অধ্যায় ১৩ : খাজার ও কারাইট ইহুদীদের আবির্ভাব
খাজার ইহুদীদের নিয়ে বলতে গেলে শুরুতেই বলে নেয়া প্রয়োজন, এটিকে ইহুদীরা সীমিত পরিসরে স্বীকার করলেও বড় পরিসরে একে বানোয়াট বলে অভিহিত করে। এ সংক্রান্ত গবেষকদলের অধিকাংশই খাজার তত্ত্বকে ভুল বলে থাকেন, আবার মাঝে মাঝে অনেকে পক্ষেও বলে থাকেন। ইহুদীরা একে ‘খাজার মিথ’ বলে, এবং এ তত্ত্বকে ব্যবহার করে অ্যান্টি-সেমেটিক ও অ্যান্টি-জায়োনিস্ট মতবাদকে জোর গলায় সমর্থন করা হয়, তাই আন্তর্জাতিকভাবেই এই তত্ত্বকে ভালো চোখে দেখা হয় না। কেন? কারণ, এ তত্ত্ব বলে, বর্তমান ইহুদীদের একটি বড় অংশ তুর্ক খাজার বংশের ধর্মান্তরিত ইহুদী, এবং মূল বনী ইসরাইলের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এর ফলে, পবিত্র ভূমির ওপর তাদের কোনো অধিকার থাকে না। স্বভাবতই, ইহুদীরা তাই এ তত্ত্বের বিরোধী।
প্রশ্ন হলো, খাজার কী? এ বিষয়ে একটু জেনে নেয়া যাক।
‘খাজার’ বা ‘হাজার’-কে হিব্রুতে ‘কুজার’ বলা হয়, বহুবচনে ‘কুজারিম’। এরা মূলত তুর্ক জাতির অংশ, যারা উত্তর, মধ্য ও পশ্চিম ইউরেশিয়ায় বাস করে বা করত। এই তুর্কের অন্তর্গত আজকের কাজাখ, উজবেক, কিরগিজ, তুর্কি লোকেরা, এছাড়াও আগেকার দিনের হান, সেলজুক, উসমানীয়, তৈমুরীয় প্রমুখ। খাজারও ছিল এমনই এক তুর্ক। তারা ছিলো আধা-যাযাবর কিছু গোত্রের সমষ্টি। আজকের রাশিয়া, দক্ষিণ ইউক্রেন, ক্রিমিয়া ও কাজাখস্তানের অংশ নিয়ে তাদের বিস্তার ছিল। আজও কাসপিয়ান সাগরকে স্থানীয় আজেরবাইজানি ভাষায় ‘খাজার সাগর’ ডাকা হয়। ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক দিক থেকে খাজাররা ছিল বড় শক্তিশালী। ৬৫০ সাল থেকে ৯৬৯ সাল পর্যন্ত তারা মাথা উঁচু করে ছিল।
খাজারদের ধর্ম কিন্তু খ্রিস্টান ছিল না, বরং আকাশদেবতা তেংরির পূজা করত তারা, তাদের মাঝে প্রচলিত ছিল শামানপ্রথা। তবে খ্রিস্টান বাইজান্টিন সাম্রাজ্যের পক্ষ নিয়ে তারা পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়ত। বহুদিন মুসলিম অঞ্চলের সাথে বাইজান্টিন সাম্রাজ্যের দূরত্ব বাড়িয়ে মধ্যবর্তী অঞ্চল হিসেবে কাজ করে গিয়েছে খাজাররা। তবে ৯০০ সালের দিকে বাইজান্টিনদের সাথে মিত্রতা শেষ হয়ে যায় খাজারদের। ‘আলান’ বা ‘আলানোই’ (Ahavoi) নামের উত্তর ককেশাসের ইরানি যাযাবর জাতিকে হাত করে বাইজান্টিনরা। আলানদেরকে দিয়ে তারা চেষ্টা করেছিল খাজারদের আক্রমণ করে দুর্বল করে দিতে। ৯৬৫ থেকে ৯৬৯ সালের মাঝে কোনো এক সময় স্লাভিকদের কাছে স্বাধীনতা হারায় খাজাররা। তাদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় চৌদ্দ লক্ষ। ঘটনাটা ঘটে এখানেই।
