অধুনা মোগলমারি – শ্যামলী মিশ্র
The Sun does not forget a village just because it is small.
—African Proverb
সূর্যের অফুরান ভালোবাসার পরশ ঘিরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ছোট্ট গ্রাম মোগলমারিকেও। গ্রাম ছোট্ট। কিন্তু ছোটো নয় তার রত্নভান্ডার। একদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঐশ্বর্যে গ্রামটি পাগল করেছে বহু প্রকৃতিপ্রেমীকে। অন্যদিকে সুপ্রাচীন ইতিহাসের সন্ধান দিয়ে দেশ-বিদেশের বহু ইতিহাস-অনুসন্ধিৎসু মানুষকে কাছে টেনে এনেছে। গ্রামটির বাইরের প্রাচুর্যের মতো তার অন্তরের ঐশ্বর্যও স্বতন্ত্র সাক্ষর রেখেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানার দাঁতন-১নং ব্লকের অন্তর্গত এই গ্রামটি। মৌজা-সিমুলিয়া (উত্তর)। জে এল নং-৭৩। গ্রামের নামেই বুথের নাম, অর্থাৎ, মোগলমারি। জনসংখ্যা-৯৫৩। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা-৪৮৫। মহিলার সংখ্যা-৪৬৮।
মোগলমারিতে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা-২২৯। এর মধ্যে সাধারণ জাতির ১০৪টি পরিবার রয়েছে। তপশিলি জাতির ৮ এবং তপশিলি উপজাতির পরিবারের সংখ্যা-১১৭। এই গ্রামে কোনো সংখ্যালঘু মানুষের বসবাস নেই। এই তথ্যের সাথে পুঞ্জা ও জয়রাম মৌজার সংখ্যা যুক্ত হয়েছে। তবেই আজকের প্রত্নক্ষেত্র বৃহত্তর মোগলমারি। অর্থাৎ ৩টি মৌজার মোট জনসংখ্যা ২,৮৬০। তার মধ্যে পুরুষ ১,৪১৭ মহিলা ১,৪৪৩। ৩টি মৌজার মোট পরিবার সংখ্যা ৭১৫।
মোগলমারি গ্রামে দু-টি মন্দির রয়েছে। একটি শিবমন্দির অন্যটি দেবী শীতলার মন্দির। এখানে শিবমন্দির থাকা সত্ত্বেও বহু বছর শিবের গাজন বন্ধ ছিল। গত কয়েক বছর ধরে আবার নতুনভাবে গাজন উৎসবটি চালু হয়েছে। সর্বজনীন পূজাগুলির মধ্যে লক্ষ্মী ও সরস্বতী পূজা অন্যতম। কয়েক বছর হল জাতীয় সড়ক-সংলগ্ন স্থানে সর্বজনীন দুর্গোৎসবও শুরু হয়েছে।
বাঙালির জীবনে উৎসবের শেষ নেই। বারো মাসে তেরো পার্বণ। মোগলমারি গ্রামের ক্ষেত্রেও একথা সর্বাংশে সত্য। এই গ্রামে পালনীয় কতকগুলি পালা পার্বণের সাধারণ পরিচয় নিম্নে দেওয়া হল —
বসুন্ধরা উৎসব
বর্ষার জলধারার জন্য প্রার্থনা করে সারা বৈশাখ মাস জুড়ে পালিত হয় বসুন্ধরা উৎসব। মাটির ছোটো হাঁড়িতে ফুটো করে বৃষ্টির অনুকরণে তুলসী গাছের মাথায় জল দেওয়া হয়।
ষষ্ঠী পূজা
ভাদ্র মাসে গ্রামটিতে লৌকিক দেবী ষষ্ঠীর পূজা হয়। মাটির পুতুলকে ষষ্ঠীর আদল দিয়ে তাঁর আরাধনা করা হয়। সন্তানের মঙ্গল কামনার্থে গ্রামের প্রায় সমস্ত মায়েরাই এই পূজায় অংশগ্রহণ করেন। ঘরে ঘরে মুড়কি, তিলের নাড়ু, নারকেল নাড়ু, লুচি, সুজি ইত্যাদি নানা ধরনের পদ তৈরি করা হয়।
জন্মাষ্টমী এবং রাধাষ্টমী ব্রত
ভাদ্রমাসে মোগলমারিতে আরও দু-টি ব্রত পালন করা হয়। কৃষ্ণের জন্মতিথিতে জন্মাষ্টমী এবং তার পনেরো দিন পরে রাধার জন্মতিথিকে স্মরণ করে রাধাষ্টমী। উভয় ব্রতের ব্রতীরা সারাদিন উপোস করে থাকেন। রাতে লুচি, সুজি, তালের বড়া, নারকেল নাড়ু প্রভৃতি দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করে নিজেরাও খাওয়া-দাওয়া করেন।
