হাত ছুঁয়ে-ছুঁয়ে দিয়েছি সব (অণুকবিতা গ্রন্থ) – কোয়েল তালুকদার
প্রকাশকাল – এপ্রিল -২০২৪
উৎসর্গ –
বহু স্মৃতি বিজড়িত কবি জসীমউদ্দিন হলের ৪২৬ নং কক্ষের আমার বরাদ্দকৃত সিটের উত্তরাধিকার হয়েছিল এক তরুণ। একই খাটে ঘুমিয়েছিও দুজন বছর অধীক সময়।
সেই তরুণ এখন মস্তবড়ো সরকারি আমলা।
শাহ মোহাম্মদ নাসিম – কে।
১.
যে পথ দিয়ে সে চলে গেল, সেই পথ দিয়েই আর একজন চলে এল।
পথ একই। সম্পর্ক একই।
শুধু মানুষ ভিন্ন।
২.
কুসুমপুরের সোঁদা মাটিতেই অস্তিত্বহীন হবে দেহের।
চেয়ে দেখার মতো চোখ থাকবে না তখন —
দেখা হবে না নীল আকাশ আর অজস্র নক্ষত্র,
মাটির মাধুরিতে মিশে যাব, বুঝব না কোনও আলো অন্ধকার।
৩.
আমারও একটি নদী আছে, নাম যমুনা। কাশবনের ঝাড়ে ছেয়ে গেছে হয়ত বালুচর।
তোমার সাথে দেখা করব অপূর্ব কোনো এক বিকেলে। যদিও তুমি এখন শীর্ণতোয়া।
জল রেখো বুকে, স্নান করতে আসব।
৪.
অনেক দুঃখ নিয়ে থাকি। কতো বিষাদ আর বিষণ্ণতায় মন ঢেকে থাকে। তবুও ভালো আছি — তুমি কাছে আছো।
৫.
কী বেদনা লুকিয়ে রাখি অন্তরে
কী যাতনা পুষে রাখি গোপনে।
দিবা নিশিতে ভরে থাকে বিষণ্নতা, অবসাদ নিয়ে করি জীবন যাপন।
ইচ্ছা হলে ছড়িয়ে দিও মাধুরীমাখা ভালোবাসা,
বড়ই কাঙ্গাল হয়ে উঠি সময়ে অসময়ে।
৬.
পরমেশ্বরী, তুমি আছ আমার ভূবনে
আঁধারের উপর আলো জ্বেলে।
কত রাত্রিতে কত নক্ষত্র আভায়
করেছ তুমি দান তোমার সকল কুসুমসুধা
পরশ-কম্পিত প্রাণে।
আমি ক্ষণিক নহি, তুমি নহ ক্ষণিকা —
তোমার মাধুরী ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর বাতাসে
তুমি রবে জনমে জনমে পরজনমে,
সে কথা আমার মন জানে।
৭.
তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে,
কথা আছে তোমার চোখের সঙ্গে আমার চোখের পাতার,
তোমার ঠোঁটের সঙ্গে আমার ঠোটের
আশ্লেষের,
তোমার হৃদয়ের সঙ্গে আমার হৃৎরক্তকণিকার
তোমার নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমার দীর্ঘশ্বাসের…
৮.
তোমার সকল অস্তিত্ব আমার মাঝে উঞ্চতায় ধরা দেয় বারবার
তোমার উষ্ণতার উত্তাপে দেহমন জ্বলে পুড়ে হয় সব ছারখার
তুমি ভস্ম হও, আমাকেও ভস্ম করো , হয়ে যাই প্রজ্জ্বলিত অঙ্গার
তুমি শুচি হও, শুচি হয় আমার দেহ, সুরে ভরে ওঠে যেন কোমলগান্ধার।
৯.
ঘরের চালে ঝরছে হেমন্তের শীত।
নারকেলের গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় চাঁদ।
তুমি হেনা পুষ্পিত হাত বাড়ালে, আর —
জ্যোৎস্না ধরতে চায় আরেক দিগবালিকা।
এ রাতে আকাশেরও
প্রেমিক হতে ইচছা পোষণ করে।
১০.
জীবন অনিত্য, পদ্মপাতায় জল।
আমাকে বৃথা রাঙিও না, সব রং ধুয়ে যাবে। বরং রাখো আমায় তোমার রঙের পাত্রে। দেখো সেখানে আমি কেমন সবুজে সবুজ, নীলিমায় নীল।
১১.
শারীরিক সম্পর্কের ভিতর শরীরের আনন্দ এবং মনের আনন্দ, এই দুটোই থাকতে হয়। এর একটি না থাকলে মনে হয় দুটোই নেই।
১২.
এত নির্জনতা ভালো লাগে না
এত নৈঃশব্দ্য হাতড়িয়ে দূরের আকাশে চেয়ে দেখতেও ভালো লাগে না।
এত ভালোবাসে তবু প্রাণ চায় –
সে যেন আমাকে আরো বেশি ভালোবাসে।
১৩.
