১৫.
অনেকক্ষণ হলো গোল্ডরূমে একটা টেবিল দখল করে বসে আছে প্যাট্রিক হল। স্টাড গেমের হাউসম্যানের আমন্ত্রণ আজ উপেক্ষা করেছে সে। ঝলমলে গোল্ডরূম সেলুনের সমস্ত আকর্ষণও আজ রাতে তার বিরক্তি দূর করতে পারছে না।
আরও অনেক বড় মাপের একটা জুয়ায় কিভাবে চাল দেবে ভাবছে সে। বাইশ হাজার ডলারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়া যায় কিনা হিসেব কষছে। মনে অনেক রকমের সন্দেহ দোলা দিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, দুচোখে গরু দেখতে পারে না তারপরও বক্স বিতে গেল কেন জোডি? বড় ভাইকে কতটুকু বলেছে ছোঁকরা? খুনের জায়গায় আবার যেতে দশবার ভাবে যে-কোন খুনী। দুভাই কি তাকে সন্দেহ করেই টোপ ফেলেছে?
গর্তে পড়ে থাকা .৪৫ সিক্সগানটা খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। হাজার হাজার গর্ত খুঁজে ওটা পাওয়া গেলেও কেউ ওকে দোষী প্রমাণিত করতে পারবে না। ধরা পড়ে যাওয়ার মত আর কোন সূত্র আছে কিনা জ কুঁচকে ভাবল প্যাট্রিক হল।
সন্দেহ হলেই ওকে সার্চ করবে অ্যাডাম। সে অধিকার ডেপুটি শেরিফ হিসেবে আছে তার। সার্চ করলেই ওর ওয়ালেটে পেয়ে যাবে দুটো কাগজ। একটা নব্বই দিনের মধ্যে বাইশ হাজার ডলার। পরিশোধের লিখিত রসিদ, অন্য কাগজটা জোডির ব্যাংক প্রত্যাখ্যাত নকল চেক। এই কাগজ দুটো র্যাঞ্চার ছাড়া আর কাউকে দেখায়নি সে। সই করেছে বলে জোডি রসিদের ব্যাপারটা জানে। কিন্তু সব চেক ছিঁড়ে যে একটা নকল চেক সে প্রমাণ হিসেবে রেখে দিয়েছে সেটা জানে না। জোডির ধারণা লিখিত রসিদ দিয়েছে, কাজেই সবকটা চেক ছিড়ে ফেলেছে সে। আপন মনে হাসল প্যাট্রিক হল। বাইশ হাজার ডলার আদায় করার পরও নকল চেকের গুণে জোডিকে ছিবড়ে বানিয়ে। ফেলতে পারবে সে। পশ্চিমে প্রতারণার দায়ে কারও জেল হলে সমাজে। সেই লোক টিকতে পারে না। নাহ্, গরু বিক্রির পুরো ছাপান্ন হাজার ডলার আদায় না করে ছোঁকরাকে ছাড়া যায় না, সিদ্ধান্ত নিল জুয়াড়ী।
কি ব্যাপার, আজ একা বলে যে? সিসিলিয়া এসে দাঁড়াল প্যাট্রিক হলের পাশে।
এমনি, ডার্লিঙ, উঠে দাঁড়িয়ে কাউন্টারের দিকে হাঁটতে শুরু করে বলল সে। সিসিলিয়ার নগ্ন কাঁধ দেখার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে আছে তার।
একটা খালি এনভেলপ দাও, চিপস ভাঙিয়ে ক্যাশ করার পে, কাউন্টারে গিয়ে ক্যাশিয়ারকে বলল হল।
নীল রঙের একটা ম্যানিলা এনভেলপ ক্যাশিয়ারের হাত থেকে নিয়ে ওপরে নিজের নাম লিখল সে। খামের মধ্যে জোডির রসিদ আর নকল চেকটা ভরে আঠা লাগাল। তারপর ক্যাশিয়ারের হাতে দিয়ে বলল, সেফে রেখে দাও।
মাথা ঝাঁকিয়ে মুখে মেকি হাসি ধরে রেখে নির্দেশ পালন করল ক্যাশিয়ার। গোল্ডরূমের মত জুয়া সর্বস্ব সেলুনে এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে। বড় অঙ্কের টাকা জিতে বাড়ি যাওয়ার পথে বিপদ হতে পারে ভেবে অনেক জুয়াড়ীই সেলুনের সেফে টাকা রেখে যায়। আমানত; রক্ষার অলিখিত নিয়ম মেনে চলে সেলুনগুলো। গোল্ডরূমের সেফে টাকা বা মূল্যবান কাগজপত্র রাখা ব্যাংকেরই মত নিরাপদ।
বার কাউন্টারে এসে সিসিলিয়ার মান ভাঙাতে ড্রিঙ্ক অফার করল সে। কিছুক্ষণ তোষামোদ করতেই একটু আগের অবহেলা ভুলে উচ্ছল হয়ে উঠল সিসিলিয়া, প্যাট্রিক হলের কাঁধে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করল, নতুন গোলাগুলির খবরটা জানো?
না তো, ডার্লিঙ!
আজ বিকেলে বেল স্প্রিঙস স্টেজ স্টেশনে ওরা আরেকটু হলেই পাইক হান্নাকে ধরে ফেলত। করাল ম্যানের মুখে শুনলাম লোকটা। ডেপুটি অ্যাডামকে আহত করে ল্যানডারের পথ ধরেছে।
পুরো খবর জানার কোনও আগ্রহ প্যাট্রিক হলের নেই বুঝতে পেরে কষ্ট করে বিস্তারিত বর্ণনাটা পেটের মধ্যে চেপে রাখল সিসিলিয়া, তবে পরবর্তী রূপমুগ্ধ কাস্টোমারকে শুনিয়েই ছাড়বে।
সেলুনের সেফে নকল চেকটা রাখতে পেরে স্বস্তি অনুভব করছে প্যাট্রিক হল। ওকে সার্চ করে ওটা পাওয়া গেলে সন্দেহের উদ্রেগ হতে পারত। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না ওই চেক দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলের ইচ্ছে ছিল তার, বা র্যাঞ্চারকে সে খুন করেছে। তবু কথা বলার সুযোগ। দিতে চায় না সে, শহরবাসীদের কথা বলার ধরনটা এখানে ভাল না। অনেক সন্দেহভাজন খুনীকেই কোর্ট থেকে ছিনিয়ে এনে ফাঁসিতে লটকেছে রলিন্সের জনতা।
প্যাট্রিক হল সিদ্ধান্ত নিল র্যাঞ্চ পর্যন্ত জোডিকে ধাওয়া করে যাবে না। গরু দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে শিগগিরই রলিন্সে আসতে বাধ্য হবে ছোঁকরা।
.
মাঝরাত পার করে গোল্ডরূম থেকে বেরল সে। এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা এসে ঢুকল হোটেলে। লণ্ঠনের আলোয় মৃদু আলোকিত হয়ে আছে লবি। হোটেল ক্লার্ক নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে একটা কাউচে। লোকটাকে না জাগিয়ে কাউন্টার থেকে চাবি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল প্যাট্রিক হল। কী হোলে চাবি ঢুকিয়ে মোচড় দিয়ে বুঝল দরজাটা খোলা। ঠেলা দিয়ে পাল্লা সরাতেই ভেতরে আলো জ্বলছে দেখতে পেল। ঘরের এককোণে চেয়ার টেনে বসে আছে ডেপুটি অ্যাডাম বেঞ্চলি। মাথায় বাধা লাল ব্যাণ্ডেজটা একসময় সাদা ছিল বোঝা যায় কাপড়ের রক্ত না লাগা অংশ দেখে।
ঢুকলে কি করে? স্বাভাবিক চেহারায় গলার স্বর নামিয়ে জানতে চাইল জুয়াড়ী।
তুমি যেভাবে ঢুকেছু। বসো, তোমার কাছে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব। চাই আমি।
দাঁড়িয়েই থাকল প্যাট্রিক হল। সার্চ ওয়ারেন্ট এনেছ?
না। তবে আনতে পারব।
ইচ্ছে থাকলে সার্চ করতে পারো, লুকানোর কিছু নেই আমার, বাম গোড়ালির টানে পেছনে দরজাটা বন্ধ করে দিল প্যাট্রিক হল।
আছে। তোমার ৩৮ সিক্সগানটা লুকানো হোলস্টার থেকে বের করে দেখাও।
কোটের ভেতরে হাত গলিয়ে সিক্সগান বের করে এগিয়ে দিল জুয়াড়ী। ওটা ওর পেছনে ড্রেসারের ওপর নামিয়ে রাখল অ্যাডাম। ডেনভার থেকে এত দূরে এসে বক্স বিতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল কেন তোমার?
জোডি কোথায় আছে জানতে এসেছিলাম। ওর কাছে টাকা পাই আমি। ভেবেছিলাম র্যাঞ্চার হয়তো জানবে,কোথায় আছে তার ছেলে।
তুমি জানতে সে কোথায় ছিল। লুকানোর কিছু না থাকলে মিথ্যে বলছ কেন?
যা ইচ্ছে বলো, তোমার কাছে অস্ত্র আর শেরিফের ব্যাজ আছে, প্যাট্রিক হলের হাসিতে ব্যঙ্গ ঝরে পড়ল। আমাকে মিথ্যুক বলেছ বলে যদি গায়ে হাত তুলি, ওরা আমাকে জেলে ভরবে তোমার মিথ্যে কথা বিশ্বাস করে।
যা জিজ্ঞেস করছি ঠিক ঠিক জবাব না দিলে আমিই তোমাকে জেলে ভরব। জোডির কাছে কত পাও তুমি?
সেটা জোডিকেই জিজ্ঞেস কোরো।
জোডিকে দিয়ে কোনও রসিদে সই করিয়েছ তুমি?
আমি করাব কেন! নিজের ইচ্ছেয় সই করেছে সে।
কাগজটা কোথায়?
নিরাপদ জায়গায় রেখেছি।
তোমার ওয়ালেট দেখাও।
ওয়ালেট বের করে অ্যাডামের দিকে ছুঁড়ে দিল প্যাট্রিক হল। ওটা লুফে নিয়ে উঠে দাঁড়াল অ্যাডাম। ভেতরটা তন্নতন্ন করে খুঁজেও। গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাগজপত্র পেল না। টাকাগুলো ওয়ালেটে ভরে ফেরত দিল সে, নতুন পথে জুয়াড়ীর দুর্বলতা আবিষ্কার করার চেষ্টা। করল। স্যাণ্ড ক্রীকে যাওয়ার পথে ডেভিড মুরের র্যাঞ্চে যখন থেমেছিলে। অনেক কথাই নিশ্চয়ই বলেছে কুক।
হয়তো বলেছে। আমার ঠিক মনে নেই।
জেরাল্ড, স্ট্যানলির মনে আছে। আমার বাবার উইলের ব্যাপারে কথা বলেছিল কুক।
তো?
টেলিগ্রাম পড়ে তুমি জানতে পেরেছিলে ক্যাটল বেচে ফেলা হয়েছে, বাবার পুরো সম্পত্তি তখন নগদ টাকায়। বাবা মারা গেলে উইল অনুযায়ী সব জোডি পাবে।
আলোচনা কোনদিকে যাচ্ছে বুঝতে পেরে চেহারা কালো হয়ে উঠল প্যাট্রিক হলের। ভয়ের ভাব গোপন রাখতে গর্জে উঠল, তোমার ফালতু প্যাচাল অনেক শুনেছি, এবার দূর হও!
