অচেনা
১
তমালের বুক ঢিপঢিপ করছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। অবস্থা প্রায় দমবন্ধের মতো।
ঠাকুর দেবতায় তেমন ভক্তি নেই তমালের। সাতাশ বছর বয়েসে ঠাকুর দেবতায় বেশি ভক্তি না থাকাটা আশ্চর্যের কিছু নয়। কিন্তু আজ তমালের মনে হচ্ছে, কাজটা ঠিক হয়নি, থাকা উচিত ছিল। অবশ্যই উচিত ছিল। মনে মনে দেবতাদের ডাকার চেষ্টা করল সে। যদি এই বিপদের হাত থেকে কেউ তাকে রক্ষা করতে পারে সে ঈশ্বরই পারবেন। কিন্তু অবস্থা এতটাই খারাপ যে এই মুহূর্তে দেবতাদের একটা নামও মনে পড়ছে না। বরং মন্টু, ঝন্টু, লালু ধরনের উলটো পালটা নাম মাথায় আসছে। কেন এমন হচ্ছে? তাকে বিপদে ফেলে দেবতারা কি মজা দেখছেন? আড়াল থেকে বলছেন, এতদিন ডাকিনি, এবার বোঝ ঠেলা?
গাড়িতে চড়বার অভ্যাস তমালের নেই। অফিস যাওয়া আসা বাসে, ট্রামে। বাড়ির পাশেই বাসের গুমটি। এটা একটা বড় সুবিধে। বেরিয়ে টুক করে বাসে উঠে পড়লেই হল। চেতলা ব্রিজের কাছে বাস থেকে নেমে শুধু দুটো স্টপ অটোয়। বাসের গোলমাল বা ভয়ংকর লেট ধরনের কিছু হলে তবে ট্যাক্সি। তবে সেটাও বছরে দু’-একবারের বেশি নয়। অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে সামান্য চাকরি করে বছরে দু’-একবারের বেশি ট্যাক্সি চড়া যায় না।
সেই তমাল এখন চলেছে গাড়িতে। এমনি গাড়িতে নয়, মারকাটারি ধরনের দামি গাড়িতে। এরকম গাড়ি চড়া তো দূরের কথা, চোখেও খুব একটা দেখেছে কিনা মনে করতে পারছে না সে। গাড়ি তো নয় ছোটখাটো একটা এরোপ্লেন যেন। নরম সিটে বসার সঙ্গে সঙ্গে গা ডুবে গেছে। এসি চলছে বিড়বিড় বিড়বিড় করে। যেন ঘুমপাড়ানি গান গাইছে। হালকা একটা মিষ্টি গন্ধও আছে। সম্ভবত গাড়ির ভেতর সেন্ট ছড়ানোর কোনও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রয়েছে।
মসৃণ হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটছে সাঁ সাঁ করে। ছুটছে না, ঝড়ের মতো উড়ছে। এটাও তমালের বুক ঢিপঢিপ করার একটা কারণ। বাইরে তাকালে মনে হচ্ছে, যে-কোনও মুহূর্তে উলটোদিক থেকে আসা লরি বা ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগবে। গাড়ি উঠে যাবে আকাশে, তারপর ছিটকে পড়বে পাশের নালায়। কাল সকালে খবরের কাগজে বেরোবে— ‘বিখ্যাত কোম্পানির রয় অ্যান্ড সন্সের মালিক শিবপ্রসাদ রায় একটা পথ দুর্ঘটনায়…। সঙ্গে তমালের নাম কি থাকবে? মনে হয় না থাকবে। মালিকের পাশে সামান্য কর্মচারীর নাম থাকার কোনও কারণ নেই। সে বেঁচে থাকলেও নয়, মরে গেলেও নয়।
তবে তমালের ভয়ের মূল কারণ গাড়ির স্পিড় নয়, সঙ্গের মানুষটি। তার সহযাত্রী। সেই কারণেই এই টেনশন, গলা শুকিয়ে কাঠ। সিটিয়ে বসে আছে সে। মনে হচ্ছে, মালিকের সঙ্গে গাড়িতে বসে যাওয়ার থেকে দরজা খুলে ঝড়ে উড়ে যাওয়া অনেক ভাল।