যদি কখনও ফিরে না আসি। সন্ধ্যার আকাশে যদি একটি তারা না জ্বলে, যদি আর গন্ধ না বিলায় সন্ধ্যামালতীর ঝাড়।
তখনও কি তুমি নির্ঘুমে প্রদীপ জ্বেলে অপেক্ষা করবে আমারই জন্যে ? হয়ত করবে, হয়ত করবে না।
১৪.
আমি তোমাকে ভালোবাসি কি-না, এর প্রমাণ তোমাকে আমি কীভাবে দেবো? আমি তোমাকে ভালবাসি কি-না, সে কথার প্রমাণ তুমিই ভালো দিতে পারবে।
১৫.
রাতের মায়াকে অন্ধকারে বিলীন করে দিতে নেই। কোনও বিনিদ্র চোখ যদি আঁধারে কাঁদে তা দেখা যায় না। তাই তাকে খেয়াল করে রাখতে হয় ভোরের আলো পর্যন্ত।
১৬.
দীঘি থেকে প্রতিদিন জল তুলি । দীঘির জল আমার হয়। কিন্তু দীঘি জানে আমি কখনোই দীঘির নই।
১৭
তুমি ভালোবাসা দাও বুকের গভীর থেকে। আমি গ্রহণ করার জন্য করতল পেতে রাখি,
তোমার বুকের বাহিরে।
১৮.
আমি নিঃশ্বাস নেই তোমার শরীর থেকে ছুঁয়ে আসা বাতাস থেকে। আমি প্রশ্বাস রেখে যাই তোমার নিঃশ্বাসের বাতাসে।
১৯.
আমি যা রেখে যাব, খুঁজলে দেখতে পাবে অসীম শূন্যতা সেখানে। একসময়ে যেখানে ভালোবাসা পরিপূর্ণ ছিল। তখন তুমি তা দেখতে পেতে না।
২০.
তুমি নেই, তৃষ্ণা যত ক্রন্দনের,
তুমি নেই, অনন্ত মায়ামর্মরধ্বনি বাজে বাতাসে।
২১.
আঁধার নেমে এসেছে পৃথিবীতে, জোনাকীরা জ্বালিয়েছে সব আলো
একে একে জ্বলে উঠেছে সব তারা–
অরূন্ধতী,স্বাতি, ধ্রবতারা।
নয়ন মেলে দেখ আমাকে আর একবার
ঘুমিয়ে পড়ার আগে সব চুম্বনগুলো দিয়ে দাও যত পারো যেখানে,
যদি আর ঘুম না ভাঙ্গে কাল সকাল বেলায়।
২২.
নির্জন পথবেশ্যা ভোর থেকে শিশিরে ভিজে, রোদ্দুরে শুকিয়ে যায় তার হেমন্ত গন্ধ শাড়ি
তারও প্রতিক্ষা আছে, পাশে দিয়ে হেঁটে যায় নির্মাণ শ্রমিক, যদি বলে সে — চলো ঐ ঝোপের আড়ালে
শয্যা পাতো শিশির ভেজা ঘাসের উপর।
২৩.
চন্দ্রিমা উদ্যানে আজ চাঁদ ওঠেনি,
সপ্তপদি পাতার ফাঁক দিয়ে দুপুরের রোদ্দুর পড়বে তোমার মুখে,
এলমেল হাওয়ায় উড়বে চুল,
অসতর্কে খসে পড়বে বুক থেকে মখমলের ওড়না। একটি দুরন্ত গিরগিটি লুকাবে চকিতে লতা গুল্মে।
ঘাসফুলের গন্ধে উন্মূখ হব দুজন, কত মধুরিমা প্রেম সেখানে …’
২৪.
যার অভিমান করবার কেউ নাই। রাগ দেখাবার কেউ নাই। আবদার চাওয়ার কেউ নাই। সেই হলো সবচেয়ে নিঃসঙ্গতম একজন মানুষ। ধরে নিতে হবে, সে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বসে আছে।
২৫.
তোমার কাছে প্রেম চাই তোমার কাছে সুখ
মুছে দাও যাতনা যত মুছে দাও মলিন মুখ
নয়ন খুলে দেখতে চাই দেখতে চাই আলো
তোমাকেই সারা জনম বাসিতে চাই ভালো।
২৬.
নক্ষত্রের দিকে উড়তে থাকি আলবাট্রস পাখির মতো ,
ডানার পালকগুলো ছিঁড়ে পড়ে যায়, কী যে ক্লান্তি !
তখন আর পৌঁছতে পারি না গন্তব্যে…. কিন্তু আমাদের দেখা হবে ঠিকই, জ্যোতির্ময় অন্য আরেক ভুবনে,
অন্য কোনও গ্রহের ছায়া পথে।
২৭.