আরেকটা কথা তোমাকে শুনতে হবে, উঠে দাঁড়িয়ে জুয়াড়ীর চোখে চোখ রেখে বলল অ্যাডাম, জিজ্ঞেস করে দেখো বিউয়েলদের, জানালা গলে বেরিয়ে আমিও বক্স বিতে গিয়েছিলাম।
সিক্সগান আর ব্যাজের জোরে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারছ, ঠোঁটের কোণ বেঁকে গেল প্যাট্রিক হলের, নাহলে এতক্ষণে ঘর থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিতাম।
শার্ট থেকে ব্যাজ খুলে ড্রেসারের ওপর রাখল অ্যাডাম। সিক্সগানটা নামিয়ে রাখল ওটার পাশে। ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে না পারলে কাল সকালে জেলখানায় ঘুম ভাঙবে তোমার।
প্রথম ঘুসি ছুঁড়েই অ্যাডাম বুঝতে পারল রাগের মাথায় বোকামি করে ফেলেছে। আহত, ক্লান্ত শরীরে ওর জোর নেই লড়াই করার মত। প্যাট্রিক হলের জ্যাব মুখের ওপর পড়ায় ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে এল ওর। শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাল। মাথা ঝাঁকিয়ে দৃষ্টি স্বচ্ছ করার আগেই চোয়ালের হাড়ে প্রচণ্ড শক্তিতে আছড়ে পড়ল জুয়াড়ীর ডান হাত।
দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে পড়েই যেত অ্যাডাম। তেড়ে আসা প্যাট্রিকের একটা ঘুসি এড়াতে পারু। সে মাথা সরিয়ে নেয়ায়। পুরো শক্তিতে হাতটা দেয়ালে আছড়ে পড়ায় ব্যথায় কেঁউ করে উঠল জুয়াড়ী। পেটে পরপর কয়েকটা ঘুসি খেয়ে হাঁ করে বাতাস টানতে টানতে পিছিয়ে গেল দুপা। তারপর পরস্পরের ওপরে ঝাপিয়ে পড়ল ওরা আবার। প্যাট্রিক হলের পায়ে বেধে চেয়ারটা মেঝেতে আছড়ে পড়ায় বিকট শব্দ হলো মাঝরাতের নিস্তব্ধতায়।
কি, শুরু হলোটা কি? পাশের ঘরের লোকটা আচমকা আওয়াজে ঘুম থেকে উঠে চেঁচিয়ে উঠল গলা ফাটিয়ে। ধুপধাপ শব্দে খুলে গেল। করিডরের দুপাশের বেশিরভাগ দরজা। স্যাণ্ডেল পরা পায়ের শব্দ এগিয়ে আসতে শুরু করল প্যাট্রিক হলের ঘরের দিকে।
ওরা নিঃশব্দে হাত চালাচ্ছে, দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল আট দশজন। প্রত্যেকেই অজস্র প্রশ্ন করে কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করল ওদের দুজনকে ছাড়িয়ে দিয়ে। আমার বাবাকে খুন করেছে এই লোক, অ্যাডামের সংক্ষিপ্ত উত্তরে চুপ হয়ে গেল জুয়াড়ী ছাড়া সবকজন।
আমি খুন করিনি! লোকগুলোর চোখে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠছে। দেখে আতঙ্কে চেঁচাল প্যাট্রিক হল, সবাই জানে তখন আমি পাঁচ মাইল দূরে ছিলাম।
হৈচৈ শুনে ঘুম থেকে উঠে স্ট্যানলিও দেখতে এসেছে কি হলো। অ্যাডামের হাত ধরে ঘরের একপাশে টেনে নিয়ে গিয়ে সে বলল, প্রমাণ থাকলে বলো, অ্যাডাম, ওকে জেলে ভরে দিই। অ্যাডাম বুঝতে পারছে নিশ্চিত কোনও প্রমাণ ওর হাতে নেই। প্যাট্রিক হলের সাথে তর্কে জড়িয়ে সব জানিয়ে দেয়ার আগেই ডেপুটি আর লইয়ারের সাথে আলাপ করে নেয়া উচিত ছিল। বিউয়েলদের ওখানে কি ঘটেছে সংক্ষেপে ডেপুটিকে জানাল সে নিচুস্বরে।
আর কিছু? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল স্ট্যানলি।
আমরা সবাই জানি বাবাকে খুন করলে তার লাভ হবে।
হ্যাঁ, জানি। কিন্তু এই জানাটাই যথেষ্ট নয়, কোর্টে প্যাট্রিক হলকে দাঁড় করালে বিচারক দেখতে চাইবে প্রমাণ।
তারমানে আমরা ওকে অ্যারেস্টও করতে পারব না?
সন্দেহভাজন খুনী হিসেবে চব্বিশ ঘণ্টা ওকে জেলে ভরে রাখা যায়। আইন আছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ওর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারলে ছেড়ে দিতে হবে।
তাহলে ওকে তুমি জেলে ভরো, স্ট্যানলি, অনুরোধের সুরে বলল, অ্যাডাম, আশা করছি ওকে দোষী সাব্যস্ত করার মত কিছু একটা এরই মধ্যে পেয়ে যাব।
ঘুরে দাঁড়াল স্ট্যানলি, জুয়াড়ীর হাত ধরে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেল।
ঘরে উপস্থিত একজনও অ্যাডামকে দোষ দিল না। ওরা অ্যাডামের মনের অবস্থা বুঝতে পারছে। ঘুম থেকে ডেকে তুলে যদি ওদের বাবাকে, হত্যা করা হত, আইনের প্রতি অতি শ্রদ্ধা থাকত না ওদেরও।
গোলমালের আর কোনও সম্ভাবনা নেই দেখে একজন দুজন করে নিজেদের ঘরে ফিরে গেল ওরা। ঘরটা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পর অ্যাডাম ডেস্কের ওপর থেকে ব্যাজ আর সিক্সগানটা তুলে নিল, দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে এল ক্লান্ত পায়ে, নিজের ঘরে ঢুকে আছড়ে পড়ল বিছানায়। ঘুমিয়ে গেল চোখ বোজার সঙ্গে সঙ্গেই।
১৬.
সেলের দরজা খোলার ধাতব শব্দে ঘুম ভেঙে গেল এডমণ্ড হুপারের। মাঝরাতে ঘুমিয়েছে সে। জানালায় আলো না দেখে বুঝল এখনও রাত। পাশের সেলে কাকে যেন ঠেলে ঢোকানো হলো। আবার আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে গেল দরজা। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করল হুপার।
কনস্টেবলের সাথে নতুন বন্দীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুনে বুঝতে পারল লোকটা সাধারণ চোর হ্যাঁচোড় নয়। উঠে বসে তাকাল কৌতূহলী চোখে। লণ্ঠনের হলদে আলোয় কনস্টেবল এডকে দেখা গেল দুই নম্বর সেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। সেলের ভেতরে দাঁড়ানো লোকটার চেহারা পোশাকে হুপারের মনে হলো হয় উঁচু শ্রেণীর প্রতারক, নাহলে শহুরে জুয়াড়ী।
আইন আমার কম জানা নেই, খেঁকিয়ে উঠল প্যাট্রিক হল। উকিলের সাথে কথা বলতে চাই আমি।
দুঃখিত চেহারায় মাথা নাড়ল কনস্টেবল। র্যাঞ্চারের খুনী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন কারও সাথে দেখা করবে না মিস্টার হিগিনস। রলিন্সে সে ছাড়া আপাতত আর কোনও উকিল নেই। ঘুরে দাঁড়িয়ে করিডরের দরজা বন্ধ করে অফিসে ফিরে গেল সে।
চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেছে হুপারের, কটে বসে ভাবছে সে। খবরের কাগজে র্যাঞ্চারের খুন হওয়ার ব্যাপারটা পড়েছে। র্যাঞ্চারের শবযাত্রার দিনই ওকে ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছিল লিঞ্চিঙ মব!
ঘটনাটা মনে পড়তেই শিউরে উঠল হুপার। পাশের সেলের। লোকটাই যদি র্যাঞ্চারের খুনী হয়ে থাকে, আবারও হামলা চালাতে, পারে উন্মত্ত জনতা। এবার হয়তো রাতের আঁধারে আসবে। কনস্টেবলের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে শুধু ওই লোককে খুন করতে নিয়ে যাবে না, ওকেও নিয়ে যাবে। ধূসর ভোরে ঘুম ভেঙে শহরবাসী হয়তো দেখবে র্যাঞ্চারের খুনীর পাশে টেলিগ্রাফ পোল থেকে ঝুলছে হবার্টের দোসর। তোমাকে ধরেছে কেন? মধ্যবর্তী শিকের ফাঁক দিয়ে পারের ফাঁসফেঁসে গলা শুনতে পেল জুয়াড়ী। বিনা কারণে, কাঁধ ঝাঁকাল সে। বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবে না।
মনে খানিকটা শান্তি ফিরে পেল হুপার। কটে শোয়র পর ঘুমাতে পারল।
সকাল সাতটার সময় ওদের ব্রেকফাস্ট এনে দিল অন্য একজন কনস্টেবল। নটায় প্যাট্রিক হলের সাথে কথা বলতে এল লইয়ার জ্যাক হিগিনস। চার্জ আনার মত কোনও তথ্য প্রমাণ হাতে না এলে মাঝরাতের আগেই শেরিফ তাকে ছেড়ে দেবে জানিয়ে চলে গেল।
তোমার বদলে যদি আমাকে ছেড়ে দেয়া হত! লইয়ার বিদায় নেয়ার পর প্যাট্রিক হলের দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলল হুপার।
কোনও জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না জুয়াড়ী। কটে শুয়ে পড়ল ঘুম দেয়ার জন্য। লোকটা নিশ্চিত তাকে ছেড়ে দেয়া হবে, মনে মনে বলল হুপার। ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে আপাত ভদ্রলোকের মুখোশের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে লোকটা।
বিকেল পর্যন্ত গভীর ভাবে প্রত্যেকটা আচরণ পর্যবেক্ষণ করে হুপারের মনে হলো প্যাট্রিক হল আর সে একই জগতের বাসিন্দা। সন্ধে নামার অনেকক্ষণ পর ভেতর থেকে একটা তাগাদা অনুভব করল সে। মনে হচ্ছে মূল্যবান সময় যেন ফুরিয়ে আসছে। হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে কি যেন একটা সুযোগ।
মাঝরাতের খানিক আগে হুপার বুঝতে পারল অবচেতন মন তাকে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। শিকে কপাল ঠেকিয়ে পায়চারিরত প্যাট্রিক হলকে সে ডাক দিল নিচু স্বরে। কৌতূহলী জুয়াড়ী কাছে এসে দাঁড়ানোর পর বলল, আমার হয়ে একটা খবর পৌঁছে দিতে পারবে একজনের কাছে?
কার কাছে? হুপারের অনুকরণে ফিসফিস করে জানতে চাইল প্যাট্রিক হল।
চারপাশে তাকিয়ে নিল হুপার মুখ খোলার আগে। তারপর বলল, হবার্ট। হিউ হুবার্টের কাছে।
আউট-লর নামটা রলিন্সে আসার আগেও শুনেছে জুয়াড়ী। এখানে, এসে শুনতে শুনতে কান পচে যাওয়ার দশা। এতদিন কৌতূহল অনুভব করত সে। কিন্তু এখন হুপারের মুখে নামটা উচ্চারিত হওয়ার পর সতর্ক হিসেবী মনটা সজাগ হয়ে উঠল ওর। পুরো ওয়াইয়োমিঙ খুঁজছে হিউ হবার্টকে! হুপারের কাছ থেকে লোকটার ছদ্ম পরিচয় জানতে পারলে। ভবিষ্যতে তথ্যটা কোন কাজে লেগে যায় কে জানে।
খবর পৌঁছে দিতে যে বলছ, কিসের খবর? অদম্য কৌতূহল চেপে নিরাসক্ত একটা ভাব চেহারায় ফুটিয়ে তুলল প্যাট্রিক হল।
শুধু বললেই হবে আমাকে যাতে এখান থেকে বের করে নিয়ে যায়। নাহলে শেরিফকে আমি ওর পরিচয় জানিয়ে দেব।
তোমাকে জেল ভেঙে বের করবে কিভাবে?
