সেই এরফান (পার্ট ২)
১২.
গত দুদিনে আর বেড়াতে বেরোয়নি ফিল। যদিও লরির সাথে বেড়াতে বের হওয়ার জন্যে ওর মনটা ছটফট করছিল তবু কেমন যেন একটা অহেতুক লজ্জায় সে ওর মুখোমুখি হতে পারেনি। আজ তৃতীয় দিন লরির সাথে দক্ষিণে রওনা হলো সে। লজ্জিত একটা ভাব যেন ফিলকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। পাশাপাশি চলতে চলতে মেয়েটা মনোযোগ দিয়ে জেমস ওকে কি উপায়ে সিংহের গুহা থেকে উদ্ধার করল সেই গল্প শুনছে। কিন্তু ফোরম্যানের প্রশংসা ওর মনকে মোটেও প্রভাবিত করল না।
তোমরা যে পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তা আমার জানা ছিল না, মন্তব্য করল ফিল।
লোকটা আমার বন্ধু মোটেও নয়, মিথ্যা বলল লরি, তবে যে নিজের জীবন বিপন্ন করে আমার জীবন বাঁচিয়েছে, তার প্রতি কি আমার কৃতজ্ঞ থাকা। উচিত নয়?
মিস্টার বার্ট সম্পর্কে তোমার কি ধারণা? প্রশ্ন করল ফিল।
কথার জালে ধরা দিল না লরি। ওর সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছুই জানি, জবাব দিল সে, তবে এটা ঠিক যেবার বির হয়ে আমি কখনও রাইড করব না।
লোকটাকে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালি দিলেও ফিলের মনে ওর কথাটা এত গভীর প্রভাব ফেলত না। ইদানীং ও লক্ষ করেছে যে বার্ট অত্যন্ত প্রভাবশালী লোক হলেও কারও মুখে ওর কোন প্রশংসা সে কখনও শোনেনি। কেউ ওর সমালোচনা করলেও তা রেখেঢেকে করে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর সে আবার প্রশ্ন করল, তাহলে জেমস যে আউটল তা তোমার মনে হয় না?
না, আমি তা হলপ করে বলতে পারব না, তবে এটুকু বলতে পারি যে ব্ল্যাক মাস্কের সাথে সে জড়িত নয়, জবাব দিল লরি।
একটা সরু খাজের ভিতর দিয়ে এগোচ্ছিল ওরা। দুপাশের পাথুরে দেয়ালে প্রচুর ছোটছোট ঝোঁপ আর ক্যাকটাস গজিয়েছে। দুএকটা বড় গাছও জন্মেছে মাঝে। ওগুলোর ডালপালা লম্বা হয়ে ছড়িয়ে ছোট্ট ক্যানিয়ন কিছু জায়গায় ঢেকে ফেলেছে। পাতার ফাঁক দিয়ে রোদ এসে ক্যানিয়নের গায়ে বিভিন্ন আকারের ছায়া ফেলছে। বাতাসে পাতা নড়লেই ছায়া আকার বদলাচ্ছে।
হঠাৎ লাগাম টেনে ঘোড়া থামিয়ে ফিল বলে উঠল, ওহ, কী সুন্দর দৃশ্য!
ওর আঙুল অনুসরণ করে লরি দেখল ঢালের ওপর কয়েক সারি ওকাটিয়া (Occatilla) ক্যাকটাস গাছে অপূর্ব সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে। ফিল কিছু বুঝে ওঠার আগেই লরি তার ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করল। মেয়েটাও নেমে একটা গাছের গুড়ির ওপর বসল। অল্পক্ষণের মধ্যেই সে কয়েকটা রক্ত-লাল ফুল হাতে ফিরে এলো। ফিলের সামনে এসে থেমে সে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাম হাতে মাথা থেকে হ্যাট নামিয়ে ঝুঁকে কুর্নিশ করে ফুলগুলো ওর দিকে বাড়িয়ে ধরল। হেসে ফুলগুলো নিয়ে সে লরিকে ধন্যবাদ জানাল। লাল ফুলের রক্তের ছোয়া কিছুটা যেন ওর গালেও লাগল।
এই সময়ে একজন রাইডার বাঁক ঘুরে এগিয়ে আসতে গিয়েও ওদের দেখে থেমে দাড়াল। কিন্তু পরক্ষণেই চিনতে পেরে আবার এগিয়ে এলো।
অসময়ে বাধ সাধার জন্যে দুঃখিত, বলল সে। ওর গলার স্বর আর বলার ভঙ্গিটা অপমানজনক।
কোন জবাব না পেয়ে সে ধীর গতিতে ওদের পেরিয়ে আবার এগিয়ে গেল। পরবর্তী বাঁক নিয়ে অদৃশ্য হওয়ার আগে সে পিছন ফিরে চেয়ে অশ্লীল ইঙ্গিতে হাত নাড়ল।
ফিল তার সঙ্গীর দিকে চোরা চোখে চেয়ে দেখল লরি জুলন্ত দৃষ্টিতে ওই বাকের দিকে চেয়ে আছে। ওর চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে উঠেছে।
ওই লোকটা কে? প্রায় রুক্ষ স্বরে প্রশ্ন করল সে।
বুল ডেভিস, জবাব দিল সে। লোকটা আমাদের না দেখলেই ভাল হত। ফোরম্যান ওকে র্যাঞ্চ থেকে তাড়িয়ে দেয়ায় সে লেজি এমের ওপর খেপে আছে। বিভিন্ন দুর্নাম ছড়াবে ও।
আমাদের হয়ত এখন ফিরতি পথ ধরাই ভাল, বলল লরি।
ফিরতি পথে ওদের মধ্যে খুব কমই কথা হলো। কাউবয় বেশ বেগে ঘোড়া ছোটাচ্ছে, যেন র্যাঞ্চে পৌঁছা’নোর জন্যে ওর, বিশেষ কোন তাড়া আছে। ওর চেহারা থেকে স্বাভাবিক হালকা ভাবটা বিদায় নিয়ে মুখটা এখন দৃঢ় সংকল্পে কঠিন হয়ে উঠেছে। মেয়েটা পরিবেশ হালকা করার চেষ্টা করল।
তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন তুমি কাউকে খুন করতে চলেছ, বলল মেয়েটা।
ঝট করে ঘুরে তাকাল লরি। ফিল দেখল,ওর গাল একটু লাল হয়ে উঠল। তারপরে সে হাসল।
হ্যাঁ, তাই আমি করব যদি ফিরে দেখি ড্যানিয়েল এখনও সাপার তৈরি করেনি।
ফিল আর কোন কথা বলল না। জবাব, শুনে ওর মনের সন্দেহটা কেবল আরও গভীর হলো। কেমন যেন একটা ভয় আর অস্বস্তি বোধ করছে সে। র্যাঞ্চে সরাসরি ঘোড়া দুটোকে, করালে ভরে একটা ফ্রেশ ঘোড়া নিয়ে তৎক্ষণাৎ হোপের ট্রেইল ধরে রওনা হয়ে গেল লরি। খাওয়ার জন্যেও অপেক্ষা না করে এমন অদ্ভুত আচরণ করায় ফিলের সারাটা বিকেল অস্থিরভাবে ট্রেইলের দিকে চেয়ে কাটল। এরফান যখন অন্যান্য কাউবয়দের সাথে ফিরল, তাকে একপাশে ডেকে নিয়ে বিকেলের পুরো ঘটনা জানাল ও।
লরি লোকটাকে চেনে বলেই মনে হলো-ঘৃণাও করে, অথচ সে আমার কাছে ওর নাম জানতে চেয়েছিল, বলল সে। অবশ্যই ওই লোকের ব্যবহার অত্যন্ত রুক্ষ ছিল, কিন্তু আমার ধারণা এর পিছনে অন্য কোন কারণও আছে।
আমার মনে হচ্ছে তোমার কথাই ঠিক, মিস মাস্টারসন। কোন বিশেষ কারণে, ওই লোককেই খুঁজতে গেছে লরি। ডেভিস লোকটা কাপুরুষ হলেও শুনেছি পিস্তলে ওঁর হাত খুব চালু।
ওহ, জলদি করো, হয়ত এখনও চেষ্টা করলে তুমি ওদের দেখা হওয়া ঠেকাতে পারবে, অনুনয় জানাল সে।
আমি যদি তা না পারি, আর লরির যদি কিছু হয়, তাহলে বুলকে আর কখনও সূর্যোদয় দেখতে হবে না, প্রতিজ্ঞা করল এরফান। সোজা করালে ঢুকে একটা ঘোড়ায় জিন চাপিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে শহরের দিকে ছুটল ও। এরফান জানে। শহরে পৌঁছা’র আগে লরিকে ধরতে পারার কোন সম্ভাবনাই ওর নেই। তবে ওদের দুজনের হয়ত এখনও দেখা না-ও হয়ে থাকতে পারে।
কাম এগেইন সেলুন সান্ধ্যকালীন সমাবেশের জন্যে ধীরে ধীরে ভরে উঠছে। তেলতেলে চেহারার মালিক খুশি মনে নিজের হাত দুটো ঘষছে। আজকের রাতটা বেশ লাভজনক হবে বলেই মনে হচ্ছে।
ভাবছি বার্টকে আজ এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন, আপন মনে বিড়বিড় করল সে।
আসলে ব্ল্যাক বার্টকে কেন লোকে ওই নাম দিয়েছে তা ওর চেহারাই বলে দেয়। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে নিচু স্বরে বুলের সাথে কথা বলছে। বার্টের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কথার বিষয়বস্তু তার কাছে মোটেও ভাল ঠেকছে না। আসলে বুল ডেভিস আজ তার সাথে ফিলের দেখা হওয়ার কথা মিথ্যে রং মিশিয়ে শোনাচ্ছে। সে মানুষকে দুঃখ দেয়ার মত আনন্দ আর কিছুতে পায় না। তার মিথ্যে বানানো গল্প বার্টকে রাগে অন্ধ করে তুলল।
যে, ওই কুকুরের বাচ্চা কাউবয়টাকে শেষ করতে পারবে তাকে আমি পাঁচশো ডলার পুরস্কার দেব, ঘোষণা করল সে। এই কাজটা আমি খুশি মনে নিজেই করতাম, কিন্তু তাতে মেয়েটার চোখে আমি ঘূণ্য হয়ে যাব।
মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল ডেভিস। মানুষ হত্যা ওর কাছে নগণ্য একটা কাজ। এর আগেও সে এর চেয়ে অনেক কম টাকার জন্যেও বহু খুন, করেছে। ঠিক ওই মুহূর্তেই লরি সেলুনে ঢুকল।
তোমাকে আর কষ্ট করে ওকে খুঁজতে যেতে হবে না, বলল বার্ট। লোকটা নিজেই সেধে বাঘের খাঁচায় ঢুকেছে, ফিসফিস করে বলে সেলুন ছেড়ে বেরিয়ে গেল র্যাঞ্চার। এইমাত্র যাকে সে ভাড়া করেছে সে-ই বাকি কাজ শেষ করবে-ঘটনার ঘটার সময়ে সে ওখানে হাজির থাকতে চায় না।
লরির তীক্ষ্ণ চোখে নড়াচড়াটা ঠিকই ধরা পড়েছে। সে বুঝল বার্টের কাছে খবরটা পৌঁছে দিতে ডেভিস মোটেও দেরি করেনি। কামরার চারপাশে চেয়ে টিমকে দেখতে পেয়ে সে নড় করল। একটা টেবিলে বসে তার দুই কর্মচারী আর স্টোরকীপার কাভানার সাথে পোকার খেলছে টিম।
আবার ডেভিসের দিকে চোখ ফেরাল। সে এখন তিনজন সঙ্গীর সাথে কথা বলছে। আরে মেয়েরা সব একই রকম; ওই মাস্টারসনের মেয়ের কথাই ধরো, আজ বিকেলেই আমি দেখলাম সে দক্ষিণের একটা নিভৃত জায়গায় বসে। চুমোচুমি করছে। সেটাও নেহাত সাধারণ একজন মাসে চল্লিশ ডলার বেতনের কাউবয়ের সাথে!
বিজয় উল্লাসে সে তার শ্রোতাদের দিকে চাইল। ওদের কয়েকজনকে খিকখিক করে হাসতে শোনা গেল। বাকি যাদের কানে কথাটা পৌঁছেছে তারা বুঝল বুলের কথার পিছনে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে। ওরা খেলা থামিয়ে ঘটনা কোনদিকে গড়ায় লক্ষ করছে। সবার চোখ এখন দরজার কাছে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়ানো লেজি এম কাউবয়ের ওপর।
ডেভিস!
শব্দটা লরি বস্টনের এঁটে বসা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বুলেটের মতই বের হলো। এর পরেই শোনা গেল মেঝের ওপর চেয়ার আর বুট ঘষার শব্দ। যারা ওদের দুজনের মাঝে গুলির আওতায় ছিল তারা তড়িঘড়ি সরে গেল। রাগের এই প্রচণ্ড বহিপ্রকাশ ওর সম্পূর্ণ আচরণ বিরুদ্ধ; সে নিজেও এ-সম্পর্কে সচেতন নয়। লরি কেবল জানে ওর সামনে একটা সাক্ষাৎ শয়তান দাঁড়িয়ে আছে, যাকে তার শেষ করতেই হবে।
লরির ডান হাত ওর পাশে ঝুলছে-আঙুলগুলো ছড়ানো; ড্র করার জন্যে প্রস্তুত।
ডেভিসের নিষ্ঠুর চেহারায় কেবল একটা ভাবই প্রকাশ পাচ্ছে; এবং সেটা হচ্ছে সাফল্যের বিষাক্ত একটা আনন্দ। ঠাণ্ডা মাথায় খুন করার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে সে।
অবজ্ঞার সাথে হেসে সে জবাব দিল, আমার নাম। আরে, এর কথাই তো আমি এতক্ষণ বলছিলাম-মিস মাস্টারসনের নয়া নাগর। দেখো লজ্জায়, কেমন লাল হয়ে উঠেছে ও।
সত্যিই ওর মুখটা লাল হয়ে উঠেছে, কিন্তু ওর গলার স্বরটা বরফ শীতল এবং চামড়া ভেদ করে কেটে বসার মত তীক্ষ্ণ।
বুল ডেভিস, তুমি একটা মিথ্যুক এবং কাপুরুষ, দৃঢ় স্বরে বলল লরি। বাড়তি অপমানে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়নি সে।
ওই কথার কেবল একটা জবাবই হয়। কথার চাবুকের আঘাতে পিস্তল বের করার জন্যে ছোবল দিল বুল গর্জে উঠল, শয়তান কুকুর ছানা!
দুটো পিস্তলের মুখে একই সাথে আগুনের ঝিলিক দেখা দিল। বাম কাঁধে গুলি খেয়ে ভারী বুলেটের ধাক্কায় আধপাক ঘুরে গেল লরি। ডেভিস একটা গালি দিয়ে একটু দুলে কাত হয়ে পড়ে গেল। পিস্তলটা সশব্দে ওর পাশেই। পড়ল। গুলিতে ওর বুক ফুটো হয়ে গেছে। লোকটা এখনও মরেনি দেখে টলতে টলতে ওর দিকে এগিয়ে গেল লরি। পিস্তলটা লাথি দিয়ে সরিয়ে দিয়ে পাশে হাঁটু গেড়ে বসল।
বুল, বলল সে। একটা কথা আমি তোমাকে জানাতে চাই।
ফিসফিস করে কয়েকটা কথা বলল সে। এবং মরণাপন্ন বুল বিস্ফারিত চোখে ওর দিকে তাকাল। হেল! ফুঁপিয়ে উঠল সে, তুমি- তার গলা থেকে কেবল একটা ঘড়ঘড় শব্দ বের হলো; তারপরেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।
কষ্ট করে কোনমতে নিজের পায়ে উঠে দাড়াল লরি, কিন্তু তার পরেই একটা খালি চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ল। অসুস্থ বোধ করছে সে, মাথাটাও কেমন ঝিমঝিম করছে। কেউ একজন এগিয়ে এলো। ওর ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে। টিম আর তার লোক লাফিয়ে এগিয়ে ওর ক্ষত থেকে রক্ত ঝরা বন্ধ করায় সচেষ্ট হলো। যে নীরবতা নেমে এসেছিল সেটা দূর হয়ে বার আবার সরগরম হলো; লড়াইয়ের দর্শকরা সবাই ওই সম্পর্কেই আলোচনা করছে। শেরিফ ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলো।
কিছু লোক সরে দাঁড়ানোয় মৃত লোকটার চেহারা দেখে চমকে উঠল শেরিফ টেলর। আরে! এটা যে দেখছি ডেভিস! বিস্মিত স্বরে বলল সে। আমি ভেবেছিলাম-ওরা বলল আর কেউ।
যে-কোন নিরপেক্ষ দর্শকই ভাববে লোকটা খুব নিরাশ হয়েছে। অনেক দর্শকই আগ্রহের সাথে ওখানে কি ঘটেছে তা জানাল এবং অফিসারের খুদে চোখ দুৰ্বত্তের মত অশুভ দৃষ্টিতে সন্তুষ্টি নিয়ে আহত কাউবয়কে দেখল।
ভাল, তুমি ঝামেলা চাইছিলে, তাই পেয়েছ, বলল সে। আমি আঁচ করছি তোমাকে এখন জেলে পচতে হবে।
আবার আঁচ করো, হয়ত এবার তুমি ঠিক আঁচ পাবে, লেজি এম ফোরম্যানের ভারি কণ্ঠস্বর শোনা গেল।
সবার অজান্তে কখন যে সে ভিতরে ঢুকেছে তা কেউ খেয়াল করেনি। ঝট করে ঘুরে দাড়িয়ে পিস্তলের দিকে হাত বাড়াল শেরিফ।
ওটার কথা ভুলেও ভেবো না, নবাগত লোকটা শান্ত স্বরে বলল, তোমার যেমন বাঁচার যোগ্যতা নেই, তেমনি মরারও যোগ্য তুমি নও। একটা ব্যাঙ মেরে হাত গন্ধ করতে চাই না আমি।
টেলরের চেহারা একেবারে হলুদ হয়ে গেল। ওর ভঙ্গিটা ছিল একটা ভাঁওতা, এবং সে সচেতন যে দর্শকরাও তা জানে। ওই ঠাণ্ডা চেহারার লোকটার বিরুদ্ধে লড়তে নামার গেন ইচ্ছাই তার ছিল না। বার বি, মালিকের ওখানে হাজির হওয়ায় সে বুকে কিছুটা বল পেল, এবং তার ভেঙে চুরমার হওয়া সম্মান কিছুটা ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় সে বলল, এই শহরের শেরিফ হিসেবে।
তুমি একটা করুণ দৃষ্টান্ত, বাধা দিয়ে ওর অসমাপ্ত বাক্যটা শেষ করল এরফান। সেটা তোমার বলার কোন প্রয়োজন নেই। এখন আমার কথা শোনো, শেরিফ, এখানে বিশিষ্ট নাগরিক মিস্টার বার্ট হাজির আছে এবং সে এই ঝামেলা সম্পর্কে কিছুই জানে না। ধরো ওর মতামতটাই আমরা জিজ্ঞেস করি।
কনুইয়ের গুঁতোয় জায়গা করে নিয়ে বুলের লাশ দেখে ক্ষণিকের জন্যে তার যা চেহারা হয়েছিল তা এরফানের নজর এড়ায়নি। লরির দিকে কেমন বিষাক্ত দৃষ্টিতে সে তাকিয়েছিল সেটাও ও দেখেছে।
কিন্তু মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিল বার্ট। শেরিফের কাছ থেকে নির্বিকার চেহারায় ঘটনার পুরো বিবরণ শোনার পর সে সাথে সাথেই রায় দিল, ওর মত খটাশের, মরাই উচিত। এই লোক এটা না করলে কাজটা আমি নিজেই করতাম। যদিও সে মুখে কথাটা বলল, বার্ট ভাল করেই টের পাচ্ছে জেমস কেমন চতুর কায়দায় লোকটাকে কোণঠাসা করেছে। যে ওই ফিলের নামে। কুৎসা রটিয়েছে তার পক্ষ নেয়া কোন মতেই সম্ভব নয়। সে জোর দিয়ে বলল, এখানে যদি এমন কেউ থাকে যে মনে করে বুল মিথ্যে বলেনি; সে এগিয়ে আসুক।
ওর আমন্ত্রণে কেউ সাড়া দিল না দেখে বার্ট শেরিফকে জিজ্ঞেস করল, তুমি বলছ লড়াইয়ে দুজনেই সমান সুযোগ পেয়েছে?
ঘটনার সময়ে আমি উপস্থিত ছিলাম না, কিন্তু আমাকে তাই বলা হয়েছে, স্বীকার করল টেলর।
তাহলে আমাদের আর করার কিছু নেই, বলল র্যাঞ্চার। বীতশ্রদ্ধ ভাবে এরফানকে বলল, তুমি তোমার লোককে নিয়ে যেতে পারো, কিন্তু ওকে সাবধান থাকতে বোলা, পরেরবার হয়ত ওর কপাল এত ভাল নাও হতে
আমার বিশ্বাস লেজি এম নিজেরটা নিজেই সামলাতে পারবে, জবাব দিল ফোরম্যান।
টিম এবং তার দুই কর্মচারীর সহযোগিতায় লরিকে র্যাঞ্চে নিয়ে এলো এরফান। ওর ফেরার সাড়া পেয়ে ফিল নিজের সম্ভ্রম বিসর্জন দিয়ে ওদের দিকে দৌড়ে ছুটে গেল। দুজন রাইডার লরিকে দুপাশ থেকে ধরে নিয়ে আসছে দেখে ওর বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।
কি হয়েছে? উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করল ফিল!
বস্টনের সাথে বুলের সংঘর্ষ হয়েছিল তাতে কাঁধে সামান্য চোট পেয়েছে সে-মারাত্মক কিছু নয়, জবাব দিল রাইডারদের একজন।
আর ডেভিস?
মরেছে, সংক্ষিপ্ত জবাব এলো।
মেয়েটা শিউরে উঠল; কিন্তু মার কোন প্রশ্ন হল মা লরি একটা লোককে হত্যা করেছে। বস্টনকে র্যাঞ্চহউসে বয়ে নিয়ে যাওয়া হলো এবং মাস্টারসনের খালি বিছানাতেই ওকে শোয়ানো হলো। ফিল বাখ্যা দিল যে ড্যানিয়েলের বউ আর সে, দুজনে মিলে র্যাঞ্চহাউসেই তারির উপযুক্ত না করতে পারবে লরি বেশ দুর্বল আর অত্যন্ত কুষ্টের মধ্যে থাকতে ও দেখাতে, চাইছে যেন তার কিছুই হয়নি। কিন্তু কষ্টের মধ্যে থাকলেও তাকে যেটা সবচেয়ে বেশি ব্যথা দিচ্ছে সেটা হচ্ছে ওর প্রতি ফিলের ঠাণ্ডা একটা দূরত্বের ভাব।
তোমাকে এই ঝামেলার মধ্যে ফেলার জন্যে আমি সত্যিই খুব দুঃখিত, বলল লরি। তুমি বাঙ্কহাউসের বয়েজদের ওপর আমার দেখাশোনার ভার ছেড়ে দিলেই পারতে।
মেয়েটা মাথা নাড়ল; তারপর প্রশ্ন করল, ওহ, লরি, তুমি এই কাজ কেন করতে গেলে? সে-ও তো একজন মানুষ?
মেয়েটা ওর ফেকাসে চেহারাটা লাল হয়ে উঠতে দেখল, এবং ওর ঠোঁট জোড়াও শক্ত হয়ে এঁটে বসল।
ডেভিসের মত কেউ মানুষ বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য নয়, সে একটা ব্যাটল স্নেকের চেয়েও নীচ, ধীর স্বরে বলল সে। ওই বুল সম্পর্কে কিছু জানলে তুমি ওই কথা বলতে না। সে আর তার কিছু সঙ্গী একবার একজন প্রৌঢ় লোককে নির্দোষ জেনেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল। ডেভিস নিজে ওর গলায় ফাঁস পরিয়েছিল। এটা পুরোপুরি সত্যি ঘটনা।
কিন্তু তুমি ওকে সাজা দিতে গেলে কেন, এর জন্যে আইনই তো রয়েছে, প্রতিবাদ করল ফিল।
আমি যে ঘটনা তোমাকে বললাম, সেটা দশ বছর আগে ঘটেছিল; আর আইন এদেশে খুব ধীর গতিতে চলে, একটু থেমে সে আবার বলল, প্রয়োজন হলে আমি আবারও তাই করব।
মেয়েটা জানে লরির কথাই সত্যি, কিন্তু এটা ঠিক মেনে নিতে পারছে না। লরি ছাড়া আর কেউ এটা করলে এই হত্যা ওকে এত বিচলিত করত না, কিন্তু এটাও সে স্বীকার করে নিতে পারছে না; এমনকি নিজের কাছেও না।
পরদিন সকালে শহরে যাওয়ার পরে গোলাগুলির পুরো ঘটনা জানতে পারল। হোপে, পৌঁছে কাভানার দোকানের সামনে নেমেই সে বাটের মুখোমুখি পড়ে গেল। ওকে দেখামাত্রই বার্টের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠল।
দেখলে ফিল, বলল সে। এখন নিশ্চয় তুমি স্বীকার করবে যে আমি ঠিকই বলেছিলাম? একটা কর্মচারীর সাথে রাইড করে বেড়াবার ফলাফল কি হলো দেখলে? একজন মরল আরেকজন আহত হয়েছে।
কিন্তু আমাদের বেড়ানোর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই, ফিল প্রতিবাদ করল।
কিন্তু ওর কারণেই এইসব ঘটেছে, রাগের সাথে বলল বার্ট। ডেভিস কাম এগেইন সেলুনে এসে ফলাও করে বলছিল সে নাকি তোমাদের দুজনকে স্নেক কূলিতে জড়াজড়ি করে চুমো খেতে দেখে এসেছে। বস্টন ওকে মিথ্যেবাদী বলায় গোলাগুলি হয়েছে।
ফিলের বুকটা ধড়াস করে উঠল; তাহলে লরি তার সুনাম রক্ষা করার জন্যে লড়েছে। সে আসলে ঠাণ্ডা মাথার খুনী নয়!