যেখানেই যাই যত দূরেই যাই
যাই না কোনও অন্তরীক্ষে —
কিংবা পড়ে থাকি পৃথিবীর ‘পরে।
একটি মুখের দিকেই চেয়ে থাকি
তার মুখের নিঝুম ছায়াপাত এসে পড়ে
আমারই মুখের উপরে।
২৮.
সে : মনটা ভালো লাগছে না, কেমন যেন হাহাকার লাগছে।
আমি: চলো, বারান্দায় গিয়ে একটু দাঁড়াই। রাতের তারাময় আকাশ দেখি। ঐখানে সুন্দর একটা জগৎ আছে! যাবে ওখানে?
সে : নিয়ে চলো আমাকে। কোনো দিন আর ওখান থেকে ফিরে আসব না।
২৯.
পথে প্রান্তরে দিগন্তে কোথাও ভালোবাসা নেই। এই শহরও আজ বেদনার ভারে ভারাক্রান্ত।
তুমি চোখ মেলে দেখো প্রিয়অপ্রিয় ঢাকা শহর। কোথায় কার চোখে আছে জল!
৩০.
কেউ বলেনি আমাদের কথা
কোনও উপাখ্যানেও নেই আমাদের কাহিনি
আমরা হতে পারিনি কোনও কিংবদন্তী-
এই শহরও জানে না কোনও কথা
শুধু জীবনের পাতাগুলো ছিঁড়ে গেছে ।
হেমন্ত ভোরে শিউলি ঝরে যায়
চুমোগুলো উড়ে যায়
বসন্তে বাতাসে শুনব গান পথে পথে।
৩১.
হঠাৎই কখনও আমার মুখের উপর ছায়া ফেলে প্রতিবিম্বতে দেখো তোমার মুখ।
আর আমি দেখি, শত ঝরনার জল —
যা করুণাধারায় তোমার চোখ থেকে ঝরে পড়ে।
৩২.
কিছু সময় আসে ভালোবাসা উন্মাতাল হয়
নম্র বুকের উপত্যাকায় মেলে রাখি চোখ
মদিরার মতো তার শরীর থেকে অচেনা গন্ধ ভেসে আসে
স্বপ্ন ভেঙ্গে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়
শরীর থেকে শরীরে হয় লেনদেন
বেহিসাবি চাওয়া পাওয়া পূর্ণতা পায়
দেহ নিবিড়ে তৈরি হয় এক প্রগাঢ় আলোড়ন….
৩৩.
নিভিয়ে দিওনা দীপ
আঁধার করো না এই মণিময় পৃথিবী!
তুমি চলে গেলে কোথায় পাব মণিরত্নম!
কেমনে আঁকব তোমার মুখের জলছবি,
সেই আবির কোথায়?
আমাকে স্বপ্ন দেখাতে পারে, সেই ঘুমও আসবে না আর।
৩৪.
রাজপথের জনারণ্য থেকে যাকে পেয়ে রেখে দিয়েছিলাম বুকের ভিতরে
সেই একদিন হারিয়ে গেল রাত্রির আকাশে অনেক তারার অন্তঃপুরে।
৩৫.
যখন এই পৃথিবীকে ভালো লাগছিল না আর, যখন চলে যেতে ইচ্ছা করছিল পৃথিবী ছেড়ে। ঠিক তখনই তোমার ভালোবাসা পেলাম।
আর তখনই কী না আমার চলে যাবার সময় হলো।
৩৬.
কবিতা নদীর মতো, নদী নারীর মতো, নারী কবিতার মতো।
কবিতা, নদী ও নারী – তিনজনই এক ও সমার্থক।
৩৭.
হিম আঙুলের স্পর্শে শিলীভূত করতে চাই তোমার হৃদয়।
প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, মৃত্তিকার অতল থেকে উত্থিত সকল অগ্নুৎপাত ধপ করে নিভে যাবে।
৩৮.
ভালোবাসা জৈব, ভালোবাসা যৌন, শরীর না থাকলে কিছু্ই থাকে না ভালোবাসায়। প্রেম কখনই এই দেহকে অতিক্রম করতে পারে নাই।
আবার উল্টোও আছে —
ভালোবাসা কামগন্ধহীন, কেবলই নিজেকে বিলিয়ে দেয় পরিবর্তে নেয় না কিছুই। দুষ্প্রাপ্য আমাজান লিলির মতো মনোলোভা। এমন নিষ্কাম প্রেম, শুধু দু’হাত ভরে দিয়ে যায়।
একটি বেগ, আরেকটি আবেগ।
৩৯.
যে প্রেম কথা বলে না, চিৎকার করে না,
আশা করে না। অপ্রকাশিত থাকে।
অপেক্ষা করতে করতে জীবন ফুরিয়ে যায় , তবু বলে না — ভালোবাসি।
এমন প্রেম আহম্মকেরা কেন যে করে, কেন যে তারা দুঃখ দূর্দশায় জড়ায়।
৪০.
