হাওয়া দেখি, বাতাস খাই – মারজুক রাসেল
.
পাখি, আমার একটাই উইং–লেফট।
.
‘কবিতা হারাইয়া যায় নিয়মানুবর্তিতায়, অনিয়মে কবিরেই খোঁজে।’–এই লাইনটা ২২ বছর আগে আমার কাছ থিকা ছুঁইটা যাওয়ার পর কালেভদ্রে আসে; আইসা সঙ্গ দেয়, প্রসঙ্গ দেয়, অনুষঙ্গ দেয়; আবার যায়-গা। এইবার আসলো অগ্রহায়ণে। আইসাই শুরু করলো–’ছোটবেলায় তোর “উপরি ভাব” ছিল। যতক্ষণ জাগনা থাকতি ততক্ষণ দেখতি একটা “কালা কুত্তা” তোর দিকে ছুঁইটা আসতেছে–জানলা খোলা থাকলে কইতি, ‘জানলা দিয়া আসতিছে।’ দরোজা খোলা থাকলে কইতি, ‘দরোজা দিয়া আসতিছে…ওই যে, ওই-যে আসতিছে…ওই-যে…”, আর কানতি; কেউ দেখতো না; তুই দেখতি, সন্ধ্যা হইলেই কুত্তাটা তোর নানাবাড়ির সামনের ভুঁইর জোড়া-তালগাছ থিকা মাথা নিচের দিক দিয়া নামতো–আর তোর দিকে ছুঁইটা আসতো, তুই উচ্চস্বরে কানতি, আর কানতে-কানতে-কানতে-কানতে ক্লান্ত হইয়া ঘুমায় যাইতি, এমনভাবে ঘুমাইতি যে, কেউ তোরে কোনোভাবেই জাগাইতে পারতো না; যা দেইখা তোর নানা-সম্পর্কের একজন একদিন তোর মারে বলছিলো, ‘তোর ছাওয়ালের তো কোনো সাড়াশব্দ নাই, মইরে গেল না কি?’…না, তুই মরিস নাই, জাইগা উঠছিলি আবার তোর দিকে “কালা কুত্তা”র ছুঁইটা আসা দেইখা কান্দার জন্য, কাইন্দা ঘুমানোর জন্য, ঘুমাইয়া উইঠা কান্দার জন্য…।
এই “উপরি ভাব” নামাইতে কুফরি-কালাম থিকা শুরু কইরা যে যা কইছে, যে যেইখানে যাইতে কইছে, সেইখানে নিয়া গিয়া ঝাড়ফুক, তাবিজকবজ কত কী-যে করাইছে তোর মা-বাপ!…তোর গলা ভইরা উঠছে তাবিজের মালায় । তোর ডানায়, কোমরে তাগা, তাগায় তাবিজ, জালের কাঠি ।…কিছুতেই কিছু হয় না দেইখা তোর বাপ তার প্র্যাকটিস করা-কোনো-এক-কায়দায় তোরে ঝাড়তে গিয়া কী-যেন-কী পইড়াফইড়া শুকনা হলুদ পোড়াইয়া তোর নাকে ধরতো, আর তুই চিৎকার কইরা কানতি, ক্লান্ত হইতি, ঘুমায় যাইতি।… এতকিছুর পরেও তোর “উপরি ভাব” নামে না দেইখা, এলাকার নামকরা “টোনা ডাক্তার”-এর কাছে তোরে নিয়া দেখানোর পর, তার চিকিৎসায় তুই সুস্থ হইতে শুরু করলি, সুস্থ হইয়া গেলি। টোনা ডাক্তার তোর বাপ-মারে বলছিল, ‘তোগে ছেলে সুস্থ। হইলো ঠিকই, বাঁইচে থাকলি খুব রাগী হবে, কান্নার সময় কানতে পারবে না, চোখ রক্তের মতো লাল হয়ে যাবে…।
এই পর্যন্ত আইসা কবিতা ঘুম-ব্রেক নিতে গেলে Leonard Cohen-এর ‘বেস্ট অফ’ শুনতে ইচ্ছা করলো। শুনতে-শুনতে ‘Darkness’ গানটার মাঝ-বরাবর যখন আমার কান, তখন আবার শুরু করলো, ‘১৪, ১৫, ১৬ বছরের তথাকথিত কয়েকটা ব্যর্থতার সাথে তোর পরিচয় হইলে, তারা তোরে “ধোঁয়া ভোজ” শিখাইলো–তারপর থেকে প্রতিদিনই তোর চোখ টকটকে লাল থাকতো–লোকজন বলা শুরু করলো, “গোল্লায় গেছে”। পল্লীবিদ্যুৎ আসবে-আসছে-শোনা-যাওয়া সেইসব দিনের এক শীতের রাতে প্রতিদিনের মতো “ব্যর্থতা উদযাপন” শেষে “টাউন” থেকে একটার-পর-একটা সিগারেট পোড়াইতে-পোড়াইতে হাঁইটাহাঁইটা তিন/সাড়ে তিন মাইল দূরত্বের বাড়ি ফেরার পথে আর্লি-কৈশোরের স্কুল-লাগা বিশাল জনশূন্য নীলামাঠ পর্যন্ত আইসা দেখলি, জোছনায় থইথই করতেছে নীলামাঠ । তোর সাঁতরাইতে ইচ্ছা করলো, তুই মাঠের মধ্যে নাইমা নানান দিকে দৌড়াইতে থাকলি, দৌড়াইতে-দৌড়াইতে ক্লান্ত হইয়া শিশির-বিছানো ঘাসের উপর হাতপাও ছড়াইয়া দিয়া চিৎ হইয়া শুইয়া পইড়া দেখলি, চাঁদটা নিচের দিকে পড়তেছে–পড়তে-পড়তে তোর মুখের প্রায় একহাত উপরে আইসা থাইমা গিয়া জিজ্ঞেস করলো, “আকাশে যাবি?”