হ্যারেৎজ্ : বিড়ালের বাঘ হয়ে ওঠার কাহিনি – অভীক মুখোপাধ্যায়, চন্দ্ৰনাথ সেন
প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ২০২০
প্রচ্ছদ স্বর্ণাভ বেরা
প্রকাশক অভিষেক আইচ ও অরিজিৎ ভদ্র দ্য কাফে টেবল
আমার প্রিয়তমা, কোয়েলকে
—অভীক মুখোপাধ্যায়
বাবা আর মা’কে, যাদের জন্য এই পৃথিবীর আলো দেখেছি
—চন্দ্ৰনাথ সেন
একজনের নাম আলাদা ভাবে উল্লেখ না করলে আমাদের পাপ হবে-
ডক্টর মুশতাক হুসেইন
ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্যাল সায়েন্স
এসজিটিবি খালসা কলেজ
ইউনিভার্সিটি অব দিল্লি
.
কথামুখ
‘হ্যারেৎজ’—অদ্ভুত এই নামটাকে বইয়ের প্রচ্ছদে দেখার পরে নিশ্চয়ই অনেক পাঠকবন্ধু গুগলে সার্চ করে দেখেছেন। কী পেয়েছেন সার্চ রেজাল্টে?
‘দ্য ল্যান্ড [অব ইসরায়েল]’।
ওখানে ‘দ্য’ আর ‘ল্যান্ড’ এই শব্দ দুটোর মাঝখানে অলিখিত আরও একটা শব্দকে পড়তে হবে বন্ধুরা— ‘প্রমিসড’… যে ভূমি বা জমির জন্য কথা দেওয়া হয়েছিল— দ্য প্রমিসড ল্যান্ড; দ্য প্রমিসড ল্যান্ড অব ইসরায়েল।
আমরা এই বইতে ইসরায়েল দেশটার বা ইহুদিদের জাতিগত ইতিহাস লিখতে বসিনি। লিখেছি তাদের সংক্ষিপ্ত সামরিক ইতিহাস বা কনসাইজড ডিফেন্স হিস্ট্রি। সম্ভবত বিশ্বের সর্বোচ্চ মেধাসম্পন্ন এই জাতির সামরিক শক্তি নিয়ে লেখালিখি করাটা হাস্যকরও, কারণ তারা মেধায় ব্রাহ্মণ হওয়া সত্ত্বেও সেই গুণটি নিয়ে কথা বলাই হয় না; ইহুদিদের ক্ষাত্রশক্তি নিয়েই বিশ্ববাসী বেশি আলোচনা করে। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দুই-ই সমৃদ্ধ হয়েছে তথা হয়ে চলেছে তাদের জ্ঞানে— যদিও তা অনেক ক্ষেত্রেই স্বীকৃত হয়নি বা হয় না। খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক প্রভু যিশু, ঈশ্বরের পুত্র যিশু, তিনি কিন্তু ইহুদিই ছিলেন। খ্রিস্ট প্রচারিত খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরাই বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় জনগোষ্ঠী। দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠী মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেও ইহুদিদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে, কারণ উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন আব্রাহাম ও ইসমায়েল।
পৃথিবীতে ইহুদিরাই সবথেকে বেশি বার নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। এই বিশ্বের তাবড় তাবড় বিদ্বান, তার্কিক, দার্শনিক, অভিনেতা, বিজ্ঞানীর সঙ্গে জিউস যোগসূত্র মিলবে। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, সিগমন্ড ফ্রয়েড, উডি অ্যালেন থেকে হালফিলের ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ অবধি— প্রতিটা নামের সঙ্গেই ইহুদি রক্তের যোগ পাবেন বন্ধুরা। এমনকী আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভারত থেকে যে কমিউনিস্টরা ইসরায়েলের বিভিন্ন পলিসির ঘোর বিরোধ করে থাকেন, তাঁদের বাইবেল ‘দাস ক্যাপিটাল’টাও লিখেছিলেন ইহুদি রক্তের ধারক-বাহক কার্ল মার্ক্স।