তমাল আড়চোখে তাকাল। শিবপ্রসাদ রায়ের মুখ থমথম করছে। হাতে ফাইল জাতীয় কিছু একটা খোলা। সেখানে লেখা কিছু নেই, শুধু কয়েকটা রঙিন গ্রাফ। সেই গ্রাফ এঁকেবেঁকে চলে গেছে পাতা জুড়ে। মানুষের হার্টের যেমন ইসিজি রিপোর্ট হয়, এটা তেমনি কোম্পানির হার্টের ইসিজি। শিবপ্রসাদ রায় হাত তুলে তাঁর ফিনফিনে সোনালি ফ্রেমের চশমা ঠিক করলেন। টাইয়ের গিট টেনে সামান্য নামালেন। তারপর হাতের ফাইল বন্ধ করে চোখ বুজলেন। তমালের মনে হল, মানুষটা চোখ বুজলে আরও বেশি রাগী হয়ে যায়। তার বুকের ঢিপঢিপানি বেড়ে গেল। গলা ফাটছে। শিবপ্রসাদ রায়ের আসনের পাশে খাপ। সেখানে কাগজ, জলের বোতল উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু তাতে লাভ নেই। মরে গেলেও হাত বাড়িয়ে ওই জল চাইতে পারবে না তমাল। খাওয়া তো দূরের কথা।
কলকাতা আর কত দূরে? উর্দি পরা ড্রাইভার পিঠ সোজা করে গাড়ি চালাচ্ছে। শুধু উর্দি নয়, লোকটার মাথায় টুপিও আছে। একে যদি জিজ্ঞেস করা হয়— ভাই কলকাতা আর কত দূর? তা হলে সে নিশ্চয়ই ঘাড় ফিরিয়ে কঠিন চোখে তাকাবে। সেই চোখে বলবে— তুমি আমাকে প্রশ্ন করার কে হে? আর একটা কথা বললে গাড়ি পাশে দাঁড় করাব। ঘাড় ধরে নামিয়ে দেব। তার থেকে চুপ করে থাকা ভাল।
তমালের কান্না পাচ্ছে। আবার রাগও হচ্ছে। নিজের শরীরের ওপর রাগ। একটা অসুখ বিসুখ হতে পারল না? ইনফ্লুয়েঞ্জা অথবা ফুড পয়জন ধরনের কিছু। নিদেন পক্ষে সকালের স্নানে যাওয়ার তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পা মচকাতে পারত। তা হলে সে আজ অফিসেই আসত না। কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে এই মারাত্মক গাড়িযাত্রার প্রশ্নও উঠত না।
ভয়ংকর গাড়ি যাত্রা কতক্ষণ চলছে? খুব বেশি নয়, তবে মনে হচ্ছে অনন্তকাল। বিপদের সময় এক মিনিটকে একশো বলে মনে হয়। হাত ঘুরিয়ে ঘড়ি যে দেখবে সে সাহস হচ্ছে না। এম ডি-র পাশে বসে ঘড়ি দেখা নিশ্চয়ই একটা অন্যায় কাজ। এখন পর্যন্ত শিবপ্রসাদ রায় তার সাথে কোনওরকম মারাত্মক আচরণ করেছেন? না করেননি। মারাত্মক কেন, কোনওরকম আচরণই করেননি। গাড়িতে ওঠার পর একটা কথাও বলেননি। কিন্তু তাতে কিছু এসে যায় না। তার মতো অতি নগণ্য একজন কর্মচারীর মালিকের সঙ্গে পাশে বসে যাওয়াটাই যথেষ্ট মারাত্মক। দম বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এর বেশি কিছু দরকার হয় না।
ঘটনাটা একেবারেই হঠাৎ ঘটেছে।
আজ সকালে অফিস যাওয়ার পরই সুধীরবাবু ডেকে পাঠাল। সুধীর ঘোষ অ্যাকাউন্টস অফিসার। মানুষটা ভাল। হিসেবের ঝামেলায় পড়লে অনেক সময় তমালকে বের করে আনে। অথচ ইচ্ছে করলে উপরে কমপ্লেইন করতে পারত— এই ছেলে যোগ বিয়োগে কাঁচা। সেই নোটের ভিত্তিতে অন্য ডিপার্টমেন্টে তার বদলি হতে পারত। মেশিনে বা ফিল্ডে। এই কারণে তমাল সুধীরবাবুকে পছন্দ করে। একটা কৃতজ্ঞতা আছে।
‘একটা কেলেঙ্কারি হয়েছে তমাল।’
‘কী কেলেঙ্কারি?’