হুবার্টের জন্য এটা কোনও ব্যাপারই না। কনস্টেবলকে ডাক দিয়ে দরজা খুলিয়ে মাথায় বাড়ি মেরেই কাজ সেরে ফেলতে পারবে সে।
তারপর কনস্টেবলের জ্ঞান ফেরার পর তো হিউ হুবার্টের পরিচয় জানবে সবাই। সেই ঝুঁকি হুবার্ট নেবে কেন?
হাসি হাসি হয়ে গেল হুপারের চেহারা। কোনও ঝুঁকি নেই। হুবার্ট মাথায় বাড়ি মারার পর আজ পর্যন্ত বাঁচেনি কোনও লোক।
হিউ বার্টের ইতিহাস খবরের কাগজে পড়ে পড়ে মুখস্থ হয়ে গেছে। প্যাট্রিক হলের। মনে মনে সায় দিল সে হপারের কথায়। মুখে জিজ্ঞেস করল, কি করে বুঝলে সে আশেপাশেই আছে?
আমার সামনে যে সাতজনকে দাঁড় করানো হয়েছিল তাদের মধ্যে। সে-ও ছিল। হুবার্ট ভালমতই জানে সেদিনই কেন ওকে আমি ধরিয়ে দিইনি।.।
হুবার্টকে ধরিয়ে দিলে প্রমাণ হয়ে যেত কার্বনে দেয়া তোমার। স্বীকারোক্তি সত্যি।
হ্যাঁ। কিন্তু সেজন্যে না, আরেকটা কারণ আছে ওকে চিনিয়ে না দেওয়ার। হুবার্ট বন্দী হলে জেল থেকে বেরনোর শেষ সম্ভাবনাটাও নষ্ট হয়ে যেত আমার। তুমি ওকে বলবে আমি যদি ফাঁসিতে ঝুলতে বাধ হই, ওকেও ঝুলতে হবে আমার পাশে।
বেশ। সাতজন রাইডারের মধ্যে কে হিউ হুবার্ট বলে ফেলো।
ইশারায় জুয়াড়ীর কানটা মুখের কাছে আনতে বলল এডমণ্ড হুপার। তারপর ফিসফিস করে এত আস্তে নামটা বলল যে ঠিকমত শুনতে পেল না প্যাট্রিক হল।
আরেকবার বলো, গতবার ঠিক শুনেছে নিশ্চিত হবার জন্য বলল। সে।
কে যেন আসছে! পায়ের শব্দে চমকে পিছিয়ে গেল হুপার, কটে শুয়ে পড়ে ঘুমের ভান করল।
দরজা খুলে জেল করিডরের আবছা আলোয় এসে দাঁড়াল শেরিফ লেম্যান আর একজন কনস্টেবল। দুই নম্বর সেলের তালা খোলার শব্দ। শুনে অজান্তেই ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল হুপার। প্যাট্রিক হলকে নিয়ে ওরা দুজন চলে যাওয়ার পরে ভাবল, হুবার্টকে খবরটা পৌঁছে দেবে তো ওই লোক!
.
জেল থেকে সোজা গোল্ড রূমে গেল প্যাট্রিক হল। একপলক তাকিয়ে দেখেই হুপারের বলা লোকটা নেই নিশ্চিত হয়ে বেরিয়ে এল। আরও কয়েকটা সেলুন ঘুরেও কোথাও হিউ হুবার্টকে দেখতে পেল না। প্রত্যেকটা সেলুনেই আধমাতালরা নিষ্ঠুর চোখের তীক্ষ্ণ-দৃষ্টিতে বিদ্ধ করল তাকে। শহর ছেড়ে ভেগে যাওয়ার অযাচিত পরামর্শ দিল পুরো মাতালরা।
ভেতর থেকেও পালানোর তাগিদ অনুভব করছে প্যাট্রিক হল। লোকজন যদি ভেবে বসে সে-ই র্যাঞ্চারকে খুন করেছে, লটকে দিতে দেরি করবে না। এখনও সে শহরে ঘুরে বেড়াতে পারছে কারণ, বেশিরভাগ মানুষের ধারণা হিউবার্ট খুন করেছে বিলি বেঞ্চলিকে।
হেয়েস হোটেলের বারে সবশেষে গেল প্যাট্রিক হল। পেপারে পড়েছে লরা নামের এক পতিতা এই হোটেলেই গ্যানন উইলিসকে উঠতে বলে চিঠি লিখেছিল। লোকটার আসার কথা ছিল আরও দিন পনেরো পরে। সে মারা যাওয়ায় ম্যাভরিক প্লামারকে কাজে লাগিয়েছিল। হুবার্ট। সে-লোকও ডেপুটি স্ট্যানলির হাতে মরেছে। নতুন সঙ্গী যোগাড় করতে হলে হুবার্ট কি হেয়েস হোটেলই বেছে নেবে? শহরে আছে তো হুবার্ট?
হিউ হুবার্টকে বার কাউন্টারে বুক ঠেকিয়ে টুলে বসে থাকতে দেখে একই সাথে স্বস্তি আর ভয় অনুভব করল প্যাট্রিক হল। রলিন্সের রাস্তায় গত কয়েকদিনে সে অনেকবার দেখেছে লোকটাকে। কিন্তু এই প্রথম অনুভব করল সাপের মত শীতল একটা ভাব রয়েছে হুবার্টের চেহারায়। লক্ষ করল বা হাতে মদের গ্লাস ঠোঁটে ঠেকিয়েছে সে, ডান হাতটা সবসময় ঝুলছে হোলস্টারের কাছাকাছি।
পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়াটা হুবার্ট কেমন ভাবে নেবে বুঝতে না পেরে অসুস্থ বোধ করল প্যাট্রিক হল। অনেক নিরীহ লোকের রক্ত লেগে আছে বার্টের হাতে। ওকেও শেষ করে দেবে না তো!
নিজেকে শাসন করে শহর ছেড়ে পালানোর ইচ্ছেটা দমন করল। সে। ভয়ের জায়গা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে লোভ। বড় ধরনের কোনও কাজ সারবে বলে এত ঝুঁকি নিয়ে পড়ে আছে হিউ হুবার্ট কার্বন কাউন্টিতে। মধ্য সেপ্টেম্বরে করবে সে যা করার। সঙ্গী দরকারলোকটার। সাথে জুটে পড়তে পারলে হয়তো বড়সড় দাও মারা যাবে!
মনস্থির করে হুবার্টের পাশে বার কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে হুইস্কির অর্ডার দিল সে।
বার্ট আর বারটেণ্ডার দুজনেই চিনতে পারল প্যাট্রিক হলকে। র্যাঞ্চারের খুনী সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া লোকটার ছবি ছাপতে ভুল করেনি রলিন্সের পেপার। হুবার্টের কৌতূহলী দৃষ্টি মুখের ওপর অনুভব। করল জুয়াড়ী। বারটেণ্ডার ড্রিঙ্ক দিয়ে সরে যাওয়ার পর একঢোকে। হুইস্কিটুকু গিলে ফেলে ফিসফিস করে বলল, হুপার একটা খবর জানাতে বলেছে তোমাকে। কথা বলতে চাইলে দশ মিনিটের মধ্যে স্প্রিংয়ে চলে এসো।
জবাবের অপেক্ষা না করে হোটেল থেকে বেরিয়ে এল সে। বোর্ডওয়াক ধরে দক্ষিণে হাঁটতে শুরু করল। রলিন্সে শেষ বাড়িটা পার হয়ে বামে মোড় নিল। ওদিকে একটা ঝরনার পাড়ে ওয়্যাগন থামিয়ে, ক্যাম্প করে ফ্রেইটাররা। জায়গাটা রলিন্স স্প্রিঙ নামে পরিচিত।
আজকেও দুটো ওয়াগন ক্যাম্প করেছে ঝরনার পাড়ে। খুঁটিতে বাধা খচ্চরগুলো অস্থির ভঙ্গিতে থেকে থেকে পা ঠুকছে নরম, ভেজা মাটিতে। রাতের অন্ধকারেও ওয়াগনের সাদা ক্যানভাস দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। সবকিছু পরিকল্পনা মত এগোচ্ছে দেখে স্বস্তি কিছুটা হলেও ফিরে এল প্যাট্রিক হলের মনে।
লোকজন হিউ হার্টের সাথে তাকে দেখে ফেলুক চায় না সে। কিন্তু মানুষ জনের ধারে কাছে থাকাও দরকার। ভয়ঙ্কর খুনী হলেও হিসেবী লোক হিউ হুবার্ট, লোকজনের কাছে পরিচয় প্রকাশের ঝুঁকি থাকলে হয়তো ওকে খুন করতে চাওয়ার আগে দুইবার ভাববে। ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে, তবে জীবনটাই তো জুয়া। পাকা জুয়াড়ী হিসেবে নিজের অবস্থান ভালই বোঝে সে। হুপারের দূত হিসেবে হিউ হুবার্টের বিশ্বাসযোগ্যতা সে অর্জন করতে পারবে। কিন্তু হুবার্ট যদি তাকে দলে। টেনে না নেয়?
পিঠে সিক্সগানের নল চেপে বসার আগে প্যাট্রিক হল টের পায়নি পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে কেউ। নিঃশব্দে পৌঁছে গেছে হিউ হুবার্ট! যদিফঁদ পেতে থাকো, ঠাণ্ডা, মসৃণ স্বরে বলল সে, খুন হয়ে যাবে চোখের পলক ফেলার আগে।
দুহাত মাথার ওপর তুলল প্যাট্রিক হল, তারপর ঘুরে দাঁড়াল। সামনে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখে ধূর্ত হাসি ফুটে উঠল তার চেহারায়। কোনও ফাঁদ বা চালাকি নেই, অ্যাডলার।
১৭.
জুয়াড়ীর পেটে সিক্সগানের নল দাবিয়ে খোঁচা দিল জুডাস অ্যাডলার। তাড়াতাড়ি যা বলার বলে ফেলো।
হুপার বলেছে ট্রায়ালের আগেই ওকে জেল ভেঙে বের করে না আনলে তোমার পরিচয় বলে দেবে শেরিফকে।
ওয়্যাগনগুলোর কাছে একটা কুকুর ডেকে উঠল কয়েকবার। ঘুম জড়ানো স্বরে কথা বলল কে যেন। ইশারায় প্যাট্রিক হলকে পেছনে সরে আসার নির্দেশ দিল জুডাস অ্যাডলার ওরফে হিউ হুবার্ট। চল্লিশ গজ হটিয়ে একটা পড়ে থাকা গুড়ির ওপর জুয়াড়ীকে বসতে বাধ্য করল। তারপর নিচু গলায় স্বগোতক্তি করল, শেষ করে দেব না বিশ্বাস করব। বুঝতে পারছি না।
কথাটা শুনে, প্যাট্রিক হলের মেরুদণ্ড বেয়ে ভয়ের ঠাণ্ডা হোত নেমে গেল। শ্বাস বন্ধ করে ঢোক গিলে বলল, আমি মরলেও হুপার বা লরা তোমার পরিচয় ফাস করে দিতে পারে। কাঁপা কাঁপা হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া বুকের ভেতর টেনে নিল সে।
লরা বলবে না, হাসল অ্যাডলার। ফাঁসিতে ঝোলার আগে হুপারও মুখ খুলবে না। ওর ট্রায়াল ডিসেম্বরে। তখন সে আমার পরিচয় সবাইকে। জানালেও ক্ষতি নেই, ততদিনে বহুদূর চলে যাব আমি। সবাই মনে করছে র্যাঞ্চারকে আমি খুন করেছি। কিন্তু আমি করিনি, বুঝতে পারছি। কাজটা তোমার।
সতীর্থ খুনীর দেখা পেয়েছে বলেই হয়তো বার্টের গলাটা অপেক্ষাকৃত নরম, মনে হলো জুয়াড়ীর কাছে। খানিকটা সাহস ফিরে পেয়ে প্রতিবাদ করল সে, যুক্তি ছাড়া কথা বলছ।
আমরা দুজন ছাড়া স্যাণ্ড ক্রীকে র্যাঞ্চারকে খুন করার মত কেউ নেই। কাজটা তুমিই করেছ। গম্ভীর হয়ে গেল হুবার্টের চেহারা। আর আইন তোমাকে খুঁজছে বলেই এখনও আমার হাতে খুন হয়ে যাওনি তুমি।
তাছাড়া লোক দরকার তোমার, হাতের উল্টোপিঠে চেহারার ঘাম মুছে শুকনো গলায় বলল জুয়াড়ী।
আমি শুনেছি তুমিও একটা বিশেষ কাজেই ডেনভার থেকে এসেছ।
হ্যাঁ। বক্স বির জোডি বেঞ্চলির কাছে টাকা পাই। কিন্তু ওই র্যাঞ্চের সম্পত্তি ভাগাভাগির আগ পর্যন্ত আরও দুতিন মাস অপেক্ষা করতে হবে আমাকে। দুএক মুহূর্ত অপেক্ষা করে প্রশ্নটা করল সে, এই দুই মাসের মধ্যে করার মত কোনও কাজ আছে তোমার হাতে?