ওখানে অনেক দেরিতে না পৌঁছলে ওই কুকুরটাকে আমি নিজেই শেষ করতাম, বলে চলল বার্ট। অবশ্যই এর কিছুই আমি বিশ্বাস করি না, কিন্তু এইরকম রটনা কেউ তার ভবিষ্যৎ স্ত্রীর সম্পর্কে শোনা পছন্দ করবে না।
আমি ওই রকম মেয়ে নই, মিস্টার বার্ট, আমি যদি কখনও তোমাকে তেমন ধারণা দিয়ে থাকি তাহলে আমি দুঃখিত। কথাটা তোমার ভুলে যাওয়াই ভাল।
ওর কথার সুরটা ঠাণ্ডা এবং চূড়ান্ত। র্যাঞ্চার স্পষ্ট বুঝতে পারছে কথাগুলো মেয়েটা বুঝে এবং মেপেই বলেছে, কিন্তু কথাটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। একটা অন্ধ রাগে ফুসে উঠল বার্ট। তবু জোর করে একটু হাসল।
ওহ, আমার ওপর রাগ কোরো না, ফিল। সুন্দর সুন্দর কথা শুছিয়ে বলার কৌশল আমার জানা নেই বটে, কিন্তু তোমাকে আমি চাই। তুমি যা বললে সেটা তোমার ফাইনাল জবাব হিসেবে আমি মেনে নিতে রাজি নই।
আমি বদলাব না, শান্ত স্বরে বলে চলে গেল মেয়েটা।
বার্ট কিছুক্ষণ ওর দিকে চেয়ে থেকে ঘুরে উল্টো দিকে হাঁটা ধরল। রাগে দিশেহারা হয়ে ওপাশ থেকে আসা এক পথচারীর সাথে ধাক্কা খেল সে। দোষটা নিজের হলেও গালি দিয়ে এক বাড়ি মেরে হালকা লোকটাকে সে ফুটপাত থেকে রাস্তায় ফেলে দিল। লোকটার ডান চোখের ওপর একটা পট্টি বাধা। ফিল দেখল ওর সঙ্গে একটা পিস্তল রয়েছে। লোকটা উঠে দাঁড়িয়ে বিষাক্ত দৃষ্টিতে বার্টের দিকে তাকিয়ে পাল্টা একটা গালি দিয়ে হাঁটা শুরু করল। ফিল আশা করেছিল লোকটাকে হয়ত রাগে বার্ট গুলিই করে বসবে। কিন্তু তা না করে সে ঘড়ঘড়ে স্বরে একটা হুমকি দিয়ে আবার নিজের পথ ধরল। ফিল লক্ষ করল কাঁচাপাকা দাড়িওয়ালা বয়স্ক লোকটা ওকে পার হওয়ার সময়ে কেমন যেন একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল।
১৩.
তার প্রতি ফিলের প্রকৃত মনোভাব কি এটার আবিষ্কার বার্টের মনে এবং অহমিকায় এমন প্রচণ্ড আঘাত হানল যে ওর আউটফিটের বাকি সারাটা দিন খুব খারাপ কাটল। সন্ধ্যায় যখন ডোভার ওর সাথে দেখা করতে র্যাঞ্চহাউসে গেল তখন সে তাকে খুব খারাপ মানসিক অবস্থায় দেখল। ফোরম্যান, যে গত চব্বিশ ঘন্টায় ওর দেখা পায়নি, সে সরাসরি কাজের কথায় এলো।
কি ব্যাপার, তোমার মেজাজ এমন খারাপ কেন? প্রশ্ন করল সে।
প্রায় সবই ওলটপালট হয়ে গেছে, বিরক্ত স্বরে জবাব এলো। ডেভিসের কথা কিছু শুনেছ?
আমি এইমাত্র ওকে দেখে এলাম, বলল ডোভার।
কটমট করে ডোভারের দিকে কতক্ষণ চেয়ে থাকল বার্ট। ওই জেমসই তাহলে তার পুরোনো খেলা খেলে চলেছে?
আমি তোমাকে প্রথমে যা বলেছিলাম সেটাই তোমার করা উচিত ছিল। শুরুতেই ওকে শেষ করে ফেলাই ঠিক হত। তাহলে মেয়েটা জাজ এমারিকে সামলাবার একটা উপায় খুঁজে বের করে ফেলত। এখনও সময় আছে-মেয়েটার জেমসকে ভুলতে বেশি সময় লাগবে না।
ওর কথা বাদ দাও। মেয়েটা ওকে মোটেও পছন্দ করে না। ডেভিসকে খতম করেছে ওই কুকুরের বাচ্চা লরি বস্টন, জানাল বার বি র্যাঞ্চার।
আজ সকালে ফিলের সাথে ওর কি কথা হয়েছে তাও বলল।
ও, তাহলে মেয়েটা তোমাকে ঠ্যাঙ্গা দেখিয়ে দিয়েছে? বলল ডোভার। এটা তো সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। তোমার এখন লেজি এমকে বাই বাই জানানো ছাড়া আর উপায় কি? ফিলের বিয়েতে তোমাকে বেস্ট ম্যান হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে, বাট।
ফোরম্যানের তিক্ত ব্যঙ্গে ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে র্যাঞ্চারের চেহারাটা আরও কালো হলো।
আমার এখন হাসি-ঠাট্টার মূড নেই, ডোভার, বলল বার্ট।
আমি নিজেও এতে কৌতুকের কিছু দেখছি না, জবাব দিল ফোরম্যান। আমি তোমার বর্তমান মনের অবস্থাটাকেই কথায় রূপ দিলাম মাত্র, যদি তোমাকে আমি কখনও হতাশ হয়ে হাল ছাড়তে দেখিনি।
এখনও, তা আমি করছি না, রুক্ষ স্বরে বলল বার্ট। আমি যা চাই সেটা আমি না পেয়ে ছাড়ি না। তবে কাজটা যত সহজ হবে বলে মনে করেছিলাম ততটা সহজ হবে না। আমাকে কিছু ঝুঁকি নিতে হবে।
সেটা আমরা আগেও কয়েকবার নিয়েছি, নির্বিঘ্নে পারও পেয়েছি, ওর কথা সমর্থন করল ডোভার এমারিকে আমাদের পক্ষে আনাটা হয়ত সম্ভব হবে না।
শয়তানিতে ভরা একটা হাসি ফুটল বার্টের মুখে। তুমি নিশ্চয় একজন মাইন্ড রীডার, ডোভার, বলল সে। হ্যাঁ, একটা উপায় ঠিকই আছে, কিন্তু প্ল্যানের পুরোটা এখনও মনেমনে গুছিয়ে উঠতে পারিনি। আপাতত জেমসই হয়ত মাস্টারসনকে মেরেছে, এই লাইনে কিছু চিন্তাভাবনা করো।
স্টিভকেও সে-ই সরিয়েছে বলা যেতে পারে, বলল ডোভার।
ওতে কাজ হবে না, বলল বার্ট। সহজেই সে প্রমাণ করতে পারবে যে ওই সময়ে এই তল্লাটেই ছিল না ও।
স্টিভকে খুন করে জায়গাটা বুলের জন্যে খালি করে তাহলে আমাদের কোন লাভই হয়নি, মন্তব্য করল ফোরম্যান।
তুমি ঠিকই ধরেছ, কিন্তু তখন কে ভাবতে পেরেছিল জ্যাক কোন স্ট্রেঞ্জারকে এনে ওর জায়গায় বসাতে পারে? গর্জে উঠল সে। আমরা ভেবেছিলাম ডেভিসই ওর পদটা পাবে।
মাস্টারসনকে আমরা যতটা বোকা ভেবেছিলাম আসলে তত বোকা সে নয়, বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলল ডোভার।
কেবল একটা ঘোৎ শব্দ করে ওর কথা সমর্থন করল বার্ট।
টিমের, পাঠানো রাইডারের কাছে একটা খবর পেয়ে গোলাগুলির কয়েক দিন পরে হোপে পেীছল এরফান। ফেনটনের সেলুনে যাওয়ার পথে সে লক্ষ করল। শহরের লোকজন য়েন তার দিকে একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। কয়েকজন লোক যা আগে ওর সাথে কথা বলেছে বা নড় করেছে তারা যেন ওকে দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছে। টিম ওর জন্যেই সেলুনে অপেক্ষা করছিল। সে এর কারণটা ব্যাখ্যা করল।
বার্টের লোকজন কথা বলতে শুরু করেছে, জানাল টিম। তোমার হয়ত এর জবাবে বলার কিছু থাকতে পারে।
বার্টের লোকেরা বলে বেড়াচ্ছে তুমিই নাকি জ্যাককে খতম করেছ, সরাসরি বলল ফেনটন। তোমার কোন বিপদ ঘটুক এটা চাই না আমরা।
এরফানের চোখ দুটো কঠিন হলো। নিশ্চয়, অনেক কথাই বলার আছে আমার। আমি এখনই কাম এগেইনে গিয়ে সরাসরি মিস্টার বার্টের সাথেই কথা বলছি।
তুমি একা ওখানে মোটেও যাবে না, বলে উঠল টিম।
আমি যদি সেলুন ছেড়ে যেতে শুরু করেছিল সেলুনের মালিক, কিন্তু হাত তুলে ওকে থামিয়ে দিল এরফান।
আমি কৃতজ্ঞ, কিন্তু তোমাদের এই ঝামেলায় জড়াবার কোন প্রয়োজন নেই।
কাম এগেইন বারটা যথারীতি প্রায় ভরপুর। ওর বিরুদ্ধে যে যথেষ্ট গুজব ছড়ানো হয়েছে সেটা বুঝতে এরফানের বেশি সময় লাগল না। ওর অভিবাদনের জবাবে কেবলমাত্র দুএকজনই নড় করল। বার্ট, ডোভার, পাগলা মার্টির সাথে আরও কয়েকজন একত্রে দাড়িয়ে গল্প করছে। লেজি এমের ফোরম্যান সোজা ওদের দিকে এগিয়ে গেল।
বার্ট, বলল সে। শুনলাম তুমি গুজব ছড়াচ্ছে যে আমিই নাকি জ্যাক মাস্টারসনকে হত্যা করেছি?
এমন সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে একটু ভেবাচেকা খেয়ে গেল বার্ট। এটা সে মোটেও আশা করেনি। কয়েক মুহূর্তেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে একটু অবজ্ঞার হাসি হেসে জবাব দিল, ধরো কথাটা আমিই বলেছি, তাতে কি হয়েছে?
শুধু এটাই, হয় তুমি এর প্রমাণ দেবে-নয়ত মিথ্যা রটনার জন্যে ক্ষমা চাইবে, অথবা লড়বে।
আমি তোমার কথায় চলি না, জবাব দিল সে।
না? ভাল কথা, তাহলে এটা হজম করো, ব্যাটা কাপুরুষ।
কথা শেষ করেই এক পা আগে বেড়ে খোলা হাতে ওর গালে প্রচণ্ড একটা চড় বসাল এরফান। চড়ের বেগে টলতে টলতে পিছিয়ে গেল বাট। রাগে দিশেহারা হয়ে খাপ থেকে পিস্তল অর্ধেক বের করে ফেলল। এই সময়ে একটা গম্ভীর স্বর ওকে সাবধান করল:
ওটা খুব ভুল হবে!
বার্ট একটু ইতস্তত করে অবাক হয়ে বিস্ফারিত চোখে দেখল এরফানের ডান হাতের কোল্টটা ওকে কাভার করে রয়েছে। অত্যন্ত দ্রুত ড্র করতে পারে বলে বহুদূর পর্যন্ত ব্ল্যাক বার্টের সুনাম আছে। কিন্তু উপস্থিত সবাই দেখল এরফানের তুলনায় সে ছেলেমানুষ। প্রায় তিরিশ সেকেন্ড সম্পূর্ণ নীরবতার মধ্যে কাটার পর পিস্তল হাতে লোকটা আবার কথা বলল।
বার্ট, তুমিই আগে পিস্তল বের করার জন্যে হাত বাড়িয়েছিলে তাই এখন আমি তোমাকে মেরে ফেললেও সেটা অন্যায় হবে না। তুমি একেবারে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো, এক ইঞ্চি নড়লেই আমি তোমাকে সোজা নরকে পাঠিয়ে দেব।
বক্তার কড়া অ্যাসিডের মত স্বর বিশাল লোকটার কানে ঢুকে মগজ একেবেরে অকেজো করে দিল। খাপ থেকে অর্ধেক বের করা পিস্তলটা এখনও হাতের মুঠোয় ধরা রয়েছে; কিন্তু ওটা ওঠাবার সাহস পাচ্ছে না। জানে একটু নড়তেই সামনে দাঁড়ানো লোকটা ওকে গুলি করে মেরে ফেলতে দ্বিধা করবে না। এরফানের কৃপার পাত্র হয়ে একেবারে স্থির দাঁড়িয়ে আছে বার্ট।
ব্র্যান্ডিঙের জন্যে বাঁধা গরুর মত নিরুপায় অবস্থা। এবার এরফান যা বলল তাতে কামরার লোকজনের টানটান উত্তেজনা কিছুটা হ্রাস পেল। কিন্তু সবাই জানে ঘটনা পুরো শেষ হয়নি।
আমি প্রমাণ করে দেখিয়েছি, তোমাকে মেরে ফেলা আমার পক্ষে কতটা সহজ ছিল; কিন্তু আমার নিজস্ব ব্যক্তিগত একটা কারণে আমি তোমাকে আরও কিছুদিন বেশি বাড়ার সুযোগ দিচ্ছি।
নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে বার্টের চেহারায় স্বভাবজাত অবজ্ঞার ভাবটা আবার ফিরে এলো। এরফানের পরবর্তী চালের অপেক্ষায় আছে সে। ফোরম্যান যখন আবার মুখ খুলল তখন গমগমে নিচু স্বরেই কথা বলল।
আমি শুনলাম তুমি নাকি আমাকে শায়েস্তা করার একটা সুযোগ খুঁজছ, বার্ট। তাই তোমাকে তোমার গানবেল্ট খুলে ফেলে খালি হাতে লড়ার সুযোগ দিচ্ছি আমি; কারণ পিস্তলে তুমি আমাকে কোনদিনই হারাতে পারবে না।
প্রস্তাবটা শুনে কিছুক্ষণ অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকল, তারপর চোখদুটো একটা নারকীয় আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল বার্টের। ওখানে সবাই জানে তার সাথে হাতাহাতি লড়াইয়ে পারার মত লোক এ-দেশেই কেউ নেই। আর এই লোকটা কিনা স্বেচ্ছায় নিজেকে ভেড়ার মত বলি দিতে চাইছে।
টিমের মুখের ভাবে গজর উদ্বেগ প্রকাশ পেল। সে ফিসফিস করে বলল, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? ওই লোক ডেজার্ট এজে একজনকে খালি হাতে পিটিয়েই হত্যা করেছে।
ভয়ের কিছু নেই, বন্ধু, শান্ত স্বরে বলল এরফান।
দুজনই তাদের শার্ট, পিস্তলের বেল্ট আর স্পার খুলে তৈরি হলো; ইতোমধ্যে আগ্রহী দর্শকরা কামরার মাঝখান থেকে টেবিল-চেয়ার সরিয়ে। জায়গাটা খালি করে দিল। ড্রিঙ্ক আর তাস খেলার কথা সবাই ভুলে গেছে। লড়াই দেখতে সবাই ঠাসাঠাসি করে গোল হয়ে দাড়িয়েছে। শহরের প্রায় সবাই ওখানে হাজির আছে। কথাবার্তা আর তর্কাতর্কির শব্দও এখন একেবারে থেমে গেছে।
কামরার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এরফান তার প্রতিপক্ষকে লক্ষ করছে। লোকটা উচ্চতা আর ওজন দুদিক দিয়েই বড় এবং ভারী। ভাল করেই জানে একটা ঝুঁকি নিচ্ছে সে। লোকটার বয়স তার চেয়ে বেশি হলেও এখনও খুব শক্ত। তবু এরফান মোটেও তোয়াক্কা করছে না। এটা জিদের লড়াই।
দর্শকদের কাছে মনে হচ্ছে এটা নেহাত অন্যায় প্রতিযোগিতা, লড়াইটা মোটেও সমানে সমানে হচ্ছে না। ওরা দেখছে র্যাঞ্চারের প্রতিটা নড়াচড়ায় তার শক্তিশালী পেশীগুলো কিলবিল করে নড়ে উঠছে। তার সামনে এই কাউবয়ের দাঁড়াতে পারার কোন প্রশ্নই ওঠে না। কারও মনেই লড়াইয়ের ফলাফল সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই। পাশবিক শক্তি দিয়ে জেমসের মাথা ফাটিয়ে ঘিলু বের করে ছাড়বে বার্ট।
লবণ ছাড়াই জেমসকে খেয়ে ফেলবে আজ, মন্তব্য করল একজন।
কাজটা বার্ট যত সহজ মনে করছে তত সহজ হবে না, বলল একজন প্রতিবেশী। লোকটা এতক্ষণ এরফানকে খুঁটিয়ে দেখছিল; ‘কাটাতার আর শুকনো চামড়ার মত শক্ত ওর পেশী, বলল সে।
তা যা-ই হোক, আমি এক ডলারের বদলে দুই ডলার বাজি ধরতে রাজি আছি বার্টের পক্ষে, জোর গলায় ঘোষণা করল প্রথম বক্তা।
আমি পঞ্চাশ ডলার ধরলাম জেমসের ওপর, বলল টিম।
এরফানের দুএকজন বন্ধু টিমকে সমর্থন করল বটে, কিন্তু আর কেউ বাজি ধরল না। ৰাজির শর্তের হার বাড়ানোর পরেও কেউ আর বাজি ধরল না দেখে বার্ট সশব্দে হাসল।
তোমরা কেউ আর বাজির টাকা জিততে পারলে না দেখে আমি দুঃখিত, বয়েজ, খুব সহজেই তোমরা টাকাটা অর্জন করতে পারতে। আমি ওর দেহের সবকটা হাড় ভেঙে দেব।
মুখে সস্তা ফটফট করা সহজ, গর্জে উঠল এরফান। এগিয়ে এসে কাজটা করে দেখাও-মিস্টার মাস্ক।
কথাটা খুব নিচু স্বরে বলেছে, এরফান। কোলাহলরত দর্শকরা কেউ না শুনলেও বার্টের কানে ওটা ঠিকই পৌঁছেছে। সে যে একটু চমকে উঠল সেটা এরফান লক্ষ করে ফেলেছে দেখে খিস্তি করল সে।
কয়েক সেকেন্ড পরস্পরের দিকে চেয়ে দাড়িয়ে রইল ওরা। কিন্তু তারপরেই প্রথম ঘুসিটা নিজেই মারার উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ বেগে আগে বেড়ে বার্টের পেটে দুহাতে দুটো জোরালো ঘুসি বসিয়ে দিল এরফান। প্রতিপক্ষ সামলে ওঠার আগেই তার হাতের আওতা থেকে সরে এলো। প্রচণ্ড রাগে একটা হুঙ্কার ছেড়ে বিশাল পাকানো মুঠিতে দুহাতে ঘুসি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ছুটে এগিয়ে এলো বার্ট। ওগুলোর যেকোন একটা ঠিক মত লাগলে ওই মুহূর্তেই লড়াই শেষ হয়ে যেত। খুব সাবধানে লড়ছে এরফান। জানে কাছাকাছি রেঞ্জে লড়তে গেলে সে-ই অসুবিধায় পড়বে। তার জেতার একমাত্র উপায় হচ্ছে শত্রুকে সব সময়ে চক্করের ওপর রেখে লোকটা একটু অসাবধান হলেই ঝট করে এগিয়ে কয়েকটা ঘুসি বসিয়ে আবার পিছিয়ে আসা। বার্ট ওকে ভীতু মনে করে উৎসাহের সাথে বারবার এগিয়ে ওর ফাঁদে পা দিয়ে মার খাচ্ছে।
এরফান ওর চারপাশে নেচে বেড়াচ্ছে; আর মাঝেমাঝে হঠাৎ এগিয়ে ভীমরুলের মত হুল ফুটিয়ে ফিরে এসে আবার নাচা শুরু করছে। এরফানের লড়ার পদ্ধতি শুধু র্যাঞ্চারকে নয়, তার বন্ধুদেরও বিরক্ত করে তুলেছে। এখন পর্যন্ত বার্ট এরফানকে ছুঁতেও পারেনি; তাই ওদের থেকে মাঝেমাঝে রাগ মেশানো রব উঠছে: স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পুরুষের মত লড়ো।
ওদের কথাকে কোন পাত্তা দিল না এরফান। সে ভাল মতই জানে ওদের কথা শোনার ফল কি দাঁড়াবে। এর আগেও ওর চেয়ে ভারী মানুষের বিরুদ্ধে সে বহুবার লড়েছে। আগের পদ্ধতিই ব্যবহার করে সে ঝট করে ভিতরে ঢুকে পেটে বা পাজরে ঘুসি মেরে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসছে। লড়াই শেষ করার আগে শক্তিশালী লোকটাকে বডি পাঞ্চে দুর্বল করে নেয়াই ওর উদ্দেশ্য। কিন্তু উত্তেজিত দর্শকরা কাছে থেকে লড়াইটা ভাল করে দেখার জন্যে ধীরেধীরে এগিয়ে এসে খালি জায়গাটাকে আরও ছোট করে তুলছে।
টিম এবং আরও দুএকজনের চেষ্টায় বৃত্তটা ছোট হওয়া অল্প সময়ের জন্যে স্থগিত থাকলেও ওটা আবার ছোট হতে শুরু করল; অবশ্য এটা বার্টের সমর্থকদেরই সমবেত চেষ্টার ফল। বার্ট এই সুযোগের পুরো সদ্ব্যবহার করল। ঘুসি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগিয়ে এলো সে। যতগুলো সম্ভব কাটিয়ে, এরফানও সমানে মেরে চলল; কিন্তু এতে ওকেও যথেষ্ট মার হজম করতে হলো। সে আগেই পেট আর পাজরকে বার্টের দুর্বল জায়গা হিসেবে টার্গেট করেছে, তাই ওখানেই সে মেরে চলেছে। লোকটা যে দুর্বল হয়ে এসেছে তা এরফানের প্রতিটা ঘুসির সাথে ওর ব্যথায় মুখ কুঁচকানো দেখেই বুঝতে পারা যাচ্ছে।
মার অবশ্য লেজি এম ফোরম্যানও কম খায়নি। সবকটা ঘুসি কাটানো ওর পক্ষে সম্ভব হচেছ না; ওই মুহূর্তে হাত ঘুরিয়ে মারা একটা প্রচণ্ড ঘুসি সোজা এরফানের কপালে লাগল। হাঁটু মুড়ে পড়ে গেল সে। বার্টের সমর্থকদের হর্ষধ্বনির মাঝে র্যাঞ্চার ছুটে এসে ওর মাথা লক্ষ্য করে লাথি মারল এরফান। ঠিক সময় মতই ওর মাথা সরিয়ে নিয়ে দুহাতে পায়ের গোড়ালি শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড়াল। ভারসাম্য হারিয়ে দড়াম করে মেঝের ওপর উল্টে পড়ল বার্ট। শক্ত কাঠের মেঝেতে তার মাথা সজোরে ঠুকে গেল। ভারী দেহ নিয়ে আছাড় খেয়ে ওখানেই পড়ে জোরে জোরে শ্বাস টানছে লোকটা। এরফান স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। ওখানে ওর জায়গায় বার্ট থাকলে লাথি মেরে শত্রুর মাথা সে ছাতু করে দিত; কিন্তু এরফান ওভাবে লড়ে না। উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে দর্শকরা সবাই নীরবে অপেক্ষা করছে। এই সময়ে কেউ ব্যঙ্গভরে বলে উঠল, গুড নাইট, বাট; প্লেজেন্ট ড্রীমস!
