তৃতীয়অনুবাকপ্রথমসূক্ত : পিতৃমেধঃ
[ঋষি : অথর্বা।দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, অগ্নি, ভূমি, ইন্দ্র, আপ।ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, জগতী, শক্করী, ভূরিক, বৃহতী।]
ইয়ং নারী পতিলোকং বৃণানা নি পদ্যত উপ ত্বা মর্ত্য প্রেতম। ধর্মং পুরাণমনুপালয়ন্তী তস্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি৷৷৷৷ উদীৰ্ষ নাভি জীবলোকং গতাসুমেতমুপ শেষ এহি। হস্তগ্রাভস্য দধিযোস্তবেদং পর্জনিত্বমভি সং বভূথ। ২৷ অপশ্যং যুবতিং নীয়মানাং জীবাং মৃতেভ্যঃ পরিণীয়মানাম। অন্ধেন যৎ তমসা প্রাবৃতাসীৎ প্রাক্তো অপাচীমনয়ং তদেনাম ॥৩ প্রজানত্যয়ে জীবলোকং দেবানাং পন্থমনুসঞ্চরন্তী। অয়ং তে গোপতিস্তং জুষস্ব স্বৰ্গং লোকমধি রোহয়ৈনম্ ॥৪॥ উপ দ্যামুপ বেতসমবত্তরো নদীনা। অগ্নে পিত্তমপামসি ॥ ৫যং ত্বমগ্নে সমদহস্তমু নির্বাপয়া পুনঃ। ক্যাঙ্কুরত্র বোহতু শাণ্ডদূর্ব ব্যঙ্কশা ৷৬৷৷ ইদং ত একং পর উ ত একং তৃতীয়েন জ্যোতিষা সং বিশস্ব। সংবেশনে তন্বা চারুরেধি প্রিয়ো দেবানাং পরমে সধ৷৷ ৭৷৷ উত্তিষ্ঠ প্রেহি প্র দ্রবৌকঃ কৃণুম্ব সলিলে সধস্থে। তত্র ত্বং পিতৃভিঃ সংবিদানঃ সং সোমেন মদস্ব সং স্বধাভিঃ ॥ ৮৷৷ প্র চ্যবস্ব তন্বং সং ভরস্ব মা তে গাত্রা বি হায়ি মো শরীর। মনো নিবিষ্টমনুসংবিশ যত্র ভূমের্জুসে তত্র গচ্ছ ॥৯॥ বচসা মাং পিতরঃ সোম্যাসো অঞ্জন্তু দেবা মধুনা ঘৃতেন। চক্ষুষে মা প্রতরং রয়ন্তো জরসে মা জরদষ্টিং বর্ধন্তু ॥১০
বঙ্গানুবাদ –এই পুরোবর্তিনী (ইয়ং) স্ত্রী (নারী) পতির দ্বারা অনুষ্ঠিত (পতিলোকং) যাগ-দান হোম ইত্যাদির ফলভূত স্বর্গ ইত্যাদি স্থান সহধর্মচারিণীত্বের দ্বারা সম্যক্ ভজমানা হয়েছেন (বৃণানা), (অর্থাৎ প্রাপ্তির জন্য অভিলাষিণী হয়েছেন)। এবস্তৃতা স্ত্রী, হে মরমধর্মী মনুষ্য (মত)! প্রকর্ষের সাথে (প্রেতং) এই ভূলোক হতে বিনির্গত হয়ে তোমার সমীপে অবশ্য গমন করছেন (অর্থাৎ অনুসরণ প্রাপ্ত হচ্ছেন)। অনাদি-শিষ্টাচার-সিদ্ধ বা স্মৃতিপুরাণ ইত্যাদি প্রসিদ্ধ (পুরাণং) ধর্ম অনুপালনের তিনি গমন করছেন। তথাবিধ অনুমরণ-কৃতবতী স্ত্রীর নিমিত্ত (তস্যৈ) এই ভূলোকে (জন্মান্তরেও) পুত্রপৌত্র ইত্যাদিরূপ প্রজা ও ধনরাশি (দ্রবিণং) প্রদান করো। (এখানে বক্তব্য এই যে, স্বেচ্ছায় সহমরণের প্রভাবে জন্মান্তরেও সে এমন পতি লাভ করবে)। [এই মন্ত্রে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় সহমরণাকাক্ষিণী পত্নীর কথা বলা হয়েছে। পরবর্তী মন্ত্রে ইহলোকে জীবিত থাকার জন্য আকাক্ষিণী অর্থাৎ সহমরণে অনিচ্ছুকা পত্নীর ইচ্ছাকে অনুমোদন বিষয়ে বলা হয়েছে। সুতরাং প্রাচীনকালে সহমরণপ্রথা যে শাস্ত্রানুসারে বাধ্যতামূলক ছিল না, তা বোঝা যায় ॥১॥
হে ধর্মপত্নী (নারী)! এই প্রাণধারীগণের লোককে (জীবলোকং–অর্থাৎ জন্মান্তরকৃত-ধর্মফলরূপ সুখদুঃখাত্মক ভূলোককে) অভিলক্ষ্য করে পতির নিকট হতে (অর্থাৎ পতির চিতা হতে) উত্থিত হয়ে আগমন করো (উদী)। গতপ্রাণ (গতাসু) যেস্থানে পতির নিকট (চিতায়) শয়ন করে আছো সেস্থানে শাস্ত্রাবিরোধী-দৃষ্ট ফলের অনুরোধে বা অভাবে পতির নিকট হতে প্রত্যাগমন করো। তোমার পাণিগ্রহণকর্তা (হস্তগ্রাভঃ তস্য) পতি তোমার অপত্য ইত্যাদি রূপে জন্মলাভ করেছেন; (অর্থাৎ জীবনাবস্থাতেই ঐহিক পুত্র ইত্যাদিরূপে তিনি তোমার অভিপ্রাপ্ত হয়েছেন)। ২।
শবসমীপে নীয়মানা যৌবনাবস্থাপেত (যুবতিং) জীবিত নারীকে গাভীর আস্তরণে (চাদরে) আবৃতাবস্থায় অবলোকন করছি। অনুস্তরণী সেই গাভী গাঢ় তমসায় অর্থাৎ অজ্ঞানলক্ষণের দ্বারা প্রকর্ষের সাথে বেষ্টিতা (প্রাবৃতা); (সে স্বয়ং হিতাহিত বিভাগ জ্ঞাত নয়)। সেই হেন গাভীকে (তৎ) পূর্বস্থান হতে (প্রাক্তঃ) অর্থাৎ শবসমীপ হতে অপাঙুখী (অপাচীং) করে অর্থাৎ শব হতে পরাস্থূখী করে আমাদের অভিমুখী করে আনয়ন করবো॥ ৩
হে অঘ্নে (বধের অযোগ্যা গাভী)! এই জীবলোককে প্রকর্ষের সাথে জ্ঞাত হয়ে (প্রজানতি) দেবগণের (ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণের) পন্থা (মার্গ অর্থাৎ যজ্ঞলক্ষণ) · অনুসঞ্চরণ করে আগমন পূর্বক ক্ষীর-দধি ইত্যাদি হবি নিম্পাদন করো। তোমার এই পালকের (গোপতিঃ) সেবা করো (জুষস্ব)। এই মৃত পুরুষকে (এন) স্বর্গলোকে অধিরোহণ করাও (অর্থাৎ স্বর্গপ্রাপ্তি করাও)। ৪৷
জলের উপর প্ররূঢ় ভূসংস্পর্শরহিত অবকা (শৈবাল) ও নদীতীরবর্তী বেতস (বেতগাছ) ইত্যাদি ঔষধি সমূহে রক্ষণসমৰ্থ সারভূতাংশ বিদ্যমান। [তৈত্তিরীয় সংহিতায় (৫৪, ৪।২) বেতস ও অবকার অপ্সরত্ব উক্ত হয়েছে। হে অগ্নি! তুমিও অপাং পিত্তং অর্থাৎ জলসম্বন্ধী পিত্তধাতু। এই নিমিত্ত আমি তোমাকে বেসের শাখা ও অবকা প্রভৃতির দ্বারা (সেইসঙ্গে নদীর ফেনা, বৃহদূর্বা, মণ্ডুকপণী ইত্যাদি ঔষধি সমূহের দ্বারা) তোমাকে শান্ত করছি; (অবত্তর ইতি)। ৫।
হে অগ্নি! তুমি যে (মৃত)-পুরুষকে সম্যক্ দগ্ধবান্ হয়েছে (সমদহঃ) তাকে পুনরায় সুখী করো (পুনর্নির্বপয়া); (অর্থাৎ তাকে দাহজনিত উষ্ণতা পরিহার করো–এটাই বক্তব্য)। এই দহন প্রদেশে (অত্র) ক্যাম্পূ নামক ঔষধি তথা জলের নিকট উৎপদ্যমানা অণ্ডাকৃতি-মূলসহিতা বা দীর্ঘকাণ্ডা ও বিধিশাখাযুক্তা (ব্যল্কশা) বৃহদ্বা নামে অভিহিতা শাণ্ডদূর্বা উৎপন্ন হোক ৷৷ ৬।
হে প্রেত! তোমার পরলোকগমনের নিমিত্ত এই গাৰ্হপত্য অগ্নি (গৃহস্থ ব্যক্তি কর্তৃক চিরকাল অবিচ্ছেদে রক্ষিত অগ্নি) এক জ্যোতিস্বরূপ; দ্বিতীয় অন্বহার্য-পচনাখ্যও এক জ্যোতি; (অর্থাৎ পিতৃলোকের উদ্দেশে মাসিক শ্রাদ্ধের স্বধান্ন পাককারী অগ্নিও দ্বিতীয় জ্যোতিস্বরূপ। তৃতীয় জ্যোতি আহুনীয় অগ্নি (যজ্ঞ বা হোম করণের যোগ্য অগ্নি)। তুমি এই জ্যোতির সাথে সঙ্গত হও (সং বিশেষ্য)। এই অগ্নি-সংস্কারজনিত দেবশরীরের দ্বারা (ইথং সংবেশনে তন্ব) তুমি অসাধারণ হয়ে (চারুঃ এধি) উস্কৃষ্ট দেবলোকে (পরমে সধস্থে) দেবানাং অর্থাৎ ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণের প্রিয়পাত্র (প্রিয়ঃ) হও। ৭।
হে প্রেত! তুমি এই স্থান হতে ঊর্ধ্বে উত্থিত হয়ে প্রকর্ষের সাথে অর্থাৎ শীঘ্র ধাবিত হও (প্রেহি প্ৰদব); এবং তারপর অন্তরিক্ষের অলৌকিকে (সলিলে সধস্থে) তোমার গৃহ (ওকঃ) স্থাপন করো (কৃণুম্ব)। সেই স্থানে তুমি তোমার পিতৃগণের (পিতৃভিঃ অর্থাৎ বহিষদ, অগ্নিদাত্ত ইত্যাদি নামে আখ্যাত পিতৃগণের) সাথে ঐকমত্য হয়ে (সম্বিদানঃ) সোমপানের দ্বারা তৃপ্ত হও। (সোমযাগেই নারাশংসাখ্য সোমরসের ভাগ পিতৃগণের; তা উপভোগ পূর্বক হর্ষিত হও। অথবা সোমের দ্বারা পিতৃলোকের অধিপতির সাথে আনন্দজনিত সম্মোহ প্রাপ্ত হও) ৮
হে প্রেত! তুমি এই স্থান হতে প্রকৃষ্টরূপে পতিত হও (প্রচ্যবস্ব); সেই নিমিত্ত তুমি আপন শরীরের (তন্বং) হস্ত-পাদ ইত্যাদি সকল অঙ্গকে একীভূত করো (ভরস্ব), তোমার গাত্রের (গাত্রাণি) হস্ত-পাদ ইত্যাদি যেন পরিত্যক্ত না হয় (মা বি হায়ি); তথা শরীরের অবয়বিভূত মধ্যদেহও যেন ত্যাগ করো (মা মৈব ত্যাক্ষীঃ)। যে স্থানে (যত্র) তোমার মন নিবিষ্ট বা অবস্থিত আছে, সেই স্থানে (অর্থাৎ মনের বিষয়ভূত সেই স্বর্গ ইত্যাদি লক্ষণান্বিত স্থানে) সম্যক্ প্রবিষ্ট হও (অনুসম্বিশস্ব)। তথা যে ভূপ্রদেশে (যত্র ভূমে) তুমি প্রীতিপ্রাপ্ত হয়ে থাকো. (জুয়সে), তথায় গমন করো; (অর্থাৎ সেই ভূপ্রদেশ প্রাপ্ত হও। ৯।
সোমের যোগ্য (সোম্যাসো) পিতৃদেববৃন্দ (পিতরঃ) আমি হেন যজমানকে (মাং) তেজের সাথে সংশ্লিষ্ট করে দিন (অঞ্জন্তু)। তথা সকল দেবগণ (দেবা) আমাকে মাধুর্যোপেত ঘৃতের দ্বারা (অর্থাৎ দীপ্তিকর আজ্যের দ্বারা) লেপন করুন (অঞ্জন্তু), অধিকন্তু, দর্শনের নিমিত্ত (চক্ষুষে) আমাকে প্রকৃষ্টতর প্লাবিত করুন (তারয়ন্তঃ); (অর্থাৎ আমি যাতে দীর্ঘকাল দর্শন করতে পারি, সেই নিমিত্ত রোগ ইত্যাদি হতে আমাকে পরাঙ্খী করুন–এটাই বক্তব্য) এবং যাবৎকাল পর্যন্ত আমার জরা থাকবে (জরসে), তাবৎকাল পর্যন্ত আমাকে জরদষ্টি করে (অর্থাৎ খাদ্য জীর্ণ করার সামর্থ্যবান্ করে) আমার বর্ধন সাধন করুন (বর্ধয়ন্তু)। ১০।
সূক্তস্যবিনিয়োগঃ –তৃতীয়েনুবাকে সপ্ত সূক্তানি। (তত্র প্রথম) সূক্তস্য আদ্যয়া চিতৌ ভার্যাং প্রেতেন সহ সংবেশয়েৎ। ঋপাঠস্তু৷৷ (১৮কা, ৩অ. ১সূ.)৷৷
টীকা –মূলে সম্পূর্ণ অনুবাকটিই একটি সূক্তে বিধৃত হলেও এখানে মোট সপ্ত সূক্তে বিভক্ত করা হয়েছে। এই প্রথম সূক্তের প্রথম মন্ত্রটিতে ভার্যা কর্তৃক মৃত স্বামীর চিতায় স্বেচ্ছায় আরোহণ পূর্বক মরণ বরণ অর্থাৎ সহমরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ঐ সূক্তের শেষভাগে বিশেষ টিপ্পনী দ্রষ্টব্য ॥ (১৮কা. ৩অ. ১সূ.)।
.