জবাব না দিয়ে দক্ষ হাতে প্যাট্রিক হলকে সার্চ করে দেখল হুবার্ট। .৩৮ টা নেই, অ্যাডাম রাখার পর থেকেই পড়ে আছে ড্রেসারের ওপর। নিজের সিক্সগান হোলস্টারে ঢুকিয়ে হাসল হুবার্ট। তোমার সাহস আছে। আমার সাথে কাজ করার মত?
কি ধরনের কাজ?
বড়। চার লক্ষ ডলারের।
নিচু সুরে শিস বাজাল জুয়াড়ী। সমান ভাগ পাব?
না। ষাট-চল্লিশ। সবকিছু আমাকে ভেবে ঠিক করতে হয়েছে। তারপরও গ্যানন উইলিসের দুগুণ অফার করেছি তোমাকে। পুরো টাকা নগদে পাবে। এক লক্ষ ষাট হাজার ডলার।
ট্রেন-ডাকাতি হলে আমি নেই।
ট্রেন-ডাকাতি না, কাজটা পাহাড়ে।
তাহলে তোমার সঙ্গী দরকার কেন?
পরে বলব। রাজি আছ? জুয়াড়ী সাথে সাথে মাথা ঝাঁকানোয় হাসল। হবার্ট। তাহলে চলো মদ গিলে নতুন বন্ধুত্বকে স্বাগত জানাই।
লোকজন দুজনকে একসাথে দেখুক চায় না ওরা। বড় রাস্তায় উঠে। আলাদা হয়ে গেল দুজন। ফাঁকা ট্রেন ডিপোয় গিয়ে ব্যাগেজ ট্রলির ওপর বসল প্যাট্রিক হল। ডেভিড মুরের সেলুন থেকে একবোতল হুইস্কি নিয়ে এসে তার পাশে বসল হিউ হুবার্ট। বোতলের গলা পর্যন্ত এক চুমুকে নামিয়ে দিয়ে বাড়িয়ে দিল প্যাট্রিক হলের দিকে।
চুমুক দিয়ে মুখ থেকে নামিয়ে বোতলটা দোলাল জুয়াড়ী। কাজের ব্যাপারে কিছু বলো।
দুবছর আগে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে দুজন হান্টারকে এল শিকারে নিয়ে গিয়েছিলাম গ্যানন উইলিস আর আমি। ভয় ছিল না কোনও, হপার আর লরেন্সকে ছাড়া আর কাউকে চিনতে পারেনি পাসি গোলাগুলির মধ্যে। যাই হোক, আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম শিকারী দুজন শিকার করতে আসেনি। ক্যাম্পের ধারেকাছেই সর্বক্ষণ ঘুরঘুর করত ওরা, বড়জোর পায়ে হেঁটে জঙ্গলে ঘুরে আসত।
এক সকালে ওদের ট্র্যাক দেখে আমরা বুঝলাম রাতে ওরা দুজনেই ক্যাম্পের বাইরে ছিল। তাছাড়া ওদের কেনা একটা খাবারের বস্তা উধাও। গ্যানন ওদের শিকারে নিয়ে যাওয়ার পর পায়ের ছাপ অনুসরণ করলাম আমি। অনেকদূর যাওয়ার পর শক্ত মাটি আর পাথরে ট্রাক হারিয়ে ফেললাম।
তারমানে বস্তায় ভরে মূল্যবান কোনকিছু লুকিয়ে রেখেছে ওরা?
তাছাড়া আর কি! দুদিন পরই একটা করে ছোট এল মারল ওরা। বলল যথেষ্ট শিকার হয়েছে। মালপত্র গুছিয়ে বেল প্রিঙ পর্যন্ত পৌঁছে দিলাম ওদের। স্টেজে ওঠার আগে জিজ্ঞেস করে গেল আবার শিকারে আসতে চাইলে কোথায় আমাদের খোঁজ পাবে। ফেরিসের ঠিকানা, দিয়েছি আমি।
তারপর আর চেহারা দেখায়নি ওরা?
না। তবে শিকাগোর পেপারে ওদের ছবি দেখেছি। নাম আলাদা যদিও, তবু প্রথমবার দেখেই চিনেছি। ব্যাংকার, নিজেদের ব্যাংকের চারলক্ষ ডলার নিয়ে পলাতক। পুলিশের ধারণা মেক্সিকোতে চলে গেছে ওরা। কিন্তু আমি জানি সেমিনো মাউন্টিনে টাকা লুকিয়ে রেখে আত্মগোপন করে আছে।
হয়তো এরইমধ্যে ফিরে এসে টাকা নিয়ে গেছে।
অসম্ভব! খারাপ কথা বলে ফেলা দুই ছাত্রকে যেন স্কুল শিক্ষকের ভঙ্গিতে বকে দিল হুবার্ট। ওই ক্যাম্প যাতে শহুরে লোকগুলো না চেনে। সেজন্য গ্যানন আর আমি সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলেছি। উঁচু একটা পাইন গাছ ছিল ক্যাম্পের পাশে, ওটা কেটে ফেলা হয়েছে। ওরকম দুএকটা ল্যাণ্ডমার্ক ছাড়া জঙ্গল ওখানে মাইলের পর মাইল একই রকম। ওরা ক্যাম্পই খুঁজে পাবেনা, লুটের মাল উদ্ধার করবে কোত্থেকে!
তোমরা খুঁজে দেখোনি?
হ্যাঁ। গ্যানন হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়ার পরও অনেক খুঁজেছি। পাইনি। অক্স বোর স্ট্রেম্যানের চাকরি নিয়েছি কারও মনে সন্দেহ না, জাগিয়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবার জন্য। বেশ কিছুদিন আগে লরেন্সের হাত ঘুরে আমার একটা চিঠি এসেছে নিউ অরলিন্স থেকে। সেই লোক দুজন। আবার এসে একই ক্যাম্প থেকে শিকার শুরু করতে চায়। লিখেছে ওই ক্যাম্পের চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে ওরা নাকি মুগ্ধ, এখনও ভুলতে পারে না!
হাসল প্যাট্রিক হল। চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছ তুমি রাজি।
অবশ্যই। রলিন্সে পৌঁছে স্টেজে করে ফেরিসে পৌঁছুবে ওরা সেপ্টেম্বরের পনেরো তারিখে। বলেছি মালামাল, ঘোড়াসই ওখানে। উপস্থিত থাকব আমি আর একজন কুক। তুমিই হচ্ছ সেই কুক, প্যাট্রিক। একসাথে ফেরিসে যাওয়া আমাদের উচিত হবে না। তুমি তেরো। তারিখে অক্স বোর দুই নম্বর লাইন ক্যাম্পের কাছে অপেক্ষা করবে। ওখানে ক্যাম্পের মালপত্র বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাব আমি। পনেরো তারিখে আবার দেখা হবে তোমার সঙ্গে।
চেহারায় অস্বস্তি নিয়ে হিউ হুবার্টের দিকে তাকাল জুয়াড়ী। আমাকে তোমার কেন প্রয়োজন এখনও বুঝতে পারলাম না।
ওদেরকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখতে হলে আমি ছাড়াও আরেকজনকে দরকার। ঘুম থেকে উঠে চার লক্ষ ডলার নিয়ে ওরা সরে পড়েছে দেখতে চাই না আমি। দুজন হলে একজন ঘুমালে অন্যজন পাহারায় থাকতে পারবে। হয়তো টাকাগুলো উদ্ধারের আগে পরিস্থিতি বোঝার জন্য সপ্তাখানেক শিকারের ভান করবে ওরা, কে জানে!
ওরা বস্তাটা খুঁজে বের করলে তারপর?
সশব্দে হাসল হুবার্ট। সে-রাতে বিলি বেঞ্চলি ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেয়ার পর তুমি কি করেছিলে, হাওডি বলে বিদায় নেয়ার আগে তার গালে চুমু খেয়েছিলে? কথা বলার জন্য জুয়াড়ীকে হাঁ করতে দেখে হাতের ঝাঁপটায় তাকে থামিয়ে দিল সে। তুমি যা করেছিলে আমরাও তাই করব।
ওদের আসতে আরও তিনসপ্তাহ দেরি আছে। এই কদিন কি হাঁ। করে বসে থাকব?
স্বাভাবিক আচরণ করবে।
ঠিক আছে, অ্যাডলার, বলল, জুয়াড়ী, জোডির জন্য অপেক্ষা করছি এমন একটা ভাব দেখিয়ে সেপ্টেম্বরের বারো তারিখ পর্যন্ত রলিন্সে থাকব। এরমধ্যে টাকা যদি কিছু পাওয়া যায় ভাল, না হলেও কোনও চাপ দেব না ছোঁকরাকে। তারপর ডেনভারে ফিরে যাচ্ছি খবর ছড়িয়ে দিয়ে গোপনে ফেরিসের পথ ধরব।
ভাল। সন্তুষ্টির সাথে মাথা দোলাল হুবার্ট। অক্স বোতে গিয়ে বেতন বুঝে নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেব আমি। কেউ সন্দেহ করবে না, হান্টিঙ সীজনে অনেকেই বড় শহর থেকে আসা পয়সাওয়ালা লোকদের শিকারে নিয়ে গিয়ে কাউহ্যাণ্ডদের একবছরের বেতনের সমান টাকা কামায়।
তেরো তারিখে দেখা হবে, বলে ট্রলি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ম্যাক্সওয়েল হোটেলের দিকে হাঁটতে শুরু করল প্যাট্রিক হল। কাজটায় সফল হলে বাকি জীবন বসে খেতে পারবে। ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস। ফিরে আসছে তার, মাথায় নতুন কূটবুদ্ধি খেলতে শুরু করল।
১৮.