ইলেকট্রিক শক খেয়েই যেন ক্রোধে উন্মত্ত বার্ট লাফিয়ে উঠে এরফানের দিকে ছুটে এলো। কিন্তু এবারে এরফান তার জায়গা থেকে একটুও নড়ল না। পরবর্তী কয়েক মিনিট দুজনের তুমুল লড়াই চলল-দুজনেই সমানে ঘুসি ছুঁড়ছে। নিজেকে গার্ড দেয়ার কথা যেন ওরা ভুলেই গেছে। পরস্পারকে আঘাত করে কাবু করে ফেলার জন্যে ওরা হন্যে আর বুনো হয়ে উঠেছে। এরফান জানে এটা করা ওর পাগলামি হচ্ছে, কিন্তু যে কাপুরুষ লোকটা ওকে বেকায়দা অবস্থায় পেয়ে মাথায় লাথি মারার চেষ্টা করেছিল, তাকে মেরে তার মুখটা ফাটিয়ে দেয়ার নেশা ওকে পাগল করে তুলেছে। ও দেখতে পাচ্ছে এরই মধ্যে বার্টের একটা চোখ বুজে আসতে শুরু করেছে। বুঝতে পারছে সে নিজেও দুর্বল হয়ে পড়ছে, ওর মাথাটা ঝিমঝিম করছে, হাত দুটোও সীসার মত ভারী হয়ে উঠছে, কিন্তু ও জানে, ওর প্রতিপক্ষের অবস্থাও ওর চেয়ে কোন অংশে ভাল নয়। শক্ত আছাড় ওকে বেশ কাবু করে ফেলেছে; শ্বাস নিতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে, গালটাও ফেটে রক্ত ঝরছে, তার ঘুসিতেও আর আগের মত সেই জোর নেই। নড়াচড়াও এখন অনেক ধীর হয়ে গেছে।
জেমসের ওপর ইভন মানি, চিৎকার করে ঘোষণা করল যে-লোকটা বার্টকে গুড নাইট জানিয়েছিল।
লোকটা যদি বার্টকে খেপিয়ে তুলে ফাইটে নতুন উদ্দম ফিরিয়ে আনার জন্যে কথাটা বলে থাকে, তাহলে তার উদ্দেশ্য সফল হলো। এখন উৎসাহী দর্শকের দল খালি জায়গাটাকে প্রায় অর্ধেক করে ফেলেছে দেখে বার্ট আবার এগিয়ে এলো। এবার শুরু হলো হাড্ডাহাডিড লড়াই। কেবল হাড়ে হাড়ে ঠোকাঠুকি আর ফুপিয়ে শ্বাস নেয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রচণ্ড একটা ঘুসি আসতে দেখে সময় মতই ডান পাশে সরে গেল এরফান। ঘুসিটা নিষ্ফল ভাবে। গলা ঘেঁষে ওর কাঁধের উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল। সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাল জেসাপ, কাঁধের পুরো ওজন ব্যবহার করে বাম হাতে জোরালো একটা ঘুসি বসাল বাটের কণ্ঠার ওপর। বাটের চোখের সামনে থেকে সেলুনের আলো আর উৎসাহী দর্শকের দল অদৃশ্য হলো। সে কেবল ওর সামনে দাঁড়ানো এরফানের কঠিন বুনো চেহারাটা দেখতে পাচ্ছে। জ্ঞান হারাবার আগে শেষ চেষ্টায় বার্ট ওর মুখ লক্ষ্য করে একটা ঘুসি মারল। মুহূর্তের জন্যে এরফান চোখে অন্ধকার দেখল। আবার দৃষ্টি ফিরে এলে সে দেখল টিম আর কাভানা ওকে ঠেকা দিয়ে ধরে আছে, আর বার্ট অচেতন হয়ে একটা অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে মেঝের ওপর পড়ে আছে। দর্শক কয়েকজন নিঃসঙ্কোচে হেসে এরফানকে অভিনন্দন জানাল। কিন্তু যদিও বেশিরভাগ দর্শকই এতে খুশি হতে পারেনি, তবু ওদের চেহারা বা আচরণে সেটা প্রকাশ পেল না। ক্ষীণ একটু হাসি দিল এরফান; অত্যন্ত ক্লান্ত সে, ওর গলা দিয়ে স্বর বেরোতে চাইছে না।
কি ঘটেছে? জিজ্ঞেস করল সে।
কি ঘটেছে? পুনরাবৃত্তি করল টিম। ওহ, এমন কিছুই ঘটেনি! তুমি কেবল ওর চিবুকে একটা টোকা দিয়েছ-শুয়ে শুয়ে ওটার কথাই ভাবছে বাট। আমার ধারণা এক রাতের জন্যে ওর যথেষ্ট হয়েছে। চলো, ফেনটনের সেলুনে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে একটু পরিচ্ছন্ন হও। মুখ দেখে তোমার ওপর ইন্ডিয়ান হামলা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
মেঝের ওপর পড়ে থাকা মানুষটাকে ঘিরে জটলা থেকে কোন বাধাই এলো; ওরা কাম এগেইন সেলুন ছেড়ে নির্বিঘ্নেই বেরিয়ে রাস্তায় নামল। কেবল খাটো গড়নের এক কমবয়সী কাউবয় গোপনে ওদের যাওয়া লক্ষ করল। লোকটার পা দুটো অনবরত রাইডিঙের কারণে ধনুকের মত বাকা। ঊরুর সাথে নিচু করে বাঁধা দুটো পিস্তল ঝুলছে-ওগুলোর কালো বাঁট দুটো বহুল ব্যবহারে কিছুটা ক্ষয়ে গেছে। লোকটাকে এরফান খেয়াল করলেও কোন পাত্তা দিল না।
দা সান অভ এ গান, বিড়বিড় করে আউড়ে লোকটা নিজের ঘোড়ার খোঁজে বার ছেড়ে বেরিয়ে এলো।
ঘণ্টাখানেক পরে ফোরম্যান তার চেহারা থেকে মারপিটের চিহ্ন যতটা সম্ভব দূর করে লেজি এমের ট্রেইল ধরল। দেহে প্রচণ্ড ব্যথা থাকলেও মনটা তার অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে ভরে উঠেছে।
শহর থেকে এরফান মাত্র মাইলখানেক এগিয়েছে, এই সময়ে তার ঘোড়াটা হেষাধ্বনি করে উঠল। একটা ঝোঁপের আড়ালে কিছু নড়ে উঠতে দেখল জেসাপ।
হাইস্ট দেম, (হাত তোলো) একটা স্বর আদেশ দিল, কিন্তু ওই স্বরের পিছনে রয়েছে একটা হাসির আভাস।
হাইস্ট না ছাই, বলল এরফান। ইয়ার্কি ছেড়ে ঝোঁপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসো ইয়র্কি। আর তোমার আচরণ ব্যাখ্যা করো-তোমাকে আমি র্যাঞ্চেই থাকার নির্দেশ দিয়েছিলাম।
কি করব, তোমার বসের নির্দেশ! ইয়েস স্যার, মিসেস রাকা জেসাপ। হাসি থামাবার চেষ্টায় কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে আবার সে বলে চলল, জানি, বিয়ের পরে বেশ কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও সে এখনও তোমার বস। এবং আমারও। সে আমাকে বলল, ইয়ার্কি, আমি আমার স্বামীর একটা চিঠি পেলাম, তাতে সে লিখেছে সব কিছু শান্ত এবং নিঝঞ্ঝাটেই চলছে। তাই আমাকে তখনই আদেশ দেয়া হলো এখানে হাজির হয়ে নিজের চোখে সব দেখে গিয়ে, রিপোর্ট করতে হবে। তার ধারণা তুমি যত বেশি ভাল চলছে বলো, ঝামেলা নাকি ততই জটিল হয়। সে নিশ্চিত এবারে তুমি বেশি ঝামেলায় পড়ে গেছ। তুমি যে সত্যিই একটা ভাল বউ পেয়েছ তাতে কোন সন্দেহ নেই-যখন খুশি ঘোড়ার পিঠে চড়ে বেরিয়ে পড়ো, কেউ বাধা দেয় না। আমারও মনে হচ্ছে এবার বড় একটা ঝামেলাতেই পড়েছ তুমি।
(এই ইয়র্কিকেই আবার এরফান অভিযানে সে যক্ষ্মায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। ভালবাসা দিয়ে সিগারেট ছাড়িয়ে এবং রোজ পাইন বনে নিয়ে পাইনের তাজা হাওয়া খাইয়ে আর সাঁতার কাটিয়ে ওর নিত্য সঙ্গী হয়ে ওকে ওর প্রথম নিজস্ব পিস্তল, ঘোড়া, আর ঘোড়ার জিন, রাইফেল; এসবও এরফানই কিনে দিয়েছিল। এরপরে ইয়র্কি আর জেসাপের পিছু ছাড়েনি; ওর সাথেই ওর র্যাঞ্চে গিয়ে এতদিন কাটিয়েছে। রোপিং থেকে শুরু করে ফাঁদ পাতা, পিস্তল আর রাইফেলের ড্র করায় সে এখন প্রায় এরফানের মতই দক্ষ হয়ে উঠেছে। স্যান্ডি বেন্ডের ডাবল বার ছাড়ার পর থেকে সে এরফানের র্যাঞ্চেই আছে।)
বিষণ্ণ মুখে একটু হাসল এরফান। আমি মেয়েদের কখনও বুঝে উঠতে পারলাম না, বলল সে। ওদের ধোকা দেয়া সত্যিই অসম্ভব। আমি যদি লিখতাম আমি একটু সমস্যায় আছি, তবু সে তোমাকে পাঠাত। ওখানকার আর সবাই কেমন আছে?
সিল্কের মত মসৃণ, জবাব দিল ইয়র্কি। তোমার ছেলে জিম এখন আমার সাথে সমানে সমানে পাল্লা দেয়, অথচ বয়স মাত্র সতেরো! সে যে বড় হলে তার বাপকেও ছাড়িয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আর লীয়াও (আর কতদূর দ্রষ্টব্য) বেশ বড়সড় হয়ে উঠেছে। তবে এখন সে আর জিমের পিছন পিছন আগের মত বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায় না। রাকা ওকে নিখুঁত লেডি বানিয়ে ফেলেছে।
আমিও তাই আশা করেছিলাম, গর্বের সাথে বলল এরফান তা তুমি এখানে কখন এসে পৌঁছলে?
ঠিক সময় মতই, শোটা পুরোই দেখেছি, এরফান।
এখানে আমি আর এরফান জেসাপ নই, আমি এখন জেমস গ্রীন। কথাটা মনে রেখো, ওকে সাবধান করল এরফান।
তোমার শেষ ঘুসিটা ছিল একেবারে ঘুসির বাপ, বলল ইয়র্কি। আমি এসে পড়ায় ভালই হয়েছে। এখানকার পরিস্থিতি আমার কাছে বেশ উত্তপ্ত বলেই মনে হচ্ছে।
সত্যি কথা বলতে গেলে ব্যাপারটা তাই দাঁড়ায় বটে।
যতটা সম্ভব সংক্ষেপে এখানকার পরিস্থিতি ওকে জানাল এরফান।
তুমি কি শেডি নামে কারও কথা উল্লেখ করেছিলে?
কেন, তুমি ওকে চেনো নাকি?
না, ঠিক চিনি না বটে, তবে ওর কথা আমি অনেক শুনেছি। শুনেছি ওর আঙুল ছাড়া আর সব কিছুই নাকি বাঁকা। এখন তুমি আমাকে কি করতে বলো?
তুমি হোপেই থাকো, মনে রেখো, এখনকার মত তুমি আমাকে চেনো না, জবাব দিল এরফান। শহরে ফেনটনের একটা ছোট সেলুন আছে, লোকটা সৎ। টিমের র্যাঞ্চ আছে রিজের ওপর, সেও ভাল লোক; আজ তুমি ওকে দেখেছ, ফাইটের পর সে আর তার একজন কর্মচারী আমাকে কাম এগেইন সেলুন থেকে ধরাধরি করে বের করে এনেছিল। ওদের ছাড়া শহরের আর কাউকে বিশ্বাস কোরো না-করলে ঠকবে। তুমি হচ্ছ আমার আরেকটা তুরুপের তাস। এখন তোমার শহরের পথ ধরাই ভাল। আপাতত বিদায়।
ইয়র্কি শহরের দিকে রওনা হয়ে গেল; এরফানও লেজি এমের ট্রেইল ধরে এগোল। তাঁর নিজস্ব এ. জে. র্যাঞ্চ থেকে কেউ আসায় এখন এরফানের মনের জোর অনেক বেড়ে গেছে।
১৪.
পরদিন সকালে বাঙ্কহাউসে নাস্তা খেতে বসে ফোরম্যানের বিক্ষত চেহারা সবার মনেই কৌতূহল জাগাল, কিন্তু কেউ কোন মন্তব্য করল না। র্যাঞ্চহাউসে লরির চামরায় পৌঁছা’নোর পথে ফিলের দেখা পেল না এরফান। এরফানকে দেখে আহত লরি স্লিঙে ঝুলানো হাত নিয়েই বিছানার ওপর উঠে বসল। এরফান দেখল .৪৫-এর গুলি খাওয়ারও কিছু সুবিধা আছে। ফিলের অনুপস্থিতিতে সে অন্যান্য কাউবয়ের মত চুপ করে থাকল না।
তুমি আবার কে? ঠাট্টা করে প্রশ্ন করল লরি।
আমি হয়ত ইউনাইটেড স্টেইটসের প্রেসিডেন্ট হতে পারি, কিন্তু তা আমি নই, বলল এরফান।
ওকে খুঁটিয়ে লক্ষ করে সে বলল, আমার পছন্দ হচ্ছে না।
কি পছন্দ হচ্ছে না, রামছাগল?
তোমার এই চেহারার ভোল পালটানো; অবশ্য আগেরটাও এমন কিছু সুন্দর ছিল না। এই! আমার হ্যাট ছেড়ে ওঠো।
ফোরম্যান ইচ্ছে করেই যে চেয়ারের ওপর লরির স্টেটসনটা রাখা আছে বসার জন্যে সেই চেয়ারটাই বেছে নিয়েছিল। উঠে সে লরির চ্যাপটা হ্যাটটা হাতে তুলে নিল।
এই পুরোনো হ্যাট দিয়ে আর কতদিন চালাবে? হাড়কিপটে লোকও তো বেশি পুরোনো হয়ে গেলে নতুন হ্যাট কেনে! মন্ত্য করল সে। আরে, শান্ত হও; অসুস্থ মানুষের বেশি উত্তজিত হওয়া ঠিক নয়। আজকাল প্রিনসেস তোমার কেমন যত্ন নিচ্ছে?
সে একজন লেডি, এরফান, জবাব দিল কাউবয়।
আমাকে আবার ওই নামে ডাকলে আমি ফিলকে জানিয়ে দেব তুমি আমার বন্ধু, হুমকি দিল এরফান।
কসম লাগে, ওই কাজটা তুমি ভুলেও করতে যেয়ো না। কিন্তু তোমার এই ছদ্মবেশ নেয়ার কারণটা তুমি এখনও বলেনি।
এটা কোন ছদ্মবেশ নয়, হাঁদারাম। গতরাতে বার্টের সাথে আমার সামান্য মতবিরোধ ঘটেছিল, এই যা।
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল, সব শোনার পর বলল সে। যখনই আমি তোমার দেখাশোনার জন্যে পাশে নেই তুমি তখনই একটা গোলমাল পাকিয়ে বসো খোঁচা দেয়া শেষ করে সে আবার বলল, ও যে আজ সকালে কেমন বোধ করছে আমি তা বেশ আন্দাজ করতে পারছি, এরফান।
ওহ, ওই লোকটা মানুষ নয়, ও একটা গরিলা। হ্যাঁ, আর একটা কথা, ভাল হয়ে ওঠার পর শহরে যদি ইয়র্কির সাথে তোমার দেখা হয় তাহলে তুমি ওকে চেনো না, বুঝলে?
এই! এটা কি ধরনের কথা হলো?
যাওয়ার জন্যে আগেই উঠে দাঁড়িয়েছিল; ওর কথার কোন জবাব না দিয়ে বেরিয়ে গেল এরফান।
ফেরার পথেও ওই চেহারা নিয়ে ফিলের সামনে না পড়ায় সে নিজের কামরায় ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মেয়েটার সামনে পড়ে গেলে অযথা ওকে অনেক ব্যাখ্যা দিতে হত।
আসলে লরির কামরায় ঢুকতে যাওয়ার পথে ভিতরে এরফানের গলার স্বর শুনে সে দরজার কাছেই থেমে দাঁড়িয়েছিল। যতটুকু সে শুনেছে তাতেই সে বুঝেছে লরি তাকে ধোকা দিয়েছে। নিজের শোবার ঘরে বিছানার ওপর বসে শূন্যদৃষ্টিতে জানালার দিকে চেয়ে সে ভাবছে ও কি জেগে আছে, নাকি স্বপ্ন দেখছে। লরি জেমসকে আগে থেকেই চেনে, এবং জেমস আসলে ছদ্মনাম নিয়ে কাজ করছে এখানে। ওর আসল নাম এরফান। এসবের মানে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত এর কোন কূল-কিনারা না পেয়ে সে কান্নায় ভেঙে পড়ল।
বার বির মালিক সম্পর্কে লরির ধারণা একেবারে পুরোপুরি ঠিক-লোকটা মানসিক এবং দৈহিক, দু’ভাবেই সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। বিকৃত চেহারা নিয়ে কারও সামনে মুখ দেখাবার জো নেই ওর, তাছাড়াও শহরের সবার সামনে এভাবে। এরফানের কাছে মার খেয়ে মানসম্মান একেবারে ধুলোর সাথে মিশে গেছে। সে। র্যাঞ্চহাউসে বসে ও-কথা নিয়েই ভাবছে। তার কথা শুনতে শুনতে ফোরম্যানের চেহারায় একটা ক্ষীণ উদ্ধত ভাব ফুটে উঠেছে।
মিছে গালাগালি করে আমাদের কোন লাভ হচ্ছে না, শান্ত স্বরে বলল ডোভার। আমার কাছে তোমার জন্যে কিছু খবর আছে, কিন্তু সেটা ঠিক সুখবর নয়।
মনে হয় ইদানীং আমরা সুখবর পাওয়া ভুলেই গেছি, বলল বার্ট। বলে ফেলো, বলতে পুরো সপ্তাহ লাগিয়ো না।
আমাদের হাতে এখন প্রচুর সময় আছে। কিন্তু সে যাই হোক, খবরটা সম্পর্কে আমি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নই, ঠাণ্ডা স্বরে বলল ফোরম্যান। আমরা সবাই জানি পিস্তল ড্র করায় তুমি যথেষ্ট ফাস্ট, তাই না?
আমার চেয়ে ফাস্ট কারও দেখা অন্তত আমি এখনও পাইনি, স্বীকার করল, বার্ট।
তার মানে গতরাতের আগে, এই তো? বলে চলল ডোভার। জেমসের তুলনায় তুমি ছিলে অত্যন্ত স্লো। অথচ এর চেয়ে দ্রুত ড্র করতে তোমাকে আমি আগে কখনও দেখিনি। তবু জেমস তোমাকে খুবই সহজে হারিয়ে দিল।
তুমি কি বোঝাতে চাইছ? তিক্ত স্বরে প্রশ্ন করল বার্ট, কারণ ফোরম্যানের মুখে বসের সমালোচনা ওর ঠিক পছন্দ হচ্ছে না।
হ্যাচেটস ফলি থেকে টারম্যানের দলটাকে কে শেষ করেছিল তা তোমার মনে আছে?
বিদ্যুৎ এরফান, বলল সে। তুমি বলতে চাও জেমসই-
আমি তাই আঁচ করছি, বাধা দিয়ে বলে উঠল ডোভার। এ ছাড়া আর কেউ তোমাকে এমন ছেলেমানুষের মত হারাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
বার্টের ফোলা মুখটা যেন আরও একটু ফেকাসে হলো। ডোভারের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে সে ড্র করার চেষ্টা করে মৃত্যুর দুয়ার থেকেই ফিরে এসেছে। এরফান ওই টারম্যানের গরু চোরের দলটাকে ধ্বংস করার পর সৎ কাউম্যান হয়ে একেবারে হারিয়ে গেলেও টপ আউটল গানম্যান হিসেবে ওর সুনাম এখনও মানুষ ভুলে যায়নি।
বার্ট নীরবে বসে রইল। ভুরুতে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে ওর বিকৃত মুখ এখন আরও কুৎসিত দেখাচ্ছে। সে যখন আবার মুখ তুলে চাইল তখন তার চেহারা দৃঢ় আত্মবিশ্বাসে কঠিন হয়ে উঠেছে।
এরফান জেসাপই হোক বা না হোক, সেও মানুষ, এবং আমি ওকে যেমন করে পারি শেষ না করে ছাড়ব না, বলল বার্ট। ওর সম্পর্কে যেসব গল্প শোনা যায় সেগুলো যদি সত্যি হয় তবে সে কয়েকবারই ফাঁসিতে ঝোলার থেকে বেঁচে গেছে। কিন্তু ওর কপাল সবসময়েই এমন ভাল যাবে তার কোন কারণ নেই। শোনো, তোমার এই ধারণার কথা যেন গোপন থাকে সেদিকে তুমি খেয়াল রেখো। এই কথা যদি কোনক্রমে প্রকাশ হয়ে পড়ে তাহলে শহরের সবকটা ভীত কয়োটি ওকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে ওর কথা মতই চলবে।
কথাটা বাইবেলের বাণীর মতই সত্যি, স্বীকার করল ডোভার। বিশেষ করে ওর কাছে গতরাতে মার খাওয়ায় শহরের লোকজনের কাছে তোমার মর্যাদা অবশ্যই ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ওকে এখন আমাদের শেষ করতেই হবে, নইলে সে-ই আমাদের শেষ করবে। ওর জন্যে আমার ওষুধ হচ্ছে পিঠে একটা বুলেট। কিন্তু তোমার হয়ত অন্য কোন প্ল্যান থাকতে পারে।
আমার আস্তিনের নিচে একটা ভাল তাস লুকানো আছে, যার কথা এখনও কেউ জানে না, বলল বার্ট। ঠিক সময় মতই ওটা আমি খেলব; এবং খেলায় জেতার জন্যে ওই একটা তাসই হবে যথেষ্ট।
ডোভার বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পরও র্যাঞ্চার অনেকক্ষণ ওখানে বসে চুরুট চিবাচ্ছে। চিন্তায় তার কপালে গভীর ভাঁজ পড়েছে। কিন্তু লেজি এম পাওয়ার জন্যে তাকে যে-কোন উপায়েই হোক লড়তে হবে-এবং ওই মেয়েটাকেও তার চাই। ওদের শেষ সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে তার মুখ থেকে একটা গালি বেরিয়ে এলো।
ইচ্ছায় হোক, বা অনিচ্ছাতেই হোক, মেয়েটাকে আমার পেতেই হবে, দাঁত কিড়মিড় করে বলল সে। এবং যে বাগড়া দিচ্ছে–বাকিটা অসমাপ্তই রাখল বার্ট।
*
বিশাল লোকটা বর্ষাকালে পানির তোড়ে তৈরি একটা গভীর নালার ঢাল বেয়ে এঁকেবেঁকে তার পেপানিকে উপরে উঠিয়ে কিছু ঘন ঝোঁপ পেরিয়ে চূড়ায় উঠে খোলা রেঞ্জের দিকে তাকিয়ে খিস্তি করে লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল। ওখানে গোটাছয়েক লোক বেশ নিশ্চিন্ত ধীর গতিতে লেজি এমের গরু জড়ো করছে। ওদের কেউ তার পরিচিত নয়। চট করে রাইফেলটা খাপ থেকে বের করে নিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে ঝাঁপ দিয়ে একটা ঝোঁপের আড়ালে চলে গেল। ঠিক সময় মতই নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে ও, কারণ ওই মুহূর্তেই ঘোড়ার গায়ে ভোঁতা শব্দ তুলে একটা বুলেট এসে বিধল; পরক্ষণেই শোনা গেল রাইফেলের ক্রুদ্ধ গর্জন। ঘোড়াটা মাটিতে পড়ে কিছুক্ষণ পা ছুঁড়ে স্থির হয়ে গেল।
রাইফেলের মাথাটা ঝোঁপের ফাঁক দিয়ে সামান্য একটু বের করে পরপর তিনটে গুলি ছুঁড়ল সে, একজন রাইডারকে ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যেতে দেখে সে সন্তুষ্ট হলো।
আমার ঘোড়াটাকে তোমরা মেরেছ বটে, বলল সে, কিন্তু তার শোধও আমি সাথে সাথেই তুলে নিয়েছি।
সে জানে বর্তমান পরিস্থিতিতে তার বাঁচার কোন আশা নেই। ঘোড়া ছাড়া তার করার কিছুই নেই; এখন ওরা নিজস্ব সময়ে ওকে ঘিরে ফেলে যখন খুশি মারতে পারবে। কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখল রাইডাররা আর কোন গুলি ছুঁড়ল, না; ওরা যত জলদি সম্ভব গরুগুলোকে রেঞ্জ থেকে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হলো। সে আরও কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ল বটে কিন্তু তাতে ওদের কোন ক্ষতি হলো না। যখন রাইডাররা রেঞ্জের ওপর বিন্দুতে পরিণত হলো তখন কাউবয় তার আশ্রয়। ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
অবাক কাণ্ড! বলে উঠল পাঞ্চার। বিষণ্ণ দৃষ্টিতে নিজের ঘোড়াটার দিকে তাকাল। তুমি এমন কিছু ভাল ঘোড়া ছিলে না বটে, কিন্তু তবু বর্তমান পরিস্থিতিতে তোমার জন্যে আমি দুই মাসের বেতনও খুশি মনেই দিতে রাজি হতাম, মন্তব্য করল সে। এখান থেকে ব্ল্যাঞ্চ অন্তত দশ মাইল দূরে। আমার কপাল খারাপ, কি আর করা!
যেসব মানুষ ঘোড়ার পিঠেই বেশিরভাগ সময় কাটায় তাদের জন্যে পায়ে হেঁটে চলা একটা অভিশাপ-তাও আবার কড়া রোদে উঁচু গোড়ালির বুট পরে। তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে রয়েছে চল্লিশ পাউন্ড ভারী জিন আর রাইফেল এবং মাথার সাজ। কিন্তু এই গরু চুরির খবর যত জলদি সম্ভব লেজি এমে পৌঁছে দেয়া খুব জরুরী। মনের ঝাল মিটিয়ে আরও একটা বিচ্ছিরি গালি দিয়ে রওনা হলো কাউবয়।
যাত্রাটা সে যতটা কষ্টের হবে মনে করেছিল তার চেয়েও খারাপ হলো। প্রথম দুই মাইল যেতে না যেতেই ওর পায়ে ফোস্কা পড়ে গেল। এরপর প্রতি পদক্ষেপ হলো অত্যন্ত বেদনাদায়ক। রোদের হাত থেকে বাচার জন্যে মাথার ওপর ধরা জিনটা দ্বিগুণ ভারী হয়ে উঠল। জট পাকানো লম্বা ঘাসে যতবার হোঁচট খাচ্ছে, ওর মুখ থেকে গালি বেরোচ্ছে। শেষে গলা শুকিয়ে এমন অবস্থা যে গালিও বের হলো না আর।
হোঁচট খেতে খেতে একপা একপা করে এগিয়ে চলেছে সে। এখন কেবল মনোবল আর জিদের বশেই এগোচ্ছে লোকটা; যে করেই হোক ওকে নিজেদের। লেজি এম র্যাঞ্চে পৌঁছতেই হবে। এই দুর্ভোগের প্রতিশোধ সে নিয়েই ছাড়বে। কটনউড আর উইলোতে ঘেরা ঝর্নাটার কাছে এসে থামল কাউবয়। বড় একটা। গাছের ছায়ায় জিনটা নামিয়ে রেখে ঝর্ণা থেকে আশ মিটিয়ে পানি খেয়ে পানির বোতলটা ভরে নিয়ে গাছের তলায় বসে সে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার হাটা ধরল। র্যাঞ্চের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে সে। শেষ কয়েকশো গজ প্রায় হামাগুড়ি দিয়েই এগোল ও। বাঙ্ক-হাউসে ঢুকে কোনমতে জিনটা নামিয়ে রেখে সামনের চেয়ারটাতে বসে পড়ল ক্লান্ত লোকটা।
তুমি হেঁটে ফিরতে গেলে কেন? প্রশ্ন করল ল্যাঙ্কি।
কারণ আমার কোন পাখা নেই, গাধা ছেলে, তিক্ত স্বরে জবাব দিল পরিশ্রান্ত কাউবয়। আমার জন্যে কিছু খাবার ব্যবস্থা করে জেমসকে ডেকে আনো। সাপারের সময় আগেই পেরিয়ে গেছে।
এরফান নীরবে বসে ওর সব কথা শুনল।
আবার সেই ব্ল্যাক মাস্ক, না? বলল সে। ওরা আমাদের প্রায় পঞ্চাশটা গরু নিয়ে গেছে?
