অধীরা

চির-অধীরার বিরহ-আবেগ
          দূরদিগন্তপথে
ঝঞ্ঝার ধ্বজা উড়ায়ে ছুটিল
          মত্ত মেঘের রথে।
দ্বার ভাঙিবার অভিযান তার,
          বারবার কর হানে,
বারবার হাঁকে “চাই আমি চাই’,
          ছোটে অলক্ষ্য-পানে।
     হুহু হুংকার ঝর্ঝর বর্ষণ,
সঘন শূন্যে বিদ্যুৎঘাতে
     তীব্র কী হর্ষণ।
          দুর্দাম প্রেম কি এ–
প্রস্তর ভেঙে খোঁজে উত্তর
          গর্জিত ভাষা দিয়ে।
মানে না শাস্ত্র, জানে না শঙ্কা,
          নাই দুর্বল মোহ–
প্রভুশাপ-‘পরে হানে অভিশাপ
          দুর্বার বিদ্রোহ।
করুণ ধৈর্যে গনে না দিবস,
          সহে না পলেক গৌণ,
তাপসের তপ করে না মান্য,
          ভাঙে সে মুনির মৌন।
মৃত্যুরে দেয় টিটকারি তার হাস্যে,
মঞ্জীরে বাজে যে-ছন্দ তার লাস্যে
          নহে মন্দাক্রান্তা–
প্রদীপ লুকায়ে শঙ্কিত পায়ে
          চলে না কোমলকান্তা।
নিষ্ঠুর তার চরণতাড়নে
          বিঘ্ন পড়িছে খসে,
বিধাতারে হানে ভর্ৎসনাবাণী
          বজ্রের নির্ঘোষে।
নিলাজ ক্ষুধায় অগ্নি বরষে
          নিঃসংকোচ আঁখি,
ঝড়ের বাতাসে অবগুণ্ঠন
          উড্ডীন থাকি থাকি।
মুক্ত বেণীতে, স্রস্ত আঁচলে,
          উচ্ছৃঙ্খল সাজে
     দেখা দেয় ওর মাঝে
অনাদি কালের বেদনার উদ্‌বোধন–
সৃষ্টিযুগের  প্রথম রাতের রোদন–
যে-নবসৃষ্টি অসীম কালের
          সিংহদুয়ারে থামি
হেঁকেছিল তার প্রথম মন্ত্রে
          “এই আসিয়াছি আমি’।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *