অঙ্কট-বঙ্কট
স্বামীজী বলেছিলেন, আমি ঈশ্বর-টিশ্বর চাই না, আমি শান্তি চাই। কে ঈশ্বর, কোথায় ঈশ্বর, কত কোটি জপে তিনি ভ্রমধ্যে একটু ঝিলিক মারবেন, মনকে কোন্ শক্তিতে মূলাধার থেকে অনাহতে তুললে একটু প্রণব শোনা যাবে এই দুরন্ত, অশান্ত, ব্যস্ত পৃথিবীতে তা আমাদের জানা নেই! সংসার করব, কোর্টকাছারিতে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে বলব, ‘টাকা টাকা’ করে হেদিয়ে মরব, খবরের কাগজ পড়ে নেতাদের ভবিষ্যৎ ভেবে মরমে মরে যাব, বাজারে গিয়ে ইলিশ কিনতে না পারার ক্ষোভে ভাগ্যকে ধিক্কার দেব, আবার কম্বলের আসনে চোখ উলটে বসতে না বসতেই ঈশ্বর আমার ঘাড়ে চন্দনগন্ধী শ্বাস ফেলবেন, গিরিধারী কানের কাছে পিলুবারোয়াঁয় বাঁশী বাজাবেন, শ্রীরাধার নূপুর-নিক্কণে ইঁদুর, আরশোলা আর টিকটিকি-অধ্যুষিত আমার ঠাকুরঘর বৃন্দাবন হয়ে যাবে—এমনটা একমাত্র উন্মাদেই ভাবতে পারে।
তাহলে উপায়! খুব এগচ্ছি, খুব হচ্ছে ভেবে নিজেকে ঠকাব! আত্মসন্তোষে মাতোয়ারা হয়ে থাকব! ভাবব, সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ হয়ে গেছে! কামনা-বাসনা সব চটকে গেছে! বারুদ শুকিয়ে গেছে! পিতলের ঘটি সোনার হয়ে গেছে! ‘বেড়ালের ছানা’ হতে পেরেছি। আর বছর কয়েক পরেই চিদানন্দ সাগরে পরমহংস হয়ে ভাসতে থাকব! মাঝে মাঝে ‘প্যাক প্যাক’ করে পরম ব্রহ্মের জ্ঞান বিতরণ করব! মঠ হলো বলে, স্ট্যাচু বসল বলে, জীবনী লেখা হলো বলে! পকেট সাইজের ‘দাস স্পেক’ বেরোয় বুঝি! ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে, ঠেলাগাড়িতে আমার দাঁত বের করা ছবি বসিয়ে নেচে নেচে জন্মদিনের মিছিল চলছে!
“শ্যামা মা উড়াচ্ছে ঘুড়ি।… ঘুড়ি লক্ষের দুটা-একটা কাটে হেসে দাও মা হাত-চাপড়ি।” লক্ষ কেন, কোটি কোটিতে হয়তো একটি। এ যে সেই নক্স খেলা! জীবকোটির আমরা একটু একটু কাটিয়েছি, সবটা কাটালে জীবন জ্বলে যায়। ডেলি প্যাসেঞ্জারি থাকে না, অফিসে গিয়ে বড়কর্তার মোসাহেবি থাকে না বাজারে গিয়ে কানকো উলটে মাছ কেনা থাকে না, ফিক্সড ডিপোজিট থাকে না, বউ বগলে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া থাকে না। সব সর্বনাশ হয়ে যায়! সে যে ভয়ঙ্কর আতঙ্কের! স্বামীজীর মতো বিরাট আধারও সমাধির প্রথম অভিজ্ঞতায় হতচকিত হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন : “আমার হাত কোথায়, পা কোথায়!” যদি কোনদিন এই অভিজ্ঞতা ঠাকুরের কৃপায় আমার হয়ে যায়, তাহলে লাখ খানেক টাকা অবশ্যই খেসারত দিতে হবে। ‘ওঁয়া ওঁয়া’ করে অ্যাম্বুলেন্স ছুটবে। কি হয়েছে কত্তার! সেরিব্র্যাল অ্যাটাক। ফ্ল্যাট করে দাও ইন্টেনসিভ কেয়ারে। সমাধি আবার কি! সে তো সাহেবদের হয়। তখন কাঠের বাক্সে ভরে ছ-ফুট মাটির তলায়! For dust thou art, and unto dust thou shalt return, Amen.