আমি রাইফেল ছুঁড়ে ওদের কাজ যতটা সম্ভব কঠিন করেও ওদের ঠেকাতে পারিনি, বলল বিগ বয়। ওরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল।
ভাবছি ওরা তোমাকে প্রথমে কেন শেষ করল না, মন্তব্য করল হেনডন।
এর কারণ ওদের সাহসের অভাব। আমি গুলি ছুড়ে ওদের একটাকে বেশ ভালরকম জখম করেছি। আমার পিছনে এলে ওরা অন্তত কিছু লোক মরত।
মাথা নাড়ল এরফান। আমার ধারণা এর পিছনে আরও কিছু কারণ আছে।
পুবের দিগন্তে একটা সোনালি আলো গাঢ় হয়ে হয়ে আরও একটা প্রভাতের আগমন ঘোষণা করল। সমতল রেঞ্জ এবং পাহাড়ের পাদদেশে কিছুটা রক্তাভ রঙের কুয়াশা ঘুরপাক খাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়া থেকে চিমনির ধোয়ার মত বাষ্প উপর দিকে উঠছে। লেজি এম র্যাঞ্চের লোকজন সবাই যেন উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে। কেবল লরি আর রাধুনী ছাড়া আর সবার সাথে এরফান কথা বলছে। শুধু গরু উদ্ধার করেই সে ক্ষান্ত হতে চায় না, চোরদের শায়েস্তা করাও ওর উদ্দেশ্য।
র্যাঞ্চের সবথেকে বিক্ষুব্ধ মানুষ হচ্ছে লরি। তার এই অক্ষম অবস্থার জন্যে নিজেকে সে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছে না। কাউবয়ের দল রওনা হয়ে যাওয়ার পর ওকে শান্ত করতে ফিলের অনেক বেগ পেতে হলো।
কাঁধে চোট পাওয়ার কারণেই আমাকে আজ এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। কথাটা শেষ করেই ফিলের চেহারা দেখে সে টের পেল ভুল কথা বলা হয়ে গেছে। আমি ঠিক ওকথা বোঝাতে চাইনি, কিন্তু-
তুমি বয়েজদের সাথে রাইড করেই বেশি আনন্দ পেতে, কথাটা শান্ত-খুব বেশি শান্ত স্বরে শেষ করল ফিল। লরির যদি মেয়েদের সাথে মিশে ওদের মন জুগিয়ে চলার কৌশল শেখা থাকত তবে সে কখনও ওই কথা বলত না।
বিগ বয় খাওয়া সেরে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে কিছুটা ফ্রেশ হয়ে নেয়ায় সেও ওদের সাথে যোগ দিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে জিদ ধরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দিল। ওরা দেখল ঘোড়াটাকে শকুনে খেয়ে পুরোই শেষ করে ফেলেছে। তবে রাসলারদের যাত্রাপথ খুঁজে বের করতে ওদের বেশি সময় লাগল না। ওরা ট্রেইলটা ঢাকার কোন চেষ্টাই করেনি এটা লক্ষ করে এরফানের মন সন্দিগ্ধ হয়ে উঠল। ট্রেইলটা সোজা উত্তরের পাহাড়ের দিকে কিছুটা দূর এগিয়ে হঠাৎ মোড় নিয়ে ডান দিকে ঘুরে পাহাড়ী জঙ্গলে ঢুকেছে। এরফান সবাইকে রাইফেল বের করে সাবধানে এগোবার নির্দেশ দিল। স্পষ্টতই ওরা গরুগুলোকে নিচের ভাল ঘাসে ভরা বেসিনের দিকে নেয়ার কোন চেষ্টাই করেনি। সরু খাঁজটা ধরে এগিয়ে এক জায়গায় ওটা বারো গজ চওড়া হলো। অ্যামবুশ আশা করে সবাইকে আড়ালেই দাঁড় করিয়ে এরফান, বিগ বয়, আর হেনডন খোলায় বেরিয়ে এসে থেমে দাঁড়ানোর পরও কোন গুলি এলো না। অবাক হয়ে হেনডন এরফানের দিকে তাকাল।
এটা কেমন ধরনের কাজ হলো? প্রশ্ন করল সে। গরুগুলো এখানে কোন পাহারা ছাড়া রাখার কারণ একটাই হতে পারে, আমরা যেন এগুলো সহজে খুঁজে পাই। এর পিছনে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিশ্চয় আছে।
আমার মনে হচ্ছে তুমি ঠিকই বলেছ, হেনডন, স্বীকার করল এরফান। ওরা ট্রাক না ঢেকে একটা টোপ ফেলেছিল, আর সেটা আমি গিলেছি। ওরা কেন আমাদের এখানে টেনে এনেছে তা আমি জানি না, কিন্তু সেটা আমি এখনই দেখছি। তিনজনে মিলে তোমরা সহজেই গরুগুলোকে র্যাঞ্চে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে; বাকি লোক আমার সাথে আসবে।
বিগ বয়ের সাথে আরও দুজনকে গরুগুলো লেজি এম রেঞ্জে ফিরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে এরফান বাকি লোক নিয়ে দ্রুত বেগে র্যাঞ্চে ফেরার পথ ধরল। পথে কোথাও সময় নষ্ট না করেও ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। দূর থেকে সবকিছু স্বাভাবিক দেখালেও র্যাঞ্চের কোথাও এখনও বাতি জ্বলছে না দেখে সাবধান হলো ওরা। ওদের একজন রাঁধুনীকে খাবার তৈরি করার নির্দেশ দিতে চিৎকার করে নিজেদের আগমনবার্তা জানাল। কিন্তু রাধুনীর দিক থেকে কোন সাড়া এলো না।
এখানে নিশ্চয় কোন সমস্যা আছে-চলো র্যাঞ্চহাউসে গিয়ে দেখা যাক, বলে এরফানই প্রথমে এগোল। বাড়িটাও নিস্তব্ধ আর অন্ধকার। ফোরম্যান। পিছনের দরজার দিকে এগিয়ে ওটা ভোলাই পেল। ভিতরে ঢুকে একটা অস্পষ্ট ককানির শব্দে সে থমকে থেমে দাঁড়াল। একটা ম্যাচ জ্বেলে এরফান দেখল আতঙ্কে বিস্ফারিত চোখে রাধুনী ড্যানিয়েল ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে চিনতে পেরে আশ্বস্ত হলো লোকটা। বাতি জ্বেলে ছুরি বের করে চেয়ারের সাথে বাধা বাধন কেটে তার গ্যাগ খুলে দিল এরফান।
ঘটনাটা কি? প্রশ্ন করল।
মুখ শুকিয়ে থাকায় জবাব দিতে কয়েক সেকেন্ড দেরি হলো। সে জানাল, ব্ল্যাক মাস্কের লোক মিস মাস্টারসনকে নিয়ে গেছে।
এরফান সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উপরে উঠে ফিলের কামরায় ঢুকে দেখল রাধুনীর স্ত্রী ডিনাকেও একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। বাঁধন কেটে গ্যাগ খুলে দেয়ার পরও মেয়েটার আতঙ্ক কাটেনি, প্রলাপ বকছে সে। এবার সে লরির কামরায় গিয়ে ওকেও বাধা অবস্থায় দেখতে পেল।
তোমাকে তো প্রায় পরিণত বয়স্ক পুরুষের মতই দেখাচ্ছে, ঠাট্টা করে বলল এরফান। এবার তুমি আমাদের কিছু শোনাও।
ওকে মুক্ত করার পর সে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে পারল। বেশ লম্বা একটা কাহিনী। তখনও বিকেল হয়নি, এমন সময়ে বাইরে ঘোড়ার খুরের আর কথাবার্তার আওয়াজ পেয়ে সে মনে করেছিল র্যাঞ্চের লোকজন তাড়াতাড়িই ফিরে এসেছে। এই সময়ে হঠাৎ ওর দরজা খুলে গেল, কিন্তু তার সাধের তরুণী নার্সের বদলে ঘরে ঢুকল দুজন কালো মুখোশধারী লোক। ওদের একজন পিস্তল তাক করে ওকে কাভার করে রাখল, অন্যজন ওকে বেঁধে ফেলল।
আমি এই জখম হাত নিয়ে ওদের বিরুদ্ধে গালাগালি ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি, ব্যাখ্যা করল লরি, কিন্তু আমাকে গ্যাগ করার পর বাধ্য হয়ে গালাগালিও বন্ধ করতে হলো। ওরা কিসের উদ্দেশ্যে এসেছিল?
ফিলকে নিতে, এবং ওকে নিয়েও গেছে, এরফান জানাল। কথাটা শুনে অসুস্থ লোকটার ভাযা অলঙ্কত হয়ে উঠল।
ওহ, এখন গালাগালি করে কি লাভ-ওতে সমস্যার কোন সমাধান হবে না।
তুমি কি আজ রাতেই ওকে উদ্ধার করতে যাচ্ছ? উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করল লরি।
না, এখন আমি ঘুমাতে যাচ্ছি, তুমিও তা-ই করার চেষ্টা করো, হেসে কথাটা বলে গালাগালি শোনার অপেক্ষা না করেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল এরফান।
বাঙ্কহাউসে গিয়ে খাওয়া সেরে নিজের ঘরে ফিরল সে। এবার তার মনে পড়ল যে ফেরার পর থেকে এখন পর্যন্ত টমিকে কোথাও দেখতে পায়নি ও। ওকে ডেকে বা শিস দিয়েও কোন লাভ হলো না। নিজের কামরাটা ভাল করে পরীক্ষা করে দেখল সব কিছুই ঠিক আছে। কেউ কোনকিছু ঘাটাঘাটি করেনি। শেষে সে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছল যে মেয়েটাই ছিল ওদের এই রেইডের মূল উদ্দেশ্য। শেডিই কি শোধ নেয়ার জন্যে এটা করিয়েছে? কেবল আর একটা লোকেরই এতে কোন স্বার্থ থাকতে পারে। তবে কি ব্ল্যাক বার্টই তার লোকজনকে কালো মুখোশ পরিয়ে এই কাজটা করিয়েছে, যেন সবাই মনে করে এটা ডাকাতদেরই কারসাজি?
১৫.
গতদিন হাড় ভাঙা খাটুনি গেলেও লেজি এমের ফোরম্যান সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে কাজে যাওয়ার জন্যে তৈরি দেখতে পেল। কিন্তু আজ ওদের মধ্যে আগের সেই হাসিখুশি ভাবটা আর নেই; সবার মুখই গোমড়া। মিস মাস্টারসন ওদের সবার কাছেই ছিল খুব জনপ্রিয়। এছাড়া তরুণী মালিকাকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়াকে ওদের প্রত্যেকের কাছেই ব্যক্তিগতভাবে অপমানজনক বলে মনে হচ্ছে। ওই লোকগুলো ওদের এভাবে বোকা বানানোয় রীতিমত খেপে আছে ওরা।
ওরা প্রত্যেকেই নিজেদের পিস্তল আর রাইফেলে যত্নের সাথে গুলি ভরে নিয়েছে। ওদের বেল্টগুলোও পুরোপুরি বুলেটে ঠাসা। ওরা সবাই বাছাই করা ঘোড়ায় জিন চাপিয়ে এরফানের জন্যে অপেক্ষা করছে-কারণ সে আজ তার নিজের কামরাতেই নাস্তা খাচ্ছে। এরফান বেরোবার জন্যে মাত্র ঘুরেছে, এই সময়ে হাঁপাতে হাঁপাতে টমি তার প্রভুর পায়ের কাছে শুয়ে পড়ল। ঝুঁকে কুকুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে ওর চোখে পড়ল টমির চামড়ার কলারের ফাঁকে একটা সাদা কি যেন গোঁজা আছে। বের করে দেখল ওটা একটা পেঁচালো কাগজ। ওতে লেখা আছে:
ব্ল্যাক মাস্কের হাতে মেয়েটা গুহায় আছে। জলদি এসো।
একজন বন্ধু।
চিঠির লেখাটা ঠিক আগের চিঠিগুলোর মত। ওটার দিকে অবাক চোখে চেয়ে থাকল এরফান। ভাবছে, লোকটা কে হতে পারে? হেনডন গতকাল সারাক্ষণ আউটফিটের সাথেই ছিল। মনে হচ্ছে টমি ওদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মেয়েটার পিছু নিয়েছিল, তাই লোকটা ওর মাধ্যমেই চিঠিটা পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে। টমিকে আদর করে ওর মাথা চুলকে দিল এরফান।
তুমি নিঃসন্দেহে এই র্যাঞ্চেরই একজন, বলল সে।
বাইরে বেরিয়ে এরফান তার লোকজনকে পরিস্থিতিটা জানিয়ে ওদের পরামর্শ চাইল।
হোপে লোক পাঠিয়ে শেরিফকে ঘটনা জানিয়ে একটা পাসি গঠন করালে কেমন হয়? প্রস্তাব দিল একজন।
মাথা নাড়ল ফোরম্যান। টেলর আমাদের মোটেও দেখতে পারে না এ তাছাড়া আমার বিশ্বাস এটা প্রধানত লেজি এমের কাজ। তারচেয়ে বরং টিমের র্যাঞ্চে গিয়ে ওর এবং ওর লোকজনের সাহায্য চাওয়া অনেক ভাল ওদের সাহায্য পেলে সহজেই ওই কয়োটিগুলোকে ওদের গর্ত থেকে টেনে বের করতে পারব।
সবাই সমস্বরে ওর প্ল্যান অনুমোদন করল। ল্যাঙ্কি বলল, ওই শেরিফের মুরোদ থাকলে অনেক আগেই এই কাজটা সে করত।
সবার সমর্থন পেয়ে এরফান আর দেরি করল না, সবাই মিলে টিমের এক্স টি র্যাঞ্চের পথে রওনা হয়ে গেল ওরা। কেবল লরি, যাকে ওর জখম নিয়ে যেতে দেয়া হয়নি, বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনি বলে ওখানেই শুয়ে অসহায় অবস্থায় ছটফট করছে।
তুমি দুশ্চিন্তা কোরো না, বাছা, আমরা তোমার প্রিনসেসকে ঠিকই ফিরিয়ে আনব, যাওয়ার আগে ওকে আশ্বস্ত করে গেছে ওর ফোরম্যান। সেইসাথে ডাকাতের দলটাকেও নির্মূল করে আসব।
এক্স টি র্যাঞ্চে ফ্রেশ ঘোড়া পাওয়া যাবে জেনে ঘোড়াগুলোকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটাল ওরা। ট্রেইলটা সহজ হওয়ায় সময় মতই পৌঁছল সবাই। টিম ওদের একটা আনন্দের হাঁক ছেড়ে স্বাগত জানাল। এরফান যখন ওদের আসার কারণ জানানোয় টিম সঙ্গে সঙ্গে বলল, আমরা সাহায্য করব মানে? চেষ্টা করেও তুমি আমাদের ঠেকাতে পারবে না। কাউকে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাবে, তা-ও ফুলের মত সুন্দর একটা ভদ্র মেয়েকে-যে কিনা আমারই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মেয়ে! ওদের আমরা বুঝিয়ে দেব যে এটা মগের মুল্লুক নয়! তুমি ওর সম্পর্কে কিছু জানো? বুড়ো আঙুল ঝাঁকিয়ে বাঙ্কহাউসের বাইরে দাঁড়ানো ইয়র্কিকে দেখাল টিম।
তোমাদের আউটফিটের কেউ? প্রশ্ন করল এরফান।
এখনও নয়; আজ সকালেই সে এখানে এসেছে, মনে হয় ও একটা কাজের খোঁজেই আছে, জবাব দিল টিম। ওকে দেখে কি মনে হয় তোমার?
মনে হয় গোলাগুলিতে ওর ভাল দখল আছে; যে পিস্তল দুটো ওর কোমরে। ঝুলছে সেগুলো মোটেও নতুন নয়। লড়াইয়ে দক্ষতা আছে, জবাব দিল এরফান।
আমারও মনে হচ্ছে তোমার কথাই ঠিক, বলল টিম। আজই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। ওকে আমাদের সাথে এই নাচে যোগ দিতে ডাকলে কেমন হয়? আমি এক ডলার বাজি ধরছি সে ঝুঁকি না নিয়ে এড়িয়ে যেতে চাইবে।
এটা সরাসরি ডাকাতি, কিন্তু তবু আমি বাজিটা ধরছি।
টিম এগিয়ে গিয়ে নির্বিকার যুবকের সাথে কথা বলে ফিরে এসে এরফানকে একটা ডলার দিয়ে বলল, বেশি টাকা না ধরেই ভাল করেছি আমি। আশ্চর্য, ওর ভাব দেখে মনে হলো আমি যেন ওকে একটা ড্রিঙ্ক অফার করছি!
এরফান টিমের দিকে চেয়ে হাসল। এটা ফেয়ার বাজি ধরিনি আমি; ওই লোক আমারই বন্ধু। ও এখানে চাকরির খোঁজে আসেনি, কিন্তু তুমি ওর ওপর পুরো ভরসা রাখতে পারো, বলে ডলারটা ওকে ফেরত দিল এরফান।
ওর দিকে মুঠি কঁকাল টিম। তুমি একটা বুড়ো শয়তান, বেশি গভীর জলের মাছ, বলল সে। তবে আমি তোমাকে শেষ পর্যন্ত সমর্থন দিয়ে যাব।
ওখানে ঘোড়া বদল করে নিয়ে টিম আর ওর পাঁচজন লোক সহ ইয়র্কিকে সাথে নিয়ে দল ভারী করে ওরা পাহাড়ের চূড়ায় গুহার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল। কয়েক মাইল ঘেসো সমতল জমি সহজেই পার হয়ে এবার পাহাড়ে ওঠা শুরু করল ওরা। ওদের মধ্যে খুব কমই কথাবার্তা হচ্ছে। প্রত্যেকেই নিজের ঘোড়া আর ট্রেইলের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে, কারণ একবার ঘোড়ার পা ফস্কালে যে-কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে।
মাইলের পর মাইল কষ্টসাধ্য পথ বেয়ে উপরে উঠছে ওরা। পাইন জঙ্গলের পরে ঘন ঝোঁপঝাড়ের ভিতর দিয়ে পথ করে নিয়ে ওদের এগোতে হচ্ছে। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা ঢালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে নিচে কতগুলো গরু আর ঘোড়াকে আনন্দের সাথে ঘাসের ওপর চরতে দেখা গেল।
খুব শান্তিময় একটা পরিবেশ, তাই না? মন্তব্য করল টিম। কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি ওগুলো সব চুরির মাল।
ক্যানিয়নের খাড়া পাথুরে দেয়ালের আশি ফুট উঁচুতে গুহায় ঢোকার কার্নিস। ওদের ওখান থেকে টেনে বের করা বোতলের ছিপি বের করার মত সহজ কাজ হবে না, বলল এরফান। হয়ত গুহার ভেতরে ঢোকার অন্য কোন পথও থাকতে পারে, কিন্তু কেবল সরু কার্নিসের ওপর দিয়ে যাওয়ার পথটাই কেবল আমার পরিচিত। কিন্তু ওই কার্নিসের ওপর ওদের একটা লোক থাকলে তার পক্ষে বিশজনকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। তাই আমার পরামর্শ হচ্ছে, আমি দুতিনজন লোক নিয়ে কার্নির্স ধরে এগোব, বাকি সবাই উপত্যকার এপাশেই ঝোঁপের ভিতর লুকিয়ে আমাদের কাভার দেবে। এখান থেকে গুহার মুখের দূরত্ব সাতশোর বেশি হবে না; গুহা থেকে কেউ বেরোলেই তোমরা তাকে গুলি করবে।
এর চেয়ে ভাল প্রস্তাব কেউ দিতে না পারায় ওর কথাই সবাই মেনে নিল। তাই এরফান, ইয়র্কি, ল্যাঙ্কি আর বিগ বয়-যার ধারণা ওদের কাছে ওর একটা দেনা রয়ে গেছে-কার্নিসের দিকে এগোল। যতটা সম্ভব আড়াল ধরে এগিয়ে ওরা। শীঘ্রি গুহার মুখে পৌঁছে গেল। ও-পথেই এরফানকে গুহায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গুহার মুখে কোন গার্ড নেই দেখে ঘোড়াগুলোকে লুকিয়ে রেখে ওরা কার্নিসে ওঠার পথ ধরল। তাকিয়ে দেখল করালে কয়েকটা ঘোড়া দেখা যাচ্ছে। ওরা গুহার কাছে প্রায় পৌঁছে গেছে ঠিক এই সময়ে পরপর দুটো গুলির শব্দ। শোনা গেল; কিন্তু বেসিনের ওপাশ থেকে গুলি আসেনি; এসেছে কোন গুপ্ত অবস্থান থেকে।
ওটা সতর্ক করার নির্দেশগুহার মুখে না, থেকে ওরা আর কোথাও থেকে নজর রেখেছে, বলল ফোরম্যান।
ওই সতর্ক সঙ্কেত পেয়ে নিশ্চয় কিছু লোক গুহার মুখে বেরিয়ে এসেছিল; বেসিনের ওপাশ থেকে গুলিবৃষ্টি শুরু হলো। বোঝা গেল টিমও তার লোকজন নিয়ে খেলায় নেমেছে। এখন ওই সরু পথ দিয়ে নিচে নামা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠল, কারণ যেসব জায়গায় ক্লিফ ফুলে কিছুটা বেরিয়ে এসেছে সেখানে ওদের দেখা দিতেই হবে। উপরের কার্নিসের ডাকাতরা সেটা ভাল করেই জানে। উপুড় হয়ে শুয়ে ওরা আক্রমণকারীদের দেখা দেয়ার অপেক্ষায় রাইফেল তৈরি রেখেছে।
দেয়ালের সাথে একেবারে সেঁটে থাকো, বয়েজ, নির্দেশ দিল এরফান। আর পাহাড়ের ফোলা জায়গাগুলো ঝট করে পার হবে। ওরা যেন গুলি করার কোন সুযোগ না পায়। ক্লিফের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে কনুইয়ে ভর দিয়ে ওরা এক এক ফুট করে গুহার মুখের দিকে এগোচ্ছে। বিপজ্জনক বাঁকগুলো পার হওয়ার সময়ে ওদের কানের পাশ দিয়ে অশুভ শব্দ তুলে উপর থেকে ছোড়া বুলেটগুলো বেরিয়ে গেল। ক্লিফের শেষে বেরিয়ে আসা বাকটা গুহার মুখ থেকে মাত্র বিশ গজ দূরে। এখানে ওরা একটু ভেবে দেখার জন্যে থামল; ওপর থেকে গুলি আসা এখন থেমে গেছে। বেরিয়ে থাকা পাথরটার আড়াল থেকে সাবধানে উঁকি দিয়ে এরফান দেখল, উপরের গার্ড দুজন দেয়ালের সাথে সেটে থাকা শত্রুকে গুলি করে টার্গেটে লাগানোর চেষ্টা নিষ্ফল বুঝেই এবার ধীরে উঠে দাঁড়াল। এই সুবর্ণ সুযোগটা ছাড়ল না সে; রাইফেল তুলে ট্রিগার টিপে দিল। ওদের একজন দুহাত শূন্যে ছুঁড়ে টলতে টলতে চিৎকার করে খাদে পড়ল।
এগিয়ে এসো, বয়েজ, উপরে এখন একজন মাত্র আছে, জানাল এরফান।
কথা শেষ করেই সে দ্রুত পায়ে পাথরটা পেরিয়ে ওপাশে চলে গেল। উপরের লোকটা সঙ্গীর অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে একটা নিষ্ফল গুলি ছুঁড়েই গুহায় ঢোকার অন্য কোন রাস্তার উদ্দেশে দৌড় দিল। কিন্তু পিছন থেকে একটা গুলি খেয়ে রাইফেল ছেড়ে ঝপ করে লুটিয়ে পড়ল সে। একটা চিৎকার শুনে এরফান ফিরে তাকিয়ে দেখল টিম তার লোকজন নিয়ে কার্নিস বেয়ে উঠে আসছে। ক্লিফের দেয়াল ঘেঁসে দাঁড়িয়ে সে আর সবাইকে এসে পৌঁছা’র সুযোগ দিল। কালো অন্ধকার গুহার মুখটা বিপজ্জনক আর ভয়াবহ দেখাচ্ছে, কিন্তু ওই পথেই ওদের ঢুকতে হবে।
ভাবলাম এখানে আমাদের উপস্থিতি বেশ কিছু কাজে আসবে, উপরে পৌঁছে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল র্যাঞ্চার। এখন আমাদের পরবর্তী চাল কি?