… এরপর অনেক মানুষের “ও-তো আমাগে রাসেল, হোসনের ছাওয়াল”, “কোন হোসনে?”, “হোসনে আরা, ছলেমান মোল্লার ভাগ্নি।”, “…এই শীতির মধ্যি এই জায়গায় এইভাবে শুইয়ে রইছে?”, “মইরে গেছে মনে হয়”–জাতীয় নানানরকম উঁচুনিচু-স্বরের কথাবার্তায় কান, চোখ খুলে গেলে দেখলি, টুপি-পরা অনেক মানুষ তোরে ঘিরে আছে, যারা উত্তর দিক থেকে ফজরের নামাজ পড়তে মাঠের দক্ষিণ দিকের মসজিদে শর্টকাটে আড়াআড়ি যাবার সময় তোরে ওইভাবে অসাড় শুইয়া-ঘুমাইয়া থাকতে দ্যাখে। তুই দ্রুত উইঠা, বইসা, দাঁড়াইয়া গিয়া কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর বা কৌতূহলের ধার না-ধাইরা যত জোরে পারা যায় তত জোরে হাঁইটা বড় রাস্তায় উইঠা দৌড় দিলি । …সেইদিনই লিখলি “একসদস্যবিশিষ্ট চাঁদ-দেখা কমিটির রিপোর্ট”,–ওই লেখাটা কইরে?
প্রশ্নের উত্তর না-দিয়া ঘুমাইয়া গিয়া ঘুম মচকাইলে দেখি কবিতা নাই, ‘কবিতা ছিল’র একটা পরিবেশ রয়ে গেছে।
.
মারজুক শা সেতু
‘মারজুক শা সেতু’ পার হবার আগে
আমরা গেলবার যে দোকানে পান-ব্রেক নিছিলাম,
সেইখানে এইবার একটা টিউবওয়েল-বিক্রির পাকাঘরকে
গোপালগঞ্জগামী যাত্রীবাহী-গাঙশালিক দেখল
গামছা-পরা, দাঁড়ানো, দেশলাই খাইতেছে।
দেশলাই জ্বালাইতে হয় বিড়ি-সিগারেট দিয়া;
বিড়ি-সিগারেটদের যারা আগুন যোগায়, তাদের সাথে সূর্যের সম্পর্ক অন্ধকারের।
অন্ধকারের মারে আমরা চিনি, তার জামাই পদ্মার পারে পানির ব্যবসা করে।
.
চিতইপিঠা
উপুড় কইরাও খাইয়া দেখছি–যায়–
খাড়া কইরা তো যায়ই, মাথার দিক দিয়া শুরু করতে হয়।
শোয়াইয়া খাইতে দিক লাগে না–বিদিক লাগে;
খাইয়া সাইরা গরম হইতে শীতে বাইরাইবার রাস্তা দেখা যায়।
.
পেট্রল ওয়াশ
একটাই শাদা শার্ট–
জন্মদিনে আসে, বিবাহদিনে যায়, মৃত্যুদিনে আসে–
ময়লা আকাশটাকে ঘরে ধোবো না লন্ড্রিতে পাঠাব?
.
অল্টারনেটিভ
তোমার দেখা পাচ্ছি না; তোমাদের দেড়-তলা বাড়িটাকে দেখতেছি।
বাদামি-পর্দা-ওড়া-হালকা-খোলা-জানালা দিয়া যত ভিতর দেখা যায়,
ছাদে শুকাতে দেয়া কাপড়চোপড়; ‘ফিরোজা+পিংক’-কম্বিনেশন
ড্রেসে তোমাকে একদিন মার্কেটে দেখছিলাম; ওই ড্রেসটা কি ভিজাই
থাকে, শুকাইতে দাও না? ছায়াতে শুকাও? গোপনে শুকাও?
তোমার এলাকার হোটেলগুলায় নাশতা; দুপুর, রাতের খাবার, টং-
দোকানের চিনি-ছাড়া-কাঁচাপাতি-দুধ-বেশি-চা; চানাচুর, আপঝাপ,
মিনারেল পানি, চুইংগাম, ক্রাকজ্যাক খাচ্ছি, প্রশংসা করছি–
তোমারে খাইতে পারতেছি না।
তোমার এলাকার রোদ, বৃষ্টি, ধুলাবালি, প্যাক, ময়লাটয়লা লাগায়
বেড়াচ্ছি; তোমারে লাগানো হয়েই উঠতেছে না, হবে…
তোমার এলাকা ছাইড়া যাচ্ছি;
তোমারে ছাড়ার ফিলিংস হচ্ছে, হোক–
আমি অনেক কিছুই-ছাইড়া-আসা-লোক!
.
