৫x৫ = পঁচিশ – মনোজ সেন / পাঁচমিশেলি সাহিত্য সংকলন
প্রথম প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২০১৮
আমার অতি আদরের নাতনি
ইশিকা সেন মুখার্জীকে
স্নেহাশীর্বাদ
দাদু
.
কৃতজ্ঞতা
প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, অভ্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, সোনাল দাস,
সুমিত সেনগুপ্ত, দিলীপ দাস, নির্মলেন্দু মণ্ডল,
নিরুপম মজুমদার, সোহম ঘোষ (টিম ‘ক্যামেরা জি’)
সূচিপত্র
- স্বপ্নলোকের চাবি
- সীতা
- নগার ডাকাতি
- শালকোঁড়া বনে গণ্ডগোল
- মৃত্যুঞ্জয় আর জয়ন্ত
- স্বর্ণরেণুর স্বয়ংবর
- অলৌকিক
- অতনু গাঙ্গুলীর বিপদ
- ভয়
- বন্ধু
- নন্দিনীর সেপাইশাস্ত্রী
- হাসির উপহার
- রহস্যভেদ
- গন্ধ তো নয় মন্দ
- মিস অনুরাধা পলের হত্যারহস্য
- মহারাজার গুপ্তধন
- চন্দ্রশেখর হত্যারহস্য
- চিন্ময় গুহর মৃত্যুরহস্য
- স্মৃতিচারণ
- দাদামশায়ের অভিজ্ঞতা
- ঠাকুরদাদার বিপদ
- বাবার মুখে শোনা
- তিন টুকরো হাসি
- মিথ্যেবাদী
- নানারকম
- ইতিহাসের সূচনা
- হঠাৎ দেখা
- পাণ্ডারবাজারের মানুষখেকো বাঘ
- একটি প্রজাপতির অকালমৃত্যু
- ডাক্তার গুপ্তের বরাত
আমার কথা
প্রথমেই এই বইটির নামকরণ সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। এখানে যে গল্পগুলি সংকলিত হয়েছে সেগুলিকে বিষয় অনুযায়ী পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রচ্ছদে সেই পাঁচটি বিভাগের নাম দেওয়া হয়েছে। এই নামগুলি থেকে পরিষ্কার বোঝা যাবে যে বিভাগগুলির বিষয় এতই পরস্পর সম্পর্কহীন যে তাদের একটি নামের আচ্ছাদনের তলায় আনা প্রায় অসম্ভব। কষ্টেসৃষ্টে ভিরভ্রিংগট্ট জাতীয় একটি নাম হয়তো দেওয়া যেতে পারত, কিন্তু তার অর্থ কতজনের বোধগম্য হত সে-বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কাজেই, যতটা সম্ভব সরল ভাষায় এই নামকরণ করা হল যাতে গোড়াতেই এই বইয়ের চরিত্রটি অন্তত পাঠকের সামনে তুলে ধরা যায়।
এখন প্রশ্ন হল, কোন পাঠকদের কথা ভেবে এই গল্পগুলি লেখা হয়েছিল? কচিকাঁচারা অবশ্যই নয়। বরং বলব, যারা কৈশোরের কিশলয় আর নেই অথচ যৌবনের শ্যামল গৌরবে এখনও পর্ণে পরিণত হয়নি, যাদের বড়োদের আড্ডায় ঢোকবার অধিকার নেই, পাড়ার বাচ্চাদের সঙ্গে এক্কাদোক্কা খেলা আর ভালো দেখায় না, তারাই প্রধানত এই সংকলনের বাঞ্ছিত পাঠক-পাঠিকা। আরও আছে। যাঁরা সারাদিন ধরে নানারকম গুরুতর দুর্দান্তপাণ্ডিত্যপূর্ণ দুঃসাধ্যসিদ্ধান্ত নেবার ফাঁকে হাতের কাছে পেলে চট করে শিবরাম চক্রবর্তী বা সুকুমার কিংবা তারাপদ রায়ে চোখ বুলিয়ে নেন, হাঁদা-ভোঁদা পেলে পাতা না উলটিয়ে পারেন না, তাঁরাও আছেন। এঁদের অবশ্য কোনো বয়সের সীমায় বাঁধা যায় না।
কথা উঠতে পারে যে বইটি লেখা হল কেন বা এটা না লেখা হলে কার কী ক্ষতিবৃদ্ধি হত। ঘটনাটা হচ্ছে এইরকম।