গুহার মুখটা দেখিয়ে এরফান বলল, ওই পথেই আমাদেরকে ঝট করে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়তে হবে। এতে ঝুঁকি আছে বটে, কিন্তু দ্বিতীয় আর কোন পথ আমার জানা নেই।
যতটা সম্ভব নিজেদের আড়ালে রেখে ওরা একত্রে জড়ো হয়ে সবাই একসাথে গুহার মুখ দিয়ে ঢুকে মেঝের ওপর শুয়ে পড়ল। অন্ধকার চিরে গুলির আগুনের ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মাটিতে শুয়ে পড়ায় গুলিগুলো সব ওদের মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল। অন্ধকারে উপুড় হয়ে শুয়েই ওরা পাল্টা জবাব দিল। এরফানের বুদ্ধি মেনে চলায় ওদের কেউ আহত হলো না। বারুদের ঝাঝাল গন্ধ আর নীল ধোয়া ওদের পিছনে গুহার গর্ত দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, আর এরফানের দল আগুনের ঝিলিক লক্ষ্য করে গুলি করছে। গোলাগুলির শব্দ গুহার দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ওরা হয় কিছু মারা পড়েছে অথবা আহত হয়েছে, কারণ ওদের গুলির সংখ্যা এখন বেশ কমে এসেছে। কিন্তু কতজন লোক যে ওদের বিরুদ্ধে লড়ছে তা অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছে না। এরফানের নিচু স্বরের একটা আদেশ পেয়ে ওর লোকজন উঠে ছুটে সামনে এগিয়ে গেল।
অন্ধকারে পিস্তলের মুখে বর্শার ফলার মত আগুন দেখা যাচ্ছে এবং সেই আলোতে মুহূর্তের জন্যে কালো মুখোশ পরা মাথা দেখা যাচ্ছে। হামলাকারীরা সেগুলো লক্ষ্য করেই গুলি ছুঁড়ছে। এক্স টি র্যাঞ্চের নোক পড়ে গেল। একই সাথে একটা লোকের দেহের সাথে হোঁচট খেল এরফান। প্রায় ওর মুখের কাছে একটা পিস্তল গর্জে উঠল-হোঁচট না খেলে ওই গুলিতে ফোরম্যানের খুলি ফুটো হয়ে যেত। লোকটার কোমর জড়িয়ে ধরে এরফান ওকে নিয়েই মাটিতে পড়ল। লোকটা দুহাতে ফোরম্যানের গলা টিপে ধরল। লোহার সাড়াসির মত আঙুলগুলো এরফানের শ্বাসনালীর ওপর শক্ত হয়ে এঁটে বসেছে। আর কোন। উপায় না দেখে পিস্তলের নল দিয়ে এরফান ওর মাথায় কঠিন বাড়ি বসাল। সাথেসাথে গলা টিপে ধরা লোকটার হাতের আঙুল শিথিল হলো। একটু ককিয়ে সে জ্ঞান হারাল। উঠে দাঁড়িয়ে এরফান দেখল লড়াই শেষ হয়েছে। ওদেরই কেউ একটা লণ্ঠন খুঁজে পেয়ে ওটা জ্বেলেছে। দেখা গেল কাউবয়দের কিছু লোক আহত হয়েছে, কিন্তু মারাত্মক ভাবে জখম হয়নি কেউ। এরফান পিস্তলের আঘাতে যাকে অজ্ঞান করেছে তার হুশ এখনও ফেরেনি। বাকি সবাই অদৃশ্য হয়েছে।
আরও কিছু বাতি জোগাড় করে প্রত্যেকটা গুহা ভাল করে খুঁজে দেখো, নির্দেশ দিল এরফান। এখান থেকে বেরোবার অন্য কোন পথও নিশ্চয় আছে।
ইয়র্কিও অদৃশ্য হয়েছে। লণ্ঠনের আলোর প্রথম ঝলকেই একটা লোককে গুহার আরও ভিতরে অন্ধকারে অদৃশ্য হতে দেখে সে ওর পিছু নিয়েছে। সুড়ং ধরে এগোবার সময়ে একটা সরু আলোর রেখা ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করল। ওটার কাছে হাত বাড়িয়ে দেয়াল স্পর্শ করে বুঝল ওটা এটা দরজা-এবং খোলাই আছে। সামান্য ধাক্কা দিয়ে ওটা একটু ফাঁক করে ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখল একটা লোক ব্যস্ত হাতে একটা ব্যাগে জিনিসপত্র ভরছে।
ইয়র্কির চোখদুটো রাগে জ্বলে উঠল। দরজা ঠেলে নিঃশব্দে গুহার ঘরে ঢুকল সে। ওকে দেখেই চিনতে পেরেছে ইয়র্কি। ওই লোকটাই শেডি। (কেবল। বর্ণনা থেকেই মানুষ চিনতে পারার এক অদ্ভুত ক্ষমতা পশ্চিমের লোকের আছে।) তারপর সশব্দে দরজা বন্ধ করে একপাশে সরে গেল সে। লোকটা ঝট করে ফিরল, ওকে দেখে বিস্ময়ে লোকটার চোখ বিস্ফারিত হলো। মুখ হাঁ হয়ে গেছে।
কে, ইয়র্কি না? বলল সে।
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছ-আমিই ইয়র্কি, জবাব দিল সে। মিছেই মাল গুছাচ্ছ, তুমি যেখানে যাচ্ছ সেখানে ওগুলো তোমার কোন কাজে আসবে না, শেডি।
ইয়র্কির চালু হাতের গল্প সে-ও শুনেছে। সাক্ষাৎ যমদূত ওর সামনে দাড়িয়ে আছে। টেবিলের ওপর যে মোমবাতিটা জ্বলছিল সেটা এক থাবায় নিভিয়ে দিয়ে লাফিয়ে নিজের জায়গা থেকে সরে গেল শেডি। অন্ধকারে ইয়র্কির গলা শোনা গেল:
ভয় পেয়েছ, শেড়ি? ভাল, অন্ধকার তোমাকে হয়ত কিছুটা ভাল সুযোগ দেবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোমাকে মরতেই হবে। তুমি যদি বলো মেয়েটা কোথায় আছে, তবে এবারের মত তোমাকে ছেড়ে দিতে পারি আমি।
তোমার সাথে আমার নরকে দেখা হবে, জবাব এলো।
হয়তো হবে, যদিও সম্ভাবনা কম, আমার জন্যে তোমাকে হয়তো নিষ্ফল অপেক্ষা করতে হবে।
ওর কথার কোন জবাব দিল না আউটল। ভয় পাচেছ কথার শব্দে ইয়র্কি ওর অবস্থান জেনে ফেলবে। কয়েকটা মুহূর্ত নীরবতার মাঝে কাটল। দুজনই উঁচু মানের পিস্তলবাজি, এবং ওরা দুজনেই জানে সামান্য ভুল মানেই মৃত্যু। একটু কুঁজো হয়ে পিস্তল হাতে প্রস্তুত হয়েই কান পেতে স্থির দাঁড়িয়ে আছে শেডি বুটের তলায় কাকর পিষ্ট হওয়ার সামান্য একটু শব্দ ওর কানে এলো। শব্দের উৎসস্থল কোথায় বোঝার চেষ্টায় ওর কান আরও সজাগ হলো আবার শব্দটা শেডির কানে পৌঁছল। শত্রু ওর দিকেই এগিয়ে আসছে ভেবে সে শিউরে উঠল। এবারে শব্দ ঠিক কোন দিক থেকে আসছে নিশ্চিত হয়ে শেডি গুলি করল। বারুদের ঝিলিকে মুহূর্তের আলোয় সে দেখতে পেল ভুল আঁচ করেছিল। একই সাথে দেখল কাউবয়ের হাসিভরা মুখ রয়েছে বেশ কিছুটা বামে। কিন্তু দ্বিতীয় গুলি ছোড়ার আগেই ওদিক থেকে ইয়র্কির পিস্তলটা অন্ধকারে গর্জে উঠল। শেডির বাম দিকটা কাঁধের কাছ থেকে অবশ হয়ে গেল। হাতটা অকেজো ভাবে ঝুলছে। ওর ঠোঁট চিরে একটা গোঙানির আওয়াজ বেরিয়ে এলো।
তোমার বাম ডানাটা জখম হয়েছে, তাই না, শেডি? এবার তোমার ডানটা যাবে, পাখি তারপর–ওখানেই বিদ্রুপের কথা শেষ হলো।
আহত লোকটা বুনো ক্রোধে অন্ধের মত গুলি ছুঁড়ে ডানদিকে ঝাঁপ দিল; কিন্তু এর জবাবে কোন গুলি এলো না। শ্বাস নেয়াও বন্ধ করে চুপ করে দেয়ালে সেটে দাড়িয়ে আছে শেডি। ওর বাম কাধটা এখন ব্যথায় দপদপ করছে। ভাবছে তবে কি সে কপাল জোরে ঠিক জায়গা মতই গুলি লাগাতে পেরেছে?
এই সময়ে বাইরে সুড়ঙ্গে পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। বাইরে থেকে কেউ জিজ্ঞেস করল, এই, স্ট্রেঞ্জার, তুমি কি ভিতরে?
হ্যাঁ, চলে যাও, আমি ব্যস্ত, জবাব দিল ইয়র্কি। শেডি শিউরে উঠল, কথার সুরটা কোন আহত লোকের নয়।
লোকটার পায়ের শব্দ দূরে চলে যাওয়ার শব্দ শোনা গেল। শেডির কাছে। ইয়র্কির কথাগুলো মৃত্যুর ঘণ্টার মতই শোনাল। আবার সেই অসহ্য নীরবতা কিছুক্ষণ বিরাজ করার পর ইয়র্কির গলা শোনা গেল:
শোনো, শেডি, আমি তোমাকে একটা চমৎকার সুযোগ দিচ্ছি। মোমবাতিটা আমি খুঁজে পেয়েছি, ওটা আমি জ্বালাবার পর আমরা দুজনেই একসাথে ড্র করব–তুমি কি বলো?
ঠিক আছে, জবাব দিল শেডি। গলার স্বর থেকে খুশি চাপার চেষ্টা করল সে।
অল্পক্ষণ পরেই ম্যাচটা জ্বলে উঠল। ওটা জ্বলে ওঠার সাথেই গুলি করল শেডি কিন্তু আগুনটা একটুও নড়ল না। ইয়র্কির ডান কোমরের কাছ থেকে ওর। পিস্তলটা গর্জে উঠল। গুলিতে মগজ ফুটো হয়ে সামনের দিকে উপুড় হয়ে পড়ল আউটল। ইয়র্কির কাছে চাতুরীতে হেরে গেছে সে। চুরি করে জেতার উদ্দেশে ম্যাচ জুলার সাথেই গুলি করেছিল লোকটা-তার ধারণা ছিল ডান হাতে ম্যাচ ধরাবে ইয়র্কি, তাই আগুনের বাম দিকে তাক করে গুলি করেছিল সে। কিন্তু এটা আশা করেই নিজের হাত দেহ থেকে দূরে নিয়ে বাম হাতের নখ দিয়ে ম্যাচ জ্বেলেছিল ইয়র্কি। শেডি বেশি চালাকি করতে গিয়ে নিজের জীবনটাই খোয়াল।
জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও সে শঠতাই করে গেল, ওর সম্পর্কে আমি তাহলে ঠিকই শুনেছিলাম, মন্তব্য করল ইয়র্কি।
লোকটা সত্যিই মরেছে কিনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে খুপরি ছেড়ে বেরিয়ে সে সঙ্গীদের খোঁজে বেরোল। গুহার মুখের কাছে পৌঁছে দেখল অজ্ঞান। লোকটার জ্ঞান ফিরেছে, টিম তাকে জেরা করছে। কঠিন চেহারার লোকটা যে। বদমেজাজী তা তাকে দেখেই বোঝা যায়।
এরফানের সহ্যের সীমা পার হয়ে গেছে। ও যদি মুখ খুলতে না চায়, তাহলে ওকে সোজা ঝুলিয়ে দাও, টিম, বোকা লোকের ওপর নষ্ট করার মত সময় আমাদের নেই, বলল সে।
মৃত্যুর আসন্ন সম্ভাবনায় লোকটা এবার মুখ খুলল।
তোমরা কি জানতে চাও? রুক্ষ স্বরে প্রশ্ন করল সে।
মিস মাস্টারসন কোথায়? জানতে চাইল এরফান। সত্যি কথা না বললে নরকে পৌঁছতে তোমার বেশিক্ষণ লাগবে না।
এখানে একটা মেয়েকে আনা হয়েছিল বটে, কিন্তু ওরা তাকে গোলা-বারুদ লুকিয়ে রাখার গুহায় নিয়ে গেছে, জবাব দিল সে।
ওটা কোথায়? ধমকে উঠল ফোরম্যান।
জানি না-আমাকে কখনও ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়নি, বলল সে। আমি অল্পদিন হলো এই দলে যোগ দিয়েছি। এখন মনে হচ্ছে এই দলে যোগ না দেয়াই ভাল ছিল।
এই দলের নেতা কে?
তাকে আমি কখনও দেখিনি। আমাদের আদেশ দিত শেডি নামের একটা চওড়া লোক। দলের সবার চেহারাও আমরা চিনি না, কারণ বেশিরভাগ সময়েই আমাদের চেহারা কালো মুখোশে ঢাকা থাকত।
কেন যেন এরফানের মনে হলো, লোকটা সত্যি কথাই বলছে। সে বলল, তোমার স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চাইলে একটা ঘোড়া আর কিছু খাবার সাথে নিয়ে এই দেশ ছেড়ে আর কোথাও চলে যাও।
দুঃখের বিষয় আমরা শেডিকে মিস করেছি, বলল টিম।
না, আমি মিস করিনি, বলে ইয়র্কি সোজা হেঁটে এগিয়ে গেল।
ওর পিঠের দিকে চেয়ে টিম মন্তব্য করল, লোকটা খুব কমই কথা বলে, তাই না?
হাসল এরফান। কিন্তু কথা হচেছ আমরা এখন কি করব?
ইয়র্কির সাথে আরও দুজনকে বাকি গুহাগুলো খুঁজে দেখার জন্যে রেখে বাড়ি ফেরা ছাড়া এখানে আমাদের আর কিছু করার আছে বলে মনে হয় না, জবাব দিল র্যাঞ্চার।
এরফানও ওর কথায় সায় দিল। দুই র্যাঞ্চ থেকেই একজন করে লোক রেখে পুরো এলাকাটা ভাল করে খুঁজে ডাকাতদের দ্বিতীয় গোপন আস্তানাটা বের করতে পারলেই খবর পাঠাবার নির্দেশ দিয়ে বাকি সবাই ওরা যার যার র্যাঞ্চের পথ ধরল।
১৬.
দিনের বেলায় লেজি এমে রেইড চালিয়ে মিস মাস্টারসনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ব্যাঙ্ক ডাকাতির প্রায় পরপরই ঘটায় শহরে বিপুল অসন্তোষ আর ক্রোধ ছড়িয়ে পড়ল। হোপের সবাই একমত যে ওই ডাকাত দলের বিরুদ্ধে একটা কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। কিন্তু যখন খবর এলো কাজটা ইতোমধ্যেই করা হয়েছে, তখন শহরের কিছু লোক এতে অসন্তুষ্ট হলো। তবে এই অসন্তোষ ছড়াবার একক হোতা হচ্ছে শেরিফ টেলর নিজেই। সে সতর্কতার সাথে এই কথাটা ছড়াল যে দুই র্যাঞ্চের সম্মিলিত এই অভিযানে কেবল তাকে এবং তার অফিসের মর্যাদাই ক্ষুণ্ণ করেনি, এতে সমস্ত এলাকাবাসীকেও উপেক্ষা করে ছোট করা হয়েছে।
এইভাবে সফলতার সাথে অসন্তোষ ছড়িয়ে পরদিন সকালে সে সন্তুষ্ট চিত্তে বার বি রাঞ্চে হাজির হলো। কিন্তু বার্টের অভ্যর্থনা শেরিফের কাছে মোটেও সন্তোষজনক মনে হলো না।
আজ সকালে তোমাকে খুব খুশি দেখাচ্ছে? বিদ্বেষের সাথে বলল বার্ট। এর কারণটা কি?
আমি শহরে জেমসের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করে এসেছি, গর্বের সাথে জানাল সে। ওই লোক যদি মনে করে থাকে যে আউটলদের উচ্ছেদ করার জন্যে শহরবাসীর বাহবা পাবে, তাহলে ওকে হতাশ হতে হবে।
চমৎকার কাজ করেছ, উপহাস করে বলল বার্ট। এতে ওর ভয়ে একেবারে মরে যাওয়ার অবস্থা হবে। তোমার কি মনে হয় এতে সে ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাবে?
টেলরের চেহারা থেকে খুশির ভাবটা মুছে গেল। অস্বস্তিভরে ঘোর পিঠে সে একটু নড়েচড়ে বসল।
তুমি একটা নেহাতই অযোগ্য শেরিফ, তাই না? শুরু করল সে। আমি তোমার পিছনে না থাকলে এই চাকরি তুমি কতদিন রাখতে পারতে?
অতিথির ফোলা লালচে মুখে ওই প্রশ্নে একটু বেগুনির ছাপ দেখা দিল।
আমি জানি বন্ধু হিসেবে তুমি আমার জন্যে অনেক করেছ, বলল সে। এবং তোমার উপকারের কথা আমি কোনদিন ভুলব না।
কথাটা না ভোলাই তোমার উচিত, কঠিন স্বরে বলল বার্ট। আমিই তোমার একমাত্র বন্ধু। জেমসকে তুমি কবে গ্রেপ্তার করবে, টেলর?
ওকে গ্রেপ্তার করব? বিস্ফারিত চোখে প্রশ্ন করল সে। কোন অপরাধে?
তোমার বাড়ির বাগান থেকে ফুল চুরি করার জন্যে, রোষের সাথে বলল বার্ট। প্রথমত জ্যাককে খুন করার অপরাধই যথেষ্ট, এরপরে খোঁজ নিয়ে আরও কারণ বের করা যাবে।
কিন্তু আমার কাছে এর এক চিলতে প্রমাণও যে নেই, টেলর প্রতিবাদ জানাল।
না, শেরিফ হয়েও তোমার কাছে তা থাকবে না-তোমারই কাজ অন্যদের করে দিতে হবে, ধমক দিল বার্ট। কিন্তু তোমাকে ওই ব্যাপারে কোন চিন্তা করতে হবে না; আমার কাছে এর যথেষ্ট প্রমাণ আছে।
তুমি প্রমাণ করতে পারবে সেই জ্যাককে মেরেছে? হতভম্ব টেলর বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল।
বিজয়ীর মত মাথা ঝাঁকাল বার্ট। তুমি ধরে নিতে পারো যে সে ফাঁসিতে ঝুলেই গেছে, বলল সে। তুমি ঘোড়া নিয়ে আমার সাথে চলো, আমি তোমাকে প্রমাণ দেখাচ্ছি।
আধঘণ্টা পর ওরা সিঙ্কে লুকানো ঝোঁপের কাছে পৌঁছল। বার্ট আঙুল তুলে ঝোঁপটা দেখিয়ে বলল, তুমি নিজেই ওর ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখো।
ঝোঁপটাকে ঠেলে সরিয়ে শেরিফ কুঁচকানো জামাগুলো একে একে বের করে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখল। হ্যাটটা দেখে তার খুদে চোখদুটোও বিস্ময়ে বিস্ফারিত হওয়ার বৃথা প্রয়াস পেল।
এটা যে মাস্টারসনেরই হ্যাট তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাহলে এই জামা-কাপড়ও নিশ্চয় তারই হবে, বলল সে। হঠাৎ কাপড়ের তলায় চকচকে একটা জিনিস ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করল। হাতে তুলে নিয়ে দেখল ওটা একটা উইনচেস্টার। শেষবার ব্যবহারের পর অনেকদিন পরিষ্কার না করায় ওটায় কিছুটা মরচে ধরেছে। কিন্তু ওটার বাটে আঁচড় কেটে লেখা দুটো অক্ষর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে-জে. জি.।
অক্ষরগুলো হয়ত জেমস গ্রীনের নামের আদ্যাক্ষর, খুশিতে চিৎকার করে উঠে বলল সে। যেন একটা কঠিন সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছে।
চমৎকার একটা উর্বর মাথা আছে বটে তোমার, বলল বার্ট। তবে অক্ষরগুলো জন গ্ৰেহাম নামের আদ্যাক্ষরও হতে পারে।
সান্দগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকাল টেলর। তুমি কি ধারণা করছ এটা জেমসেরই রাইফেল? প্রশ্ন করল সে।
ধারণা করব কি, বলদ, আমি নিশ্চিত জানি। বাৰ্ট চোখ টিপে ইশারা করায় আশ্বস্ত হয়ে দাঁত বের করে সমঝদারের মত হাসল শেরিফ। এখন মনে থাকে যেন, এগুলো আমি খুঁজে পাইনি। তুমি তোমার একজন ডেপুটির সাথে এদিক দিয়ে যাবার সময়ে এগুলো দেখতে পেয়েছ। বুঝেছ?
ওর কথার মানে পরিষ্কার বুঝেছে শেরিফ। খুশিতে টেলরের চোখদুটো চকচক করছে। এতদিনে সে তার অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার একটা চমৎকার সুযোগ পেয়েছে। এবার সে শহরের সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারবে যোগ্য শেরিফই পেয়েছে ওরা।
ওগুলো আপাতত যেখানে ছিল সেখানেই রেখে দাও, বলল বার্ট। পরে একজন ডেপুটির সামনে তুমি এসব খুঁজে বের করলে তোমার মান অনেক বাড়বে।
তোমার ব্রেইনে দারুণ ধার আছে বটে, বার্ট, তোষামোদের সুরে বলল টেলর।
ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে র্যাঞ্চের পথ ধরে এগোবার সময়ে শেরিফ প্রশ্ন করল, জেমস সম্পর্কে তোমার আর কিছু বলার আছে?
হ্যাঁ, তুমি ব্যাঙ্ক ডাকাতি আর রাস্টনকে গুলি করার অভিযোগ দুটোই ওর ওপর চাপাতে পারো, ঠাণ্ডা স্বরে বলল বার্ট। শেরিফ নিজের জিনের ওপর প্রায় লাফিয়ে উঠল।
তুমি কি সেটাও প্রমাণ করতে পারবে?
তার দরকার পড়বে না-সে নিজেই তার প্রমাণ দেবে।
কিন্তু আমি ভেবেছিলাম- শুরু করেছিল বিভ্রান্ত শেরিফ।
বিরাট ভুল। তোমার মত মানুষের কোন চিন্তাই করা ঠিক নয়, কারণ মগজ বলে কিছুই তোমার নেই। তোমার হয়ে আমাকেই সব চিন্তা করতে দাও। এটাই বেশি নিরাপদ।
ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেল টেলর। সে ভাল করেই জানে যে এই বদ লোকের কৃপাতেই শেরিফের পদে ভূষিত হয়ে আজ সে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার সুযোগ পেয়েছে। যদিও লোকটা সম্পর্কে সামান্যই জানে, তবু অনেক কিছুই সন্দেহ করে টেলর। তবে ওকে বিশ্বাস করে আজ পর্যন্ত নিজের সম্পর্কে ব্যক্তিগত কোন কথাই বার্ট তাকে বলেনি। তাই এখনও সে ওর বন্ধু না হয়ে লোকটার কথা মত নাচার পুতুলই রয়ে গেছে।
জ্যাককে শেষ করার পিছনে জেমসের কি স্বার্থ? কিছু কথা বের করার চেষ্টা করল টেলর।
আমার ধারণা এমারি আর সে যুক্তি করে লেজি এম হাত করার চেষ্টায় আছে, ব্যাখ্যা করল বার্ট। মেয়েটাও যদি না থাকে, তাহলে আমি ছাড়া ওদের আর কেউ ঠেকাবার থাকবে না।
কিন্তু মেয়েটাকে ব্ল্যাক মাস্কের দল নিয়ে যাওয়ার পর সে ওকে উদ্ধার করে আনার চেষ্টা করেছিল, যুক্তি দেখাল টেলর।
তুমি বলতে চাইছ যারা মেয়েটাকে নিয়ে গেছে তাদের মুখে কালো মুখোশ পরা ছিল, ব্যাঙ্ক ডাকাতির সময়ও তাই ছিল-কিন্তু তাতে এটা প্রমাণ হয় না যে এটা ওই ডাকাত দলেরই কাজ। এখন আমি বুঝতে পারছি, জেমস লোকটা ওদের নাম ব্যবহার করেছে মাত্র। কিন্তু মেয়েটাকে ওরা খুঁজে পায়নি-পেয়েছে? লোকটা সত্যিই খুব চালাক। অত্যন্ত চালাক।
তাহলে মেয়েটাকে নিয়ে ওরা কি করতে পারে?
খুব সম্ভব পুঁতে ফেলেছে, নির্বিকার ভাবে মিথ্যে বলল বার্ট। জ্যাকের আর কোন উত্তরাধিকারী আছে বলে আমি শুনিনি। এদিকে এমারি নিজেই হচ্ছে জ্যাকের উইলের রক্ষক। এটা একেবারে সেই মায়ের হাতে তৈরি মোয়া খাওয়ার মত সহজ।
জাজ এমারির কিন্তু অত্যন্ত সৎ বলে সুনাম আছে, বলল সে।
অত্যন্ত চতুর ঠগদের সেটা থাকাই স্বাভাবিক, ঝাঁঝের সাথে মন্তব্য করল র্যাঞ্চার।
শহরের কাছে এসে টেলর বিদায় নেয়ার সময়ও শেষ কথাটা বার্টই বলল।
আমি শুনলাম রাস্টন নাকি প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছে, শীঘি আবার ব্যাঙ্ক চালু করবে। ব্যাঙ্কের ওপর চোখ রেখো, আমার মনে হচ্ছে ওখানে তোমার একটা ভাল সুযোগ আসতে পারে। তুমি সব সময়ে ওটার কাছাকাছি দুজন লোক রেখো, কিন্তু জেমস সুযোগ না দিলে নিজে থেকে কিছু করতে যেয়ো না। আমাকে একটা ছোট ট্রিপ নিতে হবে–এদিকে তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও। তুমি যদি আমি যেমন বলেছি সেই কাজটাও পণ্ড করো তবে জেনো এর পর থেকে তোমার আর আমার পথ আলাদা; বুঝেছ?