‘কাল লন্ডন থেকে ফিরেই এম ডি আজ প্ল্যান্ট ভিজিটে গেছে।’
‘তাই নাকি।’
‘ওখানে সারাদিন থাকবেন। ঘুরে ফিরে দেখবেন। লাঞ্চের সময় ম্যানেজারদের সঙ্গে মিটিং করবেন।’
তমাল নার্ভাস গলায় বলল, ‘এই রে।’
এই অফিসে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কথা শুনলে সবাই নার্ভাস হয়ে যায়। হওয়ারই কথা। কোম্পানি যেমন বড়, মালিকটিও তেমনি রাগী। শিবপ্রসাদ রায়ের রাগ সম্পর্কে নানা ধরনের সত্যি মিথ্যে গল্প চালু আছে। তার মধ্যে সবথেকে বড় মিথ্যে গল্প হল ‘ইয়ে’র গল্প। একবার মুম্বাইয়ে অফিসে টার্গেটে গোলমাল হয়ে গিয়েছিল বলে ভদ্রলোক নাকি এমন ধমক দিয়েছিলেন যে সেলস ম্যানেজারের প্যান্টে ‘ইয়ে’ হয়ে গিয়েছিল। শোকজ, সাসপেনশন, ট্রান্সফারের সত্যি গল্পের থেকেও ‘ইয়ে’ হয়ে যাওয়ার মিথ্যে গল্প মানুষ বেশি বিশ্বাস করেছিল। তবে মানুষটা যে রাগী তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কলকাতার অফিসে এলে গোটা অফিসটা একেবারে শান্ত হয়ে যায়। হাসি, ঠাট্টা, আড্ডা, ঝগড়া সব বন্ধ। টেবিলে ঘুরে ঘুরে কাজকর্মের খোঁজ নেন। অনেকটা স্কুলে পড়া ধরার মতো অবস্থা।
সুধীরবাবু বললেন, ‘আমার দায়িত্ব ছিল তপোবিজয় সেনের জন্য কাগজপত্র ফাইল করে দেওয়া। সাততাড়াতাড়ি অফিসে এসে কাজটা করেও দিলাম। যত্ন নিয়েই করলাম। ফাইনান্স ম্যানেজারের কাজ বলে কথা।’
‘তারপর?’ উদ্বিগ্ন গলায় তমাল জিজ্ঞেস করল।
সুধীরবাবু পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, ‘এখন দেখছি, গত জুনের সেল রিপোর্টটা ফাইলে ঢোকাতে ভুলে গেছি। তপোবিজয় সেনকে মোবাইলে ধরলাম। উনি শুনে তো আঁতকে উঠলেন। বললেন, যে করেই হোক পাঠিয়ে দিন। শিবপ্রসাদ রায় যেমন মানুষ হয়তো ওই রিপোর্টটাই চেয়ে বসবে।’
তমাল বলল, ‘কী হবে?’
‘ভাই তমাল, এই কাজটা তোমায় করতে হবে।’
‘আমায়?’
‘হ্যাঁ তোমায়। কাগজটা প্ল্যান্টে নিয়ে চলে যাও। চুপিচুপি তপোবিজয় সেনের হাতে তুলে দেবে। মালিকের কাছে ফাইনান্স ম্যানেজারের হেনস্তা হলে আমার কী অবস্থা হবে একবার অনুমান করতে পারছ? ভেবেছিলাম, আমি নিজেই যাব। কিন্তু কী জানি তাড়াহুড়োয় আর কী ভুলে গেছি। তা ছাড়া হঠাৎ কোনও ফিগার লাগলে এখান থেকে ফোনে বলে দিতে হবে। এই সময় অফিস ছেড়ে নড়া আমার উচিত হবে না। অন্য কাউকেও ভরসা করতে পারছি না। কে জানে হয়তো দেরি করে পৌঁছেলে, ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে যাবে। প্লিজ তমাল, হাতে সময় আছে। তুমি রওনা দাও।
হাওড়া থেকে দশটা বাহান্নর ট্রেন ধরেছে তমাল। স্টেশন থেকে রিকশাতে প্ল্যান্টে পৌঁছোতে আরও কুড়ি মিনিট। সব মিলিয়ে আড়াই ঘণ্টার বেশি। তবে কাজ হয়েছে। লাঞ্চের মাঝখানে এসে কাগজ পৌঁছে দিয়েছে। ভেবেছিল তখনই পালিয়ে আসবে। ট্রেন ধরে কলকাতা। তপোবিজয় সেন আটকে দিলেন। বললেন, ‘খেয়ে যাবে তমাল।’
খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল চমৎকার। সরু চালের ভাত, হালকা মুগের ডাল। ঝুরি ঝুরি আলু ভাজা। মাছ মাংস তো আছেই। এম ডি নাকি বহুদিন বাঙালি রান্না খাননি। এতদূর পর্যন্ত ঠিক ছিল। গোলমালটা হল এর পর। তমাল যখন বেরোতে যাচ্ছে তখন। গেটের কাছে আসতেই দারোয়ান তাকে প্রায় ঠেলে সরিয়ে দেয়।
‘সরুন, সরুন, সাহেব বেরোচ্ছে। আঃ সরুল বলছি।’
তড়িঘড়ি সরে দাড়াল তমাল। সত্যি সত্যি শিবপ্রসাদ রায় বেরিয়ে এসেছেন। দল বেঁধে ম্যানেজাররা আসছে পিছু পিছু। উর্দি পরা ড্রাইভার ছুটে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিল। ম্যানেজিং ডিরেক্টর কিছু একটা বলার জন্য মাথা ঘোরালেন আর তখনই চোখ পড়ে গেল তমালের ওপর। থমকে দাড়ালেন। হাতের ছাতা, ব্যাগ নিয়ে কাচের দরজার গায়ে মিশে যেতে চেষ্টা করল তমাল।
সোনালি চশমার ওপর দিয়ে ভুরু কুচকে এম ডি বললেন, ‘ইয়ংম্যান, আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি?’
