অধ্যায় ১০ : রোমান শাসনে ইহুদী জীবন
রোমানরা এহুদিয়া বিজয় করে নেয়ার ফলাফল ছিল ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ আর বিপুল সংখ্যক ইহুদীর দাসত্ববরণ। কিন্তু ইহুদীরা তাতে দমে না গিয়ে প্রায় সাথে সাথেই কাজ শুরু করে দিল যতগুলো ধ্বংসস্তূপকে আবার গড়ে তোলা সম্ভব হয়, সে কাজে। রোমান আক্রমণের পরেও এহুদিয়া প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু ইহুদীরাই রইল।
রোমানরা ইহুদীদের ওপর চড়া কর বসায়, তবে তার বিনিময়ে তারা ইহুদীদেরকে স্বাধীনভাবে ধর্ম কর্ম করতে দেয়। অর্থাৎ বাকিদের মতো পৌত্তলিকতা কিংবা সম্রাট পূজায় অংশ নিতে হবে না ইহুদীদেরকে। কিন্তু এ সময়কালে সাদুকি আর এসেনিরা বিলুপ্ত হয়ে যান, কেবল টিকে থাকেন ফারিসিগণ। তাদের নেতা ছিলেন র্যাবাই (রাব্বি) ইয়োনান বেন জাক্কাই।
ইহুদীরা উল্লেখযোগ্য কিছু ঐতিহাসিক চরিত্রকে সংক্ষিপ্ত নামে ডাকে নামের শব্দগুলোর আদ্যাক্ষর দিয়ে। যেমন র্যাবাই ইয়োহানান বেন জাক্কাইয়ের আদ্যোক্ষর ‘র ই ব জ’ মিলিয়ে তাকে রিবাজ বলে সম্বোধন করে।
ইহুদীদের মাঝে প্রচলিত আছে, রোমের বিরুদ্ধে ইহুদীদের বিদ্রোহ সূচনা হবার পর জেনারেল ভেসপাসিয়ান তার লোকদের জেরুজালেমের চারপাশে প্রাচীরের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতেন। তার গুপ্তচরেরা তীরের সাথে কাগজ বেঁধে ভেতরের আলাপসালাপ বাইরে পাঠিয়ে দিত। এদের মাঝে একটি কথা ছিল, র্যাবাই ইয়োহানান সিজারের প্রশংসা করেন।
র্যাবাইয়ের সতর্কবাণী যখন লোকে শুনলো না, তখন তিনি তার শিষ্য এলিয়েৎসার আর ইয়েহোশুয়াকে ডেকে এনে বললেন, “বাছারা, আমাকে এ জায়গা থেকে বের করে নিয়ে যাও। আমাকে একটি কফিনের ভেতর পুরে রাখো, আমি সেখানেই ঘুমাব।” এলিয়েৎসার ধরলেন সেই কফিনের সামনের অংশ, আর ইয়েহোওয়া ধরলেন পেছনের অংশ। সূর্যাস্ত পর্যন্ত হেঁটে তারা পৌঁছালো জেরুজালেমের সীমানায়। প্রহরীরা জিজ্ঞাসা করলো, কে মারা গিয়েছে? তারা উত্তর দিলেন, “এক মরা লোক। জানোই তো, জেরুজালেমের ভেতর লাশ এক রাতের বেশি রাখার নিয়ম নেই।” প্রহরীরা উত্তর দিল, “মরা লোক হলে তাকে নিয়ে যাও।”
তারা পৌঁছে গেল জেনারেল ভেসপাসিয়ানের কাছে। কফিন খুলে বেরিয়ে এলেন র্যাবাই।
ভেসপাসিয়ান জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি র্যাবাই ইয়োহানান বিন জাক্কাই? বলুন আমি আপনাকে কী দিতে পারি।”
র্যাবাই উত্তর করলেন, “আমি চাই ইবনা (77২২/) শহর, আপনারা যাকে ইয়ামনিয়া ডাকেন। আমি সেখানে গিয়ে আমার শিষ্যদের শিক্ষা দেব, সেখানে ইহুদী ধর্মের আচার প্রতিষ্ঠা করব।”
ভেসপাসিয়ান উত্তর করলেন, “ঠিক আছে। সেখানে গিয়ে আপনি তাই করুন।”
র্যাবাই বললেন, “আমি কি আপনাকে একটা জিনিস জানাতে পারি?”
ভেসপাসিয়ান বললেন, “বলুন।”
র্যাবাই বললেন, “আপনি রোমান সম্রাট হতে চলেছেন।”
ভেসপাসিয়ান বললেন, “আপনি কীভাবে জানেন সেটা?”
