চিলেকোঠার সেপাই – ১৮
বৈরাগীর ভিটার বটগাছের বিশাল সাম্রাজ্যে হাঁটতে হাটতে জালাল মাস্টারের অন্যমনস্কতা আনোয়ারের চোখে পড়ে, এতোটা সময় ধরে এরকম চুপচাপ থাকা জালাল মাস্টারের স্বভাবের বাইরে। এই বটগাছ নিয়ে লোকটার খুব বড়াই, এই নিয়ে কথা বলতে পারলে লোকটা বাচে।
এই গাছ অনেক দিনের, না? আনোয়ারের এই প্রশ্নে জালাল মাস্টারের নীরবতা ভাঙে, কিন্তু সে তোলে সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গ, এই ছোড়াটা আমাকে উভয় সঙ্কটে ফালালো। কি বিপদ হলো কও তো বাপু!
কি রকম?
‘যার গোরু নাই তাক কি বর্গ দেওয়া যায়? করমালির বাপেরও একাধিক গোরু আছিলো না। কোনো কোনো সময় একাধিক গোরু হছে তো কার্তিক মাসে নির্ঘাত একটা বেচ্যাদিছে। কিন্তু পাড়া প্রতিবেশীর সাথে তার সদ্ভাব আছিলো, কাম ঠিকই চালায়া নিছে। ফসলও মোটামুটি ঠিকই দিছে।’
করমালি দেয় না?
বয়স কম তো! বাহানা করে বেশি। একটু খরা হলো তো কিছুমাপ করেন। অর বাপের আমলেও এরকম হছে, তা বাপটা আছিলো নরম মানুষ, কছে, আপনে কম নিলে আপনে মরবেন না, হামাগোরে কম হলে তো বেছোলবিটি নিয়া মর্যা যামু। কিন্তু এই ছোড়ার কথাবার্তা ত্যারা ত্যারা!
কি রকম?
‘ধরো, কবে, সার ভালো কিন্যা দিলেন না, ফসল কম হলো হামার কি দোষ? আপনে জমি দিয়া তো খালাস, মেনুত যা করছি এই ফসলে তার এক আনা দামও ওঠে না। এই সব কথা কয়।-আবার পরিশ্রমও যে নিষ্ঠা সহকারে করে তাও না!’-আপাতত করমালির আর তেমন কোনো দোষ খুঁজে না পেয়ে জালাল মাস্টার একটু দমে যায়। বটসম্রাজ্যের শেষের দিকে এসে সে তার দ্বিধার কথা জানায়, ‘দ্যাখো তো, করমালি গোরু জোগাড় করবার না পারে তো কি বিপদ। এখন যদি কেউ ওকে গোরু না-ই দেয় তো আমার জমি দেওয়া লাগে ওর জ্যাঠাক। দরিদ্র চাষা, ওর অন্ন বিনষ্ট করাটা মানবিক কাম হয় না। কিন্তু আমি করি কি?
‘ওকে গোরু দিতে গ্রামের লোকে এতো ভয় পায় কেন?
এসব করমালির কল্পনাপ্রসূত বাক্য হবার পারে। এখন দ্যাখো, আমি কি করি? ঐ জমির ধান কাটা হছে কোনদিন ফসলও এবার ভালো দিবার পারলো না, এদিকে এখন পর্যন্ত হালও দিবার পারলো না। গম বুনবো, তো হল দিবো কোনদিন, বীজ বুনবো কোনদিন!’
