ভোরবেলা মেকু ভরপেটে দুধ খেয়ে, বাথরুম সেরে শুকনো পরিষ্কার কাপড় পরে ফিটফাট হয়ে নিল। মতি বদি আর জরিনার অবস্থা অবশ্যি এত ভালো হল না। তিন জন সারা রাত ঘুমাতে পারে নি চেহারায় তাই একটা ঝড়ো কাকের ভাব চলে এসেছে। জরিনার চুল নোংরা পাটের দড়ির মতো হয়ে গেছে। না ঘুমিয়ে চোখ গভীর গর্তে ঢুকে গেছে, চোখের নিচে কালি, চোখ টকটকে লাল, মনে হচ্ছে চোখের পাতিগুলি শিরীষ কাগজ দিয়ে তৈরি, প্রত্যেক বার চোখের পাতি ফেললেই চোখের ভেতর কড় কড় করে উঠে।
গত রাত্রে ভয় পেয়ে ছোটাছুটি করার সম্য নানাভাবে আছাড় খেয়ে পড়েছে, তখন বুঝতে পারে নি কিন্তু এখন টের পাচ্ছে যে জরিনা অনেক খারাপভাবে ব্যথা পেয়েছে। ঠিক কপালের উপরে একটা জায়গা ঢিবির মতো ফুলে আছে। বাম কান দিয়ে মনে হয় ভালো করে শুনতে পাচ্ছে না, মাঝে মাঝে ভোঁ ভোঁ করে বোলতার পাখা ঝাপটানোর মতো একটা শব্দ হয়। ডান হাতটা ভালো করে নাড়াতে পারছে না, কনুইটা লাল হয়ে ফুলে ওঠেছে। বাম পা’টা একটু অকেজো হয়ে গেছে, হাঁটার সময় পা’টা ভিতরের দিকে চলে এসে এবং কনকন করে কোথায় জানি ব্যথা করে ওঠে।
বদির মচকে ওঠা পা’টা এখন ফুলে উঠেছে, সেই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। গরকাল সিঁড়িতে আছাড় খেয়ে তার যে দাঁতটা ভেঙে গিয়েছিল সেটা এখন প্রচণ্ড ব্যথায় কন কন করছে, পুরো মুখটাই ফুলে উঠেছে। সার্টের পকেটে আগুন লেগে বুকের ছাল চামড়ার যে অংশটা পুড়ে গিয়েছিল সেখানে এখন দগদগে ঘা, শুধু বুক নয় শরীরে চিঞ্চিনে ব্যথা। সারা রাত ঘুমাতে পারে নি বলে গা গুলিয়ে বমি বমি ভাব, মনে হচ্ছে হড় হড় করে বমি করে দেবে।
মতির অবস্থা আরো খারাপ, কপালের কাছে আগেই ফুলে উঠে একটা চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছিল, তার উপর নাকটা ভেঙে গিয়ে চেহারায় কেমন যেন হাস্যকর একটা ভাব চলে এসেছে। ডান হাতটা মোটামুটি অকেজো হয়ে আছে – মনে হয় সেটা সকেটের ভেতর থেকে যে কোনো মুহূর্তে খুলে আসবে, কেমন জানি ঢল ঢল করছে। সারা রাত না ঘুমিয়ে চোখের নিচে কালি, সেটাকে পরিপূর্ণ করার জন্যে মুখের অর্ধেক অংশ কালশিটেতে ঢেকে আছে। হঠাৎ করে দেখলে কেমন জানি আঁতকে উঠতে হয়।
তিন জন এক জন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে ভয়ে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। নিচে নাস্তা দেওয়ার জন্যে খবর দেওয়া হয়েছিল, নাস্তা খেয়েই তারা রওনা দেবে।
কিছুক্ষণের মাঝেই এক জন নাস্তা দিয়ে গেল। সবারই খুদে লেগেছে কিন্তু সারা রাত না ঘুমিয়ে খাওয়ায় রুচি নেই। যেটুকুই রুচি ছিল মুখের নানা জায়গায় প্রচণ্ড ব্যথার কারণে কেউ ভালো করে কিছু খেতে পারল না। মেকুর হাতে ঘুমের ওষুধ সে চোখের কোনা দিয়ে দেখছিল, চা খাবার সময় সেগুলো দিয়ে দেবার চেষ্টা করতে হবে, সুযোগ না পেলে কী হবে সেটাই হচ্ছে কথা।
নাস্তা শেষ করে তিন জন চা খেতে শুরু করেছে, মেকু তখন একটু অস্থির হয়ে পড়ল। কাছাকাছি না গিয়ে তো সে চেষ্টাও করতে পারবে না। কাছে যাওয়ার একটিই উপায়, সেটা হচ্ছে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করা – কাজেই মেকু হঠাৎ সারা শরীর বাঁকা করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে আরম্ভ করল। জরিনা বলল, “কেউ একজন বাচ্চাটাকে কোলে নাও।”
বদি বলল, “আমি পারব না। এই বাচ্চাকে দেখলেই আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়।”
মতি বলল, “দুই মাসের ছোট একটা বাচ্চার ওপরে মানুষ আবার রাগ করে কেমন করে?”
বদি বলল, “এই বাচ্চার জন্যে তোমার যদি এত দরদ তা হলে তুমি কোলে নাও না কেন?”
মতি বিরক্ত হয়ে মেকুর কাছে এগিয়ে গেল এবং তার ব্যথা পাওয়া হাতে খুব সাবধানে মেকুকে কোলে নিল, মেকু সাথে সাথে কান্না থামিয়ে ফেলে। মতি বলল, “দেখেছ? ছোট বাচ্চাদের এক ধরনের সাইকোলজি থাকে, একটুখানি আদর করলেই তারা খুশি হয়ে উঠে।”
বদু মুখ ভেংচে বলল, “ভালো। এই ছোট বাচ্চাকে তুমি যদি এত ভালো বুঝতে পার তা হলে তুমিই রাখ, আমি এই ফিচকে বদমাইশের ধারে কাছে নেই।”
মতি হতাশ হওয়ার চান করে বলল, “বদি, তুমি যতক্ষণ ছোট শিশুকে ভালবাসতে পারবে না ততক্ষণ তুমি পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারবে না।”
বদি ফোঁস ক্রেও একটা নিশ্বাস ফেলেল বলল, “ সেটাই যদি সত্যি হয় তা হলে আমি পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতেও চাই না। বনমানুষ হয়েই থেকে যাবো।”
মতি এক হাতে মেকুকে কোলে ধরে রেখে অন্য হাতে চায়ের কাপটা তুলে নিল, সাবধানে এক চুমুক খেয়ে মুখ বিকৃত করে বলল, “এইটা কি চা নাকি ইঁদুর মারার বিষ।”
জরিনা বলল, “জোর করে খেয়ে নাও, সারা রাত ঘুমাও নি কাজে দেবে।”
মেকু চোখের কোনা দিয়ে চায়ের কাপটা লক্ষ করল, একেবারে তার হাতের নাগালে চলে এসেছে, একটু সময় পেলেই সে তার হাতে ধরে রাখা পাঁচটা ট্যাবলেট চায়ের কাপে ছেড়ে দিতে পারে। মেকু তক্কে তক্কে রইল এবং মতি একটু অন্য দিকে তাকাতেই মেকু তার হাতের মুঠোয় ধরে রাখা ট্যাবলেটগুলি মতির চায়ের কাপে ছেড়ে দিল, কেউ টের পেল না।
মতি আবার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “চা’টা কী বিস্বাদ দেখেছ? শুধু যে বিষের মতো কড়া তাই না কেমন ওষুধ ওষুধ গন্ধ।”
বদি বলল, “জরিনা ঠিকই বলেছে, জোরে করে খেয়ে নাও। ফ্রেশ লাগবে।”
মতি জোরে করে চায়ের কাপ শেষ করে ফেলল। মেকু একটু কৌতূহল নিয়ে মতির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে – এই ওষুধের কাজ শুরু হতে কতক্ষণ লাগবে কে জানে!