র্যাবাই বললেন, “আমাদের কাছে তেমন খবরই পৌঁছেছে পাক কিতাবে, বাইতুল মুকাদ্দাসের পতন কোনো সাধারণ লোকের হাতে হবে না, হবে কোনো সম্রাটের হাতে।”
কথিত আছে, এর দুই কি তিন দিন পরেই ভেসপাসিয়ানের কাছে দূত এসে জানায়, সিজার মারা গিয়েছেন, তার তলব পড়েছে। এরপর তিনি রোমান সম্রাট বনে যান।
র্যাবাই ইয়োহানান কথা মতো সাগর তীরের কাছে ইবনা শহরে গিয়ে তার শিষ্যদের জড়ো করলেন, আর সাথে এলেন উল্লেখযোগ্য ফারিসি বিদ্বানগণ তাদেরকে তান্নাইম (nn) ডাকা হতো, যার মানে ‘শিক্ষক’ (বহুবচন)। তারাই বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংসের পর ইহুদী ধর্ম টিকিয়ে রাখার কাজ করে যান। র্যাবাই ইয়োহানানের নেতৃত্বে এবং পরবর্তী শতকে র্যাবাই দ্বিতীয় গামালিয়েলের নেতৃত্বে তারা সানহেদ্রিন কাউন্সিল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তারা পাক কিতাবের লেখা বাছাই করে আজকের ওল্ড টেস্টামেন্ট তৈরি করেন, দৈনিক কী কী প্রার্থনা করতে হয় তা আয়োজন করেন, বাইতুল মুকাদ্দাসের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন দায়িত্ব স্থানীয় সিনাগগে সম্পাদন করার ব্যবস্থা করেন। যেমন, ঈদুল ফিসাখ বা পাসওভারের সময় যা যা করতে হয়, কিংবা ইহুদী নববর্ষের দিন শিঙ্গা বাজানো, ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ইহুদী উপাসনালয়কে ‘সিনাগগ’ বলা হতো গ্রিকে, কিন্তু হিব্রুতে ডাকা হয় ‘বাইত কেনেসেত’ বা জামাতের ঘর, কিংবা ‘বেইত ৎফিলা’ বা প্রার্থনার ঘর।
র্যাবাইদের একজন প্রধান ছিলেন যাকে ‘নাসি’ ডাকা হতো, কিন্তু সমস্ত সিদ্ধান্ত সম্মিলিতভাবেই নেয়া হতো। এই কাউন্সিলের সদস্যদের সমাজের নানা স্তর থেকে বাছাই করা হতো। অসংখ্য ছাত্র তাদের কাছে ইহুদী ধর্ম শিক্ষা নিতে আসত।
প্রথম প্রজন্মের ইহুদী স্কলারদের মাঝে যাদের নাম মনে রাখার মতো, তারা হলেন- র্যাবাই এলিয়েৎসার বেন হিরক্যানোস, র্যাবাই এলাৎসার বেন আজারিয়া এবং র্যাবাই ইউশা বেন হানিনা। আর দ্বিতীয় প্রজন্মের স্কলারদের মাঝে ছিলেন র্যাবাই হানানিয়া বেন তারাদিয়োন, র্যাবাই তারফোন আর র্যাবাই ইশমায়েল বেন এলিশা। এছাড়াও র্যাবাই আকিভা বেন জোসেফের কথা উল্লেখযোগ্য।
রোমানদের বিশাল জয়ের পরও ইহুদীরা তাদের বিদ্রোহ থামায়নি, মাঝে মাঝেই এখানে সেখানে বিদ্রোহ দেখা দিত। প্রথম শতকের পর দ্বিতীয় শতকেও এর দেখা মেলে।
রোমান সম্রাট ট্র্যাজান (৯৮-১১৭) পূর্ব দিকে অভিযান চালিয়ে পারস্যের তীর পর্যন্ত জয় করে নেন। তখন ব্যবিলনের ইহুদীদের মাঝে আন্দোলন শুরু হয়। তাছাড়া, রোমান সাম্রাজ্যের নানা ইহুদী ডায়াসপোরাতেই দাঙ্গা সংঘটিত হতো। ১১৪ থেকে ১১৭ সালের মাঝে আলেকজান্দ্রিয়া, লিবিয়ার পুব দিকের বারক্বা বা সাইরেনেইক্যা, মিসর আর সাইপ্রাসের ইহুদী কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়।
তবে সম্রাট ট্র্যাজান মারা যাওয়ার পর তার উত্তরসূরি সম্রাট হ্যাড্রিয়ান (১১৭- ১৩৮) পুব দিকে রাজত্ব সম্প্রসারণের কাজ স্থগিত রাখেন। ফলে ব্যবিলনের ইহুদী ডায়াসপোরা রোমান প্রভাবমুক্ত অবস্থায় শান্তিতে থাকে।