দ্বিতীয়সূক্ত : পিতৃমেধঃ
[ঋষি : অথর্বা।দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, অগ্নি, ভূমি, ইন্দ্র, আপ।ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, জগতী, শক্করী, ভূরিক, বৃহতী।]
বচসা মাং সমনষ্কৃগ্নিৰ্মেধাং মে বিষ্ণুনত্ত্বাস। রয়িং মে বিশ্বে নি যচ্ছন্তু দেবাঃ সোনা মাপঃ পবনৈঃ পুনন্তু ॥১॥ মা স্বরবো বর্ধন্তু। বর্চো ম ইন্দ্রো ন্যন হস্তয়োর্জরদষ্টিং মা সবিতা কৃণোতু৷৷ ২৷৷ যো মমার প্রথমো মর্ত্যানাং যঃ প্রেয়ায় প্রথমো লোকমেত। বৈবস্বতং সঙ্গমনং জনানাং যমং রাজানং হবিষা সপৰ্যত ॥ ৩৷৷ পরা যাত পিতর আচ যাতায়ং বো যজ্ঞো মধুনা সমক্তঃ। দত্তো অস্মভ্যং দ্রবিণেহ ভদ্রং রয়িং চ নঃ সর্ববীরং দধাত ॥৪॥ কথঃ কক্ষীবান্ পুরুমীঢ়ো অগস্ত্যঃ শ্যাবাশ্বঃ সোর্চনানাঃ। বিশ্বামিত্রোইয়ং জমদগ্নিরত্রিরবন্তু নঃ কশ্যপো বামদেবঃ ॥ ৫বিশ্বামিত্র জমদগ্নে বসিষ্ঠ ভরদ্বাজ গোতম বামদেব। শর্দিনো অত্রিরগ্রভীন্নমোভিঃ সুসংশাসঃ পিতরো মৃড়তা নঃ ॥৬॥ কস্যে মৃজানা অতি যন্তি রিপ্ৰমায়ুদধানাঃ প্রতরং নবীয়ঃ। আপ্যায়মানাঃ প্রজয়া ধনেনাধ স্যাম সুরভয়ো গৃহেযু ॥৭॥ অঞ্জতে ব্যঞ্জতে সমঞ্জতে ক্রতুং রিহন্তি মধুনাভ্যঞ্জতে। সিন্ধোরুচ্ছাসে পতয়মুক্ষণং হিরণ্যপাবাঃ পশুমাসু গৃহ্নতে ॥৮॥ যদ বো মুদ্রং পিতরঃ সোম্যং চ তেনো সচধ্বং স্বযশসো হি ভূত। তে অর্বাণঃ কবয় আ শৃপোত সুবিদা বিদথে হুয়মানাঃ ॥৯॥ যে অত্রয়ো অঙ্গিরসো নবগ্বা ইষ্টাবন্তো রাতিষাচো দধানাঃ। দক্ষিণাবন্তঃ সুকৃতো য উ স্থাস্যাস্মিন্ বহিষি মাদয়ধ্বম্ ॥১০।
বঙ্গানুবাদ –অগ্নি অর্থাৎ অঙ্গনাদিগুণযুক্ত দেব আমাকে তেজের সাথে সংযোজিত করুন (বৰ্চসা সমন); তথা বিষ্ণু আমার মুখে সর্বথা মেধা সংযোজিত করুন (আসন মেধাং নি অন); তথা সকল দেবগণ (বিশ্বে দেবাঃ) আমাকে সুখকরী ধন নিরন্তর নিয়মের দ্বারা প্রদান করুন (স্যোনাং রয়িং মে নি যচ্ছন্তু); তথা জলসমূহ (আপঃ) শোধনসাধন অংশের দ্বারা (পবনৈঃ) আমাকে শুদ্ধ করুন (পুনন্তু) ॥১॥
দিবসের অভিমানী দেবতা মিত্র ও রাত্রির অভিমানী দেবতা বরুণ–এঁরা উভয়ে আমাকে সর্বতোভাবে ধারণ করুন, বা বস্ত্র ইত্যাদি পরিধান করান (পর্যধাতাং); তথা অদিতির পুত্র (আদিত্যগণ) অর্থাৎ অন্য দেবগণ স্বরবে অর্থাৎ শোভন শব্দ করে বা আমাদের শত্রুগণকে সন্তপ্ত করে আমার বর্ধন করুন (বর্ধয়ন্তু)। আরও, ইন্দ্রদেব আমার বাহুদ্বয়ে বৰ্চ অর্থাৎ বল নিয়োজন করুন (নি অন); (অর্থাৎ ইন্দ্রের বাহুবল তার প্রসাদে লাভ করবো-এটাই বক্তব্য)। সকলের জনয়িতা (প্রসবিতা) দেব সবিতা আমাকে জরাবস্থা পর্যন্ত ভোজন-সমর্থ করে দীর্ঘায়ু করুন (জরদষ্টিং কৃণোতু)। ২।
যে রাজা যম মরণধর্মী মনুষ্যগণের মধ্যে (মর্ত্যানাং) স্বয়ংই প্রথম মরণ প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যিনিই মরণের পরে প্রথম লোকান্তর প্রাপ্ত হয়েছিলেন, (প্রথম মরণ ও তারপর লোকান্তর প্রাপ্তি, এই উভয়ই যমোপযজ্ঞ ছিল), সেই বিবস্বানের পুত্র (বৈবস্বত) যম জাত সকল প্রাণীর (জনানাং) সম্প্রপ্য; (অর্থাৎ প্রাণীকৃত পুণ্য ও পাপের তিনিই বিচারক)। অতএব হে ঋত্বিবৃন্দ! সেই হেন গুণবিশিষ্ট রাজা বা ঈশ্বর স্বরূপী যমকে আজ্য-পুরোডাশ ইত্যাদির দ্বারা পূজা। করো (হবিষা সপ্যত)। ৩।
হে পিতৃদেবতাগণ! আমাদের কৃত পিতৃযজ্ঞরূপ কর্মের দ্বারা সন্তুষ্ট হয়ে তোমরা পরাগমন করো (পরা যাত); (অর্থাৎ পরার্মুখী হয়ে নিজ লোকে গমন করো); এবং পুনরায় যাগার্থে আমাদের দ্বারা আহূত হয়ে আগমন করো (আ যাত)। তোমাদের নিমিত্ত (বঃ) আমাদের দ্বারা প্রদত্ত মধুর আজ্যের দ্বারা সম্যক্ সংসিক্ত (সমক্তঃ) এই যজ্ঞ স্বীকার করে আমাদের নিমিত্ত (অস্মভ্যং) কল্যাণকর ধন (ভদ্রং দ্রবিণা) এই গৃহে (ইহ) ধারণ করো (দধাত)। তথা পুত্র পৌত্র ইত্যাদিরূপ বীর্যজাত প্রজা (সর্ববীরম) ও পশু ইত্যাদিরূপ ধন (রয়িং) আমাদের নিমিত্ত ধারণ করো। ৪।
কথ (যজুর্বেদীয় কাথ শাখার প্রণেতা), কক্ষীবান্ (কক্ষদেশে অর্থাৎ কটিবন্ধে অশ্ব-রজু ধারণকারী), পুরুমীঢ় (বহু ধনশালী), অগস্ত্য (মিত্র-বরুণের রেতঃ হতে বশিষ্ঠ সহ জাত প্রসিদ্ধ মহর্ষি), শ্যাবাশ্ব (শ্যাবা অর্থাৎ কৃষ্ণবর্ণা অশ্বাযুক্ত), সোভরী (তপস্যা দ্বারা অসীম আত্মোন্নতি-সাধক প্রসিদ্ধ ঋষি), অর্চনানা (অৰ্চনীয় শকট-সম্পন্ন প্রসিদ্ধ ঋষি), বিশ্বামিত্র (সর্ব জগৎ মিত্র যাঁর), জমদগ্নি (জ্বলন্ত অগ্নির মতো কর্মকারী), অত্রি (সত্ত্ব-রজঃ তমঃ নেই যাঁর, বা আধ্যাত্মিক-আধিদৈবিক আধিভৌতিক ভেদ ভিন্ন ত্রিবিধ দুঃখানুভব যাঁর নেই), কশ্যপ (সর্ব জগৎ সর্বদা সূক্ষ্মভাবে দর্শনকারী), ও বামদেব (তত্ত্ববিষয়ে দ্যোতক বোধ যাঁর)–এই দ্বাদশ-সংখ্যক ঋষি আমাদের রক্ষা করুন (অয়ম্ অবন্তু)। ৫।
(এই মন্ত্রের পূর্বার্ধে ছয়জন ঋষিকে প্রথমে সম্বোধন করা হচ্ছে)-হে বিশ্বামিত্র, জমদগ্নি, বসিষ্ঠ (বসুমত্তমঃ। অতিশয় জিতেন্দ্রিয়), ভরদ্বাজ (সকলের ভরণকারী), গোতম (ন্যায়শাস্ত্র-প্রণেতা ঋষি) ও বামদেব! তোমরা আমাদের সুখদান করো (নঃ মৃড়ত)। হে মহর্ষি অত্রি! তুমি আমাদের বলকারক (শর্দি, শয়তি বলয়তীতি) হয়ে আমাদের আত্মীয়ত্বের দ্বারা গ্রহণ করে আমাদের গৃহ রক্ষা করো (অগ্রভীৎ)। (অথবা অত্রির সাথে শর্দি নামধারী অন্য কোন ঋষির নিকটও ঐ প্রার্থনা করা হয়েছে)। নমস্কারের দ্বারা বা আমাদের দীয়মান কব্যরূপ হেতুর দ্বারা (অর্থাৎ মৃত পিতৃলোককে দেয় অন্ন ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্যের কারণে), হে পিতৃদেবতাগণ! তোমরা আমাদের দ্বারা। সংস্তুত হয়ে (সুসংশাসঃ) আমাদের সুখী করো ৷৷ ৬ ৷
দহনদেশে (কস্যো) বান্ধব-মৃত্যুজনিত দুঃখপ্রাপ্তি (মৃজানাঃ) ও শবস্পর্শজনিত পাপ (রিং) অতিক্রম করে (অতি যন্তি) আমরা অতিশয় উক্তৃষ্ট আয়ু (অর্থাৎ দীর্ঘকাল-জীবন) প্রকৃষ্টতর ভাবে ধারণ করবো (নবীয়ঃ প্রতরং); আমরা (এই হেতু) পুত্রপৌত্র ইত্যাদিরূপ (প্রজয়া), কনক-রজত ইত্যাদি লক্ষণ এবং গো-অশ্ব ইত্যাদি ধনের দ্বারা (ধনেন) বর্ধমান (আপ্যায়মানাঃ) হবো। অনন্তর (অধ) গৃহে শোভনগন্ধোপেত অর্থাৎ প্রশংসনীয় গুণযুক্ত (সুরভয়ঃ) হয়ে থাকবো (স্যাম)। ৭
(পিতৃলোকপ্রাপ্ত জনগণ ধূমাকীর্ণ পথে গমন পূর্বক চন্দ্রলোক প্রাপ্ত হন এবং তথায় ইহলোকে কৃত যাগ-হোম ইত্যাদি সম্পর্কিত পুণ্যজনিত ফল ভোগ করে থাকেন। এই কারণে এই মন্ত্রে সোম স্তুত হচ্ছেন)–সোমযাগ প্রবর্তন করে ঋত্বিকগণ প্রথমে যজমানকে অঞ্জনের দ্বারা সংস্কৃত করিয়ে থাকেন (অঞ্জতে)। এই অঞ্জন লৌকিক অঞ্জন রূপে প্রতিপাদিত (ব্যঞ্জতে)। অতঃপর ঐ লৌকিক অঞ্জন হতে ভিন্ন অন্য প্রকারে যজমানের চক্ষুর অঞ্জন করেন, তথা সম্যক লিপ্ত করেন (সমঞ্জতে)। অতঃপর যজমানকে সোমযাগ-সংকল্প আস্বাদন করিয়ে থাকেন (ক্রতুং রিহন্তি); (অর্থাৎ সোমের দ্বারা যজ্ঞ করবো এমন বাক্য উচ্চারণ করিয়ে থাকেন)। অতঃপর মাধুর্যোপেত নবনীতের দ্বারা (সোমকে) যজমানের আপাদমস্তক প্রলিপ্ত করেন (মধুনা অভ্যঞ্জতে)। (আকাশে স্থিত চন্দ্র পৃথিবীতে সোমরূপ লতারূপে বিরাজিত–তা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে)–স্যন্দনশীল বেগবান বা জলসম্ভারশালী) সমুদ্রের অভিবৃদ্ধিকালে (সিন্ধুরুচ্ছাসে) উদয়প্রাপ্ত (অর্থাৎ অভিষবকালে পতয়ন্ত বা উত), অমৃতময় কিরণে অভিষিক্ত (উক্ষণ), আপন প্রভায় সর্ব জগৎকে প্রকাশকারী (পশু),–এই হেন গুণবিশিষ্ট (অর্থাৎ রসাত্মন) সোমকে হিরণ্যপানি এ (হিরণ্যপাবাঃ অর্থাৎ হিরণ্যের দ্বারা পবিত্ৰীকৃত) ঋত্বিগণ স্থালীতে গ্রহণ করছেন (আসু গৃহুতে)। (সোমযাগে বিহিত চারিটি স্থালীতে গ্রহ চমস ইত্যাদি যজ্ঞপাত্র সোমরস গ্রহণের নিমিত্ত সংস্কার করা হচ্ছে–এটাই বক্তব্য) ৮