আর যদি কুম্ভকের সিদ্ধাইয়ে সিলিং-এর দিকে ভেসে উঠি তাহলে পরিবার- পরিজন মহানন্দে বলবে : “যাক, নাক টেপাটেপি করে এতদিনে একটা জিনিস আয়ত্ত করলে বটে। এই নাও ঝাড়ন, পাখার ব্লেডগুলো পরিষ্কার করে নেমে এস।” সেই ঠাকুরের কথা—গুহা-ফেরত যোগী, কি শিখে এলে বাপু? –আমি নদীর ওপর দিয়ে হেঁটে এপার থেকে ওপারে চলে যেতে পারি। —সে তো একটা পয়সা ফেললে সবাই পারে। নৌকা আছে। তোমার এই জটা, দাড়ি, উকুন, উপোসে এক পয়সার বিদ্যে শিখে এলে!
কেউ যদি প্রেমানন্দে ধেই ধেই করে নাচতে থাকে, সবাই বলবে ‘পিল’ খেয়েছে। সাহেবদের আবিষ্কার—পিলের নাম ‘একস্ট্যাসি’, বিদেশে খুব চলছে। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ জানতেন, মানুষ চাঁদে যাবে। মঙ্গলে ‘পাথ ফাইন্ডার’ পাঠাবে। ইন্টারনেটে গোটা পৃথিবীকে গুটিয়ে আনবে। ‘ক্লোনিং’-এর সাহায্যে একটা মানুষের হাজারটা কপি তৈরি করে ফেলবে। হৃদয়ের পরামর্শে ঠাকুর মা ভবতারিণীর কাছে সিদ্ধাই চাইতে গিয়েছিলেন। মা দেখিয়ে দিলেন—সিদ্ধাই হলো বেশ্যার বিষ্ঠা। ঠাকুর বলতেন, মারণ-উচাটন, অষ্ট-সিদ্ধাই অন্ধকার পৃথিবীর তাক-লাগানো জিনিস। দুহাজারের পৃথিবীতে তুমি ভগবানের কাছে কি চাইবে? যে-পৃথিবীতে মানুষ রাতের বেলায় ক্রিকেট খেলছে!
ভগবানের কাছে অভাবী মানুষের একটাই চাইবার জিনিস আছে, সেটি হলো—টাকা। প্রথমে বলবে, বেশি চাই না মা, সামান্যেই সন্তুষ্ট। আমি কি তোমার সেই ছেলে মা! আমি সাত্ত্বিক। দুবেলা দুমুঠো, আর তোমার স্মরণ- মনন। সকালে তাড়াহুড়ো, বেশি পারব না মা, একশ আট। রাতে পুষিয়ে দেব। মহানিশায় মশারির মধ্যে বসব, তারপর হাজার, দেড় হাজার, দুহাজার—যতদূর যায়। বসে না পারি চিৎ হয়ে। যদি দেখ ঘুমিয়ে পড়েছি, সেটা সাধারণ ঘুম ভেবে বিমুখ হয়ো না মা। ওটা যোগনিদ্রা। আর নাকডাকার কথা বলছ, ওটা প্রণব, মণিপুর থেকে উঠে অনাহতে ধাক্কা মারছে। দেখ মা, ঠাকুর বলেছেন, গৃহদুর্গে থেকে তেড়ে সাধনভজন। এখন দুর্গেশ্বরীকে মাসে মাসে নৈবেদ্য না দিলে দুর্গের বাইরেই বসে থাকতে হবে। শাস্ত্রেই আছে—”তস্মিন্ তুষ্টে জগৎ তুষ্টম্” তবে আরো কিছু দাও মা। আমি নয়, ও বলছিল একটা ফ্ল্যাট কিনতে। নতুন কিছু আসবাব, একটা ফ্রিজ, ওয়াশিং মেসিন, আরেকটা একশ চ্যানেল কালার টিভি। আর এখন কিস্যু নয়। আবার পরে মেয়ের বিয়ের সময়!