সেই ৩,০০০ বছর আগে নিজেদের দুধ-মধুর দেশ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল এই দুর্দান্ত জাতিটি। সারা বিশ্বে বিচরণ করেছে অনায়াসে। যেখানেই পা রেখেছে, সেখানেই ফলিয়েছে সোনা। ভারতেও এসেছে। মোটামুটি শান্তিপ্রিয় ভূমিকাতেই তাদের দেখা গেছে সব জায়গায়। তবুও নানা বিবাদ ইহুদিদের পিছু ছাড়েনি। বিশেষ করে ইহুদিরা যখন নিজেদের কাঙ্ক্ষিত ভূমিতে ফিরে গিয়ে ১৯৪৮ সালে প্রথম বারের জন্য একটি স্বাধীন ইহুদি-রাষ্ট্র তৈরি করেছে, তখন থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের কট্টর ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর কাছে তারা চোখের বালি হয়ে উঠেছে। আঘাত এসেছে, প্রত্যাঘাত করে ইসরায়েল জবাব দিয়েছে। কেউ পিছু হটে গেছে ভয়ে, কেউ সাময়িক ভাবে কিছু দিন বা কয়েক বছর চুপ থাকার পর আবার আঘাত করেছে। যুদ্ধ চলছে সমানে। এখনও। অক্ষয়, অমর ইহুদিরা সূচাগ্র মেদিনী তো ছাড়েইনি, উলটে দখল নিয়েছে শত্রু শিবিরের। দুর্দান্ত জাতিটি ক্রমশ দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছে।
আমাদের কাছে ইসরায়েলের সামরিক ক্ষমতা আসলে এক বিস্ময়। আমরা দুই বন্ধুই পড়তে ভালোবাসি। ইসরায়েলের এসপিওনাজ, সামরিক ক্ষমতা নিয়ে ছড়ানো ছেটানো কিছু পড়াশোনা দুজনেই করছিলাম। টুকটাক ইংরেজি বইপত্র কিছু পড়াই ছিল, কিন্তু আমরা খুঁজছিলাম বাংলা বই। বোঝেনই, বাংলা ছাড়া অনেক কিছুই হজম হয় না যে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, বাংলাতে কোনো স্ট্যান্ডার্ড বই পাইনি। নেই। আর তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম— ইসরায়েলের সামরিক ইতিহাস নিয়ে একটা বাংলা বই লিখে ফেললে কেমন হয়।
ব্যস, ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে লেগেছে। লিখতে বসে গেলাম। হাজার তোড়জোড়, হাজার পড়াশোনা, রাতজাগা, অসুস্থতা, নিজ নিজ গৃহিণীর বকুনি— সব সহ্য করে বইটা লিখে ফেলাই হল অবশেষে।
এখন প্রশ্ন হল, পাঠক কেন ভারতের সামরিক ইতিহাস ছেড়ে ইসরায়েলের সামরিক ইতিহাস নিয়ে পড়তে যাবেন?
উত্তর একটাই— ভারত ইসরায়েল হতে চলেছে।
আজ্ঞে হ্যাঁ সুধী পাঠক, ঠিকই পড়লেন— ভারত ইসরায়েল হতে চলেছে।
কেন?
কারণ ভারতের রাজনীতি, সমাজনীতি সব কিছু ভারতকে ক্ষাত্রশক্তিতে বলীয়ান একটি রাষ্ট্র হয়ে ওঠার দিকে ত্বরান্বিত করছে, যে শত্রুর ঘরে ঢুকে মারবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে, তাদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেবে এয়ার স্ট্রাইক দিয়ে, এসপিওনাজ সিস্টেমকে সশক্ত করে দুর্বল করে দেবে নিজের প্রতিপক্ষকে।
এছাড়াও প্রচুর মিল দুই দেশের মধ্যে। অনতি অতীত থেকে অযোধ্যাকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়েছে। একবার মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েলের জেরুসালেম শহরটার দিকে তাকাতে অনুরোধ করব আমরা। দুটি ধর্মের বিবাদ একটি নির্দিষ্ট সৌধকে ঘিরে— এই তো?