শিউরে উঠল তমাল।
‘কোথায় বলুন তো?’ শিবপ্রসাদ রায়ের গলায় অস্বস্তি।
কাঁপা পায়ে এবার এগিয়ে এল তমাল। কিছু একটা বলতে গেল, কিন্তু সেই কথা গলা দিয়ে বের হল না। ভেতরে আটকে রইল। কোম্পানির মালিক বলছে তাকে দেখেছে! অসম্ভব। তাকে চেনার কোনও কারণ নেই। কলকাতার অফিসে দেখে থাকলেও মনে রাখার প্রশ্নই ওঠে না। সে দেড়শো কর্মচারীর একজন মাত্র। তাও ওপরের দিকের কেউ নয়, নীচের দিকের কর্মী।
শিবপ্রসাদ রায় গাড়ির দরজায় হাত রেখে ভুরু কুঁচকে বললেন, ‘কোথায় দেখেছি? মুম্বইতে? খুব চেনা চেনা লাগছে। বাই এনি চান্স আপনি কি করে কেউ হন?’
কঙ্কন! কে কঙ্কন? এই নামে কাউকে চেনা তো দূরের কথা, এমন নাম তমাল কখনও শোনেনি। তার হাঁটু কঁপতে শুরু করেছে। অফিসার, ম্যানেজার, পিয়ন, আর্দালি, ড্রাইভাররা সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেন একটা আজব বস্তু দেখছে।
তমাল আবার কিছু বলতে গেল। তার আগেই শোবিজয় কয়েক পা এগিয়ে এলেন। বললেন, ‘স্যার, এ আমাদের কলকাতা অফিসের স্টাফ। তমাল। অ্যাকাউন্টসে আছে। ভাল ছেলে।’
শিবপ্রসাদ রায় ঠোঁটের ফাঁকে সামান্য হেসে বললেন, ‘ও তা হলে আমিই ভুল করেছি। তুঠাৎ খুব চেনা চেনা লাগল।’
তমাল এগিয়ে এসে হাত জোড় করল এবং বুঝতে পারল শুধু হাঁটু নয়, তার গোটা শরীর কাঁপছে। তপোবিজয় আবার হাসিমুখে বললেন, ‘তমাল কলকাতার থেকে একটা কাগজ দিতে এসেছিল স্যার। দিয়েই কলকাতা ফিরে যাচ্ছিল। আমি ধরে বললাম, খেয়ে যাও। ডোন্ট ওয়ারি, অনেক ট্রেন পাবে।’
শিবপ্রসাদ রায় মাথা নেড়ে বললেন, ‘ঠিক করেছেন।’ তারপর তমালের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কী তুমি কলকাতায় ফিরবে?’
ঢোঁক গিলে তমাল কোনওরকমে বলল, ‘হ্যাঁ স্যার।’
একেই কি বলে রেড় লেটার ডে? খোদ মালিক তার সঙ্গে কথা বলছে। শুধু বলছে না, একেবারে তুমি তুমি করে বলছে।
এরপরই আসল ঘটনা ঘটল। ঘটনা না বলে তমালের পক্ষে দুর্ঘটনাই বলা উচিত।
শিবপ্রসাদ রায় হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘দেন ইউ ক্যান কাম উইথ মি। আমার সঙ্গে যেতে পারো। কোনও অসুবিধা আছে? আমি তোমাকে কলকাতা পর্যন্ত লিফট দিচ্ছি।’
তমালের এবার মনে হল, মাটি কেঁপে উঠল। মানুষটা বলছে কী? তাকে লিফট দেবে!