জড়ের মধ্যে একমাত্র ঢেঁকিই স্বর্গে যাইতে পারে
ঢেঁকি একবার নরকের দিকে আইসো। ধামা আমগো ধইরা,
বইসা, শুইয়া, দাঁড়াইয়া আছে–ধামায় ধান–পেটের আগুন
পানিতে নেভে না; নিভলে কি আর সীমা লঙ্ঘন কইরা, দম
ফুরাইয়া এইখানে আসতাম?… অত্যাচারপ্রধান অ্যানালগ এই
এলাকার ডিজিটাইজের পূর্বাভাস বিধান-প্রতিবিধানগ্রন্থগুলার
কোনোটাতেই ছিল না–-থাকলে, রাস্তা বদলের আগে
স্ট্রিটসাইনের বাংলাগুলা ভালো কইরা জাইনাবুইঝা লইতাম?
লইলে, তোমারে সোনা, জাদু, ময়না, টিয়া, জান-ফান—অত
নামে অনন্তকাল ডাইকা-ডাইকা সাইধা গলায় চর ফালাইতাম?
–না।
মির্জা গালিব, তুমি, আমি ‘সঞ্জীবনী সুরা’ খাইতাম–পেট
থাকত চিরশীতল; কোনো জায়গার আগুনই আর আমগো
টেবিলে ভিড়তে পারতো না।… ডিলারতো এখনও ওই
একজনই, না?–অদ্বিতীয় অমৃত?
.
লাঞ্চ
শ্যাটা-ভাঙা খিদা লাগছে।
শাহবাগ কি দুপুর বানাও? কী কী জিনিস একসঙ্গে মিশাইলে, বা কী থেকে কী
আলাদা করলে [শরীর থেকে পা আলাদা করলে খোঁড়া, চোখ দুইটা তুইলা দিলে
বা নিলে কানা, জ্বিহবা কাইটা ফালাইলে বোবা…]
দুপুরটা হয়?
শ্যাটা-ভাঙা খিদা লাগছে, খাবো–খাআআবো। এমন খিদা লাগছে পুরা
ঢাকা খাইতে ইচ্ছা করতেছে। ম্যাপ-তো না ‘মেনু–মেনু নিয়া বসছি…
শাহবাগ খাবো পিজি, জাতীয় সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ, বারডেম, জাদুঘর,
পাবলিক লাইব্রেরি, চারুকলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, বৃটিশ
কাউন্সিল, শহীদমিনার, সাকুরা, পিকক গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান,
রমনা পার্ক, শেরাটন, চ্যানেল আই, বেইলি রোড, ভিকারুননিসা, শিশু
পার্ক, কাঁটাবন দিয়া–সালাদ হচ্ছে আজিজ সুপার মার্কেট…।
এলিফেন্ট রোড খাবো গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, বলাকা, নীলক্ষেত, ইডেন,
হোম ইকোনোমিক্স, লালবাগ কেল্লা, ঢাকেশ্বরী, ঢাকা মেডিকেল, আজিমপুর
ও তার কবরস্থান, ঢাকা কলেজ, হাতিরপুল, সাউন্ড গার্ডেন, ২০০০,
ইস্টার্ন প্লাজা, মানবজমিন, বাংলামোটর, হোটেল সোনারগাঁ, এফডিসি,
কারওয়ান বাজার, প্রথম আলো, গ্রিন রোড, পান্থপথ দিয়া….।
সমস্ত নাম্বারের ধানমণ্ডি খাবো রায়ের বাজার, জিগাতলা, সিটি কলেজ,
সায়েন্স ল্যাব, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, রাইফেলস স্কয়ার, গ্যেটে ইন্সটিটিউট,
সাত মসজিদ রোড, রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার, লালমাটিয়া মহিলা
কলেজ, মোহাম্মদপুর [স্পেশালি নূরজাহান ও তাজমহল রোড, শিয়া
মসজিদ এবং শেখের টেক], আসাদ গেট দিয়া…এইভাবে পুরা ঢাকা সিটি।
এই দুপুর, এই রাক্ষইশ্যা খিদার সময় তুমিও যদি ওইসব এলাকায় বা
ঢাকার ভিতরে থাকো–বাদ যাচ্ছে না–তোমারেও খাচ্ছি…
‘সন্ত, বন্ধু আমার, এক হাঁড়ি দই ম্যানেজ কর।
সন্ত: ‘বগুড়ায় যাই?’
মারজুক: ‘না, যাইতে হবে না! ঢাকার মধ্যে বগুড়ার মালের অভাব নাই।’
.
ইহমৌলিক চাহিদা
একগ্লাস পানি নিয়া সকাল নাশতা করে।
একটা, দুইটা শিঙ্গারায় দুপুরের পেট ভরে।
ঘুম পাইলেই রাতের আর কিছুই লাগে না–
টাকার মৃত্যু নাই;–
তারপরও তাদের বাঁচানোর জোর চেষ্টা করে প্রত্যেকে মরে গেছে।
আমিও জীবিত থাকলে উল্লিখিত লাইনগুলা ভাবতে পারতাম, লিখতে পারতাম না।
.
চাবুকের নৌকা
যে নৌকা দিয়া পিটাইতেছেন সেইগুলা কাগজের না,
প্লাস্টিকের না, পাতার না;
পবনের বৈঠা আইসা জানায়া গেছে–‘সোনারও না’।
মাইমে হচ্ছে না;
মাদুর তুমি-তো উইঠা বইসা দাগগুলারে কথা শিখাইতে পারো;–
না-হলে আমরা কীভাবে শোনাবো, নৌকাগুলা চাবুকের।
.