হে পিতৃগণ (পিতরঃ)! তোমাদের হর্ষজনক (মুদ্রং) ও সোমাহ (সোম্যং) যে ধন বিদ্যমান, সেই ধনের সাথে (তেননা) আমাদের সঙ্গত হও (সচধ্বং); (অর্থাৎ সেই ধন আমাদের প্রদান করো) এবং তোমরা স্বায়ত্তযশস্কা অর্থাৎ যশস্বী হও (স্বযশসো হি ভূত)। যে হেন তোমরা গমনশীল (অর্বাণঃ), ক্রান্তদর্শী (কবঃ) শোভনজ্ঞানী বা শোভনধনা (সুবিদত্রাঃ), সেই তোমরা আমাদের এই যজ্ঞে (বিদথে) হুয়মান হও; অর্থাৎ আমাদের আহ্বান শ্রবণ করো। ৯ ৷
(হে পিতৃবর্গ!) তোমাদের মধ্যে যারা অত্রিগোত্রোৎপন্ন (অত্রয়ঃ), বা যারা অঙ্গিরোগোত্ৰজাত (অঙ্গিরসঃ) (বা অত্রিমহর্ষিরূপে অঙ্গিরোরূপে অবস্থিত), যারা অভিনবগমনা (নবদ্যা), (অথবা অঙ্গিরসগণের কেউ কেউ সত্রযাগ পূর্বক নবভিমাসৈঃ অর্থাৎ নয়মাসে স্বর্গে গমন করার জন্য নবথা নামে অভিহিত হয়, তারা), যারা দর্শপূর্ণমাস ইত্যাদি যাগকারী (ইষ্টাবন্তঃ), যারা দক্ষিণাযুক্ত ক্রিয়াকারী (রাতিযাচঃ), যারা দানযুক্ত (দধানাঃ), অন্য যারা দক্ষিণাদানযুক্ত (দক্ষিণাবন্ত) হয়ে পুণ্যকারী বা পুণ্যবন্ত (সুকৃত) হয়েছে, সেই হেন তোমরা এই যজ্ঞে বা আস্তীর্ণ দর্ভে (বহিষি) উপবিষ্ট হয়ে আমাদের প্রদত্ত হবির দ্বারা তৃপ্ত (মাদয়ধ্বং)। ১০।
সূক্তস্যবিনিয়োগঃ –বচসা মাং ইতি আদ্যায়া ঋচঃ পূর্বয়া ঋচা সহ উক্তো বিনিয়োগ। তৎপাঠস্তু৷৷ (১৮কা, ৩অ. ২সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তের প্রথম মন্ত্রটি পূর্ববর্তী মন্ত্রসমূহের সাথে বিনিয়োগ হয়। পরবর্তী মন্ত্রগুলি পিতৃযজ্ঞে পিতৃগণের সমীপে প্রার্থনায় বিনিয়োগ হয় ॥ (১৮কা, ৩অ. ২সূ.)।
.
তৃতীয়সূক্ত : পিতৃমেধঃ
[ঋষি : অথর্বা।দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, অগ্নি, ভূমি, ইন্দ্র, আপ।ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, জগতী, শক্করী, ভূরিক, বৃহতী।]
অধা যথা নঃ পিতরঃ পরাসঃ প্রত্নাসো অগ্ন ঋতমাশশানাঃ। শুচীদয় দীধ্যত উথশাসঃ ক্ষামা ভিন্তো অরুণীরপ ব্রম্ ॥১॥ সুকৰ্মাণঃ সুরুচো দেবয়ন্তো অয়ো ন দেবা জনিমা ধমন্তঃ। শুচন্তো অগ্নি বাবৃধন্ত ইন্দ্ৰমুবীং গব্যাং নো অক্ৰ৷ ২৷৷ আ ফুথেব ক্ষুমতি পশ্বে অখ্যদ দেবানাং জনিমান্তগ্রঃ। মর্তাসশ্চিদুর্বশীরকৃপন্ বৃধে চিদর্য উপস্যায়োঃ ॥৩॥ অকর্ম তে স্বপসো অভূম ঋতমবনুষসসা বিভাতীঃ। বিশ্বং তদ ভদ্রং যদবন্তি দেবা বৃহৎ বদেম বিদথে সুবীরাঃ ॥৪॥। ইন্দ্রো মা মরুত্বান্ প্রাচ্যা দিশঃ পাতু বাহুচ্যুতা পৃথিবী দ্যামিবোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃত যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ ॥৫॥ ধাতা মা নিঋত্যা দক্ষিণায়া দিশঃ পাতু বাহুচ্যুতা পৃথিবী দ্যামিবোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ ৷ ৬. অদিতির্মাদিতৈঃ প্রতীচ্যা দিশঃ পাতু বাহুচ্যুতা পৃথিবী দ্যামিবোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ৷৷ ৭ ৷৷ সোমো মা বিশ্বৈর্দেবৈরুদীচ্যা দিশঃ পাতু বাহুচ্যুতা পৃথিবী দ্যামিবোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃত যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥৮ ৷ ধর্তা হ ত্বা ধরুণো ধারয়াতা ঊর্ধ্বং ভানুং সবিতা দ্যামিবোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥ ৯৷৷ প্রাচ্যাং ত্বা দিশি পুরা সমৃতঃ স্বধায়ামা দমি বাহুচ্যুতা পৃথিবী দ্যামিবোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ ॥১০।
বঙ্গানুবাদ –আরও (অধ), যে প্রকারে আমাদের পূর্বকালীন উৎকৃষ্ট (পরাসঃ প্রত্নাসঃ) পিতৃপিতামহগণ (বা আমাদের পিতৃভূত অঙ্গিরাগণ), হে অগ্নি! তোমার প্রসাদে যজ্ঞ ব্যাপ্ত করে (ঋতম্ আশশানাঃ) দীপ্ত স্থানে (অর্থাৎ নাকপৃষ্ঠাখ্য স্থানে) গমন করেছেন (শুচীদয়ন), উথ শস্ত্রের দ্বারা দীপ্যমান সেই হেন গুণবিশিষ্ট পিতৃপুরুষগণ রাত্রির অন্ধকার (ক্ষামা) ভেদ করে (ভিতঃ) (অর্থাৎ আপন তেজে নিবর্তন করে) অরুণবর্ণা উষাকাল অপাবৃত অর্থাৎ প্রকাশ করেছিলেন। (অরুণীরপ ব্রণ)। (অথবা এইস্থানে একটি আখ্যায়িকাও বলা হয়েছে, মনে করা যেতে পারে; যথা–পুরাকালে পণি-নামক অসুরগণ অঙ্গিরা-গোত্রীয় ঋষিগণের যজ্ঞসাধনভূতা গাভীগুলিকে অপহৃত করে ভূমির নিম্নে একটি গহ্বরে গোপন করে রেখেছিল। অঙ্গিরাগণ তা জ্ঞাত হয়ে ইন্দ্রের সহায়তায় সেই ভূমি-গহ্বর বিদারিত করে গাভীগুলিকে পুনরায় প্রাপ্ত হয়েছিলেন।–এই আখ্যায়িকার পক্ষে কতকগুলি শব্দের পরিবর্তিত অর্থ লক্ষণীয়; যথা–ক্ষাম (ভূমি), ভিন্দন্তঃ (বিদারণ করণ), অরুণী, (অরুণবর্ণা গাভী), অপ ব্রন (গহ্বরের দ্বার অপবৃত করে প্রাপ্তি) ইত্যাদি। ১।
শোভনকর্মা (সুকৰ্মাণঃ) শোভন দীপ্তিশালী (সুরুচঃ) পিতৃদেবগণ (দেবাঃ) দেবত্ব (প্রাপ্তির) ইচ্ছায় (দেবয়ন্তঃ), লৌহকার যেমন লৌহকে (বহ্নিদ্বারা) পরিশুদ্ধ করে (ধমন্তঃ), সেই রকমে আপন জন্মকে তপস্যার দ্বারা শোধন করে (শুচন্তঃ) দেবত্ব লাভ পুর্বক গার্হপত্য ইত্যাদি অগ্নিকে (অগ্নিং) প্রজ্বালিত করে স্তুতির দ্বারা ইন্দ্রকে বর্ধিত করেছেন (ববৃধন্তঃ); তাঁদের মহতী (উব্বীং) গাভীসমূহ আমাদের সর্বদিকে (পরিসদন) নিবাস (বা বিচরণ) করছে (অক্র)। ২
বোদ্যত (উগ্রঃ) অগ্নি যজ্ঞাই ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণের (দেবানাং) জন্ম বা প্রাদুর্ভাব (জনম) জ্ঞাত হতে সক্ষম (অন্তি)। যেমন শব্দবতী গাভীর যূথসমূহের মধ্যে পশুর স্বামী (পালক) তাদের আপন গাভীকে দেখতে পায়। (যদ্বা দাহকোগ্নি সম্বোধ্য–অর্থাৎ মৃতপুরুষকে দহনকারী অগ্নির উদ্দেশে বলা হচ্ছে)-হে অগ্নে! (ত্বয়া দহ্যমানো)। তোমার দ্বারা দহ্যমান (অয়ং যজমানঃ) এই যজমান (তৎপ্রসাদাৎ) তোমার প্রসাদ হতে (উঃ) উনূর্ণবল লাভ করে (ক্ষুমতি) শব্দবতী (যুথে) গো-সম্মের মধ্যে (পঃ) পশুর আত্মীয় অর্থাৎ পালক (আখ্যৎ) যেমন আপন পশুগণকে জ্ঞাত হয় (অর্থাৎ দেবলোকে গত এই যজমানের অন্তিকে দেবগণ প্রাদুর্ভূত হন), তেমনই (মর্তাসশ্চিৎ) মনুষ্যজাতীয়গণও (তোমার প্রসাদে) উর্বশী প্রমুখ অপ্সরীদের (অকৃপ্রন) অকৃত্রিমরূপে লাভ করে (অর্থাৎ উপভোগে সমর্থ হয়ে থাকে) এবং (তোমার সে প্রসাদে) দেবত্ব প্রাপ্ত হয়ে (অৰ্য্যঃ) স্বামী হয়ে (উপরস্য) গর্ভাশয়ে (বীর্য) নিষিক্ত পূর্বক (আয়োঃ) গর্ভাবস্থ মনুষ্যের বর্ধন করে; (অর্থাৎ পিতার প্রসাদ হতে পুত্র-পৌত্র ইত্যাদির অভিবৃদ্ধি হয়ে থাকে–এই-ই ভাবার্থ) ॥ ৩॥
হে পালক অগ্নি (অব)! তোমাকে পরিচর্যা করবো (তে অকর্ম)। অতএব তোমার প্রসাদে শোভনকর্মা হবো (স্বপসঃ অভূম); (অর্থাৎ আমাদের কৃত যাগ-হোম ইত্যাদি কর্মসমূহ যেভাবে শোভন ফলযুক্ত হয় সেইভাবে সাধিত করবো)। তথা প্রকাশিকা (বিভাতীঃ) ঊষার সত্য (উষসশ্চ ঋত) (অর্থাৎ যাগ-দান ইত্যাদি কর্মফল-লভ্য কর্ম) সাধিত করবো। যে শাস্ত্রবিহিত কর্ম (যৎ) দেবগণ রক্ষা করেন (দেবা অবন্তি) তা সকলের কল্যাণকর হয়ে থাকে (তৎ বিশ্বং ভদ্রং ভবতি)। আমরাও শোভন পুত্র ইত্যাদির দ্বারা যুক্ত হয়ে (সুবীরাঃ) যজ্ঞে (বিদর্থে) মহৎ স্তোত্র উচ্চারিত করবো (বৃহৎ বদাম)। ৪
একোনপঞ্চাশ সংখ্যক মরুৎ-দেবতাগণের সাথে (মুরুত্বা) ইন্দ্র, সংস্কারকারক আমাকে (মা-মাং সংস্কর্তারং) পূর্বদিক সম্বন্ধি ভয়ের হেতু হতে তেমনই রক্ষা করুন (প্রাচ্যা দিশঃ পাতু); যেমন বাহুচ্যুতা পৃথিবী (দানের নিমিত্ত ভূমিদানকারীর বাহু হতে নির্গত ভূমি বা প্রতিগ্ৰহ-সম্বন্ধিরূপে প্রাপ্তা ভূমি–অর্থাৎ উদকপূর্ব ভূমির দাতা বা প্রতিগ্রহীতা) উপভোগ্য স্বর্গলোকে (দ্যামিববাপরি) পালিত হয়। আরও, লোকের পুণ্যফলভূত স্বর্গ ইত্যাদি প্রাপ্তির (লোককৃতঃ) এবং সেই প্রাপ্তির উপায়ভূত মার্গের কর্তা দেবগণকে আমরা হবির দ্বারা পূজা করছি। (যজামহে)। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ সহ হুতভাগারূপে (অর্থাৎ স্বাহাকার বষটকারের দ্বারা অগ্নিতে প্রক্ষিপ্ত হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে) আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধকর্মে অবস্থান করো (ইহ স্থ)। ৫।