পাঁচ দশক ধরে, যাকে প্রান্তিক সাহিত্য বলা হয়, সেই রীতি বা পদ্ধতি অনুযায়ী ‘রোমাঞ্চ’, ‘নবকল্লোল’ প্রভৃতি পত্রিকায় নানারকম গল্প বা রচনা লেখার পর আমার মনে হল যে তাদের একটি সংকলন প্রকাশ করা দরকার। তাহলে অন্তত আমার উত্তরসূরিদের জন্যে দীর্ঘস্থায়ী কিছু একটা রেখে যেতে পারব। সেই আশায়, ২০০৮ সালে আমি নিজে দশটি গল্পের একটি বই প্রকাশ করেছিলুম। নাম ছিল কালরাত্রি। কিছুদিন বাদে সেই বইয়ের পরিবেশকদের কাছে জানা গেল যে তার একটি কপিও বিক্রি হয়নি। এই খবর শুনে আমি খুবই বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলুম। আমার মনে হয়েছিল যে আমার লেখার কোনো ক্ষমতাই নেই। তাই, বই প্রকাশের চিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে, লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলুম।
এর কিছুদিন পরে আমার কাছে এলেন শ্রীমান সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়। ইনি ‘রোমাঞ্চ’ পত্রিকার একনিষ্ঠ পাঠক। তিনি আমার কাছে লেখা চাইলেন। তাঁর কাছে জানা গেল যে তিনি ছাড়াও আরও কোনো কোনো পাঠক আমার লেখা পড়েছেন এবং পড়তে চান। আমার কাছে তখন কিছু অপ্রকাশিত লেখা ছিল, আমি সেগুলি তাঁকে দিয়ে দিলুম। সুমন্ত সেই লেখাগুলি কোনো কোনো পত্রিকায় প্রকাশ করলেন। নতুন করে আবার আমার লেখনী সচল করতে হল।
এই সময় হঠাৎ আমার কাছে এলেন ‘বুক ফার্ম’-এর কর্ণধার শ্রীশান্তনু ঘোষ। তিনি আমার সমস্ত লেখা বই আকারে প্রকাশ করবার প্রস্তাব দিলেন। আমি তো স্তম্ভিত। প্রথমে না বলেছিলুম। কিন্তু শান্তনু আমার কোনো কথাই শুনতে রাজি তো হলেনই না বরং আমার সমস্ত শর্ত নির্দ্বিধায় মেনে নিলেন। আমার ওপর এমন আস্থা আমাকে অবাক করে দিয়েছিল।
আমার সন্দেহ হয়েছিল যে একটি ছোটো, প্রায় সদ্যোজাত প্রকাশনা সংস্থা আমার মতো একজন স্বল্পপরিচিত লেখকের বই প্রকাশ করতে পারবে কি না। শান্তনুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে একটা কথা বোঝা গেল যে ‘বুক ফার্ম’-এর নানা রকমের পরীক্ষানিরীক্ষায় কোনো আপত্তি তো নেইই, বরং উৎসাহই আছে। এদের কাজের আধুনিকতা, পদ্ধতি, সময়জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, সাহস এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা অন্যান্য প্রকাশকদের থেকে অনেকটাই আলাদা। সবচেয়ে বড়ো কথা এরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পিছপা হয় না। কোথাও হয়তো ভুল করে, কিন্তু অগাধজলে ঝাঁপ দিয়ে কূল খুঁজে পাওয়ার প্রত্যয় এদের আছে। আজ মনে হচ্ছে, এদের ওপরে আস্থা রেখে আমি কিছুমাত্র ভুল করিনি। এতদিন বাদে ‘বুক ফার্ম’ আমার অন্তরের ইচ্ছা সফল করতে যাচ্ছে। আমি এদের সর্বাঙ্গীণ কুশল কামনা করি।
এই প্রসঙ্গে একজনের কথা এখানে বলা বিশেষ প্রয়োজন। তিনি এই বইয়ের চিত্রকর শিল্পী শ্রীদিলীপ দাস। তিনি যে অসাধারণ শিল্প সৃষ্টি করতে পারেন তার প্রমাণ এই বইয়ের প্রত্যেক গল্পেই আছে। যা অন্তরালে রয়ে গেল, তা তাঁর বাঙালির মধ্যে দুর্লভ কর্তব্যনিষ্ঠা, সময়জ্ঞান ও ভদ্র নম্র শান্ত ব্যবহার। আমি তাঁর কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
এই বইটি আমি আমার নাতনিকে উৎসর্গ করেছি। তার কারণ তার ছেলেবেলায় দাদুর কাছে নিত্যনতুন গল্প শোনার নিরন্তর দাবি আমাকে ছোটোদের গল্প লেখায় উৎসাহিত করেছিল। আজ সে অনেক বড়ো হয়ে গেছে, বহুদিন বিদেশে প্রবাসী, অনভ্যাসে বাংলা প্রায় ভুলেই গেছে। কিন্তু আমি জানি সে তার দাদুর লেখা পড়বার জন্য একদিন অবসর সময়ে বাংলা শিখে নেবে এবং আমার সঙ্গে আমার লেখা নিয়ে আলোচনা করবে, তর্ক করবে। অবশ্য, যদি তখনও আমার পায়ের চিহ্ন এই বাটে পড়ে।
মনোজ সেন
Leave a Reply