জালাল মাস্টারের সমস্যা আনোয়ার বুঝতে পারে বৈ কি! করমালির ওপর সে আর কতোদিন নির্ভর করবে? এখন গোরুওয়ালা কোনো চাষাকে বর্গ দিয়ে গম বুনতে না পারলে গম তুলবে কবে? এই জমিগুলো তার তিন ফসলী, গম তোলার পর অন্য ফসল বুনতে পারে। তবে জালাল মাস্টার বিবেচক ধরনের লোক বলে এতোদিন ধৈর্য ধরলো। জালাল মাস্টারের শ্বশুরের আমল থেকে এসব জমিতে করমালির বাপদাদারা বর্গাচাষ করে আসছে, হঠাৎ ছাটাই করতে তার বাধো বাধো ঠেকে।
কিছুদিন আগে করতো করমালির বাপ, বছর পাচেক হলো সে বাতে পঙ্গ। বয়স ৫০ হয়নি, শক্ত তামাটে পাকা দাড়ি, খরখরে শক্ত চুল, বাতে বাকচোরা হাত পা ও কোমর এবং ঘন ঘন কাশির কল্যাণে তার হাল হয়েছে ৭০/৭২ বছরের অথর্ব বুড়োর মতো। কারো কাছ থেকে চেয়ে-নেওয়া পুরানো জরাজীর্ণ কোট ও দুর্গন্ধময় ছেঁড়া কাঁথার মধ্যে কুণ্ডুলি পাকিয়ে একটা বস্তার মতো সে শুয়েছিলো তার বাড়ির বাইরে, শুকনা কলাপাতার পর্দার ধার ঘেঁষে। সেখানটায় বেশ রোদ। সূর্যের দিকে মুখ রেখে পুরু ও ফাটা ঠোঁটজোড়া অনেকটা ফাক করে লোকটা রোদ খাবার চেষ্টা করছিলো। জালাল মাস্টারকে দ্যাখামাত্র কাউকে ডাকার উদ্দেশ্যে সে হাউমাউ করে চ্যাচাতে শুরু করে। তার কাশির দমক ওঠে, শ্লেষ্মার্ধ্বনিমুখর গলা তার আর থামে না, আনোয়ার ভয় পায়, কাশতে কাশতেই বুড়োর সবটা বাতাস বেরিয়ে না যায়। তার বাকপ্রয়াস ও তুমুল কাশির জবাব আসে উত্তরদিকের বাঁশঝাড়ের ওপার থেকে, ‘চাচামিয়া, ও চাচামিয়া, এক ঘড়ি খাড়ান গো, হামরা আসি! জালাল মাস্টার ও আনোয়ার সেদিকে তাকালে তার লম্বা লম্বা দাঁতে করমালি মহামধুর হাসি ছাড়ে। জোয়ালের পাতায় বুক পেতে করমালি গোরুর প্রকসি মারার চেষ্টা করছে। ঐ জোয়ালের পাতার আরেক দিকে বুক পেতে রেখেছে একটু বয়স্ক আরেকজন। লাঙল ধরে তাদের পেছনে পেছনে চলেছে ৮/১০ বছরের ১টি বালক। এই ছোকরা আবার হেট হেট শব্দ করে বাপচাচার বয়সী লোক ২জনকে গোরুর সম্পূর্ণ মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করছে। করমালির সঙ্গী জোয়াল থেকে নিজের বুক সরিয়ে নিচ্ছিলো, কিন্তু করমালি বাধা দেয়, আরো খানিক দ্যাখো না গো গোরু পারলে হামরা পারমুনা কিসক? এখনি হ্যাঁপসা গেলা? কিন্তু জোয়ালের পাতা থেকে তার সঙ্গীর বুক প্রত্যাহার করার কারণ তার কুন্তি নয়, ২জন ভদ্রলোকের সামনে গোরুর ভূমিকার অবতীর্ণ হতে লোকটির বাধো বাধো ঠেকছে। একটু পর করমালি বালকটিকে কি নির্দেশ দিয়ে রওয়ানা হয়, তার সঙ্গীটি কিন্তু আসে না। আরেকটু দূরে একটা তালগাছের নিচে বসে ইকো-হাতে বসে-থাকা এক বুড়োর পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলে।
করমালি এসেই তাদের দিকে এক প্রস্থ হাসি বিতরণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু খুব হাঁপাচ্ছে বলে তার হাসি ঠিক হাসির আকার পায় না। শুকনা কলাপাতার পর্দা সরিয়ে সে ভেতরে যায় এবং ফের বেরিয়ে আসে বাশের চটাই হাতে। চাটাই পাতবার মতো জায়গার বড়ো অভাব। বিঘার পর বিঘা চাষের জমির পাশে করমালিদের ১মাত্র ঘর ও বাইরের উঠান এমন জড়সড় হয়ে রয়েছে যে, হাত পা ছড়াবার জায়গা পর্যন্ত নাই। এরই ১দিকে কলাগাছের ছোটো ঝাড়ের সঙ্গে লাগোয়া গোরুর জাবনা খাবার মাটির গামলা। তবে গোরু নাই বলে জায়গাটা খালি। করমালি বাশের বাতা ঘেরা গামলার পাশে চাটাই পেতে দিলো। জালাল মাস্টার বসতে বসতে বলে, করমালি, মুখেত তালি!’ জালাল মাস্টারের এই ছন্দোবদ্ধ রসিকতায় করমালি শব্দ করে হাসে, তবে হাঁপাতে হাপাতেই সে বলে, চাচামিয়া, হাল দেওয়া শুরু করলাম। ধরেন দিনা সতেকের মদ্যে গম বোনা যাবো। বেছন তো আরো লাগবো চাচামিয়া!’