কে যেন বলে উঠল, ‘নাও নাও উঠে পড়ো তমাল। স্যার যখন বলছেন।’
তমাল দরদর করে ঘামছে। সে কি ছুটে পালাবে?
শিবপ্রসাদ রায় এবার ঠান্ডা গলায় বললেন, ‘নাও এসো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
এরপর আর কিছু করার নেই। তমাল যখন গাড়িতে উঠছে তখন তার মনে হচ্ছে গাড়ি নয়, উঠছে ফাঁসির মঞ্চে। সেই ‘ফাঁসির মঞ্চ’ ছুটছে।।
কী যেন নাম তোমার?
চোখ বোজা অবস্থাতেই শিবপ্রসাদ রায় প্রশ্ন করলেন। চমকে উঠল তমাল। বুকের ঢিপঢিপানি মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। হার্টফেল করল নাকি?
‘ও। তমাল তুমি কি জল খাবে?’
তমাল অবাক হল। মানুষটা তার তেষ্টার কথা জানতে পেরেছে?।
‘না, স্যার ঠিক আছে।’
শিবপ্রসাদ রায় চোখ খুললেন। একটু হেসে বললেন, ‘না ঠিক নেই। নাও জল খাও।’
কথা শেষ করে সিটের খাপ থেকে জলের বোতল এগিয়ে দিলেন। কাঁপা হাতে বোতল ধরল তমাল। চলন্ত গাড়িতে জল খাওয়া একটা ঝুঁকির ব্যাপার। ভেতরে জল পড়লে কেলেঙ্কারি।
‘তুমি অ্যাকাউন্টসের কোনদিকটা দেখো?’
মুখ খোলা বোতল থেকে জল ছলকে পড়ল। তবে গাড়িতে নয়, পড়ল তমালের গায়ে। এই রে। পড়া ধরা শুরু হয়ে গেছে। এরপর আসবে বকাঝকা। কালই আসবে চিঠি। সুধীরবাবু সেই চিঠি ধরাতে ধরাতে বলবেন, ‘তোমার জন্য খুবই খারাপ লাগছে তমাল। তোমাকে মেশিনে ট্রান্সফার করা হয়েছে। কাল থেকে নাইট ডিউটি। সঙ্গে রাতের খাবার আনবে। ক্যান্টিনে বেশিদিন টানলে পেটের সমস্যা হবে।’
তমাল কাঁদোকাঁদো গলায় বলবে, ‘আমাকে বাঁচান সুধীরবাবু। প্লিজ বাঁচান।’
সুধীর ঘোষ গম্ভীর হয়ে ফাইলে মন দেবেন। বলবেন, ‘আমার কিছু করার নেই রে ভাই। খোদ মালিকের অর্ডার।’
তমাল এম ডি-র দিকে তাকিয়ে বলল, ‘স্যার, বেশি কিছু নয়। আগের দিনের সেল হিসেব চেক করি, এন্ট্রি করতে পাঠিয়ে দিই স্যার।’
শিবপ্রসাদ রায় বললেন, ‘তুমি রিল্যাক্স করে বসে।’
‘ঠিক আছে স্যার।’
‘না ঠিক নেই। আমি খেয়াল করেছি, আমি খেয়াল করেছি, পুরো পথটাই তুমি স্ট্রেস নিয়ে বসে আছ। বি ইজি।’
এতক্ষণ পিঠ সোজা করে বসে ছিল। এবার সিটে হেলান দিল তমাল। শিবপ্রসাদ রায় জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন। হালকা গলায় বললেন, ‘আসলে কী হয় জানো তমাল, অনেক সময় চেনা মানুষকে চেনা যায় না, আবার অচেনা কাউকে হঠাৎ খুব চেনা মনে হয়। তাই না?’
এম ডি মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন, হাসলেন। তমাল কী করবে বুঝতে পারছে না। মালিক হাসলে কী করতে হয়? হাসতে হয়?
‘আরও আছে। একজনকে একভাবে চিনলাম, হয়তো কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, মানুষটা তা নয়। সম্পূর্ণ অচেনা ঠেকল। তোমার বেলায় হয়েছে প্রথমটা। কোথায় যেন দেখেছি মনে হল।’
কঠিন কথা। পুরোটা বুঝতে পারল না তমাল তবে শুনতে বেশ সহজ লাগল। উনি কি আবার অফিসের কাজের কথায় আসবেন? আসবেন মনে হয়। বড় মানুষেরা এইরকমই হয়। কঠিন কথার আগে সহজ আচরণ করে।
‘অফিসের হিসাব চেক করার সময় তুমি ভুল পাও?’
