অচেনা বন্ধুত্ব – রিংকি হালদার
ঘরের মধ্যে মাত্র তিনটে মোমবাতির মৃদু আলো। দুজন মহিলা দুর্বোধ্য ভাষায় একটা বই পড়ে চলেছে। বইটার অক্ষরগুলো যেন জীবন্ত হয়ে আলোর মত জ্বলছে। সেই অপার্থিব আলোয় দেখা যাচ্ছে একজন শুয়ে আছে পাশে। কোনো স্পন্দন নেই তার শরীরে।
দেখলি ওকে? আমাদের দুজনের জন্য পারফেক্ট। বোতল থেকে পানীয় দুজনের জন্য গ্লাসে ঢালতে ঢালতে বলে হিয়া।
হিয়া আর তনু বেড়াতে এসেছে সমুদ্র তটের কাছে একটা হোটেলে। কটক থেকে যে হাইওয়ে সোজা কলকাতার দিকে যায়, সেটা থেকে ডানদিকে বেঁকে গিয়ে অখ্যাত অনামী এই ছোট্ট শহর। এরকম offbeat destination এর সুবিধা এটাই যে লোকজন বিশেষ আসে না এদিকে। শিকার ধরার উপযুক্ত জায়গা। এদিকেই একটা টোল প্লাজা তে আলাপ হয়েছে গোলাপের সাথে। টোল থেকে pass করা গাড়িগুলো থেকে টাকা তুলছিল গোলাপ।একজন বৃহন্নলা হলেও ভারী সুন্দর দেখতে ওকে। হতভাগ্য গুলোর উপার্জনের সুযোগ বিশেষ নেই। কেউ বাজারে ঘোরে,তো কেউ বড়ো রাস্তার crossing গুলোতে।উগ্র সাজ সেজে রাতের অন্ধকারে কেউ কেউ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক চালক দের শরীরের খিদে মেটায়। কষ্টের জীবন থেকে যদি কিছু জনকে মুক্তি দেওয়া হয়, ক্ষতি কি? হাসতে হাসতে এসবই আলোচনা করছিল দুজন।
তুই ওর ফোন নম্বর নিয়েছিস তো? কিছু সন্দেহ করে নি? হালকা চিন্তার ভাজ তনুর কপালে।
তনু আর হিয়া প্রাণের বন্ধু। ওদের সম্পর্ক টা বন্ধুত্বের থেকে অনেকটা বেশী। সমাজের স্বীকৃতি তো দুর অস্ত, পরিবার দুটোই মেনে নেয় নি ওদের। বরং অনেক চেষ্টা করেছিল দুজনকে আলাদা করে দেবার। কিন্তু ওরা একসাথে থাকতে চায়। সবসময়। তাই এই সিদ্ধান্ত ওদের। বাড়িতে কারোর সাথে যোগাযোগ নেই আর। সে অনেকদিনের কথা।
তনু, এই গোলাপকে চাই। হিয়া বলে।
হবে ডার্লিং হবে। তনুর গলায় আত্মপ্রত্যয়ী সুর। তারপর একে অপরের শরীরে সুখের খোঁজে মেতে ওঠে দুজন।
ইন্সপেক্টর রজত রায় খবরটা শুনে চমকে ওঠে। আবার একজন বৃহন্নলা নিখোঁজ। বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ধরনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে ওদের নিয়ে বিশেষ ব্যস্ত হয়নি কেউই। রজত নিজেও হয়তো এতটা ব্যস্ত হত না।কিন্তু কিছুদিন আগেই এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে ওর পরিচিত একজনের সাথে। তাই ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে।
রজত ফোন করে টুম্পা কে।
হ্যালো, টুম্পা। তোমার সাথে একটু দরকার ছিল।
মোবাইল ফোনের ওপার থেকে টুম্পার গলা শোনা যায়,
ইন্সপেক্টর বাবু? বলুন। কি হয়েছে? গোলাপের কোনো খবর পাওয়া গেল? কিছুটা হতাশা আর কিছুটা উৎসাহ স্পষ্ট তার কণ্ঠে।
