৮০
জীবনটা আর কখনো আগের মতো হবে না। যে ছন্দটা কেটে গেছে সেই কেটে যাওয়া ছন্দকে জোড়া লাগাতে লাগাতে গড়িয়ে যাবে দিন, মাস, বছর। জোড়া লাগা জায়গাটা দগদগে ঘায়ের মতো হয়ে ভেসে থাকবে, হয়তো ঘা শুকিয়ে যাবে একটা সময়, কিন্তু দাগ মুছবে না।
তবে একথা সত্য হতাশার পাশাপাশি একটা প্রচ্ছন্ন শান্তির ভাবও টের পাচ্ছে সে। সেই শান্তি নিজের বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাবার শান্তি। দেশে ফিরে যাবার শান্তি। কিন্তু যে বিষয়টা কাঁটার মতো হয়ে লেগে আছে মনে, তা হলো, বিয়ে ভেঙে যাবার মতো একটা দুঃসংবাদ বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে বাবা মায়ের জন্য। বুকটা কেমন খাঁ খাঁ করে উঠছে। সব কিছু অন্যরকম হতে পারতো আজ। যদি না আরশানের জীবনে ওই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি না ঘটতো। আজকে চলে যাবার আগ মুহূর্তে সকালের তাই সত্যিই চাচার উপর খুব রাগ হচ্ছে। লোকটাকে সে অন্ধভাবে শ্রদ্ধা করতো। মনে হয়েছিল চাচি যত খারাপই হোক না কেন চাচা মানুষটা একেবারে সফেদ মনের একজন মানুষ। কিন্তু কোনও সফেদ মনের মানুষের পক্ষে কি নিজের সন্তানের সাথে এত বড় প্রতারণা করা সম্ভব?
বাথটাবের সাবান ফেনা ওঠা গরম জলে ডুবে থেকে এমনই সব বিষাদ মাখা, কটু ঝাঁঝ ওয়ালা চিন্তার মাঝে অনবরত হারিয়ে যাচ্ছিল সে। চিন্তাগুলো মাছির মতো ভন ভন করে উড়ছিল মাথার কাছে, কানের কাছে। বুকটা ভার! বড্ড অশান্তি!
বাইরে নাবিলার গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো। সে ঘরে ঢোকা মাত্র উঁচু গলায় বলল, ‘শেহজাদী! আমি চলে এসেছি। তাড়াতাড়ি বের হ।’
সকাল তড়িঘড়ি করে গোসলটা শেষ করলো। বেরিয়ে দেখলো নাবিলা দুটো সুটকেসের ডালা খুলে বসে আছে মেঝেতে। শ্যাম্পু, সাবান, চকলেট এইসব হাবিজাবি জিনিসেই ঠেসে গেছে স্যুটকেস দুটো। প্রিন্সেস ড্রেসটা নিয়ে পড়তে হয়েছে ঝামেলায়। এই ফুলে ফেঁপে থাকা জামাটা কোনো মতেই জায়গা করে ঢোকাতে পারছিল না সে। না পেরে তাই নাবিলার স্মরণাপন্ন হতে হয়েছে।
নাবিলা সকালকে দেখে বলল, ‘তোর ফ্লাইট কয়টায় রে?’
সকাল তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুলে ঝাড়ন দিতে দিতে বলল, ‘সন্ধ্যা সাতটা। পাঁচটায় রিপোর্টিং। কখন বেরোলে ভালো হয় বাসা থেকে?’
—‘কোন এয়ারপোর্ট? ডালাস?’
—‘হুম ডালাস।’
—‘সাড়ে তিনটায় বেরিয়ে পড়াটাই বেটার হবে। তুই একা যাচ্ছিস। গিয়ে ধীরে সুস্থে চেক ইন টেক ইন করলি। একটু সময় নিয়ে যাওয়াই ভালো।’
—‘হুম’
—‘তোর পড়াশোনার কী হল রে? কী ঠিক করলি?’
—‘দোস্ত ইউএসএ-তে আর আসব না। পড়ব অবশ্যই। কিন্তু এখানে নয়। ইউরোপে ট্রাই করব।’
চাচি দরজায় এসে বললেন, ‘মেয়েরা তোমরা নাশতা করে যাও। গোছগাছ পরে করো।’
সকাল চাচিকে দেখে একটু জরুরি গলায় বলল, ‘চাচি একটু শুনবেন?’