কিছুক্ষণের মাঝেই মেকুকে নিয়ে তিনজনের দলটা বের হয়ে গেল, তাদেরকে দেখে আর যাই হোক দুর্ধর্ষ কোনো অপরাধীর দল মনে হচ্ছিল না – প্রত্যেকেই কোনো-না-কোনোভাবে ঘায়েল হয়ে আছে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কিংবা ন্যাংচাতে ন্যাংচাতে কিংবা কোঁকাতে কোঁকাতে যাচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বদির, তার সার্টে বুকের কাছাকাছি অর্ধেক পুড়ে গেছে সেই পোশাকে তাকে একটা কাক তাড়ুয়ার মতো দেখাতে থাকে। বদি মুখ কালো করে মাথা নেড়ে বলল, “আমি তো এই পোশাকে বের হতে পারি না।”
জরিনা বলল, “তা হলে কোন পোশাকে বের হবে?”
বদি মাথা চুলকে বলল, “ একটা সার্ট কিনতে হবে।”
“কোথা থেকে কিনবে? আশেপাশে কোনো সার্টের দোকান নেই।”
বদি মুখ ভারী করে বলল, “ এই সার্ট পরে বের হওয়ার থেকে খালি গায়ে বের হওয়া ভালো।”
বদির কথাটি কিছুক্ষণের মাঝেই সত্যি প্রমাণিত হল। নিচে হোটেলের ম্যানেজার বদির দিকে তাকিয়ে হা হা করে হেসে উঠল। বলল, “আরে ভাই আপনার হৃদয়ের আগুন দেখি বড় গরম। সার্ট পর্যন্ত পুড়ে গেছে।”
বদি অনেক কষ্ট করে মেজাজ ঠাণ্ডা রাখল। হোটেলের বিল মিটিয়ে বাইরে বের হবার পর রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একটা ফাজিল ছেলে বলল, “মিয়া ভাইয়ের বুকের মাঝে কী আগ্নেয়গিরি?”
রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একটা টোকাই হি হি করে হাসতে হাসতে বলল, “স্যার কী বুক দিয়ে পেট্রল বোমা মারেন?”
রিকশা দিয়ে যেতে যেতে দুটি কমবয়সী মেয়ে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বদিকে দেখে হাসতে লাগল, কী বলছে সেটা সৌভাগ্যক্রমে বদি শুনতে পেল না।
এর মাঝে বদি পুরোপুরি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে – কাজেই যখন ঠিক তার সামনে একটা গাড়ি ব্রেক কষে থেমে গেল এবং ড্রাইভারের সিটে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ বদির দিকে তাকিয়ে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগল বদি এর সহ্য করতে পারল না, মচকে যাওয়া পায়ে ন্যাংচাতে ন্যাংচাতে গাড়ির কাছে গিয়ে দরজা খুলে মানুষটার কলার ধরে টেনে গাড়ি থেকে বের করে ফেলল। জরিনা ভয় পাওয়া গলায় বলল, “আরে বদি, তুমি কী করছ?”
“এই মানুষটাকে মজা দেখাচ্ছি – কত বড় সাহস, আমাকে দেখে হাসে!”
“এইটা কী মজা দেখানোর সময়?”
মতি বলল, “খারাপ কী? আমরা এই গাড়িটাই নিয়ে নিই।”
কেউ কিছু বলার আগে মতি গাড়ির পিছনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেল। তার হঠাৎ ভয়ানক ঘুম পেতে শুরু করেছে।
জরিনা বলল, “এই গাড়িটা?”
“হ্যাঁ।” মতি ঢুলু ঢুলু চোখে বলল, “খামোখা গাড়ি ভাড়া করে পয়সা নষ্ট করে কী হবে? উঠ সবাই।”
জরিনা একবার অবাক হয়ে বদির দিকে আরেকবার মতির দিকে তাকাল। বদিও ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে, মতি কী চাইছে বুঝতে তার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল। গাড়ির মালিক হঠাৎ করে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চিৎকার শুরু করে দিল, “ফাজলেমি পেয়েছেন? এইটা রং তামাশার জায়গা? নামেন আমার গাড়ি থেকে।”
মতি বলল, “বদি গাড়িতে ওঠ। চালাও।”
বদি বলল, “দাঁড়াও।” তারপর সে পকেট থেকে তার রিভলবার বের করে মানুষটার মাথায় ধরে বলল, “চোপ শালা। একটা কথা বললে খুলি ফুটো করে দেব।”
মানুষটা হঠাৎ করে একেবারে ঠাণ্ডা মেরে গেল।
বদি বলল, “সার্ট খোল।”
মানুষটা তোতলাতে তোতলাতে বলল, “কী-কী-কী-খুলব?”
“সার্ট।”
মানুষটা সার্ট খুলতে শুরু করে। বদি ধমক দিয়ে বলল, “সাবধানে খুলিস। ইস্তিরি যেন নষ্ট না হয়।”
কাজেই কিছুক্ষণের মাঝে দেখা গেল বদি ইস্ত্রি কড়া সার্ট পরে একটা টয়োটা টার্সেল গাড়ি এয়ারপোর্ট রোড ধরে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গাড়ির পিছনের সিটে জরিনা মেকুকে কোলে নিয়ে বসেছে। জরিনার পাশে মতি, সে গাড়ির সিটে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।
গাড়ি বাংলা-মোটরের কাছাকাছি এসে বামে ঘুরে গেল। বদি বলল, “আমাদের হাতে অনেক সময়।”
জরিনা বলল, “হ্যাঁ। খামোখা ঘুরাঘুরি না করে কোথাও বসে পুরো ব্যাপারটা একবার ঝালাই করে নিলে হয়।”
বদি বলল, “এইখানে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। ফাস্ট ক্লাস পরটা এর খাশির কলিজা বানায়।”
“এখনো তোমার খিদে আছে?”