শেরিফের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জোসেফ ওয়েন। অনেকক্ষণ হলো ডেপুটি স্ট্যানলির জন্য অপেক্ষা করছে সে। তদন্তের অগ্রগতি জানতে হবে। সেপ্টেম্বর প্রায় এসে গেল, এখনও বার্টের কোনও হদিস নেই। বিরক্তিতে চেহারা বিকৃত করে ব্যাণ্ডেজের ওপর দিয়ে দ্রুত শুকিয়ে আসা কাঁধের ক্ষতটা চুলকাল সে ডান হাতে।
সবার ধারণা ওয়াইয়োমিঙ ছেড়ে চলে গেছে হুবার্ট, কিন্তু জোসেফের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে সর্বক্ষণ ধারেকাছেই কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছে লোকটা। প্লামার ডেপুটির হাতে মরার পর বাকি ছয়জন স্যাণ্ড ক্রীক রাইডারের একজনই যে হুবার্ট সে-ব্যাপারে ওর মনে কোনও সন্দেহ নেই।
লু মেয়ার দক্ষিণে পাড়ি জমিয়েছে, জস হারমার এখনও রলিন্সে। বাকি চারজন, পেকোস, অ্যাডলার, লেপম্যান আর কিলরন হার্পার ফিরে গেছে নিজেদের র্যাঞ্চে। প্যাট্রিক হলের ব্যাপারে ওর কোনও মাথা ব্যথা। নেই, ওই লোক হিউ হুবার্ট না, ওর চাচা-চাচীকে খুন করেনি ডেনভারের জুয়াড়ী।
শেরিফের অফিসের সামনে হিচর্যাকে ঘোড়া থামিয়ে লাফ দিয়ে নামল অ্যাডাম আর স্ট্যানলি। দুজনেই হতাশ, ক্লান্ত। ঘোড়া দুটো বেঁধে ওয়েনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল ওরা। এত খেটেও তদন্তে একপাও অগ্রসর হতে পারেনি। লরার খোঁজ বের করতে পারেনি খবর পাঠিয়েছে শাইয়্যানের পুলিশ।
তাড়াতাড়ি আসো, স্ট্যানলি, আজকের মেইলে দারুণ একটা খবর এসেছে! রাস্তার উল্টোপাশে জ্যাক হিগিনসের অফিসের জানালা থেকে চেঁচাল রোসা।
রাস্তা পেরিয়ে একেকবারে সিঁড়ির চার ধাপ অতিক্রম করে দোতলায় উঠে এল স্ট্যানলি। বাকি দুজনও তেমন পিছিয়ে নেই। হুড়মুড় করে অফিসে ঢুকে ওরা দেখতে পেল ডেস্কে বসে আছে রোসা। ডান হাতে ধরা নীল রঙের এনভেলপটা নাড়ছে বাতাস করার ভঙ্গিতে।
ভার্জিনিয়ার পুলিশ চীফ লিখেছে, স্ট্যানলি।
খাম থেকে কাগজের টুকরোটা বের করে ভাজ খুলে এগিয়ে দিল সে। ডেপুটির উদ্দেশে। চোখ বুলাল স্ট্যানলি। রিচমন্ড, ভার্জিনিয়া থেকে পুলিশ চীফ লিখেছে:
চার্লি রবিনসন আর নেলসন আর্চারকে এখানে কেউ চেনে না। হান্টারদের সাথে আলাপ করে বুঝতে পেরেছি ভুয়া নাম ব্যবহার করেছে লোক দুজন। রিচমণ্ড থেকে রলিন্সে গত পাঁচ বছরের মধ্যে শিকার করতে যায়নি কোনও স্পোর্টসম্যান।
একে একে দুই ডেপুটির দিকে তাকাল ওয়েন। কিছু বুঝলে?
দুটো ব্যাপার, উজ্জল হাসিতে ঝলসে উঠল স্ট্যানলির সুদর্শন চেহারা। দুবছর আগে মিথ্যে নাম ভূঁড়িয়ে হোটেলে উঠেছিল রবিনসন আর আর্চার পনেরোই সেপ্টেম্বরে। আবার ওই একই দিনে হফের বার্ন থেকে দুটো করে স্যাডল আর প্যাক হর্স ভাড়া নিয়েছিল গ্যানন উইলিস। ষোলো তারিখে দুই হান্টার বা গ্যানন কেউ রলিন্সে ছিল না।
শিকার শেষে ওরা রলিন্স হয়ে ফিরেছিল? জানতে চাইল অ্যাডাম।
গ্যানন উইলিস ঘোড়া ফিরিয়ে দিয়েছে কবে সে রেকর্ড হফের রেজিস্টারে আছে। তবে রবিনসন বা আর্চার হোটেলে আর ওঠেনি।
এতসব তথ্য আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? একটা সিগারেট, ধরিয়ে অধৈর্য কণ্ঠে জানতে চাইল ওয়েন।
বুঝতে পারছ না, দুই বছরের ফারাকে একই তারিখে একটা কাজ সারবে বলে আসার কথা ছিল গ্যানন উইলিসের? কি কাজ যে এত বিপদ মাথায় নিয়েও কাউন্টি ছেড়ে পালাচ্ছে না হিউ হুবার্ট? শেষ প্রশ্নটা যেন নিজেকেই করল স্ট্যানলি। রোসার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কি মনে হয়?
হয়তো শিকার করতে নয়, কোন কিছু লুকিয়ে রাখতে এসেছিল আর্চার আর রবিনসন।
সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল স্ট্যানলি। যদি ধরে নিই বড় ধরনের কোনও অপরাধ করার পর অনেকদিন লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে, কি করবে ওরা? একই লোককে ভাড়া করছে, নাহলে গ্যানন উইলিস.. বোধহয় রলিন্সে আসতে চাইত না। তারমানে…
প্রথমবার লুটের মাল লুকিয়ে রেখে গেছে। দ্বিতীয়বার আসছে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হবার পর। জায়গা খুঁজে বের করার জন্য ভাড়া করছে। একই প্যাকারকে… সিগারেটটা পায়ের নিচে পিষে নেভাল ওয়েন।
শাইয়্যানে গ্যানন উইলিস বলেছিল আশি হাজার ডলারের একটা কাজ হাতে আসছে তার। মেলে! সবকিছু মিলে যাচ্ছে খাপে খাপে। এসব কথা আমাদের চারজনের বাইরে যাতে আর কেউ না জানে, সবার ওপর চোখ বুলিয়ে সাবধান করল জেরাল্ড স্ট্যানলি। এতদিন পর্যন্ত যতটুকু আমরা অগ্রসর হয়েছি, খবরের কাগজের কল্যাণে জেনে গেছে হুবার্টসহ শহরের সবাই। এখন থেকে শেরিফ লেম্যান ছাড়া আর কেউ যেন কিছু টের না পায়।
চাচাকেও বলব না? আহত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল রোসা।
না। যত কম মানুষ জানবে হুবার্টের কানে খবর পৌঁছুনোর সম্ভাবনা তত কম। ওকে সতর্ক হয়ে উঠতে দেয়া যাবে না।
ঠিক, সায় দিল অ্যাডাম, সতর্ক নজর রাখব আমরা। ভুয়া শিকারীরা এসে যাদের সাথে এলক শিকারে যাবে তাদেরই কেউ একজন হিউ হুবার্ট। অন্যজনও যে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা হবে তা নয়। সঙ্গী হিসেবে প্রথমে গ্যানন তারপর প্লামারকে কাজে লাগাতে চেয়েছে হুবার্ট। এখন কাকে সঙ্গী করবে কে জানে।
হিউ হুবার্ট এত ঝুঁকি নিচ্ছে কেন? জানতে চাইল রোসা।
নিশ্চয়ই সে টের পেয়ে গেছে নকল শিকারীদের উদ্দেশ্য, ওয়েন দৃঢ়কণ্ঠে বলল, লোকগুলোর কাছ থেকে লুটের মাল কেড়ে নিয়ে খুন করবে সে ওদের। আমাদের কারও চেয়ে মাথায় বুদ্ধি কম নেই হুবার্টের, যেহেতু লোকগুলোকে কাছ থেকে দেখেছে কয়েকদিন, অনেক আগেই। আমাদের মত দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে বসে আছে সে।
হেয়েস হোটেলে আর্চার আর রবিনসন ছিল, ওদের চেহারার বর্ণনা বলতে পারেনি কেউ? স্ট্যানলির দিকে তাকাল অ্যাডাম।
না। ওয়েনের দিকে তাকিয়ে হাসল স্ট্যানলি। তবে আরেকটা চিন্তা এইমাত্র মাথায় এল। ফেরিসে বিউয়েলদের ওখানে গিয়ে কদিন ঘুরে এসো না, ওয়েন, ওদিকে হুবার্টের যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। জিজ্ঞেস করে দেখো, হান্টাররা ওদের স্টোর থেকে কিছু কিনে থাকতে পারে। হয়তো চেহারার বর্ণনা দিতে পারবে।
স্ট্যানলির মুখে যাওয়ারও শুনে হেসে ফেলল অ্যাডাম আর রোসা। লজ্জায় চেহারা লাল হয়ে গেল জোসেফ ওয়েনের। ম্যাক্সওয়েল; হোটেলের নিয়মিত বোর্ডার হওয়ায় ওরা জেনে গেছে ফেরিস থেকে আসা সবকটা স্টেজে ওয়েনের চিঠি থাকে। আহত অবস্থায় অলিভার নিঃস্বার্থ সেবা ওয়েনকে প্রথমে কৃতজ্ঞ করেছে, হঠাৎ তারপর বুঝতে পেরেছে ওরা পরস্পরকে ভালবাসে।
তলে তলে যদিও, তবু তোমরাও কম যাও না, পাল্টা জবাব দিল ওয়েন লজ্জা কাটিয়ে উঠে।
লাজুক বোকা বোকা হাসি হেসে এবার মুখ নামিয়ে নিল স্ট্যানলি। হতাশ রোসা দেখল অ্যাডামের মুখের অভিব্যক্তি বিন্দুমাত্র পাল্টায়নি। কাল সকালে রওনা হয়ে যাব, এক মুহূর্ত ওদেরকে দেখে বলল ওয়েন।
ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগুচ্ছে এসময় অ্যাডাম কথা বলে উঠল, হাতে সময় থাকলে বক্স বিতে গিয়ে জোডির অবস্থা দেখে এসো।
যাব। দরজা, পেরনোর সময় জবাব দিল জোসেফ। তিন দিনের মধ্যেই ফিরে এসে ম্যাক্সওয়েল হোটেলে সাপার টেবিলে দেখা করব তোমাদের সাথে।
.