স্প্যানিশ ইহুদী ডাক্তার ও দার্শনিক জুদাহ হালেভি এবং স্প্যানিশ ইহুদী জ্যোতির্বিদ, ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক আব্রাহাম ইবনে দাউদ এরকম সময় খাজারদের শাসক জনগোষ্ঠীকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করান।
এ পর্যন্ত সব ঠিক আছে। এই ইহুদী ধর্ম গ্রহণের অংশটুকু ইহুদীদের নিজস্ব ইতিহাসেই আছে। সমস্যাটা এর পর থেকে।
বলা হয়, ইউক্রেনের র্যাবাই আইজ্যাক বায়ের লেভিনসন উনিশ শতকে প্রথম আশকেনাজি ইহুদীদের সাথে খাজারদের সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, ইউরোপীয় আশকেনাজি ইহুদীরা আগে রুশ ভাষায় কথা বলত। এরপর তারা হিব্রু ও আরামায়িক ঘেঁষা জার্মান একটি ভাষা অর্থাৎ ‘ইদিশ’ ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। ইদিশ (Yiddish) ভাষার উদ্ভব মধ্য ইউরোপে নবম শতকে হয়েছিল।
আরেক ইহুদী আব্রাহাম এলিয়াহু হারকাভিও একই সন্দেহের কথা ব্যক্ত করেন। তবে খাজার তত্ত্ব সবচেয়ে বড় করে তুলে ধরেন ফরাসি সেমিটিক স্কলার আর্নেস্ট রেনান। তিনি ১৮৮৩ সালের ২৭ জানুয়ারি প্যারিসের একটি লেকচারে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন, ইহুদীদের আজকের অবস্থানে আসতে ধর্মান্তর কত বড় ভূমিকা রেখেছে, এবং এজন্য দায়ী সবচেয়ে বেশি খাজাররা। কিন্তু খুব দ্রুতই রুশ জাতীয়তা ও আশেকানাজি পরিচয় হুমকির মুখে পড়তে পারে ভেবে ধামাচাপা দিয়ে দেয়া হয় এ তত্ত্ব। অনেকদিন পরে ১৯৭৬ সালে আর্থার কেস্টলারের ‘দ্য থার্টিন্থ ট্রাইব’ নামের বই প্রকাশের পর খাজার তত্ত্ব আবার জনসম্মুখে আসে। ২০১২ সালে এরান এলহাইক নামের একজন আমেরিকান-ইসরাইলি জেনেটিসিস্ট এ তত্ত্বকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করেন, ফলে খাজার তত্ত্ব আবার মিডিয়ার সামনে আসে। জেনেটিক স্টাডি অনুযায়ী, খাজারদের উৎসের চিহ্ন আশকেনাজি ইহুদীদের মাঝে পাওয়া যায়নি, পাওয়া গিয়েছিল ভূমধ্যসাগরীয় ও দক্ষিণ ইউরোপীয় উৎস। এটিও অবশ্য তাদের বনী ইসরাইলি হওয়া প্রমাণ করে না।
মোদ্দা কথা, ইহুদী মত হলো, খাজারদের শাসক শ্রেণী ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে থাকলেও, খাজার জনগণ বিপুল সংখ্যায় এমনটি করেনি। তাই ইউরোপীয় ইহুদীরাও আসলে বনী ইসরাইল, তাদের পবিত্র ভূমিতে অধিকার আছে। যদিও মূল অধিকার তাদের পূর্বে পবিত্র ভূমিতে বসবাস করা ফিলিস্তিনিদের।
এতবার আশকেনাজি ইহুদীর কথা বলা হলো, এবার আসা যাক সে কথায়।