তুমি বলবে, কেন দেব? ঠাকুর বলে গেছেন, তাঁর ভক্তের কোন অভাব থাকবে না। আর বলেছেন, এক পা এগোলে তিনি একশ পা এগিয়ে আসবেন। তার মানে আমি এই করেছি—আমি একবার জপ করলে তুমি একশ টাকা রোজগার বাড়াবে। আমি হাজার জপলে এক লাখ। তোমার ভক্ত তেলচিটে সংসারে দুখচেটে হয়ে থাকলে লোকে কি বলবে! তোমার ওপর, তোমার ধর্মের ওপর অবিশ্বাস এসে যাবে। লোকে কীর্তন না করে ডাকাতি করবে।
আমাকে দিচ্ছ মানে কাকে দিচ্ছ! যে অদ্বৈতজ্ঞান আঁচলে বেঁধে বসে আছে, যে নিজেকে বড়লোকের বাড়ির দাসী ভেবে সংসারে থাকতে শিখেছে—তাকে। সকালে বাজারে যাচ্ছি, কেউ প্রশ্ন করলে বলি—যাই ভাই, ওদের বাজারটা করে দিই। ব্যাঙ্কে যাওয়ার সময় বলি—যাই, ওদের টাকাটা জমা করে দিয়ে আসি। কখনো বলি না—আমার বাড়ি। তোমাদের বাড়ি, সাবধানে সব তালাটালা দিয়ে থেকো। কেউ সাহায্য চাইলে দিতে হয়, কারণ দান ধর্ম। কিন্তু দান করলে অহঙ্কার আসবেই। তাই সব টাকা টাইম ডিপোজিট স্কিমে। ওরা সব বন্ড কিনে রেখেছে।
আমার আমি-টাকে হত্যা করেছি। সব তুমি। তুমি তো প্রবাদটা জান মা, কুপুত্র যদি-বা হয় কুমাতা কখনো নয়। আর কি? পাঁচটা লোকের কাছে চাইব কেন, তোমার মতো মা থাকতে। ঠাকুর বলেছেন, গীতা পড়ে কি হবে ভুল সংস্কৃত উচ্চারণে? গীতা, গীতা বারে বারে বললেই তাগী তাগী—মানে ত্যাগী। আমি কি কম চালাক মা! যাকে বিবাহ করলাম, তার নাম গীতা। অনবরত ডাকতে ডাকতে আমি ত্যাগী! সব ত্যাগ করে তাকে দিয়ে দিয়েছি। সেই আমার ফার্স্ট নমিনি। তার কাছে মাধুকরী করে আমার সাত্ত্বিক জীবন চলে।
ঠাকুর জানতেন, মানুষ এইরকমই। আরো তঞ্চক হবে। সভ্যতা যত হৃদয়হীন হবে মানুষ ততই ধূর্ত হবে। যে-টাকাকে তিনি মৃত্তিকাজ্ঞানে গঙ্গায় বিসর্জন দিয়েছিলেন, সেই টাকাই হবে মানুষের আত্মা। তবু তিনি হতাশ হননি। মানুষের জন্যই অবতার অবতীর্ণ হন। সবরকমের মানুষ—খল, লোচ্চা, সাধু, শয়তান। তিনি আমাদের সেই মা, স্বাদ আর পরিপাকশক্তি অনুযায়ী ধর্মের মাছকে পরিবেশন করে গেছেন। যার যেমনটি ভাল লাগে, সহ্য হয় ঠিক সেইরকম ব্যবস্থা।
কে একজন ঠাকুরের কাছে সমাধি শিখতে এসেছিলেন, তাঁকে দূর করে দিলেন। একজন বললেন, বৈরাগ্যের ভীষণ বেগ এসেছে ঠাকুর, আমি এইখানেই থাকব। ঠাকুর খোঁজখবর নিলেন—কি করা হয়! পরিবার- পরিজনের খবর। যেই জানলেন, গৃহস্থ, তিন-চারটি ছেলেপুলে—সঙ্গে সঙ্গে বললেন, চালাকি পেয়েছ, বিয়ে করে নদের হাট বসিয়েছ, তোমার পরিবার- পরিজনকে কি ওপাড়ার মামা এসে খাওয়াবে?