সর্ব জগতের বিধাতা বা ধারয়িতা (ধাতা) আমাকে (দক্ষিণ দিকস্থ) আর্তিকরী পাপদেবতা নির্ঋতির ভয় হতে (অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রাক্ষস পিশাচ ইত্যাদি হতে) রক্ষা করুন (দক্ষিণায়াঃ দিশঃ মাং পাতু)। লোকের পুণ্যফলভূত স্বর্গ ইত্যাদি প্রাপ্তির এবং তার উপায়ভূত মার্গের কর্তা দেবগণকে আমরা হবির দ্বারা পূজা করছি। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ সহ স্বাহাকার-বষট্কারের দ্বারা অগ্নিতে প্রক্ষিপ্ত হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধকর্মে অবস্থান করো। ৬।
অদিতি (অদীনা দেবমাতা) তাঁর স্বপুত্র আদিত্যগণের সাথে (সা আদিত্যৈঃ) পশ্চিম দিক হতে (অর্থাৎ পশ্চিমদিকস্থ রাক্ষস পিশাচ ইত্যাদির ভয় হতে) আমাকে রক্ষা করুন। লোকের পুণ্যফলভূত স্বর্গ ইত্যাদি প্রাপ্তির এবং তার উপায়ভূত মার্গের কর্তা দেবগণকে আমরা হবির দ্বার পূজা করছি। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ সমভিব্যাহারে হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধকর্মে অবস্থান করো ॥ ৭৷
সকল দেবগণ সহ (বিশ্বৈঃ দেবৈঃ) সোমদেবতা আমাকে উত্তর দিক হতে (মাং উদীচ্যা দিশঃ) রক্ষা করুন (পাতু)। (অর্থাৎ উত্তর দিকস্থায়ী রাক্ষস-পিশাচ ইত্যাদির ভয় হতে রক্ষা করুন)। লোকের পুণ্যফলভূত স্বর্গ ইত্যাদি প্রাপ্তির এবং তার উপায়ভূত মার্গের কর্তা দেবগণকে আমরা হবির দ্বারা পূজা করছি। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ সমভিব্যাহারে হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধকর্মে অবস্থান। করো। ৮।
হে প্রেত! সকল জগতের ধারয়িতা (ধারণকর্তা) ধর্তা নামক উধ্বদিকের অভিমানী দেবতা ঊধ্বদিকে অবস্থিত লোকান্তরে গমনোদ্যত বা ঊর্ধ্বমুখী তোমাকে ধারণ করুন। (কেমন ভাবে? না) যেমন সর্বপ্রেরক সূর্য (সবিতা) দীপ্ত দ্যুলোককে উপরে যথা ভানুং দ্যাং ধারণ করেছেন। লোকের পুণ্যফলভূত স্বর্গ ইত্যাদি প্রাপ্তির এবং তার উপায়ভূত মার্গের কর্তা দেবগণকে আমরা হবির দ্বারা পূজা করছি। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ সমভিব্যাহারে ও হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধকর্মে অবস্থান করো। ৯
হে প্রেত! দহন-স্থান হতে পূর্বদিকের পার্শ্বে (প্রাচ্যাং ত্বা দিশি) কম্বলের দ্বারা আবেষ্টিত (পুরা সমৃতঃ) আমি, তোমাকে স্বধাতে (অর্থাৎ পিতৃদেবগণের তৃপ্তিকরী জল-পিণ্ড ইত্যাদিতে) ধারণ করছি (দধামি), যেমন দাতার হস্তচ্যুত ব্রাহ্মণকে প্রদত্ত ভূমি দাতাকে ও প্রতিগ্রহীতাকে স্বর্গের উপরে নাকপৃষ্ঠাখ্য লোকে পালন করায়; (অর্থাৎ সংস্কার কর্মের দ্বারা তোমার প্রেতত্ব-প্রচ্যুতিপূর্বক পিতৃদেবতাত্ব প্রাপ্তি করাচ্ছি), লোকের পুণ্যফলভূত স্বর্গ ইত্যাদি প্রাপ্তির এবং সেই প্রাপ্তির উপায়ভূত মার্গের কর্তা। দেবগণকে আমরা হবির দ্বারা পূজা করছি। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ সহ হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধ কর্মে অবস্থান করো। ১০।
সূক্তস্যবিনিয়োগঃ –অধা যথা নঃ ইতি আদিতসৃণাং ঋচাং প্রেতোপস্থানে বিনিয়োগ উক্তঃ ॥ (১৮কা, ৩অ. ৩সূ.)৷৷
টীকা –উপযুক্ত সূক্তের প্রথম চারটি মন্ত্র অগ্নির স্তুতিরূপে এবং অবশিষ্ট মন্ত্রগুলি প্রেতের উপস্থিতিতে বিনিয়োগ করা হয় ॥ (১৮কা, ৩অ. ৩সূ.)।
.
চতুর্থসূক্ত : পিতৃমেধঃ
[ঋষি : অথর্বা।দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, অগ্নি, ভূমি, ইন্দ্র, আপ।ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, জগতী, শক্করী, ভূরিক, বৃহতী।]
দক্ষিণায়াং ত্বা দিশি পুরা সমৃতঃ স্বধায়ামা দমি বাহুচ্যুতা পৃথিবী দ্যামিবোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥১॥ প্রতীচ্যাং ত্বা দিশি পুরা সমৃতঃ স্বধায়ামা দমি বাহুচ্যুতা পৃথিবী দ্যামিবোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥ ২ : উদীচ্যাং ত্বা দিশি পুরা সমৃতঃ স্বধায়ামা দমি বাহুচ্যুতা পৃথিবী দ্যামির্বোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ হ ৷ ৩৷৷ ধ্রুবায়াং ত্বা দিশি পুরা সম্পৃতঃ স্বধায়ামা দমি বাহুচ্যুতা পৃথিবী দ্যামিবোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ। ৪৷৷ ঊর্ধ্বায়াং ত্বা দিশি পুরা সমৃতঃ স্বধায়ামা দমি বাহুচ্যুতা পৃথিবী দ্যামিবোপরি। লোককৃতঃ পথিকৃত যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥ ৫ (ষষ্ঠীসপ্তমৌ ঘৌ যজুর্মন্ত্রেী)। ধর্তাসি ধরুণোহসি বংসগোহসি ॥ ৬৷৷ উদপূরসি মধুপূরসি বাতপূরসি ॥৭॥ ইতশ্চ মামুতশ্চাবতাং যমে ইব যতমানে যদৈত।. প্র বাং ভর মানুষ দেবয়ন্তো আ সীতাং স্বমু লোকং বিদানে॥৮॥ স্বাসস্থে ভবতমিলবে নো যুজে বাং ব্ৰহ্ম পূর্বং নমোভিঃ। বি শ্লোক এতি পথ্যেব সূরিঃ শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতাস এতৎ ॥৯॥ ব্রীণি পদানি রুপো অন্বরোহচ্চতুষ্পদীমন্বৈতঘ্ৰতেন। অক্ষরেণ প্রতি মিমীতে অর্কমৃতস্য নাভাভি সং পুনাতি ॥১০.।
বঙ্গানুবাদ –হে প্রেত। পূর্বের মতো (পুরা) আত্মরক্ষার্থে কম্বল ইত্যাদির দ্বারা প্রাবৃতাঙ্গে আমি (দহনস্থান হতে) দক্ষিণদিক্-ভাগে তোমাকে পিতৃদেবরূপে স্বধাতে স্থাপন করবো; (অর্থাৎ তোমাকে স্বধাকার-ভাজন করবো); যেমন ভূমির দাতা ও প্রতিগ্রহীতা স্বর্গলোকে পালিত হয়। লোকের পুণ্যফলভূত স্বর্গ ইত্যাদির প্রাপ্তি এবং সেই প্রাপ্তির উপায়ভূত মার্গের কর্তা দেবগণকে আমরা হবির দ্বারা পূজা করছি। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ সহ হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধ কর্মে অবস্থান করো। ১।
হে প্রেত। পূর্বের মতো আত্মরক্ষার্থে কম্বল ইত্যাদির দ্বারা প্রাবৃতাঙ্গে আমি (দহনস্থান হতে) পশ্চিম দিক্-ভাগে তোমাকে পিতৃদেবরূপে স্বকারভাজন করছি; যেমন ভূমির দাতা ও প্রতিগ্রহীতা স্বর্গলোকে পালিত হয়। লোকের পুণ্যফলভৃত স্বর্গ ইত্যাদির প্রাপ্তি এবং সেই প্রাপ্তির উপায়ভূত মার্গের কর্তা দেবগণকে আমরা হবির দ্বারা পূজা করছি। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ সহ হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধ কর্মে অবস্থান করো ৷ ২৷৷
হে প্রেত! পূর্বের মতো আত্মরক্ষার্থে কম্বল ইত্যাদির দ্বারা প্রাবৃতাঙ্গে আমি (দহনস্থান হতে) উত্তর দিক-ভাগে (উদীচ্যাম) তোমাকে পিতৃদেবরূপে স্বকারভাজন করছি; যেমন ভূমির দাতা ও প্রতিগ্রহীতা স্বর্গলোকে পালিত হয়। লোকের পুণ্যফলভূত স্বর্গ ইত্যাদির প্রাপ্তি এবং সেই প্রাপ্তির উপায়ভূত মার্গের কর্তা দেবগণকে আমরা হবির দ্বারা পুজা করছি। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ সহ হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধকর্মে অবস্থান করো ॥ ৩ ৷৷
হে, প্রেত! পূর্বের মতো আত্মরক্ষার্থে কম্বল ইত্যাদির দ্বারা প্রাবৃতাঙ্গে আমি (দহনস্থান হতে) ধ্ৰুবা দিভাগে (অর্থাৎ স্থিরা অধরা দিকে) তোমাকে পিতৃদেবরূপে স্বকারভাজন করছি; যেমন ভূমির দাতা ও প্রতিগ্রহীতা স্বর্গলোকে পালিত হয়। লোকের পুণ্যফলভূত স্বর্গ ইত্যাদির প্রাপ্তি এবং সেই প্রাপ্তির উপায়ভূত মার্গের কর্তা দেবগণকে আমরা হবির দ্বারা পূজা করছি। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ সহ হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধকর্মে অবস্থান করো ৷৷ ৪
