হে আমার মেয়ে – ড. আলী তানতাবী
ভাষান্তর : মাওলানা মুশাহিদ দেওয়ান
সূচিপত্র
(১) সংশোধনের দরজা তোমার সামনে
(২) তোমার সফলতার দিকে চেয়ে আছি
(৩) তোমার হেফাযত তোমার হাতেই
(৪) তোমার সফলতার দিকে চেয়ে আছি
(৫) পুরুষেরা হচ্ছে ‘নেকড়ে’
(৬) আল্লাহর শপথ! সে মিথ্যুক!
(৭) যত নরম কণ্ঠেই বলুক
(৮) যা থেকে কখনই সে পরিত্রাণ পাবে না
(৯) জালেম সমাজ কখনই তোমাকে ক্ষমা করবে না
(১০) তোমার সম্মান তোমার হাতেই
(১১) রাণী, সম্রাজ্ঞী সকলের ক্ষেত্রে একই কথা
(১২) তোমরা মেয়েদের ভাষা বুঝ
(১৩) তাদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাও
(১৪) এই করুণ অবস্থা একদিনে পরিবর্তন হবে না
(১৫) সহশিক্ষার খারাপ দিকগুলো তুলে ধরো
(১৬) আজ তারা বিকল্পের সন্ধান করছে
(১৭) আমি যুবকদের সম্বোধন করছি না
(১৮) পবিত্র জীবনের সন্ধান দিতে চাই
(১৯) তারা তাকে রেখে দূরে চলে যায়
(২০) তোমার প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক
কিছু কথা
সংশোধনের দরজা তোমার সামনে
হে আমার মেয়ে! আজ আমি চল্লিশের কোঠা পার হয়ে পঞ্চাশের কোঠায় উপনীত এক প্রৌঢ়, যে যৌবনকে বিদায় জানাচ্ছে। এখন আমার নতুন কোন স্বপ্ন বা উচ্চ আকাঙ্খ নেই। আমি অনেক দেশ ও শহর ভ্রমণ করেছি। বহু জাতির কৃষ্টি-কালচারের সাথে পরিচিত হয়েছি। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে অনেক ধারণা অর্জন করেছি। আজ আমার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শোন। কথাগুলো সঠিক ও সুস্পষ্ট। এগুলো আমার বয়স ও অভিজ্ঞতার আলোকেই তোমাকে বলছি। আমি ছাড়া অন্য কেউ তোমাকে এগুলো বলবে না।
আমি অনেক লিখেছি। মিম্বারে ও সমাবেশে দাঁড়িয়ে অনেক ভাষণ দিয়েছি। অনেক নসীহত পেশ করেছি। উত্তম চরিত্র অর্জনের আহ্বান জানিয়েছি। সকল প্রকার অন্যায় কাজ ও অশ্লীলতা বর্জনের ডাক দিয়েছি। নারীদেরকে ঘরে ফিরতে ও কুরআনের সুপ্রসিদ্ধ বিধান পর্দার আবরণে আবৃত হওয়ার আহবান জানিয়েছি। লিখতে লিখতে কলম দুর্বল হয়ে গেছে। কথা বলার সময় মুখে তা আটকে যাচ্ছে। এত কিছু করার পরও আমি মনে করি না যে, আমরা কোন অশ্লীল কাজ সমাজ থেকে দূর করতে পেরেছি।
বেহায়াপনা দিন দিন বেড়েই চলছে। পাপাচারিতা দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। এবং অশ্লীলতা দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। আমার মনে হয় কোন ইসলামি দেশই এই আক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। মিশর, সিরিয়া, তথা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের সীমা পার হয়ে পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ সমগ্র এশিয়ায় এর আক্রমণ বেড়েই চলছে। মহিলারা বের হচ্ছে পর্দাহীন হয়ে, সৌন্দর্যের স্থানগুলো প্রকাশ করে। মুখমন্ডল, বক্ষদেশ ও কেশ উন্মুক্ত করে। আমার ধারণা নসীহত করে আমরা সফল হইনি এবং ভবিষ্যতেও হবো না।
হে আমার কন্যা! তুমি কি জান কেন আমরা সফল হইনি? কেননা, আমরা এখনও গ্রহণযোগ্য পন্থায় নসীহত করতে পারিনি এবং সংশোধনের দরজায় পৌঁছতে পারিনি। হে আমার মেয়ে! সংশোধনের দরজা তোমার সামনে। দরজার চাবিও তোমার হাতে। বদ্ধ তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
.
