হারিয়ে যাওয়া খুনিরা – ১ / দেবারতি মুখোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি ২০১৯
এই বই দিলাম অগ্রজপ্রতিম
শ্রীঋজু গাঙ্গুলিকে
.
লেখকের কথা
বাংলা সাহিত্যে মাঝেমধ্যে True Crime genre নিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কাজ হলেও সেভাবে মাতামাতি কোনোদিন হয়নি। বাংলায় কাল্পনিক অপরাধকাহিনিই বেশি পাঠকের মন কেড়ে থাকে। বরং ইদানীংকালে টেলিভিশন বা অন্যান্য অডিয়ো—ভিসুয়াল মাধ্যমে True Crime বেশি নজর কাড়ছে।
বিশ্বসাহিত্যে কিন্তু Literature—এর এই বিশেষ True Crime ধারা যথেষ্ট জনপ্রিয়। এই ধরনের লেখায় লেখক অতীতে ঘটে যাওয়া অপরাধের কোনো সত্যঘটনাকে কাহিনি আকারে পেশ করেন এবং তার পটভূমি, অপরাধীর মনস্তত্ত্ব এবং তার কার্যকলাপকে নাট্যাকারে বর্ণনা করে থাকেন, যাতে রচনাটি পাঠকের মনে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর হিসেবে ধরা দেয়।
বিশ্বসাহিত্যে True Crime—এর ইতিহাস বেশ পুরোনো। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটেনের সিংহাসনে যখন ষষ্ঠ এডওয়ার্ড, তখন সেই সময়ে ঘটা নৃশংস নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডগুলোকে কাহিনি আকারে লিখে প্যামফ্লেট হিসেবে প্রকাশ করা হত। কিনতেন মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তরা। অপরাধীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা এই প্যামফ্লেটগুলো সমাজে অপরাধ বাড়াতে পারে, এই বিতর্ক সমান্তরালে চললেও এই প্যামফ্লেটগুলোর চাহিদা ছিল প্রায় আকাশছোঁয়া, প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় উনিশ শতক পর্যন্ত।
উইলিয়াম রকহিড নামে সেইসময় এক দুঁদে আইনজীবী ছিলেন, তিনি অবশ্য ইংল্যান্ডের নন, ভদ্রলোক ছিলেন স্কটিশ। তিনি ১৮৮৯ সাল থেকে প্রায় ছয় দশক টানা তৎকালীন সাড়াজাগানো মামলাগুলো নিয়ে লিখেছিলেন Classic Crimes—এ।
আর কয়েক বছর পর এগিয়ে এল আমেরিকানরাও। এডমুন্ড পিয়ারসন লিখলেন ‘Studies in Murder’—এর মতো বিখ্যাত কয়েকটি রচনা।
এইভাবে এদিক—ওদিক কিছু বিচ্ছিন্ন লেখা হলেও আধুনিক সাহিত্যে True Crime genre—কে দিশা দেখালেন ট্রুম্যান ক্যাপোটে। ‘Truth is stranger than fiction’ এই প্রবাদকে সত্যি করে দিলেন তিনি। সত্যঘটনা দিয়েও যে শিরদাঁড়া কাঁপানো উপন্যাস লেখা যায়, তা তিনি দেখালেন তাঁর ১৯৬৫ সালে লেখা ‘Cold Blood’ উপন্যাসে।
এইভাবেই নন—ফিকশনের এই ধারা পাঠকমনে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছিল।
কিন্তু যতই পাঠকের কাছে মনোলোভা হোক, এই genre বরাবরই একশ্রেণির মানুষের কাছে ঋণাত্মক ভাবমূর্তি নিয়ে অবস্থান করেছে। Jack Miles—এর মতো সাহিত্যিকও একাধিকবার বলেছেন এই ধরনের লেখা সমাজে অপরাধী বাড়ায়, শুধু তাই নয় সাধারণ মানুষের মনেও ভীতি ও হতাশা সঞ্চার করে।
আগেই বলেছি, সংখ্যায় কম হলেও বাংলাতেও এই নিয়ে কাজ হয়েছে। লিখেছেন শ্রীপান্থ, চিরঞ্জীব সেনের মতো শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিকরা।
সেই ধারা অনুসরণ করেই আমি এই গ্রন্থে সত্যঘটনার ওপর ভিত্তি করে কল্পনার তুলিতে লিপিবদ্ধ করেছি বারোটি হত্যাকাণ্ড।
এই বারোটি হত্যাকাণ্ডের বৈশিষ্ট্য এই যে, তারা প্রত্যেকে অপরের চেয়ে স্বতন্ত্র। কোনো হত্যা মামলা দেড়শো বছরের পুরোনো, কোনোটি আশি বছরের, কোনোটি—বা পঞ্চাশ। কোনোটিতে ধরা পড়েছে ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষের দেশীয় মহারাজাদের বিলাসী অত্যাচারী মনোভাব, কোনোটায় আবার তখনকার নারীদের অবস্থা। সেইসময়ের সমাজব্যবস্থা, সাধারণ মানুষ ও মামলার বিবরণ আমি যতটা সম্ভব বিশদে ও তথ্য আহরণ করে লেখার চেষ্টা করেছি। এই তথ্যসংগ্রহের জন্য আমি আন্তরিকভাবে ঋণী কলকাতায় স্থিত ন্যাশনাল লাইব্রেরির archives—এর কাছে। গ্রন্থের প্রয়োজনে বিভিন্ন ফোটোগ্রাফ দেওয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগই নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ই—লাইব্রেরির রিপোজিটরি থেকে। ফোটোগ্রাফের স্বত্ব সংশ্লিষ্ট আলোকচিত্রীদের। ফোটোগ্রাফের স্বত্ব প্রকাশক ও লেখক দাবি করে না।
এটি আমার লেখা প্রথম নন—ফিকশন, তাই পাঠকের প্রতিক্রিয়ার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ
দেবারতি মুখোপাধ্যায়
Leave a Reply