“টেনশান হলেই আমার খিদে পায়।” বলে বদি একটা বড় রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়ে বলল, “চল,নামি।”
বদি গাড়ি থেকে নেমে মতির দিকে তাকিয়ে বলল, “আরে! মতি দেখি ঘুমিয়ে গেছে! এরকম সময় মানুষ ঘুমায় কেমন করে?”
জরিনা মুখ বাঁকা করে হেসে বলল, “টেনশান হলে তোমার যেরকম খুদে পায় মতিরও মনে হয় সেরকম ঘুম পায়!”
বদি গাড়ির ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে বলল, “মতি। এই মতি ওঠো।”
মতি অনেক কষ্ট করে চোখ খুলে আমতা আমতা করে কিছু একটা বলে আবার পাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেল। জরিনা অবাক হয়ে বলল, “আরে! এ দেখি কাদার মতো ঘুমিয়ে আছে!”
বদি মতিকে জোরে ধাক্কা দিতেই সে এবারে চোখ খুলে তাকাল, বলল, “কী হয়েছে?”
“কিছু হয় নাই। ঘুম থেকে উঠো।”
“কেন?”
“কেন মানে? এখন কী ঘুমানোর সময়?”
মতি ঢুলু ঢুলু চোখে বলল, “আমি একটু ঘুমিয়ে নিই তোমরা যাও।”
বদি এবারে রেগে উঠে মতিকে ধরে প্রায় টেনে বের করে ফেলল, “ফাজলেমি পেয়েছ? আমরাও তো সারা রাত ঘুমাই নি – আমরা কি এত ঢং করছি?”
মতি কোন উত্তর দিল না, বদিকে জড়িয়ে ধরে অনেকটা ঈদের কোলাকুলির মতো ভঙ্গি করে আবার ঘুমিয়ে গেল, শুধু যে ঘুমিয়ে গেল তাই নয়, বদি স্পষ্ট শুনতে পেল মতি নাক ডাকতে শুরু করেছে। একজন মানুষ যে এভাবে নাক ডেকে ঘুমাতে পারে বদি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করত না।
বদি ঘুমন্ত মতিকে টেনে হিঁচড়ে কোনো মতে রেস্টুরেন্টের মাঝে এনে ঢোকালো। আলাদা একটা কেবিনের মতো জায়গায় মতিকে বসাতেই মতি টেবিলে মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেল। জরিনা এর বদি দুজনেই অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে মতির দিকে তাকিয়ে থাকে, ঘুম নিয়ে কেউ যে এত বাড়াবাড়ি করতে পারে সেটা তারা একেবারেই বিশ্বাস করতে পারে না।
একজন বয় এসে জানতে চাইল তারা কী খাবে, অর্ডার দিয়ে বদি জরিনার দিকে তাকিয়ে বলল, “মতি এটা কী শুরু করেছে বল দেখি?”
“আমি বুঝতে পারছি না। মতি তো এরকম মানুষ না।”
“হ্যাঁ। আমি বেশ ঘুমাই বলে সব সময় আমাকে বকাবকি করে। এখন নিজেই কলাগাছের মতো ঘুমাচ্ছে।”
“জোর করে ঘুম থেকে তুলে বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুইয়ে এনে কড়া লিকারের দুই কাপ চা খাওয়াও।”
বদি তখন মতিকে অনেক কষ্টে ধাক্কাধাক্কি করে জাগিয়ে তুলল। বলল, “কী হল মতি? তুমি এখন ঘুমাচ্ছ কেন?”
মতি কোনো মতে চোখ খোলা রেখে বলল, “বুঝতে পারছি না। ঘুমে চোখ ভেঙে যাচ্ছে।”
“বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দাও।”
“ঠিক আছে” বলে মতি আবার ঘুমে কাদা হয়ে টেবিলে মাথা রাখতে যাচ্ছিল বদি ধাক্কা দিয়ে তুলে ফেলল। তারপর টেনে সোজা করে বাথরুমে ঠেলে নিতে থাকে। বাথরুমের ভিতরে ঠেলে দিয়ে বদি খুব চিন্তিত মুখে ফিরে এল।
রেস্টুরেন্টের কেবিনের ভিতর জরিনার কোলে মেকুকে নিয়ে চিন্তিত মুখে বসে আছে। মুক্তিপণ নেবার সময় তিন জনেরই দরকার – মতি যদি এভাবে ঘুমাতে থাকে তা হলে কীভাবে কী হবে সে বুঝতে পারছে না। বদি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল জরিনা বাধা দিয়ে বলল, “একটা জিনিস লক্ষ্য করেছ?”
“কী জিনিস?”
জরিনা চোখের কোনা দিয়ে দেখিয়ে বলল, “রেস্টুরেন্টের মানুষগুলি আমাদের দিকে এভাবে তাকাচ্ছে কেন?”
বদি নিজের মুখে হাত বুলিয়ে বলল, “এমনভাবে ঘায়েল হয়েছি, চোখ মুখ ফুলে আছে, জামা কাপড়ের ঠিক নাই সেই জন্যে।”
“উঁহু। সবাই খবরের কাগজের দিকে তাকাচ্ছে এর আমাদের দিকে তাকাচ্ছে।”
বদি চমকে উঠল, “তাই নাকি?”
“হ্যাঁ। বদি, তুমি যাও দেখি, একটা খবরের কাগজ কিনে আন।”
বদি হেঁটে হেঁটে খবরের কাগজ কিনতে গেল কিন্তু ফিরে এল দৌড়াতে দৌড়াতে। জরিনা অবাক হয়ে বলল, “কী হয়েছে?”
বদি খবরের কাগজটা জারিনার সামনে রেখে বলল, “এই দেখ।”
জরিনা দেখল খবরের কাগজের প্রথম পাতায় নিচের অংশে ডান দিকে তাদের তিন জনের ছবি, উপরে বড় বড় করে হেডিং “শহরে দুর্ধর্ষ শিশু অপহরণকারী!”
জরিনা কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারল না,খানিকক্ষণ মুখ হাঁ করে থেকে বলল, “আমাদের ছবি কোথায় পেয়েছে?”