ডাক সংক্রান্তি
আশ্বিন মাসের সংক্রান্তিকে বলে ডাক সংক্রান্তি। ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে গ্রামের সমস্ত মানুষই এই পার্বণটি পালনে মেতে ওঠেন। এই পার্বণে প্রত্যেকের বাড়িতে কমপক্ষে ৭টি তরকারি রান্না করা হয়। এর মধ্যে ৭ প্রকারের শাক একসঙ্গে মিশিয়ে শাকভাজা পদটি তৈরি হয়। এই পার্বণে ৭টি শাকের তৈরি এই পদটি অবশ্যই থাকে।
বঁাধন-পরব
মূলত তপশিল উপজাতির মানুষেরা এই পরব পালন করে। গ্রামীণ জীবনে গোরু একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং মূল্যবান প্রাণী। গোরুর উপযোগিতাকে স্বীকার করে নিয়ে, তাকে দেবত্বের মর্যাদায় উন্নীত করে কালীপূজার সময় এই অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়।
পঞ্চক
কার্তিক মাসে পঞ্চক পার্বণটি পালন করা হয়। পাঁচদিন ধরে কীর্তন সহযোগে দেবতার আরাধনা চলে। আবার হাঁড়ির ভিতর প্রদীপ জ্বেলে মাচায় তুলে রাখা হয়। এই পাঁচদিন গ্রামে নিরামি ভোজন করা হয়।
পৌষ-পার্বণ
পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে পিঠে-পুলির মাসে মাংস খাওয়াও প্রচলিত রয়েছে মোগলমারিতে। এই দিন তপশিল উপজাতির শিশুরা খড়ের তৈরি পুতুল নিয়ে সাধারণ জাতির লোকেদের বাড়িতে গান গেয়ে নাচাতে আসে। বিনিময়ে তাদের খাওয়ানো হয় অথবা চাল দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও বহুবিধ পালা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায় মোগলমারিতে। বাংলা ও উড়িষ্যার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের প্রায় সব গ্রামেই উল্লেখিত পার্বণ ও উৎসব পালিত হয়ে থাকে। বর্তমান প্রবন্ধের মূল বিষয় থেকে সরে যাওয়ার আশঙ্কায় বেশি কথা বলার লোভ সংবরণ করলাম।
ভাষার প্রবাহ ভৌগোলিক সীমানা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। মোগলমারি গ্রামটির অবস্থান পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িষ্যার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। তাই, মোগলমারি এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলের চলিত কথ্যভাষা বাংলা এবং ওড়িয়ার অপূর্ব সংমিশ্রণে সৃষ্ট। প্রায় সমস্ত গ্রামবাসীই শুদ্ধ বাংলার চেয়ে প্রচলিত কথ্য ভাষায় কথা বলতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। একে আমরা দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলা উপভাষা বলতে পারি। প্রচলিত একটি ছড়ায় এই ভাষার নমুনা পেশ করা যেতে পারে—
ন্যাড়া মাথা বেল কুঁড়া
বেল তলাকে যায়।
লোকের ঘরে আঁইঠা ভুজা
কুড়ি কুড়ি খায়।
পাশ্চাত্যের দার্শনিক Bacon একদা বলেছিলেন—
‘The genius, coit and spirit of a nation are discovered by their proverbs.’