তমাল চুপ করে রইল। না, চাকরিটা বোধহয় বাঁচানো গেল না। কালই কপালে চিঠি ঝুলছে। মরতে কেন যে সুধীরবাবুর কথায় ছুটে এল? একটা কিছু বলে…। অতগুলো ম্যানেজার মিলে তাকে মালিকের গাড়িতে তুলে দিলই বা কোন আক্কেলে?
কী বা করার ছিল? খোদ মালিক যদি গাড়িতে উঠতে বলে।
‘কী হল বললে না কত ভুল পাও?’
তমাল ঢোক গিলল। কী বলবে? বেশি বলবে, না কম? কোনটা বললে এম ডি রাগ করবে না? মনে হয় ‘ভুল পাই না’ বলাটাই ঠিক হবে। ওপরের লেভেলের লোকেরা ভুলের কথা শুনতে পছন্দ করেন না।
তমালের মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, ‘কিছু ভুল পাই স্যার।’
‘গুড। যত বেশি ভুল পাবে তত বুঝবে নিজের কাজ ঠিক করছ। ভুল করতে করতেই একমাত্র ঠিকে পৌঁছানো যায়।’
‘চেষ্টা করব স্যার। অবশ্যই চেষ্টা করব।’
আশ্চর্যের ব্যাপার হল, তমালের এখন তাঁর সঙ্গে কথা বলতে আগের মতো অসুবিধা হচ্ছে না। কই বকাঝকা তো কিছু নেই। বরং কথাগুলোও সুন্দর।
‘গান শুনবে?’
গান! তমাল চমকে তাকাল। রাগী মালিকের মুখে এ কী কথা!
‘শোনো, ভাল লাগবে। আমার সঙ্গে সবসময়ই রবীন্দ্রসংগীতের ভাল কালেকশন থাকে। আনকমন সব গান। একেকদিন একেকরকম নিয়ে বেরোই। সম্ভবত আজ পূজা পর্যায়ের সিডি আছে।’
শিবপ্রসাদ রায় সামান্য গলা তুলে ড্রাইভারকে বললেন, ‘চরণ টেপটা চালিয়ে দাও।’
তমাল মুগ্ধ। এতটাই মুগ্ধ যে সে কিছু বলতেও পারছে না। ফিরে গিয়ে যে যখন এই গল্প বলবে কেউ বিশ্বাস করবে? ডাকসাইটে মানুষটা তার মতো এক অকিঞ্চিৎকর কর্মীকে গান শুনিয়েছে, এ কথা কি বিশ্বাস করার মতো? তমাল এবার একটা কাণ্ড করল। হাত বাড়িয়ে সহজভাবে বলল, ‘স্যার, আর একবার জলের বোতলটা দেবেন? তেষ্টাটা মেটেনি।’
একটুও না ফেলে বেশ খানিকটা জল খেয়ে ফেলল তমাল। জামার হাতায় মুখ মুছতে মুছতে রবীন্দ্রসংগীত শোনার জন্য তৈরি হল। মনে মনে সুধীর ঘোষকে ধন্যবাদ জানাল। এই গরমের মধ্যে ট্রেনের ভিড় ঠেলে তাকে এতদূর পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ। ওই মানুষটার জন্যই তো এই বিরল অভিজ্ঞতা। শিবপ্রসাদ রায়ের সঙ্গে বসে গান শোনা।
কিন্তু গান শুরু হওয়ার মুখেই একটা কাণ্ড ঘটল।
বিকট আওয়াজ। গাড়ির পাশে যেন বোমা ফাটল। চরণ সর্বশক্তি দিয়ে ব্রেক কষল। ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়ি থমকে দাঁড়াল মাঝপথে।
২
ঝাঁ চকচকে রাস্তার পাশে একটা ঝুপড়িতে বসে আছে তমাল। পাশে রায় অ্যান্ড সনস্ কোম্পানির কর্ণধার শিবপ্রসাদ রায়। দুজনের হাতে কাচের গ্লাস। তাতে চা। চায়ের স্বাদ খারাপ। তমাল তার মালিককে এই চা খেতে বারণ করেছিল। তিনি শোনেননি। বরং আরও একবার খাবেন বলে ঘোষণা করে রেখেছেন।
বিকেলের আলো ফুরোতে বেশি দেরি নেই। চওড়া রাস্তা দিয়ে কলকাতার দিকে গাড়ি ছুটে যাচ্ছে ঝড়ের মতো। তমাল চেয়েছিল, মোবাইলে খবর দিতে। প্ল্যান্ট থেকে যদি কোনও গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়। শিবপ্রসাদ রায় রাজি হননি।