পানি-সংকট
তোমাকে ডান-বাম কাঁধের;
পিঠের-বুকের-কোমরের উপরে;
মাথায় ঢালোম; গোসল হয়ে গেল–
পুরুষমানুষের প্রধানত দুইটা মাথা থাকে;
দুইটা দুই রকম, দুইটার দুই গরম;
একটা ব্যস্ত বেশি, আরেকটা কম;
একটা ক্রিয়েটিভ, আরেকটা অ্যাকটিভ।
.
নদীপত্নীক
বাঁশি পরে শাড়ি বাজালে ভেসে যাওয়া কলস খাটে ফিরে
আসে। ‘কীভাবে?’–-এর উত্তর সুলতান নানাভাবে দিয়ে
গেছেন চিত্রাকে, চিত্রা যমুনাকে, যমুনা মধুমতাঁকে, মধুমতী
আমাকে–না-হলে আমি শাড়ি-সাইজের-গামছা পইরা
গোসলের ডাকের অপেক্ষায় শুকাইয়া যাচ্ছি কেন, তা
আবগারি জানে।…
.
বিউটি-ফ্রি
তুমি না-কিনতে বললে দূর থেকে চুড়ির দোকান দেখে যেতে
হতো–ভাইব্রাদার-সহ ঢুকলাম, দেখলাম, হাতালাম, পছন্দ হলো,
অনেকের অনেকরকম কিওরিওসিটি, মন্তব্য আর ‘শোল-মাছ-ধরে-
ফেলা-হাসাহাসিদের পাশ কাটিয়ে দুই ডজন কাঁচের চুড়ি কিনে
নিয়ে আসলাম। সেই কখন থেকে চুড়িগুলো দেখছি না তোমাকেই
দেখছি, এলোমেলো করে সাজিয়ে রাখছি… আবার এলোমেলো…
আবার সাজানো… আবার… এই গেম বিছানায় চলতেছে–
চুড়িগুলো তুমি হয়ে যাচ্ছো, তুমিগুলো চুড়ি হয়ে যাচ্ছে… তুমি আর
চুড়িগুলো একসাথে হলে কী হয়ে যাও সেটা দেখার অপেক্ষায়…।
.
কা-কা-কা-কা
ওড়ে। পাঙ্খ ছাড়াই উড়ে হারাচ্ছে দুধের কৌটা, ফুটবল।
‘মার্বেল-গুল্লির কয়টা চাক্কা?’–
গুনে দেখার চোখ কি আবার ফিরিয়ে দিচ্ছ গাজর?…
গুনব-গুনছি গড়িয়ে গেলাম, যেখানে পড়ছি–নদী;
উঠেই দেখছি শহরের ভোর, চারদিকে কাউয়ার ডাক।
.
কবিতা, ননঅ্যাকাডেমিক
আমরা গ্রাম।
শারলেভিল থেকে প্যারিসে, কলকাতায়, ঢাকায়–
লিখতে লিখতে আসি
কাটতে-কাটতে যাই–
লেখা-কাটার মাঝখানে জ্ঞান গুঁইজা দিয়া
কবিতা লেখাতে চাও,
লিঙ্গ সামনেই যাবে-আসবে–তীরনির্দেশ করো;
আমরা সামনের পিছনগমন করি–
আদব শেখাতে আসো-বেয়াদবি শিখাইতে যাই না–
‘কিরে র্যাবো, তাই না?’
.
রোগ নিবেদন
গতকাল আসিনি, গতকালের পোশাকে এসেছি–
দরজা হিজাব খোলা;
চোখ দেখে সূর্যে যাবে সানগ্লাস,
ডানা খুলে পাখি গিয়ে বিমানে চড়বে,
জঙ্গল ডাকছে, গোলাপ রেখেই চলে যাব, শোনো —
আমাকে দেখেও আয়না অক্ষত জীবিত থাকবে;
তুমি এরপর বিছানাকে ঘুম পাড়িয়ে সাজো।
.
বৃষ্টি-আকর্ষণ
বৃষ্টিকে ভেজানোর জন্য সেই কবে থেকে পানি জমাচ্ছি! এবারের
এই মাদারফাকার গরমেও ওই পানি থেকে একফোঁটা খরচ
করিনি। পানি-পথে সুন্দরবন যেতে-ফিরতের ৫ দিন লঞ্চ থেকে
না-নামাটারে কাজ বানাইছিলাম। ওই সময়কালের রাতগুলাতে
একটা কাঠপেন্সিল, একটা আদর্শলিপি, একটা শ্লেট, তিনটা চক,
একটা ফাইভ স্টার পিস্তল, একটা সাদা টুপি, একটা বার্মিজ
‘সেভেনগিয়ার’ আর আব্বাকে দেখেছিলাম ভাইসা উঠতে আর
ডুইবা যাইতে…!
অন্ধকারে আমি প্রত্যেকদিন কাঁদলেও চোখ ভেজেনি; কান্নার
পানিও তোমাকে ভেজানোর জন্য সংরক্ষিত বৃষ্টি।
.
প্রোডাকশন
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে
‘চাইলে বাঘের দুধ এনে দিচ্ছ;
চাঁদটাও পাইড়া আনতে পার;
“সেই রকম” এক মই নাকি
পকেটেই রাখ–থাকে–শোনা যায়—’
‘প্রোডাকশন?’
‘জি, বস!’