ঘটনা বিহীন তিনটা দিন পেরিয়ে গেল রোসার জন্য। ওর চাচা কেস। লড়তে পাশের কাউন্টিতে গেছে। দিনগুলো পার করল অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে ধুলোময় রাস্তার ওপর চোখ রেখে। শেরিফের অফিসের ব্যস্ততা দেখল কৌতূহলের সাথে। শেরিফ ইভানস্টোনে গেছে। একজন বন্দীকে নিয়ে আসতে, তবে অ্যাডমি আর স্ট্যানলিরও বিশ্রাম। নেই এদিকে।
এইমাত্র ফ্রেড স্টীল দুর্গ থেকে ফিরল স্ট্যানলি। রোসা জানে ওখানে সে এক সার্জেন্টের বউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিল। মহিলা আগে হেয়েস হোটেলের ওয়েট্রেস ছিল। হয়তো সে ভুয়া হান্টারদের চেহারার বর্ণনা দিতে পেরেছে।
কিচ্ছু কাজ হয়নি, ঘোড়া বেঁধে জানালায় দাঁড়ানো রোসার উদ্দেশে চেঁচাল স্ট্যানলি।
দুই ডেপুটি অন্য পথেও এগোতে পারেনি। সেপ্টেম্বরে শিকারের। জন্য পার্টিরা ঘোড়া ভাড়া করেছে কি না বার্নগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখেছে ওরা। বার্ন মালিকরা যেসব পার্টির কথা বলেছে তাদের কেউ আর্চার বা রবিনসন হতে পারে না, প্রত্যেকেই তারা নিজ এলাকায় হান্টার হিসেবে। সুপরিচিত।
রোসাও বসে নেই, গত কদিন মনোযোগ দিয়ে দুটো কাজ করেছে সে। প্রতিটা ট্রেনের ওপর চোখ রেখেছে দুজন শিকারী একসাথে আসে কিনা দেখার জন্য। দিনে দুইবার হোটেল রেজিস্টার পরীক্ষা করে দেখেছে। আর্চার আর রবিনসন, হোটেলে উঠলে সম্ভবত একই নাম ব্যবহার করবে।
তৃতীয়দিন অনেক দেরিতে এল তিন নম্বর ট্রেন। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সন্ধের আলোয় যাত্রীদের নামতে দেখল রোসা। আজও হতাশ হতে হলো ওকে। আসেনি কোনও হান্টার। ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে এমন সময় ঘাড়ের কাছে কথা বলে উঠল স্ট্যানলি, দেখা যাচ্ছে তোমার কপালও আমাদের চেয়ে ভাল না। রোসা দেখল অ্যাডামও দাঁড়িয়ে আছে দৈত্যাকার ডেপুটির পাশে। সাপারের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ভুলে গেছ। ওয়েনের আসার কথা? মনে করিয়ে দিল স্ট্যানলি।
ম্যাক্সওয়েলে ঢুকে ওরা দেখল যাত্রা ক্লান্ত, চেহারায় ওদের জন্য সাপার টেবিলে অপেক্ষা করছে জোসেফ ওয়েন। বাঁ কাঁধের স্লিঙ খুলে ফেলেছে সে, কিন্তু ব্যাণ্ডেজ খোলার অনুমতি পায়নি অলিভার কাছ থেকে। সময় নষ্ট না করে কাজের কথা পাড়ল সে, অলিভার বাবা ওদের চেহারার বর্ণনা দিতে পেরেছে। একজনের বয়স পঞ্চাশ মত হবে। লম্বা। চুল পাকা। চেহারায় অসংখ্য ভাজ। অন্যজন বেঁটে আর মোটা। গালে দাড়ি আছে। কপালে একটা কাটা দাগ। সঙ্গীর চেয়ে বয়সে বছর দশেকের ছোট হবে।
আর কিছু মনে করতে পারেনি হেনরিখ? সামনে ঝুঁকে জিজ্ঞেস, করল অ্যাডাম।
না। বুড়োর মুখ থেকে এটুকু বের করতেই জান খারাপ হয়ে গেছে। খালি প্রশ্ন করে ভবিষ্যতে আমার কি করবার ইচ্ছে!
স্ট্যানলি নোসার দিকে তাকাল। কাজ খুঁজছিলে, পেয়ে গেছ একটা। আমার বন্ধু ফ্রেড ম্যাকলিনের কাছে শাইয়্যানে একটা চিঠি পাঠাতে হবে। ফ্রেড শাইয়্যানের নামকরা একটা পেপারের সাংবাদিক। ওর কাছে হান্টার দুজনের বর্ণনা দিয়ে জানতে চাইবে দুবছর আগে। পলিশ এই বর্ণনার সাথে মেলে এমন দুজন দুবৃত্তকে খুঁজছিল কিনা। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সব পেপার ঘাটতে হবে ওকে। লোক দুজন পুব, দক্ষিণ বা মধ্য পশ্চিমের ওয়ান্টেড হতে পারে। চিঠিতে পুনশ্চ, দিয়ে লিখবে কিছু খুঁজে পেলে যেন মুখ বন্ধ রেখে খবর পাঠায়।
রাতেই লিখে ফেলব, কাল সকালে অফিসে এসে সই করে। দিয়ো। কাজ পেয়ে খুশিই হয়েছে রোসা।
এতক্ষণ ওদের আলাপে বাধা দেয়নি অধৈর্য অ্যাডাম। এখন ওয়েনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল সে, জোডির খোঁজ নিয়েছ?
মাথা ঝাঁকাল ওয়েন। হ্যাঁ। বাসায় ছিল না, রেঞ্জে ছিল ক্যাটলগুলোর কাছাকাছি।
কি করছিল?
একটা ঘোড়ার পিঠে বসে সদ্য প্রসূত একটা বাছুর আর ওটার মাকে দেখছিল। জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছে, জবাব দিল না। কিছুক্ষণ লাল সাদা রঙের বাছুরটাকে দেখে পকেট থেকে কাগজ কলম বের করে একটা দাগ দিল কাগজে। তার কথা বলার ইচ্ছে নেই দেখে বাংকহাউসে গিয়ে ল্যারির সাথে খানিকক্ষণ গল্প করলাম। ল্যারি তোমাকে বলতে। বলেছে যে এই পর্যন্ত সাতটা গুণেছে জোডি।
অলিভার কি খবর? জানতে চাইল রোসা।
আরেকজন লোক ঢুকেছে হোটেল ডাইনিঙ রূমে। রোসার কথার জবাব দিতে গিয়েও হঠাৎ অ্যাডামের চেহারায় পরিবর্তন দেখে থেমে গেল ওয়েন। ওদের টেবিল পাশ কাটানোর সময় পিঠে অ্যাডামের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অনুভব করল প্যাট্রিক হল। অ্যাডাম খোঁজ নিয়ে দেখেছে জেল থেকে ছাড়া পাবার পর গোল্ড রূমে জুয়া খেলা ছাড়া আর কোনদিকে নজর নেই লোকটার।
অ্যাডামের কাঁধে হাত রাখল স্ট্যানলি। গতকাল আবার ওকে জেরা করেছি। জানতে চাওয়ায় বলেছে জোডির জন্য অপেক্ষা করছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে জোডি শহরে না এলে নাকি সে-ই বক্স বিতে গিয়ে। পাওনা দাবি করবে।
ওয়েট্রেস এসে খাবারের অর্ডার নিয়ে চলে যাওয়ার পর ওয়েন বলল, আরেকটা ব্যাপার, ফেরিসে যাওয়ার পথে বেল স্পিঙে রাস্তা যেখানে। দুভাগ হয়ে গেছে সেখানে বড় একটা সাইনবোর্ড দেখলাম। আঙুল একে ল্যানডার আর ফেরিসে যাওয়ার রাস্তা আলাদা করে দেখানো আছে।
তো কি হয়েছে? অ্যাডাম আর স্ট্যানলি বহুবার দেখেছে সাইনবোর্ডটা।
ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে অ্যাডামের দিকে তাকাল ওয়েন। পাইক হানার কথা ভুলে গেছ? তোমাকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার পর করাল ম্যান জানিয়েছিল লোকটা ল্যানডার কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হয় জানতে চেয়েছিল। কেশে গলা পরিষ্কার করে নিল ওয়েন, হাসি হাসি চেহারায় চোখ বোলাল সবার ওপরে। অতবড় সাইনবোর্ড তার চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না। ভাওতা দিয়েছে। কেউ খোঁজ জানতে চাইলে ওরা বলবে সে ল্যানডারের পথে গেছে। করাল ম্যানের চোখের সামনে ল্যানডারের দিকে ঘোড়া ছুটিয়েছে সে, তারপর কিছুদূর গিয়ে ফেরিসের রাস্তা ধরে বাজার্ডস গ্যাপের দিকে এগিয়েছে।
কথা শুনে মনে হচ্ছে সব তোমার চোখের সামনে ঘটেছে, চেষ্টা করেও গলা থেকে ঠাট্টার সুর তাড়াতে পারল না স্ট্যানলি।
আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি ডিক উলফের র্যাঞ্চে, সমুচিত জবাব দেয়ার ভঙ্গিতে চোখ পাকাল ওয়েন। সেরাতে কাউকে ওরা দেখেনি বটে, তবে পরদিন সকালে করালে ওদের একটা সোরেল কম ছিল।
ওয়েনের যুক্তি বুঝতে পারল স্ট্যানলি। স্পাইক হাননা ল্যানডারে যাবার ধোকা দিয়ে স্যাণ্ড ক্রীকের পথ ধরেছে, ঘোড়া বদলে নিয়েছে ডিক উলফের করাল থেকে। উঠে দাঁড়াল সে, যাই শেরিফকে খবরটা দিয়ে আসি।
এক নম্বর সেলের সামনে শেরিফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল স্ট্যানলি। রোজকার মত আজও হুপারকে একই প্রশ্ন করছে লেম্যান নির্বিকার চেহারায়। হিউ হুবার্ট কে? একই জবাব দিচ্ছে হুপারও। আমি জানি না। স্ট্যানলিকে সাথে নিয়ে করিডরের দরজা বন্ধ করে অফিসে এসে
বসল শেরিফ। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, হুবার্ট ওকে জেল থেকে পালাতে সাহায্য করছে না দেখে একদিন হয়তো অধৈর্য হয়ে বলে ফেলবে কোন্ পরিচয়ের আড়ালে আত্মগোপন করে আছে খুনীটা।
স্ট্যানলির মুখে পাইক হাননার খবর শুনে গম্ভীর চেহারায় মাথা দোলাল লেম্যান। কালকে স্যাণ্ড ক্রীকে গিয়ে ট্রাক খুঁজতে শুরু করব। ওই লোকের ব্যাপারে আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে গভর্নর। জেল ভাঙার ব্যাপারটা নাকি রাজনৈতিক চক্রান্ত। গভর্নর চায় নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই স্পাইক হান্নাকে আমরা ল্যারামি জেলে ঢোকাই।
একাই যাবে, না আমাকেও আসতে হবে?
একাই যাব। হিউ হুবার্টকে ধরার জন্য অ্যাডাম আর তোমার রলিন্সেই থাকা প্রয়োজন।
.
প্যাট্রিক হল সাপার টেবিল ছাড়ল মন ভরা অস্বস্তি নিয়ে। গত কয়েক দিন। ধরেই শহরের হাওয়া হালচাল ভাল ঠেকছে না তার। লক্ষ করেছে অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে পুর্ব থেকে আসা প্রত্যেকটা ট্রেনের ওপর চোখ রাখছে রোসা হিগিনস, দুই ডেপুটির সাথে নিয়মিত নিচু স্বরে আলাপ করছে সাপার টেবিলে। কিসের এত কথা ওদের! লিভারি বার্ন। আর হোটেলগুলোয় খোঁজ খবর নিচ্ছে দুই ডেপুটি। ব্যাঙ্ক ডাকাত আর্চার আর রবিনসনের ব্যাপারে কিছু জেনে যায়নি তো ওরা!
গোল্ড রূমে ঢুকে টেবিল দখল করে বসল জুয়াড়ী ভাবনা চিন্তার। ফাঁকে মদ গেলার জন্য। কিছুক্ষণ পর গল্প করার জন্য এসে জুটল। সিসিলিয়া। আজ মেয়েটার সাহচর্য অসহ্য লাগছে প্যাট্রিক হলের, বাইরে বেরিয়ে এল সে। হাঁটতে শুরু করে পৌঁছে গেল ট্রেন ডিপোর সামনে। এইমাত্র এসে পৌঁছেছে চার নম্বর ট্রেন। অন্ধকারেও হাতের সাদা ব্যাণ্ডেজ দেখে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো জোসেফ ওয়েনকে চিনল সে। তারমানে রোসা আর ওয়েন রাতদিন নজর রাখছে ট্রেনগুলোর
ওপর! আর এক সপ্তাহও নেই এই স্টেশনে এসে নামবে রবিনসন আর আর্চার। ডেপুটিদের সন্দেহ হলে ওদের অনুসরণ করে ফেরিসে পৌঁছে যাবে। দেখবে লোক দুজন জুডাস অ্যাডলারের সাথে দেখা করছে ওখানে।
এই বিপদের কথা বাদ দিলেও আরেকটা সম্ভাবনা মাথা থেকে দূর করতে পারছে না প্যাট্রিক হল। হুপার যদি মুখ খোলে সর্বনাশ হয়ে, যাবে। একই সাথে এই দুটো বিপদ দূর করে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত একটা বুদ্ধি খেলে গেল জুয়াড়ীর মাথায়। মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়ে শেরিফের অফিসের দিকে হাঁটতে শুরু করল।
হুপারের সেলের দেয়ালে উঁচুতে বসানো ভেন্টিলেটর দিয়ে ছোট একটা নুড়ি পাথর ছুঁড়ল সে। মৃদু ঠুক শব্দে পড়া পাথরটা নাক ডাকার শুরুগম্ভীর আওয়াজের মাঝে হারিয়ে গেল বলেই হয়তো ঘুম ভাঙল না এডমণ্ড হুপারের। দ্বিতীয় নুড়িটা থুতনির ওপরে পড়ায় চমকে উঠে বসল।
হুবার্ট খবর পাঠিয়েছে, ফিসফিস করে বলল প্যাট্রিক হল।
বেশ অনেকদিন ধরে সুখবর শোনার আশায় উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছিল হুপার, দ্বিধা না করে উঠে দাঁড়িয়ে ভেন্টিলেটরের শিক দুহাতে আঁকড়ে ধরল। কবে আমাকে এখান থেকে বের করবে সে?