দেখুন, দু’ জায়গাতেই তা-ই। অযোধ্যায় রামমন্দির-বাবরি মসজিদ, জেরুসালেমে ওয়েস্টার্ন ওয়াল। ভারতে এক দল বলছে অযোধ্যার ওই বিতর্কিত ভূমি শ্রীরামচন্দ্রের জন্মস্থান ছিল, এক দল সেখানে মীর বাঁকির তৈরি করা বাবরি মসজিদের পক্ষ নিয়ে লড়ছে; জেরুসালেমের ওই বিখ্যাত দেওয়ালকে ইহুদিরা তাদের পবিত্র মন্দিরের ভগ্নাবশেষ বলে, আর মুসলমানেরা বলে এখান থেকেই তাদের নবী হজরত মুহম্মদ বুরাক নামক জীবের পিঠে চড়ে জন্নতে যাত্রা করেছিলেন। একটি করে ভূমিখণ্ড, দুটি ধর্মের নাভি সেখানে গাঁথা। দুটো জায়গারই কত মিল! দুই ক্ষেত্রেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিসর। বাদবিবাদ।
ইহুদিরা বিদেশের মাটিতে ছিন্নমূল অবস্থায় দিনের পর দিন মার খেয়েছে। জার্মানরা মেরেছে, রাশিয়ানরা মেরেছে এভাবে লিখতে বসলে তালিকাটা দীর্ঘতর হবে। হলোকাস্টের কথা আমাদের চোখে জল এনেছে। এমন অসাধারণ মেধাবী একটি জাতিকে কীভাবে শেষ করার চক্রান্ত করেছিল তা পড়লে আপনাদের চোখও ভিজে উঠতে বাধ্য বলেই মনে করি আমরা। অনেকটা বাধ্য হয়েই নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ভবিষ্যৎকে রক্ষা করার জন্য বর্তমান ইসরায়েলের স্থাপনা করে তারা। আর তার পর থেকে আজ অবধি (সময়কালের) ইসরায়েলের অস্তিত্বরক্ষার সংগ্রামের কথা লিখেছি আমরা দুই বন্ধুতে মিলে। পাঁচ পাঁচটি ক্ষমতাধর ইসলামিক রাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সদ্যোজাত দেশের অসম যুদ্ধের কথা। এক সকালে তিনটি দেশের বায়ুসেনাকে সমূলে বিনষ্ট করে ছ’ দিনের যুদ্ধে নিজের দেশের ক্ষেত্রফলকে চার গুণ বাড়িয়ে ফেলার অপ্রতিম শৌর্যগাথা। নিজের খেলোয়াড়দের হত্যার বদলা নেওয়ার জন্য দুনিয়ার প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে দুশমনকে নিকেশ করার কাহিনি। ইহুদি জাতির প্রচণ্ড জিজীবিষার কথা।
ইসরায়েলিদের নাগরিক জীবনও কিন্তু বর্মাবৃত। সবসময় শত্রুদেশ কিংবা উগ্রপন্থী হামলার ভয়ে থাকতে হয় তাদের। এই বুঝি সাইরেন বেজে উঠল, এখুনি পড়ি কি মরি করে ছুটে গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে কারো বাড়িতে বা নির্দিষ্ট বাঙ্কারে। ভাবুন, কতটা বিপন্নতার মধ্যে থাকতে হয় এই দেশকে। তারা যে লড়তে লড়তে বিড়াল থেকে বাঘ হয়ে উঠবে এতে আর আশ্চর্যের কী আছে?