‘কালকে সকালে চিত্রায়, বাঁধাঘাটে শুট করব,
ডিঙি লাগবে পাঁচটা আর দুপুরে কাঠ-লিচু…’
‘ওকে, বস!’
‘বৃষ্টি বিকালেই লাগবে; কদম ফুল?’
‘রেইন-মেশিন রেডি আছে, বস; কদমগাছও
দেইখা রাখছি, শটের আগেই ফুল উপস্থিত থাকবে!’
‘আর বৌ চাই সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে–
ঘুমানোর অনেক অনেক অন্ধকার আগে
আমি তার চুল বাঁধা দেখতে চাই;–পরে,
সুন্দর করে এলোমেলো করতে চাই।
*সিনেমা নির্মাণকর্মে পরিচালকের চাহিদা-অনুযায়ী যিনি বা যাঁহারা নির্দ্বিধায় ‘জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’ করিয়া থাকেন, তাঁহাকে তাঁহাদিগকে এই দেশে ‘প্রোডাকশন’ বলিয়া গ্রাহ্য হয়।
.
শরৎ
ইংলিশপ্যান্ট আর স্যান্ডো পরে শরৎ–গায়ে রোদ, ছায়া,
ঘাম, অন্ধকার শুকায়শিউলি ফোঁটায়, ঝরায়–তাল
পাকায়–শাদাড্রেস-কাশফুল-মেয়েদের-ইশকুল ছুটি দেয়–
পাখির বাসা ভাঙা-না-ভাঙার দ্বন্দ্বে ভোগে—’দুইটা কুকুর
দুই দিকে মুখ, একটা চতুর্পাশে’–আরতিতে নাচে–সূর্য
ডোবার শব্দ শোনায় প্রতিমা ডোবানোর অনেক
আগে–ধূপগন্ধ-মেঘফুল শোঁকার পর হাতের তরল
জ্যোত্সা মোছে নারকেল গাছে।
.
কাফকাসমগ্র
‘প্রত্যেকেই স্বার্থপর, ক্ষুদ্র মাকড়টিও’–লাইনটা কবিতার বাইরের;
কেউ চাইলে ভিতরেও ঢুকাইতে পারবেন ।
কাফকার জন্য তেলাপোকা মারতে পারি না–
ইনসেক্ট-কিলার কিনে হাতে-নেয়ামাত্র কিসে যেন কাইড়া নিয়া যায়!
‘হাওয়ায়?’
‘না মা, কাফকা!’
‘কাফকা কেডা?’
‘ফ্রাঞ্জ কাফকা, আমার বন্ধু?’
‘কাফকাটাফকা বুঝি না–এর পরেত্তে বাজারে একা-একা যাবি।
.
হাওয়া দেখি, বাতাস খাই
হাওয়া দেখি, বাতাস খাই;
মোরগের গান আমরা গাই–
COCK ROCK COCK
COCK ROCK COCK
COCK ROCK COCK
COCK…
হাওয়া পদ্মিনী, হাওয়া চিত্রিণী,
হাওয়া শঙ্খিনী, হাওয়া হস্তিনী–
হাওয়া–
যেদিক দিয়ে ভেসে ওঠা সেদিক ডুবে যাওয়া।
.
মধ্যাহ্না
দুপুর সূর্যের মেজ মেয়ে, মুখে হাত দিয়ে হাসে;
হাত ছাড়া হাসলে খুন হয়ে যাতাম–
সন্ত বললো, ‘কই যাইতি?’
‘ক্যান, গাবতলী থেকে পরিবহনে উঠে সোজা যশোর,
তারপর ‘মাইড়ো-মন্দির।’
যাতাম > যাইতাম/যেতাম
মাইডো > মাড়োয়ারি/মেড়ো
কই > কোথায়
যাইতি > যেতে
.
আব্বা মইরা ভূত,
মা পেত্নি হয়ে আছে
জয় স্বাধীনতার জয়–
স্বাধীনতা নিয়া এখনো পক্ষ-বিপক্ষ, তর্ক-বিতর্ক, মিছিল-
মিটিং, সভা-সমাবেশ, হাতাহাতি, মারামারি, খুনোখুনি,
থানা-পুলিশ, জেল-হাজত, সাজা মওকুফ, কুচকাওয়াজ,
সমরাস্ত্র প্রদর্শনী, পার্টি-মদ্যপান, দেশাত্মবোধক গান,
‘ঘোষক-ঘোষক না’, ছুটিছাটা, মিলাদ মাহফিল, পতাকা
বিক্রয়, ক্রীড়ানুষ্ঠান, কনসার্ট, সংবাদ, পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা,
ফেসবুক পোস্ট, রেডিও-টিভির বিশেষ আয়োজন, ছবি
অংকন, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস নবায়ন, প্রবন্ধ, কলাম,
কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, থিয়েটার, সিনেমা,
গবেষণা… কত-না কিছুই হয়–
জয় স্বাধীনতার জয় —
স্বাধীনতায় আব্বা সরকারি, মা বিরোধীদলে–
স্বাধীনতায় মা সরকারি, আব্বা বিরোধীদলে–
আমাদের জীবনযাপন দারিদ্র্যসীমার তলে–
…‘দাতা গাছে তোতা পাখি’–
আর অন্যান্য আন্তর্জাতিক, স্থানীয় গাছে–
আব্বা মইরা ভূত,
মা পেত্নি হয়ে আছে।
.
ঘড়িপাল্লা
ঘৃতকুমারীরও বিয়া হইয়া গেলো!