‘পাঁচ সের গম দিলাম যে খাওয়া সারা?
এক বিঘা জমিত কম করা হলেও দশ সের গম লাগে!
আর পাঁচ সের দিবা তোমরা, আদি নিছো, বিছন দিবা না?
তা দিমু| কিন্তু চাচামিয়া আপনের পাঁচ সের গমের আট আনা গেছে পোকের ভোগেতা মিছা কথা কবার জায়গা পাস না? কোনদিন আবার বলবি গমের মধ্যে হাতা লাগছে।’ গমের বীজে চালের হাতি পোকা ধরার ঠাট্টা করে করমালির পোকার পেটে গমের বীজ যাবার তথ্য একেবারে প্রত্যাখ্যান করা হলো। ৩/৪ বছর হলো এদিকে গমের চাষ হচ্ছে, জালাল মাস্টার ১ বিঘা জমিতে গম করতে চায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে করমালিকে গমের বীজ দিয়েছে ৫ সের, বাকিটা দেবে করমালি, এর মধ্যে তার অর্ধেক গেলো পোকার ভোগে,—এ কথা বিশ্বাস করবে কে? আবার এটাও এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, গোরু জোগাড় করা করমালির সাধ্যের বাইরে। তার কাছে জমি বর্গ দিলে এবারকার ফসল আর ঘরে আসবে না। কিন্তু কথাটা জালাল মাস্টার বলে কি করে? আহা কতোকাল ধরে এরা এই জমি চাষ করে! জালাল মাস্টার মুখের হাসি বজায় রেখেই বলে, ‘মোহাম্মদ করম আলি মণ্ডল, মনুষ্য জাতি হইতে তোমাকে খারিজ করা হইল। তোমাকে দিয়া কাম হবো? গোরু হাল বয়, ইহাই গোরুর কর্ম, ইহাই গোরুর ধর্ম, কিন্তু ফসল উৎপাদনের দায়িত্ব কি গোরুর উপর অর্পণ করিতে পারো ?
এবার কথা বলে করমালির বাবা। জোয়ালের পাতায় বুক দিয়ে গোরুর ভূমিকা পালন করার ব্যাপারে সে সন্দেহ প্রকাশ করলে করমালি চড়া গলায় জবাব দেয়, ‘গোরু পারলে মানুষ পারবো না কিসক?
পারলু না তো কাল থাকা কবেজের সাথে তিন শতাংশ জমিত হাল দিবার পারলু? তা অবশ্য পারেনি, করমালিকে তাই চুপ করে থাকতে হয়। প্রবলভাবে কাশতে কাশতে করমালির বাবা যা বলে তা থেকে এই তথ্য উদ্ধার করা যায় যে, চষা জমিতে মই দেওয়ার সময় গোরুর বদল মানুষ কাজ করতে পারে, সে নিজেও দড়ি ধরে মই টেনেছে। মইয়ের ওপর থাকতো শিশু করমালি বা তার ভাই বরকতালি, সেও তখন বালক। কিন্তু শীতকালের এই শক্ত মাটিতে লাঙল টানা কি মানুষের কর্ম? আল্লা তাহলে গোরু পয়দা করেছে কেন? জালাল মাস্টার বলে, ‘তুই না আমাক আসতে বললি? তোর জ্যাঠা কৈ? তাক কয়া দেখি, এখন হাল গোরু দিবো, ফসল উঠলে তুই উপযুক্ত-।
তার গোরু কোটে? করমালির এই নির্লিপ্ত প্রশ্নে জালাল মাস্টার অবাক হয়, বিরক্তও হয়, মানে?