“ফাইল থেকে। মনে নাই, প্রত্যেকবার এরেস্ট করলে একটা ছবি তুলে?”
“কী লিখেছে?”
বদি চাপা গলায় বলল, “পড়ি নাই। সময় কই পড়ার, এখনি পালাতে হবে। তাড়াতাড়ি।”
জরিনা মেকুকে কোলে তুলে নিয়ে ছুটতে থাকে, পিছনে পিছনে খবরের কাগজ হাতে বদি। মাঝপথে রেস্টুরেন্ট বয়ের সাথে দেখা হল, পরটা আবনং খাসির কলিজা নিয়ে আসছে। সে অবাক হয়ে বলল, “স্যার আপনার খাবার!”
বদি ছুটতে ছুটতে বলল, “তুমি খেয়ে নাও। আমাদের সময় নাই।”
গাড়ির কাছাকাছি গিয়ে বদির মনে পড়ল মতিকে বাথরুমে রেখে এসেছে, তখন সে আবার ছুটল মতিকে আনতে। রেস্টুরেন্টের মানুষেরা সবাই ভুরু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে রইল এবং তার মাঝে বদি বাথরুমে গিয়ে দেখল মতি বেসিনে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। মতিকে টেনে সোজা করে বদি তাকে জাগানোর চেষ্টা করল, কাঁধ ঝাঁকুনি দিয়ে দুই গালে বার কয়েক শক্ত চড় মারার পর মতি কোনোমতে চোখ খুলে জড়ানো গলায় বলল, “কী হল বদি, আমাকে মারো কেন?”
“সর্বনাশ হয়েছে!”
কি জিনিস সর্বনাশ হয়েছে সেটা জানতে মতি খুব একটা উৎসাহ দেখাল না, বদির ঘাড়ে মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করল, বদি তখন চুলের ঝুঁটি ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে তাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করল। মতি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “আমি কী করেছি ভাই, আমাকে ব্যথা দেও কেন?”
“ব্যথা দিচ্ছি না, জাগানোর চেষ্টা করছি। তোমার কী হয়েছে?”
“কিছু হয় নি।”
“তুমি জান পত্রিকায় আমাদের ছবি চাপা হয়েছে?”
মতি বলল, “বাহ, কি মজা!” তারপর মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বদির ঘাড়ে মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
বদি আর কোনো উপায় না দেখে মতিকে ধরে প্রায় টেনে হেঁচড়ে নিতে থাকে। রেস্টুরেন্টের বেশ কিছু লোকজন বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, কয়েক জনের হাতে পত্রিকা। বদি কারো চোখের দিকে না তাকিয়ে মতিকে টানতে টানতে প্রায় দৌড়িয়ে গিয়ে গাড়িতে ঢুকল এবং গাড়ি স্টার্ট করে সাথে সাথে বের হয়ে গিয়ে বলল, “ওহ! কী বাঁচা বেঁচে গেছি।”
জরিনাও বুক থেকে একটা নিশ্বাস বের করে দিয়ে বলল, “একেবারে কানের কাছে দিয়ে গুলি গেছে।”
বদি বলল, “পত্রিকায় কী লিখেছে পড় দেখি।”
জরিনা বলল, “গাড়ি চালাতে চালাতে আমি পড়তে পারি না, আমার মাথা ঘোরায়।”
বদি বিরক্ত হয়ে বলল, “আহ! ঢং করো না। কী লিখেছে পড়।”
জরিনা তখন পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করে। তারা খুব অবাক হয়ে আবিষ্কার করল তাদের গোপন শলাপরামর্শের একটি অডিও ক্যাসেট বিশ্লেষণ করে পুলিশ নাকি তাদের সম্পর্কে সকল গোপন তথ্য যোগাড় করেছে। বদি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “অসম্ভব! আমাদের গোপন শলা পরামর্শের অডিও ক্যাসেট পুলিশের কাছে যেতেই পারে না।”
“কিন্তু নিশ্চয়ই গিয়েছে তা না হলে আমাদের তিন জনের কথা জানল কেমন করে?”
“কিন্তু এই কিডন্যাপের ব্যাপারটা কী আমরা তিন জন ছাড়া আর কেউ জানে?”
“না।”
“তা হলে কী তুমি বলতে চাও আমাদের তিন জনের মাঝে একজন ঘিড়িংগাবাজি করেছে?”
জরিনা কোনো কথা না বলে তীক্ষ্ণ চোখে একবার বদির দিকে আরেকবার মতির দিকে তাকাল। তারপর একটা নিশ্বাস ফেলেল বলল, “যাই হোক, এখন আর পেছানোর কোনো রাস্তা নেই। কেউ গিড়িংগাবাজি করলে করেছে। যেভাবে পুরোটা প্ল্যান করেছি, এখন সেইভাবে এগুতে হবে।”
“মতিকে নিয়ে কী করব?”
“আরেকটু ঘুমাতে দাও তারপর নিশ্চয়ই ওঠে যাবে।”
“যদি না উঠে?”
“না উঠবে কেন? ঘুম থেকে তুলে দিলেই তো উঠবে।”
মেকু এরকম সময় তার মাড়ি বের করে হেসে মনে মনে বলল, “না গো সোনার চাঁদ এই মক্কেল আজ কিংবা আগামী কাল এই ঘুম থেকে উঠবে না! পরশু উঠলেও উঠতে পারে তবে কোনো গ্যারান্টি নাই।”
বদি পরবর্তী এক ঘণ্টা গাড়িতে ঘুরে বেড়াল, তার কোথাও থামতে সাহস হয় না, যেখানেই থামে সেখানেই মনে হয় কেউ একজন খবরের কাগজ হাতে তাদের দিকে সরু চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ঢাকা শহরের লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে তাদের কোনো লুকানোর জায়গা নেই – ব্যাপারটা এখনো তাদের বিশ্বাস হয় না।
শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা মতো বদি মীরপুর রোডে একটা শপিং সেন্টারের সামনে গাড়ি থামালো। এখানে মেকুকে কোলে নিয়ে জরিনা নেমে গেল।বদি চাপা গলায় বলল, “মোবাইলটা ঠিক আছে তো?”
জরিনা মাথা নাড়ল, বলল, “আছে।”
“আমার টেলিফোন পেলেই বাচ্চাটারে ছেড়ে দেবে।”
“ঠিক আছে। বদি এদিক সেদিক তাকিয়ে নিচু গলায় বলল, “রিভলবারটা আছে তো?”