একটা মাটির সাপের গলায় একটা প্লাস্টিকের সাপের প্যাঁচায়া-থাকার-১৯৮৭ আর
আমি একসাথে মরবো–এইটা আরো পাকাপোক্ত হইয়া চড়লো–নামাইতে
পারবো না।
এদিকে টানবাজার থিকা সদাই না-করলে, খাওয়ায় বরকত হয় না!…
আমি বাদে একটা কাঁচের গ্লাস জানতো, পকেটে ছোবল খাওয়ারও পয়সা নাই–
তারও তিন ঘুম পরে, একজন সুমারীরে পকেটে শোয়াইতে গিয়া দেখি, পকেট নাই।
.
শম্বুকপ্রগতি
শীতকাল তোমারে আর খাবে না পাতিহাঁস–আমারে তোমার খাওন কইরা লও।
আমারে ‘শামুক’ বানানোর কাঁচামাল আনতে ভবিষ্যকালে গিয়া ফেরে নাই তিনজন।
কেউ কানতেছে–’ফেরার ভেলা পায় নাই।’, কেউ হাসতেছে—’কবুতর ছিল
না।’, কেউ ফুঁসতেছে–’ম্যাপ হারায়া ফেলছে।’…
সূর্য তোমাদের উপরে ওঠে বইলা জোয়ার আমাদের নিচে আইসা ভাসার আনন্দ
শেয়ার কইরা ‘ফেরে নাই তিনজন’-রে খুঁইজা আনার আশা প্রতিদিন দিয়া যাওয়ার
পর থিকা মাকড়সা তার পায়ের ৪টা দিয়ে আমাদের ধৈর্য ধরা, ৪টা দিয়ে
আমাদের জাল-বোনা দ্যাখে।
.
ভবিষ্যৎবাণী
‘তোমাদের বর্তমান কোনোদিনও শেষ হবে না।’–
ভবিষ্যৎবাণী করে জ্যোতিষিনী কাপড় পরলেন, চলে গেলেন…।
ভুল করে রেখে যাওয়া [সন্ত বললো, ‘ইচ্ছা করে।’] তাঁর ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে
আমরা চারজন–পূর্ব, পশ্চিম, সন্ত ও আমি, বর্তমানের বৃত্তে, আসন গেড়ে বসে,
নিজেদের হাত নিজেরাই পর-পর দেখে, কে কী দেখলাম, কেউ কাউকে বললাম না।
আমি দেখলাম, আমার বাম হাতের প্রত্যেকটা রেখা ধরে
নেচে বেড়াচ্ছেন জ্যোতিষিনী–
ডান হাত দিয়ে আমি তাকে ধরার চেষ্টা করছি…।
.
ফ্রাইডে
টুপি আমার মুণ্ডু পরো।
পাঞ্জাবি আর পাজামা, তোমরা বাদবাকি গা’র চামড়া পরে যেখানে ইচ্ছা যাও…।
মুণ্ডু ও চামড়াবিহীন আমি কিছুদিন দেশের সমস্ত কসাইখানা পরিদর্শন করে মরি।
.
কমলাপুর
কমলালেবুর মাকে–
পৃথিবী মাথার মতো গোল।
কমলালেবু: হাতে নেওয়ার সময় জীবনানন্দ ও ট্রাম দুই
দিক থেকে একদিকে আসে; খোসা ছাড়ানোর সময় ট্রাম ও
জীবনানন্দে সংঘর্ষ হয়; খাওয়ার সময় ট্রাম লাইনচ্যুত;–
জীবনানন্দ যেদিকে যাচ্ছিলেন সেদিকেই যেতে থাকেন…
.
অন্ধ আনারস
প্রতিদিন একটা-করে সানগ্লাস ভাঙ্গে;
প্রত্যেকটা সানগ্লাস হাতুড়ি হয়ে যায়–
কামারশালায়—’এখানে কাস্তে গড়া হয় না’ পড়ে
অন্ধকার গুঁড়ো করবার পুরান কাজে ফেরত যাওয়ার নতুন
রাস্তায় উঠতে-উঠতে দ্যাখে–
যাত্রী উদয় হয়, গাড়ি অস্ত যায়।
.
স্লিপওয়াকে যতদূর যাওয়া যায়
অন্ধকার, তুমি মোটা হইয়া যাইতেছ–
আলো দেখাও; আলো তার চেম্বার ২৪ ঘণ্টা খুলে রাখে–
ক্লায়েন্ট না-আসা পর্যন্ত কামসূত্রের ছবি আঁকে।
লোকেশন গুগল জানে না, ঘৃতকুমারী জানে–
কাঁচা হলুদ, থানকুনি, এককোষী রসুন, মানকচু, ডাব,
তোকমা, তালমিছরি, মেথি, কলমি শাক, নিমপাতা,
আদা, পেঁপে, জিরা, তিসি, সজনেপাতারাও জানে।
.
অসুখপ্রধান দেশ
আমার হাত থেকে ছুটে পড়া রাস্তাটা এঁকেবেঁকে,
সোজা, এঁকেবেঁকে কবরস্থানে গিয়ে শেষ হয়েছে।
রাস্তার দুই পাশে, হেক্টর হেক্টর জমিতে হাসপাতাল-ক্ষেত–
গেলবারের তুলনায় এবারের ফলন বাম্পার, ৩ গুণ; দেখতে-
দেখতে ঔষধের দোকান খুশিমুখ, ফ্রিজ। পাখিরাও অ্যাম্বুলেন্সের
শিস শুনে-শুনে নিজেদেরটা ভুলে গেছে। ক্ষয় নাই।
.