না টুম্পা, গোলাপের খবর পাইনি। তোমাদের গোষ্ঠীর আরো একজন নিখোঁজ হয়েছে। সেই ব্যাপারে তোমার সাথে কথা বলতে চাই। উত্তর দেয় রজত।
টুম্পা গোলাপের সবথেকে ভালো বন্ধু। বয়সে গোলাপের থেকে বেশ কিছুটা বড়ো। একই টোল প্লাজায় ডিউটি করে ওরা।
জানেন ইন্সপেক্টর বাবু, গোলাপ এখানে আসার পর থেকে আমি সব সময় ওকে আগলে রেখেছি। কিছুদিন আগে ও বলেছিল দুটো মেয়ের সাথে ওর বন্ধুত্ব হয়েছে। তাদের সাথে কোথায় যেনো বেড়াতে যেতে চায়। পুরুষ মানুষ কেউ যদি হত, আমি অবাক হতাম না। কিন্তু দুটো মেয়ে ওকে নিয়ে বেড়াতে যাবে শুনে একটু অবাকই হয়েছিলাম। কেন যে ওকে আটকালাম না….. দুঃখ আর উৎকণ্ঠা ভরে টুম্পা বলে।
গোলাপ কে খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছে রজত। কিন্তু সে যেনো কোথাও উধাও হয়ে গেছে। গোলাপের ফোনের call list থেকে হিয়া আর তনুর নম্বর বের করেছে network provider এর সাহায্যে। কিন্তু ফোন দুটো বন্ধ। তাই current location track করতে পারে নি। বলা বাহুল্য, গোলাপের ফোন ও switch off। Toll plaza তে শেষবার active ছিল ফোন দুটো। আর ঘণ্টা খানেক পর থেকে গোলাপের টাও। CCTV footage থেকে গাড়ীর নম্বর টা পাওয়া গেছিল বটে। কিন্তু নম্বরটা ভুয়ো। মুখ গুলো পরিষ্কার নয়। শেষ পর্যন্ত গোলাপকে খুঁজে পায়নি রজত। এবার সে আর কোনো ভুল করতে চায় না। একটা সুযোগও হাতছাড়া করতে চায় না।
শহরের বাইরের দিকে নতুন একটা বহুতল। এই জায়গাটা পৌরসভা আর পঞ্চায়েতের মাঝখানে। তাই চারপাশটা বিশেষ উন্নত নয়। আর হবার সম্ভাবনাও কম। চারিদিকে ছড়িয়ে ইতস্তত জঙ্গল। বড়ো বড়ো জুন ঘাস। যেনো পৃথিবীর সাথে সব সম্পর্ক চুকিয়ে একটা আলাদা দ্বীপে ঘাপটি মেরে আছে বহুতল টা। কেমন যেন একটা মনখারাপের চাদর বিছিয়ে আছে সেখানে। Main gate এর সামনে এসে হর্ণ দিতে থাকে হিয়া। বলে, এই হল মুশকিল watchman গুলোকে নিয়ে, কোথায় যে থাকে।
ওদের ডাকাডাকি তে তড়িঘড়ি ছুটে আসে watchman। দরজা খুলতে গিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখে, গাড়িতে হিয়া আর তনু ছাড়াও অন্য কেউ আছে। পিছনের সিটে মাথা টা এলিয়ে শুয়ে আছে সে। ওরা দুজন গাড়ী টাকে পার্কিং এ রেখে নামলো। তারপর সাবধানে তৃতীয় মহিলা টিকে নামাল। বেশভূষা মহিলার বটে, কিন্তু চেহারা কেমন যেনো পুরুষালি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। আকাশের রং লাল আর বেগুনি মাখামাখি। বাসায় ফিরছে পাখির দল।তাদের ডাকে যেন অন্য কেমন সুর।
ম্যাডাম ,
হিয়া আর তনুর দিকে তাকিয়ে বলে watchman ছেলেটা, আপনাদের কি শরীর খারাপ?
তনু উত্তর দিল,
না তো, কেনো বলোতো?