একজন কৃষক নিজের সব ফসল কিন্তু একবারে খেয়ে ফেলে না। অল্প কিছুটা পরের চাষের কাজে লাগাবে বলে বীজ হিসাবে রেখে দেয়। ইসরায়েল ১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়ার পর যখন নিজের সবথেকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখ পড়ল, তখন কিন্তু ইহুদিরা ভাবেনি যে তারা এই সংঘর্ষ থেকে নিজেদের অক্ষত অবস্থায় বের করে আনতে পারবে। তারা কী করেছিল বলুন তো? নিজেদের সন্তানদের সুরক্ষিত করেছিল। প্রত্যেক পরিবারের বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে একজন বাচ্চাকে(দের) নিয়ে সুরক্ষিত জায়গায় চলে যায়, আর অপর অভিভাবক মোর্চার সামনে চলে আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মায়েরাই সন্তানকে সুরক্ষিত করার ভার নিয়েছিলেন এবং দেশের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন পিতারা। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে যে মায়েরা নিজেদেরকে দেশরক্ষার জন্য বেশি সক্ষম মনে করেছিলেন, তাঁরা কিন্তু সেই কাজটা করতে পিছপা হননি। সন্তানের দায়িত্ব বাবার হাতে ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন বীরবিক্রমে।
একটি মৌমাছি যেভাবে নিজের চাকের বাইরে একাকী, স্বতন্ত্র এবং স্বকেন্দ্রিক জীবন কল্পনাও করতে পারে না, ঠিক তেমন ভাবেই একজন ইসরায়েলি নিজের সমাজ আর দেশকে ছাড়া নিজের জীবনের কল্পনা করতে পারবে না এবং দেশের হয়ে যে কোনো যুদ্ধের সময় তার মধ্যে আত্মোৎসর্গ করার ভাবটা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে চলে আসে। ইসরায়েলিদের মনে এধরনের আইডিয়ার প্রথম বীজ কিন্তু উপ্ত হয়ে থাকে কিবুটজ্ থেকে।
কিবুটজ্ হল এক ধরনের কমিউন। সেখানে অনেক পরিবার একই সঙ্গে সামূহিক জীবন নির্বাহ করে থাকে। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের ক্ষমতা এবং কৌশল অনুসারে কাজ করে সেখানে, প্রত্যেকটি মানুষ সেখানে অপরিহার্য। কেউ শ্রমিক, কেউ কারিগর, কেউ শিক্ষক, কেউ ডাক্তার। সবার সন্তান একইসঙ্গে বেড়ে ওঠে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভেদাভেদটাকে মুছে ফেলা হয়। উৎপাদনের দৃষ্টিতে কিবুটজ্ একটি স্বাধীন ইউনিটের মতো কাজ করে। ফার্ম চালানো হয়, কারখানার পরিচালনা করা হয়ে থাকে। ইসরায়েলের সামগ্রিক প্রাকৃতিক এবং জনসম্পদের মাত্র ১০%-এরও কম ব্যবহার করে কিবুট-এর মাধ্যমে মোট কৃষি উৎপাদনের ৮০% এবং ঔদ্যোগিক উৎপাদনের ৫০% সৃষ্টি হয়। এটা শুধু ইসরায়েলের অর্থব্যবস্থারই নয়, সামাজিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ডও বটে।
যখন দেশে যুদ্ধ নেই, তখন অসৈনিক জনসংখ্যার ক্ষেত্রে অনুশাসন ও সমর্পণের এমন উৎকৃষ্ট উদাহরণ সম্ভবত আর কোথাও মেলে না। আমরা যত পড়েছি, ততই মনে হয়েছে ইসরায়েলের সৈন্য-গাথা যেন এক রূপকথা, কিন্তু পড়ে বিশ্লেষণ করে আমরাই বলতে বাধ্য হয়েছি—- ওদের সৈন্য সংস্কৃতি আসলে ওদের সমাজ-ব্যবস্থারই প্রতিফলন মাত্র। ইসরায়েলের সামরিক দৃষ্টি সশক্ত হওয়ার কারণ হল তাদের সামাজিক দৃষ্টি সবল। একতা প্রবল! এমনই তাদের সমাজ। এমনই তাদের ফৌজ যে, দেশের ক্ষমতাধারী দল এবং বিরোধী দল দেশের শত্রুর প্রতি একটাই চিন্তাধারা রেখে নিজেদের বাহিনীকে বলে—- রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট!