একটা কাজে শহরের বাইরে থাকতে হচ্ছে তাকে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তোমাকে মুক্ত করবে ফিরে এসে।
করলেই ভাল, নাহলে ওর পরিচয় জানিয়ে দেব শেরিফকে আমি।
হুবার্ট তোমাকে ডোবাবে না। তবে একটা সাহায্য চেয়েছে সে। সেপ্টেম্বরের চোদ্দ তারিখে হুবার্টের ছদ্মনাম শেরিফকে বলে দেবে তুমি রাগের মাথায়–দুঃখে।
হুবার্ট ধরা পড়ে গেলে আমি জেল থেকে বেরব কিভাবে! বিস্ময়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল এডমণ্ড হুপার।
ধরা পড়বে না। লুমেয়ার ছাড়া স্যাণ্ড ক্রীকের বাকি পঁচজন জীবিত রাইডারদের কেউ এলাকা ছেড়ে চলে যায়নি। তুমি বলবে লু মেয়ারই আসলে হিউ হুবার্ট। মনে রেখো, লু মেয়ারই হুবার্ট। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে লু মেয়ারকে ধরার জন্য, কাজ করতে সুবিধা হবে হুবাটের। বিনিময়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে জেল ভেঙে পালাতে তোমাকে সে সাহায্য করবে।
১৯.
হুপারকে রলিন্সে আনার ঠিক একমাস পর, বারোই সেপ্টেম্বর একই ট্রেন থেকে নামল অপরিচিত একজন লোক। প্রথমবার দেখেই রোসা বুঝতে পারল চিকন কাঠির মত লম্বা কম বয়েসী এই লোক আর্চার বা রবিনসন হতে পারে না।
রোসার সামনে থেমে দাঁড়িয়ে মাথা থেকে হ্যাট নামাল পাটখড়ি। নড করে জানতে চাইল, ডেপুটি স্ট্যানলিকে কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারো, ম্যাম? রোসা মাথা দোলানোয় হাত বাড়িয়ে বলল, আমি শাইয়্যান থেকে এসেছি, ম্যাম। ফ্রেড ম্যাকলিন।
হাতটা ঝাঁকিয়ে ছেড়ে দিল বোসা, তুমি স্ট্যানলির চিঠি পেয়ে এসেছ।
তুমি জানলে কি করে, ম্যাম?
স্ট্যানলির হয়ে চিঠিটা আমিই লিখেছি। চলে যেতে যেতে কথা। হবে।
ছোট্ট ব্যাগটা প্ল্যাটফর্ম থেকে তুলে নিয়ে রোসার সাথে শেরিফের অফিসে পৌঁছুল ফ্রেড ম্যাকলিন। অ্যাডামের সাথে মীটিঙে বসেছিল। স্ট্যানলি, ঘরে বোসার পেছনে পাটখড়িকে ঢুকতে দেখে চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার। কিছু জানতে পেরেছ, ফ্রেড?
বোধহয়, পকেট থেকে একটা নোটবুক বের করে ডেস্কের ওপর বসল ম্যাকলিন। দুবছর আগে জুলাইয়ের ছয় তারিখে আমাদের পেপারে একটা খবর ছেপেছিল। বাল্টিমোর, মেরিল্যাণ্ডের দুই ব্যাংকার পার্টনার গ্রাহকদের চার লক্ষ ডলার নিয়ে পলাতক। পুলিশ খোঁজ নিয়ে। দেখেছে লোক দুজন কানাডা যাবার ট্রেনে টিকেট কেটেছে, কিন্তু ধারণা করা হয় ওরা আসলে গেছে মেক্সিকোতে।
নাম?
ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড আর ওয়ার্ড ল্যানট্রি। উইডোফিল্ড লম্বা, পাকা চুল। ল্যানট্রি বেঁটে-মোটা। চল্লিশ-বিয়াল্লিশ হবে তার বয়স। কপালে কাটা দাগ আর গালে চাপ দাড়ি আছে লোকটার।
কাউকে কিছু বলেনি তো?
না।
স্বস্তির ছাপ ফুটে উঠল স্ট্যানলির চেহারায়। আমাদের ধারণা এ মাসের পনেরো তারিখে আসবে ওরা। ভিনসেন্ট আর ল্যানট্রি। চোখ। খোলা রাখো, কাউকে বুঝতে দিয়ো না এখানে কেন এসেছ। কেউ জানতে চাইলে বলবে এডমণ্ড হুপারের সাক্ষাৎকার নিতে পাঠিয়েছে। তোমার পেপার।
বেশ। আমার পেপার জানতে চাইলে বলব শেরিফের সাথে দেখা করেই ফিরে যাব। রোসার মুখে শুনলাম লেম্যান শহরের বাইরে গেছে। আসবে কবে?
শ্রাগ করল স্ট্যানলি। বলা যায় না কবে আসবে। স্পাইক হাননাকে ধাওয়া করে মনট্যানার দিকেই গেছে কিনা কে জানে! এখনও কোনও, খবর পাঠায়নি।
.
শাইয়্যান থেকে রিপোর্টার আসায় আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ল প্যাট্রিক হল। লক্ষ করে দেখেছে ডেপুটি স্ট্যানলির সাথে লোকটার বেশ মাখামাখি আছে। অ্যাডাম বেঞ্চলির সাথে গোল্ড রূমে এসেও আড্ডা মারছে রিপোর্টার। এগারোই সেপ্টেম্বর ওদের অনুসরণ করে ম্যাক্সওয়েল হোটেল পর্যন্ত এল সে।
হোটেল পোর্চে বসল রিপোর্টার। অ্যাডাম, স্ট্যানলি আর রোসা। নিচু স্বরে কি যেন আলাপ শুরু করল। আজ ওদের সাথে জ্যাক হিগিনসও আছে। দম বন্ধ হয়ে আসার মত একটা অনুভূতি জুয়াড়ীকে গ্রাস করল। রলিস ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছেটাকে বহুকষ্টে দমন করে আবার গোল্ড রূমের দিকে পা চালাল সে। চার লক্ষ ডলারের মায়া ছেড়ে। চলে যাওয়া সহজ কাজ নয়। তেরো তারিখে অ্যাডামের চোখ এড়িয়ে হুবার্টের সাথে দেখা করতে হবে ওকে।
অ্যাডাম বেঞ্চলি দিনে দুইবার করে ওর খোঁজ নিচ্ছে জানে সে। প্যাট্রিক হল ঘোড়া ভাড়া করলে সাথে সাথে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে বার্নগুলোকে। ডেপুটিরা আশা করছে জোডির সাথে দেখা করতে বক্স বিতে যাবে সে। ঠিক তাই করবে সিদ্ধান্ত নিল প্যাট্রিক হল। অ্যাডামকে আট-দশ ঘণ্টা পেছনে ফেলে দেবে সে।
গোল্ড রূমের সামনে চমৎকার একটা বে ঘোড়া থেকে একজন কাউহ্যাণ্ডকে নামতে, দেখল প্যাট্রিক হল। স্যাডলে কারবাইন ঝুলছে দৈখে মনে মনে খুশি হলো। লোকটাকে অনুসরণ করে প্রবেশ করল। গোল্ড রূমের ভেতরে।
জুয়াড়ীর চোখের সামনে হুইল অভ ফরচুনে এক ডলার খোয়াল কাউহ্যাণ্ড। তারপর ডাইস টেবিলে হারল আরও দশ ডলার। লোকটার পাশে দাঁড়িয়ে নিজে একদান খেলল প্যাট্রিক হল। জেতা চিপসগুলো নিজের দিকে টেনে বলল, তোমার ঘোড়াটা চমৎকার। বেচবে?
ওর আপাদমস্তকে নজর বোলাল কাউহ্যাণ্ড চেহারায় বিরক্তি নিয়ে। তারপর বলল, দুইশো ডলার দেয়ার সাধ্য আছে তোমার? বেচার ইচ্ছে নেই বলেই অসম্ভব দাম হেঁকেছে সে।
রাজি। স্যাডল গিয়ার সহ তিনশো দেব।
টেবিলে গিয়ে বসল ওরা দুজন, কয়েকটা পেগ পেটে পড়তেই জুয়াড়ীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেল কাউহ্যাণ্ড। প্যাট্রিক হলের পিঠ চাপড়ে জড়ানো গলায় বলল, আর কেউ হলে বেচতাম না। কিন্তু তোমার জন্য, দোস্ত, দুইশো ডলারেই রাজি।
বিল অভ সেল বুঝে নিয়ে কাউহ্যাণ্ডের হাতে দুইশো ডলার গুঁজে দিল প্যাট্রিক হল। কাউন্টারে গিয়ে ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে সেফে রাখা এনভেলপটা সংগ্রহ করল। কাগজ দুটো ওয়ালেটে খুঁজে বেরিয়ে এল কাউহ্যাণ্ডের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে।
রাত সাড়ে এগারোটায় বের স্যাডলে চাপল প্যাট্রিক হল। ম্যাক্সওয়েল হোটেলের এক ব্লক আগে ঘোড়া বেঁধে রূম থেকে কম্বল নিয়ে ফিরে এল। তারপর তারার আবছা আলোয় পথ দেখে ঘোড়া ছোটাল উত্তরে, স্যাণ্ড ক্রীকের দিকে।
.