হে প্রেত! পূর্বের মতো আত্মরক্ষার্থে কম্বল ইত্যাদির প্রাবৃতাঙ্গে আমি (দহনস্থান হতে) উপরিতন দিভাগে (উর্ধ্বায়াং দিশি) তোমাকে পিতৃদেবরূপে স্বধাতে স্থাপন করবো; (অর্থাৎ তোমাকে স্বকারভাজন করবো); যেমন ভূমির দাতা ও প্রতিগ্রহীতা স্বর্গলোকে পালিত হয়। লোকের পুণ্যফলভূত স্বর্গ ইত্যাদির প্রাপ্তি এবং সেই প্রাপ্তির উপায়ভূত মার্গের কর্তা দেবগণকে আমরা হবির দ্বারা পূজা করছি। হে দেবগণ! তোমরা যারা ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ সহ হবির্ভাগ গ্রহণের উদ্দেশে আগমন করেছে, তারা এই পিতৃমেধ কর্মে অবস্থান করো ॥ ৫৷৷
হে অগ্নি! তুমি সকলের ধারয়িতা (ধর্তাসি)। তুমি সকলের দ্বারা ধৃত বা অবলম্বিত (ধরুণঃ), (অর্থাৎ গার্হপত্য ইত্যাদিরূপে সকলের দ্বারা ধার্যমান); তুমি বননীয়গতি বৃষভ (বংসগঃ)। [ ঋগ্বেদের চত্বারি শৃঙ্গা (৪৫৮৩) ইত্যাদি ঋক্ হতে অগ্নির বৃষভরূপের কল্পনা সমান্নাতা] ৷ ৬ ৷
(তথা) হে! অগ্নি! তুমি উদকের অর্থাৎ জলের পূরয়িতা (উদপূঃ অসি)। (তথা) মাক্ষিকের অর্থাৎ মধুর পূরয়িতা? (মধুপূঃ অসি)। (তথা) প্রাণাত্মক বায়ুর পূরয়িতা (বীতপূঃ অসি)। ৭
এই ভূলোক হতে স্বর্গলোক, পর্যন্ত (ব্যাপ্ত) (ইতশ্চ অমুতশ্চ) অর্থাৎ লোকদ্বয়ে অবস্থিত ভয়ের হেতু হতে আমি হেন যজমানকে (মাং) হবির্ধানীদ্বয় (অবতাং) (অর্থাৎ হবির আধারভূতা দ্যাবাপৃথিবী) রক্ষা করুক। হে দ্যাবাপৃথিবী! তোমরা যমজের মতো (যমে ইব) অর্থাৎ যুগপৎ উৎপন্না সন্তানের মতো সমান কর্মে ব্যাপৃত হয়ে (যতমানে-সমানব্যাপ্রিয়মাণে) জগৎসংসারকে পোষণের নিমিত্ত প্রযত্ন করো। তোমাদের দুজনের (বাং) দেবত্ব কামনা করে (দেবয়ন্তঃ) ঋত্বিক যজমান মনুষ্যগণ (মানুষাঃ) হবিঃ সংগ্রহ করেছেন (প্র ভরন); তোমরা দুজনে স্বকীয় (স্বং) স্থান (লোকং) বিদিত হয়ে (বিদানে) উপবেশন করো (আ সীদতাং)। ৮৷৷
হে হবির্ধানীদ্বয়! আমাদের (নঃ) সোমের নিমিত্ত (ইন্দবে) সুস্থির হও অর্থাৎ সুখাসনস্থ হও (স্বাসন্তে)। আমি তোমাদের (বাং) নমস্কারের সাথে (নমোভিঃ) চিরন্তন (পূর্বাং) সমর্থ স্তুতি (ব্রহ্ম) করছি। এই শ্লোকনীয় স্তুতিগুলি (শ্লোকঃ) বিশেষভাবে (ব্যেতি) তোমাদের নিকট গমন করুক, যেমন ধর্মপথগামী (পথোনপেতেন) বিদ্বান্ (সূরিঃ) (অভিমত ফল লাভ করেন)। আমাদের কৃত এই স্তোত্র (এতৎ) সকল দেবগণ (বিশ্বে অমৃতাসঃ, অর্থাৎ সকল অমরবৃন্দ) শ্রবণ করুক। ৯।
এই অনুষ্ঠীয়মান পৈতৃমেধিক (পিতৃমেধ-সম্বন্ধীয়) সংস্কারের দ্বারা (এতৎ ব্ৰতেন) চারিপাদশালিনী গাভী (চতুষ্পদী অর্থে অনুস্তরণী গাভী) দ্যুলোককে লক্ষ্য রেখে ক্রমে তিন লোকে আরোহণ করে থাকে (অম্বারোহৎ); (অর্থাৎ সংস্কারমাহাত্মে মৃতজন লোকত্রয়ে ব্যাপ্ত হয়ে যায়)। পরিচ্ছেদক শরীর ত্যাগ করে ব্যাপক বা বিনাশরহিত আত্মস্বরূপের দ্বারা অর্চনীয় সুকৃতফল (স্বর্গ ইত্যাদি) লাভ করে (অর্কং) কিংবা সূর্যের ন্যায় প্রতিমুখে ব্যাপ্ত হয় (প্রতি মিমীতে) বা সূর্যের প্রতিবিম্ব হয়। সত্যের উদক বা যজ্ঞের নামধেয় (ঋতস্য নাভৌ) তার উৎপত্তিস্থানে (অর্থাৎ সূর্যমণ্ডলের) সর্বত্র বা অভিমুখে সম্যক পূত হয়ে অবস্থান করে (অভি সম্ পুনাতি) ॥ ১০৷
সূক্তস্যবিনিয়োগঃ –দক্ষিণায়াং ত্বা দিশি ইত্যাদিতঃ পঞ্চানাং আজহোমে অভিমন্ত্রণে চ। বিনিয়োগ উক্তঃ (১৮কা, ৩অ. ৪).।
টীকা— উপযুক্ত সূক্তের প্রথম পাঁচটি মন্ত্র আজ্যহোমে ও অভিমন্ত্রণে বিনিয়োগ হয়। ষষ্ঠ ও সপ্তম মন্ত্র দুটি যজুমন্ত্র ॥ (১৮কা, ৩অ. ৪সূ.)।
.
পঞ্চমসূক্ত: পিতৃমেধঃ
[ঋষি : অথর্বা।দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, অগ্নি, ভূমি, ইন্দ্র, আপ।ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, জগতী, শক্করী, ভূরিক, বৃহতী।]
দেবেভ্যঃ কমবৃণীত মৃত্যুং প্রজায়ৈ কিমমৃতং নাবৃণীত। বৃহস্পতির্যজ্ঞমতনুত ঋষিঃ প্রিয়াং যমস্তম্ব মা রিরেচ ॥১॥ মগ্ন ঈড়িতে জাতবেদোহবাঢ়ব্যানি সুরভীণি কৃত্বা। প্রাদাঃ পিতৃভ্যঃ স্বধয়া তে অক্ষন্নদ্ধি ত্বং দেব প্রয়তা হবীংষি৷ ২৷৷ অসীনাসো অরুণীনামুপস্থে রয়িং ধত্ত দাশুষে মর্তায়। পুত্রেভ্যঃ পিতরস্তস্য বস্বঃ প্র যচ্ছত ত ইহোর্জং দধাত ॥৩॥ অগ্নিদাত্তাঃ পিতর এই গচ্ছত সদসদঃ সদত সুপ্রণীতয়ঃ। অত্তো হবীংষি প্ৰয়তানি বহিষি রয়িং চ নঃ সর্ববীরং দধাত ॥ ৪৷৷ উপহৃতা নঃ পিতরঃ সোম্যাসো বহিষ্যেষু নিধিষু প্রিয়ে। ত আ গমন্তু ত ইহ বধি ব্রুবন্তু তেবস্মন্ ৷৷ ৫৷৷ যে নঃ পিতুঃ পিতরো যে পিতামহা অনূজহিরে সোমপীথং বসিষ্ঠাঃ। তেভিৰ্যৰ্মঃ সংররাণো হবীংযুশনুশদ্ভিঃ প্রতিকামমভু। ৬। যে তাতৃদেবত্ৰা জেহমানা হোত্ৰাবিদ স্তোমতষ্টাসো অর্কৈঃ। আগ্নে যাহি সহস্রং দেববলৈঃ সত্যৈঃ কবিভিঋষিভিধর্মসদ্ভিঃ ॥৭॥ যে সত্যাসো হবিরদো হবি ইন্দ্রেণ দেবৈঃ সরথং তুরেণ। আগ্নে যাহি সুবিদত্রেভিরাঙ পরৈঃ পূর্বৈঋষিভিঘর্মসদ্ভিঃ ॥ ৮উপ সর্প মাতরং ভূমিমেতামুরুব্যচসং পৃথিবীং সুশেবা। উদাঃ পৃথিবী দক্ষিণাবত এষা জ্বা পাতু প্রপথে পুরস্তাৎ ॥৯॥ উচ্ছঞ্চস্ব পৃথিবী মা নি বাধথাঃ সূপায়নাস্মৈ ভব সূপসৰ্পণা। মাতা পুত্রং যথা সিচাভ্যেনং ভূম ঊর্ণহি ॥১০।
বঙ্গানুবাদ— সৃষ্টির আদিতে বিধাতা (স্রষ্টা) ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতাগণের নিমিত্ত কোনরকম মৃত্যুর বিধান করেছেন কি? (দেবেভ্যঃ কম্ মৃত্যু অবৃণীত), (অর্থাৎ দেবগণকে মৃত্যুসম্বন্ধ-বিরহিত বা অমর করলেন)। কিন্তু কি কারণে (কিং) মনুষ্য ইত্যাদিরূপ প্রজাবৃন্দের নিমিত্ত অমরণ (অমৃতং) করলেন না (ন অবৃণীত)? (অর্থাৎ মনুষ্য ইত্যাদিকে দেবতাগণের ন্যায় অমর করলেন না)। (অতএব প্রজাপতি কর্তৃক দেবগণের অমরত্ব এবং মনুষ্যগণের মরণ অনাদিসিদ্ধ; এর কারণ অনুসন্ধান বৃথা)। বৃহস্পতি (দেবপ্রভু বা দেবগুরু), যিনি অতীন্দ্রিয়ার্থদ্রষ্টা (ঋষিঃ), তিনি সোমযাগ (যজ্ঞং), অনুষ্ঠিত করেছিলেন (অতনুত); (অর্থাৎ ভূলোকে ঋষিরূপে অবস্থিত বৃহস্পতি আপন ঐহিকামুষ্মিক অর্থাৎ ইহলোক ও পরলোক সম্বন্ধীয় সুফল প্রাপ্তির উপায়ভূত যজ্ঞ করেছিলেন, এটাই বক্তব্য)। বৃহস্পতির প্রেমাস্পদ মনুষ্যশরীরকে (প্রিয়ং তং) বৈবস্বত (যম) সমস্ত কিছু হতে নিঃসার বা মৃত করে দিয়েছিল (আ রিরেচ)। (সুতরাং ঋষিরূপে অবস্থিত বৃহস্পতিরও প্রাণ যখন যম কর্তৃক অপহৃত হয়েছিল, তখন অন্যেষাং অর্থাৎ মনুষ্য ইত্যাদিরও প্রাণ যে যম অপহরণ করবে, তাতে আর বলার কি আছে (কিমু বক্তব্যং)? ॥১॥
হে জাতবেদা (জাত প্রাণীবর্গের জ্ঞাতা) অগ্নি! তুমি আমাদের দ্বারা স্তুত হয়ে (ঈড়িতঃ) আমাদের প্রদত্ত চরুপুরোডাশ ইত্যাদি (হব্যানি) সুরভিত বা রসবন্ত করে দেবগণের নিকট বহন করে থাকো (অবাট)। তথা পিতৃদেবতাগণের নিকট স্বধাকারের সাথে কব্যসংজ্ঞক হবি (স্বধয়া) প্রদান করে থাকো (প্রাদাঃ)। এবং সেই পিতৃগণ তোমা কর্তৃক দত্ত কব্য ভোগ করে থাকেন (অক্ষ)। হে দেব (দ্যোতমান আগ্নি)! তুমিও (ত্বমপি) প্রকর্ষের সাথে আমাদের প্রদত্ত হবি ভক্ষণ করো (প্রয়তা অদ্ধি)। ২।
হে পিতৃগণ! তোমরা অরুণবর্ণশালিনী উষা-মাতৃগণের (অরুণীনাম) ক্রোড়ে উপবেশন করে (উপস্থে আসীনাসঃ) হবি-দানকারী (দাশুষে) মরমধর্মী যজমানকে (মর্তায়) ধন প্রদান করো (রয়িং ধত্ত)। পুন্নাম (পুনামক) নরক হতে ত্রাতা পুত্ররূপী আমাদের (পুত্রেভ্যঃ) সেই প্রসিদ্ধ (তৎ) ধন (বসু) প্রদান করো। হে পিতৃগণ! তোমরা (তে) এই ভূলোকে (ইহ) বলকারক অন্ন (ঊর্জ) আমাদের প্রদান করো (দধাত) ৩