আসলে আপনাদের দেখে কেমন যেন লাগছে। খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে আপনাদের দুজনকেই। দেখে মনে হচ্ছে যেন আপনাদের বয়স বেড়ে গেছে বেশ কয়েক বছর। বলে উত্তরের অপেক্ষায় হা করে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে।
ছেলেটির উত্তর শুনে চমকে ওঠে তনু আর হিয়া।
আরে হা করে তাকিয়ে না থেকে দরজা টা খোলো না। তনুর কর্কশ কন্ঠে চমকে উঠে লিফটের দরজা খুলে দিল ছেলেটি।
এত রেগে যাওয়ার মত কি বললাম রে বাবা।ওদের সঙ্গে ওটা কে? অজ্ঞান ই বা হয়ে আছে কেনো? মনে মনে বিড়বিড় করতে থাকে ছেলেটি। ও নিশ্চিত, দুজনের চোখের তলায় কালি ও স্পষ্ট দেখেছে। মুখের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে বলেও মনে হল যেন।
হিয়া রে, এখানে আর নয়। লিফটে উঠে যেতে যেতে বলে তনু। এই শেষ। এবার অন্য কোথাও। আবার বলে সে। তনুও মাথা নেড়ে সায় দেয়। তারপর বলে,
আজকের কাজ টা আগে করি ঠিক করে। এই কাজটা ঠিক করে হয়ে গেলে বেশ কিছুদিন ছুটি পাওয়া যাবে। ধীরে সুস্থে ভেবে কিছু একটা উপায় বার করবো।
আজ সত্যিই একটু কষ্ট হচ্ছে। পুরুষালি মহিলাটিকে ধরে নিয়ে যেতে হাঁপিয়ে উঠছে দুজন। আর অল্প সময়ের অপেক্ষা। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
একটা লিড পেয়েছে রজত। একটা হোটেল থেকে তিনজন মহিলা চেক আউট করেছে কিছুক্ষন আগেই। তাদের মধ্যে একজন কে চিনতে পেরেছে হোটেলের ম্যানেজার। রজতের ফোর্স তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছে নিখোঁজ মানুষটিকে। খুঁজতে খুঁজতে ওই হোটেলে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় এই সাফল্য।
হ্যালো টুম্পা, একটা লিড পাওয়া গেছে। রেডি থাকো, আমি তোমায় pick up করছি আধ ঘন্টার মধ্যে।রজত ফোন করে বলল।
আধ ঘন্টা লাগলো না। তার আগেই রজত এসে পৌঁছে গেলো। টুম্পা কে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলতে শুরু করল গাড়িটা।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা ছবি দেখাল টুম্পা কে। বলল
দেখো তো, এই দুজনই সেই দুজন নাকি,?
টুম্পা ভালো করে দেখলো। মুখের মিল আছে, কিন্তু তাদের থেকে আরো বয়স্ক এরা। মাত্র ছয় মাসে করো চেহারা এমন বদলে যায় নাকি? বলল,
না না। এরা নয়। তবে এদের মতো দেখতে ছিল খানিকটা।
দ্রুত চলেছে গাড়িটা। রজত আর টুম্পার সাথে আরো জনা কয়েক পুলিশ চলেছে সাথে।
Two bedroom ফ্ল্যাটের এই ঘরটা একটু বিশেষ ভাবে সাজানো। ঘরের সব আলো নেভানো। সারা পৃথিবীর অমঙ্গল যেন জড়ো হয়েছে ওই ঘরে।মাঝখানে অদ্ভুত কিছু আকৃতির নকশা। তার একটা দিকে সুসজ্জিত একটা জলচৌকির উপর একটা বই। চামড়ার মলাটে বাঁধানো। উপরে লাল কালিতে একটা ছবি আঁকা। একটা ত্রিভুজ। তার মাঝে একটা চোখ। সেই চোখের দিকে তাকালে বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে। যেন কি নিদারুণ পিপাসা ওই চোখে। যেমনটা আঁকা হয়েছে ঘরের মেঝেতে। দেব জ্ঞানে অধিষ্ঠিত বইটা। ঠাকুর ঘরের সিংহাসনে যেমন যত্নে রাখা থাকে গীতা বা মহাভারত। সেইরকম। নীচে রাখা আছে একটা পেতলের বেশ বড়ো মাপের পাত্র। নিস্তব্ধতা চারিদিকে। বাইরে ঝি ঝি পোকা ডাকছে।