অনেকদিন পর সম্রাট হ্যাড্রিয়ান আবারও ইহুদীদের মাঝে গ্রিক হেলেনিজম চালু করতে চাইলেন, যার ফলশ্রুতিতে ১৩২ সালে একটি মেসিয়ানিক আন্দোলন শুরু করেন সিমিয়ন বার কহবা। ইবনা শহরের অন্যান্য ইহুদী নেতারাও এতে সমর্থন দিলেন। এ আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিল এ বিশ্বাস যে আল্লাহ অবশ্যই আবার ইহুদীদেরকে পবিত্র ভূমির নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেবেন, বাইতুল মুকাদ্দাস আবার নির্মিত হবে। কিন্তু যতই চেষ্টা করুক না কেন সেই বিদ্রোহীরা, রোমানরা তাদের দমন করে ফেলল। এ সংক্রান্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাই আমরা, যেমন সিমিয়নের সরকার এ সম্পর্কে মুদ্রা বের করেছিল। তাছাড়া তিনি তার ডেপুটিদেরকে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন, যা এখনও টিকে আছে। তৃতীয় শতকের ইতিহাসবিদ ডায়ো ক্যাসিয়াস লেখেন, এ বিদ্রোহে হাজারো ইহুদীকে হত্যা করে রোমানরা। এহুদিয়া প্রদেশ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ১৩৫ সালে জেরুজালেমের দক্ষিণ- পশ্চিমের বেথারের পতনের মধ্য দিয়ে এ আন্দোলনের পরিসমাপ্তি হয়। সেদিনের তারিখও ছিল হিব্রু আভ মাসের নয় তারিখ। সেই একই তারিখ, যেদিন প্রথম ও দ্বিতীয়বার বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস হয়। সিমিয়ন বার কহবা মারা যান এ আন্দোলনে।
এ যুদ্ধ বা আন্দোলনের পর ইহুদী ধর্মকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন সম্রাট হ্যাড্রিয়ান পুরো রাজ্য জুড়েই। কিন্তু ১৩৮ সালে তার মৃত্যুর পর এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তবে এবার ইহুদীরা রোমান শাসনের প্রতি সহনশীলতা দেখাতে থাকে।
ইহুদীদের শিক্ষাকেন্দ্র ইবনা শহর থেকে সরিয়ে গালিলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। র্যাবাই আকিভার নেতৃত্বে সানহেদ্রিন গঠিত হয় উশাতে। এক পর্যায়ে নাসি বা প্রধান হন র্যাবাই সিমিয়ন বেন গামালিয়েল। তার মতো বেশ কয়েকজন পণ্ডিতের অধীনে ইহুদী জীবনের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ হিসেবে সানহেদ্রিন কাজ করে যেতে থাকে। বেশ সংগঠিত উপায়ে আইন কানুনের প্রয়োগ ও বিচার কার্য সম্পাদিত হতে থাকে।
তৃতীয় শতকে গালিলিতে ইহুদীদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো হয়ে ওঠে। ইহুদীদের তখন রোমান শাসকদের সাথে সুসম্পর্ক চলছে। রোমান সম্রাট সেভেরাস যে সেভেরান রাজবংশ (১৯৩-২৩৫) প্রতিষ্ঠা করেন, তাদের আমলে নাসিদের হাতে ইহুদী কোর্টের জন্য বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়।
এ সময়কার বিখ্যাত নাসি ছিলেন জুদাহ হা-নাসি। [পাঠকদের জন্য : হিব্রুতে শব্দের আগে ‘হা’ মানে ইংরেজি ‘The’] তিনি ইহুদীদের মৌখিক ‘হাদিস’ বা বচনগুলোকে সম্পাদনা করেছিলেন, যার নাম মিশনাহ (pp)। মিশনাহতে আছে ছয়টি অংশ। প্রতিটি অংশে আছে অনেকগুলো অধ্যায়, আর প্রতিটি অধ্যায় আলাদা আলাদা বিষয়ের ওপর রচিত। অংশগুলো হলো যথাক্রমে- বীজ, ভোজন, নারী, ক্ষয়ক্ষতি, পবিত্র জিনিস এবং বিশুদ্ধকরণ।
মিশনাহ সংকলনের সময় সানহেদ্রিন গালিলির নানা শহরে মিলিত হয়, সর্বশেষ রোমান শহর টাইবেরিয়াসে তারা চূড়ান্ত কাজ করেন। নাসি সানহেদ্রিনের গুরু হলেও, অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন শহরে এর শাখা খোলেন, যেন জীবনের নানা স্তরে মিশনাহর শিক্ষা সবাইকে দেয়া যায়।