জীবনের অনেক পৃষ্ঠাই জীর্ণ পুরাতন হয়ে গেছে।
আমি ছিঁড়ে ফেলি সেইসব পাতা। ছেঁড়া পাতাগুলো তার হাতে দিয়ে বলি — নিয়ে নাও। প্রদীপ জ্বালিয়ে ধরো। পুড়ে ফেলো।
কী হবে এইসব রেখে। এই সব পাতায় যে জীবনের গ্লানি আর ব্যর্থতার কথা লেখা আছে।
৪১.
যেখানে ভালোবাসা নেই, টান নেই, উদ্বেগ নেই। যখন কেউ আর অপেক্ষা করে না। তখন তার কাছে আর ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না।
৪২.
এই রাত্রিতে শিশির ঝরছে অন্তহীন
আজ ভাসিয়ে দাও
তোমার হৃদয়ের আমন্ত্রণে আমাকে নাও হে নিশীথিনী।
এই জল, এই অন্ধকার, এই নক্ষত্র বীথিকে —
আকুল করে তোলো,
দেহকে স্নাত করো ক্ষণকাল।
৪৩.
চলতে চলতে পথে ক্লান্তিতে যখন আর
চলতে পারি না,
তখন কোথা থেকে তুমি এসে হাতটি ধরো —
বলো, থেমে যেও না।
ক্ষুদ্র প্রাণের ঘাসফড়িং, প্রজাপতি উড়ে
ফুলে ফুলে পত্রপল্লবে —
ধরে আছি আমাদের হাত, আমরাও চলি ওদের মতো আনন্দে প্রফুল্লে।
৪৪.
যদি কোনো রাত্রির মধ্যাহ্নে
চন্দ্রকিরণতলে দাঁড়িয়ে কেউ ললাটে চুম্বন দিত!
জোছনাধারা বইত ধীরে —
কুয়াশা-নিবিড় নির্জনতায় চলে যেতাম
বাঁশ ঝাড়ের ছায়া মর্মর পথের উপর…
বলতাম,
নাও তুমি আমার অনন্ত ভালোবাসা।
৪৫.
প্রিয় মানুষকে ভালোবাসি গোপনে। তার প্রতি মায়া করি লুকিয়ে। বুঝতে দিই না তাকে ভালোবাসার অসীমতা।
কারণ, আমি যখন থাকব না, সে তখন সইতে পারবে না আমার দেওয়া মায়াময় অভিজ্ঞান ও আমার শূন্যতা।
৪৬.
কেউ কেউ কোনও কারণ ছাড়া ভালোবাসে
আবার, কোনও কারণ ছাড়া ঘৃণাও করে।
যখন ভালোবাসা থাকে না
তখনই হৃদয় শূন্য করে —-
তখনই সে শূন্যস্থানে ঘৃণা এসে পূর্ণ করে।
আমাদের বেলায় ব্যাপারটি ভিন্ন —–
আমরা একে অপরে এত ভালোবাসি যে,
কোনও ঘৃণা আসার সুযোগই পায় না।
৪৭.
জীবন পেয়েছিলাম ক্রন্দন ধ্বনিতে,
জীবন চলে যাবে আঁখি কোণে অশ্রু কণা ফেলে রেখে,
মাঝখানের সময়টুকু দুঃখের এবং আনন্দের।
আসুন আমরা ঐ আনন্দটুকুই উপভোগ করি। দুঃখেরটুকু নয়।
সবাইকে নতুন বছরের অভিবাদন।
৪৮.
তুমি নেই জীবনে,
অথচ তুমি আছ ছায়ার মতোন মায়ার মতোন আমারই জীবনে জীবনে।
৪৯.
যাকে আমি খুঁজে মরি আলোতে,
তাকে আমি দেখতে পাই –
লোহিত রক্তের আবরণে ঢাকা হৃদপিণ্ডের অন্ধকারে।
৫০.
রাত নামে শহরে
আঁধার নামে তার সঙ্গে আজও
পূর্ণ চন্দ্ররাতে
তুমি কি এখনও সজো ?
রাতের এই নিরালে
কত ভালবাসাই যে বাসতে ইচ্ছা হয়
চাঁদের ঐ আড়ালে।
৫১.
যখন তোমার মন খারাপ থাকবে, যখন বিষাদ ছুঁয়ে থাকবে তোমার চোখ মুখ।
কেউ পাশে না থাকুক, তোমার আঁধার রাতে স্বপ্নগুলো দূর আকাশে তারা হয়ে জ্বলুক।
৫২.
এই দুঃখময় জগতে যা কিছু সুন্দর সে তুমি,
সে তোমার প্রেম। জন্ম মৃত্যুর কালচক্রে সেই প্রাপ্তিকেও একদিন হারাতে হবে।
৫৩.