জরিনা ব্যাগ খুলে দেখে বলল, “আছে।”
“ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি।”
“সাবধানে কাজ করো। ভয়ের কিছু নাই।” জরিনা মেকুর পিছনে একটা থাবা দিয়ে বলল, “এই ট্রাম্প কার্ড আমাদের কাছে, যতক্ষণ এই চিড়িয়া আমাদের হাতে আছে কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না।”
বদি মাথা নাড়ল, “কেউ কিছু করতে পারবে না।”
“যাও দেরি করো না।”
“যাচ্ছি।”
“শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখটা ঢেকে রাখবে, কেউ যেন চেহারা দেখতে না পারে।”
“হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ।” জরিনা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল, শুধু চোখ গুলি দেখা যাচ্ছে, এখন কেউ চেহারা দেখতে পারবে না।
“আমি গেলাম।”
“যাও।”
বদি জোর করে হাসার চেষ্টা করে গাড়ি স্টার্ট দিল, মুক্তিপণের টাকাটা তাদের কাছে দেওয়ার কথা নিউ মার্কেটে। সকাল বেলা এখনো নিশ্চয়ই সেখানে ভিড় শুরু হয় নি। ঠিকমতো কাজটা উদ্ধার করতে পারলে হয়।
গাড়িটা বাইরে পার্ক করে বদি মতিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তলার চেষ্টা করল, চুলের ঝুঁটি ধরে কয়েকবার ঝাঁকুনি দেওয়ার পড় মতি চোখ খুলে তাকাল, জড়িয়ে জড়িয়ে বলল, “কী হয়েছে বাবা? আমাকে মার কেন?”
“নিউ মার্কেট এসে গেছি।” বদি চাপা গলায় বলল, “এখন উঠ।”
“আমি তো উঠেই আছি।”
“ড্রাইভিং সিটে বস।” বদি চাপা গলায় বলল, “আমি যখন মুক্তিপণ নিয়ে আসব, তখন তুমি ড্রাইভ করবে।”
মতি আধো আধো চোখ খুলে বলল, “ঠিক আছে।”
বদি তাকে ঠেলে গাড়ি থেকে বের করে ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে দিল। মতি স্টিয়ারিঙে মাথা রেখে আমার ঘুমিয়ে পড়ল। বদি বিরক্ত হয়ে বলল, “এখন ঘুমালে হবে না, জেগে থাকতে হবে।” মতি চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে বলল, “আমি তো জেগেই আছি।”
“ঠিক আছে। জেগেই থাক।”
বদি গাড়ি থেকে নামল। এক পকেটে রিভলবার অন্য পকেটে মোবাইল টেলিফোন। এই অপারেশনে দুটোই দরকার হবে। বদি লম্বা লম্বা পা ফেলে নিউমার্কেটের ভিতরে ঢুকল, কিছুক্ষণের মাঝেই বছর খানেক নিশ্চিন্তে থাকার মতো টাকা এসে যাবে। ঠিক মতো পুরো ব্যাপারটা করতে পারবে তো? বদির বুকের ভিতর ধুক ধুক করতে থাকে। সে হেঁটে হেঁটে পশ্ছিম পাশে বইয়ের দোকানগুলির দিকে যেতে থাকে, টাকার ঝোলা নিয়ে সেখানেই আসার কথা।
জরিনা কোলে ধরে রাখা মেকুর দিকে তাকাল, বাচ্চাটা বেশ নির্লিপ্তভাবে শুয়ে আছে। ছোট বাচ্চা বলে রক্ষা, কোথায় কার কাছে আছে কিছু বুঝতে পারছে না। তাই কান্নাকাটি করছে না। মাঝে মাঝে অবশ্যি কোনো কারণ ছাড়াই বিকট চিৎকার করে ওঠে – সেটাই যন্ত্রণা। ছোট বাচ্চা বলে সেটা কখন করে বসবে জরিনার কোনো ধারণা নেই, সেটা একটা সমস্যা। আর কিছুক্ষণ এভাবে শান্ত হয়ে থাকলেই অবশ্যি কাজ উদ্ধার হয়ে যাবে।
জরিনা শপিং সেন্টারের ভিতরে ঢুকল। পাশাপাশি কয়েকটা শাড়ির দোকান, তার পাশে একটা গয়নার দোকান। শাড়ি গয়নায় জরিনার বেশি উৎসাহ নেই কিন্তু দেখতে ভালোই লাগে। বিশেষ করে সোনার গয়না। সব গয়না ডাকাতি করে নিয়ে নেবে এরকম একটা কল্পনা করে তার মুখে মাঝে মাঝে পানি এসে যায়। জরিনা গয়নার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে শোকেসে সাজিয়ে রাখা ভারী ভারী গয়নাগুলি দেখতে লাগল, এগুলি ডাকাতি করে নিতে পারলে কত টাকায় বিক্রি করা যাবে আন্দাজ করার চেষ্টা করল।
গয়নার দোকানের সামনে থেকে সরে যেতেই জরিনা দেখল পাহাড়ের মতো একটা পুলিশ হেলতে হেলতে হেঁটে যাচ্ছে। পুলিশ দেখেই জরিনা একটু শিটিয়ে যায়, সে দাঁড়িয়ে গেল যেন পুলিশটা হেঁটে চলে যেতে পারে। কিন্তু ঠিক তখন খুব বিচিত্র একটা ব্যপার ঘটল, জরিনা শুনতে পেল কে যেন তার খুব কাছে থেকেক বলল, “এই ভটকু মিয়া।”
কথাটি বলল মেকু, কিন্তু দুই মাসের একটা বাচ্চা কথা বলতে পারে সেটা ঘুণাক্ষরেও জরিনার মাথায় আসে নি বলে সে সেটা ধরতে পারল না।
পাহাড়ের মতো পুলিশটা সাথে সাথে ঘুরে জরিনার দিকে তাকাল, চোখ লাল করে বলল, “কী বললেন?”
জরিনা থতমত খেয়ে বলল, “আমি বলি নাই।”
“তা হলে কে বলেছে?”
জরিনা ঘুরে পিছনে তাকাল, আশেপাশে কেউ নাই, সে একা দাঁড়িয়ে আছে। সত্যিই তো, তা হলে কে পুলিশটাকে ভটকু মিয়া ডেকেছে? মোটা মানুষকে ভটকু মিয়া ডাকলে রাগ তো করতেই পারে, আর সেই মোটা মানুষটি যদি পুলিশ হয় তা হলে তো কোনো কথাই নেই।
পুলিশ গর্জন করে বলল, “আপনি কেন আমাকে ভটকু মিয়া ডাকলেন?”
