অতিকায় মার্জার ‘আরণ্যক’
জীবজগৎ সম্পর্কে কৌতূহলী মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিকে বাদ দিলে অধিকাংশ ভারতবাসীর কাছেই পুমা নামক বিড়ালজাতীয় জীবটি পরিচিত নয়। পুমার বাসস্থান আমেরিকা। উত্তরের বিশাল হ্রদগুলির তীরবর্তী অরণ্য এবং প্রস্তরসঙ্কুল উচ্চ পার্বত্য ভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণ আমেরিকার জলাভূমি ও প্যামপাস নামে খ্যাত প্রান্তরের বুকে নিঃশব্দ পদক্ষেপে বিচরণ করে ধূসরবর্ণ অতিকায় মার্জার- পুমা!
মার্কিন মুলুকের মানুষ পুমাকে বিভিন্ন নামে ডাকে। সবচেয়ে প্রচলিত নামগুলো হচ্ছে পুমা, কুগার, মাটন্টেন লায়ন বা পার্বত্য সিংহ পুমা অবশ্য সিংহ নয়, যদিও তার গায়ের রং ও অবয়বে কেশরহীন সিংহের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য পাওয়া যায়। বাঘ, সিংহ, লেপার্ড, জাগুয়ার প্রভৃতি যেসব জানোয়ারকে ইংরেজিতে Big Cats বলা হয়, পুমাও তাদের মতোই বৃহক্কায় মার্জার গোষ্ঠীর অন্তর্গত কিন্তু ওইসব পশুর মতো হিংস্র ও ভয়ংকর নয় পুমা। নিতান্ত কোণঠাসা হয়ে পড়লে সে রুখে দাঁড়ায় বটে, তবে অধিকাংশ সময়ে সে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করে।
বিশালকায় বিড়ালের মত এই ধূসর রঙের জন্তুটিকে জীববিজ্ঞানীরা নিরীহ আখ্যা দিয়েছেন। শিকারিদের মধ্যেও অধিকাংশ ব্যক্তি পুমাকে ভীরু ও নিরীহ মনে করেন। কিন্তু সব নিয়মেরই ব্যতিক্রম আছে। মাঝে মাঝে দুই একটা পুমা ভয়ংকর হিংস্র স্বভাবের পরিচয় দেয়। আমেরিকার ফ্ল্যাটহেড অঞ্চলে একবার একটা পুমা মানুষ মেরে নরমাংস খেতে শুরু করে। শিকারিরা কুকুরের সাহায্য নিয়ে জন্তুটাকে মারতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাদের সব চেষ্টা হল ব্যর্থ। সেখানকার অধিবাসীদের সৌভাগ্য– একটা দৈব-দুর্ঘটনায় নরখাদক জন্তুটা মারা পড়ল।
শিক্ষিত শিকারি কুকুর বা হাউন্ডের দলবদ্ধ আক্রমণকে পুমা ভয় পায়। কুকুরের দল তাড়া করলে সে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে চায়। নিতান্ত কোণঠাসা হয়ে পড়লে এবং পালানোর পথ না থাকলে সে রুখে দাঁড়ায়। মারমুখো পুমার পালটা আক্রমণে কুকুরের দল বিধ্বস্ত হয়ে গেছে এমন ঘটনা খুব বিরল নয়।
অন্যান্য বিড়ালজাতীয় জানোয়ারের মতো পুমাও মাংসাসী জীব। অনেক সময় হরিণ, শশক প্রভৃতি বন্য পশুদের ছেড়ে সে গৃহপালিত গরু, ভেড়া, ঘোড়া প্রভৃতি জন্তুর উপর আক্রমণ চালায়। ফলে প্রতিবৎসর আমেরিকার বহু গৃহপালিত জীব পুমার কবলে প্রাণ হারায়। তাই পশুপালকদের কাছে পুমা হচ্ছে অতিশয় ঘৃণ্য, সুযোগ পেলেই তারা গুলি চার্লিয়ে পুমাকে হত্যা করে।
পুমা খুব চটপটে জানোয়ার, গাছে উঠতেও পারে সে খুব ভালোভাবেই। কিন্তু শিকারীর রাইফেল তাকে গাছে উঠলেও রেহাই দেয় না। শিকারীদের অত্যাচারে পুমার সংখ্যা ভীষণভাবে হ্রাস পেয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এই জীবটি লুপ্ত হয়ে যেতে পারে আশঙ্কা করে আমেরিকার সরকার বিভিন্ন স্থানে অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করে পুমাকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়েছেন। আমরা সরকারের সাফল্য কামনা করি।