অগ্রদূত ক্রীড়া চক্র : ঘোষনাপত্র
আমরা আমাদের সমাজের এক দীর্ঘ ক্রান্তিকাল পাড়ি দিচ্ছি। আমরা পাড়ি দিচ্ছি আমাদের জীবনের এক সংকটকাল। বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিন প্রান্তে, বাদাবনের স্পর্শে আর জোয়ার ভাটার সান্নিধ্যে আমাদের বাসস্থান। অন্যান্য জায়গার চেয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বরাবরই অনুন্নত এখানে। সচ্ছল মানুষের সংখ্যাও নিতান্ত অল্প। ভাত কাপড়ের চিন্তাই এখন আমাদের প্রধান চিন্তা। আমাদের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা পাচ্ছে না। তাদের মন-মানসিকতা সুন্দর রাখার কোনো ব্যবস্থা আমরা করতে পারছি না।
আমাদের যে সাংস্কৃতিক ধারা পালা পার্বনে, জারী, সারী, পুঁথি, কবি গান, যাত্রা ও দেশজ খেলাধুলার মাধ্যমে এতোকাল সমাজের জানালা হয়ে ছিলো, এখন আর তার অস্তিত্ব নেই বল্লেই চলে। যা আছে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর, খারাপ রোগের মতো। যেমন যাত্রায় যে নাচ এখন দ্যাখানো হয় কিংবা আমাদের দেশের বায়োস্কোপওয়ালারা যে ছবি বানায় তা দ্যাখা আর জেনে শুনে বিষ খাওয়া সমান কথা। গানের নামে আমাদের রেডিও টেলিভিশনে যা বাজানো হয় তাতে সুস্থতার লেশমাত্র নেই। খেলাধুলার মান উন্নত তো নয়ই, বেশির ভাগ জায়গায় খেলাধুলার ব্যবস্থাই করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
যে সমাজে মানুষের মনের খোরাকের কোনো ব্যবস্থা নেই, সে সমাজ বদ্ধ ডোবার মতো বিষিয়ে উঠবে, তার পানি পচবে, গন্ধ ছড়াবে, ছড়াবে মারাত্মক সব অসুখ। পচন ধ’রে গেছে আমাদের সমাজে। মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকে, মানুষের পচন শুরু হয় চিন্তায়। আমাদের চিন্তায় ভাবনায় পচন যে কী ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে তা একটু নিজেদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আজ আমরা কেউই কারো মঙ্গল চাই না। ভাইয়ে ভাইয়ে, বাপে ছেলে, শরিকে শরিকে, গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এই দ্বন্দ্ব হানাহানি, সোজা কথায় কুকুরের কামড়া-কামড়ি।
সমাজের এই বিভেদ, রেষারেষি, এই বৈষম্য রোধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই সমাজের আমূল পরিবর্তন। কিন্তু সে কাজটি অত্যন্ত কঠিন এবং একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা সম্ভব।
আমাদের সাধ্য সীমিত। অধিকাংশই অসংগঠিত। আমাদের সচেতনতা এখনো তীব্র নয়, সঠিক নয়। আমরা চাই আমাদের সকলে সচেতন হয়ে উঠুক। যারা মাঠে লাঙলের কাজ করে, যারা ক্ষেত মজুর, দিন মজুর, যারা মাছ মারে, যারা শিক্ষক, যারা ছাত্র, যারা খেলোয়াড়, যারা গান গায়, যারা লেখক তাদের সকলের সচেতনতা সমান হয়ে উঠুক। আমরা চাই একটি সচেতন জনগোষ্ঠী, একটি মুক্ত সমাজ। আর এই লক্ষকে সামনে রেখে আমরা হাতে নিচ্ছি আমাদের ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মসূচি।
ক্রীড়া
ক্রীড়া ক্ষেত্রে দল গঠন, প্রশিক্ষনের মাধ্যমে খেলোয়াড় সৃষ্টি ছাড়াও একই সাথে মুক্ত ও অভ্যন্তরীন খেলাধুলার ব্যবস্থা। দেশের উন্নত দলগুলোকে আমন্ত্রনের মাধ্যমে স্থানীয় মাঠে তাদের ক্রীড়া-শৈলী প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা। মাসে কমপক্ষে দুবার দর্শনীর বিনিময়ে প্রদর্শনী খেলার আয়োজন করা
সমাজকল্যান
সামাজিক ক্ষেত্রে সর্বরকম জন-কল্যান-মূলক কাজের প্রতি সমর্থন ও সক্রিয় সহযোগিতা দান। এছাড়াও জন-সচেতনতা-মূলক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা। একটি সার্বজনীন পাঠাগার চালু করা। বয়স্ক শিক্ষা ও নারী শিক্ষার উদযোগ নেয়া। প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে সমাজে নারী পুরুষের শ্রমের অপচয় রোধ কোরে জাতীয় অর্থনীতিকে দৃঢ় করা।
সংস্কৃতি
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সবরকম কুরুচিপূর্ন ও ক্ষতিকর সংস্কৃতিকে প্রতিরোধ করা। সনাতন সাংস্কৃতিক বাহনগুলোর পুনর্জাগরন ঘটানো। সাহিত্য, সংগীত ও নাট্যানুষ্ঠানের আয়োজন এবং এসব বিষয়ে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা।
.
এই প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় রাজনীতির উর্ধে থাকবে। কোনো রকম আঞ্চলিক রাজনীতিকে এই প্রতিষ্ঠান প্রশ্রয় দেবে না। সমাজের সকল অংশকে সমান সচেতন কোরে তোলা ও সুন্দর মনের জন্ম দেয়ার পবিত্র বিশ্বাসে আমরা একত্রিত হয়েছি। একত্রিত মানুষ কখনোই পরাজিত হয় না। আমাদের সুন্দরের স্বপ্ন জয় লাভ করবে। আমাদের শত ফুল ফুটে উঠবে নিজস্ব রঙে ও ঘ্রানে।
আমাদের যাত্রাপথ দীর্ঘ ও সংকটময়। আমাদের অতীত গৌরবের, আমাদের বর্তমান অন্ধকারাচ্ছন্ন। সচেতন হতে পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ হবে সুন্দর ও স্বাধীন।