তুমি রবে না
আমি রবো না
রবে না এই সময়।
শুধু রবে আমাদের পায়ের চিহ্ন
যেখান দিয়ে হেঁটে চলে গেছি।
কোনও কথা থাকবে না
শুধু গল্প থাকবে –
পূর্ণিমানিশীথের কোনও এক দেবযানীর স্বপ্নের ভিতর।
৫৪.
তুমি তুলে দিয়েছিলে হাতে ভালোবাসবার ভার
তোমাকে ভালোবেসে আজ আমি নির্ভার,
অপার ভালোবাসা বুকে যার
কেমনে ফিরাই তারে সেই দুঃসাধ্য আছে কী আমার?
৫৫.
কেউ একজন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলছে – তুমি ঘুমাও। যে রাতটি তুমি এখন পার করছ, এটি একটি অনন্ত রাত। তুমি কেবল স্বপ্নই দেখতে পাবে। যে স্বপ্ন দেখা কোনও দিন শেষ হবে না।
৫৬.
তোমার চোখে স্বপ্ন ছিল। পূর্ণিমা রাতের ছায়া ছিল। সন্ধ্যা মালতীর শুভ্রতা ছিল। সারারাত শিশির ঝরে এখানে। এখানেই যত ক্ষেদ। জীবনের যত গল্প বলাও এইখানেই। মৃত্যুর ছায়াও এই চোখে দেখতে পাই।
৫৭.
নদীও কখনো সাপের মতো শুয়ে থাকে,
সেও যৌবনবতী হয়, কাঁপে তার দুকূল থিরথির,
দূর থেকে গর্জন শুনি,
মনে হয় সে প্রহরিণী প্রেমিকা
কতদিন ধরে বেপথু হয়ে চলছে,
তার স্তন যুগলে রুপালি বালির দাগ
জঙ্ঘায় অনিঃসৃত জলধারা —
চলতে চলতে
ঢেউ ভাঙতে ভাঙতে
সে কোনো অচিন পুরুষের দয়িতা হয়ে যায়।
৫৮.
তোমাদের জন্য লিখেছি অনেক গল্প কবিতা।
এখন বেলা শেষ হয়ে এসেছে।
ওগো বন্ধু —
আর চেওনা, আর যদি কিছু দিতে না পারি।
বীণায় অস্তমিত সন্ধ্যার সুর বাজছে
আমাকে সেই সুর শুনতে দাও।
৫৯.
শরীর মন যেমনই থাক, দূরন্ত চাঁদের রাত্রিতে আমাদের অন্তরে আনন্দের হিল্লোল বহিয়া যায়। ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। জ্যোৎস্নায় ভিজতে ভিজতে আমরা চলে যাই মহুয়া বনে।
৬০.
কপাটের ওপাশে কেউ একজন তার নাম লিখে গেছে ভেজা শিশিরের অক্ষরে। হয়ত সে বলতে চেয়েছিল — ‘খোলো খোলো দ্বার, রাখিয়ো না আর, বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে। ‘
৬১.
কাল আমার পুরোনো এই বাড়িটায় একটি দোয়েল নেমে এসেছিল ঝাঁঝা দুপুরে,
সে ডানা ঝাপটালো, পালক ফেলল, ঘুরে ঘুরে দেখল আঙ্গিনাটা।
ভালো লেগেছিল তার নরম পালক, পিপাসিত চঞ্চু, ভৈরবী রাগের মতো শিস।
কে রজনীগন্ধার লজ্জাহীন গোপন সুবাস ছড়িয়েছিল ! ভালো লেগেছিল তার রাতের বেলার বুভুক্ষু গন্ধ নিতে,
ভালো লেগেছিল তাকে পুণ্য জল ধারায় ভিজিয়ে দিতে, পৃথিবীর নির্জনে কুঁচি কুঁচি করে ছিঁড়ে ফেলতে পাপড়ি।
কে অমৃত জলের প্রস্রবণে ভেসেছিল , কে দিয়েছিল প্রথম প্রস্তাব দ্বিধা উপেক্ষা করে, তা জানবে কী করে মূর্খ দোয়েল, আর অপ্রেয়সী এক রজনীগন্ধা!
৬২.
দূরে বহুদূরে চঞ্চল মেঘের মাঝে আকাশ ছাড়িয়ে
ভেসে যাও। ব্যাপ্তিও ছড়াও ঐ দূরালোকে।
আমি গভীর গহনে আবর্তিত হই একাকী ভূবন মাঝে। তুমি যতদূরেই যাও, আমার ভূবনেই তুমি ব্যাপ্ত হয়ে আছ।
৬৩.
মেয়ে তুমি ভুল প্রেমিকের প্রেমে পড়েছ।
পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আকাশ ছুঁতে গিয়ে
এখন তুমি গিরিখাদে।
মেয়ে তুমি মৃত্তিকার উপর দাঁড়াও, প্রেমিকা হও ঘাসের, আর বুনোফুলের।
৬৪.