চাচি উদগ্রীব হয়ে বললেন, ‘বল শুনছি।’
সকাল ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখা হ্যান্ডব্যাগটা হাতে তুলে নিতে নিতে বলল, ‘একটা জিনিস ফেরত দেবার ছিল।’
—‘কী জিনিস?’
সকাল উত্তর না দিয়ে হ্যান্ডব্যাগের চেইন খুলে হাতড়ে হাতড়ে একটা টিস্যু মোড়ানো ছোট পুটলি বের করলো। চাচির দিকে এগিয়ে দিয়ে স্তিমিত গলায় বলল, ‘খালার দেয়া আংটিটা!’
চাচি নিষ্প্রভ ভাবে একবার ‘ও আচ্ছা!” বলে হাত বাড়িয়ে আংটিটা নিলেন সকালের হাত থেকে।
মোড়ানো টিস্যু খুলে হাত দিয়ে বের করলেন আংটিটা। তারপর বিষ গলায় বললেন, ‘বড় ইচ্ছে ছিল তোমাকে বাড়ির বউ করবো।’
সকাল হাসলো, দুর্বল হাসি। বলল, ‘চাচি আপনার কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা কোনো দিন ভুলতে পারবো না।’ এটুকু বলে সে নাবিলার দিকে একবার ঘুরে তাকালো। নাবিলা কাপড় গোছানোতে ব্যস্ত। সকাল একটু চাপা গলায় বলল, ‘আর চাচি আপনি আমার চাইতেও যোগ্য একজনকে ছেলের বউ হিসেবে পেতে যাচ্ছেন। নাবিলা খুব ভালো মেয়ে।’
চাচির চোখের তারায় অশ্রুবিন্দু চিকচিক করে উঠল। তিনি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে বললেন, ‘তা আমার ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হবে। কিন্তু আমার পাগলাটে বড় ছেলেটা যে তোমাকে ছাড়া আরো বেশি পাগল হয়ে যাবে। তার মতি-গতি ঠিক হবে কবে?’
—‘যা হবার হয়ে গেছে চাচি। ওসব নিয়ে এখন আর অত ভেবে কাজ নেই।’
চাচির বুক থেকে একটি হতাশাজনিত দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে আসলো, ‘দোষটা আমাদেরই। জোয়ান বয়সে আমি রাগ আর হিংসার বশবর্তী হয়ে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন সেইসব ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে। সে যাই হোক। বাদ দাও এসব কথা। তোমরা খেতে এসো।’
আরশান বাড়িতে নেই তা সকাল টের পেলো অনেকক্ষণ বাদে। টের পেলো তখন, যখন সে শেষবারের মতো আরশানের সাথে দেখা করার জন্য নিচে নামলো। ঘর ফাঁকা। কেউ নেই। সকাল ছুটে গেলো গ্যারেজে। গ্যারেজে গাড়ি নেই। তাজ্জব বনে গেল সে। তার সাথে শেষ বারের মতো দেখা না করে এভাবে চলে যেতে পারলো মানুষটা? কোথায় গেছে?
একটা অনভিপ্রেত কষ্টে তার হৃৎপিণ্ড ছিঁড়ে যেতে লাগলো। এতো কিছুর পরেও ওই অস্থিরমতি, হৃদয়হীন পুরুষটাকে যুক্তিহীন ভাবে ভালোবেসে যাবার জন্য নিজেকে নিজে ধিক্কার দিতে থাকলো সে। নিজের প্রতি এক তীব্র ঘেন্নায় গা গুলিয়ে উঠল। গ্যারেজের সামনের মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো সে। তার আজকের কান্নায় কষ্টের চেয়ে ক্রোধের প্রকাশ বেশি। এক পাগলাটে, অন্ধ ক্রোধে ফেটে যাচ্ছে তার ভেতরটা।
৮১
গত রাতটা রেস্ট এরিয়ার কাটিয়েছে আরশান। ঘুমিয়েছে গাড়ির ভেতরে। খায়নি বলতে গেলে কিছুই। একটু আগে ঘুমভাঙার পর পটবেলির স্যান্ডউইচ খেয়ে ব্রেকফাস্ট করেছে। এখন আবার চলেছে হাইওয়ে ধরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে। সে জানে না কোথায় যাচ্ছে। শুধু এটা জানে যে চলে যেতে হবে বহু দূর। তার চাকরিটা ভালো। তার উচিত চাকরি বাঁচিয়ে ভার্জিনিয়াতেই একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থেকে যাওয়া। এ দেশে বয়স হবার পরে ছেলে-মেয়েরা স্বাভাবিক ভাবেই বাবা মায়ের সাথে এক ছাদের নিচে থাকে না। সেই নিয়ম অনুযায়ী অনেক আগেই তার আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পিতৃদেবের মুখের দিকে চেয়ে এতো কাল সে বেজমেন্টের তিন রুমের বাক্সটায় বন্দি হয়ে ছিল। এই সুযোগে তাই মুভ আউট করে ফেলাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হতো। হয়তো শেষমেশ সেটাই করবে। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে তার মাথায় কোনো বৈষয়িক চিন্তা খেলছে না। অফিস থেকে বিরতিহীন ভাবে ফোন আসছে অনেকক্ষণ ধরে। সে ধরেনি। বিরক্ত হয়ে একটু আগে ফোনটাই বন্ধ করে দিয়েছে