জরিনা আবার চিঁ চিঁ করে বলল, “আমি ডাকি নাই।”
পুলিশটা কিছুক্ষণ চোখ লাল করে জরিনার দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, “খবরদার, কখনো এভাবে কথা বলবেন না।”
জরিনা মিনমিন করে বলল, “বলব না।”
পুলিশটা ঘুরে আবার হাঁটতে থাকে, ফাঁড়া কেটেছে মনে করে জরিনা বুক থেকে একটা নিশ্বাস বের করতে যাচ্ছিল কিন্তু মেকু সে সুযোগ দিল না, আবার পুলিশটাকে ডাকল, বলল, “ভোটকা মিয়ার, তেজ দেখো!”
এত বড় পাহাড়ের মতো পুলিশটা সাথে সাথে পাই করে ঘুরে জরিনার দিকে তাকিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে বলল, “কী বললেন? কী বললেন আপনি? আমি ভোটকা মিয়া? আমার তেজ হয়েছে?”
জরিনা একেবারে হতবাক হয়ে গেল। কে কথা বলছে? সে কি বলবে বুজতে পারল না কিন্তু তার আগেই স্পষ্ট মনে হল এই বাচ্চাটা কথা বলেছে! এটা কি সম্ভব?
পুলিশটা মহা তেড়িয়া হয়ে প্রায় জরিনার উপর ঝাপিয়ে পড়ল, চিৎকার করে বলল, “কী বললেন আপনি? আপনার কত বড় সাহস একজন পুলিশ অফিসারের সাথে এইভাবে কথা বলেন? মুখ ঢেকে রেখেছেন বাঁদরামো করার জন্যে?”
জরিনা বিস্ফোরিত চোখে মেকুর দিকে তাকিয়ে রইল, তার মাথা ঘুরতে শুরু করেছে – এই বাচ্চাকে কিডন্যাপ করার পর থেকে তাদের দুর্গতি, রাতে ভূতের কথা বলা, সবকিছু হঠাৎ যেন পরিষ্কার হয়ে যেতে থাকে। ভয়ে আতঙ্কে জরিনার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। পুলিশ অফিসারটা একেবারে জরিনার গায়ের উপর উঠে হুংকার দিল, বলল, “কী হল? কথা বলেন না কেন?”
জরিনার হয়ে মেকু কথার উত্তর দিল, বলল, “এই তো বলছি। আমাকে চেনো না ভোটকা মিয়া? আজকের পত্রিকায় আমার ছবি দেখ নাই?”
“কী ছবি?” পুলিশ আরো একটু এগিয়ে এল।
“দূর থেকে কথা বল। বেশি কাছে আসলে ঘুষি মেরে তোমার দাঁত ভেঙে ফেলব।”
“কী বললেন? কী বললেন আপনি?” পুলিশ অফিসার দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “আপনি ভাবছেন মহিলা হয়েছেন দেখে আপনি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারবেন? আপনাকে এরেস্ট করে এমন কোৎকা দেব –”
মেকু চোখের কোনা দিয়ে দেখল তাদের ঘিরে বেশ একটা ভিড় জমে উঠেছে। শুধু তাই নয় মনে হয়, একজনের হাতে আজকের পত্রিকাও আছে। সে বলল, “চোপ কর ব্যাটা বদমাইশ । পত্রিকায় আমার ছবি দেখলে তোমার কাপড়ে বাথরুম হয়ে যাবে।”
যার হাতে পত্রিকাটি ছিল সে মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, আজকের পত্রিকায় বাচ্চা কিডন্যাপের ছবি ছাপা হয়েছে।”
পুলিশ অফিসার বলল, “আপনি কী বলতে চান আপনি সেই কিডন্যাপার?”
এতক্ষণে জরিনা নিজেকে একটু সামলাতে পেরেছে। কাঁদো কাঁদো হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই মেকু বলল, “হ্যাঁ। বিশ্বাস না হলে আরেকটু কাছে আস – ভোটকা মিয়া। ব্যাগ থেকে রিভলবার বের করে তোমার মাথা ফুটো করে দেব।”
“কী বললেন?” পুলিশ অফিসার হুংকার দিয়ে চোখের পলকে তার কোমরে ঝোলানো রিভলবারটা হাতে নিয়ে নিল। জরিনার দিকে তাক করে বলল, “কত বড় সাহস – একজন পুলিশ অফিসারকে গুলি করার ভয় দেখায়!”
জরিনা এবারে মোটামুটি ভেঙে পড়ল, কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “দেখেন, আমি আপনাকে কিছুই বলি নাই।”
পুলিশ অফিসার মুখ খিঁচিয়ে বলল, “এখন আমার হাতে রিভলবার দেখে ভয় পেয়ে সিধে হয়ে গেছেন!”
“না না সেটা নয়। আমি আপনাকে কিছু বলি নাই।”
“তা হলে কে বলেছে?”
“আমার মুখ ঢাকা তাই আপনি ভেবেছেন আমি কথা বলছি। আসলে আমি বলি নাই।”
পুলিশ অফিসার ধমক দিয়ে বলল, “তা হলে কে বলেছে?”
জরিনা মেকুকে দেখিয়ে বলল, “এই যে, এই বাচ্চাটা।”
পুলিশ অফিসার এবং চারপাশে থাকা মানুষগুলি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে হঠাৎ এক সাথে উচ্চস্বরে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে সবাই একবারে গড়াগড়ি খেতে থাকে।
জরিনা চোখ বড় বড় করে বলল, “সত্যিই বলছি! খোদার কসম!”
পুলিশ অফিসার হাসি থামিয়ে উপস্থিত মানুষগুলির দিকে তাকিয়ে বলল, “ড্রাগস খেয়েছে। ড্রাগস খেয়ে মাতলামি করছে।”
জরিনা বলল, “আমি মাতলামি করছি না। সত্যি কথা বলছি এই বাচ্চা কথা বলতে পারে। মহা ত্যাঁদড় –”
পুলিশ অফিসার ধমক দিয়ে বলল, “চুপ করেন। ফাজলেমি করবেন না।”
“খোদার কসম।”
মেকু তখন ঠিক ছোট বাচ্চারা যেভাবে কাঁদে সেরকম ভান করে ওঁয়া ওঁয়া করে কাঁদতে লাগল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বলল, “এই যে বাচ্চা কথা বলছে!”
আরেকজন টিটকারী করে বলল, “হ্যাঁ! একেবারে ব্যান্ড সংগীত!”
উপস্থিত সবাই আবার হা হা করে উচ্চস্বরে হেসে উঠে – জরিনা ঠিক বুঝতে পারল না, এই কথাটার মাঝে এত হাসির কী আছে!