তোমাকে সাথে নিয়ে
যে সন্ধ্যা দেখি
যে রাত দেখি
বিমুগ্ধ প্রণয়ের যে কাতরতা দেখি
চোখের উপর চোখ রেখে বুঝতে পারি–
এই ক্লান্তির শহরে আমাদের সব প্রেমই অম্লান।
৬৫.
যে চলে যেতে চায় সে চলে যাক, দেখতেও চাই না তার ছায়া
যে চলে যায় সে সব নিয়ে যায়, নিয়ে যেতে পারে না শুধু মায়া।
৬৬.
কাউকে ছেড়ে চলে আসার সময় পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না, এতে করে মায়ায় থমকে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন।
৬৭.
‘প্রেমের মরা জলে ডোবে না।’ জানিনা সে কেমন জল, কেমন প্রেম!
তবে ‘যোগাযোগ কমলে প্রেম মরে যায়’।
আমার দেবযানীকে দেখ—
‘যত বেশি করে অভিমান, তত বাড়ে তাঁর প্রেম।’
মরে তো না-ই প্রেমের আগুন লকলকিয়ে ওঠে।
‘প্রেম কভু নাহি কমে, বাড়ে বারেবারে, টানেটানে একাকার– মিলে যায় দুটি প্রাণ।’
৬৮.
আমার কাজতো শেষ। থাকার কি দরকার।
আর অপেক্ষাই করব কার জন্যে ?
এখানে হৃদয় ভাঙ্গে
এখানে হৃদয় বদলায়-
তার চেয়ে চলে যাই। বিদায় !
৬৯.
তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করলেই চোখ বন্ধ করে রাখি। চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই, তুমি আমার কথা মতো নীল শাড়ি পরে হাঁটছো বারান্দায়। চোখ রেখেছ নীলে। যেন তুমি খুঁজছ আমাকেই।
যখন চোখ খুলি, তখন দেখি অন্য কিছু। অন্য মানুষ, অন্য আকাশ, জনারণ্য, দূরের ধূঁ-ধূ প্রান্তর।
৭০.
এই হাত ধরেছিল তার হাত কোমল কঠিনে
এই বুক জড়িয়ে নিয়েছিল গভীর আলিঙ্গনে।
তারপরও তাকে ধরে রাখা গেল না।
এই হাত এই বুক মিথ্যা ছিল তাহলে?
৭১.
মনখারাপ করব না আর
তারপরও মনখারাপ হয়
যে চলে গেছে তার জন্য মনখারাপ হয়।
মনখারাপ হওয়ার আর কোনো কারণ নয়
যে চলে গেছে তাকে নেই হারানোর ভয়।
তবুও মন খারাপ হয়
য়ে চলে গেছে তাকে চিরকালের জন্য মন থেকে হারানোর ভয়!
৭২.
দেখো তুমি চেয়ে কড়ই গাছের ছায়ায়
রোদ্র থেমে গেছে
ঝরা পাতার শব্দে তোমার আগমনের গান শুনি
বেণী খোঁপায় পরো তুমি সাদা সন্ধ্যা মালতী
তোমার বাগানের তুমি যেন মালিনী একজন
প্রতিদিন জল ঢালো সেখানে।
তুমি নিজেই হয়ে যাও কখনও সন্ধ্যা মালতী
আজ শাহবাগের মোড়ে কোনো ফুল নেই,
সব ফুল আজ তোমার বাগানে।
৭৩.
জানি না। কী বলেছিলে। ‘জীবন মরণ সুখ দুখ দিয়ে বক্ষে ধরিব জড়ায়ে…।’ কেমন সেই ভালোবাসার অরূপ রূপ । কী আশ্চর্য লাবণ্যে ভরা তোমার মুখ! ‘দিয়ো গো আমারে নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে, তুমি।’
আমার এপিটাফ লিখে রেখে যাব
হাস্নাহেনার ঝাড় তলায়, ঐ মাটির বাড়িটার শ্বেত পাথরের ফলকে। তুমি এসে পড়ে যেও।
৭৪.
পথ কখনই সমান্তরাল নয়,পথের বাঁক আছে। নদীও সমান্তরাল নয়,নদীরও বাঁক আছে। জীবনটা এমনই পথ ও নদীর বাঁকের মতো।
আমার পথ চলায় এমনি এক পথের বাঁকে দাঁড়িয়ে আছি। যেন মিশে যাচ্ছি নদীর মতোই অন্য বাঁকে,
অন্য মোহনায়।
৭৫.
মানুষ প্রেমে পড়লে মন উদার হয়। সবকিছুতে নিবিড় সমর্পণ করে। সে কখনই রুঢ় হয় না। আর, খুনও করতে পারে না কাউকে।
৭৬.