মস্তিষ্কের শিরা উপশিরাগুলো কেমন অবশ হয়ে আছে। কিছু ভাবতে পারছে না সে। মনের ভেতর থেকে কেউ একজন বিদ্রুপের হাসি হেসে বারে বারে বলছে, চলে যাও, চলে যাও! এখানে তোমার কেউ নেই। এতদিন যা ছিল, সব ভুল ছিল। তুমি তোমার এই ভুল জীবনটা ছেড়ে বহু দূরে চলে যাও। তোমার যাবার সময় এসেছে। আরশান তাই চলেই যাচ্ছে। চুম্বকের মতো কোন এক অজানা অচিন পুর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে টানছে তাকে। মোহাবিষ্টের মতো ছুটে চলেছে সে। কোথায় চলেছে জানে না।
একটা মাজদা সিক্স গাড়ি হঠাৎ করেই ওভারটেক করে তার সামনে এসে হাজির হলো। আজকাল মেজাজটা সারাক্ষণ কেমন মারমুখো হয়ে থাকে। একটু কিছু হলেই ভস করে জ্বলে ওঠে দিয়াশলাইয়ের কাঠির মতো। গাড়িটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সামনে এসে পড়তেই সে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে ওই গাড়ির ড্রাইভারকে ইংরেজিতে একটা গালি দিয়ে বসলো। তারপর বেশ একটু রুক্ষ ভাবেই মুহূর্তের মাঝে ওভার টেক করলো গাড়িটাকে। ব্যাক মিররে দেখলো গাড়ি চালাচ্ছে বছর বিশেকের অল্প বয়সী এক ব্লন্ড ছোকরা। কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্লন্ড ছেলেটা দ্বিতীয়বারের মতো ওভারটেক করলো তাকে এবং চলতে চলতে খোলা জানালা দিয়ে হাত বের করে মধ্যাঙ্গুলি প্রদর্শন করল। রাগে রি রি করে উঠল সারা গা। কিছু চিন্তা না করেই পাশের লেনে গাড়ি তুলে দিল সে মাজদা গাড়িটাকে পুনরায় পেছনে ফেলার উদ্দ্যেশ্যে। সেই মুহূর্তে বিপরীত দিক থেকে প্রায় ষাট মাইল বেগে ছুটে আসছিল একটা বড়সড় ট্রাক। আরশানের গাড়ির স্পিড ছিল সত্তর। পাশের লেনে তখন চলছে পরপর দুটি গাড়ি। অতএব আরশান তাৎক্ষণিকভাবে ব্রেক কষে গাড়ি থামাতে বাধ্য হলো। ট্রাকটা তখন মাত্র দশ গজ দূরে। দম আটকে বসে রইল সে। হাত পা অসাড়। আশেপাশে আর কোনো আওয়াজ নেই শুধু তার কানের কাছে একটানা চিঁ চিঁ শব্দ। এক, দুই, তিন চোখ বন্ধ করে ফেললো সে।
কয়েক সেকেন্ড গড়ালো। চোখ খুলল। ঘোলা চোখে দেখলো ট্রাক মাত্র কয়েক হাত দূরে থেমে আছে। অনেকক্ষণ ধরে আটকে রাখা নিশ্বাসটা ধীরে ধীরে ছাড়লো সে। ট্রাক চালক উদ্ধত ভাবে এগিয়ে আসল তার দিকে। এসেই জানালার কাঁচে আঘাত করা শুরু করলো। রাগান্বিতভাবে হাত পা নেড়ে অনেক কিছু বলতে লাগলো। জানালার কাঁচতোলা বলে আরশান তার বলা একটি বাক্যও শুনতে পেলো না। প্রস্তরীভূত হয়ে চেয়ে রইল জানালার বাইরে। তার দৃষ্টি কোথাও নিবদ্ধ নেই। সে কিছুই দেখছে না। একটা অদ্ভুত আশ্চর্য বোধ তার সমগ্র চেতনাকে লুপ্ত করে দিচ্ছিল সেই মুহূর্তে।
চোখ বন্ধ করার আগে তার মাথায় শুধু একটি মাত্র চিন্তা খেলা করে গেছে বিদ্যুতের মতো। চিন্তাটা ছিল এই যে, আজকে সে মরে গেলে আর কোনোদিন তার এই চোখদুটি সকাল নামের মেয়েটিকে দেখতে পাবে না। নিজের কথা নয়, পরিবারের কথা নয়, মৃত্যুর খুব কাছাকাছি গিয়ে বুদ্ধিভ্রংশ হয়ে সে শুধুমাত্র ওই একটি মানুষের কথাই ভেবেছে। তার মানসপটে একটি মুখই ভেসে উঠেছে, জ্বলে উঠেছে আগুনের শিখার মতো। শুধুমাত্র ওই মুখটা আর একবার দেখতে পাবার জন্য সেই মুহূর্তে জীবনের প্রতি তার জেগে উঠেছিল এক অদম্য, অপ্রতিরোধ্য তৃষ্ণা!