১৯৪৮ সালের আগের ২,০০০-৩,০০০ বছর দেখলেই বোঝা যায় যে, ইহুদিদের তখনকার ইতিহাসটা আসলে তাদের পরাজয়ের ইতিহাস, পরাভবের কাহিনি। নিজেদের ভিটেমাটি হারিয়ে, দেশ ছেড়ে ইহুদিরা রুটিরুজির তাগিদে ব্যবসার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। মেধাবী ইহুদিরা ব্যাঙ্ক, ফ্যাক্টরির মালিক হয়ে উঠেছিল। তখন তাদের হাতে অগুনতি টাকা। অন্য কিছু দেখতে অভ্যস্ত ছিল না তারা, অন্তত ওই সময়ে তো বটেই। বড় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিল তাদের সব কিছুই। যে দেশেই থেকেছে, সেখানে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে থেকেছে, কেবল নিজের আর নিজের পরিবারের জন্য বেঁচেছে। বিশ্ব তখন ইহুদিদের পরজীবী তকমা দিয়েছে। আর তার ফলে তারা যত না অর্থ উপার্জন করেছে, তার থেকেও বেশি উপার্জন করেছে ঘৃণা। এবং শেষমেশ একদিন এই ক্রমশ পুঞ্জীভূত হতে থাকা ঘৃণা তাদের অস্তিত্ব সংকটের কারণ হয়ে উঠল। স্টিভেন স্পিলবার্গের একটা সিনেমা আছে— ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’। সেখানে একেবারে শেষ দৃশ্যে যখন রেড আর্মি অস্কার শিন্ডলারের ক্যাম্প থেকে ইহুদিদের মুক্তি দিচ্ছে, তখন একজন রাশিয়ান আধিকারিক বলে ওঠে, ‘ইউ অল আর ফ্রি টু গো বাট হোয়্যার উইল ইউ গো? ইউ কান্ট গো টু ইস্ট… দে হেট ইউ দেয়ার। ইফ আই ওয়্যার ইউ, আই ওন্ট গো টু ওয়েস্ট ইদার…
ইসরায়েলিদের সামনে তখন যাওয়ার মতো কোনো জায়গা ছিল না। না পূর্বে, না পশ্চিমে। তারা তখন জেরুসালেমের দিকে চলতে শুরু করে দিল। তাদের লড়াই তখন নিয়তির বিরুদ্ধে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে। দু’ চোখে স্বপ্ন ছাড়া সঙ্গে কোনো অস্ত্র ছিল না, কোনো ক্ষমতাই ছিল না তাদের। একটি স্বাধীন ইহুদি-রাষ্ট্রের মানচিত্র আসলে তাদের হৃদয়ে আঁকা ছিল। তারা বুক থেকে সেই মানচিত্রটাকে মাটিতে নামিয়ে তৈরি করেছিল ‘ইসরায়েল’, যার আক্ষরিক অর্থ হল ‘ঈশ্বরকেও হারিয়ে দেয় যে’— ‘ট্রায়াম্ফ্যান্ট অব গড’! আর এই নতুন দেশ তৈরির দাম চুকিয়েছিল নিজেদের রক্তে। আসলে অসংখ্য খারাপ অভিজ্ঞতাই ইসরায়েলকে আজকের ইসরায়েল করে তুলেছে। হিটলার নামক দানব, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, গ্যাস চেম্বার, দুর্ধর্ষ আরব দেশগুলোর মুহুর্মুহু আক্রমণ, ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসবাদী হানা, ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর, ফাতাহ্, পি এল ও এসবের মধ্যে দিয়ে ইহুদিরা যা কিছু শিখেছিল বা শিখেছে, তা আমরা শিখতে পারি ইসরায়েলের সামরিক ইতিহাস পড়ে।
কাজ যত এগিয়েছে, আমরা ততই বুঝেছি যে একটা বইয়ের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক ইতিহাস, গুপ্তচর সংস্থাগুলোর কাজকে বেঁধে ফেলা কার্যত অসম্ভব। যদি পাঠক চান, তবে এর পরেও এই নিয়ে কাজ করার অবকাশ রয়ে গেল।
অভীক মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সেন
গীতবিতান, ডানকুনি, হুগলী বর্ধমান
.