বৃষ্টি নামলে ছাতা নিয়ে বের হবেনা। মন ভরিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে। যদি পিছলে পড়ে যাও, ভয় নেই। আমি ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে আছি।
৭৭.
আজই দেখলাম– গন্ধরাজ ফুলের উপর সন্ধ্যা পূর্ব বিকালের সূর্যের আলো এসে পড়েছে। কী বিষণ্ন ভাবে চেয়েছিল দুজন দুজনের দিকে। দুজনেরই তখন বিদায় কালীন সময়। একজন অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। আর একজন ঝরে পড়বে।
৭৮.
কেউ যদি বুকের ভিতর মুখ গুজে গুমরে গুমরে কাঁদে এবং তা যদি বুকেরই মর্মতলে গড়াতে থাকে, এবং তা যদি ইছামতির কালো জলের মতো সুপ্ত আকার ধারণ করে, স্বভাবতই তখন মন খারাপ হয়ে যায়।
ঘরের দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দাঁড়াই। চোখ মেলে দেখতে পাই শুধুই অন্ধকার। মন ভালো হলো না। পরক্ষনেই একবার আকাশের দিকে তাকাই। দেখলাম, আকাশ ভর্তি তারা। সত্যিই, মনটা ভালো হয়ে গেল।
৭৯.
আবির দিচ্ছিলাম তার তুলতুলে গালে
সে তখন বলে ওঠে — এ তুমি কি করছো !
কী করছো!
আমি বলি, আজ বসন্ত দিন। শহর জুড়ে চলছে
লাল হলুদের উৎসব,
যেতে হবে — বকুল শিমুল কৃষ্ণচূড়া আর মহুয়া বনে।
৮০.
প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভেঙে যায়
দেহ জুড়ে ক্লান্তির অবসাদ,
তখনও ফুরায়নি রাত –
পাজরে ধরে আছে তার কোমল হাত
হৃদপিণ্ডের গভীরে
অনুভবে বুঝতে পারি আমার অস্তিত্ব
জুড়ে সে-ই আছে।
৮১.
যে সব ভালোবাসা আমি পেয়েছি,
তা আজ যমুনার জলে ভাসিয়ে দিয়ে এলাম । ঘৃণাগুলোও রেখে এলাম গহীন বালুচরে।
জল বলেছিল বারবার —
তুমি স্নান করো, পবিত্র করো দেহ,
অসুন্দরগুলো নাও মুছিয়ে।
৮২.
‘তোমাকে ভালোবাসি। কোনো দিন ভুলব না। ছেড়ে যাব না।’
কত প্রতিশ্রুতি!
সেই তুমি কিসের টানে চলে গেলে, ফেলে রেখে গেলে
তোমার স্মৃতি।
কথা রাখলে না, ফিরে আর আসলে না, ভেঙে ফেললে সকল প্রতিশ্রুতি।
৮৩.
পোড়ামাটির প্রতিমার গন্ধ ছিল তোমার শরীরে
কাঁচা মাটি ছানতে গিয়ে পেয়েছিলাম তার স্বাদ
পুড়েছ আর জ্বলেছ ভালোবাসায় হয়েছ নিখাদ।
৮৪.
অন্ধকার পছন্দ করো, বুকের খাঁজে তাই তোমাকে রেখেছি
তা দেখে রাত্রিও হিংসা করে-
শরীরের ঘ্রাণ পেয়ে আহলাদী হয়ে ওঠো –
আমিও তখন স্বপ্ন বীজ বুনি তোমার উর্বর মৃত্তিকায়।
৮৫.
দুপুরের রোদ্দুর নিভে গেল, অলৌকিক এক আঁধার হলো।
এই বসন্তে বৃষ্টি এলো।
এক অপ্রেমিকের আবদারে, বিবাগী গান বেজে উঠল তার বীণা তারে।
৮৬.
চলে যাব সব ফেলে, এই অবগুণ্ঠিত নীলাকাশ,
জলে ভরা টইটম্বুর এই নদী, স্মৃতির বসতবাড়ি, শ্রাবণ কদম্ব ফুল।
রেখে যাব লুকিয়ে রাখা জীর্ণ প্রেমপত্র আর তোমাকে দেওয়া নাকফুল।
৮৭.
তোমার মনে বসন্তের আগুন লেগেছে। এই আগুন আমিই নিভে দিতে পারি। যদি চাও আমার জল বৃষ্টি মেঘ।
৮৮.
ভরা নিশীথ দেখলে ভয় লাগে। যদি কাছে টানতে যেয়ে আড়াল হয়ে যাও? যদি অন্ধকার ঘিরে ধরে? তারচেয়ে পূর্ণিমায় এসো, ওগো পূর্ণিমা নিশীথিনী। ধবল আলোর পশর নামবে ধরণীতে। সে আলোয় পথ চিনে নেব এবং চিনেও নেব তোমার সাদা শাড়ি।
৮৯.