প্রাণপণে চাইছিল সে বেঁচে যেতে।
বেঁচেও গেলো দিব্যি! হ্যাঁ, এইতো বেঁচে আছে সে অক্ষত অবস্থায়। নিশ্বাস উঠছে, নামছে। কিন্তু সকাল যে যাচ্ছে চলে! যদি সকাল চলেই যায়, তাহলে তার এই বেঁচে থাকার আর কোনো অর্থ আছে কি? কেন বেঁচে থাকবে আরশান? সকালকে ছাড়া?
৮২
দুপুরে খুব বেশি কিছু খেতে পারলো না সকাল। চাচি অনেক রান্না করেছিলেন। দুই তিন পদের মাছ, আলুর ভর্তা, বেগুন ভর্তা, সব তার পছন্দের খাবার। কিন্তু আফসোস! গলা দিয়ে দুই তিন লোকমা পোলাও ছাড়া আর কিছুই নামলো না। অতটুকু পেটে পড়ার সাথে সাথেই কেমন গা গুলিয়ে উঠল। বমি বমি একটা ভাব হতে থাকলো। চাচির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে পড়ল সে।
এখন তার একটু একটু নার্ভাস লাগছে। এরকম মন মানসিকতা নিয়ে কী করে টানা তেইশ ঘণ্টার জার্নি করবে কে জানে! ওয়াশিংটন থেকে যাত্রা শুরু করে প্লেন দীর্ঘ তেরো ঘণ্টা উড়বে আকাশ পথে। আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে অবতরণ করবে ইস্তানবুলে। সেখানে তিন ঘণ্টার ট্রানজিট। তারপর ইস্তানবুল থেকে সাত ঘণ্টার পথ অতিক্রম করে পৌঁছুবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। এতটা সময় একলা একলা করবে কী সকাল? ভাবতে গিয়েই গায়ে জ্বর আসছে তার। স্বাভাবিক সময় হলে যাত্রাটা বেশ উপভোগ করা যেত। একদম একলা ট্র্যাভেল করার আলাদা একটা মজা আছে। কিন্তু আজ সে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। কোনো ভাবেই নিজের ওপর ভরসা করে উঠতে পারছে না।
খাবার টেবিল থেকে উঠে দোতলায় শোবার ঘরে ফেরার সময় ফাহাদের সাথে দেখা হয়ে গেল করিডোরে। সকালকে সি অফ করার উদ্দেশ্যে সে অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। তার পরনে এখনো অফিসের কাপড়, ফুল হাতা নেভিব্লু শার্ট,কালো প্যান্ট, গলায় ঝুলানো টাই। সকালকে দেখামাত্র সে একটা সুন্দর হাসি হাসলো। বলল, ‘হেই সানশাইন!’
সকাল মিষ্টি হেসে বলল, ‘কী খবর?’
—‘আমি সত্যি তোমাকে আমাদের ফ্যামিলি মেম্বার হিসেবে পেতে চেয়েছিলাম।’
—‘অনেক পেয়েছি তোমাদের কাছ থেকে। সারাজীবন মনে থাকবে আমার। আর ফাহাদ শোনো। যদি তোমাকে আমি নিজের অজান্তে কোনো দুঃখ দিয়ে থাকি, কষ্ট দিয়ে থাকি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও ভাই!’