তনু আর হিয়া ঘরে ঢুকছে। টেনে হিচড়ে যাকে নিয়ে যাচ্ছে ওই ঘরে, সে সংজ্ঞাহীন। পুরুষালী ভারী শরীর। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে গাড়িতে আসার সময় খাবারের সাথে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল। নাহলে দুজনের পক্ষে সম্ভব নাকি এর সাথে পেরে ওঠা। এমনিতেই বৃহন্নলা দের শরীরে ভয়ানক শক্তি হয়। আর এখন তো ওরা দুর্বল। রীতিমত কষ্ট হচ্ছে ওদের। নীরবে কষ্ট সহ্য করে চলেছে দুজনে। হাতে সময় কম। তিনজনের পরণে শুদ্ধ বস্ত্র। চোখে চোখে কিছু কথা হল দুজনের। তারপর মানুষটিকে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো মেঝেতে আঁকা চোখের উপরে। ত্রিভুজের বাকি দুটো দিকে গিয়ে বসল দুজনে।
তনু, তাড়াতাড়ি, সময় নষ্ট করিস না। ফিসফিস করে হিয়া বলে ওঠে।
তনু এবার তিনটে মোমবাতি রাখে ত্রিভুজের তিনটে দিকে। দুজনের সামনে দুটো, আর একটা বইটার সামনে। বইটার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত একটা ভঙ্গিতে প্রণাম করে দুজনে। যেভাবে শয়তানের সামনে আনুগত্য প্রকাশ করা হয়, কালো জাদু তে যেমন করা হয় বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি সেভাবেই অন্ধকারের গোলামের মত শ্রদ্ধা জানায়। তারপর ধীরে ধীরে তুলে নেয় পেতলের পাত্রে রাখা ধারালো একটা ছুরি। মোমবাতির ওই সামান্য আলোতেও চকচক করে ওঠে মন্ত্রপূত ছুরির ফলা। দুজনে একসাথে ছুরিটা ধরে চোখ বন্ধ করে বলতে থাকে,
হে অন্ধকারের অধীশ্বর শয়তান। এই বৃহন্নলা কে আমরা উৎসর্গ করছি তোমায়। বলি গ্রহণ করো। আমাদের দাও অনন্ত যৌবন।
বলে আবার প্রণাম করে। তারপর মেঝেতে শায়িত মানুষটির গলায় চকিতে চালিয়ে দেয় হতে ধরে রাখা ছুরি। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করে কাটা গলা থেকে। পিচকারীর রঙের মতো ছিটকে গিয়ে পড়তে থাকে বইটির উপরে। বইয়ের মলাটের শুকনো চামড়া ধীরে ধীরে সতেজ হয়ে উঠছে। টাটকা রক্ত আর কাঁচা চামড়ার গন্ধে ভরে উঠেছে ঘরটা। বইটা থেকে অপার্থিব এক সবুজ আলো বেরোতে শুরু করেছে। দুজনে একসাথে গিয়ে বসল বইটার সামনে। নিচে রাখা পাত্র টাতে ফোঁটা ফোঁটা করে বইয়ের মলাট বেয়ে জমেছে বৃহন্নলা টির রক্ত। দুজনে সেই রক্ত পান করে। প্রসাদ। শয়তানের উপাসনার প্রসাদ।
কোন এক মন্ত্রবলে এবার বইয়ের পাতা খুলে গেছে। জীবন্ত অক্ষরগুলো বিচিত্র সুরে পড়তে শুরু করে দুজনে। বন্ধ দরজার বাইরে টোকা পড়ছে। শুনতে পায় না হিয়া বা তনু।
রজত টুম্পা আর সশস্ত্র ফোর্স হাজির হয়েছে তনু দের দরজার বাইরে। Watchman ছেলেটা দেখিয়ে দিয়েছে ওদের ফ্ল্যাট টা।
দরজা খোলো, ভেতরে কে আছো দরজা খোলো।
রজত চিৎকার করে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। কোনো উত্তর আসে না।
দরজা খোলো। নাহলে দরজা আমরা ভেঙে ফেলবো।