তোমার সফলতার দিকে চেয়ে আছি
হে আমার মেয়ে! আমরা তোমার দ্বীনি বোনদেরকে আল্লাহর ভয় দেখিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। অতঃপর অবৈধ সম্পর্ক ও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছি। কিন্তু কোন ফল হয়নি। এ বিষয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। বহু বক্তৃতা দেয়া হয়েছে। তাও ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমি ক্লান্ত। যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের ন্যায় ময়দান ছেড়ে বিদায় নিতে যাচ্ছি।
আমরা বিদায় নিয়ে তোমার দ্বীনি বোনদের ইজ্জত-সম্ভ্রম ও সতীত্ব রক্ষার দায়িত্ব তোমার হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি। তোমার বিপদগামী বোনদেরকে উদ্ধার ও সংশোধনের দায়িত্ব তোমার উপরই রেখে দিয়ে তোমার সফলতার দিকে চেয়ে আছি।
.
তোমার হেফাযত তোমার হাতেই
হে আমার মেয়ে! তুমি জেনে রেখো, তোমার হেফাযত তোমার হাতেই। একথা সঠিক যে, পাপের পথে অগ্রসর হওয়াতে পুরুষকেই প্রথম দায়ী করা যায়। নারীগণ কখনই প্রথমে এ পথে অগ্রসর হয় না। তবে নারীদের সম্মতি ব্যতীত কখনই তারা অগ্রসর হতে পারে না। নারীগণ নরম না হলে পুরুষেরা শক্ত হয় না। মহিলারা দরজা খুলে দেয় আর পুরুষেরা ভিতরে প্রবেশ করে।
.
তোমার সফলতার দিকে চেয়ে আছি
হে আমার মেয়ে! তুমি যদি চোরের জন্য ঘরের দরজা খুলে দাও। আর চোর চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করে বল, হে লোকসকল! আমাকে সাহায্য কর। আমাকে সাহায্য কর। তাহলে তোমার চেচামেচি করা কি ঠিক হবে? তোমার কান্নাকাটিতে কি লাভ হবে? তোমার সাহায্যের জন্য কেউ কি এগিয়ে আসবে?
.
পুরুষেরা হচ্ছে নেকড়ে
হে আমার মেয়ে! যদি তুমি জানতে পারতে যে, পুরুষেরা হচ্ছে। ‘নেকড়ে’, আর তুমি হচ্ছ ‘ভেড়া’, তাহলে কিন্তু তুমি নেকড়ের আক্রমণ থেকে ভেড়ার ন্যায় পলায়ন করতে। তুমি যদি জানতে পারতে যে, সকল পুরুষই ‘চোর’ তাহলে ‘কৃপণের’ ন্যায় তুমি তোমার সকল মূল্যবান সম্পদ পুরুষদের থেকে হেফাযত করার জন্য সিন্দুকে লুকিয়ে রাখতে। মনে রেখো, নেকড়ে কিন্তু ভেড়ার গোশত ছাড়া অন্য কিছু চায় না।
আর পুরুষ তোমার কাছ থেকে যা ছিনিয়ে নিতে চায় তা কিন্তু ভেড়ার গোশতের চেয়ে অনেক মূল্যবান। তা যদি তোমার কাছ থেকে চলে যায়, তাহলে জেনে রাখবে তা হারিয়ে তোমার বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল। সে তোমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটি নষ্ট করতে চায়, যার মধ্যে নিহিত রয়েছে তোমার সম্মান, যা নিয়ে তুমি গর্ব কর এবং যা নিয়ে তুমি বেঁচে থাকতে চাও। নেকড়ে কর্তৃক ভেড়ার গোশত ভক্ষণের চেয়ে পুরুষ কর্তৃক নারীর সতিত্ব হরণ শতগুণ নিশৃংস ও বেদনাদায়ক। সে তোমার সতিত্বই ভক্ষণ করতে চায়।
.
আল্লাহর শপথ! সে মিথ্যুক!
হে আমার মেয়ে! আল্লাহর শপথ! কোন পুরুষ যখন কোন যুবতী মহিলার দিকে দৃষ্টি দেয় তখন সে মহিলাটিকে বস্ত্রহীন অবস্থায় কল্পনা করে। এছাড়া সে অন্য কিছু চিন্তা করে না। তোমাকে কোন যুবক যদি বলে, সে তোমার উত্তমচরিত্রে মুগ্ধ, তোমার আচার-ব্যবহারে আকৃষ্ট এবং সে কেবল তোমার সাথে একজন বন্ধুর মতই আচরণ করে এবং সে হিসাবেই তোমার সাথে কথা বলতে চায়; তাহলে তুমি তা বিশ্বাস করো না। আল্লাহর শপথ! সে মিথ্যুক!
.
যত নরম কণ্ঠেই বলুক
হে আমার মেয়ে! যুবকেরা তোমাদের আড়ালে যে সমস্ত কথা বলে তা যদি তোমরা শুনতে, তাহলে এক ভীষণ ভীতিকর বিষয় জানতে পারতে। কোন যুবক তোমার সাথে যে কথাই বলুক, যতই হাসুক, যত নরম কণ্ঠেই বলুক ও যত কোমল শব্দই ব্যবহার করুক, সেটি তার আসল চেহারা নয়; বরং সেটি তার অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ভূমিকা ও ফাঁদ ব্যতীত অন্য কিছু নয়।
.