সেই শূন্য জায়গাতেই তোমাকে বারবার খুঁজতে যাই
যেখানে তুমি নেই,
নিঃশ্বাসের বাতাস ভারি হয়ে আসে —
সেই শুন্য জায়গাতেই যেয়ে নিঃশ্বাস ফেলি অসীম শূন্যতায়।
৯০.
আবার কে যেন মায়া দিতে চায়। আলো জ্বালাতে চায়। দরকার নেই —
আমার আঙ্গিনায় এখন থৈথৈ করছে মায়াবী পূর্ণিমা রাত্রি। এই রাত্রির মধুরিমায় ভালোই আছি।
৯১.
কেউ জেগে আছে কেউ ঘুমিয়ে আছে কেউ আছে রোগে শোকে,
এই আঁধার রাত ঠিক শেষ হয়ে যাবে ভোরের উজ্জ্বল আলোকে।
৯২.
এই সমুদ্র দেখে মনে হয় এখানেই জলবাস আমার
এর উচ্ছাস, এর অতল গহবর, এর গর্জন, এর ভৈরবী নিনাদ
আমাকে কাছে ডাকে,
কতকাল অপেক্ষায় ছিলাম নদী হয়ে মোহনায় মিশব
কিন্তু পারিনি নদী হতে।
আজ এখানে এসে তোমার কূলে বসে আছি
তোমার উদাত্ত আহবান আমার প্রাণে জাগে
তুমি টেনে নাও, হে জলধি ! তোমার জলের বুকে।
৯৩.
কখনও আর হবে না দেখা মিলব না আর দুজন দুজনে,
আমাদের ভালোবাসা ছিল ভুল অঙ্কে ভরা ভুল বিয়োগ বিভাজণে,
তাই আজ দুজন দুদিকে – ভুল অঙ্ক মেলাবার অন্বেষণে।
৯৪.
বিষাদ ভারাক্রান্ত কোনো জানালায়
যদি কখনো তুমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকো
যদি অনুভব করো আমার প্রেম
যদি ভ্রু বাঁকিয়ে ডাক দাও আমাকে
যদি তুমি দানশীল হও ভোগের ,
বিস্মরণের সময় যদি বিমূর্ত থাকো পিকাসোর ছবির মতো ভাবলেশহীন —
তখনই সময় হয় আমার ভালোবাসবার।
৯৫.
শিমুল দেখলেই রক্তভূক হয়ে উঠি
এই শহরে কোথায় পাবো শিমুল ?
তোমার সাদা জবায় এখন বসন্তকাল
তুমি হয়ে উঠেছ তাই রক্তকরবী ।
বসন্ত চলে যাক —
আসছে গ্রীস্মে তুমি রাধাচূড়ার আবির মেখে থেকো
আমি আসব কাছে — আমার শরীরে থাকবে তখন
বঙ্কিম রূপের নাগকেশরের গন্ধ।
৯৬.
একদিন আমিও হারিয়ে যাব
যেমন করে হারিয়ে যায় চাঁদ কৃষ্ণ গহ্বরে।
একদিন আমিও ঝরে যাব
যেমন করে শিউলি ঝরে যায়
দিনের রোদ্রকরোজ্জ্বলে।
চাঁদের অলক্ষ্যেই তারা হারিয়ে যায়
আবার তারার অলক্ষ্যে চাঁদ,
একদিন ওদের মতো আমিও হারিয়ে যাব অন্ধকার মৃত্তিকা তলে।
৯৭.
যে পথ দিয়ে চলে এসেছিলাম সেই পথ দিয়েই চলে যাব একা
তোমার ভুবনে তুমি পড়ে রবে কোথাও পাবে না আমার দেখা
যদি আমাকে খুঁজে পেতে চাও আঁধারে জ্বালিও প্রদীপ শিখা
চিনিয়ে দেবে তোমাকে পথের উপর ফেলে আসা আমার পদরেখা।
৯৮.
পৃথিবীর বুকে লুকিয়ে থাকা বিষাদগুলি
আনন্দে রূপান্তরিত হয়ে চলে গেল
ঐ শেষ অস্তরাগে।
দূরে ছড়িয়ে থাকা মেঘকণাগুলি উড়ে এল আমার চোখের ‘পরে অশ্রুত আবেগে।
৯৯.
যমুনাপুলিনে দাঁড়িয়ে অপূর্ব সন্ধ্যায়
শুধিয়েছিলাম তারে –
‘চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই
চোখ খুললে সে নাই।’
বলত কে সে?
সে বলেছিল – ‘রোশনাই’।
(তার নাম রোশনি বাঈ।)
১০০.
হাত ছুঁয়ে-ছুঁয়ে দিয়েছি সব
তবু্ও অমৃত সুধা পাত্র ভরল না –
হৃদয় ভেঙে দূরে চলে গিয়েছ
তবুও হৃদয় তোমাকে ভুলল না।
Leave a Reply