জরিনা মেকুর দিকে তাকাল, মেকু তার মাড়ি বের করে হেসে জরিনার দিকে তাকিয়ে একবার চোখ টিপে দেয়! কী অবিশ্বাস্য ব্যাপার, এইটুকু পুঁচকে ছোঁড়া তাকে এভাবে নাকানী চুবানী খাইয়েছে? এটা কী সম্ভব? সে অবিশ্বাস করবে কেমন করে একেবারে নিজের চোখে দেখছে! জরিনা চারিদিকে তাকাল, একেবারে নাকের ডগায় রিভলবার ধরে একটা পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, চারিদিকে মজা দেখার জন্যে মানুষের ভিড় এবং মানুষগুলির একজনেও তার কথা বিশ্বাস করছে না। সে হেরে গেছে এবং হেরেছে দুই মাসের একটা পুঁচকে ছোঁড়ার কাছে। পুঁচকে ছোঁড়াটাকে উপরে তুলে একটা আছাড় দিলে হয়তো মনে ঝাল একটু মিটবে। জরিনা মুখ শক্ত হয়ে আসে, নিশ্বাস দ্রুততর হয়, চোখ থেকে আগুন বের হতে থাকে – কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে। মেকু জরিনার উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেছে, সে তার দুই পা জোড়া করে জরিনার মুখের উপর গায়ের জোরে লাথি বসিয়ে দিল – জরিনা কোঁক করে একটা আর্ত শব্দ করে পড়ে যাচ্ছিল, পুলিশ অফিসারটা খপ করে ধরে ফেলল, ভিড়ের মাঝে থেকে একজন এসে মেকুকে ধরল। টানাটানিতে জরিনার মুখের উপর থেকে কাপড় স্বরে এসেছে, খবরের কাগজ হাতে মানুষটি বিস্ময়ের শব্দ করে বলল, “ব্যাপারটা দেখ! এই মহিলা তো ডেঞ্জারাস মহিলা। পত্রিকায় তো এরই ছবি!”
জরিনার মাথা ঘুরছে তার মাঝে ব্যাগ খুলে সে রিভলবারটা বের করার চেষ্টা করল, কিন্তু তার আগেই পুলিশ অফিসার তার হাত থেকে ব্যাগটা চিনিয়ে নিয়েছে। মানুষজন আরো ভিড় করে এগিয়ে আসে। ব্যাগের ভিতর থেকে একটা রিভলবার আর একটা মোবাইল ফোন বের হয়ে এসেছে। জরিনা মোবাইল ফোনটা দেখে একটা নিশ্বাস ফেলল, বদি হয়তো এক্ষুনি ফোন করবে, তখন কী হবে?
বদি বইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকাল। চারপাশে যারা আছে তারা কী নিউমার্কেটের সাধারণ মানুষ নাকি সাদা পোষাকের পুলিশ বোঝা মুশকিল। বদি ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে রইল এবং মুক্তিপণের টাকা নিয়ে কে আসতে পারে সেটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। তারা বলে রেখেছে পলিথিনের ব্যাগে করে টাকা আনতে হবে কিন্তু কোনো মানুষের কাছেই পলিথিনের ব্যাগ নেই। বদি একটু অধৈর্য হয়ে এদিক সেদিক তাকাল এবং দেখতে পেল একজন মহিলা হাতে একটা বড় পলিথিনের ব্যাগ বোঝাই কিছু নিয়ে এগিয়ে আসছে। মহিলাটিকে দেখে মনে হল কাউকে খুঁজছে – তা হলে কি এই মহিলাই মুক্তিপণের টাকা এনেছে? এরকম একটা কাজে কি একজন মহিলা আসতে পারে? মহিলাটা দ্বিতীয়বার বদির সামনে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় বদি চাপা গলায় বলল, “আপনি কী মেকুর কিছু হন?”
মহিলাটি – যিনি আসলে মেকুর আম্মা, চমকে উঠে বদির দিকে তাকালেন, মুহূর্তে মুখের মাঝে একসাথে ঘৃণা এবং রাগ ফুটে উঠে। তারপর চোখে আগুন ঢেলে বললেন, “ও! তুমি কিডন্যাপার?”
বদি ঠোটে আঙুল দিয়ে বলল, “শ-স-স-স। আস্তে।”
“কেন আস্তে কেন? আমার বাচ্চাকে কিডন্যাপ করার সময় মনে থাকে না? এখন আস্তে!”
বদি শুকনো গলায় বলল, “লোকজন শুনলে আপনারই অসুবিধা হবে।”
“কী অসুবিধে হবে?”
“আপনার বাচ্চা অন্য জায়গায় আছে- তার ভালোমন্দের ব্যাপার আছে।”
আম্মা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন, “কী? কী বললে তুমি বদমাইশ? পাজির পা ঝাড়া? আমার বাচ্চার ভালো মন্দের ব্যাপার? তোমার কত বড় সাহস–”
বদি অস্বস্তিতে বলল, “আ-হা-হা! আস্তে বলেন, কেউ শুনে ফেলবে।”
“কোথায় আমার মেকু?”
বদি চাপা গলায় বলল, “আপনি টাকা বুঝিয়ে দেন – আমি বাচ্চা বুঝিয়ে দেব।”
আম্মা দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, “আমার সাথে তুমি মামদোবাজি কর? তোমরা নর্দমার কীট,সাপের বাচ্চা। তুমি ভাবছ আমি তোমাদের চিনি না? জুতো দিয়ে পিটিয়ে তোমাদের সিধে করা দরকার।”
বদি একটু অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, “আপনি কী বলছেন?”
“মিথ্যে বলেছি? আমি মিথ্যে বলেছি?”
“সত্যি মিথ্যে জানি না। আপনি পলিথিনের ব্যাগটা দেন। টাকা সব এনেছেন তো?”
আম্মা গরম হয়ে বলল, “আমি আগেই দেব না। আমার মেকু কোথায় আছে না বললে দেব না।”
“আগে টাকা দেন। তারপর অন্য কথা।”
“আগে মেকুকে দাও। তারপর অন্যকথা।”
বদি বিরক্ত হয়ে বলল, “সেটা কেমন করে হয়? বইপত্রে কখনো কিডন্যাপের গল্প পড়েন নাই? টাকা না দিলে কেউ কখনো কাউকে ফেরত দেয়?”
“অশিক্ষিত মূর্খ চোরের দল। তুমি আমাকে বইপত্র শিখিও না। বল, কোথায় আছে আমার মেকু?”
“ঠিক আছে। আপনাকে যদি মেকুর সাথে কথা বলতে দেই তা হলে আপনি টাকা দেবেন?”
“আগে আমাকে কথা বলতে দাও তারপর দেখি।”
বদি বিরক্ত হয়ে তার পকেট থেকে টেলিফোন বের করে ডায়াল করে টেলিফোনটা আম্মার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নেন। আমার পার্টনারের সাথে কথা বলেন।”
“তোমার পার্টনার কে?”