চন্দ্রপ্রদান
চাঁদটা কারও বোঁটায় ঝুলে আছে–এ-রকম চোখে হলো।
পাকলে হাওয়া ফেলে দেবে।
পাকতে কেমন সময় লাগবে–কচ্ছপ জানতে পারে;
‘বিরল’ করার আগে তার ভাষা শেখা গেলে
কবিতা লেখার কাগজ কমবে না।
.
পরিবেশ পরিচিতি তামাক
যে স্কুলে ঘোড়া-কাটা পড়ানো-শেখানো হয়, সেই স্কুলে
ঘাসেরা ভর্তি হতে পারে না;–এই বেদনা অ্যানালগ–
ডিজিটাল গ্রাস-কাটারটা তার চালককে বোঝাতে পারে না–
সকালে ধার অবধারিত জেনেও রাতে নিজেদের জং
ধরাতে-ধরাতে, ভোঁতা বানাতে-বানাতে কামারশালা
ওয়ার্কশপের বিলুপ্তি কামনা করে–চিরস্থায়ী অন্ধকারের
পক্ষে চলে যাচ্ছি দেখে-দেখে কেঁচি আমাদের দিয়ে
তামাক কাটাতে-কাটাতে এই সমস্ত জানায়।
.
জঙ্গলগ্রহ
একটা খাঁচা দীর্ঘদিন পোষার পর উড়ে গিয়েছিল।
শিকল পুষলাম–টিকল না;
দড়ি পুষলাম–সে-ও চলে গেল।…
এরপর একটা ঘড়ি পুষলাম, বুনো–
চব্বিশটা-ডিম-পাড়া-শেষ-করে তা দিয়ে যাচ্ছে।
.
গোল: টাকি, গজার, শোল
ধাক্কা পাঠালে খোলে,
ধাক্কা ঢুকালে গোল–
এ-গোল ফুটবলের না
না এ-গোল গোল-আলুর না
না এ-গোল গোল-মরিচের না
না এ-গোল তালগোলের না
না এ-গোল গণ্ডগোলের না
না এ-গোল গোলপাতার না
না এ-গোল রসগোল্লার না
না এ-গোল ভূগোলের না
এ-গোল ‘ultimate goal’ না…
এ-গোল বানায়া ঢুকতে পারে,
ঢোকে পিছায়া বারায় ঢোকে
বারায় ঢোকে বারায় like টাকি, গজার, শোল;
নারী-পুরুষ খায় আর মাখায় কাঁচা মাছের ঝোল।
.
প্যারাডাইম শিফট
ভাত খাওয়ার জন্যই আগুন, কাগজ, ব্লেড খাওয়ার খেলা।
‘ভাত, চলো ছোবল খাই,
পেটের নগদ নীল নামাই।’
‘ওই নীল সিঁড়ি দিয়া নামবে না,
ওই নীল লিফট ছাড়া নামবে না!’
‘তাইলে চলো আমরাই লাফ দিয়া নামি…’
ধ-পা-স!
.
বিডি কলোনি
আমাদের সূর্য সন্ধ্যায় ওঠে–
নকলের নকলরে নকল কইরা পরীক্ষা দেয়, টাইনাটুইনা
পাস করে, অকর্মা থাকে, পিরিত ধরাইতে গিয়া ছ্যাঁক
খায়, নেশাপানি করে, চাকরি হাতায়–ধরে, বিয়া করে,
বাচ্চা বানায়, গুল লয়, চিল্লা দেয়… ডুইবা যায়।
.
বালিশ নিক্ষেপ
তোমার মাইয়া তোমার কাছ থিকা আমার চোখ কাইড়া নিয়া যারে
যারে দেখাইতেছে, তারে তারে আমি প্রথমে ছবিতে, পরে ফিল্মে,
পরে বাস্তবে দেখছিলাম ওর বয়সেই।… ওর কাছ থিকা কেউ
কাইড়া নেওয়ার আগে ফেরত দিয়া যাইতে কইও–আমি বেশি
দিন অন্ধ থাকতে পারি না। তুমি যার কাছ থিকা কাইড়া নিছিলা
সে আরেকজনের কাছ থিকা কাইড়া আনছিল; সে যার কাছ থিকা
কাইড়া নিছিল, তারে আমি সাইধা দিছিলাম।
.
ভাগ্যবান নামের একজন স্লিপ-ওয়াকার
আমারে বলেছিল এইসব লিখে রাখতে
পাতা থেকে গাছ ঝরছে–এই দৃশ্য দেখার চোখ
অ্যাসাইলামে জেগে থাকে; খিদা লাগলে চুলা আর
পিপাসা লাগলে আকাশের দিকে পানি ফেলে দিয়ে
গেলাস খায়। প্যাকেট থেকে আঙুল বের করে
ধরায়, টানে–ছাই জমে উঠলে ঝেড়ে ফ্যালে;
আবার টানে।
.
জুতাই পায়ের গয়না
‘Everywhere I go, I find a poet has been there before me.’