ইহুদী কিতাব (পয়দায়েশ ১০) অনুযায়ী, নবী নূহ (আ) এর একজন বংশধর ছিলেন আশকেনাজ। ইউরেশিয়ার স্লাভিক অঞ্চলে তার রাজত্ব ছিল। মধ্যযুগের ইহুদীরা এ এলাকাকে পশ্চিম জার্মানির রাইনল্যান্ড বলে অভিহিত করতে থাকে। তাই ইউরোপের এ অঞ্চলে বিকশিত ইহুদী সংস্কৃতিকে আশকেনাজি বলা হয়। তারা সেখানে ব্যবিলন ও পবিত্র ভূমির সংস্কৃতির সাথে ইউরোপীয় সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটায়। শতাব্দীর পর শতাব্দী তারা হিব্রু ভাষাকে পবিত্র মনে করত, কিন্তু কথা বলত ইদিশ ভাষায়। প্রথম সহস্রাব্দের শেষ দিকে তাদের উৎপত্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্ট প্রায় প্রত্যেক আশকেনাজি ইহুদী পরিবারের ক্ষতিসাধন করে, প্রায় প্রত্যেক পরিবার থেকেই কেউ না কেউ মারা যায়।
একাদশ শতকে মোট ইহুদী জনসংখ্যার ৩% ছিল আশকেনাজি ইহুদী, আর বিশ শতকে ১৯৩০ সালের দিকে মোট ইহুদী জনসংখ্যার ৯২% ছিল আশকেনাজি। আজকের দুনিয়ায় মোট ইহুদীর অন্তত ৭৫% আশকেনাজি ইহুদী।
আশকেনাজির পাশাপাশি আছে মিজরাহি ইহুদী, যাদের কথা আগে বলা হয়েছে এ বইতেই। তারা সেই আদিকাল থেকে অর্থাৎ ওল্ড টেস্টামেন্টের যুগ থেকেই মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বাসিন্দা বংশগতভাবে। তারা বংশগতভাবে আদি ইহুদী, অর্থাৎ ধর্মান্তরিত নয়।
আন্দালুস অর্থাৎ আজকের স্পেন ও পর্তুগালের দিকে বসবাস করতে থাকা হিসপানিক ইহুদীদের বলা হয় সেফার্দি ইহুদী। তারা খ্রিস্টানদের হাতে অত্যাচারিত হয়ে আন্দালুস থেকে বিতাড়িত হয় পঞ্চদশ শতকে, এবং ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবী জুড়ে। যেমন, উত্তর আফ্রিকা, মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, ফ্রান্স, ইতালি, গ্রিস, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, আমেরিকা, ইত্যাদি অঞ্চলে। অবশ্য আমেরিকায় আশকেনাজি ইহুদীর তুলনায় সেফার্দি ইহুদী কমই। আন্দালুসের ঘটনায় আমরা একটু পরেই আসছি।
অষ্টম শতকে পারস্যের ইহুদী সমাজে মেসায়া আন্দোলন শুরু হয়ে যায়, অর্থাৎ তারা দাবি করতে থাকে যে মেসায়ার আগমন নিকটবর্তী। তারা মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে থাকে। অবশ্য খুব দ্রুতই এসব আন্দোলনকে দমিয়ে ফেলা হলো। কিন্তু এর চেয়েও গুরুতর সমস্যার শুরু হলো এ শতকের শেষ দিকে। কারাইট নামের একদল ইহুদীর উদ্ভব হয়, যারা র্যাবাইদের সম্পূর্ণ বিরোধী।