২৩০ এর দশকে রোমান সাম্রাজ্য নানা সমস্যায় পড়ে। যেমন মুদ্রাস্ফীতি, জনসংখ্যা হ্রাস, বাহিনীর প্রযুক্তিগত উন্নতির অভাব, ইত্যাদি। পরের কয়েক দশক ধরে রোমান জেনারেলরা ক্ষমতালিপ্সা থেকে কোন্দলে জড়িয়ে পড়লেন, রোমান সরকার কার্যত অকেজো হয়ে পড়লো। অবস্থা খারাপ ছিল ইহুদী সমাজেরও, তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ, মহামারি ও লুটতরাজের সমস্যা দেখা দেয়।
তৃতীয় শতকের শেষে এসে সম্রাট ডায়োক্লিশেন (২৮৪-৩০৫) কিছু সংস্কার প্রচলন করেন, যা রোমান সাম্রাজ্যকে একটু শক্তিশালী করে তোলে। তার শাসনকালে প্রজাতন্ত্রপ্রথা অনেকটাই স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। অর্থনৈতিক অবনমন ঠেকাতে কড়া নিয়ম কানুন নিয়ে মাঠে নামেন তিনি। সেই সাথে সম্রাট ডায়োক্লিশেন নব্য বিস্তার লাভ করা খ্রিস্টধর্মের প্রভাব ঠেকাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। রাজধর্মের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই নতুন ধর্ম।
তবে ডায়োক্লিশেন মারা যাবার পর তার উত্তরসূরি সম্রাট কনস্ট্যান্টাইন একই বৈরিতা দেখাননি, বরং তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ৩১৩ সালে খ্রিস্টধর্মকে রাজ্যে অনুমতি দেন। এ সময়ের মাঝে শহুরে জনসংখ্যার মধ্যেও বড় একটা অংশের কাছে জনপ্রিয় হয়ে দাঁড়ায় খ্রিস্টধর্ম। চার্চের কাজকর্মে নিজেকে জড়ালেন সম্রাট, আর মারা যাবার ঠিক আগে আগে তিনি নিজে খ্রিস্টধর্মে ব্যাপ্টাইজড হন। পুরো শতাব্দী জুড়ে খ্রিস্টধর্ম ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। চতুর্থ শতকের শুরুর দিকে রোমান সাম্রাজ্যের রাজধর্মই হয়ে দাঁড়ায় খ্রিস্টধর্ম। অবশ্য, এতে ইহুদীদের অধিকারে বাধা পড়েনি কোনো, কিন্তু বিভিন্ন কারণে ইহুদীদের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়।
চতুর্থ শতকের গোড়ার দিকে ইসরাইলের ইহুদী স্কলারগণ টাইবেরিয়াস, সিজারিয়া ও সেফোরিস ঘুরে র্যাবাইদের শিক্ষাগুলো সংগ্রহ করেন। মিশনাহর এই বর্ধিত অংশ পরিচিত হয় ‘ফিলিস্তিনি তালমুদ’ নামে। চার অংশ বিশিষ্ট এই বহুখণ্ডের লেখার নানা জায়গা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমরা জানতে পারি না কতটা নিখুঁত ছিল এর সম্পাদনা। যাই হোক, ব্যবিলনীয় তালমুদের মতো গুরুত্ব অর্জন করেনি ফিলিস্তিনি তালমুদ। পাঠকদের সুবিধার্থে বলি, তালমুদ (7৩২২০) হলো ইহুদীদের আইনগ্রন্থ এবং ধর্মতত্ত্বের উৎস।
খ্রিস্টধর্ম এতটা উঁচু ক্ষমতায় পৌঁছে যায় এ সময়টাতে যে রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ইহুদী ধর্ম ততটা গুরুত্বই পেত না আর, বিশেষ করে আইনি জটিলতায়। রাজকীয় আইন করে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। ইহুদী ও খ্রিস্টানদের মধ্যে বিবাহও নিষিদ্ধ হয় তখন থেকে। পঞ্চম শতকের গোড়া থেকে সরকারি কোনো পদেই ইহুদীরা চাকরি পেত না, আইন করে তা বারণ করে দেয়া হলো। বাকি শতক ধরেও একই আইন চলে আসলো। বিশেষ করে সম্রাট জাস্টিনিয়ান (৫২৫-৫৬৫) এসে এ আইনের ওপর বেশি জোর দিলেন। কারণ হিসেবে দেখানো হলো, তারা চান ইহুদীরা যেন প্রকৃত সত্য অর্থাৎ খ্রিস্টধর্মের আলো খুঁজে পায়। ইহুদীদের নির্মূল করা হয়নি, কারণ খ্রিস্টানরা মনে করত ইহুদীদের অস্তিত্ব আসমানি কিতাবের সত্যতার প্রমাণ। চার্চ শিক্ষা দিত, একদিন না একদিন ইহুদীরা অবশ্যই খ্রিস্টকে মেসায়া হিসেবে মেনে নেবে।
রোমান সাম্রাজ্যে এভাবেই দিন কাটাতে লাগলো ইহুদীরা।