হে অগ্নিদাত্তা পিতৃগণ! [তৈত্তিরীয়ক অনুসারে পিতৃদেবগণ বহিষদ ও অগ্নিদাত্ত ভেদে দুই প্রকার। যে পিতৃগণ কৃতসোমযাগ, তাঁরা বহিষদ এবং যারা অকৃতসোমযাগ, তাঁরা অগ্নিদাত্ত]। এই যজ্ঞে আগত হও (আ ইহ গচ্ছত)। হে প্রকৃষ্ট ও শোভন ফলদাতা (সুপ্রণীতয়ঃ) (পিতৃগণ)! আগমন পূর্বক তোমরা নিজ নিজ স্থানে উপবেশন করো (সদঃসদঃ)। (অর্থাৎ পিতৃ-পিতামহ-প্রপিতামহ ইত্যাদির নিমিত্ত যে যে স্থান পরিকল্পিত, সেই সেই স্থান প্রাপ্ত হও)। (উপবেশনের পর) যজ্ঞে প্রদত্ত (বহিষে প্রয়তানি) বা শুদ্ধ চরুপুরোডাশ ইত্যাদি (হীংষি) ভক্ষণ করো (অত্ত)। হবির্ভক্ষণে সন্তুষ্ট হয়ে তোমরা সকল পুত্রপৌত্র ইত্যাদি (সর্ববীরং) এবং ধন (রয়িং) প্রদান করো (দধাত) ৪
আমাদের পিতৃ-পিতামহ-প্রপিতমহ ইত্যাদি যে পিতৃপুরুষগণ সোমাহ (সোম্যাসঃ) (অর্থাৎ সোম প্রাপ্তির যোগ্য), তারা আমাদের সমীপে আহূত হয়ে এই যজ্ঞের হবিতে প্রতিমান ও নিধীয়মান হতে আগমন করুন (বহিষ্যেষু নিধিষু প্রিয়ে আগমন্তু)। এই যজ্ঞে (ইহ) সেই পিতৃগণ (তে) আমাদের স্তোত্র শ্রবণ করুন (বস্তু), আমাদের সম্পর্কে অধিক বলুন (ব্রুবন্তু) (অর্থাৎ আমাদের প্রভূত আশীর্বাদ প্রদান করুন); অধিকন্তু সেই পিতৃগণ আমাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সুফল প্রদানের দ্বারা রক্ষা করুন (অবন্তু)। ৫।
আমাদের (নঃ) পিতার জনক যে পিতামহগণ, সেই পিতামহগণের যারা পিতা বা প্রপিতামহগণ, যাঁরা উত্তম ধনবান, (বসিষ্ঠ), যাঁরা অনুক্রমে সোমপান হরণ বা আত্মসাৎ করে থাকেন (সোমপীথং অনূজহিরে), সেই কাময়মান (উশন) পিতৃগণের সাথে রমমান অর্থাৎ আনন্দিত (সংররাণঃ) যমও কাময়মান হয়ে (উশদ্ভিঃ) আমাদের প্রদত্ত পুরোশ ইত্যাদি (হীংষি) প্রত্যাভিলাষ পূর্বক অর্থাৎ অভিলাষানুসারে ভক্ষণ করুন (প্রতিকামং অদ্ভু)। ৬।
দেবতাগণের প্রতি প্রযতমান (দেবত্রা জেহমানা) (অর্থাৎ দেবকর্মে ব্যাপ্রিয়মাণ) সপ্ত বষট্কর্তার (হোত্রাগণের) হোমকর্ম সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন (হোত্রাবিদঃ), অর্চনীয় (অর্কৈঃ) স্তোত্রের কর্তা বা নিষ্ঠাবান যে হেন পিতৃগণ পিপাসার্ত (তাতৃষ্ণুঃ), সেই দেব-বন্দনাপরায়ণ (দেববঃ ), সত্যস্বরূপ (সত্যৈঃ), অতীন্দ্রিয়দ্রষ্টা (ঋষিভিঃ), সোমযাগে উপবিষ্ট (ঘর্মর্সদ্ভিঃ), পিতৃগণের সাথে, হে অগ্নি! তুমি আমাদের নিমিত্ত অপরিমিত ধন (সহস্রং) সহ আগমন করো; (অর্থাৎ আগমন পূর্বক আমাদের প্রদত্ত হবির দ্বারা পিতৃগৃণের পিপাসা নিবারণ করো–এটাই বক্তব্য)। ৭৷
যে পিতৃগণ সপ্রভ বা সত্যভাষী (সত্যাসঃ), যাঁরা চরু-পুরোডাশ ইত্যাদি ভক্ষণকারী (হবিরদঃ), যাঁরা, সোমরস পানকারী (হবি), যাঁরা ত্বরমান অর্থাৎ শীঘ্রতাসম্পন্ন বা শত্রুহিংসক (তুরেণ) ইন্দ্রদেবের সাথে সমান রথে (সরথং) আরোহণকারী, (অর্থাৎ ইন্দ্রদেবতার সাথে একই রথে উপরূঢ়), সেই হেন শোভনপ্রজ্ঞ (সুবিদত্রেভিঃ), অতীন্দ্রিয়ার্থদর্শী (ঋষিভাঃ), যজ্ঞে আসনগ্রহণকারী (ঘর্মর্সদ্ভিঃ), উৎকৃষ্ট (পরৈঃ) পূর্বপুরুষবর্গের (পূর্বৈঃ) অর্থাৎ পিতৃ-পিতামহ-প্রপিতামহগণের সাথে, হে অগ্নি! তুমি আমাদের অভিমুখী হয়ে (অর্বাঙ) আগমন করো (আ যাহি) ॥ ৮
হে প্রেত! তুমি জননীস্বরূপা (মাতরম্) এই ভূমিতে (এতাং ভূমিং) উপগমন করো (উপ সর্প) (অর্থাৎ এই ভূমির সন্নিহিত হও)। (এই ভূমি কিরকম? না–) ইনি বিস্তীর্ণব্যাপনা রূপে প্রখ্যাত (উরুবাচসং), সুসুখা (সুশেবাং) (অর্থাৎ শোভন সুখদাত্রী); তোমার উপসৃপ্তা এই (এষা) পৃথিবী (অর্থাৎ তুমি যে পৃথিবী বা ভূমির নিকটে উপনীত হয়েছে) তোমা হেন বহু দক্ষিণাযুক্ত যজ্ঞকারীর (দক্ষিণাবতে) প্রতি মেষ ইত্যাদির লোমে বিরচিত নরম কম্বলের ন্যায় সুখকরী হয়ে (উদাঃ ) পূর্বদিকে বা পূর্বের ন্যায় (পুরস্তাৎ) মার্গের প্রারম্ভে (প্রপথে) রক্ষা করুন (পাতু)। ৯।
হে পৃথিবী (ভূদেবতে)! তুমি উচ্ছুনাবয়বা অর্থাৎ পুলকে স্ফীতাঙ্গিনী হও (উচ্ছঞ্চস্ব); অধিকন্তু এই উপসৃপ্ত (অর্থাৎ নিকটে গমনকারী) পুরুষের প্রতি কার্কশ্যের দ্বারা বাধক হয়ো না (মা বাধথাঃ), এই পুরুষের প্রতি সুখের সাথে গমনকারিণী (সূপায়না) এবং শোভন- উপসর্পণযুক্ত (সূপসৰ্পণা) (অর্থাৎ সহজে নিকটস্থিতা) হও। যে রকমে (যথা) জননী আপন পুত্রকে চেলাঞ্চলের দ্বারা অভিচ্ছাদিত করেন (সিচা), সেই রকমেই এই উপগত পুরুষকে (এনং), হে ভূমি! তুমিও সর্বতোভাবে আচ্ছাদিত করো (অভূর্ণহি); (অর্থাৎ এর যেন শীতলবায়ু ও উষ্ণতাজনিত দুঃখ না ঘটে, তেমনভাবে একে রক্ষা করো। ১০।
সূক্তস্যবিনিয়োগঃ— দেবেভ্যঃ কং ইত্যাদি পঞ্চম সূক্তং। তত্র ত্বমগ্ন ঈড়িতঃ ইত্যনয়া পিণ্ডপিতৃযজ্ঞে সমিধং আদধ্যাৎ-ইত্যাদি৷৷ (১৮কা, ৩অ. ৫সূ.)।
টীকা— উপযুক্ত পঞ্চম সূক্তটির বিভিন্ন মন্ত্র পিণ্ডপিতৃযজ্ঞে বিভিন্ন রকমে বিনিয়োগ হয়। যেমন, সমিধ আহরণ, বৰ্হি আস্তরণ, শ্মশানদেশে শলাকা ও ইষ্টক ইত্যাদির দ্বারা চিতা নির্মাণ ইত্যাদি ॥ (১৮কা, ৩অ. ৫.)।
.
ষষ্ঠসূক্ত : পিতৃমেধঃ
[ঋষি : অথর্বা।দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, অগ্নি, ভূমি, ইন্দ্র, আপ।ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, জগতী, শক্করী, ভূরিক, বৃহতী।]
উচ্ছ্বঞ্চমানা পৃথিবী সু তিতু সহস্রং মিত উপ হি শ্ৰয়ন্তা। তে গৃহাসো ঘৃততঃ সোনা বিশ্বাহাস্মৈ শরণাঃ সদ্ভুত্র ॥১॥ উত্তে স্তম্লামি পৃথিবীং ত্বৎ পরীমং লোগং নিদধন্মো অহং রিষম। এতাং স্কুণং পিতরো ধারয়ন্তি তে তত্র যমঃ সাদনা তে কৃণোতু। ২। ইমমগ্নে চমসং মা বি জিহুরঃ প্রিয়ো দেবানামুত সোম্যানা। অয়ং যমসসা দেবপানস্তস্মিন্ দেবা অমৃতা মাদয়ন্তাম্ ॥৩৷৷ অথবা পূর্ণং চমসং যমিন্দ্রায়াবিভাজিনীতে। তস্মিন্ কৃণোতি সুকৃতস্য ভক্ষং তস্মিনিন্দুঃ পবতে বিশ্বদানীম্ ॥৪ যৎ তে কৃষ্ণঃ শকুন আতুতোদ পিপীলঃ সর্প উত বা শ্বাপদঃ। অগ্নিষ্ট বিশ্বাদগদং কৃণোতু সোশ্চ যো ব্রাহ্মণা আবিবেশ ॥ ৫৷৷ পয়স্বতীরোষধয়ঃ পয়স্বন্মমকং পয়ঃ।। অপাং পয়সো যৎ পয়স্তেন মা সহ শুম্ভ ॥ ডা. ইমা নারীরবিধবাঃ সুপত্নীরাঞ্জনেন সর্পিষা সং স্পৃশন্তাম্। অনশ্রবো অনমীবাঃ সুরত্না আ রোহন্তু জনয়ো যোনিমগ্রে ॥৭৷৷ সং গচ্ছস্ব পিতৃভিঃ সং যমেনেষ্টাপূৰ্তেন পরমে ব্যোম। হিত্বাবদ্যং পুনরস্তমেহি সং গচ্ছতাং তন্বা সুবৰ্চাঃ ॥৮॥ যে নঃ পিতুঃ পিতরো যে পিতামহ য আবিবিশুরুবন্তরিক্ষম। তেভ্যঃ স্বরাডসুনীতিনো অদ্য যথাবশং তন্বঃ কল্পয়াতি ॥৯৷৷ শং তে নীহাররা ভবতু শং প্রভাব শীয়তা। শীতিকে শীতিকাবতি হাদিকে হাদিকাবতি মণ্ডক্য শং ভুব ইমং স্বগ্নিং শময় ॥১০৷৷
বঙ্গানুবাদ –এই পৃথিবী পুলকে উচ্ছলিত অঙ্গে (উচ্ছ্বঞ্চমানা) সুখে অবস্থান করুন (সু। তিষ্ঠতু); শ্মশানস্থানে সহস্ৰসংখ্যায় (অর্থাৎ অপরিমিতভাবে) স্থাপিত (মিতঃ) ঔষধি মিলিতভাবে আশ্রিত হোক (উপ শয়ন্তাং)। যখন (হি) ঔষধিগুলি বনস্পতিসমূহের সাথে মিলিত হয়, তখন সেগুলি ঘৃতস্রাবী (ঘৃততঃ) সুখকর (স্যোনাঃ) গৃহরূপে (গৃহাসঃ) শ্মশানস্থানে (অত্র) মৃতপুরুষের সর্বকালের (বিশ্বাহা) রক্ষক হোক (শরণাঃ সন্তু) ॥১॥
হে মৃতপুরুষ! তোমার নিমিত্ত এই পৃথিবীকে উধ্বে ধারণ করছি (উৎ স্তম্লামি)। তোমার সর্বদিকে (তৎ পরি) সকল প্রাণাধিষ্ঠিত ভূলোককে (ইমং লোকং) নিক্ষেপ করে (নিদধৎ) আমি যেন হিংসিত না হই (অহং মো রিষ)। এই উত্তোলনের দ্বারা ধৃত ভূমিতে পিতৃদেবতাগণ তোমার গৃহনির্মাণের নিমিত্ত প্রসিদ্ধ স্তম্ভ (এতাং স্থূণাং) স্থাপন করেছেন (ধারয়ন্তি)। সেই স্থানে (তত্র) যম তোমার গৃহ (সাদনা) নির্মাণ করুন (কৃণোতু)। ২৷৷