—‘ধুর এসব ফর্মালিটির কোনো মানে হয় না। একটু কষ্ট পেয়েছিলাম শুরুতে, যখন প্রথম জানতে পেরেছিলাম যে তুমি আমাকে ডাম্প করে আমার ভাইকে চুজ করেছ। ট্র থিং ইজ, তোমার প্রেমে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু পারিনি। আর নাবিলাকে পেয়ে জানতে পারলাম যে প্রেমটা আসলে অত প্রিপারেশন নিয়ে হয় না, এমনিই হয়ে যায়।
সকাল হাসলো, ‘তোমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেলো। এ বছরই চলে আসো বাংলাদেশে।’
—‘এ বছর মনে হয় না হবে। হয়তো আগামী বছরের শুরুর দিকে হলেও হতে পারে।’
টিলি উঠে আসছিল সিঁড়ি বেয়ে। সকাল আর ফাহাদকে দেখতে পেয়ে সে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে আসলো। সকালকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘আমার বলিউড ড্যান্স এর কী হবে সকাল আপু?’
সকাল খুব হাসলো, ‘কী হবে আবার, যেমন প্ল্যান করেছো তেমনই হবে। আমরা ফাহাদ আর নাবিলার বিয়েতে নাচবো। তোমার ফ্রেন্ডদেরকে নিয়ে এসো বাংলাদেশে।’
—‘সেটা কবে হবে তার কোনো ঠিক নেই তো! আমি তো এই ডিসেম্বরের জন্যই সব প্ল্যান করে রেখেছিলাম।’
সকাল আর কী বলবে। বাচ্চা মেয়েটার নিষ্পাপ আক্ষেপ শুনে তার মনটা আরো বেশি রকমের উদাস হয়ে গেলো। ভালোবাসারও একটা অন্যরকম দাবি আছে। এ বাড়ির মানুষগুলো অল্প কদিনের মধ্যেই তাকে যে অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়েছে, সেই ভালোবাসার চাপে এখন তার কেমন দমবন্ধ একটা ভাব হচ্ছে।
কিছুক্ষণের মাঝেই সে তৈরি হয়ে নিল। একটা হালকা ফিরোজা রঙের ফতুয়া পরলো, সাথে কালো জিন্স। তার উপরে চাপালো লাল রঙের উইন্ড ব্রেকার। পাসপোর্ট, টিকেট সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে গুছিয়ে ভরে নিল হ্যান্ড ব্যাগে।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সকালের স্যুটকেস দুটো চাচা নিজের হাতে করে বয়ে নিয়ে আসলেন বাইরে। রাখলেন প্যাটিওর সামনে। সকাল তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করলো। চাচা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। কথা বলতে পারছিলেন না। সকালের মাথায় আলতো করে একটা হাত রেখে শুধু বলেছিলেন, ‘দোয়া করি, খুব সুখী হও মা!
বুকের ভেতর বড্ড দাপাদাপি। কেবলই মনে হচ্ছিল মানুষটা আসবে। চলে যাবার আগে অন্তত আর একটিবার দেখতে পাবে সে তার জীবনের সব চাইতে প্রিয় মুখখানা। আরেকবার অন্তত নাকে এসে ধাক্কা খাবে আতরের খুশবু। বাড়ি থেকে বের হবার ঠিক আগ মুহূর্তটি পর্যন্ত সকাল অপেক্ষা করলো। সে এলো না।
চারপাশ কেমন শূন্য! পায়ের তলা থেকে সরে যেতে থাকলো মাটি। দুঃখ, কষ্ট, বিরহ, রাগ, অপমান কোনো অনুভূতিকেই সে আর আলাদা ভাবে অনুভব করতে পারলো না। শুধু তার সমস্তটা দিয়ে অনুভব করতে পারলো একটি অকাট্য সত্যকে। সে সত্যটা হলো, মানুষটা তাকে ভালোবাসেনি!