যা থেকে কখনই সে পরিত্রাণ পাবে না
হে আমার মেয়ে! সে যদি তোমাকে তার ষড়যন্ত্রের জালে আটকাতে পারে তাহলে কি হবে? কি হবে তোমার অবস্থা? তোমার কি তা জানা আছে? একটু চিন্তা কর। কোন নারী যদি এমন কোন দুষ্ট পুরুষের কবলে পড়ে যায়, তখন সে হয়ত সেই পুরুষের সাথে মিলে কয়েক মিনিট কল্পিত স্বাদ উপভোগ করবে। তারপর কি হবে? তুমি কি তা জান? পরক্ষণই সে তাকে ভুলে যাবে। সে তাকে দ্বিতীয়বার পাওয়ার আশাপোষণ করবে।
হয়ত কয়েকবারের জন্য তাকে পেলে পেতেও পারে, তবে স্বামী হিসাবে তার সাথে চিরদিন বসবাস করার জন্যে এবং স্বীয় যৌবন পার করার জন্যে নয়। সে অচিরেই তাকে ভুলে যাবে। এটিই সত্য। কিন্তু সেই মহিলাটি চির দিন সেই স্বল্প সময় উপভোগের জ্বালা ভোগ করতে থাকবে, যা কখনও শেষ হবে না। এও হতে পারে যে, সে তার পেটে এমন কলঙ্ক রেখে যাবে, যা থেকে কখনই সে পরিত্রাণ পাবে না চির দিন তার কপালে হতাশার ছাপ থাকবে, চেহারায় দুশ্চিন্তার ছায়া পড়বে। সে তাকে ছেড়ে দিয়ে আরেকটি শিকার খুঁজতে থাকবে এবং নতুন নতুন সতীদের সতীত্ব ও সম্ভ্রম হরণ করার অনুসন্ধানে বের হবে।
.
জালেম সমাজ কখনই তোমাকে ক্ষমা করবে না
হে আমার মেয়ে! এভাবে একটি যুবক অগণিত নারীকে নষ্ট করলেও আমাদের জালেম সমাজ তাকে একদিন ক্ষমা করে দিবে। সমাজ বলবে, একটি যুবক পথহারা ছিল, এখন সে সুপথে ফিরে এসেছে। এই অজুহাতে সে হয়ত সমাজের কাছে গৃহীত হবে এবং সকলেই তাকে গ্রহণ করে নিবে। কিন্তু তুমি অপমানিত, লাঞ্ছিত হয়ে চিরদিন পড়ে থাকবে। আজীবন তোমার জীবনে কালিমা লেগে থাকবে। কোন দিন তা মুছে যাবে না। আমাদের জালেম সমাজ কখনই তোমাকে ক্ষমা করবে না।
.
তোমার সম্মান তোমার হাতেই
হে আমার মেয়ে! তোমার সম্মান তোমার হাতেই রেখে দিলাম এবং তোমার ইজ্জত-আব্রু ও মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব তোমার উপরই ছেড়ে দিলাম। সুতরাং তোমার বোনদেরকে উপদেশ দাও। বিপদগামীদের সংশোধন কর এবং সুপথে ফিরিয়ে আন।
.
রাণী, সম্রাজ্ঞী সকলের ক্ষেত্রে একই কথা
হে আমার মেয়ে! তুমি তাদের বল, হে আমার বোন! পথ চলার সময় কোন পুরুষ যদি তোমার দিকে তাকিয়ে দেখে তবে তুমি তার থেকে বিমুখ হয়ে যাও এবং তোমার চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেল। এরপরও যদি তার কাছ থেকে সন্দেহজনক কোন আচরণ অনুভব কর কিংবা সে তোমার গায়ে হাত দিতে চায় অথবা কথার মাধ্যমে তোমাকে বিরক্ত করতে উদ্যত হয় তাহলে তোমার পা থেকে জুতা খুলে তার মাথায় আঘাত কর।
তুমি যদি একাজটি করতে পার। তাহলে দেখবে পথের সকলেই তোমার পক্ষ নিবে, তোমাকেই সাহায্য করবে। সে আর কখনও তোমার। মত অন্য কোন নারীর উপর অসৎ দৃষ্টি দিবে না। সে যদি সত্যিই তোমাকে পছন্দ করে থাকে, তাহলে তোমার এই আচরণে তার হুঁশ ফিরবে, তাওবা করবে এবং তোমার সাথে হালাল সম্পর্ক [বিবাহ] গড়ার জন্যে বৈধ পন্থা অবলম্বনের দিকে অগ্রসর হবে।
পার্থিব সম্মান, প্রতিপাত্য, ক্ষমতা-দাপটে একজন মেয়ে যত উঁচু স্তরেই পৌঁছে যাক না কেন, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছাড়া পূর্ণ সৌভাগ্য ও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। বিবাহের ফলে সে হয়ত সতী স্ত্রী, সম্মানিত মা, গৃহিণী সবই হবে। রাণী, সম্রাজ্ঞী সকলের ক্ষেত্রে একই কথা। মিসর ও সিরিয়ার দু’জন প্রসিদ্ধ মহিলা সাহিত্যিকের পরিচয় আমি জানি। ধন-সম্পদ, সাহিত্য সম্মান সবই তারা পেয়েছে। কিন্তু বিবাহসম্মদ হারিয়েছে। তারা উন্মাদের ন্যায় জীবন যাপন করছে। তাদের নাম বলতে আমাকে বাধ্য কর না। তারা খুবই প্রসিদ্ধ। বিবাহ একজন মহিলার চূড়ান্ত লক্ষ্য।