হে অগ্নি! তুমি এই চীয়মান অর্থাৎ ভক্ষণসাধন যজ্ঞীয় চমসকে (ঈড়াপাত্রকে) কুটিল বা বক্র করে দিও না (মা বি জিহুরঃ)। এই চমস দেবগণের প্রীতিকর (দেবানাং প্রিয়); অধিকন্তু সোমাহঁ পিতৃগণেরও প্রীতিকর। এই চমসে সকল দেবগণ অমৃত পান করেন (দেবপানঃ); অতএব এই হেন গুণবিশিষ্ট চমসও অমৃতের দ্বারা তৃপ্ত হোক (মাদয়স্তা) ॥ ৩॥
অথবা নামধারী অতীন্দ্রিয়ার্থদ্রষ্টা কোন ঋষি হবিলক্ষণযুক্ত যজ্ঞে (বাজিনীবতে) ইন্দ্রের প্রীতির নিমিত্ত সোম ইত্যাদি হবি-পূরিত যে চমস সংগ্রহ করেছিলেন (অবিভঃ অর্থাৎ সভৃতবা), সেই চমসে (তস্মিন্ সুষ্ঠুভাবে কৃত যজ্ঞে (ঋত্বিকগণ) হুতশিষ্ট হবিঃ ভক্ষণ করে থাকেন (ভক্ষণং করোতি)। তথা সেই অথবা কর্তৃক সংগৃহীত চমস হতে (তস্মিন্) সর্বদা (বিশ্বদানীং) অমৃতরসাত্মক সোম ক্ষরিত হয় (ইন্দুঃ পবতে)। ৪
হে পুরুষ তোমার– (তে) যে অঙ্গ (যৎ) কৃষ্ণবর্ণ কাক ইত্যাদি (শকুনঃ) পক্ষী দংশনের দ্বারা ব্যথিত করেছে। (আতুতোদ); তথা বিষাদ্রংষ্ট্র পিপীলিকা বিশেষ (পিপীলঃ) অথবা সর্প বা ব্যাঘ্র ইত্যাদি (শ্বাপদঃ) ব্যথিত করেছে, সেই অঙ্গ (তৎ) সর্বক্ষক অগ্নি (বিশ্বাৎ) আরোগ্য বা নিরাময় (অগদং) করুন (কৃণোতু); এবং যে সোম (যঃ চ সোমঃ) ঋত্বিক-যজমানগণের (ব্রাহ্মণা) অন্তরে রসরূপে প্রবিষ্টবান্ (আবিবেশ), সেই সোমও তোমাকে বা তোমার সেই ব্যথিত অঙ্গকে রোগরহিত করুন। ৫
ঔষধিসমূহ (অর্থাৎ ব্রীহি, যব ইত্যাদি ও অন্য ফলপাকান্তা ওষধিসমূহ (ওষধয়ঃ) আমাদের নিমিত্ত সারভূতশালিনী হোক (পরস্বতীঃ), আমাদের শরীরস্থিত (মামকং) যে সারভূত বল (পয়ঃ) আছে, তাও সারবান হোক (পয়স্বৎ)। তথা জলসম্বন্ধী (অপাং) সারভূত অংশের (পয়সঃ) যে উৎকৃষ্ট অংশ (যৎ পয়ঃ), তা ওষধি ইত্যাদিগত জলের সকল সারের সাথে (পয়সা) আমাকে শোভন বা দীপ্ত করুক (শুম্ভতু); (অর্থাৎ জলের অভিমানী দেবতা বরুণ স্নানের দ্বারা আমাকে শোধিত করুন ৬
প্রেতকুলোৎপন্না এই নারীগণ (ইমাঃ নাৰ্য) বৈধব্যরহিতা (অবিধরা) হয়ে সুপত্নিকা রূপে (অর্থাৎ শোভনা পত্নী রূপে) (সুপত্নীঃ) ঘৃতমিশ্রিত কজ্বলের দ্বারা (সর্পিষ আঞ্জনেন) সংস্পৃষ্টা হোক (সং স্পশন্তাম)। অরহিতা, রোগরহিতা, শোভন আভরণযুক্তা জননীগণ অপত্য উৎপাদন করুন (আ রোহন্তু)। ৭৷
হে মৃতপুরুষ! তুমি পৈতৃমেধিক (সপিণ্ড্যকরণাবধি) সংস্কারের দ্বারা পিতৃ-পিতামহ-প্রপিতাগণের (পিতৃভিঃ) সাথে সঙ্গত হও অর্থাৎ পিতৃগণের স্থান প্রাপ্ত হও (সং গচ্ছস্ব); এবং তাদের রাজা যমের সাথেও সঙ্গত হও (সং যমেন গচ্ছস্ব)। তথা পিতৃলোক হতেও উৎকৃষ্ট (পরমে) ব্যোমে (ব্যোম ইষ্টাপূর্ত কর্মের ফলোপভোগস্থানে (ইষ্টাপূৰ্তেন) অর্থাৎ দ্যুলোকের উধ্বস্থায়ী নাকপৃষ্ঠাখ্য স্থানে স্থিত হও। (প্রত্যক্ষ শ্রুতি বিহিত যাগ-হোমদান ইত্যাদি কর্ম ইষ্ট এবং স্মৃতি-পুরাণ-আগম অনুসারে বাপী-কূপ-তড়াগ-দেবগৃহ ইত্যাদি স্থাপন পূর্ত। জীবিতকালে এই কর্ময়ের পালনকারী মরণের পরে স্বর্গেরও উপরে স্থানপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন)। তথা পাপ (অবদ্যম) ত্যাগ পূর্বক (হিত্বা) উত্তম লোকস্থিত গৃহ পুনরায় প্রাপ্ত হও (পুনঃ অস্তম্ আ ইহি); সুবৰ্চা অর্থাৎ শোভনদীপ্তিসম্পন্ন হয়ে স্বর্গলোক-ভোগযোগ্য শরীরের দ্বারা (তৰা) সংযুক্ত হও (সংগচ্ছতাং)। ৮।
আমাদের (নঃ) জনকের যে জনক অর্থাৎ পিতামহ (পিতুঃ যে পিতরঃ) তাঁদের জনকগণ অর্থাৎ প্রপিতামহ ইত্যাদিগণ, এবং অপর যাঁরা গোত্রজবৃন্দ (যে) বিস্তীর্ণ অন্তরিক্ষে (উরু অন্তরিক্ষ) প্রবিষ্ট হয়েছেন (আবিবিশুঃ), অদ্য তাদের শরীরসমূহ (তন্বঃ) স্বয়ং রাজা (স্বরাট) অসুনীতি নামক (প্রাণের নেতা বা প্রভু) দেবতা আমাদের (নঃ) অভিলাষানুসারে রচনা করে দিন (যথাবশং কল্পয়াতি); (অর্থাৎ যথাযথ কর্মফলভোগের উপযোগী করে শরীরসমূহকে সম্পাদন করুন) ৯
হে প্রেত! ঘনীভূত শিশির (নীহার) তোমার সুখকর হোক (তে শং); (অর্থাৎ দাহজহিত উত্তাপ নিবারিত হোক)। তথা জলের উৎস তোমার সুখের নিমিত্ত অধোমুখে সুবিত হোক (ম্বা অব শীয়তাম)। হে শীতিকা (শীতকারিণী ওষধিবিশেষ)! হে শীতিকাবতী (শীতিকাখ্য ঔষধি যুক্তা পৃথিবী)! হে হ্রাদিকা (হ্রদ অর্থাৎ সুখকারিণী বা স্নাদিকাখ্য ঔষধি যুক্তা পৃথিবী! তুমি মণ্ডুকপর্ণা (মণ্ডুকী অঙ্গু) নামে আখ্যাতা ঔষধির দ্বারা এই দগ্ধ পুরুষের সুখ (শং) সম্পাদিকা হও। (অর্থাৎ দাহশমনের হেতুভূত হও)। সেই নিমিত্ত এই দাহক অগ্নিকে (ইমং অগ্নিং) শান্ত (সু) করো ১০
সূক্তস্যবিনিয়োগঃ –উচ্ছ্বঞ্চমানা ইত্যাদ্যায়া ঋচো বিনিয়োগ উক্তঃ। পাত্ৰচয়নকর্মণি যজমানস্য উদরে ইড়াপাত্ৰং নিধায় ইমং অগ্নে ইতি দ্বাভ্যাং অনুমন্ত্রয়তো…ইত্যাদি৷৷ (১৮কা, ৩অ. সূ.)।
টীকা –উপর্যক্ত সূক্তের প্রথম মন্ত্রটি পূর্বের ন্যায় বিনিয়োগ করণীয়! দ্বিতীয় ও তৃতীয় মন্ত্রদ্বয় পাত্ৰচয়ন কর্মে যজমানের উদরে ইড়াপাত্র স্থাপন পূর্বক অনুমন্ত্রণ করণীয়। আহিতাগ্নি বা একাগ্নি (অর্থাৎ সাগ্নিক) কোন জন যদি সৰ্প ব্যাঘ্র ইত্যাদির আক্রমণে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে চতুর্থ ও পঞ্চম মন্ত্রের দ্বারা সর্পদংশনস্থান বা দন্তাঘাতের ব্রণস্থান অগ্নির দ্বারা শোধন করে দহনীয়। ষষ্ঠ ইত্যাদি মন্ত্রগুলি শরদহনের পর স্নানকর্মে বিনিয়োগ করা হয়। দশম মন্ত্রটির দ্বারা ক্ষীরমিশ্রিত জলে ওষধি অভিমন্ত্রণ পূর্বক মৃত ব্রাহ্মণের অস্থি সিঞ্চনে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। (১৮কা, ৩অ. ৬সূ.)।
.
সপ্তমসূক্ত : পিতৃমেধঃ
[ঋষি : অথর্বা।দেবতা : যম, মন্ত্রোক্ত, অগ্নি, ভূমি, ইন্দ্র, আপ।ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, জগতী, শক্করী, ভূরিক, বৃহতী।]
বিবস্বান্ নো অভয়ং কৃপোতু যঃ সুত্রামা জীরদানুঃ সুদানুঃ। ইহেমে বীরা বহবো ভবন্তু গোমদশ্ববন্ময্যস্তু পুষ্ট ॥১॥ বিবস্বান্ নো অমৃতত্বে দধাতু পরৈতু মৃত্যুরমৃতং ন ঐতু। ইমা রক্ষতু পুরুষানা জরিণো মো ঘেষামসবো যমং গুঃ ॥ ২॥ যে দর্ধে অন্তরিক্ষে ন মহ্না পিতৃণাং কবিঃ প্ৰমতির্মতীনাম। তমৰ্চত বিশ্বমিত্রা হবির্ভিঃ স নো যমঃ প্রতরং জীবসে ধাৎ ॥৩. আ রোহত দিবমুত্তমামৃষয়ে মা বিভীতন। সোমপাঃ সোমপায়িন ইদং বঃ ক্রিয়তে হবিরগন্ম জ্যোতিরুত্তমম্ ॥৪৷৷ প্র কেতুনা বৃহতা ভাত্যগ্নিরা রোদসী ব্যুভো বরারবীতি। দিবশ্চিন্তাদুপমামুদানডপামুপস্থে মহিষো ববধ ॥৫॥ নাকে সুপর্ণমুপ যৎ পতন্তং হৃদা বেনস্তো অভ্যচক্ষত ত্ব। হিরণ্যপক্ষং বরুণস্য দূতং যমস্য যোনৌ শকুনং ভুরম্ ॥ ৬ইন্দ্ৰ ক্ৰতুং না আ ভর পিতা পুত্রেভ্যো যথা। শিক্ষ অম্মিন পুরুহুত যামনি জীবা জ্যোতিরশীমহি। ৭। অপূপাপিহিতা কুম্ভান্ যাংস্তে দেবা অধারয়। তে তে সন্তু স্বধাবন্তো মধুমন্তো ঘৃততঃ ॥৮॥ যাস্তে ধানা অনুকিরামি তিলমিশ্রাঃ স্বধাবতী। তাস্তে সন্তু বিভীঃ প্রভৃীস্তাস্তে যমমা রাজানু মন্যতাম্ ॥৯৷ পুনর্দেহি বনস্পতে য এষ নিহিতয়ি। যথা যমস্য সাদন আসাতৈ বিদখা বদ ১০ আ রভম্ব জাতবেদস্তেজস্বদ্ধরো অস্তু তে। শরীরমস্য সং দহাথৈনং ধেহি সুকৃতামু লোকে ॥১১৷ যে তে পূর্বে পরাগতা অপরে পিতরশ্চ যে। তেভ্যো ঘৃতস্য কুল্যৈতু শতধারা ঝুন্দতী ॥১২৷ এতদা বোহ বয় উজানঃ স্বা ইহ বৃহদু দীদয়ন্তে। অভি প্রেহি মধ্যতো মাপ হাস্থাঃ পিতৃণাং লোকং প্রথমো যো অত্র ॥১৩৷৷
বঙ্গানুবাদ— দেব বিবস্বান অর্থাৎ আদিত্য সূর্য আমাদের মরণজনিত ভীতি রহিত করুন : (অভয়ং কৃণোতু)। তথা জীবনের কর্তা অর্থাৎ প্রাণীগণের জীবৎকালের নিয়ামক (জীরদানু) ও শোভন দাতা (সুদানু)–এই মতো গুণবিশিষ্ট সুত্রামা (অর্থাৎ শোভন ত্রাতা বা ইন্দ্র নামক) দেবতাও আমাদের নিরাভয় করুন। এই লোকে (ইহ) আমাদের পুত্রপৌত্র ইত্যাদি বহুল (পরিমাণে) হোক বা জন্মলাভ করুক (ইমে বীরাঃ বহবঃ ভবন্তু)। তথা বহু গাভীযুক্ত (গোমৎ) বহু অশ্বোপেত (অশ্ববৎ) পোষক ধন (পুষ্টং) আমার হোক (ময়ি অস্তু)। (মরণজনিত ভীতি হতে মুক্ত হয়ে আমরা যেন পুত্রপৌত্র ইত্যাদির দ্বারা সমৃদ্ধ বংশ ও বহু গাভী-অশ্ব ইত্যাদি সহ প্রভূত ধন লাভ করতে পারি এটাই বক্তব্য)। ১।