‘থাক, বরং এসো তমাল এই ঝুপড়িটায় গিয়ে চায়ের খোঁজ করি।’
‘চা! স্যার এখানে আপনি চা খাবেন।’
শিবপ্রসাদ সামান্য হেসে বললেন, ‘কেন, তুমি খাবে না? তুমি না খাও, আমি খাব। অনেক দিন রাস্তায় বসে চা খাইনি।’
সেই চা খাওয়া চলছে। শুধু চলছে না, দু’জনেই বসে পড়েছে ঝুপড়ির বাইরে পাতা কাঠের বেঞ্চে। বেঞ্চের পায়ায় মনে হয় কোনও গোলমাল আছে। মাঝে মাঝেই ঢক ঢক করছে। তমালের অসুবিধা হলেও কোট টাই পরা মানুষটার মনে হচ্ছে না কোনও অসুবিধা হচ্ছে। তিনি বেশ আরাম করেই বসে আছেন। তমাল আরও মুগ্ধ। বড় মানুষ একেই বলে। ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে এরা ভাবে না।
খানিকটা দূরে চরণ ফেটে যাওয়া গাড়ির চাকা বদলাচ্ছে। এখনও তার মাথায় টুপি। জ্যাক লাগিয়ে গাড়ি উঁচু করছে সে। তার পাশে উবু হয়ে বসে আছে আট-ন’বছরের এক বালক। খালি গা, ঢলঢলে হাফপ্যান্টে দড়ি বাঁধা। বালকটি সম্ভবত আশেপাশে গ্রামের গোরু চরায়। হাতে একটা খাটো ধরনের লাঠিও আছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছুক্ষণ চাকা বদল দেখে সে এবার গাড়ি পর্যবেক্ষণে মন দিয়েছে। জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখছে। গায়ে হাত বুলোচ্ছে। তমাল চা খেতে খেতে দুর থেকে নজর রাখছে। এই ধরনের ছেলেপিলে ছিঁচকে চোর হয়। গাড়ি থেকে জিনিস তুলে পালায়। বাড়াবাড়ি করলে ধমক দিতে হবে।
শিবপ্রসাদ রায় চায়ের গ্লাস নামিয়ে বললেন, তুমি সঙ্গে আসায় ভালই হল। নইলে একা একা বসে থাকতে হত।
‘আমারও খুব ভাল লাগছে স্যার।’
‘বানিয়ে বলছ না তো?’
তমাল হেসে বলল, ‘সত্যি স্যার। আপনার সম্পর্কে কত কী শুনেছিলাম…।’
‘আমার সম্পর্কে শুনেছিলে! কী শুনেছিলে?’
তমাল লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলল, ‘শুনেছিলাম, আপনি স্যার ভীষণ রাগী।’
শিবপ্রসাদ রায় হাতের গ্লাসটা নামিয়ে চোখ বড় করে বললেন, ‘রাগী! কেমন রাগী?’
‘স্যার আপনার রাগ মেজাজ নিয়েও অনেকরকম গল্প আছে অফিসে।’
‘একটা গল্প বলো।’
‘একবার নাকি স্যার আপনার ধমক খেয়ে কোন ম্যানেজার…।’
বলতে বলতে থেমে গেল তমাল। উঠে দাঁড়িয়ে গলা তুলে ধমক দিল, ‘অ্যাই, অ্যাই ছেলে। কী করছিস, ওখানে? যা ভাগ। ভাগ বলছি।’
শিবপ্রসাদ রায় আলতো ভঙ্গিতে বললেন, ‘ছেড়ে দাও, ও কিছু করবে না।’
তমাল উত্তেজিত গলায় বলল, ‘করবে না মানে? আপনি এদের চেনেন না স্যার। একেকটা খুদে ডাকাত। সুযোগ পেলেই কিছু একটা নিয়ে পালাবে। দেখছেন না কেমন ঘুরঘুর করছে।’
কথাটা শেষ করে আবার গলা তুলল তমাল।
‘এই ছোঁড়া গাড়ির দরজা খুঁটছিস কেন? চড় খাবি…।’
যে গাড়িকে খানিক আগেও ফাঁসি মঞ্চ মনে হচ্ছিল, তার প্রতি কেমন যেন একটা প্রচ্ছন্ন মমতা তৈরি হয়ে গেছে। তমাল নিজেই অবাক হল। ভালও লাগছে। বদ ছেলেটা আবার ঘুরে এসে চরণের পাশে বসেছে। ইট, নাট বল্ট, টায়ার এগিয়ে সাহায্য করছে। বেটা ওখান থেকে কিছু হাতাবার ধান্দা করছে না তো?
শিবপ্রসাদ রায় বললেন, আমার ধমকের গল্পটা শেষ করলে না তো?
