধ্যেই অবস্থান করে। ব্ল্যাকহোলটির দরুন একটি প্রোটন ভেঙে গিয়ে পজিট্রনে পরিণত হতে পারে। এই বিষয়টি প্রোটনের ব্যারিয়ন সংখ্যা গ্রাহ্য করে না। যেহেতু আধান হচ্ছে ব্ল্যাকহোলের স্থিতিমাপক বা বৈশিষ্ট্যের একটি, তাই এটি প্রোটনের আধানকে অদৃশ্য করতে পারে না। ফলে আমরা একটি পজিট্রন পাই এবং সম্ভবত কিছু ফোটনও। হকিংয়ের হিসাব অনুযায়ী অনেক দীর্ঘ সময়কাল শেষে এই ধ্বংস ঘটতে পারে। এই সময়সীমা হচ্ছে গড়পড়তায় ১০^৪৫ থেকে ১০^৫০ বছর। সুতরাং মহাকর্ষীয় কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসারে প্রোটন অবশেষে ধ্বংস হবে, এমনকি পরম একীভূত তত্ত্বগুলো সঠিক না হলেও।
মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে প্রোটনের স্থায়িত্বের ওপর। মহাবিশ্বের সুদীর্ঘ ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে প্রোটনের অস্থায়িতার প্রগাঢ় পরিণতি রয়েছে। প্রোটন অস্থায়ী হলে বদলে যাবে মহাবিশ্বের নিয়তি। প্রোটনের জীবনকাল অনুসারে সকল সাধারণ বস্তুর গঠন একটা জীবনকালসহ হবে অস্থায়ী। হীরার ঘনক আকৃতিটি বৃত্তাকার হওয়ার পূর্বে বা লৌহ গোলকে পরিণত হওয়ার বহু পূর্বে ভেঙে গিয়ে ইলেকট্রন ও পজিট্রনে পরিণত হবে। এবার সাধারণত একটি ইলেকট্রন এবং পজিট্রন বিনষ্ট হয় এবং ফোটন ও খাঁটি বিকিরণ উৎপন্ন করে। পদার্থের ক্ষয় থেকে উৎপাদিত সকল ইলেকট্রন ও পজিট্রন বিনষ্ট হয়ে কী খাঁটি বিকিরণের মহাবিশ্ব সৃষ্টি করবে? মহাবিশ্ব প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে কী এদের ঘনত্ব কমে যাবে? এম. আর ম্যাকি এবং ডি.এন. পেজ মনে করেন এমনটি হবে না। তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইলেকট্রন এবং পজিট্রনদের একটি যথেষ্ট অনুপাত কখনই ধ্বংস হবে না। এমনকি অন্ততপক্ষে একটি চিরপ্রসারণশীল মহাবিশ্বে যাতে ইউক্লেডের জ্যামিতি চরিতার্থ এতে এরা কখনই ধ্বংস হবে না। তাঁরা এও বলেন যে, এই ধরনের মহাবিশ্বে বিকিরণ ঘনত্ব বস্তুর ঘনত্বকে অর্থাৎ ইলেকট্রন ও পজিট্রনের ঘনত্বকে অতিশয় ছাড়িয়ে যাবে না। আর গ্যালাটিক (ছায়াপথীয়) ব্ল্যাকহোলগুলো ১০^১০০ বছর বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত টিকে থাকবে। এক্ষেত্রে যেসব ব্যারিয়ন ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টিতে প্রবেশ করেছিল তারা তাদের পরিচয় হারিয়ে ফেলে।