নাহ্। এবারও কোনো সাড়া শব্দ নেই।
রজত পিছন ঘুরে তার সাথে আসা ফোর্সের উদ্দেশ্যে বলে,
দরজা ভাঙো। আর অপেক্ষা করা যাচ্ছেনা।
অর্ডার পেয়ে বাকি পুলিশ গুলো একসাথে ধাক্কা দিতে দিতে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আসে। ভেতরে চাপ চাপ অন্ধকার। ড্রইং রুমের ভারী পর্দার ফাঁক দিয়ে এক চিলতে আলো এসে পড়েছে ভিতরে। রজত এক ধাক্কায় খুলে ফেলে ভেজিয়ে রাখা বেডরুমের দরজা।পিছনে পিছনে যায় টুম্পাও। টর্চের তীব্র আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে ঘরটা।
ঘরে ঢুকে বিশ্রী আঁশটে গন্ধ টায় গা গুলিয়ে উঠলো টুম্পার। আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে সে।
অতর্কিত এসব ঘটনায় এতক্ষনে পিছনে ফিরে তাকায় হিয়া আর তনু। এতক্ষণ মন্ত্র পাঠ করে তাদের শরীরে শক্তি ফিরে এসেছে। আর টুম্পা দেখে, তাদের সামনে রক্ত মাখা মুখে অমিত সুন্দরী দুই তরুণী। গোলাপ যাদের সাথে গিয়েছিল সেদিন, তাদের থেকে এদের বয়স প্রায় দশ পনেরো বছর কম। মৃত দেহটা তখনও সেখানেই পড়ে ছিল। সেদিকে তাকিয়ে টুম্পা চিৎকার করে ওঠে আবার।
শয়তান। হারামজাদি। তোদের এত লোভ। চিরদিন বেঁচে থাকবার জন্য তোরা মানুষ টাকে খুন করলি?
অভিশপ্ত বইটা বন্ধ হতে শুরু করেছে। প্রাণপণে তনু চেষ্টা করতে থাকে বইটা খুলে রাখার। কিন্তু পারেনা। কমে আসতে থাকে মায়াময় আলোটা।
হিসহিস করে ওঠে হিয়ার গলা। আমাদের এত কষ্টের সাধনা তোরা নষ্ট করতে এসেছিস? চলে যা এখান থেকে। নাহলে শয়তানের কোপে পড়বি। কেউ বাঁচবি না।
টুম্পা আবার গর্জে ওঠে। মরতে হয় মরব। আগে তোদের শয়তানকে শেষ করবো, তারপর তোদের।
বলে হটাৎ ছুটে যায় ঘরের মাঝখানে। নিচে রাখা ছুরিটা তুলে নিলো।
না আ আ আ আ আ
চিৎকার করে টুম্পাকে আটকাতে চেষ্টা করে হিয়া আর তনু। ততক্ষণে টুম্পা ছুরিটা গেঁথে দিয়েছে বইটার উপরে আঁকা চোখের মধ্যে। চোখটা থেকে গলগল করে বেরোতে শুরু করেছে গাঢ় লাল রক্ত।
টুম্পা রজত আর ঘরে উপস্থিত পুলিশ ফোর্স দেখলো এক অদ্ভুত অতিপ্রাকৃত দৃশ্য। সুন্দরী তরুণী দুজন ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। তাদের সামনে এখন পক্ককেশ লোল চর্ম দুই বৃদ্ধা।
প্রচণ্ড রাগে টুম্পা এবার ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করে ওদের উপরে। রজত ধরে ফেলে ওকে। বলে,
টুম্পা, ছেড়ে দাও ওদের। তোমার যা করার তুমি করে দিয়েছো। বাকি কাজ পুলিশ করবে। খুনের দায়ে ফাঁসির সাজা পাবে ওরা। যদি ফাঁসি না ও হয়, জেলে বসে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করবে। এই বুড়ো শরীর নিয়ে আর কতদিন বা বাঁচবে ওরা।
রজতের ফোর্স অ্যারেস্ট করে হিয়া আর তনু কে। মৃত বৃহন্নলা কে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স আসে।
গোলাপের মুখটা মনে পড়ে যাচ্ছে টুম্পার। তার আদরের গোলাপের শেষ পরিণতি বুঝতে আর অসুবিধা হয় না। গোলাপ বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে টুম্পা।