যদিও সে সংসদের সদস্য, নেতার সঙ্গী হোক না কেন? অসতী নারীকে কেউ বিবাহ করে না। এখন যে যুবক তার সাথে প্রবঞ্চণা করে ধোঁকা দেয় সেও তাকে ছেড়ে চলে যায় এবং অন্য কোন সতী নারীকে বিবাহ করে। কেননা, সেও চায় না যে, তার গৃহকত্রী, তার সন্তানের মা একজন পতিতা হোক। বখাটে যুবক যখন তার প্রবৃত্তি চরিতার্থে কোন নষ্ট মেয়েকে কাছে না পায়, যে শয়তানী ধর্মের কথিত বিবাহ (লিভটুগেদার) বসবে; তখনই সে ইসলামি পদ্ধতিতে হয়তো কাউকে বিবাহ করতে চাইবে।
.
তোমরা মেয়েদের ভাষা বুঝ
হে আমার মেয়ে! তোমাদের কারণেই আজকে বিবাহের বাজারে মন্দাভাব। তোমাদের মত মেয়েরা যদি পতিতা না হত তাহলে বিবাহ বাজারও মন্দা হত না এবং পাপের বাজার চালু হত না। এজন্য কেন সতী নারীদেরকে এই মহামারী দূর করতে উদ্বুদ্ধ করবে না। তোমরা তো আমাদের থেকে এক্ষেত্রে বেশী যোগ্য ও সক্ষম। কেননা, তোমরা মেয়েদের ভাষা বুঝ। তাদের হৃদয়ে প্রবেশ করতে পার। তোমাদের ন্যায় সৎ, ভদ্র, ধার্মিক মেয়ে ছাড়া
অন্য কেউ এই ফেতনা দূর করতে পারবে না। সিরিয়ার অনেক পরিবারে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে আছে। কিন্তু তারা স্বামী পাচ্ছে না। কারণ, যুবকরা বৈধ স্ত্রীর স্থলে পতিতাদের সহজে পেয়ে যায়। ফলে বিবাহের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। আমার ধারণা অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা।
.
তাদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাও
হে আমার মেয়ে! তোমাদের থেকে সাহিত্যিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষিকার একটি দল তৈরী কর, যারা তোমার বিভ্রান্ত বোনদের সুপথে ফিরিয়ে আনবে। তাদেরকে আল্লাহর। ভয় দেখাও। যদি তারা ভয় না পায় তবে বাস্তবতা। বুঝাও। তাদেরকে এভাবে বল, হে আমার বোন! তুমি আজকে সুন্দরী কিশোরী, তাই যুবক তোমার প্রতি আকর্ষণ দেখায়। তোমার চারপাশে ঘুরতে থাকে। কিন্তু এই সৌন্দর্য, তারুণ্য কি সর্বদা থাকবে? জগতের কিছুই তো নতুন থাকে না।
সুতরাং যখন কুঁজো বুড়ি হয়ে যাবে তখন কি হবে? ভেবে দেখেছ? সেদিন কে তোমার দেখাশোনা করবে? তুমি কি জান সেদিন কে। এই বুড়িকে দেখা শোনা করবে? তার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনীরা। তখন এই বুড়িই পরিবারের সম্রাজ্ঞী সেজে বসবে। আর পর্দা সতিতের অলংকার। অন্যরা…তোমরাই ভাল জান তার কি হবে? এখন তোমরাই বল যে, এই সামান্য ভোগ
সেই বেদনাদায়ক কষ্টের সমপর্যায় কি হতে পারে? এরূপ ক্ষণিকের ভোগ-জীবন ক্রয় করতে চাও সেই লাঞ্ছনাকর জীবনের বিনিময়ে। এ ধরণের কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করছি না। তোমার হত দরিদ্র অবলা বোনের পথ নির্দেশনায় তোমরা উদাসীন হয়ো না। তাদের যদি আলো দেখাতে নাই পার তাহলে অন্তত নতুন প্রজন্মের অবলা কিশোরীকে এদের পথে চলা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা কর।
.