তাহলে উপায়! সব তো তাড়িয়ে দিচ্ছেন। বাছা, বাছা কয়েকজনকে মাত্র রাখছেন। এটাই হলো কথা! গৃহীকে গৃহে রাখছেন। তাড়াহুড়োর প্রয়োজন নেই। গলায় গোটা গোটা রুদ্রাক্ষের মালা, পরিধানে সুচারু গেরুয়া, কপালে রক্তচন্দনের ফোঁটা তার মাঝখানে আবার একটা আলোচালের দানা ফিট করা; কিন্তু বগলে সংসার! “বেয়ান, তুমি অমন একহাত তুলে নাচছ কেন ভাই! এস না দু-হাত তুলে নাচি।” বেয়ান বলছে : “যে যেমন জানে বেয়ান।” আরেক বগলে যে চোরাই মাল। হাত তুললেই সুতোর বাণ্ডিল পড়ে যাবে।
ঠাকুর বিজয়কৃষ্ণকে বলছেন, বিজয়! যে-সাধুর বগলে পোঁটলা-পুঁটলি দেখবে, বুঝবে সে পেটকাওয়াস্তে সাধু। তার মনে ঈশ্বর নেই, আছে ভাণ্ডারার ধান্দা। অমুক বাবুনে বহুত খিলায়া। সাধুর কোন সঞ্চয় থাকবে না। বিহঙ্গমের মতো, অজগরের মতো।
“অজগর ন করে নকরি, পঞ্জি ন করে কাম্
দাস মলুককো এই বচন হ্যায়, সব্ কি দাতা রাম।।” (তুলসীদাস)
এই হলো সন্ন্যাসীর ধর্ম। এ তোমাদের নয়, সুরেন্দ্রের নয়, রামচন্দ্রের জন্য নয়, বলরাম, গিরিশ, শম্ভু মল্লিকের জন্য নয়। সেখানের নির্দেশ একটু ভিন্ন— যাকে ভগবান যথেষ্ট দিয়ে রেখেছেন, সে ‘ম’-এর সেবায় নয়—’মা’-এর সেবায় ব্যয় করুক। এইবার প্রশ্ন—মা কে? ঐ ঠাকুরঘরে যিনি বসে আছেন? ওটি প্রতীক মাত্র। ওর মধ্যে তোমাকে প্রবেশ করতে হবে। “দেবো ভূত্বা দেবং যজেৎ।” শিব আর শক্তি অভিন্ন। জীবকে শিবরূপে দেখ। হৃদয় বলেছিলেন : “মামা, তুমি একবার রাজি হও, আমরা আরেকটা কালীবাড়ি করি।” ঠাকুর হেসেছিলেন। মন্দির, মসজিদ, গির্জা থেকে ধর্মকে মুক্ত করে তিনি মানুষকে মানবধর্ম শেখাতে এসেছিলেন। হিউম্যান নয়, হিউম্যানিটি। শাস্ত্র, বই নয়, গ্রন্থ নয়—গ্রন্থী। বিবেকের জাগরণই ধর্ম। তুমি গৃহী, গৃহীই থাক। স্ত্রী গ্রহণ করেছ, ক্ষতি নেই। সন্তানাদি, একটি অথবা দুটি। অবিদ্যারূপিণী স্ত্রী যদি হয় তাকে বিদ্যারূপিণী কর। দেখনি, বিবাহের সময় এদেশের বরের হাতে থাকে জাঁতি, পশ্চিমের বরের হাতে ছুরি। বোকা বোকা বরটি দাঁড়িয়ে থাকে কনের পিছনে। শক্তিরূপা কন্যার সাহায্যে বর অবিদ্যা মায়ার বন্ধন ছেদন করবে। অবিদ্যা মায়া সংসারের পাঁকে ভড়ভড় করে ডুবিয়ে মারে, কালীদহের জল! বিদ্যামায়া ত্যাগ, বৈরাগ্য, সহ্য, সংযম, ভক্তি, অনুরাগ শেখায়। ঠাকুর মাকে প্রশ্ন করেছিলেন, এই যে দক্ষিণেশ্বরে এলে, তোমার উদ্দেশ্যটা কি? তুমি কি আমাকে সংসারপথে টেনে লয়ে যেতে এসেছ! জয়রামবাটীর সেই তরুণীর পরিষ্কার, কাটা কাটা উত্তর—তা কেন, আমি তোমার ইষ্টপথের সহায় হতে এসেছি। তাই তো তিনি সারদা—সরস্বতী। তিনি