শেরিফ নড করে বিদায় নিয়ে শহরের পথ ধরল। বার্টের চোখ ওকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে অনুসরণ করল।
মনেমনে সে ভাবছে: আমি যদি ওকে জানাতাম জেমসই হচ্ছে বিদ্যুৎ এরফান, আর ওকেই তার গ্রেপ্তার করতে হবে, তাহলে এতক্ষণে টেলর সোজা। মেক্সিকোর পথে রওনা হয়ে যেত। অবশ্য সেটা করলেও ওকে ঠিক দোষ দিতে পারতাম না-কারণ ওই লোকটাকে কে না ভয় পায়? বার্ট এবার তার ফোরম্যানের খোঁজে রওনা হলো।
হ্যালো, ডোভার, পথেই দেখা পেয়ে বলল বার্ট। খবর কি? তোমার কাজ কেমন এগোচ্ছে?
একেবারে সিল্কের মত মসৃণ। তুমি শেরিফকে কতটা ভজাতে পারলে?
হ্যাঁ, পুরোটাই গিলেছে ও। সবই আমাদের পক্ষে কাজ করছে। তবু তুমি আপাতত, শহরেই থাকো, তুমি একটু নজর রাখলে টেলর তার কাজ পণ্ড করতে পারবে না।
পাইনের জঙ্গলে লুকোনো কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি একটা কেবিনে রাখা হয়েছে মিস মাস্টারসনকে। কেবিনটা চমৎকার দেখতে না হলেও অত্যন্ত মজবুত। কালো মুখোশ পরা কয়েকজন লোক ফিলের মাথা কম্বল দিয়ে ঢেকে ওকে হলওয়ে থেকে তুলে এনে ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে বেঁধে ঘোড়াটাকে লীড করে নিয়ে চলল। নিরুপায় অবস্থায় ফিলের দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে কম্বলের তলায়। প্রায় এক ঘণ্টা পরে ঘোড়া থামিয়ে কম্বলটা সরিয়ে নেয়ায় সে আবার মুক্তভাবে শ্বাস নিতে পেরে চারপাশে তাকিয়ে দেখল।
ওখানে চারজন লোক আছে, দুজন সামনে আর দুজন পিছনে। প্রত্যেকেই অস্ত্রধারী এবং সবার পরনেই রেঞ্জ পোশাক। হাঙরের দাঁতের মত চুড়ার সারির দিকে এগোচ্ছে ওরা। ওই এলাকাটা ঘুরে দেখার অদম্য ইচ্ছা একবার ওর মনে জেগেছিল, কিন্তু লরিই ওকে এদিকে আসতে দেয়নি।
ঘন্টার পর ঘণ্টা রাইড করার পর প্রথম চূড়ার ছায়ায় এসে একটা জায়গায় থামল ওরা। ওর বাঁধন খুলে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামিয়ে পায়ে হাঁটিয়ে একটা সরু কার্নিস বেয়ে ওকে নিয়ে চলল লোকগুলো। লরির বর্ণনা থেকে জায়গাটাকে ব্ল্যাক মাস্কের আস্তানা বলে চিনতে পারল ফিল। ঢালু ঢাল বেয়ে উঠতে উঠতে একবার ভাবল: জেমস কি ওকে উদ্ধার করতে এখানে আসবে?
প্রধান গুহার পাশে কম্বলের ওপর বসে একটা বিনিদ্র রাত কাটল ওর অন্ধকার গর্তে। সকালে ওদের একজন রুটি, বেকন, আর কফি নিয়ে এলো ওর জন্যে।
আধঘণ্টা পরেই আমরা রওনা হব, রুক্ষ স্বরে জানাল সে।
আমাকে তোমরা কোথায় নিয়ে যাবে? প্রশ্ন করল ফিল, কিন্তু কোন জবাব পেল না।
গরম আর কড়া কফি ওর মধ্যে কিছুটা প্রাণ ফিরিয়ে আনল। কিন্তু খাবার কিছুই ছুঁলো না সে।
অল্পক্ষণ পরেই লোকটা ফিরে এসে রেখে যাওয়া লণ্ঠনটা তুলে নিয়ে ওকে অনুসরণ করতে ইশারা করল। একটা অন্ধকার লম্বা সুড়ঙ্গ পার হয়ে কতগুলো রুক্ষ ধাপ বেয়ে উপরে উঠল ওরা। ওখানে আর একজন লোক ওদের জন্যে অপেক্ষা করছিল। প্রতিবাদ সত্ত্বেও ওর কজিদুটো একত্রে বেঁধে চোখও রুমাল দিয়ে বাঁধা হলো। তারপর ওকে ঘোড়ার পিঠে তুলে দিয়ে আবার শুরু হলো গত দিনের মত যাত্রা। সামনের ট্রেইল দেখতে পাচ্ছে না বলে ফিলকে পুরোপুরি ঘোড়ার বিবেচনার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ঝাঁকি খেতে খেতে ওর পুরো শরীর ব্যথা হয়ে গেছে। প্রতিবার ঢাল বেয়ে নিচে নামার পর ঘোড়াটা আবার চড়াই ধরে উপরে উঠছে। তাকে যে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচেছ এসম্পর্কে ওর কোন ধারণাই নেই। তবে সকালের হাওয়ার তাজা আর ঠাণ্ডা ভাব থেকে সে অনুমান করল এখনও উঁচু পাহাড়েই আছে ওরা। তবে গতকালের তুলনায় আজকের যাত্রাটা অনেক কম সময় স্থায়ী হলো দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হলো ফিল! পাইন জঙ্গলের ভিতর একটা কেবিনের সামনে এসে শেষ হলো পথচলা।
কেবিনটা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে সে বুঝল এখান থেকে গোপনে পালানোর কোন সুযোগ নেই। দেয়ালগুলো আছোলা মোটা মোটা গুঁড়ি দিয়ে তৈরি। মেঝের মাটিও অত্যন্ত শক্ত। বিশাল দরজাটাও বাইরে থেকে ভারী তালা দিয়ে আটকানো। বন্দিশালা হিসেবে এটা আদর্শ। আলো-বাতাস ঢোকার জন্যে কেবল একফুটি একটা চৌকো গর্ত রয়েছে দেয়ালে। ওটা দিয়ে কেবল বাইরের পাইনের জঙ্গল দেখতে পাবে বন্দি-কিন্তু ওই পথে কোন মানুষের পক্ষে বের হওয়া অসম্ভব। আসবাব বলতে ওখানে রয়েছে একটা বেঞ্চ আর কাঠের প্যাকিং বাক্স উল্টে রেখে কাজ চালাবার মত একটা টেবিল। আর বিছানার গদি হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে কচি দেবদারু গাছের নরম ডগার পাতার স্তূপ কম্বল দিয়ে ঢাকা। ফিল লেজি এম র্যাঞ্চে তার নিজের শোয়ার ঘরের সাথে এটার তুলনা করে শিউরে উঠল। বাইরে তালা খোলার শব্দে বোঝা গেল কেউ আসছে। বেঞ্চের ওপর বসে নিজের চেহারাটা যতটা সম্ভব নির্ভয় রাখার চেষ্টা করল ফিল। যে লোকটা ভিতরে ঢুকল সে ওকে যারা ধরে এনেছে তাদের কেউ নয়। এই লোকটা কিছু লম্বা গড়নের। লোকটা তার কাত করে পরা হ্যাটটা মাথা থেকে নামানোর কোন প্রয়োজন বোধ করল না। মুখোশের আড়ালে ফুটো দিয়ে কেবল ওর নীল দুটো লোলুপ চোখ দেখা যাচ্ছে।
আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে কেন? ফিল প্রশ্ন করল।
সেটা তুমি পরে জানতে পারবে, জবাব দিল সে। এখন আমি কেবল এটুকু বলতে পারি যে একজন অতিথি তোমার সাথে দেখা করতে আসবে। তার একটা প্রস্তাবে রাজি হলে তোমাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
আমি যদি প্রত্যাখ্যান করি?
আমরা তো সেটাই চাই, খিলখিল করে হেসে সে বলে চলল, তাহলে আমি আর বয়েজরা লটারি করে ঠিক করব সবার আগে তোমাকে কে ভোগ করবে।
কথাটার মানে বুঝতে পেরে ফিলের মুখ থেকে রক্ত সরে গেল।
এই ভিজিটর কখন আসবে? প্রশ্ন করল ফিল।
ওহ, সে একটু সময় পেলেই আসবে, নির্বিকার ভাবে বলে সে বেরিয়ে গেল। ওকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে লোকটা দরজা বন্ধ করে চলে যাওয়ার পর খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে ফিলের সময় কাটছে।
ওর ভিজিটরের পরিচয় জানার কৌতূহল ওকে চিন্তায় ফেলল; অনেক চিন্তা করে সে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছল, যে আসবে সে জেমস ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। ওর মনে যে সন্দেহের বীজ বার্ট বুনে দিয়েছে, তাতে সে প্রায় নিশ্চিত যে ওর ফোরম্যানই লেজি এম দখল করার জন্যে এইসব করাচ্ছে। এই মুহূর্তে বার্টের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্যে ওর আফসোস হচ্ছে। লরিও ফিলের বিরুদ্ধে এই চক্রান্তের সাথে যুক্ত, এটা ভাবতেও ওর কষ্ট হচ্ছে।
এই অনিশ্চিত অপেক্ষার অস্থিরতা ওকে পাগল করে তুলেছে। তাই সে ওই লম্বা আউটলর জানালা দিয়ে বাইরে না তাকানোর নির্দেশ অমান্য করেই বারবার ওই ফোকরের মত গর্ত দিয়ে তাকিয়ে বাইরেটা দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু বারবার তাকিয়ে সে কেবল একবারই একটা লোকের দেখা পেল। লোকটা খাটো আর বেশ বলিষ্ঠ। টেনে সামনের দিকে নামানো হ্যাটের তলায় লোকটার চেহারা দেখতে পেল না বটে, কিন্তু কাঁচা-পাকা দাড়ি আর চোখে লাগানো প্যাঁচ দেখে সে তৎক্ষণাৎ ওকে শহরে যে লোককে বার্টের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে দেখেছিল, সেই একই লোক বলে চিনতে পারল। কিন্তু লোকটা একবারও মুখ তুলে কেবিন বা ফোকরের দিকে না চেয়ে মাথা নিচু করে সোজা হেঁটে চলে গেল।
১৭.
যেকোন বন্দিশালার সবথেকে কঠিন শাস্তি হচ্ছে একাকী ঘরে বন্দি থাকা। আটচল্লিশ ঘণ্টা ওই ঘরে বন্দি থাকার পর ওর মনের অবস্থা যখন একেবারে কাহিল এই সময়ে তৃতীয় দিন সকালে যে রোজ ওকে খাবার এনে দেয়, তার বদলে তালা খুলে অন্য কেউ কেবিনে ঢুকল। লোকটা ব্ল্যাক বার্ট।
তুমি? চেঁচিয়ে উঠল ফিল। ওহ, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ! আমি ভয় পাচ্ছিলাম লোকটা-সম্ভবত আর কেউ হবে।
বিশাল লোকটা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসা ফিলের দিকে চেয়ে অদ্ভুত ভাবে একটু হাসল। এই মুহূর্তটার জন্যে সে বহুঁকাল অপেক্ষা করেছে। কামরার মাঝখানে রাখা কাঠের বাক্স উল্টে তৈরি টেবিলে বসে সিগারেট বানানোর সরঞ্জাম বের করল।
শোনো, ফিল, বলে চলল সে, দেখলে তো, পুরোনো বন্ধুর ওপর বিশ্বাস রেখে স্ট্রেঞ্জারকে আপন করে নিয়ে দেখো তার ফলে নিজেকে কেমন ঝামেলায় ফেলেছ।
মেয়েটা লজ্জায় একটু লাল হলো; ওর কাছে মনে হলো এই বকাটা যেন সত্যিই তার পাওনা ছিল।
ফিল বলল, আমি এসবের অর্থ কিছুই বুঝতে পারছি না।
কেন? এটা তো লাল হরফে বড়বড় করে লেখা পড়ার মতই সহজ। যে সম্পর্কে তোমাকে আমি আগেই সাবধান করেছিলাম, বলল বার্ট। এমারি আর তোমার ফোরম্যান যুক্তি করে লেজি এম দখল করার মতলবে আছে। এই নরকের কীটগুলো জেমসেরই ভাড়া করা আউটল। এখন তুমি তার বন্দি। সে তোমাকে নিয়ে কি করবে তা আমি জানি না; তবে আমার ধারণা ও চাইবে তুমি ওর সাগরেদ লরিকে বিয়ে করো; তাহলে র্যাঞ্চটা, পুরোই ওদের দখলে চলে যাবে। আর এর পরে যদি তোমার কোন খারাপ কিছু ঘটে- অর্থপূর্ণ ইঙ্গিতের সাথে ওখানেই তার কথা শেষ হলো।
মেয়েটা আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকাল। আমি ভাবতেই পারি না মানুষ এত নীচ হতে পারে।
তুমি ওদের চেনো না, ফিল, বার্ট তাকে বোঝাবার চেষ্টা করল। তুমি হয়ত শুনে অবাক হবে যে জেমসই তোমার বাবাকে খুন করেছে-এটার প্রমাণ পাওয়া গেছে এখন। ব্যাঙ্কের টাকা লুট করে রাস্টনকেও সে-ই গুলি করেছে।
এই চরম আঘাতে একেবারে ভেঙে পড়ল ফিল। যদিও বাবার দেখা পাওয়ার আশা সে প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল, তবু একটা ক্ষীণ আশা তার মনে জাগ্রত ছিল। কিন্তু বাবা যে কারও স্বার্থসিদ্ধির জন্যে খুন হয়েছে এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না।
আমার সিদ্ধান্ত যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে এমারি কেন এখানে উপস্থিত? সে এখানে কি করছে?
জাজ এমারি এখানে? বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল ফিল। কেবল মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল বার্ট। কিন্তু এর পিছনে কোন যুক্তি সে দেখাতে পারল না। সে কেবল কথাটা বলেই ক্ষান্ত হলো। ফিল ভাবল বাট নিশ্চয় সত্যি কথাই বলছে।
কিন্তু তুমি আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে, তাই না? উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করল ফিল। আমি ভয় পাচ্ছি-দারুণ ভয়ে আছি।
ধূর্ত লোকটার চোখ দুটো আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এর জন্যে তোমাকে দোষ দেয়া যায় না। ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ তোমার ওপর নির্ভর করছে।
আমার ওপর? তার মানে? প্রশ্ন করল ফিল।
নিশ্চয়, হাসল বার্ট। এখন আসল কথাটা হচ্ছে ব্ল্যাক মাস্কের দল যত ভয়ঙ্করই হোক আমার সাথে লাগতে আসার সাহস পাবে না। তুমি যদি আমার, হও, তাহলে তোমাকেও ওরা ছুতে সাহস পাবে না। ওরা আমাকে বা আমার নিজস্ব কোন কিছুর ক্ষতি করার সাহস পাবে না। বুঝেছ?
তোমার কথার মানে আমি ঠিক বুঝলাম না, অনিশ্চিত স্বরে বলল ফিল।
অর্থাৎ আমি তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিচ্ছি। জানি এই পরিস্থিতিতে এভাবে প্রস্তাব দেয়া কোন মেয়েই পছন্দ করবে না, কিন্তু এছাড়া তোমাকে এখান থেকে উদ্ধার করার বিকল্প কোন পথ নেই, বলল বার্ট। যদি জেমস তার সাগরেদ লরির সাথে বিয়ে করানোর জন্যে জাজকে এখানে এনে থাকে, তাহলে
সে এটা জেনে অবাক হবে যে তোমার আগেই বিয়ে হয়ে গেছে।
ফিল ওর কথা শুনে ভগ্ন হৃদয়ে চোখ বুজে ভাবছে। লরি এবং তার ফোরম্যান যত দোষই করে থাকুক না কেন সে বাটকে মোটেও বিয়ে করতে চায় না। কেবিনের দেয়ালে হেলান দিয়ে ফিল নিজের মনটাকে গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
জাজ হয়ত এই বিয়েতে রাজি হবে না, বলল সে।
আমি ওর সাথে কথা বলার পর আমার মনে হয় সে রাজি হতে বাধ্য হবে, কঠিন স্বরে বলল বার্ট। ও যা ভাবছে তার চেয়ে অনেক বেশি জানি আমি।
চোখ বুজে কিছুক্ষণ ভেবে আর কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে মরিয়া হয়ে সে রাজি হওয়ার জোগাড় করছে এই সময়ে কে যেন ফিসফিস করে ওকে বলল, মিথ্যে কথা, ভেঙে পোড়ো না, ভেবে দেখার জন্যে সময় চাও।
অবাক হয়ে ফিলের চমকে ওঠা খেয়াল করল না র্যাঞ্চার। সে বিজয়ের হাসি নিয়ে ফিলের জবাবের অপেক্ষায় বসে আছে। যদিও মেয়েটা ওই রহস্যময় উপদেশটা ওকে কে দিয়েছে তা জানে না, তবু ওটা ওর মনের জোর অনেক বাড়িয়ে দিল।
ভাবার জন্যে আমাকে কিছু সময় দিতে হবে তোমার, বলল সে।
নিরাশায় কালো হলো বার্টের মুখ। নষ্ট করার মত সময় আর আমাদের হাতে নেই, বলল সে। এখানে আসতে আমাকে বড় একটা ঝুঁকি নিতে হয়েছে, এখানে বেশিক্ষণ থাকা মোটেও নিরাপদ হবে না। আরও একটা কথা তোমার জেনে রাখা ভাল-তোমার ফোরম্যানের আসল নাম জেমস গ্রীন নয়, সে আউটল বিদ্যুৎ এরফান নামেই বেশি পরিচিত। আমার বিশ্বাস ওর কথা তুমি আগেও নিশ্চয় শুনেছ?
ফিলের চেহারা একেবারে ফেকাসে হয়ে গেল। আউটল বিদ্যুৎ এরফান! তার মনে পড়ল ওই লোকের অদ্ভুত সাহসিকতা আর পিস্তলে দারুণ দক্ষতার অনেক গল্পই সে শুনেছে। চমকার চাতুরীর সাথে লোকটা বারবার আইনের চোখে ধুলো দিয়ে ধরা পড়ার হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। কিন্তু সে জানে না যে এরফান এখন আর আউটল নেই বরং আইনের পক্ষেই এখন কাজ করছে সে। এবং যেসব অপরাধ সে করেছে বলে শোনা যায় সেগুলোর একটাও সে করেনি–অন্য লোকের অপরাধ ওর ঘাড়ে দোষ হিসেবে চেপেছে। কিন্তু ফিলের ধারণা ওই রকম ভয়ঙ্কর লোকের পক্ষে অসাধ্য কোন কাজ নেই।
কি, এসব জানার পরেও তুমি ভাবতে চাও? প্রশ্ন করল সে।
দুর্বল হয়ো না, স্বরটা আবার ওকে সাবধান করল।
হ্যাঁ, আমাকে ভাবতেই হবে, ক্ষীণ স্বরে বলল ফিল।
বার্টের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে; স্পষ্টতই ক্রুদ্ধ স্বরে সে বলল, এতে এত ভাবার কি আছে? হয় আমার স্ত্রী হয়ে এখান থেকে তোমার বেরোতে হবে, নইলে এরফানের ভাড়া করা ডাকাতদের হাতে তোমাকে নির্যাতিত হতে হবে। কথাটা বলেই মেয়েটার দিকে চেয়ে সে বুঝল ভুল করে ফেলেছে। শুধরে নেয়ার চেষ্টায় সে তাড়াতাড়ি আবার বলল, ওদের একজনকে আমি ও-কথা বলতে শুনে ফেলেছি।
কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। ওই একই হুমকি সে লম্বা আউটলটার মুখে শুনেছে। বার্টের ব্যাখ্যায় ওর সন্দেহ কাটল না। তাই মুখ কুঁচকে বিফল হয়ে বেরিয়ে আসার আগে বার্ট জানাল জাজের সাথে কথা বলতে যাচ্ছে সে।
ওর সাথে সব ব্যবস্থা ঠিক করে ফেলার পর তোমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে, ফিল, হুমকি দিল বার্ট। আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানো চলবে না।
বার্ট বেরিয়ে গেল। মেয়েটা ঘরে তালা লাগানোর শব্দ শুনতে পেল। এখন ওর একটাই আশা থাকল-ওই অচেনা সুরের মালিক। নিজের পিছনের দেয়ালটা এবার ভাল করে পরীক্ষা করে দেখল ফিল। ঠিক ওর পিছনেই দুটো গুড়ি সমান হয়ে বসেনি-তাই ওখানে একটা ফাঁক রয়ে গেছে; ওই লোকটা নিশ্চয় ওখান দিয়েই ওদের কথা শুনেছে এবং ফিসফিস করে কথা বলে ওকে সাহস জুগিয়েছে। ওই ফাঁক দিয়ে অনেক চেষ্টা করেও কাউকে সে দেখতে পেল না। আবার সেই একাকীত্ব আর একটানা অবসর। এতক্ষণে সে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করার অবকাশ পেল। সে ভাবছে বার্টের কাছে ওর তালার চাবি কিভাবে এলো? আর ওই লম্বা লোকটাই বা কিভাবে জানল ওর সাথে একজন কেউ একটা প্রস্তাব নিয়ে দেখা করতে আসবে? এবং ওর প্রস্তাব না মেনে নিলে-নাহ, আর ভাবতে পারছে না ফিল; মাথাটা ওর গুলিয়ে যাচ্ছে। তবে কি সেই অচেনা লোকটা সত্যিই ওকে ঠিক পরামর্শই দিয়েছে? কিন্তু বার্টের প্রস্তাব মেনে না নিলে এখান থেকে সে কিভাবে বেরোবে? ওই অচেনা লোকটা কি তাকে কোন সাহায্য করতে পারবে? কিন্তু একটা লোক এতজনের সাথে একা কিভাবে পেরে উঠবে? আর ভাবতে পারছে না সে। উঠে গিয়ে ওই ফোকর দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে বাইরের দিকে চেয়ে রইল ফিল। কিন্তু পাইন গাছ আর ঝোঁপ ছাড়া কোন মানুষ, ওর। চোখে পড়ল না।
বার্টকে বেশিদূর যেতে হলো না, ফিলের কামরা থেকে বেরিয়ে মাত্র বিশ কদম হেঁটেই সে আরেকটা কেবিনের সামনে পৌঁছল। এটাও ফিলের কেবিনের ছাদেই গড়া। কেবিনের ভিতর সে ডেজার্ট এজের জাজ এমারিকে বেঞ্চে বসে নিশ্চিন্তে পাইপ ফুকতে দেখল। বন্দি লোকটা দরজা দিয়ে ঢোকা উজ্জ্বল আলোয় চোখ পিটপিট করে তাকাল। তারপর আগন্তুককে চিনতে পেরে ব্যঙ্গের সুরে সম্ভাষণ জানাল।
মর্নিং, বার্ট, ওরা কি তোমাকেও ধরে এনেছে, নাকি তুমিই ওদের বস?
উভয় ক্ষেত্রেই তোমার ধারণা ভুল, জবাব দিল বার্ট।
ভাল কথা, তাহলে আমার এখানে উপস্থিতির জন্যে তোমাকে ধন্যবাদ জানানোর কোন প্রয়োজন নেই, বলল এমারি।
না, তবে তোমার ফেরার ব্যবস্থা করার জন্যে হয়ত তোমাকে তা দিতে হতে পারে, ওকে জানাল বার্ট।
এবং তার মূল্য কত পড়বে, বার্ট? জানতে চাইল জাজ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লোকটাকে যাচাই করে দেখছে সে।
একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান, যেটাতে তোমার কোন খরচই লাগবে না, জবাব এলো।
হুম! শুষ্ক স্বরে বলল বুড়ে। কিন্তু আমি ক্যাশ দেওয়াটাই বেশি পছন্দ করব। তা সেই কাজটা কি ধরনের হবে?
শুধু একটা বিয়ে পড়িয়ে তোমাকে কাগজে সই করতে হবে, ব্যস, এইটুকুই তোমার কাজ, হাসল বার্ট।
চট করে জাজের চোখ বিস্ময়ে বিস্ফারিত হলো। শুনে খুশি হলাম, বলল সে। আমার মনে হয় বিয়ের বন্ধনটাই একমাত্র ঝুঁকি যেটাতে জড়াতে তুমি। কখনও সাহস পাওনি। অনুষ্ঠানটা কি বার বিতে হবে?
না, এখানে, র্যাঞ্চার জবাব দিল।
ভাল কথা, হালকা সুরে বলল জাজ। একটা বিয়ে হবে এবং পাহাড়েই হবে মধুচন্দ্রমা-মন্দ কি? এটা তো রোমান্টিক একটা ব্যাপার। তবে পাত্রীর নাম এবং এই বিয়েতে তার মত আছে কিনা, সেটা আমাকে আগে জানতে হবে।
পাত্রীর নাম ফিল মাস্টারসন, এবং সে-ও ইচ্ছুক, সরাসরি জানাল বার্ট।
জাজ এমারি আবার বসে পড়ল। মিস মাস্টারসন এখানে? কঠিন স্বরে বলল সে। এর মানেটা কি?