এই করুণ অবস্থা একদিনে পরিবর্তন হবে না
হে আমার মেয়ে! আমি তোমাদের থেকে এটা চাই না যে, তোমরা এক লাফে মুসলিম মেয়ের অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলবে। না, এটা অসম্ভব। হঠাৎ উন্নতি স্থায়ী হয় না। বরং তোমরা মুসলিম মেয়েদের ধাপে ধাপে কল্যাণের দিকে নিয়ে যাবে। যেভাবে তারা পাপের পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে।
প্রথমে তারা চুল ছোট করেছে, কাপড় সংক্ষিপ্ত করেছে। হিজাব পাতলা করেছে। এই করুণ অবস্থায় পৌঁছতে দীর্ঘ দিন লেগে গেছে। পরিবারের সম্ভ্রান্ত পুরুষও তা বুঝতে পারে নি। অশ্লীল পত্রিকা, মিডিয়া এতে উৎসাহ দিয়েছে। আর বখাটে যুবকেরা এ দৃশ্য দেখে আনন্দ উল্লাস করেছে। অথচ মুসলিম নারীসমাজ এত নিকৃষ্ট হয়েছে যা ইসলাম সমর্থন করে না, ইসলাম কেন খ্রিস্টান অগ্নিপূজকরাও সমর্থন করে না।
এমন কি নিরীহ পশুও তা দেখে লজ্জা পায়। দু’টি মোরগ যদি একটি মুরগীর পিছনে লেগে যায়, তাহলে তারা আত্মসম্মান রক্ষার্থে পরস্পর যুদ্ধ করে। কিন্তু হায়! মুসলিম উম্মাহর কি অবস্থা!! বৈরুত, ইস্কান্দার শহরের সমুদ্র সৈকতে অনেক মুসলমান পুরুষ আছে। তারা আপন স্ত্রীদেরকে বেপর্দা পরপুরুষ দেখলেও আত্মসম্মান বোধ করে না। পর পুরুষের সামনে তারা অর্ধ নগ্ন হয়ে বের হয়।
বিভিন্ন ক্লাব, নৈশ পার্টিতে অনেক মুসলিম তাদের মুসলিমা স্ত্রীদের পরপুরুষের সাথে নাচতে দেয়। পরস্পর আলিঙ্গন করে, গালে চুমু দেয়, শরীরে শুয়ে পড়ে। কিন্তু তা-ও কেউ অপছন্দ করে না। মুসলিম ইউনির্ভাসিটিগুলোতে সহশিক্ষার বদৌলতে (?) যুবকরা বেপর্দা যুবতী শিক্ষার্থীর পাশে বসে। বেলেল্লাপনা চালিয়ে যায়। কিন্তু তা-ও মুসলিম পিতা-মাতা অপছন্দ করে না। হায়! আফসোস! আমরা আজ কত নীচু হয়েছি!! হে আমার মেয়ে! মুসলিম মেয়েদের এই করুণ।
অবস্থা একদিনে পরিবর্তন হবে না। এক লাফে তারা পূর্বের সেই আসল অবস্থায় ফিরে যাবে না; বরং আমরা সেভাবেই তাদেরকে ধীরে ধীরে পূর্বের অবস্থায় ফেরত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব, যেভাবে পর্যায়ক্রমে তারা বর্তমানের করুণ ও দুঃখজনক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। আমাদের সামনে পথ অনেক দীর্ঘ। পথ যদি দীর্ঘ হয়, আর তার বিকল্প সংক্ষিপ্ত অন্য কোন পথ না থাকলে, যে ব্যক্তি দীর্ঘ পথের অভিযোগ করে যাত্রা শুরু করবে না, সে কখনও তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারবে না।
.
সহশিক্ষার খারাপ দিকগুলো তুলে ধরো
হে আমার মেয়ে! তুমি প্রথমে মুসলিম নারীদেরকে পুরুষদের সাথে খোলামেলা উঠা-বসা, চলাফেরা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বেপর্দা হয়ে সহশিক্ষায় প্রবেশ করতে নিষেধ কর। সেই সাথে সহশিক্ষার খারাপ দিকগুলো তুলে ধরো। তুমি তাদেরকে মুখ ঢেকে রাখতে বল। যদিও ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে আমি মুখ ঢাকাকে ওয়াজিব মনে করি না। মুখ খুলে রাস্তায় চলার চেয়ে নির্জনে মুখ ঢেকে পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ করা অধিক বিপদজনক। স্বামীর অনুপস্থিতিতে
স্বামীর ঘরে স্বামীর বন্ধুর সামনে বসে গল্প করা, আপায়্যন করা আর পাপের দরজা খুলে দেওয়া একই কথা। ভার্সিটিতে সহপাঠীর সাথে করমর্দন করা অন্যায়, তার সাথে অবিরাম কথা ও মোবাইলে আলাপচারিতা চালিয়ে যাওয়া ক্ষতিকর। একসাথে বিদ্যালয়ে যাওয়া অনুচিত। বান্ধবীর সাথে গৃহশিক্ষকের রুমে একত্রিত হওয়া অপরাধ।
.