অতি দূর ভবিষ্যতে প্রাণীদের ভাগ্যে কী ঘটবে? সব ধরনের প্রাণীর জন্য প্রোটন ও নিউট্রন অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। তারা প্রোটনের বিনাশ কীরূপে টেকাবে? তবে কী কল্পনা করা যায় যে, বুদ্ধিমান প্রাণীরা প্রোটনের বিনাশ প্রতিরোধের উপায় উদ্ভাবন করতে পারবে সত্যিকারই যদি প্রোটন অস্থায়ী হয়? যদি তা সম্ভব না হয়, বুদ্ধিমান প্রাণীরা তখন অবশেষে জীবনকে বিনির্মাণ করবে ইলেকট্রন ও পজিট্রনদের মাঝে। কিন্তু অপরিহার্যভাবে কিছুই প্রকৃতির নিয়ম বহির্ভূত নয়। যেমনটি ডাইনসন বলেন যে, প্রোটন ধ্বংসের পরও যদি মানুষের টিকে থাকা সম্ভব হয় তবে আমাদের উত্তরাধিকারীদের চূড়ান্ত অবস্থা হবে জে. ডি. বার্নালের ‘The World, the Flesħ and Devil’-বইটিতে বর্ণিত অবস্থার মতই : ভাবতে পারেন মানুষেরা এক সময় পারমাণবিক জগতের বাসিন্দা হবে। বিভক্ত হবে ছোট্ট ছোট্ট মনোগত দলে। বিশাল এলাকা ও সময়-কাল জুড়ে বিস্তার করবে নিজেদেরকে। দলগুলো পরস্পর থেকে অতি দূরে অবস্থান করবে। এক্ষেত্রে তারা নিশ্চল ইন্দ্রিয় অঙ্গ ব্যবহার করবে। প্রতিটি দল তাদের কার্যকলাপে ন্যূনতম শক্তি প্রয়োগ করবে। দলগুলো অশরীরী আন্তঃসংযোগের একটি কমপ্লেক্স দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। স্পেসের অধিক শীতল শূন্যতায় তৈরি হবে জীবনের দৃশ্যপট। উষ্ণ এবং শীতল এই দুই অবস্থা থেকেই স্বাধীন হতে চাইবে এরা। আর জৈবপদার্থ ব্যবহার সংযতকরণের সুবিধাটাই ক্রমশ অনুভব করতে থাকবে।
ক্রমে ক্রমে মানবজাতির মূল ঐতিহ্যের অবক্ষয় ঘটবে। অবক্ষয় হবে বিশ্ব সম্মুখে বিকশিত জীবনধারার। অবশেষে সব ঐতিহ্য কার্যকরিভাবে বিনষ্ট হয়ে যাবে। সম্ভবত সংরক্ষিত রইবে কৌতূহল উদ্দীপক কিছু স্মৃতিচিহ্ন। শুরু হবে নতুন জীবন। আবার আদিম মানসজগৎ তার জায়গা দখল করে নেবে। এইরকম পরিবর্তন পৃথিবীর বুকে প্রাণের প্রথম আবির্ভাবের মতই তাৎপর্যময়। অবশেষে বিলীন হয়ে যাবে মানবতার আত্মজ্ঞান বা চৈতন্য।
হারিয়ে যাবে মানুষের গোত্রীয় পরিচয়, থাকবে না এদের পরস্পরের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা, হারাবে তাদের ঘনিষ্ঠ অন্য জীবনসত্তাগুলোও। চৈতন্য হয়ে যাবে ইথারময়। শূন্যতায় যোগাযোগের জন্য তখন ব্যবহৃত হবে আলোক বিকিরণ। শেষপর্যন্ত সম্ভবত চৈতন্য পুরোই মিশে যাবে আলোক রশ্মির সঙ্গে। আর ওখানেই কী শেষ না শুরু তা বর্তমান পৃথিবী থেকে দৃষ্টির অগোচরে!
এবার যদি মহাবিশ্ব আবদ্ধ হয়, তাহলে এর চূড়ান্ত পরিণতি কী? আর প্রোটনদের বিনাশ এরকম মহাবিশ্বে কীরূপ প্রভাব ফেলতে পারে? ধরা যাক, মহাসংকোচনের পর একটি নব্য যুগের সূচনা হবে। তবে কী পরবর্তী কাল-বিভাগে প্রোটন সংখ্যা (ব্যারিয়ন সংখ্যা) একই থাকবে? এরা কি ধরে রাখতে পারবে তাদের অতীত স্মৃতি? আর বিগ ব্যাং বা বিগ ক্রাঞ্চের কী পুনঃচক্র হবে? যদি এরকম হয় তবে প্রোটনদের ক্ষয় কি দূর ভবিষ্যতের চক্রসমূহে প্রভাব ফেলবে? এসব প্রশ্নের উত্তর বর্তমানে নেই।