এর মানে হচ্ছে আমি তোমার খেলার চাল বুঝে ফেলেছি। তুমি র্যাঞ্চটা দখল করবে আমি তা হতে দেব না, তুমি হেরে গেছ, জবাব দিল বার্ট। তুমি মাস্টারসনকে ভজিয়ে ওর উইলে নিজেকে অভিভাবক করে বসিয়েছ, তোমার নিজস্ব লোক এরফানকে ফোরম্যান হিসেবে কাজে লাগিয়েছ। এর পরপরই জ্যাক নিরুদ্দেশ হলো। তুমি যাকে নির্দিষ্ট করে দেবে তাকেই ফিলের বিয়ে, করতে হবে। পরে সে-ও হয়ত অদৃশ্য হবে আর লেজি এম পুরো তোমার দখলে। এসে যাবে। অত্যন্ত নিখুঁত চক্রান্ত। তোমার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়।
হতবাক চোখে বার্টের দিকে চেয়ে আছে এমারি তোমার কল্পনা শক্তি যে। এত সুদূর প্রসারী হতে পারে তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, বার্ট।
র্যাঞ্চার জাজের কথাকে কোন পাত্তাই দিল না। তুমি কেবল একটাই ভুল করেছ, সেটা হচ্ছে আমাকে তুমি গোনার মধ্যে ধরোনি, বলে চলল বার্ট। ফিল মাস্টারসনকে আমার হাতে তুলে দেয়া হবে বলে অনেকদিন আগে থেকেই কথা হয়ে আছে। আমি তাকে স্ত্রী না করে কিছুতেই ছাড়ব না। তবে এর জন্যে তোমার মত নেয়া অপরিহার্য হয়ে দাড়িয়েছে দেখে ভাবলাম আমি তোমাকে দিয়েই বিয়ের চুক্তিটা লেখাব।
তাই তুমি তোমার ভাড়াটে গুণ্ডা পাঠিয়ে আমাকে এখানে আনিয়েছ, তাই? বলল জাজ।
ওদের মালিক আমি নই, ওরা কেবল টাকার বদলে কাজটা করেছে, ব্যাখ্যা করল বার্ট। তবে আমার বিশ্বাস আমি যা বলব তা-ই ওরা করবে।
তাতে আমারও কোন সন্দেহ নেই, জাজের জবাবে বার্টের কপালের ভাঁজ আরও গভীর হলো।
শোনো, জাজ, এক মাইল পথ পাড়ি দেয়ার জন্যে ছয় মাইল ঘুরে কোন লাভ নেই, বলল সে। আমি তোমার ওপর অবিচার করতে চাই না। ফিলের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে তুমি এরফানকে যদি বাদ দাও, তাহলে আমি লেজি এমকে তিন ভাগে ভাগ করে তোমাকে এক ভাগ দিতে রাজি আছি। তুমি কি বলো?
তুমি নেহাতই একটা পাজি লোক, জবাব দিল এমারি।
তবে কি আমার প্রস্তাব তুমি প্রত্যাখ্যান করছ?
আমার জবাব কি তোমার কাছে মেনে নেয়ার মত শোনাল? পাল্টা প্রশ্ন করল এমারি।
উঠে দাঁড়াল র্যাঞ্চার; চেহারা রাগ আর বিদ্বেষে বিষাক্ত দেখাচ্ছে। ডান হাতের মুঠোয় পিস্তলের বাঁট আঁকড়ে ধরেছে।
তুমি একটা বোকা গাধা, চিৎকার করল সে। তোমাকে এই মুহূর্তে গুলি করে মেরে ফেললে আমাকে ঠেকাবে কে?
এতে কয়েক প্রকারের বাধা আছে, হাসল জাজ। প্রথমত এতে আমার সম্মতি পাওয়া তোমার হবে না।
বাজে,যুক্তি! তোমার পরে যে ভার নেবে-
সে হচ্ছে গভর্নর ব্লেক, আমার একজন পুরোনো বন্ধু। সে অবশ্যই তাকে আমি যেমন বলে রেখেছি সেই অনুযায়ীই কাজ করবে, শান্ত স্বরে বলল এমারি। সে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে তোমাকে; যেগুলোর উত্তর দেয়া তোমার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হবে। আমাকে হত্যা করলে তুমি এই ডাকাতদের হাতের পুতুলে পরিণত হবে; তৃতীয়ত, এরফান তোমাকে তুমি যেমন কুকুর ঠিক সেইভাবেই গুলি করে মারবে।
এবার বার বির লোকটা হাসল।
আমাকে মারতে হলে ওকে অনেক বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে আসতে হবে। হোপের শেরিফ যদি তার সাহস হারিয়ে না থাকে তাহলে মিস্টার গ্রীন এখন হাজত বাস করছে।
কিসের অপরাধে? গর্জে উঠল জাজ।
ব্যাঙ্ক ডাকাতি আর রাস্টনকে গুলি করার অপরাধই যথেষ্ট; জ্যাককে হত্যা করার কথা না হয় বাদই দিলাম। তোমার পেশার সাহায্য ওর দরকার পড়বে-অবশ্য ওরা যদি আগেই ওর বিচার শেষ না করে থাকে।
অসম্ভব কথা, মন্তব্য করল জাজ।
কিন্তু ওর বিরুদ্ধে প্রমাণ তা বলে না। অত্যন্ত চতুর লইয়ার ছাড়া এ যাত্রা কেউ ওকে বাচাতে পারবে না! টেলরের হাতে সব প্রমাণই আছে।
জাজ র্যাঞ্চারের দিকে চেয়ে ওকে যাচাই করে বুঝল অন্তত এখন লোকটা মিথ্যা বলছে না। জাজের মাথায় কি চিন্তা চলছে আঁচ করে বার্ট আবার চেষ্টা করল।
আমার প্রস্তাবটা তোমার আবার ভেবে দেখা ভাল, এটাই তোমার একমাত্র উপায়, পরামর্শ দিল বার্ট।
ওর দিকে কতক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে জাজ এমারি বলল, ব্ল্যাক বার্ট, একদিন যখন সুযোগ আসবে, আমি তোমাকে ফাঁসি দেয়ার আদেশ দেব।
শক্ত লোক হলেও এমারির শান্ত স্বরে দেয়া হুমকিতে বিচলিত হলো বার্ট। কিন্তু বেপরোয়া মনোবৃত্তি এতে তার রাগ আরও চড়িয়ে দিল।
সব ভাল তাই এখন আমার হাতে, ব্যাটা বুড়ো খচ্চর, রূঢ় স্বরে বলল সে। তুমি এখানেই পচে মরবে। হঠাৎ একটা চিন্তা খেলল তার মাথায়। তুমি টের পাচ্ছ তো, আমার সাথে বিয়ে দেয়া না হলে মেয়েটার কপালে কি ঘটবে?
হ্যাঁ, ধমকের সুরে বলল এমারি। মেয়েটা সারা জীবন কষ্ট আর অবমাননার হাত থেকে বেঁচে যাবে।
বার্ট হাসল। ভূল-ঠিক ওটা তার কপালে জুটবে না, কারণ ওকে আমি ব্ল্যাক মাস্কদের হাতে তুলে দেব। বেঁচে থেকে মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করবে ও। আজীবন!
জাজ বার্টের দিকে তীব্র ঘৃণার চোখে তাকাল।
আমাকে আমার সিদ্ধান্তে অটল রাখার জন্যে যে কথাটা বলার দরকার ছিল ঠিক সেটাই তুমি বলেছ, ধীর স্বরে বলল জাজ। ঠিক এই কারণেই সার্জেন যেমন মানুষের দেহ থেকে বিষাক্ত অঙ্গ কেটে বাদ দেয়, তোমাদের মত বদ লোকে সমাজ থেকে নির্মূল করার জন্যে ওই একই কারণে বিদ্যুৎ এরফানের মত লোকের প্রয়োজন আছে।
ঠাণ্ডা স্বরে বলা হলেও কথাগুলো বার্টকে তপ্ত ব্র্যান্ডিং আয়রনের মতই ঘঁাকা দিয়ে পুড়িয়ে দিল। এই বুড়ো তাহলে সব জেনেশুনেই বিদ্যুৎ এরফানকে এখানে জেমস গ্রীন সাজিয়ে পাঠিয়েছিল। এই বুড়োই পরোক্ষ ভাবে তার ব্ল্যাক মাস্ক দলটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। রাগে দিশেহারা হয়ে জাজের মুখে প্রচণ্ড ঘুসি মারল সে।
জোরালো আঘাতে দেয়ালের ওপর ছিটকে পড়ল এমারি; গাল কেটে রক্ত গড়াচ্ছে। দেয়ালে ঠেস দিয়েই মেঝের ওপর পড়ে গেল।
এটা কেবল একটা নমুনা, দাঁতেদাত পিষে বলল বার্ট। এর পর তোমার কপালে যে শাস্তি আছে তাতে নরকও তোমার কাছে বেশি সুখের বলে মনে হবে।
কামরা ছেড়ে বেরিয়ে দরজা তালা দিয়ে চলে গেল র্যাঞ্চার।
জাজ কোন আশার আলোই দেখতে পাচ্ছে না। বড় একটা খেলায় নেমেছে বার্ট। জ্যাক মৃত, এরফান জেল-হাজতে, ফিলও ব্ল্যাক মাস্কের হাতে বন্দি, সে নিজেও তাই। মিথ্যে বড়াই করেনি বার বি র্যাঞ্চার, সব ভাল তাসই তার হাতে। এখন জাজ নিরুপায়।
১৮.
লেজি এমে এখন আর সেই আগেকার হালকা মূড় নেই। ব্যর্থতার গ্লানিতে ভুগছে ওরা। ডাকাত দলটাকে ধ্বংস করে এলেও ওদের প্রধান লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ওদের মধ্যে সব থেকে অসুখী হচ্ছে লরি, কারণ সে ওই অভিযানে যোগ দিতে পারেনি। লরি এখন বিছানা ছেড়েছে বটে, কিন্তু বাম হাতটা এখনও স্লিঙে ঝুলছে। কাউবয়রা ফেরার পর গত চব্বিশ ঘণ্টায় সে এরফানকে অতিষ্ট করে তুলেছে।
আমি তো তোমাকে বলেছি আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব ছিল তা আমরা করেছি, এই নিয়ে পঞ্চমবার ওকে বলল এরফান। না, আমি ওখানে যাচ্ছি না; আমাকে হোপে যেতে হবে। ওখানে আমার কিছু কাজ আছে। না, আমি কোন প্রেমে পাগল লেংড়া প্রেমিককেও সাথে নিতে চাই না।
সরাসরি কথাটা বলে ওর কবল থেকে রেহাই পেয়ে যোপের পথ ধরল এরফান। দুপুরের পরে শহরে পৌঁছল সে। রাস্তায় কোন লোকজন নেই। মাথার ওপর সূর্য যেন আগুন ছড়াচ্ছে। ফেনটনের বারে একটা বিয়ার খেয়ে পিপাসা মেটাবার কথা ভাবছে, এই সময় সে লক্ষ করল রাস্টন তার ব্যাঙ্ক আবার খুলেছে। ব্যাঙ্কে ঢুকে সে দেখল ব্যাঙ্কারকে দুর্বল আর অসুস্থ দেখাচ্ছে।
একটা ম্লান হাসি দিয়ে ওকে স্বাগত জানাল ব্যাঙ্কার।
তোমাকে ফিরে আসতে দেখে খুশি হলাম, মিস্টার রাস্টন, বলল এরফান। আগের ব্যবসাই আবার গুছিয়ে নিচ্ছ?
আমি আবারও চেষ্টা করে দেখছি, বলল সে। এখানকার লোকজন। আমাকে অনেক সাহায্য করছে-ওরা কেউ আমাকে দোষ দিচ্ছে না। মিস্টার বার্টের কথাই ধরো, ডাকাতির আগের দিনই সে পাঁচ হাজার ডলার ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছিল, কিন্তু সে কথা দিয়েছে টাকাটা সে দাবি করবে না। সে টাকাটা আবার ফেরত পাওয়া যাবে ভেবেই ঝুঁকি নেবে। শহরের আর সবাই ওর কথাতেই বিশ্বাস করে। ওরাও কেউ এই মুহূর্তেই টাকা দাবি করছে না।
আরে, এটা তো খুব ভাল কথা, বলে মনেমনে ভাবল এরফান: চালটা অত্যন্ত চতুরও বটে। এটা সেটা কিছু কথার পরে সে পকেট থেকে চারটে একশো ডলারের নোর্ট বের করে বলল, এগুলো তুমি ভাঙিয়ে দিতে পারবে? আমার কিছু ছোটছোট দেনা শোধ করা দরকার।
নিশ্চয়, জেমস, কিন্তু তোমার তেমন তাড়া না থাকলে আমার ক্লার্ককে একটা ছোট কাজে আমি একটু বাইরে পাঠাতে চাই।
না, আমার এখন কোন তাড়া নেই, বলল এরফান।
রাস্টন একটা খাতা বের করে কি যেন দেখে নিচু স্বরে কিছু নির্দেশ দিল। ক্লার্ক চটপট তার কাজে বেরিয়ে গেল।
এরফান সময় কাটাবার জন্যে একটা সিগারেট তৈরি করছে। ব্যাঙ্কার ধীর গতিতে ছোট নোট গোনা শুরু করল।
এরফান লক্ষ করল টাকা গোনার ফাঁকে ব্যাঙ্কার নার্ভাস ভাবে বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে।
তুমি কি মনে করো ডাকাতির টাকা ফিরে পাওয়ার কোন চান্স তোমার আছে? প্রশ্ন করল এরফান।
মনে হচ্ছে যেন এখন একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, কাঁপা স্বরে জবাব দিল রাস্টন।
বাইরে অনেকগুলো পায়ের শব্দ শোনা গেল। এরফান ঘুরে দেখল দরজা দিয়ে শেরিফ আর তার দুই ডেপুটি ব্যাঙ্কে ঢুকছে। ওদের পিছনে বেশ কিছু শহরবাসীকেও দেখা যাচ্ছে। বিপদের গন্ধ টের পাচেই এরফান। অফিসার সবার হাতই পিস্তলের বাঁটের কাছাকাছি রয়েছে। কাউন্টারে হেলান দিয়ে এরফান একটু কাত হয়ে হাসিমুখে ওদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। ওর বুড়ো আঙুল দুটো গানবেল্টের ফাঁকে গোঁজা।
সামনে এগিয়ে এসো, শেরিফ, আমার কাজ প্রায় শেষ, বলল এরফান।
বিদ্বেষের চোখে ওর দিকে তাকাল টেলর। তোমার আসল কাজ এখনও শুরুই হয়নি, কঠিন স্বরে বলল সে। তুমি যেসব নোট এখানে ভাঙাতে এসেছ, সেগুলো তুমি কোথায় পেলে?
আমি জানি না তুমি কেন এর মধ্যে নাক গলাতে এসেছ, তবে কেবল তোমার কৌতূহল মেটাবার জন্যেই বলছি, যেদিন এই ব্যাঙ্কে ডাকাতি হয় সেদিন সকালে এই ব্যাঙ্ক থেকেই আমি এই টাকা তুলেছি, ঠিক বলিনি, রাস্টন?
মাথা নাড়ল ব্যাঙ্কার। যে চারটা নোট তুমি ভাঙাতে এসেছ সেগুলো হচ্ছে চুরি করা নোটেরই একটা অংশ, বলল সে।
অবাক বিস্ময়ে রাস্টনের দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকাল এরফান। তারপর শান্ত স্বরেই বলল, তোমার নিশ্চয় কোন ভুল হচ্ছে, স্যার।
ওর স্বরের অর্ন্তনিহিত হুমকি টের পেয়ে ব্যাঙ্কারের মুখ পুরো সাদা হয়ে। গেল, ভয়ে ঠোঁট কাঁপছে, কিন্তু তার জবাবে কোনরকম ইতস্ততার লক্ষণ প্রকাশ পেল না।
এতে কোন ভুল হওয়ার অবকাশ নেই। এখানে সবগুলো বড় চুরি যাওয়া নোটের একটা লিস্ট রয়েছে আমার কাছে; এর একটা কপি আমি, শেরিফকেও দিয়েছি। বিশ্বাস না হলে তুমি নিজেই চেক করে দেখতে পারো, বলে সে খাতাটা আর নোট এরফানের দিকে বাড়িয়ে দিল।
নাম্বারগুলো মিলিয়ে দেখল এরফান, সত্যিই ওর দেয়া নোটের নাম্বারগুলো চুরি যাওয়া নোটের ভিতর রয়েছে।
খাতার আগের পৃষ্ঠায় জেমস গ্রীন, র্যাঞ্চার টিম, এবং সেলুন মালিক ফেনটনের নামের তলায় লেখা কতগুলো নাম্বার দেখিয়ে ব্যাঙ্কার আবার বলল, ডাকাতির আগে সেদিন সকালে যেসব টাকার লেনদেন এই ব্যাঙ্কে হয়েছে। সেগুলোর নাম্বার এখানে লেখা আছে।
এই রহস্যের কোন সমাধান করতে না পেরে কঠিন দৃষ্টিতে ব্যাঙ্কারকে আর একবার যাচাই করে দেখল এরফান, কিন্তু ওর দৃষ্টির সামনে লোকটা মোটেও মিথ্যাবাদীর মত মিইয়ে গেল না। টিম আর ফেনটন দুজনেই ওকে বলেছিল, রাস্টন অত্যন্ত সৎ বলে ওর খ্যাতি আছে। লোকটা মিথ্যা কথা বলছে বলে ওর মনে হলো না। বুঝতে পারছে যেভাবেই হোক ওকে কেউ কোণঠাসা করার। ব্যবস্থা করে জালে আটকেছে। ওগুলো রাস্টনকে ফিরিয়ে দিয়ে সে নিজের নাম্বারগুলোর একটা লিস্ট করে দিতে বলল। একটা কাগজে দ্রুতহাতে ওর একটা কপি করে এরফানের দিকে বাড়িয়ে দিল সে।
কাগজটা পকেটে ভরে টেলরের দিকে চেয়ে সে হেসে বলল, আমি জানি না কিভাবে তুমি এটা সম্ভব করলে, কিন্তু এটা সত্যিই একটা নিখুঁত ফ্রেম-আপ, বলল সে। আমি ধারণা করছি এখন তুমি আমাকে ওই ব্যাঙ্ক ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার করতে চাইবে?
অবশ্যই-অন্যান্য চার্জের সাথে, যেমন রাস্টনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা।
হায়, ঈশ্বর, আমি কি তোমাকে গুলিও করেছিলাম, রাস্টন? আমি সত্যিই দুঃখিত।
এবং জ্যাক মাস্টারসকেও তুমিই খুন করেছ, যেন হাটে বোমা ফাটাচ্ছে, এভাবে ঘোষণা করল টেলর।
কিন্তু অভিযুক্ত লোকটার মধ্যে এর কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। এরফান বলল, তুমি প্রেসিডেন্ট লিঙ্কনের নামটা ডাকাতির সাথে যোগ করতে ভুলে গেছ।
ওর মন্তব্যে দরজার মুখে দাড়ানো শহরবাসীর মধ্যে হাসির রোল উঠল।
বিষাক্ত রাগে টেলরের হাত পিস্তল বের করার জন্যে বাঁট ছুঁয়ে ফেলেছিল, কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল সামনের লোকটা সহজেই বার্টকেও হারিয়ে দিয়েছিল। তাই সে সঙ্গে সঙ্গে বাঁট ছেড়ে দিল। কিন্তু ওর এই ঘটনাটা অনেকেই লক্ষ করেছে। তোমার জন্যে এক প্যাকেট তাস আনব, টেলর? বলে উঠল শহরের একজন।
রোষের দৃষ্টিতে বক্তার দিকে চেয়ে শেরিফ বলল, এক প্যাক গাধার কোন প্রয়োজন আমার নেই। তারপর ডেপুটি দুজনের দিকে ফিরে সে আদেশ দিল, ওর পিস্তল দুটো তোমরা ছিনিয়ে নাও। কিন্তু ওদের কারও মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার কোন আগ্রহ দেখা গেল না দেখে এরফান হাসল।
শান্ত হওয়াই ভাল, শেরিফ, সাবধান করল সে। শান্তিপ্রিয় মানুষ আমি, কিন্তু আমার সহ্যের সীমা পার হলে তোমার কপালে খারাবি আছে। আইনকে আমি শ্রদ্ধা করে চলি-কিন্তু তোমার মত নীচ কীট, যারা আইনের নামে কুকাজ, করে তাদের ঘৃণা আমি করি।
হাহ, আমি আদেশ দিলেই সবাই মিলে গুলিতে তোমাকে ঝাঁঝরা করে ফেলবে, হুমকি দিল শেরিফ।
এরফানের মুখের চেহারা একটুও ম্লান হলো না, কিন্তু কখন যে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে কোমরের দুপাশে ওর দুটো কোল্ট .৪৫ উঠে এসে শেরিফকে কাভার করেছে তা কেউ টের পায়নি।
তোমার আদেশটা শহরের দাফনকারীকে দাও, টেলর, কারণ তুমিই সবার আগে যাবে, ঠাট্টার স্বরে বলল এরফান।
শেরিফের মুখ থেকে সব রক্ত সরে গেল। গোলাগুলির সম্ভাবনায় দরজা থেকে উৎসাহী দর্শকের দল ঝটপট উধাও হলো। ওদের অবস্থা দেখে এরফান হেসে বলল, তোমাদের কারও আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই-কেবল শেরিফ আর তার ডেপুটি দুজনকে হাত তুলে দাঁড়িয়ে আমার বক্তব্য শুনতে হবে।
ওরা নির্দ্বিধায় হাত তুলে দাঁড়াল বটে, কিন্তু শেরিফ তার মুখ বন্ধ না রেখে বলল, তুমি গ্রেপ্তারে বাধা দিয়ে কেবল নিজের বিরুদ্ধে আরও একটা অভিযোগ বাড়ালে।
ভাল, কিন্তু তবু আমাকে একবারের বেশি ফাঁসি দিতে পারবে না তোমরা, মৃদু হাসল এরফান। আমি কোন বাধা মোটেও দিচ্ছি না, কিন্তু তোমার আতিথ্য গ্রহণ করার আগে আমাকে ছোট্ট একটা কাজের ব্যবস্থা করে যেতে হবে। তুমি বুঝতেই পারছ, আমার অবর্তমানে লেজি এম–দেখাশোনা করার জন্যে কেউ থাকছে না। র্যাঞ্চে এই খবর পৌঁছলে ওদের সাথে যে শহরের একটা লড়াই বেধে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই ডেজার্ট এজে জাজ এমারির কাছে আমার একটা খবর পাঠানো দরকার, যেন সে এসে র্যাঞ্চের হাল ধরে। সে জানবে কি করতে হবে। আইনত সে-ই এখন ওই র্যাঞ্চের অভিভাবক।
এই সময়ে দরজার কাছে একটা নড়াচড়ার আভাস পাওয়া গেল। এরফান দেখল ভিড় ঠেলে ইয়র্কি ভিতরে ঢুকল। এরফানের চেহারায় ওকে চেনার কোন চিহ্ন দেখা গেল না।
আমি তোমার জন্যে এই খবরটা ওখানে পৌঁছে দেব, মিস্টার গ্রীন। একটা কাজে আমি ওখানেই যাচ্ছি।
আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ, স্ট্রেঞ্জার, গম্ভীর স্বরে বলল এরফান।
শোনো, আমার এই ব্যাপারে কিছু বক্তব্য আছে, বলল টেলর।
চোখ সরু করে শেরিফের দিকে তাকাল ইয়র্কি। তুমি কি আমার গতিবিধিতে হস্তক্ষেপ করতে চাও? অ্যাসিড মেশানো স্বরে প্রশ্ন করল সে।
ওর চ্যালেঞ্জের জবাবে বলার কিছুই খুঁজে পেল না শেরিফ। উপেক্ষার ভঙ্গিতে কাঁধ উঁচিয়ে মাথা নাড়ল সে। দরজার দিকে এগোল যুবক। কিন্তু মাটিতে বুটের ঘষার সামান্য শব্দেই সে ঝট করে ঘুরে দাড়াল। ওর কোমরের পাশে দুটো পিস্তলই শেরিফকে কাভার করে রয়েছে। দ্রুততায় সে প্রায় এরফানের সমকক্ষ। কোন হুমকি নেই, কেউ একজন পা সরিয়েছে মাত্র দেখে সে বলল, সরি, জেন্টস, আমার নার্ভ একটু উত্তেজিত অবস্থায় আছে।
লোকটা যখন দরজা দিয়ে বেরিয়ে অদৃশ্য হলো, শেরিফ তখন মনে মনে বিরাট হাঁফ ছাড়ল।
ভিড়ের অনেকে লোকটাকে অদৃশ্য হতে দেখে সশব্দে সস্তির শাস ছাড়ল।
একজন ডেপুটি মন্তব্য, করল, ছোকরার নার্ভ স্থির করার জন্যে জরুরী চিকিৎসা দরকার।
বিপদ কেটে যাওয়ার পর কিছুটা সাহস ফিরে পেয়ে টেলর বলল, আবার এই ধরনের আচরণ করলে ওই ছোঁকরা দেখবে এই শহরটা ওর জন্যে বেশি গরম। এরফানের দিকে তাকাল সে। এবার তো তোমার কাজ হয়েছে-এখন তুমি আর কি চাও?
এরফান তার পিস্তল দুটো খাপে ভরে গানবেল্ট খুলে শেরিফের দিকে বাড়িয়ে দিল। এখন আর তোমার আতিথ্য গ্রহণ করতে আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু তুমি ভুল মানুষকে গ্রেপ্তার করছ; যদিও তোমার মত অপদার্থের জন্যে এটা কিছুই নয়। দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই তোমার
শেরিফ এই অপমানটা নীরবেই হজম করল। কিন্তু বিপজ্জনক এই লোকটার এমন সহজ আত্মসমর্পণ তাকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে দিল।
১৯.