বর্তমানে মুসলিম সমাজে আহলে কুরআন নামে একটি দলকে দেখা যায়, যারা মনে করেন কেবল কুরআন পালনেই ইসলামের শতভাগ আদায় সম্ভব। হাদিস বা কোনো ইসলামি আলেম ফতোয়ার শরণাপন্ন হওয়া এক্ষেত্রে জরুরি নয়। ঠিক তেমনই ছিল ইহুদী কারাইটরা। তারা কেবল তাওরাত পড়ত, তাদের মতে এর বাইরে আর কিছুই প্রয়োজন নেই। ‘কারাইম’ মানে ‘পঠনকারীগণ’। তাদের মতে হালাখার সব কিছু পাওয়া যাবে তাওরাতেই। র্যাবাইদের প্রয়োজন নেই। তাওরাতের আক্ষরিক অনুবাদেই মুক্তি নিহিত। ব্যবিলনে এ দলের প্রতিষ্ঠা করেন আনান বেন ডেভিড ৭৬০ সালের দিকে। তার এক্সিলার্ক হবার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু করা হয়নি শেষমেশ।
কারাইটদের বিশ্বাস ইসলামের রীতিনীতি থেকেও ধার করা ছিল, ইহুদীদের তালমুদের বাইরের বিষয়াদিও তাতে ঢুকে যায়। ইহুদী ধর্মে হারাম খাবারের তালিকায় যা যা আছে, তার চেয়েও বাড়ানোর চেষ্টা করেন আনান বেন ডেভিড, তিনি খত্না করার রীতিকেও আরও নিয়ম কানুন যোগ করে কঠিন করে ফেলেন। শনিবার অর্থাৎ সাব্বাথ দিবসের কার্যকলাপকেও কঠিন করতে পিছপা হননি তিনি, র্যাবাইদের থেকেও কঠিন করে তোলেন আনান বেন ডেভিড। মোট কথা, বেশ কঠিন ছিল কারাইটদের রীতিনীতি।
আনান মারা যাবার পর নতুন নতুন কারাইট নেতার আবির্ভাব হলো। আনানের অনুসারী সংখ্যায় কমই ছিল, তাদেরকে ‘আনানাইট’ ডাকা হতো। নবম শতকের গোড়ার দিকে বাগদাদের কাছে উকবারাতে ইশমায়েল প্রতিষ্ঠা করেন কারাইটদের ‘উকবারাইট’ দল। একই শহরে কয়েক বছর পর আরেকটি দলের জন্ম হয়, এবার জন্মদাতা মিশাওয়াহ আল-উকবারি। এভাবে আবু ইমরান আল- তিফলিসি আর ফিলিস্তিনের ইহুদী মালিক আল-রামলি’র হাতেও দল সৃষ্টি হয়। নবম শতকের শেষ দিকে দেখা গেল, কারাইজম ধর্মমতটা অনেকগুলো দলের সমষ্টি। মূলধারার কারাইজমের নেতা ছিলেন বেনজামিন বেন মোজেস নাহাওয়েন্দি, তিনি বিশ্বাস করতেন পাক কিতাবের লেখার স্বাধীন পঠন প্রয়োজন। তারা র্যাবাইদের নীতি মানতেন না, তাদের আইন পালন করতেন না। একটা সময়ে খোদ জেরুজালেমেই কারাইটদের নিজস্ব র্যাবাইনিকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি হয়ে গেল।
ইহুদী ধর্মের মূলধারার র্যাবাইরা বসে থাকলেন না, তারা কারাইজম বিশ্বাসকে বাতিল আখ্যা দিলেন। এর অনুসারীরা ইহুদী নয় আর, এমনটিই ছিল তাদের ঘোষণা। কারাইটদের সাথে বিতর্কে প্রথম যে গণ্যমান্য ব্যক্তি লিপ্ত হন তিনি ছিলেন একজন গাওন, অর্থাৎ র্যাবাইনিকাল অ্যাকাডেমির প্রধান। তার নাম সাদিয়া গাওন, পুরো নাম সাদিয়া বেন ইয়োসেফ গাওন। তিনি আনান বেন ডেভিডের বিরুদ্ধে একটি বই রচনা করেন; তার জ্ঞান আর বইপত্র অন্যান্য কারাইট-বিরোধীরা অনুসরণ করতে শুরু করে।