—একথা স্বীকার করতেই হয় যে, প্রবাদের সত্যতার মধ্যেই রয়েছে সামাজিক সত্য, এবং এর মধ্য দিয়েই একটি জাতির সামগ্রিক জীবনচর্যারও পরিচয় পাওয়া যায়। মোগলমারিতে প্রচলিত কয়েকটি প্রবাদ নিম্নে উল্লেখ করা হল—
১. কার্তিকের সাত মৌসুরের আট
উড়িয়ঁদ যায় বাটে বাট
উড়িয়ঁদ যদি রুষে
বুড়া হালিয়া পাকা ধান
ঘরে নাহি পোশে।
২. মাঘের আধে
কম্বল কাঁধে।
৩. বামহন যাইছে ঘর
লাঙল তুলি ধর।
‘দ্বন্দ্ব’ বা ‘ধন্দ’ শব্দ থেকে ‘ধাঁধা’ শব্দটি আগত বলে মনে করা হয়। শব্দটি এখানে সন্দেহ অর্থে ব্যবহৃত। সংস্কৃত প্রহেলিকা, প্রভালিকা, ব্রহ্মোদয় প্রভৃতি শব্দও ধাঁধার প্রতিশব্দ। ওড়িয়াতে ধাঁধাকে বলে পজেড়িকা। মোগলমারির প্রচলিত ভাষায় ধাঁধাকে বলে ঢক।
প্রকৃতপক্ষে ধাঁধা প্রাণীবাচক, গূঢ় অর্থবাহক রহস্যময় শব্দসম্ভারে পূর্ণ। নিম্নে মোগলমারির কথ্য ভাষায় প্রচলিত কয়েকটি ধাঁধার উদাহরণ দেওয়া হল—
১. এ্যাবড়া খ্যাবড়া লোহার বাড়ি
যে না কইতে পারে তার বাপ হাড়ি।
উত্তর : খেজুর গাছ।
২. বন-নু বারাইলা পেতি
পেতি কইলা তোর ভাতে মুতি
উত্তর : লেবু।
ঐতিহাসিক স্থান হওয়া সত্ত্বেও মোগলমারিতে আজ পর্যন্ত কোনো পুঁথি আবিষ্কৃত হয়নি। তবে প্রণতি জানার ব্যক্তিগত সংগ্রহে টেরাকোটার সিলের ওপর খোদাই করা একটি ব্রাহ্মীলিপি রয়েছে, যা তাঁর পিতা বঙ্কিমচন্দ্র জানা প্রায় ৩০ বছর আগে বাড়ি তৈরি করার সময় মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, লিপি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় পাঠোদ্ধার হয়েছে এই লিপির। এতে লেখা রয়েছে—‘ধর্মের জন্য প্রভূত ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।’ ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ড. অশোক দত্তের পরিচালনায় মোগলমারির বৌদ্ধবিহারটি খনন করার সময় একটি টেরাকোটার ‘সিল’ আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, সংস্কৃত ভাষায় পূর্বভারতীয় সিদ্ধমাতৃকা লিপিতে পাঁচ লাইনের বৌদ্ধধর্ম পর্যায় খোদিত রয়েছে ওই ‘সিল’-এ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও লিপি-বিশারদ রজত সান্যালের অনুমান ‘সিল’টি অষ্টম-নবম শতকের। তাঁর মতানুযায়ী, বৌদ্ধধর্মের প্রসারকালে বুদ্ধের যে বাণীগুলি বেশি প্রসিদ্ধ হয়েছিল, তার মধ্যে এটি অন্যতম। এ ছাড়া, পরবর্তীকালে খননের সময়ও কয়েকটি ‘সিল’ পাওয়া গেছে।
মোগলমারি সংলগ্ন তিনটি মৌজা (পূর্বে মনোহরপুর, পশ্চিম ও দক্ষিণে জয়রামপুর, উত্তরে পুঞ্জা বা ঝোরি) অতীতে গভীর পরিখা দ্বারা ঘেরা ছিল। বর্তমানের মজা দীঘি দেখলেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদগণের অনুমান, অতীতে মোগলমারির খুব কাছেই ছিল সুবর্ণরেখা নদী।
মোগলমারিতে বর্তমানে কমবেশি ৭টি পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে কিছু পুকুরে মাছচাষ হয়। সংস্কারের অভাবে পুকুরগুলির জল বর্তমানে স্নানের জন্য ব্যবহার করা হয় না বললেই চলে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই কৃষিজীবী। কৃষিকার্যের মধ্যে মূলত আমন ধান এবং বোরো ধানের চাষই উল্লেখযোগ্য। তৈলবীজ হিসেবে অল্প পরিমাণে তিল এবং সরিষা চাষ প্রচলিত। এ ছাড়াও চৈতালী মুগডাল ও বিরি (মাসকলাই) চাষ হয়ে থাকে। সেচব্যবস্থা প্রধানত বৃষ্টি এবং স্যালো টিউবওয়েল- নির্ভর। এ ছাড়া মাছচাষ, গোরু-ছাগল এবং মুরগি পালন করেও জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন অনেকে। জাতীয় সড়কের পাশে কেউ কেউ ছোটো বা মাঝারি মাপের ব্যাবসা করে থাকেন।
কুটিরশিল্পের মধ্যে বঁাশের ঝুড়ি তৈরি উল্লেখযোগ্য। তপশিলি উপজাতির মাহালি সম্প্রদায় এই কাজে দক্ষতার দাবি রাখেন। এ ছাড়া, কিছু পরিবার মুড়ি তৈরির কাজে যুক্ত।
গ্রামের শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে মোগলমারিতে দু-টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বর্তমান—মোগলমারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শ্যামাচরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়। জাতীয় সড়ক এবং রেললাইনের অবস্থানের কারণে গ্রামের ছোট্ট শিশুদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দু-টি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি সুসংহত শিশুবিকাশ কেন্দ্রও রয়েছে।
