হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা – সুকুমারী ভট্টাচার্য
হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা – সুকুমারী ভট্টাচার্য
প্রথম প্রকাশ, জুন ১৯৯৭
মুখবন্ধ
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর থেকে বহু সমাবেশে ওই দুষ্কৃতির বিরুদ্ধে তথা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলতে হয়েছে। বক্তব্য লিখে নিয়ে গিয়ে পড়তে ভরসা পাই বলে অধিকাংশ বক্তৃতাই লিখে রাখা ছিল। অনেকগুলিই কিছু কিছু পত্রিকায় ছাপা হয়েছে এবং সেই কারণেই প্রবন্ধগুলির মধ্যে কিছু তথ্যগত পুনরুক্তি রয়ে গেছে। এগুলি সরিয়ে দেওয়া যেতে পারত। কিন্তু মনে হল, বিদ্বেষসূচক তথ্য দু’বেলা বহুলপরিমাণে কর্ণকুহরে যখন প্রবেশ করছে, তখন তার বিরুদ্ধে কিছু সুস্থ তথ্যের পুনরুক্তিতে তেমন ক্ষতি হবে না।
‘বিজেপি ও হিন্দুরাষ্ট্র’ নামের দীর্ঘ প্রবন্ধটি দেবু দত্তগুপ্তের আগ্রহে লেখা, ‘সমন্বয়’ শারদসংখ্যায় (১৯৯৬) প্রকাশিত। প্রগতি লেখক শিল্পী সংগঠনের মুখপত্রে ছাপা হয় ‘রামচরিত্রের পুনর্মূল্যায়ন’, প্রবন্ধটি পূর্বেই জনসভায় পাঠ করা হয়েছিল। ‘যোগসূত্র’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ভারতবর্ষে ধর্মের ভূমিকা’, ‘সংভরণ’ পত্রিকার অনুরোধে লেখা ‘ভারতবর্ষে আগন্তুক মুসলমান’ (মে, ১৯৯৩)। ‘ন মানুষাচ্ছেষ্ঠতরং হি কিঞ্চিৎ’ প্রবন্ধটি কাদের জন্য লেখা এখন আর মনে নেই। ‘প্রাচীন ভারতে ইতিহাসচেতনা’ প্রকাশিত হয় ‘সমন্বয়’ শারদ ১৯৯৩ সংখ্যায়। ‘আজকের নারী কি বেদপাঠ করতে পারে?’ও প্রকাশিত হয় সমন্বয়-এ (মার্চ, ১৯৯৪), ‘সাম্প্রদায়িকতা’ রচনাটি ‘অর্কিড’ পত্রিকার জন্যে, তারিখ হারিয়ে গেছে; এমনই হারিয়ে গেছে ‘সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ’ লেখাটির সম্বন্ধে তথ্য। ‘সাম্প্রদায়িকতা: প্রাচীন ভারতে’ ‘সমন্বয়’ পত্রিকার অনুরোধে লেখা (মার্চ, ১৯৯৩)। বর্তমান ভারতে ধর্মের প্রাসঙ্গিকতা’ লেখা ‘বসুমতী’ পত্রিকার জন্যে (শারদ, ১৪০০)। ‘ভারতবর্ষে আগন্তুক মুসলমান’ ছাপা হয় ‘সংভরণ’ পত্রিকায় (মে, বিশেষ সংখ্যা, ১৯৯৪)। প্রথম প্রবন্ধ, ‘ভূমিকা: ভারতবর্ষে সমন্বয়বাদী ধর্মধারা’ ও শেষ প্রবন্ধ ‘বাংলার বিশিষ্ট সাধনা’ বিশেষ করে এ গ্রন্থের জন্যেই রচিত। সাম্প্রদায়িকতার নানা দিক— সব দিক নয় নিশ্চয়ই— ও আনুষঙ্গিক কিছু কিছু প্রসঙ্গই রচনাগুলির বক্তব্য।
স্বভাবতই এ সব প্রবন্ধের মুখ্য প্রেরণা আছে নিজের অন্তর থেকেই। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ব্যাপারটা অনেকের মতো আমাকেও দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে নতুন করে ভাবায়। ফলে বহু পুরনো প্রত্যয় অবয়ব গ্রহণ করে তথ্যের কাঠামোয়, এবং নতুন কিছু তাৎক্ষণিক প্রসঙ্গও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে মনোযোগ দাবি করে, লিখিয়ে নেয় কিছু নতুন লেখা।
প্রকাশের ব্যাপারে বিশেষ ঋণ রইল কথা সাহিত্যিক সমীর রক্ষিতের কাছে, তাঁরই আগ্রহে ও উদ্যোগে ‘দীপ প্রকাশন’-এর সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। তাঁরা প্রকাশ করবার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসায় গ্রন্থটি পৌঁছতে পারল পাঠকের কাছে; প্রকাশক শংকর মণ্ডলকে এ জন্যে ধন্যবাদ জানাই। লেখার নানা পর্বে অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছেন ও উৎসাহ দিয়েছেন, কৃতজ্ঞতা রইল তাঁদের উদ্দেশে।
নানা ভাবে আজ দেশের বিশেষ দুর্দিন, তার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা-নাগিনীর বিষাক্ত নিঃশ্বাসে দেশের বাতাস বিষে ভারী হয়ে উঠেছে। ‘হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা’কেই বিশেষ করে চিনি বলেই সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে কিছু চিন্তা দেশের মানুষের সামনে উপস্থিত করছি এই বিশ্বাসে যে, এখনও বহু সুস্থমনা মানুষ দানবের সঙ্গে সংগ্রামের জন্যে ঘরে ঘরে প্রস্তুত হচ্ছেন। এ-বই যদি তাঁদের হাতে কিছুমাত্র শক্তি জোগায় তবেই এ প্রয়াস সার্থক বলে মনে করব।
সুকুমারী ভট্টাচার্য
Farida
জুবায়ের আলমের শব্দযাত্রা লেখক সংঘ বইটা দেওয়া যাবে কী?