তথ্যঋণ:
১. ইসরায়েল, আ কনসাইজ হিস্ট্রি অব আ নেশন রিবর্ন, ড্যানিয়েল গার্ডিস।
২. জেরুসালেম, দ্য বায়োগ্রাফি, সাইমন সেবাগ মন্টেফিয়োর।
৩. দ্য স্টোরি অব দ্য জিউস, ফাইন্ডিং দ্য ওয়ার্ডস ওয়ান থাউজ্যান্ড বিসিই-১৪৯২ সিই, সিমন সামা।
৪. দ্য জিউস স্টেট, থিওডোর হার্জেল।
৫. দ্য উইপন উইজার্ডস, হাউ ইসরায়েল বিকেম আ হাই-টেক, মিলিটারি সুপারপাওয়ার, য়াকভ কাট্জ অ্যান্ড আমির বোহবট।
৬. নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
৭. মোসাদ, দ্য গ্রেটেস্ট মিশনস্ অব দ্য ইসরায়েলি সিক্রেট সার্ভিস, মাইকেল বার জোহার, নিসিম মিসাল।
৮. বিইং ইন্ডিয়ান, বিইং ইসরায়েলি; মাইগ্রেশন, এথনিসিটি অ্যান্ড জেন্ডার ইন দ্য জিউয়িশ হোমল্যান্ড, ময়না চাওলা সিং।
৯. মাইন কাম্পফ্, অ্যাডলফ হিটলার।
১০. মোসাদ এক্সোডাস, গ্যাড সিমরন।
১১. জিউস, গড অ্যান্ড হিস্ট্রি, ম্যাক্স আই ডিমন্ট।
১২. রাইজ অ্যান্ড কিল ফার্স্ট, আ সিক্রেট হিস্ট্রি অব ইসরায়েলস্ টার্গেটেড অ্যাসাসিনেশনস্, রনেন বার্গম্যান।
১৩. টুয়েলভ স্টাডিজ অন দ্য মেকিং অব আ নেশন, দ্য বিগিনিং অব ইসরায়েলস হিস্ট্রি, জেরেমিয়াহ হুইপল জেক্স।
১৪. দ্য মোসাদ, সিক্স ল্যান্ডমার্ক মিশনস অব দ্য ইসরায়েলি ইনটেলিজেন্স এজেন্সি, ১৯৬০, ১৯৯০, মার্ক ই. ভার্গো
১৫. গাইডন’স স্পায়েজ, দ্য সিক্রেট হিস্ট্রি অব দ্য মোসাদ, গর্ডন থমাস।
১৬. মৃত্যোর্মা অমৃতম্, নারায়ণ সান্যাল।
১৭. ভেনজেন্স: দ্য ট্রু স্টোরি অব অ্যান ইসরায়েলি কাউন্টার টেররিস্ট টিম, জর্জ জোনাস।
১৮. অপারেশন অচার্ড, ইসরায়েলি মোসাদ, ইসরায়েল’স স্ট্রাইক অন দ্য সিরিয়ান রি-অ্যাক্টর, ড্যান মাগেন।
১৯. ইয়াসির আরাফাত, আ পলিটিক্যাল বায়োগ্রাফি, ব্যারি রুবিন অ্যান্ড জুডিথ কল্প রুবিন।
২০. নো মিশন ইজ ইমপসিবল, মাইকেল বার জোহার, নিসিম মিসাল।
২১. মাই প্রমিসড ল্যান্ড, দ্য ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ট্রাজেডি অব ইসরায়েল, আরি শাবিত।
২২. সিক্স ডেজ অব ওয়র, মাইকেল বি. ওরেন।
২৩. spiegel.de/international/
২৪. aljazeera.com
২৫. jewishvirtuallibrary.org
২৬. haaretz.com
২৭. economictimes.indiatimes.com/news/defence/israel-wins-777-mn, indian-missile-defence-order
Leave a Reply