সূর্য আমাদের অমৃতত্বে অর্থাৎ অমরণত্বে স্থাপন করুন; তার প্রসাদে মৃত্যু অর্থাৎ মরণকারী দেব পরাজুখে গমন করুন (পরৈতু); আমরা (নঃ) অমৃত অর্থাৎ অমরণ প্রাপ্ত হই (এতু)। (সূর্যদেব) আমাদের পুত্রপৌত্র ইত্যাদিকে (ইমা পুরুষান) জরাকাল পর্যন্ত পালন করুন (আ জরিপঃ রক্ষতু)!. এই পুরুষগণের প্রাণ (এষাং অসবঃ) যেন কখনও যম অর্থাৎ বিবস্বানের পুত্র বৈবস্বতের নিকটে সুষ্ঠুভাবে গমূন না করে (সু মো গুঃ)।(মৃত্যুদেবতা যমের পিতা বিবস্বান আমাদের পুত্রপৌত্র ইত্যাদিকে তাঁর পুত্রের হাত হতে রক্ষা করুন–এটাই প্রার্থনার ভাব) ২৷
যে শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিশালী (মতিঃ), ক্রান্তদর্শী (কবিঃ) যম আপন মহিমায় (মহ্ন) স্তোতৃ (মতীনাং) পিতৃগণকে অন্তরিক্ষ লোকে ধারণ করে আছেন (দর্ধে), হে সর্বজনের মিত্রভূত ব্রাহ্মণগণ (বিশ্বমিত্রাঃ) সেই হেন (তং) যমকে তোমরা অর্চনা করো (অৰ্চত); (অর্থাৎ চরু-পুরোডাশ ইত্যাদি সমর্পণ করো)। সেই অর্চিত যম (সঃ) আমাদের জীবনকে (নঃ জীবনে) প্রকৃষ্টরূপে ধারণ করুন (ধাৎ)। ৩৷৷
হে মন্ত্ৰদৰ্শী মনুষ্যগণ (ঋষয়ঃ)! তোমরা উত্তম স্বর্গে (দিবং) আরোহণ করো; (অর্থাৎ যজ্ঞ-দান ইত্যাদি সঙ্কর্মের ফল প্রাপ্ত হও); ভয়প্রাপ্ত হয়ো না (মা বিভীতন)। স্বয়ং সোমযাগকারী (সোমপাঃ) ও অন্য যজমানগণকে সোমযাগের কারয়িতা (সোমপায়িনঃ) তোমরা যারা স্বর্গে আরূঢ় হয়েছে, সেই তোমাদের উদ্দেশে এই হবিঃ সম্পাদিত হচ্ছে (ইদং হবিঃ ক্রিয়তে); (অর্থাৎ সেই হবির দ্বারা তোমরা দ্যুলোকে সুখে স্থিত হও)। এবং আমরা তোমাদের প্রসাদে উৎকৃষ্টতম (উত্তম) প্রকাশ (জ্যোতিঃ) অর্থাৎ চিরকালের জীবনে গমন করবো (অগন্ম)। (বক্তব্য এই যে, আমরাও তোমার অনুগ্রহে দীর্ঘ জীবন প্রাপ্ত হবো) ॥ ৪৷
এই অগ্নি আপন মহতী ধ্বজায় (অর্থাৎ বৃহতী ধূমের দ্বারা) প্রকর্ষের সাথে দীপ্যমান হয়েছেন (প্র ভাতি)। ইনি কামবৰ্ষক (বৃষভঃ)। আকাশ ও পৃথিবীকে (রোদসী) অবিলক্ষ্য করে (আ) এই অগ্নি শব্দ করছেন (রোরৰীতি)। আমার সমীপে (মাং উপ) আকাশ অবধি (দিবশ্চিন্তাৎ) এই অগ্নি উধ্বে ব্যাপ্ত রয়েছেন (উদানট)। তারপর জলের উপস্থানে (অপা উপস্থে) অর্থাৎ অন্তরিক্ষ প্রদেশে আপন মহিমায় প্রবৃদ্ধ হয়েছেন মাহবঃ ববর্ধ)।.৫৷৷
হে প্রেত! নাকে (নাই অক অর্থাৎ পাপ বা দুঃখ যথায়–অর্থাৎ স্বর্গলোকে) গমনকারী (পতন্তং) তোমাকে শোভনপদ্ধশালী-রূপে (সুপর্ণমুপ) দর্পণ করে মনে মনে কাময়মান মনুষ্যগণ (হৃদা বেনন্তঃ) তোমাকে হিরণ্যপক্ষোপেত বরুণের (অর্থাৎ প্রাণীগণের সত্য-মিথ্যার শিক্ষকরূপী দেবতার) দূতের ন্যায় এবং যমের গৃহে (যেনৌ) শকুনিবৎ বর্তমান (শকুনং) এবং ভরণ করণশালী রূপেই (ভুর«ং) দর্শন করে থাকে। ৬।
হে ইন্দ্র (পরমৈশ্বর্যযুক্ত দেব)! যে প্রকারে (যথা) পিতা পুত্রকে তার অভিমত ফল প্রদান করে, সেই প্রকারে সোমযাগ ইত্যাদি লক্ষণ কর্ম (ক্রতু) অথবা সেই বিষয়ক জ্ঞান আমাদের নিমিত্ত আহরণ করো অর্থাৎ প্রদান করো (আ ভর)। হে পুরুক্ত (পুরুভির্যজমানৈরাহূত অর্থাৎ পর্যাপ্ত যজমানগণ কর্তৃক আহূত, ইন্দ্রদেব)! আমাদের (নঃ) এই সংসারগমনে বা সংসার-যাত্রায় (যামনি) তুমি সেই সম্পর্কিত শিক্ষদানকর্তা হও; এবং আমরা যেন। ( তোমার প্রসাদে চিরকাল-জীবনযুক্ত হয়ে (জীবাঃ) ইহলোকের সুখানুভব (জ্যোতিঃ) প্রাপ্ত হতে পারি এ (অশীমহি)। ৭৷
হে প্রেত! তোমার নিমিত্ত (তে) অপূল্পের দ্বারা আচ্ছাদিত (অপূপাপিহিতান) ঘৃত-মধু ইত্যাদির দ্বারা পূর্ণ যে কুম্ভগুলি দেবগণ ধারণ করেছেন, সেগুলি তোমার নিকট অনুবন্ত (স্বধাবন্তঃ), মধুযুক্ত (মধুমন্তঃ) ও ঘৃতস্রাবী (ঘৃততঃ) হোক (সন্তু) ॥ ৮
হে প্রেত! তোমার উদ্দেশ্যে তিলমিশ্রিত স্বধাকারবতী বা স্বধা-উদকবতী (স্বধাবতীঃ) যে সৃষ্ট যবগুলি (ধানাঃ) বিক্ষেপ করছি (অনুকিরামি) (অর্থাৎ সমর্পণ করছি), সেগুলি তোমাকে বিবিধ ভাবে বা বিভুত্বগুণোপেতা অর্থাৎ বৈভবশালিনী হয়ে (বিত্বীঃ) তোমার তৃপ্তিজননে সমর্থ হোক (প্রভৃীঃ সন্তু)। রাজমান ঈশ্বর (রাজা) যম তোমাকে সেই ভৃষ্ট যব ভোগের নিমিত্ত আজ্ঞা প্রদান করুন (অনু মন্যতা)। ৯।
হে বনস্পতি (বৃক্ষবিশেষ)! তোমাতে অস্থিরূপে যে পুরুষ (ত্বয়ি য এষ) পূর্বে নিক্ষিপ্ত হয়েছে তা পুনরায় আমাদের প্রত্যর্পণ করো; যার ফলে (যথা) রাজা যমের গৃহে (সদনে) আপন অর্জিত যজ্ঞাত্মক কর্মসকলের কথা (বিদথা) প্রকাশিত করে (বদ) উপবেশন করতে পারে। ১০।
হে জাতবেদা (জাত প্রাণীগণের বেত্তা, অগ্নি)! এই মৃতকে দগ্ধের উপক্রম করো (আ রভস্ব); তোমার জ্যোতিৰ্জালাযুক্ত তেজঃ (তেজস্ব) রসহরণশীল অর্থাৎ দহনসামর্থ্য হোক (হরঃ অস্তু)। এই মৃতের শরীর সম্যক দগ্ধ করো (সং দহ), (অর্থাৎ যেন ভস্মসাৎ হয়ে যায়, তেমন করো)। শরীর দহনের পর (অথ) এই পুরুষকে (এনং) সুকৃতলোকে (অর্থাৎ পুণ্যকর্মাগণের নিবাসস্থান স্বর্গলোকে) স্থাপন করো (স্থাপয়)। (এই প্রেতকে স্বর্গপ্রাপ্তি করাও–এটাই বক্তব্য) ॥১১।
পূর্বে উৎপন্ন যে জ্যেষ্ঠ পিতৃগণ (যে তে পূর্বে পিতরঃ) পরাজুখ হয়ে গমন করেছেন (পরাগতা), (অর্থাৎ পুনরায় জীবনবৃত্তি গ্রহণ না করার নিমিত্ত প্রস্থান করেছেন); এবং পশ্চাৎ কালে উৎপন্ন যে পিতৃগণ (যে চ অপরে) প্রস্থান করেছেন; তাদের সকলের নিমিত্ত (তেভ্যঃ) ঘৃত- ক্ষরণশীল কৃত্রিম সরিৎ (ঘৃতস্য কুল্যা) প্রবাহিত হোক। (কিরকম তা? না–) শতধারা অর্থাৎ শতধারাসমন্বিত, অতএব বিবিধ দিককে আদ্রীকৃত করুক (ব্যুন্দতী)। ১২।
হে মৃত পুরুষ! তুমি এই সন্নিহিত বা পরিদৃশ্যমান (এতৎ) অন্তরিক্ষে (বয়ঃ) আরূঢ় হও (আ রোহ)। (কেমন করে? না–) উম্মার্জন করে (উন্মাজানঃ), অর্থাৎ শরীর হতে উক্রমণের দ্বারা আপন আত্মাকে শোধন করে। তোমার জ্ঞাতিবর্গ (স্বাঃ) এই লোকে (ইহ) অধিক দীপ্যমান হোক (বৃহৎ দীদয়ন্তে) অর্থাৎ অধিক সমৃদ্ধ হয়ে নিবাস করুক। আরোহণার্থে বন্ধুজনের মধ্যে হতে লোকান্তর অভিলক্ষ্য করে প্রকর্ষের দ্বারা গমন করো (অভি প্রেহি)। এই দ্যুলোকে (অত্র) পিতৃগণ-সম্বন্ধী যে মুখ্য লোক (যঃ প্রথমঃ লোকং) তা যেন তুমি পরিত্যাগ করো (মা অপ হাস্থাঃ); (অর্থাৎ চিরকাল সেখানে নিবাসিত হও–এটাই বক্তব্য)। ১৩
সূক্তস্যবিনিয়োগঃ— বিবস্বান্ নঃ ইত্যাদিভিঃ সপ্তভিঋগভিঃ শ্মশানচয়নকর্মণি কর্তা সর্বে গোত্রিণশ্চ শ্মশানস্য পশ্চাদ্ভাগে স্থিত্বা প্রেতং উপতিষ্ঠেরন।–ইত্যাদি৷৷ (১৮কা, ৩অ. ৭সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তের প্রথম সাতটি মন্ত্র শ্মশানচয়নকর্মে কর্তা ও সকল গোত্রীয়গণ কর্তৃক শ্মশানের পশ্চাৎ দিকে স্থিত হয়ে প্রেতের সেবায় বিনিযুক্ত হয়। এ ছাড়া পিতৃমেধে চতুর্থ-অহনে বৈবস্বতের উদ্দেশে স্থালীপাকে দুইটি যজ্ঞাহুতি প্রদান, হুতশেষ অভিমন্ত্রিত করে সমানোদক গোত্রীয়গণ কর্তৃক কর্তার সাথে প্রাশন, সঞ্চয়নে প্রথম ও সপ্তম মন্ত্রদ্বয় স্বস্ত্যয়নার্থ জপন, নবম মন্ত্রের দ্বারা তিলমিশ্র ধানা অস্থির উপর ধারণ, দশম, মন্ত্রে অস্থিসমূহ বৃক্ষমূলে স্থাপন, একাদশ মন্ত্রে প্রেতশরীরে দত্ত অগ্নিতে কাষ্ঠ উদ্দীপন, দ্বাদশ মন্ত্রে চরু অভিমন্ত্রিত করে অস্থিসমীপে স্থাপন, শেষ মন্ত্রে পিণ্ডের উপরে ঘৃতধারা সিঞ্চন ইত্যাদি করণীয়। (১৮কা, ৩অ. ৭সূ.)।
অথর্ব্বেদ ১১/৩/১১এর মানে কি?
এটি কততম খন্ডের কততম শুক্তের কততম মন্ত্র
এর মানে হলো : একাদশ কাণ্ড/তৃতীয় অনুবাক/একাদশ সূক্ত
kisuy buzlam na.
অথর্ববেদ odhay 20 porisedh 58 verse 3 lagbe .
ভাষা দুর্বোধ্য, বোঝার উপায় নেই বললেই চলে।