না থাকলে ঠাকুরের কী হতো! কে হতো শতপুত্রের মা, সঙ্ঘজননী? কে শাসন করত, পথ বলে দিত? ঠাকুর তাঁকে যেমন সংসার শিখিয়েছিলেন, সেইরকম তাঁর সমস্ত সাধনফলও তাঁকে অর্পণ করেছিলেন। ঠাকুর যেন বলছেন—আমার গৃহি-রূপটা তোমরা দেখ, অভ্যাস কর। রস আর বশ—দুটোই তো সাধন সাপেক্ষ। শোন, আমি সেই বহুরূপী। আমার যেমন নরেন, নিরঞ্জন, রাখালাদি ছিল, সেইরকম গিরিশ, সুরেন্দ্র, বলরাম, মহেন্দ্রনাথও ছিল। আমার অন্ত্যলীলায় গৃহী আর সন্ন্যাসীদের এক ঠাঁই করেছিলাম। পাছে তোমরা বল—আমার পথে কাঁটা ছিল না, শুধু গোলাপই ছড়ানো ছিল, কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় শুধু ঘুরেছি তল্পিবাহক লাটুকে নিয়ে, কেবল মজলিস করেছি, কেতাবি ধর্মই করেছি, তাই ব্যাধির ব্যাধি ক্যান্সার গলায় ধারণ করেছিলাম। পদ্মাসনে বসে মহাসমাধিতে যেতে পারতাম। যাইনি। কারণ, আমাকে বলতে হবে—রোগ জানুক আর দেহ জানুক। জীবের কষ্ট গ্রহণ করে নীলকণ্ঠ শিব হতে হবে, তা নাহলে তোমরা আমাকে শুধু সমীহ করবে, ভালবেসে অন্তরে গ্রহণ করবে না। তোমাদের যন্ত্রণার দিনে বলবে না—’এ আর কী, ঠাকুর এর চেয়ে কত সহ্য করেছেন!’ যন্ত্রণা আর সহ্য দুটোই আমি রেখে গেলাম। ঈশ্বর নয়, মন্দির নয়, গুরুবাদ নয়, তোমাদের জন্য আমার আর সারদার তিনটি নির্দেশ—চৈতন্য হও। বিচার আন আর সহ্য কর। যে সয় সে রয়, যে না সয় সে নাশ হয়।
সংসারীকে ঘিরে রাখবে সন্ন্যাসী। গৃহদুর্গে বসে, মনে, বনে, কোণে নিজেকে তৈরি করবে। ঘাতসহ করবে। মৃত্যু স্মরণ হবে। যায় দিন, প্রতিদিন। গিরিশের সেই কবিতাটি স্মরণ করবে
“একক বান্ধবহীন প্রবাসে নিবাস
কেহ আর নাহি আপনার
বার্ধক্যে অশক্ত দেহ—কৃপার প্রয়াস
হৃদে সদা আতঙ্ক সঞ্চার,
কাটে দিন নাহি রহে স্মৃতিমাত্ৰ কথা কহে
গোধূলি আলোক পিছে, সম্মুখে আঁধার
শূন্যপ্রাণ—কিছু নাহি আর।”
লাটু জানত আমার কৌশল। নক্স খেলার মতো এই সংসার, একটু একটু করে কাটাও। “আগে মানুষ ভাঙের নেশা করে, ভাঙ ছেড়ে গাঁজা ধরে, গাঁজা ছেড়ে চরস খায়, চরস ছেড়ে মদ খায়, শেষে আফিম ধরে। আফিমের নেশা ধরলে কি আর ভাঙের নেশায় মন মজে? তোমাদেরও ঐ। আগে সংসার তোমাদের নেশা ধরিয়েছে। নাম, যশ, টাকা, মেয়েমানুষ—এদের নেশা কাটিয়ে ওঠ, তবেই তো আফিমের মৌতাত পাবে। এসব নেশার পরে ব্রহ্মনেশা জাগে। উনি (পরমহংসদেব) বলতেন, মনের অঙ্কট-বঙ্কট থাকলে চলবে না।”
অঙ্কট-বঙ্কট কি? “ঐ তো মায়া। তোমরা সংসারের নেশায় মজবে আর সংসারকে দুষবে। সংসার ছেড়ে আসতে চাইবে না, বাকি সংসারে থেকেও লড়তে পারবে না। একে উনি বলতেন অঙ্কট-বঙ্কট।”