বাইরে তখন শেষ দুপুরের মিষ্টি রোদে ঝলমলিয়ে হাসছে বাগানের লাল, সাদা, আর হলুদ রঙের জিনিয়া ফুল। ডগমগ করে ফুটে আছে সাদা ডেইজি। আকাশ ঝকঝকে নীল। বাতাস ফুরফুরে।
বাড়ির সামনে ফাহাদের গাড়ি আছে দাঁড়িয়ে। ফাহাদ ব্যাক ডালা খুলে সকালের স্যুটকেস দুটো তুললো।
সকাল গাড়িতে উঠবার আগে একবার চাচিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। গলা দিয়ে আর কোনো শব্দ বেরোলো না তার। উঠে বসলো গাড়ির পেছনে। তার পাশে বসলো নাবিলা আর চাচি। সামনে ড্রাইভিং সিটে ফাহাদ আর তার পাশে চাচা। টিলির যাবার ইচ্ছে থাকলেও গাড়িতে জায়গা হবেনা বলে যেতে পারলো না।
তারপর ফাহাদের ভোক্স ওয়াগন ইয়স গাড়ি সকালকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলো হরিণডাঙ্গা ছেড়ে, অক্টোবর ছেড়ে, ভার্জিনিয়া ছেড়ে ওয়াশিংটন ডালাস বিমান বন্দরের দিকে। সকাল ঝাপসা চোখে শেষবারের মতো দেখে নিচ্ছিল চারপাশটা। টিলি দাঁড়িয়ে আছে তখনও প্যাটিও তে। হাত নাড়ছে সকালের দিকে তাকিয়ে।
আরশান এলো না। এলোই না আর। তাজ্জব ব্যাপার! এত নিষ্ঠুরও মানুষ হয় নাকি? সকাল ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল।
গাড়িটা ড্রাইভওয়ে ধরে এগিয়ে গিয়ে নেইবারহুডের রাস্তায় উঠছিল। ঠিক সেই সময় একটা ভারি কাকতালীয় ঘটনা ঘটলো। একটা কালো রঙের টয়োটা কনভার্টিবল গাড়ি আকস্মিক ওদের সামনে এসে তেরছাভাবে দাড়ালো পথ রোধ করে। ফাহাদ ব্রেক কষল। সবাই চুপ। শুধু কয়েকটা হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক ছাড়া কিছুক্ষণ আর কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না।
কনভার্টিবলের ড্রাইভার তেরছা ভাবে গাড়িটি দাঁড় করিয়ে রেখেই মুহূর্তের মধ্যে বেরিয়ে আসলো। তার গায়ে একটা পাতলা ছাই রঙের টি শার্ট আর ট্রাউজার। মুখখানা টকটকে লাল। চোখে ধিক ধিক করে জ্বলছে আগুন। চুল অবিন্যস্ত। সকাল স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইল সামনে। তার নাকে এসে ধাক্কা খাচ্ছে আতরের খুশবু। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। সে স্বপ্ন দেখছে না তো? আরশান গাড়ির জানালার কাঁচে টোকা দিয়ে ফাহাদকে কিছু একটা বলল। ফাহাদ এতো বেশি অবাক হয়ে গিয়েছিল যে গ্লাস নামানোর কথা বেমালুম ভুলে বসে ছিল। তড়িঘড়ি করে সে জানালার গ্লাস নামালো। সাথে দরজার তালাও খুলে দিল।
আরশান নিজেই বাইরে থেকে গাড়ির দরজাটা খুললো শক্ত হাতে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সকালের হাত ধরে টেনে বের করে নিয়ে আসলো গাড়ি থেকে।
বিস্ময়ের তোড়ে কোনো কথা বলতে পারলো না সকাল। আরশান কারো দিকে না তাকিয়ে সকালের হাত ধরে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে যেতে লাগল বাড়ির দিকে। রহমান সাহেব একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন, ‘যাক অবশেষে মতি ফিরলো ছেলের।’
ফাহাদ অপ্রস্তুত গলায় বলল, ‘আমরা এখন কী করবো?’
নাবিলা আর চাচি শব্দ করে হেসে উঠল। চাচি হাসতে হাসতেই বললেন, ‘কী আর করবে, গাড়ি রাস্তার ধারে পার্ক করে অপেক্ষা করতে থাকো।’
সকালের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। হাতে খুব লাগছে। ছেলেটা এমন লোহার মতো শক্ত করে হাত চেপে ধরে টানছে যে মনে হচ্ছে হাতটা কাঁধ থেকে খুলে চলে আসবে।
আরশান হন হন করে হেঁটে ব্যাক ইয়ার্ডে চলে আসলো। সকাল দাঁড়িয়ে পড়ল আর না পেরে। আরশানের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেবার বৃথা চেষ্টা করতে করতে হাঁপ ধরা গলায় বলল, ‘হচ্ছে কী এসব? সমস্যাটা কী আপনার?’