করমালি হাসে, গোরুর প্রকসি দেওয়াজনিত কারণে কুস্তি তার এখন কেটে গেছে। বড়ো বড়োদাঁতে সে বিরাট হাসি ছাড়ে, চাচামিয়া, গোরু এটেকার কারু নাই। তালপোতার ব্যামাক মানুষের এখন চারটা করা পাও নাগবো, পছন্দ হলে সোগলির মাথাত জোড়া জোড়া শিঙের বন্দোবস্ত করেন।
এরপর মহা উৎসাহে করমালি জানায় যে, গত কয়েক রাত্রে এই গ্রামের প্রায় সব চাষীর বাড়ি থেকে গোরু চুরি হয়েছে। প্রথম চুরি হলো তার নিজের গোরু, তাতে তার প্রায় একঘরে হবার দশা হয়েছিলো। তারপর উত্তরপাড়ার ২টো ঘর থেকে গেলো জোড়া জোড়া বলদ। করমালির জ্যাঠা আরো সাবধান হয়, সামনাসামনি হলেও করমালির দিকে এমনভাবে তাকায় যেন তার সামনে কোনো লোক নাই। পশ্চিমে শেখপাড়ায় এক রাত্রে ৩ ঘর চাষার ২টো গাই, ৩টে বলদ ও ১টা এঁড়ে চুরি হলে জ্যাঠা ধুনট গিয়ে লোহার শিকল ও তালা নিয়ে এলো। ধুনট থেকে জ্যাঠা আসছে, করমালি বসেছিলো বড়ো রাস্তার মোড়ে গাবগাছতলায়, জ্যাঠা তাকে এড়াবার জন্য জমির ভেতর নামলো, নতুন-কেনা দামী জিনিষগুলোর দামটা পর্যন্ত জিগ্যেস করার সুযোগ দিলো না। আল্লার কি কাজ, করমালি চোখজোড়া ছোটো করে হাসে, সেই রাত্রেই নতুন শেকল তালা ভেঙে চোর ঢুকলো জ্যাঠার ঘরে, গাই নিলো, বকনাটা নিলো, বলদ নিলো, যাবার সময় উপরি নিলো শেকল ও তালা। পরদিন শেখপাড়ার গোরুগুলো যাওয়ার পর করমালি এখন একঘরে হওয়া থেকে মুক্ত হয়েছে। লোকে এখন তাকে আর এড়িয়ে চলে না। আবার চাষের জন্য গোরু ভাড়া পাওয়ার সম্ভাবনাও এখন একেবারে শূন্য।
দেখতে দেখতে ৭/৮ জন লোক এসে দাঁড়িয়েছে। এদের ১জন হলো করমালির ঐ সঙ্গী, ওর সঙ্গে জোয়ালে বুক দিয়ে লাঙল টানার চেষ্টা করছিলো। তার নীরব ও কখনো হাই-তোলা মুখ ও প্রায় নিশ্চল কালোকিষ্টি গতর দেখে মনে হয় না যে, করমালির উত্তেজিত কথা তাকে স্পর্শ করতে পেরেছে। আর সবার সঙ্গে সে কখনো তাকিয়ে থাকে করমালির দিকে, কখনো দ্যাখে আনোয়ারকে। করমালির সঙ্গী হঠাৎ তার নিজের গোরু চুরি হওয়ার বর্ণনা দিতে শুরু করে, ঐ আত্ৰে হামি নিজে শুতা থাকলাম গোলের মদ্যে, ছোটো এ্যাঁন গোল হামার, তারই মদ্যে হাতপাও মেলা দেই কোটে?–আর মশা! হায়রে মশা গো মশা! মশার কামড় খাতে খাতে তামান আত দুই চোখের পাতা এক করবার পারি নাই। তার দীর্ঘ বিবৃতির শেষ ভাগ বিশ্বাস করা একটু কঠিন। গোরুচোর গোয়ালঘরের বেড়া কেটে ঢুকে বলদের দড়ি ধরে চলে গেলো; গাইটা বাধা ছিলো একদিকে বাঁশের থামের সঙ্গে, অন্যদিকে খুঁটির সঙ্গে বাধা। দড়ি খুলেছে, খুঁটি উপড়ে ফেলেছে, বলদ গেছে, গাই গেছে,-কাবেজের বিনিদ্র নিশিযাপনের কথা বিশ্বাস করে কে? এই নিয়ে সবাই একটু হাসাহসি করলে কাবেজ বলে, না চাচামিয়া, ঘুম লয়, আরা কি যান ছিটা দেয়। মন্তর পড়া ঘরের মদ্যে বালু ছিটায়, হামি চ্যাতনই প্যালাম না দিশা পালে এক শালাক জান লিয়া যাবার দেই? শালার ব্যাটা শালারা!