–Sigmund Freud
আমারে ছাড়া জুতা কোথাও যেত না।
একবার চলে গিয়েছিল—’ফেরে না, ফেরে না’য়
বেখোঁজসংবাদ দিয়ে-নিয়ে আলোর গর্তে তার অবস্থান
জেনে অজস্র উপায়ের একটায় অন্ধকারে ওঠাতে পেরে
দেখলাম, শিশু হয়ে গেছে–দুধ খেতে চাইছে আর
কাঁদতে-কাঁদতে বলছে, ‘স্বাধীনতা আমারে সবচেয়ে
কাছের “নো ম্যানস ল্যান্ড” দেখাইব কইয়া হাতে পইরা
নিয়া আইছিলো।’
.
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ঘ্যাং
চোখের পানি গড়িয়ে নর্দমায় পড়ার দাগ ধরে উজিয়ে কী করো অমেরুদণ্ডীরা?
কদমফুলের টানে জাল নিয়ে বেরিয়ে আব্বা মাছ হয়ে ফেরত এলে,
বঁটি ধার-দেয়া অসমাপ্ত রেখে রেডিয়ো কোলে রান্নাঘরের দিকে
গেল মা–পিছন-পিছন ছোটবোন–ফিরে এসে জানালো, ‘রেডিয়ো
সেদ্ধ হচ্ছে; উতলে লাফিয়ে নাচছে ব্যাঙ– ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ঘ্যাং।’
.
বেলুন মানেই ‘কনডম’ না
বেলুন আমারে ফুলাও, বান্ধো, ফাটাও–এই নাও সুঁই।
আমি তোমাদের জন্মদিনের কেকফেক-কাটা দেইখা ক্লান্ত।
আমি তোমাদের কিডস-স্পোর্টসজোনের লাথিগুঁতা খাইতে-খাইতে ক্লান্ত।
আমি তোমাদের ফুঁ-য়ে ফুঁ-য়ে বাঁশির আগায় ফুইলা-
পোতাইয়া-ফুইলা-পোতাইয়া ক্লান্ত।
আমি তোমাদের বাসররাইতের কাহিনী শুইনা-দেইখা ক্লান্ত।
আমি তোমাদের এর, ওর, তার ফিতা-কাটা দেইখা ক্লান্ত।…
ফুলাও, বান্ধো, ফাটাও–এই নাও ফাল–ফাটাইতে মায়া জাগলে
উড়ায় দাও; ঘাসের খাড়া মাইয়ের উপর গিয়া পড়ি–
ওরা আমারে অনেকদিন ফাটায় না।
.
আগস্ট আসলেই আমার বয়স কমতে থাকে
মেঘ দেখার পর আমি কীভাবে ফর্সা থাকি!
… Show me the way
To the next whiskey bar
Oh, don’t ask why
Oh, don’t ask why
For if we don’t find
The next whiskey bar
I tell you we must die
I tell you we must die
I tell you, I tell you
I tell you we must die…
গার্লস ইশকুল ছুটির পর আমি কীভাবে ৪৯ থাকি!
… Show me the way
To the next little girl
Oh, don’t ask why
Oh, don’t ask why
For if we don’t find
The next little girl
I tell you we must die
I tell you we must die
I tell you, I tell you
I tell you we must die…
*ইংরেজিগুলা ‘The Doors’-এর ‘Alabama Song’-এর।
.
ঘোড়ারোগ
তোমার গলায় বিছানা নাই।
বসতে বলছিলা, শুইতে চাইছিলাম;
দাঁড়াইয়া ঘুমাইয়া জাইগা দেখি ঘোড়া হইয়া গেছি–
তুমি নাই; যে ঘাসের উপর বসতে বলছিলা, তারাও নাই;
খিদা আমারে লাগাইতেছে–
না-খাইয়া-মরার জিভ থিকা বাঁচাও;
ঘাস অথবা মদ পাঠাও।
.
আসবাব-সাহেবা
ঘুম আর খাট একসাথে ভাঙল!
আমার কী হবে দয়াল, এক ও অদ্বিতীয় খাট!
.
আয়নাবিবি
ডিভোর্সি আয়না, তোমারও বিবাহ হইয়া গেল!
এখন আমারে কে দেইখা রাখে?
অন্যদের পয়সা আছে, চোখ নাই–
পয়সা কি আর সবাইরে উপার্জন করে?
করতে পারে! আমারে পারতেছে না।
.
বেস্ট থিং স্লিপিং
‘…জানি–তবু জানি
নারীর হৃদয়–প্রেম–শিশু–গৃহ–নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়–
আরও এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
ক্লান্ত–ক্লান্ত করে;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই লাশকাটা ঘরে
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ‘পরে।…’
‘আট বছর আগের একদিন’, মহাপৃথিবী
–জীবনানন্দ দাশ
জাইগা থাকাই ফাঁকি–
একটা ঘুম থেইকা উইঠা
আরেকটা ঘুমের ভিতর দিয়া
অনেক ঘুমের দিকে যাই;
যাইতে থাকি–
জীবনানন্দের দেখা পাই; পাইতে থাকি,
‘আট বছর আগের একদিন’ নিয়া কথা বলি,
বলতে থাকি, বলতেই থাকি…
… ক্লান্তির পর–
কোনো-একটা শালিক বলে, ‘শেষ প্রশ্নটা কর’–
আমি: ‘ট্রামটা কখন আসবে দাদা?’
জীবনানন্দ: ‘[অনেকক্ষণ চুপচাপ, তারপর]
‘সোনালি খড়ের ভারে অলস গোরুর গাড়ি–বিকেলের রোদ পড়ে আসে…।’
Leave a Reply