আরশান ছাড়লো সকালের হাত। দাড়ালো মুখোমুখি। তার সারা মুখে একটা খ্যাপাটে ভাব। দৃষ্টি অস্থির। সকালের দুচোখে তখন টলমল করছে জল। ঠোঁট দুটো কাঁপছে। এলোমেলো পড়ছে নিশ্বাস। তার ভেতরে হচ্ছে এক প্রবল আলোড়ন। শেষ দুপুরের সোনাবরণ রোদ আটকে আছে তার চুলে আর গালে। আরশান ওই রোদে ডোবা আদুরে মুখটার দিকে কিছুক্ষণ বিহ্বল হয়ে চেয়ে রইল। তারপর কোনো কথা না বলে হঠাৎ নিবিড় এক চুমু খেলো ওই নিখুঁত, পুরন্ত দুটো ঠোঁটে। সকাল ওই আচমকা স্পর্শে আচ্ছন্ন হয়ে গেল, বিভ্রান্ত হয়ে গেল, কিন্তু পর মুহূর্তেই সে সজোরে আরশানের বুকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দিল। ধাক্কা খেয়ে আরশান পিছিয়ে আসল কয়েক পা। আবার এগিয়ে গেল। নেশাগ্রন্থের মতো একরোখা ভাবে সকালের ঠোঁটে বসিয়ে দিল আরও একটি চুমু। সকাল শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। কেঁদে ফেলল। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল, ‘আপনি পেয়েছেন কী? কেন এসব করছেন?’
—‘ইচ্ছে করছে তাই।’ দুর্বল গলায় বলল আরশান।
—‘আপনি কি পাগল?’
—‘পাগল ছিলাম না। আপনি পাগল বানিয়ে ছেড়েছেন!
—‘যতসব ফালতু কথা!’
এবার আরশান আলতো ভাবে সকালের গালে একটা হাত রেখে ভারি ব্যাকুল গলায় বলল, ‘কেন যাচ্ছেন শেহজাদী? থেকে যান!’
সকাল দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখে বলল, ‘কেন থেকে যাবো? থেকে যাবার কোনো কারণ আছে কি?’
আরশান কেমন বিবশ গলায় বলল, ‘কারণ আছে।’
—‘কী কারণ?’
—‘কারণ আপনাকে আমার চাই। আর…’
সকালের চোখ বেয়ে তখন নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ছিল জলের ধারা। আরশান হাত দিয়ে ভারি যত্নের সাথে সেই চোখের জল মুছে দিতে লাগল। সকাল কাঁপা গলায় বলল,
—‘আর?’
—‘আর আপনাকে না দেখলে আমার ভালো লাগে না!’
—‘আর?’
—‘আর আপনাকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারিনা।’
—‘আর?’
—‘আর হরিণডাঙ্গার আপনাকে প্রয়োজন।’
—‘আর?’
আরশান আচ্ছন্ন ভাবে বলল, ‘আর আপনাকে আমি বিয়ে করে ফেলেছি মনে মনে। অনেক আগে। এভাবে আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন না।’
—‘আর কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ আছে আপনার কাছে?’
—‘আছে।’
—‘বলুন।’
—‘আমার মনে হচ্ছে আপনাকে ছাড়া আমার পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব!’
—‘এমনটা কেন মনে হচ্ছে হঠাৎ?’
আরশান এবার সকালের দিকে খানিকটা সময় একদৃষ্টে চেয়ে থেকে গভীর নিশ্বাস ছাড়লো। তার মনোহর চোখদুটি একটু কেমন ভেজা ভেজা হয়ে উঠল সেই মুহূর্তে। সে চোখ নামিয়ে নিল নিচে। খুব ধীরে ধীরে বলল,
—‘মনে হচ্ছে কারণ, আমি আপনাকে ভালোবাসার চাইতেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি!’
বাতাস থমকে গেল। কষ্টের মতো এক অলৌকিক সুখের অত্যাচারে এলোমেলো হতে থাকল ভেতরটা। সকাল অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে বলে উঠল,
—‘কী বললেন?’
—‘শুনলেন তো।’
—‘আবার বলুন!’ কান্নার ঢোঁক গিলে বলল সকাল।
আরশান সকালের একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিল। তারপর ওর চোখে চেয়ে গভীর গলায় বলল, ‘আমি আপনাকে ভালোবাসি শেহজাদী!’
দমকা বাতাসের মতো এক ঝাপটা ভালো লাগা আচমকা সকালের দম বন্ধ করে দিল। সে কোনও রকমে বলল,
—‘এতো দিন লাগলো এটা বুঝতে?’