করমালির নিয়ে-আসা পান খেয়ে জালাল মাস্টার ও আনোয়ার উঠছে এমন সময় একটু দূরের তালগাছতলা থেকে এসে দাঁড়ায় করমালির জ্যাঠা। লোকটার বয়স ৫৫-এর মধ্যেই, তার পাকা দাড়ি তামাটে সাদা, মাথার চুল বেশ কম। লম্বা ও রোগা লোকটির কোমর একটু বাঁকা, বাঁকা শরীরটাকে আরেকটু নুইয়ে সে দাঁড়ায় জালাল মাস্টারের মুখোমুখি।
জালাল মাস্টার তাকে জিগ্যেস করে, ক্যাগো পচার বাপ, আমেশা নিরাময় হছে? তার পুরনো রোগ সম্বন্ধে জালাল মাস্টারের উদ্বেগ দেখে পচার বাপ কৃতজ্ঞতায় আরো নুয়ে পড়ে। করমালি বলে, আর আমেশা। জ্যাঠোর গোরু তো গেলোই, তার তালাও গেছে, শেকলও গেছে। এখন তো হাগা ফির নয় করা শুরু হবো। নয়া শিকলখান গো ধুনটের হাট থাকা কিনছিলা না জ্যাঠো করমালির উঁচু দাঁতের স্পর্শে তার কথাগুলো ঝনঝন করে বাজে,কিন্তু তার কথায় পচার বাপ কান দেয় না। জালাল মাস্টারের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আস্তে বলে, ‘দ্যাখেন তো গো মাস্টার সায়েব, কারুবারু করা গোরুবাছুরগুলান পাওয়া যায় নাকি?
করমালি ফের এগিয়ে আসে, পাবা না কিসক? খুতির মদ্যে টাকা পঞ্চাশটা লিয়া ডাকাত-মারা চরত যাও। টাকা দিবা, তোমার হাতোত শালারা গোরুর দড়ি তুল্যা দিবো। দড়ি ধর্যা বিসমিল্লা কয়া বাড়ি বিলা ঘাটা ধরো।
‘দ্যাখ করমালি, পচার বাপ রাগ করে, আলতু ফালতু কথা কস না।
ফালতু কথা কমুকিসক? উত্তরপাড়ার ল্যাংড়া নবেজ বলা বলদখান লিয়া আসছে, তাক পুছ করা দ্যাখা!
নবেজক তুই কোটে দেখলুঃ নবেজের ভাই জানে না আর তুই জানিস, না?
নবেজের ভাই কাবেজ কোনো মন্তব্য না করে গম্ভীর হয়ে থাকে। গত বছর নবেজের সঙ্গে সে পৃথগন্ন হয়েছে, দুইভায়ের সম্পর্কে এখনও খারাপ।
করমালি বলে, ‘ভাই হলে কি হয়, কাবেজ কি জানে?
নবেজ তোক কছে না? পচার বাপ রেখে গেলে করমালিও কড়া জবাব দেয়, ই, নবেজ তো হামাক সবই কছে।