আজ তারা বিকল্পের সন্ধান করছে
হে আমার মেয়ে! তুমি এ বিষয়টি ভুলে যেয়ো না যে, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে নারী হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমার সহপাঠীকে পুরুষ বানিয়েছেন। তোমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই এমন উপাদান যুক্ত করা হয়েছে, যার কারণে তোমরা একে অপরের প্রতি ঝুঁকে পড়। সুতরাং তোমাদের কেউ এমনকি পৃথিবীর সকল মানুষ মিলে চেষ্টা করলেও আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন আনতে পারবে না।
তারা কখনই নারী-পুরুষের ব্যবধান উঠিয়ে দিয়ে উভয়কে সমান করতে পারবে না এবং নারী-পুরুষের পরস্পরের দিকে আকর্ষণকে ঠেকাতে পারবে না। যারা সভ্যতার নামে নারী-পুরুষের মধ্যকার ব্যবধান উঠিয়ে দিতে চায় এবং উভয় শ্রেণীর জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে কর্মক্ষেত্রে মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায় তারা মিথুক। কারণ, এর মাধ্যমে তারা নিজেদের মনের চাহিদা মেটাতে চায় এবং অন্যের স্ত্রী-কন্যাকে পাশে বসিয়ে নারীদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চায়। সেই সাথে আরও কিছু করার সুযোগ পেলে তাও করতে চায়।
কিন্তু এ কথাটি এখনও তারা খোলাসা করে বলার সাহস পাচ্ছে না। সুতরাং তারা নারীদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা, সভ্যতা ও উন্নয়নের যে সুর তুলছে তা নিছক সস্তা বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। এ সমস্ত কথার পিছনে তাহাজ্জব-তামাদুন, সভ্যতা-উন্নতি অর্জন আদৌ তাদের উদ্দেশ্য নয়। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মুসলিম সমাজকে তারা বোকা বানাচ্ছে। তারা যে মিথুক তার আরেকটি কারণ হল, যেই ইউরোপ-আমেরিকাকে তারা নিজেদের আদর্শ মনে করে এবং যাদেরকে তারা। সভ্যতা, সংস্কৃতি ও উন্নতির পথ প্রদর্শক মনে করে মূলত তারা প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে নি। তারা যেটিকে সভ্যতা ও সংস্কৃতি মনে করে মূলত সেটি সভ্যতা ও
সংস্কৃতি নয়। তাদের ভাষায় সত্য তা নয়, যা মিথ্যার বিরদ্ধাচারণ করে। বরং সত্য, সভ্যতা হচ্ছে তা যা প্যারিস, লন্ডন, নিউইয়র্ক থেকে এসেছে। তাদের ধারণায় নাচ, গান, বেহায়াপনা, উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ হওয়া, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষায় অংশ নেওয়া, নারীদের খেলার মাঠে নামা এবং সমুদ্র সৈকতে গিয়ে বস্ত্রহীন হয়ে গোসল করাই সভ্যতা ও সংস্কৃতির মানদণ্ড।
আর প্রাচ্যের দেশ তথা মুসলিমদের মসজিদ, মাদরাসা, মদীনা, দামেস্ক এবং আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ইসলামী প্রতিষ্ঠানে যে উন্নত চরিত্র, সুশিক্ষা, নারী-পুরুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন পবিত্রতার প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাদের ধারণায় তা মুসলিমদের পশ্চাদমুখী হওয়ার এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ঘুরে আসা বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, সেখানে বসবাসকারী অনেক পরিবার নারী-পুরুষের খোলামেলা চলাফেরাতে সন্তুষ্ট নয় এবং এটি তাদেরকে শান্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আজ তারা বিকল্পের সন্ধান করছে। ইউরোপ-আমেরিকায় এমন অসংখ্য পিতা-মাতা আছে, যারা তাদের যুবতী মেয়েদেরকে যুবক পুরুষদের সাথে চলাফেরা করতে ও মিশতে দেয় না। তারা তাদের সন্তানদেরকে সিনেমায় যেতে দেয় না। শুধু তাই নয়; তারা তাদের ঘরে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনামুক্ত চ্যানেল ব্যতীত অন্য কিছু ঢকায় না। অথচ পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আজ অধিকাংশ মুসলিম দেশের মুসলিমদের ঘর এগুলো থেকে মুক্ত নয়।
এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর কথা হচ্ছে, সহশিক্ষা প্রবল যৌন আকাঙ্খ কে দমন করে। চরিত্র সংশোধন করে এবং দেহ থেকে বাড়তি যৌন চাহিদাকে দূর করে দেয়। আমি তাদের জবাবে বলতে চাই যে, আপনারা কি রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখেন না? যেই রাশিয়া কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না, কোন পাদ্রীর উপদেশে কর্ণপাত করে না, তারা কি সহশিক্ষা ও নারী-পুরুষের সহ অবস্থানের খারাপ পরিণামের শিকার হয়ে তা থেকে ফেরত আসার ঘোষণা দেয় নি? আমেরিকা প্রসঙ্গে আসি।
পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে প্রকাশ হচ্ছে যে, অবিবাহিত ছাত্রীদের মধ্যে গর্ভবতীর সংখ্যা সেখানে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি তাদের অন্যতম একটি বিরাট সমস্যা। আপনারা কি মুসলিম দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এমন সমস্যা দেখতে চান? বর্তমান সময়ে আমেরিকা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যৌন শিক্ষা নামে একটি বিষয় সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত করে তা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পাঠ দান করছে। আমি মনে করি এর মাধ্যমে তারা আগুনের মধ্যে পেট্টোল ঢালছে। অল্প বয়ষ্ক নির্দোষ বালিকার মধ্যে লুকায়িত যৌন স্পহাকেই তারা জাগিয়ে তুলছে। স্কুল পর্যায়ের ছাত্রীদেরকে তারা কনডম ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং একজন পুরুষ নির্জনে একজন মহিলার সাথে কি করে তারা উঠতি বয়সের বালিকাদের তাও শিক্ষা দিচ্ছে। আমাদের মধ্যে বসবাসকারী এক ধরণের মানুষ নামধারী শয়তান আমাদেরকেও তাদের কর্মকাণ্ড অনুসরণ করার সবক দিচ্ছে।
.
আমি যুবকদের সম্বোধন করছি না
হে আমার মেয়ে! আমি যুবকদের সম্বোধন করছি না। এও আশা করছি না। যে, যুবকরা আমার কথা অবনত মস্তকে মেনে নিবে। আমি জানি তারা আমার কথা প্রত্যাখ্যান করবে এবং আমাকে বোকা বলবে। কারণ, তারা মনে করবে যে, আমি তাদেরকে যৌবনের স্বাদ উপভোগ করতে বাঁধা দিচ্ছি এবং তাদেরকে ভোগের সমুদ্রে সাঁতার কাটতে মানা করছি।
তাই আমি তোমাদের সম্বোধন করছি হে আমার মেয়েরা! হে আমার ভদ্র, সতী মুসলিম মেয়েরা! কেননা, তোমরাই হায়েনার ছবলে পড়। তোমাদের ইজ্জত সম্মান মাটিতে মিশে যায়। সুতরাং সতর্ক থাক। ইবলিসী ফাঁদে পড়ে নিজের জীবন ধ্বংস কর না। তোমরা তাদের কথায় কর্ণপাত করো না। কারণ, এ সমস্ত শয়তানদের অধিকাংশের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার নেই।
তারা কেবল তোমাদেরকে উপভোগ করতে চায়। কিন্তু আমি! আমি কয়েকজন মেয়ের গর্বিত পিতা। তাই মুসলিম মেয়েদের রক্ষা করার। দায়িত্ব আমার নিজের মেয়েকে রক্ষা করার মত। আমার নিজের মেয়ের জন্য যে কল্যাণ চাই তোমাদের জন্যও সেই কল্যাণ চাই।
.
পবিত্র জীবনের সন্ধান দিতে চাই
হে আমার মেয়ে! তুমি তোমার বোনদেরকে বল, আমি তোমাদেরকে যে উপদেশ দিচ্ছি, তার বিনিময়ে আমি কিছুই চাই না। শুধু তোমাদেরকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করতে চাই, তোমাদের কল্যাণ চাই, পবিত্র জীবনের সন্ধান দিতে চাই।
.
তারা তাকে রেখে দূরে চলে যায়
হে আমার মেয়ে! এদের কবলে পড়ে কোন নারী যদি তার অমূল্য সম্পদ হারায়, তার মর্যাদা নষ্ট হয় এবং সম্রম ও সতীত্ব চলে যায়, তাহলে তার হারানো সম্পদ দুনিয়ার কেউ পুনরায় ফেরত দিতে পারবে না।
অথচ যত দিন সেই নারীর শরীরে যৌবন অবশিষ্ট ছিল ততদিন পাপীষ্টরা তার সৌন্দর্যের চারপাশে ঘুর ঘুর করেছে এবং তার প্রশংসা করেছে। যৌবন চলে যাওয়ার সাথে সাথেই কুকুর যেমন মৃত জন্তুর মাংশ ভক্ষণ করে হাড্ডিগুলো ফেলে রেখে চলে যায়, ঠিক তেমনি তারা তাকে রেখে দূরে চলে যায়।
.