মোগলমারির জনজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে গ্রামের একমাত্র ক্লাব ‘মোগলমারি তরুণ সেবা সংঘ ও পাঠাগার’, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সদর্থক ভূমিকা পালন করে আসছে বিগত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে। আধুনিক পশ্চিমবঙ্গের ‘ক্লাব-কালচার’-এর থেকে যা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং শিক্ষণীয় উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত। সদ্যপ্রয়াত কালিপদ মিশ্র এবং তাঁর কয়েকজন বন্ধু প্রয়াত কুমুদরঞ্জন ব্যানার্জী, প্রয়াত মন্মথনাথ গিরি, প্রয়াত বঙ্কিমচন্দ্র জানা এবং আরও কয়েকজন ব্যক্তি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে এই ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জয়রামপুরের তৎকালীন জমিদার প্রয়াত যতীন্দ্রনাথ চন্দ মোগলমারির ‘সখিসোনার ঢিবি’ এবং সংলগ্ন কিছু জমি ক্লাবকে দান করেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে ক্লাবের নাম ছিল ‘মোগলমারি তরুণ সেবা সংঘ’। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ক্লাবটির নামের সঙ্গে ‘ও পাঠাগার’ যুক্ত হয় এবং ক্লাবে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। অতীতে ক্লাবের উদ্যোগে প্রতিবছর মাঘ মাসের ৯ থেকে ১২-১৩ তারিখ পর্যন্ত মেলা হত, সাথে থিয়েটার। ক্লাবের সদস্যরাই ছিলেন থিয়েটারের অভিনেতা। ‘টিপু সুলতান’, ‘হায়দার আলি’, ‘সাহেব-বিবি-গোলাম’, ‘রামকৃষ্ণ’, ‘ঊষাহরণ’ প্রভৃতি নাটক তাঁরা মঞ্চস্থ করেন। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসতেন তাঁদের অভিনয় প্রত্যক্ষ করতে। সে-সময় এই অঞ্চলে ক্লাবের থিয়েটার-ই ছিল অন্যতম প্রধান বিনোদনের মাধ্যম।
মোগলমারি তরুণ সেবা সংঘ ও পাঠাগার বর্তমানে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে যুক্ত। ক্লাবের উদ্যোগেই এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে থ্যালাসেমি সচেতনতা শিবির, এইডস সচেতনতা শিবির, চক্ষুপরীক্ষা শিবির। প্রতি বছর চৈতন্যপুর নেত্র নিরাময় নিকেতন (হলদিয়া, চৈতন্যপুর) দ্বারা একবার এবং শংকর নেত্রালয় (মুকুন্দপুর, ই এম বাইপাস, কলকাতা) দ্বারা একবার বিনামূল্যে চক্ষুপরীক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
১৪১ দাগে অবস্থিত খেলার মাঠটি গ্রামের একমাত্র খেলার মাঠ, যার সংস্কার হয়েছে মোগলমারি তরুণ সেবা সংঘ ও পাঠাগারের উদ্যোগে। কিন্তু অত্যন্ত উদবেগের বিষয় এই যে, সরকারি খাস খতিয়ানে ‘খেলার মাঠ’ হিসেবে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও এর বেশ কিছু অংশের পাট্টা বিলি হয়ে গেছে। যাদের মধ্যে বিলি হয়েছে তাদের অনেকেরই আবার নিজস্ব বাস্তুজমি রয়েছে।
অন্যান্য বহু গ্রামের মতো মোগলমারিতেও সাপ্তাহিক হাট বসে। প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতি শনিবার বিকেলে ক্লাবের মালিকানাধীন ওই ঢিবিতে হাটটি বসে। বর্তমানে ওই ঢিবিতে খনন চলতে থাকায় হাট স্থানান্তরিত হয়েছে। এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে এই হাটের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
মোগলমারির অন্যতম গর্ব বৌদ্ধবিহারটি মোগলমারি তরুণসেবা সংঘ ও পাঠাগারের জমিতেই অবস্থিত। এই বৌদ্ধবিহার সংলগ্ন স্থান এবং সমগ্র গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ইটের কঙ্কাল, দেওয়াল, চাতাল, নিবেদন স্তূপ ইত্যাদি। ২০০৩-০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৭ বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বৌদ্ধবিহার ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে খননকার্য পরিচালনা করেছে। পরবর্তীকালে রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করেছে। খননও হচ্ছে প্রতিবছর। প্রতিবারই মোগলমারি তরুণ সেবা সংঘ ও পাঠাগার সক্রিয় সহযোগীর ভূমিকায় থেকেছে।