এ যুগের সাদিয়া গাওন এতটাই প্রভাবশালী বিদ্বান ছিলেন যে, এতদিন পরে এসেও তার বইপত্র রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়, এবং ইহুদীরা শ্রদ্ধার সাথে মান্য করে। তিনি মিসরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তবে ২৩ বছর বয়সে ৯১৫ সালের দিকে ফিলিস্তিনে চলে যান। তিনি সেখানে ইহুদী স্কলার আবু কাসির আল- কাতিবের অধীনে পড়ালেখা করেন। ৯২৬ সালে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ব্যবিলনিয়াতে। সেখানকার ইহুদী সুরা অ্যাকাডেমির সদস্য হন তিনি।
এর আগে ৯২২ সালে হিব্রু পঞ্জিকা নিয়ে গণ্ডগোল দেখা দেয়, যা পুরো ইহুদী রীতিনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে। বিষয়টা একটু খুলে বলা যাক। ৩৫৯ সাল থেকে হিব্রু পঞ্জিকা কিছু নিয়মের ওপর ভিত্তি করে চলে আসছিল, চাঁদের গতিবিধির ওপর নজর রেখে নয়। এর মাঝে একটি নিয়ম ছিল এমন- রশ হাশানাহ (nawa ২87) অর্থাৎ ইহুদী নববর্ষের সূচনার দিনে অতি অবশ্যই অমাবস্যার শুরু হতে হবে দুপুরের আগে। কিন্তু সেবার কোনোভাবেই তা হচ্ছে না, মধ্যদুপুরের অন্তত ৩৫ মিনিট পর শুরু হচ্ছে অমাবস্যা। যদি এটা মানতে হয়, তাহলে মঙ্গলবারের বদলে ঈদুল ফিসাখের বার পড়বে রবিবার, যেটা মানা যায় না।
সাদিয়া তখন আলেপ্পোতে, তিনি যাত্রাপথে এ গণ্ডগোলের কথা শুনতে পেলেন। সাদিয়া ব্যবিলনে গিয়ে তার জ্ঞান দিয়ে সমাধান করে দিলেন এ সমস্যা। তৎকালীন এক্সিলার্ক ডেভিড বেন জাক্কাই আর অ্যাকাডেমির স্কলারদের কাছে জানিয়ে আসলেন। ৯২৮ সালে এক্সিলার্ক ডেভিডের ওকালতিতেই প্রথম বিদেশী হিসেবে সাদিয়া ব্যবিলনের অ্যাকাডেমির গাওন হলেন। ইয়েমেনের ইহুদীদের ওপর সাদিয়া গাওনের প্রভাব ছিল নজিরবিহীন।
সাদিয়া গাওন তাওরাতের অনুবাদ করেন ইহুদী আরবিতে, অর্থাৎ হিব্রু হরফে আরবি লিখে। সাথে তিনি ইহুদী আরবিতে তাফসিরও করে দেন। অবশ্য তিনি তার বইগুলো হিব্রুতে যেমন লিখতেন, তেমন আরবিতেও লিখতেন। ফলে আরবের ইহুদীরা আরও সহজে তাওরাত পাঠ করতে শুরু করল।
৯৪২ সালে ৬০ বছর বয়সে ব্যবিলনে অসুস্থ হয়ে মারা যান সাদিয়া গাওন।
কারাইটদের কথায় ফিরে আসা যাক। প্রথম ক্রুসেডের সময় জেরুজালেমের ইহুদী সমাজ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর কারাইটদের জ্ঞানচর্চা চলে যায় বাইজান্টিন সাম্রাজ্যে। আর এরপর সেখান থেকে ইহুদীরা চলে যায় বর্তমান রাশিয়ার ক্রিমিয়া, পোল্যান্ড আর লিথুনিয়াতে। অবশ্য মিসরেরর কারাইটরা বহাল তবিয়তেই টিকে থাকে। তবে একাদশ শতকের পর কারাইট আন্দোলন আর টিকে থাকেনি, ধীরে ধীরে তাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসে। ক্ষুদ্র একটি অংশ হিসেবেই তারা বাস করতে থাকে ইহুদী সমাজে, মূলধারার ইহুদীরাও আর তাদের পাত্তা দেয়নি।