তোমার প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক
হে আমার মেয়ে! এই ছিল তোমার প্রতি আমার সংক্ষিপ্ত উপদেশ। তোমাকে যা বললাম, তা-ই সত্য। এটি ছাড়া কেউ যদি তোমাকে অন্য কথা বলে, তুমি তা বিশ্বাস করো না। জেনে রেখো! তোমার হাতেই সংশোধনের চাবিকাঠি। আমাদের হাতে নয়। তুমি চাইলে নিজেকে, তোমার বোনদেরকে এবং সমগ্র জাতিকে সংশোধন করতে পার। তোমার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।
– তোমার পিতা
আলী তানতাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)
.
কিছু কথা
নিঃসন্দেহে হিজাব স্কার্ফ থেকে অধিক আবৃতকারক। এটাই মর্যাদার সর্বোন্নত চুড়া এবং বিপদজ্জনক পরিস্থিতি থেকে অধিক সুরক্ষাদায়ক। যেমন,
বাইরে বেরুনো,
আড্ডা বা দুঃসঙ্গতা,
বা সতীত্ব হননকারী কোনো দুর্ঘটনা
পর্দা পালন এবং পবিত্রতা অবলম্বন যদি বাস্তবেই পশ্চাদগামিতা বা আধুনিকতা বিবর্জিত কাজ হয়, যেসব মুসলিম। দেশে পর্দা অবহেলিত, অশ্লীলতা আর দেহ প্রদর্শনের ছড়াছড়ি, কেন তবে। সেসব মুসলিম দেশ উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জন করতে পারছে না?
হে বোন আমার, হে ইসলামের কন্যা, পর্দা কর! কখনো ঘোমটা ফেলে দিয়ো না! লাঞ্ছিত হয়ে যাবে। আরবি হিজাব শব্দের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ ঘেঁটে দেখলে তুমি বুঝতে পারবে। হিজাব হলো পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করা; আর হিজাবের উদ্দেশ্য হলো। একজন মুসলিম নারীর সার্বিক নিরাপত্তা। নিশ্চিত করা এবং তার পবিত্রতা ও নিষ্কলুষতা রক্ষা করা। এখন তুমিই ভেবে দেখো, তোমার পোশাক কি সেই লক্ষ্য পূরণ করছে?
পর্দা করতে তোমার যদি লজ্জা লাগে তবে পুরুষদের খারাপ ও লোলুপ দৃষ্টি যখন তোমার সস্তা দেহের ওপর পড়ে, তখন কোথায় থাকে তোমার লজ্জা, কোথায় থাকে আত্মমর্যাদাবোধ! পরিষ্কার বলেছে তারা : ইসলাম ধ্বংস করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো, মুসলিম নারীদের বেপর্দায় ঘর থেকে বের করা। হে নারী, তুমি কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছ, একবার ভেবেছ কি?!!
নবী করীম (সাঃ) বলেন, মাহরাম ছাড়া কোনো নারী। সফরে যেতে পারবে না। মাহরাম। ব্যতীত কোনো পুরুষ তার সঙ্গে। সাক্ষাৎ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রাসুল, আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে। অমুক অমুক যুদ্ধে অংশ নিতে চাই আর আমার স্ত্রী হজে যেতে চায়? নবীজি বললেন, তুমি বরং তার সঙ্গে হজে যাও![বুখারী : ১৮৬২]
মাহরাম : পিতা, পুত্র, ভাই…প্রমুখ। নারীদের দেখা, নারীদের সামনে। যাওয়া, নির্জনে তাদের সঙ্গে কথা বলা এবং তাদের সঙ্গে ভ্রমণ করা যাদের জন্য জায়েয। এটা সবাই জানি, যৌবনের স্বভাবের ওপরই মানুষের বার্ধক্য কাটে একজন নারী যদি অর্ধনগ্ন হয়ে দেহ প্রদর্শন করে বেড়ে ওঠে, তবে নিশ্চিতভাবে শিশুদের ওপরও এর প্রভাব পড়ে কারণ শিশুর এ কচি বয়সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ বয়সে সে যা দেখে তা-ই অনুসরণ করতে থাকে।
শিশুর ব্যক্তিত্বের গঠন হয় এ বয়সে। সব বাবা-মা-ই একমত এ ব্যাপারে।আত্মমর্যাদার সুরক্ষা দেয় হিজাব যার ওপর একজন সুস্থ সবল পুরুষের মননশীলতা তৈরী; যে পুরুষ চায় না, তার স্ত্রী ও বোনের দিকে কুদৃষ্টির দুষ্টু তীর এসে পড়ক!! নারীদের আত্মমর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে কত যুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছে ইসলাম ও জাহিলিয়াতযুগে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই!
Leave a Reply