বদি মুখ শক্ত করে বলল, “দুর্ধর্ষ মহিলা। তিন বার এরেস্ট হয়েছে। দুই বার জেল খেটেছে। নাম জরিনা।”
আম্মা টেলিফোনটা কানে লাগিয়ে বললেন, “হ্যালো।”
অন্যপাশ থেকে একটা মোটা এবং ভারি পুরুষ মানুষের গলা শোনা গেল, “হ্যালো।”
আম্মা একটু অবাক হলেন, বললেন, “আপনি কে বলছেন?”
মোটা এবং ভারি গলা বলল, “আপনি কে বলছেন?”
“আমি আমার ছেলের খবর নেওয়ার জন্যে জরিনার খোঁজ করছি। তারা আমার ছেলেকে কিডন্যাপ করেছে।”
“ও! আপনার ছেলে কিডন্যাপ করেছে। সে ভালোই আছে – কোনো চিন্তা করবেন না। কিন্তু জরিনার সাথে তো এখন কথা বলতে পারবেন না।”
“কেন?”
“কারণ, তার দুই হাত পিছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগানো হয়েছে। এখন তো ফোন ধরতে পারবে না। তা ছাড়া তার মেজাজ খুব খারাপ, কাছে গেলে কামড় দেবে মনে হয়।”
আম্মা একটা নিশ্বাস ফেলেল বললেন, “তা হলে আপনি বলছেন আমার ছেলে ভালো আছে?”
“হ্যাঁ। ভালো আছে। আমি পুলিশ ইন্সপেক্টর। আমি বলছি ভালো আছে।”
“দেখেন তো তার ন্যাপি শুকনো না ভিজা।”
“কী বললেন?”
“বলেছি, দেখেন দেখি ন্যাপিটা শুকনো না ভিজা।”
কিছুক্ষণ পর মোটা এবং ভারী গলা বলল, “শুকনো।”
“আপনি আমার ছেলেকে বলেন হিসি করতে।”
মোটা এবং ভারী গলা অবাক হয়ে বলল, “কী বললেন?”
“বলেছি, আমার ছেলের কাছে গিয়ে তাকে বলেন হিসি করতে।”
“হিসি?”
“হ্যাঁ, বলেন, তোমার আম্মু বলেছে হিসি করতে।”
আবার কয়েক মুহূর্ত নীরবতা তারপর ভারী আবনফ মোটা গলা বলল, “বলেছি।”
“গুড। আমার ছেলে হিসি করেছে?”
“আবার কয়েক মুহূর্ত নীরবতা, তারপর ভারী এবং মোটা গলা আনন্দময় সুরে বলল, “করেছে।”
“গুড। ভেরি গুড।” আম্মার আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন – কিন্তু বদি বাধা দিল। বলল, “কী হয়েছে?” কার সাথে কথা বলছেন?”
আম্মা হাতের ব্যাগটা তুলে বদির মাথায় এক ঘা বসিয়ে দেবার প্রস্তুতি নিয়ে বললেন, “পুলিশের সাথে। তোমার দুর্ধর্ষ পার্টনার চতুর্থবার এরেস্ট হয়েছে। খুব নাকি মেজাজ গরম। যেই কাছে আসছে তাকেই কামড় দিচ্ছে।”
বদির চোয়াল হঠাৎ ঝুলে গেল। সে চোখের কোনা দিয়ে চারিদিকে তাকাল তারপর হঠাৎ আম্মার উপর ঝাপিয়ে পড়ে পলিথিনের ব্যাগটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করল, আম্মা বাধা দিতে গিয়ে থেমে গেলেন, কারণ – প্রথমত বদি এক হাতে তার পকেট থেকে একটা রিভলবার বের করে এনেছে। দ্বিতীয়ত পলিথিনের ভিতরে নোটের বান্ডিলের মতো জিনিসগুলিতে আসলে টাকা নেই। কাগজের বান্ডিল!
বদি পলিথিনের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ন্যাংচাতে ন্যাংচাতে দৌড়াতে থাকে, পিছু পিছু বেশ কিছু মানুষ একটু দূরত্ব নিয়ে তার পিছু পিছু যেতে থাকে, হাতে রিভলবার বলে কেউ কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না।
বদি ন্যাংচাতে ন্যাংচাতে দৌড়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পলিথিনের ব্যাগটা পিছনের সিটে রেখে মতিকে বলল, “মতি! চালাও – জলদি ।”
মতি স্টিয়ারিঙে মাথা রেখে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছে, গাড়ি চালানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। বদি মতিকে ধরে একটা ঝাঁকুনি দিতেই মতি চোখ খুলে তাকিয়ে বলল, “কী হয়েছে বদি?”
“মানুষ ধরতে আসছে! চালাও গাড়ি। জলদি।”
মতি স্টীয়ারিং ঘোরাতে শুরু করে, হর্ন দেয়, গীয়ার পালটে এক্সেল্টরে চাপ দিয়ে গাড়ি চালানোর ভান করে বলল, “কী গাড়ি এটা? নড়ে না কেন?”
বদি চিৎকার করে বলল, “আগে গাড়ি স্টার্ট দেবে না?”
“দেই নাই?”
মতি চাবিটা বদির হাতে দিয়ে বলল, “তুমি স্টার্টটা দাও দেখি – আমি ততক্ষণ একটু ঘুমিয়ে নেই –”
কথা শেষ করার আগেই মতি স্তিয়ারিং হুইলে মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে গেল। বদি সামনে এবং পিছনে তাকাল; দুই পাশেই অনেক পুলিশ, রীতিমতো অস্ত্র তাক করে আসছে। তাদের পিছনে মানুষ। তাদের পিছনে মেকুর আম্মা। মনে হচ্ছে বদির মাথাটা টেনে ছিঁড়ে ফেলবেন।
বদি গাড়ির ড্যাশবোর্ডে একটা ঘুষি মেরে মাথা নেড়ে হতাশ ভঙ্গিতে বলল, “ধরা পড়ে গেলাম!”
মতি চোখ খুলে তাকিয়ে বলল, “সত্যি?”
বদি মুখ খিঁচিয়ে বলল, “সত্যি কি না চোখ খুলে দেখ।”
মতির মুখে শিশুর মতো একটা হাসি ফুটে উঠে, সে চোখ বুজে বলল, “ভালোই হল, এখন আরামে ঘুমাতে পারব। তুমি বড় ডিস্টার্ব কর বদি। ঘুমাতে দেও না।”
একটা বাঁশির মতো শব্দ আসে সেটা কি মতির নাক ডাকার শব্দ নাকি পুলিশের বাঁশির শব্দ বদি ঠিক বুঝতে পারল না।