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে এসময় বেল প্রিঙ স্টেজ স্টেশনে পৌঁছল সে। রেস্টুরেন্ট মাত্র খুলেছে। ঘোড়া করালে রেখে নাস্তা করল সে। ঘোড়াটাকে তিন ঘণ্টা বিশ্রাম দিয়ে এগুলো আবার। বাজার্ড গ্যাপে পৌঁছল দুপুর বেলায়।
সে জানে সকালে ম্যাক্সওয়েল হোটেলের ডাইনিঙ রূমে ওকে না দেখে অ্যাডাম বেঞ্চলির সন্দেহ হবে। খোঁজ নিলেই বুঝে যাবে শহর ছেড়েছে সে। ধরেই নেবে পাওনা টাকা সংগ্রহ করতে বক্স বিতে যাচ্ছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই, আপন মনে হাসল প্যাট্রিক হল, ডেপুটির চেয়ে অন্তত বিশ মাইল এগিয়ে আছে সে।
জোডির সাথে কথা বলার জন্য বক্স বিতে দুঘণ্টা কাটানোই। যথেষ্ট। টাকা পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, তবে বক্স বি হয়ে অক্স বোর দুই নম্বর লাইন ক্যাম্পের দিকে গেলে অনুসরণ করে আসা অ্যাডাম। বেঞ্চলি ওর আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারবে সেই সম্ভাবনা কম।
ডিক উলফের র্যাঞ্চ পাশ কাটানোর পর স্ক্যাবার্ড থেকে খুলে কারবাইনটা পরীক্ষা করল। গুলি না থাকলে সামনে ক্যান্টলিন র্যাঞ্চের স্টোর থেকে কিনে নেবে। চেম্বার খালি, তবে ম্যাগাজিনে পাঁচটা শেল দেখে সন্তুষ্ট হয়ে আবার স্ক্যাবার্ডে রেখে দিল কারবাইন। অ্যাডামের সাথে তার রাইফেল যুদ্ধ হওয়ার কোনও কারণ নেই। মুখোমুখি যদি দাঁড়াতেই হয়, ব্রেস্ট হোলস্টারে রাখা .৩৮ টাই বেশি পছন্দ তার।
স্যাণ্ড ক্রীকের কাছে এসে ক্যান্টলিন র্যাঞ্চ এড়ানোর জন্য পশ্চিমে সরে গেল সে, এগোল প্রেইরির মধ্যে দিয়ে। চারপাশে অসংখ্য গরু চরছে। ওমাহা থেকে আনা অ্যাডামের হেফারগুলোও আছে ওগুলোর মাঝে। ওগুলোর মালিক হতে পারলে গর্ব হবে যেকোন র্যাঞ্চারের।
শেষ বিকেলে বক্স বির পরিচিত গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল প্যাট্রিক হল। করালের কাছে একজন কাউহ্যাণ্ডকে কুড়াল ধার করতে দেখে এগিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করল জোডি কোথায়।
চেহারায় জুয়াড়ীকে চেনে না ফোরম্যান ল্যারি। বাইরে গেছে। ছেলেটা, কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরবে, জানাল সে। হাতের ইশারায়। একটা বেঞ্চ দেখাল। করালে ঘোড়া রেখে ওখানে বসে জিরিয়ে নাও।
কটনউড গাছের নিচে বেঞ্চটা। ঘোড়া করালে বেঁধে এসে বসল। প্যাট্রিক হল। একটা সিগারেট ধরিয়ে কাউহ্যাণ্ডের কাজ দেখতে লাগল। এখানে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করার ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না, ভাবল সে। অস্বস্তি ভরে দেখল র্যাঞ্চ হাউসের পোর্চটা। এখানে দাঁড়িয়েই সেরাতে শুলি করে মেরেছে সে র্যাঞ্চারকে। অ্যাডাম সন্দেহ করছে কাজটা তার। এখানে এসেছে দেখতে পেলে যদি অ্যাডাম গোলাগুলি করে, ফলাফল যাই হোক কালকে হুবার্টের সাথে দেখা করাটা অসম্ভব হয়ে যাবে।
কুড়ালটা ধার দেয়া শেষে উঠে দাঁড়াল ফোরম্যান, ওর দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার জন্য সাপারের কথা বলে আসি।
সাপার পর্যন্ত থাকব না আমি, দ্রুত বলল প্যাট্রিক হল। কোথায় গেছে জোডি, এখনও আসছে না কেন?
হাসল ফোরম্যান। জোডি পঞ্চাশটা গোনায় ব্যস্ত।
পঞ্চাশটা কি?
ফোরম্যানের হাসি আরও চওড়া হলো। জোডি এলে তাকেই। জিজ্ঞেস কোরো। সাপারের কথা বলতে র্যাঞ্চহাউসের ভেতরে চলে গেল সে।
ছায়া ঢাকা বেঞ্চে একা বসে আছে প্যাট্রিক হল। অস্বস্তি লাগছে। তার। উঠে দাঁড়িয়ে করাল থেকে ঘোড়াটা এনে বেঞ্চের পাশে বেঁধে বসল আবার।
আধঘণ্টা পর একটা পনিতে চড়ে এল জোডি বেঞ্চলি, কটনউড গাছের ছায়ায় বসে থাকায় প্যাট্রিক হলকে প্রথমে দেখতে পেল না। হাত নাড়ানোয় বুঝতে পারল ওখানে কেউ আছে। বেঞ্চের সামনে ঘোড়া থামিয়ে লাফ দিয়ে নামল সে, জুয়াড়ীকে দেখে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, তুমি!
কেন, আসতে বারণ আছে নাকি?
ঋণ শোধ দেয়ার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি।
তা ঠিক, সায় দিয়ে হাসল প্যাট্রিক হল। কিন্তু টাকাটা এখনই শোধ করে দিলে শুধু ষাট ভাগ পেলেই খুশি থাকব আমি। বাইশ হাজার ডলারে তোমাকে দিতে হবে মাত্র তেরো হাজার দুশো ডলার। কি?
জবাব দেয়ার সুযোগ পেল না জোডি, ওদের কথা শুনে র্যাঞ্চহাউসের পোর্চ থেকে লাফ দিয়ে নেমে সিক্সগান হাতে তেড়ে এল ফোরম্যান। গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে সে, এই র্যাঞ্চে আসার সাহস পেলে কোথায়! ভাগে! দশ গুনে গুলি করব আমি। এক…
বেঞ্চের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে এক লাফে বের পিঠে চাপল প্যাট্রিক হল, ঝুঁকে পড়ে দড়ির গিট খুলে ঘোড়া ছোটাল গেট লক্ষ্য করে। গেটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে এমন সময় পেছনে একটানা ছয়বার গর্জে উঠল সিক্সগান। বুলেটগুলো লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত করতে না পারলেও কাছ দিয়ে গিয়ে আতঙ্ক জাগাতে পারল লক্ষ্যবস্তুর মনে।
পাঁচমাইল দূরে ক্যান্টলিন র্যাঞ্চে পৌঁছুনোর আগ পর্যন্ত পেছনে তাকিয়েও সময় নষ্ট করল না প্যাট্রিক,হল। সন্ধে সাতটায় র্যাঞ্চে পৌঁছে দেখল কোরম্যান ছাড়া আর কেউ নেই, কাউহ্যাণ্ডরা অন্যান্য র্যাঞ্চের কাউহ্যাণ্ডদের সাথে রঙ্গিসে গেছে রাউণ্ডআপ করতে। এখানেও থামত না, কিন্তু সকাল পর্যন্ত বিশ্রাম না নিলে ঘোড়াটা ছুটতে পারবে না বুয়ে থেকে যেতে বাধ্য হলো। ঘোড়া স্টলে রেখে এসো, জুয়াড়ীকে চেনে বলে খাতির করল কোরম্যান, আমি তোমার খাবারের ব্যবস্থা করছি।
পরদিন তেরো তারিখ ভোরে রওনা হয়ে গেল প্যাট্রিক হল। আজ তাকে হুবার্টের সাথে দেখা করতেই হবে। কোরম্যানের মনে যাতে ভুল ধারণা জন্মায় সেজন্য রলিন্সের পথে কিছুদূর এগুলো সে। তারপর একমাইল দূরে গিয়ে পেছনদিকটা দেখল তীক্ষ্ণ নজরে। বক্স বি আর ক্যান্টলিন র্যাঞ্চের মাঝের জমি পার হচ্ছে একজন অশ্বারোহী। ঘোড়াটা স্ট্যালিয়ন! অ্যাডাম বেঞ্চলিও স্ট্যালিয়নে চড়ে।
আগেই আন্দাজ করেছিল, চমকাল না জুয়াড়ী। বক্স বিতে সম্ভবত কাল রাতে পৌঁছেছে অ্যাডাম। ওর খবর জেনেছে ফোরম্যান বা জোডির মুখে। তারপর বুঝে নিয়েছে কোথায় রাত কাটাবে সে। ভোরে উঠেই ক্যান্টলিন র্যাঞ্চের উদ্দেশে ঘোড়া ছুটিয়েছে।
গতি বাড়ানোর জন্য বের পেটে স্পরের খোঁচা দিল প্যাট্রিক হল। চিন্তার আপাতত কোনও কারণ নেই, ক্যান্টলিনে গিয়ে প্রথমে কোরম্যানের কাছ থেকে ওর খোঁজ জানবে অ্যাডাম। তারপর সে রলিন্স যাচ্ছে মনে করে ঘোড়া ছোটাবে।
ওর কিছুদূর সামনেই ফেরিস আর সেমিনো মাউন্টিনের মাঝখানের সরু প্যাসেজ। ওই পথে গেলে ওকে ধরে ফেলতে পারবে অ্যাডাম। না পারলেও অন্তত খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাবে, নজর রাখতে পারবে ওর ওপর। অ্যাডামের চোখের সামনে হুবার্টের সাথে দেখা করার কোনও ইচ্ছে নেই প্যাট্রিক হলের।
ট্রেইলের বামপাশে সেমিনো পর্বতের গায়ে জন্মানো জঙ্গল আধমাইল দূরে এসে থেমে গেছে। ট্রেইল ছেড়ে সেদিকে এগুলো জুয়াড়ী। দুশো গজ এগুনোর পর সামনে শুকনো, শক্ত জমি। হাল্কা হলেও ঘোড়র পায়ের ছাপ পড়বে, অনুসরণ করতে অসুবিধে হবে না। কোনও দক্ষ ট্র্যাকারের। ট্রাকগুলো অ্যাডামের চোখে পড়ুক না পড়ুক, এখন আর কিছুই যায় আসে না প্যাট্রিক হলের।
সমতল জমি নিচু হয়ে গেছে হঠাৎ। কিনারায় পড়ে আছে বড় বড় বোল্ডার। ঢাল বেয়ে ঘোড়া নামিয়ে থামল সে। একহাতে বের দড়ি ধরে স্ক্যাবার্ড থেকে নামিয়ে আনল কারবাইন। একটা পাথরে ঘোড়ার দড়ি পেঁচিয়ে বোল্ডারের আড়ালে সরে এল। পাম্প করে কারবাইনের চেম্বারে একটা শেল ঢুকিয়ে কাঁধে ঠেকাল ওটা ঢালের উঁচুতে বুক রেখে।
ট্রিগারে আঙুল বসিয়ে অসীম ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে। অ্যাডাম যদি ট্র্যাক করতে না পারে, চলে যেতে দেবে সে অক্ষত অবস্থায়। কিন্তু যদি অনুসরণ করে এগিয়ে আসে, আজ কেউ ওকে বাচাতে পারবে না। অ্যাডামকে খুন করে হলেও বার্টের সাথে দেখা তাকে করতেই হবে। চার লক্ষ ডলার ছেড়ে দেয়া যায় না!
আধঘণ্টা পর দেখা গেল অ্যাডামকে। সহজ ভঙ্গিতে ঘোড়ায় বসেছে। সে, রলিন্স যাবার রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জুয়াড়ী যে তার সামনে আছে সে ব্যাপারে অ্যাডাম নিশ্চিত। আগে বেড়ে ধরতে চায় না।
প্যাট্রিক হল যেখানটায় রাস্তা ছেড়েছে তার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অ্যাডাম বেঞ্চলি। কারবাইন তাক করল জুয়াড়ী। অ্যাডাম ট্রাক দেখে এদিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলেই গুলি করবে মাথায়। ঘোড়াটাকে নিজের ইচ্ছেয় চলতে দিয়ে একটা সিগারেট বানিয়ে ধরাল অ্যাডাম, যেখানে জুয়াড়ী রাস্তা বদলেছে সে জায়গাটা পেরিয়ে গেল অজান্তেই। টের পেল না নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ভাগ্য আজ বাচিয়ে দিল তাকে।
কাঁধ থেকে কারবাইন নামিয়ে নিল প্যাট্রিক হল। ট্রেইলের দিকে তাকিয়ে থাকল দশ-পনেরো মিনিট। অ্যাডাম রলিন্সের পথে চোখের আড়ালে চলে যাওয়ার পর উঠে দাঁড়িয়ে কাপড় থেকে ধুলোমাটি ঝাড়ল। কারবাইনটা স্ক্যাবার্ডে ঢুকিয়ে রেখে স্যাডিলে চাপল। এখন হুবার্টের সাথে দেখা করতে যাবার পথে আর কোনও বাধা নেই।