তমাল এক গাল হেসে বলল, ‘স্যার সেই ম্যানেজার নাকি প্যান্টে…’
গলা ফাটিয়ে হেসে উঠলেন শিবপ্রসাদ। ঝুপড়ির মালিক চা তৈরি বন্ধ করে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। তমালের দারুণ লাগছে। লাগারই কথা। তার গল্প শুনে একজন এতবড় মানুষ গলা ফাটিয়ে হাসছে! স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। তমাল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, আজ কলকাতায় ফিরে রাতে ঘুমোবে না। টেলিফোন করে সবাইকে এই ঘটনা বলবে। মোবাইলের কার্ড ফুরিয়ে গেলে যাবে। কুছ পরোয়া নেই।
চরণ তমালের দিকে হাত তুলল। চাকা বদল হয়ে গেছে।
‘আসুন স্যার। গাড়ি রেড়ি।’
‘জাস্ট আ মিনিট তমাল।’
কথাটা বলে বাঁহাতের কড়ে আঙুল তুলে দেখালেন শিবপ্রসাদ রায়। তারপর স্বচ্ছন্দে হেঁটে মাঠের দিকে এগিয়ে গেলেন। গুনগুন করে গানও গাইছেন যেন।
তমালের ইচ্ছে করছে অফিসের সবার মাথায় মুগুরের বাড়ি মারে। ছি ছি। এমন একটা হাসিখুশি মানুষ সম্পর্কে কত কথাই না বলে ওরা। ভাগ্যিস আজ এসেছিল সে। তাই এত বড় মানুষটাকে চিনতে পারল।
শিস দিতে দিতে গাড়ির কাছে এগিয়ে এল তমাল। খালি গায়ের বালকটি এখনও গাড়ির গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে। তমাল সতর্ক হল। বেটা ছিনতাই টিনতাই করবে না তো? বলা যায় না। সন্ধে নামছে। এই সময়টা হাইওয়েতে চুরি ছিনতাইয়ের প্রকৃষ্ট সময়। অন্ধকার মাঠে গা ঢাকা দিলে কে ধরবে? স্যারের হাতে দামি কিছু নেই তো? ঘড়ি? মোবাইল?
চোখ মুখ শক্ত করে এগিয়ে এল তমাল। ছেলেটা দাঁত বের করে হেসে দূরে সরে দাঁড়াল।
‘কী হল তমাল?’
‘কিছু হয়নি স্যার, ছেলেটাকে তাড়াচ্ছিলাম। বদটা…। আপনি উঠুন স্যার।’
ড্রাইভারকে সরিয়ে নিজের হাতে গাড়ির দরজা খুলে দিল তমাল। ভেতরে আলো জ্বলে উঠছে। মায়াময় নরম আলো। শিবপ্রসাদ রায় পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করলেন। দু’আঙুলে একশো টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিলেন অন্ধকার ঘেঁসে দাড়ানো ছেলেটার দিকে।
‘নাও ধরো।’
তমাল স্তম্ভিত। মানুষটা কী করছে! ছেলেটা ঝাঁপ দিয়ে চোখের নিমেষে মানিব্যাগটা ছিনিয়ে নিতে পারে। তারপর এক লাফে নালা পেরিয়ে মাঠের জলকাদা ভেঙে ছুটবে। কে ধরবে তখন? স্যার বোধহয় ভুলে গেছেন, এটা লন্ডন নয়।
ছেলেটা আরও কয়েক পা পিছিয়ে গেল। শিবপ্রসাদ বললেন, ‘কী হল নাও, তুমি তো চাকা বদলাতে সাহায্য করেছ। আমি দূর থেকে দেখেছি। নাও, এটা তোমার বখশিশ।’
ছেলেটা এবার হাসল। তারপর দু’পাশে জোরে মাথা নাড়িয়ে উলটো মুখে দৌড় লাগাল টেনে।
একবার টায়ার ফাটলে গাড়ি সাধারণত আস্তে চলে। এই গাড়ি ছুটছে আরও জোরে। কলকাতায় পৌঁছোতে দেরি নেই। আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরে ঢুকে পড়বে তারা। মৃদু স্বরে গান চলছে। অচেনা রবীন্দ্রসংগীত। শিবপ্রসাদ রায় চোখ বুজে আছেন।
তমালের মনটা খারাপ হয়ে গেছে। তার খালি মনে হচ্ছে, মানুষকে সত্যি চেনা যায় না। বড় ছোট কোনও মানুষকেই নয়।
দ্য সানডে ইন্ডিয়ান, ৫ অক্টোবর ২০০৮