—‘একটু একটু বুঝতে পারছিলাম বেশ কিছু দিন ধরেই। কিন্তু সম্পূর্ণটা বুঝতে দেরি হয়ে গেল। আমার সব কিছুই কেবল দেরি হয়ে যায়। সে কথা থাক এখন। আপনি থেকে যান। যেয়েন না।’
সকাল হাসে, ‘তাই কি হয়? যেতেই হবে। আপনিও আসুন।’
—‘আমি আসবো? কোথায়?’
—‘কোথায় আবার? বাংলাদেশে!’
আরশান হাসি হাসি মুখে কী যেন ভাবে। তারপর বলে, ‘আচ্ছা দেখি।’
—‘না দেখি টেখি না। খুব তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আমি আপনার সাথে রিকশা করে ঘুরতে চাই। রাস্তার ধারে বসে ফুচকা খেতে চাই।’
—‘রিকশা? আমি রিকশায় চড়বো না। রিকশা খুবই ইনহিউম্যান একটা বাহন। একটা মানুষ কেন অত কষ্ট করে ম্যানুয়ালি আরেকটা মানুষকে টেনে নিয়ে যাবে?’
—‘রিকশায় আপনাকে চড়তেই হবে। বাংলাদেশে যাবেন আর রিকশায় উঠবেন না, তা হয় নাকি?
শুনে আরশান হাসে। হাসে সকাল। চারপাশটা আস্তে আস্তে সুন্দর থেকে সুন্দরতর হয়ে যায়। ঝুম ঝুমিয়ে হেসে ওঠে অক্টোবর। শেষ দুপুরের সোনা ঝরা রোদ্দুরে তিরতির করে ছড়িয়ে যেতে থাকে রাশি রাশি ভালোলাগা। উদ্ভ্রান্ত বাতাসে গাছের গা থেকে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়তে থাকে লালচে রঙের অজস্র শুকনো পাতা। বনের ভেতর থেকে ভেসে আসে কার্ডিনালের গানের সুর। এক গাছের ডাল থেকে অন্য গাছের ডালে ছুটোছুটি করে বেড়ায় দুই তিনটা অবাধ্য দুষ্টু কাঠবেড়ালি।
আরশানের যেন হঠাৎ মনে পড়ে যায় কিছু একটা।
—‘ও আচ্ছা, আপনাকে একটা জিনিস দেবার ছিল।’
বলে সে পকেট থেকে ছোট্ট একটা লাল রঙের অর্নামেন্ট বক্স বের করল। ঢাকনা খুলে বের করে নিল একটি সোনার আংটি। এরপর সকালের আঙ্গুলে যত্ন করে পরিয়ে দিল আংটিটা।
নাকউঁচু, হামবড়া হাসিটা হেসে বলল, ‘আপনি আমার, চিহ্ন থাকলো!
সকাল অবাক গলায় বলে, ‘এটা কী?’
—‘এটা আমার মায়ের আংটি। মা চেয়েছিলেন এই আংটিটা যেন তার ছেলের বউয়ের হাতে পরানো হয়।’
শুনে সকালের মনে একটা কেমন পবিত্র অনুভূতি হলো। সে খানিকক্ষণ বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইল নিজের হাতে পরা আংটিটার দিকে। বলল, ‘কী সুন্দর আংটিটা! নিজেকে আমার খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে!
এটুকু বলে একটু থেমে আবার বলল, ‘এখন যাই। নইলে প্লেন মিস করব।’
—‘ভালো থাকবেন শেহজাদী! যাত্রা শুভ হোক।’
—‘আপনিও ভালো থাকবেন শাহজাদা!’
শাহজাদা ডাকটা শুনে আরশান খুব হাসলো। সকাল আর কিছু না বলে সরে আসলো জায়গাটা থেকে। কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার পেছন ফিরে তাকালো। পড়ল চোখে চোখ।
ওই সুন্দর চোখের পাগলটাকে ছেড়ে যেতে তো মনে চাইছে না! কী করবে সে?
সেকেন্ড না গড়াতেই দৌড়ে ছুটে এসে পড়ল সে আরশানের বুকে। আরশান শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরল। বুকে জমে থাকা এ কদিনের কষ্ট, ক্ষোভ, হতাশা সব উধাও হয়ে গেল নিমেষে। স্নিগ্ধতায় মাখামাখি হয়ে গেল শরীর আর মন।
সকাল বলল, ‘দেখা হবে আমাদের দেশে!’
—‘দেখা হবে বাংলাদেশে!’ আরশান বলল ক্ষীণ গলায়।
উতলা বাতাসে তখনো গাছের ডাল থেকে বৃষ্টির মতো ঝরছিল শুকনো পাতার দল।
—সমাপ্ত—