হোপ এগেইন এতটা উন্নত নয় যে অন্যান্য শহরের মত পাকা একটা জেল আছে বলে বসতকারীরা গর্ব করতে পারে। হোপের জেল মানে শেরিফের অফিসের পিছনে এক কামরার মাটির তৈরি একটা ঘর, কিন্তু ওটার চব্বিশ ইঞ্চি চওড়া দেয়ালের ভিতরে রয়েছে পরপর সাজানো মোটামোটা গাছের গুঁড়ি। উঁচুতে এক বর্গফুটের একটা ফোকর। কাচবিহীন ফোকরেও বাড়তি নিরাপত্তা দেয়ার জন্য একটা শক্ত লোহার বার বসানো হয়েছে; যেটার কোন প্রয়োজন ছিল না, কারণ ওই ফাঁক দিয়ে একটা ছোট বাচ্চা ছাড়া আর কারও বেরোনো অসম্ভব। মোটা মোটা লোহার গরাদের দরজাটা ভারী তালা দিয়ে আটকানো। কামরায় একটা জাজিমের শয্যা আর একটা বেঞ্চ ছাড়া আর কিছু নেই।
চামড়ার ফিতে দিয়ে বাঁধা হাতে কোনমতে একটা সিগারেট তৈরি করে ওটা ধরিয়ে এরফান ভাবতে বসল। চুরি করা নোট ওর কাছে কিভাবে এলো এর সমাধান বের করতে পারল না বহু ভেবেও। আর একবার গভীর ভাবে চিন্তা করতে গিয়ে হঠাৎ এর একটা সম্ভাব্য সমাধান ওর মাথায় খেলল। টাকাটা লুকিয়ে বা তালা দিয়ে রাখার কোন প্রয়োজন বোধ করেনি ফিল। সুতরাং অল্প খুঁজেই ডেস্কের দ্বিতীয় খোলা ড্রয়ারে টাকা খুঁজে পেয়েছিল এরফান। যে ডাকাত দল ওই টাকা পাওয়ার জন্যে এত কিছু করল, তারা হাতের কাছে পেয়েও ওটা নেয়নি কেন? এর একটাই ব্যাখ্যা হয়-ওকে বিপদে ফেলার উদ্দেশ্যেই ওরা ওই টাকা নিয়ে তার বদলে ডাকাতি করা টাকা রেখে গেছে।
কিন্তু এমন একটা জঘন্য কাজ কে করতে পারে? হয়ত শোধ তুলতে কাজটা শেড়ি করে থাকতে পারে। কিন্তু দুহাজার ডলার এত সহজে ছেড়ে দিয়ে শোধ নেয়ার পাত্র সে নয়।
টাকাটা ওর হাতে কিভাবে এলো তার একটা সমাধান হলেও এটা প্রমাণ করার কোন রাস্তা সে দেখতে পাচ্ছে না। যেহেতু হোপ শহরের প্রায় সবাই ওই ডাকাতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কাজেই ওর নিষ্কৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। খুনের অভিযোগ নিয়ে সে মোটেও মাথা ঘামাচ্ছে না। ভাবছে টেলর ওকে কেরল ভয় দেখাবার উদ্দেশ্যেই ওই হুমকি দিয়েছে। যাহোক, অলস হয়ে বসে থাকলে ওর চলবে না। যে-করেই হোক এখান থেকে ওকে বেরোতেই হবে। নিশ্চিত কোন প্রমাণ তাকে এমারির হাতে তুলে দিতেই হবে।
হাত দুটোকে মুক্ত না করতে পারলে সে কিছুই করতে পারবে না। জোর খাটিয়ে বিশেষ লাভ হলো না, চামড়ার ফিতের বাঁধন একটু ঢিলে হলো মাত্র। এবার সে দাঁত দিয়ে গিট খোলার চেষ্টা করল, কিন্তু এতেও বিশেষ লাভ হলো না; তবে লালায় ভিজে যেন চামড়া সামান্য একটু বাড়ল। এতে একটা বুদ্ধি এলো ওর মাথায়; দরজার সামনে গিয়ে সে চেঁচাতে শুরু করল। প্রায় সাথে সাথে গার্ড একজন হাজির হলো।
তোমার আবার কি দরকার? খেকিয়ে উঠল সে।
পানি, চট করে জবাব দিল বন্দি এরফান। এই ঘরটা একেবারে আভেনের মত গরম।
একটু হেসে এক বালতি পানি আর একটা মগ এনে হাজির করল গার্ড।
এই নাও, ষাড়ের মত আর চেঁচিয়ো না, ঠাট্টা করে বলে গেট খুলে ওগুলো দরজার পাশেই নামিয়ে রেখে গেটে আবার তালা দিয়ে চলে গেল লোকটা…
মগ দিয়ে তুলে অল্প একটু পানি খেয়ে বালতিটা আড়ালে সরিয়ে নিয়ে বাঁধন সহ কজিদুটো বালতিতে ডুবিয়ে রাখল সে। আধঘণ্টা পরে চামড়া ভিজে নরম হওয়ার পরে এরফান দেখল সে যখন খুশি বাধন থেকে হাত বের করে নিতে পারছে। তবু সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করল ও। ও আশা করছে সন্ধ্যা হলেই যথারীতি কাম এগেইন সেলুনে ঢুকবে টেলর তার ড্রিঙ্কের জন্যে। তখন অফিসে কেবল দুই ডেপুটি ছাড়া আর কেউ থাকবে না।
সন্ধ্যার পর আবার সে চেঁচামেচি শুরু করল। সেই আগের ডেপুটিই এলো।
এখন আবার কি হয়েছে? পেট কামড়াচ্ছে? প্রশ্ন করল সে।
ঠিকই ধরেছ! বলল এরফান। তোমাদের এই বিলাসবহুল হোটেলে কি খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই?
আরে! তোমার কথা তো আমি একেবারে ভুলেই গেছিলাম, বলল সে। দেখি কি করতে পারি তোমার জন্যে।
মনে মনে এরফান বলল: আমিও একই কথা ভাবছি। গেরো থেকে হাত দুটো পিছলে বের করে নিয়ে মৃদু হাসল ও।
অল্পক্ষণের মধ্যেই এক চাকাঁ মাংস আর কিছু রুটি নিয়ে ফিরে এলো ডেপুটি। দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢুকে মেঝের ওপর রেখে দাড়াল।
দুঃখিত, তোমার জন্যে কফির- শুরু করেছিল সে।
কিন্তু ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই লাফিয়ে এগিয়ে এরফান লোকটার কানের নিচে খোলা হাতে প্রচণ্ড একটা রদ্দা মারল। জ্ঞান হারিয়ে ঝপ করে মাটির মেঝের ওপর পড়ল-একটা, টু শব্দ করারও সুযোগ পেল না বেচারা। মেঝেটা মাটির হওয়ায় ওর পড়ার শব্দও অফিস ঘরে পৌঁছল না। ওকে বেঁধে মুখে রুমাল গুঁজে দিতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল।
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ডেপুটির খাপে পিস্তল আছে, বলে ওটা পরীক্ষা করে দেখল এরফান। গুলি ভরাই আছে। ওটা বেল্টে খুঁজে তালা বন্ধ করে করিডোর ধরে অফিসের আধখোলা দরজা পেরিয়ে বেরিয়ে আসার সময়ে অফিস থেকে কেউ হাঁক ছাড়ল।
জেক? এখন আবার কোথায় চললে?
এখনই ফিরে আসছি, জেকের রুক্ষ স্বর নকল করে জবাব দিল এরফান।
টেলর নির্দেশ দিয়েছে দুজনকেই এখানে থাকতে।
জাহান্নামে যাক টেলর, সে নিজে কোথায়? জবাব দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলো এরফান।
এর জবাবে অন্য ডেপুটি কি বলল শুনতে পেল না এরফান। হ্যাটটা চোখের ওপর টেনে নামিয়ে পরের বাড়িটার ফাঁকে ঢুকে পিছনের গলিতে চলে এলো ও। ফেনটনের সেলুনের পিছনে দেখল মালিকের ঘোড়াটা ওখানেই রাখা আছে। ফেনটনের সাথে ওর বন্ধুত্ব কি ওর অনুমতি ছাড়া ওর ঘোড়াটা নেয়ার পরেও ধোপে টিকবে? পশ্চিমে কারও ঘোড়া চুরি করার মত বড় অপরাধ খুব কমই আছে। তবু ঝুঁকিটা নেয়ারই সিদ্ধান্ত নিল ও। পিস্তলটা গেঞ্জির তলায় ঢাকা।
ঘোড়ার পিঠে উঠে বার বি র্যাঞ্চের সবচেয়ে কাছের আড়াল লক্ষ করে ঘোড়া ছোটাল এরফান। মাত্র কয়েকটা ঝোঁপের আড়ালে পৌঁছেছে, এই সময়ে পিছন থেকে কিছু লোকের উত্তেজিত চিৎকার শুনে আঁচ করল সম্ভবত তার জেল থেকে বেরিয়ে আসাটা প্রকাশ পেয়ে গেছে।
ও ভাল করেই জানে, প্রচলিত ট্রেইলগুলোর ওপর অবশ্যই কড়া নজর রাখা হবে, তাই প্রধান ট্রেইল এড়িয়ে ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে পথ করে নিয়ে এগোচ্ছে ও। ট্র্যাক লুকাবার কোন চেষ্টাই করছে না, কারণ জানে, অন্ধকারে। কেউ ওকে ট্র্যাক করার চেষ্টা করবে না। একটা সাধারণ ধারণার ওপর নির্ভর করেই এগোচ্ছে। হঠাৎ লক্ষ করল হার্ভি বোলটনের–পোড়া কেবিনের পাশ দিয়ে চলেছে ও। বড় কটনউড গাছে খোদাই করা ফোর বি আর কাটা দাগের সারি চাঁদের আলোয় ভূতুড়ে দেখাচ্ছে। ওদিকে আড়চোখে একবার চেয়ে আবার এগোতে যাচ্ছে, এই সময় এক আরোহী খুব কাছেই গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে ওকে দেখে একটা গালি বকে লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল। লোকটা বার বির ফোরম্যান ডোভার। দ্রুত পিস্তল বের করে এরফানকে কাভার করল সে।
হাত তোলো, প্রোন্তো, আদেশ দিল ডোভার। কিন্তু যখন সে দেখল এরফান নিরস্ত্র, ওর কোমরে কোন পিস্তল ঝুলছে না, তখন খুশিতে ওর গলার ভিতর থেকে একটা কর্কশ হাসি বেরিয়ে এলো; আজই তোমার শেষ দিন, জেমস, বলল সে। বার্ট এবং আমার, দুজনেরই ইচ্ছা তুমি ওই গাছ থেকে। ঝোলো। হঠাৎ এমন একটা সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে সে আনন্দে আত্মহারা। আশা। করেছিল এমন অসহায় নিরস্ত্র অবস্থায় পড়ে শত্রুর চোখে স্পষ্ট ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠতে দেখতে পাবে। কিন্তু ভয়ের বদলে, অবজ্ঞা দেখতে পেয়ে সে নিরাশ হলো।
ঘোড়াটাকে এগিয়ে এনে রাগ মেটাতে সে বাম হাতে এরফানকে একটা প্রচণ্ড ঘুসি মারল। কিন্তু সেটাই ওর কাল হলো। একটা ধূসর ছায়া ক্রুদ্ধ একটা গরগর শব্দ করে ডোভারের গলার ওপর ঝাপিয়ে পড়ল। আচমকা আক্রমণের ধাক্কায় লোকটা ঘোড়ার পিঠ থেকে উল্টে পড়ে গেল। এরফান এই সুযোগে পিছলে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে দাঁড়াল। ততক্ষণে জন্তুটাকে হটিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাতের কাজটা শেষ করার জন্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ডোভার। দেখল এরফান হাত ভাঁজ করে স্থির দাঁড়িয়ে ওর দিকে চেয়ে হাসছে।
ডোভার, তোমার জন্যে গাছটা অপেক্ষা করছে, স্বাভাবিক গলায় বলল এরফান।
লোকটা বেপরোয়া হলেও ক্ষণিকের জন্য যেন তার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা একটা ভয়ের স্রোত নেমে গেল। কিন্তু তার মনে পড়ে গেল যে এরফান নিরস্ত্র। হাসির সাথে সে তার পিস্তল তুলল। ডোভার ট্রিগার টিপতে যাচ্ছে, এই সময়ে এরফানের হাতটা নড়ে উঠল, ওর পিস্তলের মুখে আগুনের, ঝিলিক দেখল ডোভার। টলে উঠে পড়ে গেল লোকটা। বিস্ময় ফুটে উঠল শুয়ে থাকা ডোভারের মুখে; মৃত্যুর আগে সে একবার ভাবার চেষ্টা করল এরফানের হাতে অস্ত্রটা কোথা থেকে গজাল!
টমি লেজ নাড়তে নাড়তে এরফানের কাছে এগিয়ে এলো। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিয়ে এরফান বলল, তুইও আমারই মত, ঋণ রাখা পছন্দ করিস না।
বার বি লোকটার ঘোড়ার পিঠ থেকে দড়ি নিয়ে ওটা দিয়েই ডোভারকে গাছে ঝুলিয়ে দিল এরফান। ডোভারেরই ছুরি নিয়ে গাছে আরেকটা আঁচড় কাটল।
দশ মিনিটের মধ্যেই কাজ শেষ করে আবার রওনা হলো; কিন্তু অল্পদূর এগিয়েই পিছন থেকে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ পেয়ে থেমে পিস্তল হাতে তৈরি থাকল। রাইডারকে লরি বলে চিনতে পেরে হেসে পিস্তলটা কোমরে গুঁজে রাখল।
তুমি এখানে? প্রশ্ন করল সে।
কুকুরটাকে অনুসরণ করে, জবাব দিল লরি। তোমার খোঁজে হোপের দিকে রওনা হয়েছিলাম। ওই চারপেয়ে উকুনের বান্ডিলটা কখন যে আমার পিছু নিয়েছে তা আমি টেরই পাইনি। গা-ঢাকা দিয়ে এগোচ্ছিল শয়তানটা। যখন দেখা দিল তখন আর র্যাঞ্চে ফিরিয়ে নেয়ার উপায় ছিল না। হোপে পৌঁছে শুনলাম শহর গরম, তোমাকে জীবিত বা মৃত ধরার জন্যে ওরা পাচশো ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
বেশ ভাল অঙ্কের টাকা বলতে হবে, মন্তব্য করল এরফান।
টাকাটা অর্জন করার কথা ভাবছ? ঠাট্টা করল লরি।
বলা যায় না, করতেও পারি, জবাব দিল এরফান। তোমার কথা শেষ করো।
আমি যখন ফেনটনের সেলুন পার হচ্ছি, তখন টমি হঠাৎ এমন জোরে ছুটল, মনে হলো যেন ওকে যমে তাড়া করেছে, বলল লরি। আমি আঁচ করলাম ও নিশ্চয় তোমার ট্রেইলের গন্ধ পেয়েই অমন পাগলের মত ছুটছে। তুমি কখনও গোসল করো না বলেই রক্ষা, নইলে বেচারা নির্ঘাত গন্ধ না পেয়ে ট্রেইল হারিয়ে ফেলত।
তুমি আমাকে খুঁজতে কেন বেরিয়েছিলে? ওর খোঁচাটা উপেক্ষা করে প্রশ্ন করল এরফান। পরমুহূর্তেই বলল, কালও আমি গোসল করেছি সাবান মেখে, আর তুমি? খটাশও ফেল মেরে যাচ্ছে তোমার গায়ের গন্ধের তুলনায়!
আমি দেখা করতে চাইনি, বাধ্য হয়েছি, পাল্টা আক্রমণ এড়িয়ে জবাব দিল লরি। ইয়র্কি ডেজার্ট এজ থেকে ফেরার পথে ওর ঘোড়ার পা খোড়া করে। ফেলে। শেষে ওকে বাকি পথ হেঁটে ফিরতে হয়েছে। র্যাঞ্চে ফেরার পর ওর। আর নড়ার অবস্থা ছিল না। আমি তোমাকে বলতে এসেছিলাম যে ডেজার্ট এজে। গিয়ে জাজের দেখা ইয়র্কি পায়নি। তিন-চার দিন আগে চারজন কঠিন চেহারার লোক তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। তাদের সাথেই জাজ কোথাও গেছে। আজ পর্যন্ত তার আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। কাজের মেয়েটার কথা অনুযায়ী যারা গিয়েছিল তারা কেউ ওখানকার স্থানীয় লোক নয়। তাদের আগে কখনও সে দেখেনি।
এটা এরফানের জন্যে সত্যিই খারাপ খবর। কিন্তু খবরটা ও শান্ত ভাবেই গ্রহণ করল।
তাই? তাহলে ওরা ওঁকেও নিয়ে গেছে, বলল সে। সব পথ ওরা একবারে বন্ধ করে ফেলার চেষ্টা করছে।
তুমি আমাকে পরিষ্কার করে কিছুই বলছ না। ওরা কারা? এবং ওদের উদ্দেশ্যই বা কি?
ওরা যে কারা তা আমি এখনও ঠিক জানি না। তাই আমরা ওদেরই খোঁজে আছি।…আমার ধারণা ওই চূড়াগুলোর মাঝে মেয়েটার সাথে জাজকেও ওরা কোথাও আটকে রেখেছে।
ফিলের কোন খোঁজ-খবর এখনও পাওয়া যায়নি বলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করল লরি। ওকে কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে লক্ষ করে বলল গম্ভীর এরফান, তুমি পরিবেশটাকে যথেষ্ট বিষাক্ত করা হয়েছে মনে করলে আমরা আবার রওনা হতে পারি।
লরি চুপসে গেল। তুমি কোন দিকে যাচ্ছ? প্রশ্ন করল।
ফোরম্যান তার গন্তব্যের কথা জানাতেই আবার ছুটল গালির ফোয়ারা। তোমার নিশ্চয় মাথা খারাপ, গালি শেষে বলল লরি। তুমি কি জানো না যে শহরের অর্ধেক লোক এখন পুরস্কারের লোভে শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে তোমাকে খুঁজে পাওয়ার আশায়? এইসব এলাকাতেই ছড়িয়ে আছে ওরা। আর তুমি কিনা যেখানে সব থেকে বেশি ভয়, সেখানেই যেতে চাচ্ছ?
ওটাই একমাত্র জায়গা যেখানে আমাকে খোঁজার কথা ওদের মাথাতেই আসবে না, বলল এরফান। তাছাড়া ওখানে কিছু জরুরী কাজও আছে আমার।
ঝুঁকিটা নেয়ার কোন মানেই হয় না। তুমি হয়ত গিয়ে দেখবে পিস্তল হাতে ওখানে ডোভার তোমার জন্যে আগেই অপেক্ষা করছে।
না, আমার তা মনে হয় না। তুমি কি তোমাদের সেই পোড়া ছাপরার ট্রেইল ধরে এসেছ?
না, আমি একটা শর্টকাট পথ দিয়ে এসেছি। তুমি এত শব্দ করছিলে যে তোমাকে খুঁজে বের করতে আমার কোন ঝামেলাই হয়নি, অভিযোগ করল সে। কিন্তু ওই ছাপরার সাথে এর কি সম্পর্ক?
এরফান ব্যাখ্যা করল কেন ডোভার বার বিতে ওদের স্বাগত জানাতে পারবে না। যুবকের চেহারা গ্র্যানিট পাথরের মত শক্ত হয়ে উঠল; তারপর পিছনে টমির দিকে চেয়ে ওর মুখটা আবার নরম হলো।
গুড ওল্ড টমি, বলল সে। আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি, তুমি উকুনের ডিব্বা নও, তুমি আমাদের আউটফিটেরই একজন সদস্য।
আধঘণ্টা পর বার্টের র্যাঞ্চহাউসের পঞ্চাশ গজ দূরে ঝোঁপের আড়ালে এসে ওরা ঘোড়া থামাল। সঙ্গীকে ঘোড়ার সাথে ওখানেই থেকে কুকুরটাকে শান্ত রাখার নির্দেশ দিয়ে নিঃশব্দ পায়ে সামনের দিকে এগোল এরফান। বাঙ্কহাউস পার হওয়ার সময়ে সে ভিতরে কারও সাড়াশব্দ পেল না।
স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, ব্ল্যাক মাস্কের ভয়ে ভীত নয় বার্ট; নিজের মনেই হাসল এরফান।
যদিও এখানে এটাই ওর প্রথম ভিজিট, তবু সে আঁচ করল যে সামনের। দুটো জানালাই সম্ভবত বসার ঘরের জানালা হবে। উঁকি দিয়ে ভিতরে চেয়ে বুঝল ওর ধারণাই ঠিক। জানালার সার্শি ঠেলে উপরে ওঠাবার চেষ্টা করে দেখল খোলাই আছে। দ্রুত হাতে টেবিলের নথিপত্র ঘেঁটে সে যা খুঁজছিল তা পেয়ে গেল। ওটা ছাপানো নাম্বার লেখা একটা লেজার বই। পাতা উল্টে দেখল একটা পাতা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এবার সে ডেস্কের ড্রয়ার খোলার চেষ্টা করে দেখল, প্রথমটা তালা দেয়া, কিন্তু বাকিগুলো খোলা। লুকানোর কিছু থাকলে ওটার মধ্যেই রাখা হয়েছে। এবার ডোভারের ছুরিটা ওর কাজে লাগল। ওটার সাহায্যে অল্পক্ষণ চেষ্টার ফলেই ড্রয়ারটা খুলে ফেলল ও। তাড়াহুড়ায় রাখা একটা নোটের বান্ডিল ওপরেই রাখা রয়েছে। ওগুলো বের করে নিয়ে চাঁদের আলোয় সে নাম্বারগুলো পড়ে দেখে বুঝল এগুলোই সেই গরু বিক্রির টাকা, যেগুলো সে ব্যাঙ্ক থেকে উঠিয়েছিল।
তুমি ভালই প্ল্যান এঁটেছিলে, বার্ট, বিড়বিড় করে বলল সে। কিন্তু খেলা এখনও শেষ হয়নি। তবে এটা আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে তোমার মাথায় কেবল গোবরই নেই, কিছু ঘিলুও আছে-অন্তত বোকা বাঁদরের সমান।
একে একে বাকি ড্রয়ারগুলোও সার্চ করে দেখে গুরুত্বপূর্ণ কিছু খুঁজে পেল ও। তবু বার্টের নিজের হাতে লেখা একটা কাগজ কি মনে করে যেন সে নোটগুলোর সাথে পকেটে ঢুকাল।
এরফান লরির কাছে পৌঁছে দেখল বেচারা দেরি দেখে খুব বেশি চিন্তিত হয়ে উঠেছে। তুমি কি পুরো র্যাঞ্চটাই তোমার সাথে নিয়ে এসেছ? নইলে তোমার এত সময় লাগল কেন? প্রশ্ন করল সে।
সানসেট, তুমি মাঝেমাঝে এমন কথা বলো যে মনে হয় তোমার একটা বন-মুরগির চেয়েও বুদ্ধি কম, টিটকারি দিল ওর ফোরম্যান। আমি যা খুঁজছিলাম তা আমি পেয়েছি। এই যে, এগুলো রাখো।
পকেট থেকে সে কেবল টাকাগুলো বের করে লরিকে দিল। এত টাকা দেখে কাউবয়ের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ওগুলোর বিশেষ তাৎপর্য লরিকে বুঝিয়ে বলল এরফান। পরে খাতাটাও দিল।
তার মানে বার্ট ওই ব্ল্যাক মাস্কের সাথে জড়িত, আমি আশা করছিলাম তোমাকে আর সেটা বানান করে বুঝিয়ে বলতে হবে না, বলল এরফান।
ঠিক আছে, ওয়াইয গাই সলোমন; এখন তোমার পরবর্তী চালটা কি?
এগুলো তুমি ফেনটনের কাছে পৌঁছে দেবে, প্রয়োজন হওয়ার আগে পর্যন্ত সে এগুলো যত্নের সাথে রক্ষা করবে। তুমি টমিকেও সাথে নিয়ে যাও, তবে ট্রেইল ধরে এগিয়ো না।
তুমি কি করবে?
শেরিফের কাছে ফিরে যাব; ওই পাঁচশো ডলার দাবি করতে হবে না?
লরি সন্দিগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকাল। কিন্তু এরফান ঠাট্টা করছে না বুঝে ও বিস্ময়ে হতবাক হলো।
পালিয়ে গেলে আমি দোষী, সেটাই প্রমাণিত হবে।
এরফান যে ঠাট্টা করছে না এটা ওর স্বর শুনে বুঝতে কোন অসুবিধাই হলো লরির। তুমি পাগল, এরফান, বলল। একবারে বদ্ধ পাগল।
আমি যদি এখন পলিয়ে যাই, তবে সেটা নিজের অপরাধ স্বীকারের সামিল হবে।
টমিকে লরির সাথে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে সে ফেনটনের ঘোড়ার পিঠে উঠল।
তুমি সত্যিই বোকা, এরফান, ওরা তোমাকে দড়িতে না ঝুলিয়ে ছাড়বে না
দূর, তোমার বিয়েতে আমি ঠিকই নাচব, বলে এরফান শহরের দিকে রওনা হলো। সময় নিচ্ছে কারণ ভোরে পৌঁছতে চায় ও।
লরি এরফানের যুক্তি ঠিকই বুঝতে পারছে, কিন্তু এরফান এভাবে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়ে মরণের মুখোমুখি হোক এটাও সে চাইছে না, কিন্তু এরফান যখন ওই সুরে কথা বলে তখন ওর সাথে তর্ক করা বৃথা। বেশিদিনের পরিচয় না হলেও ওকে সে ভালভাবেই চেনে। টমিকে ডাক দিয়ে সে-ও শহরের পথে রওনা হলো।
ট্র্যাক এড়িয়ে ধীর গতিতে এগোচ্ছে এরফান, কারণ পুরস্কার লোভী কোন বাউন্টি হান্টারের কবলে পড়তে চায় না সে। আবার নিরাপদে জেলে টোকাই ওর উদ্দেশ্য। যখন পুবের আকাশটা হালকা হয়ে আসছে, তখন শহরের কাছে পৌঁছে কতগুলো ঝোঁপের কাছে নেমে ঘোড়াটাকে ওটার পাছায় একটা চাপড় বসাল এরফান। জানে, ওটা ঠিকই বাড়ি যাবে।
এবার সে পিস্তলটা ঝোঁপের ভিতর ফেলে ধীর পায়ে জেলের দিকে এগোল। দমাদম কিছুক্ষণ দরজায় কিল মারার পর ঘুম ভরা চোখে রাত্রিবাস পরে টেলর নিজেই দরজা খুলল। কিন্তু এরফানকে নিরস্ত্র অবস্থায় সামনে দেখে তার চোখ থেকে ঘুমের ভাবটা মুহূর্তে অদৃশ্য হলো।
সকাল বেলা এত শব্দে অনেকেই তাদের বাড়ির দরজা খুলে উঁকি দিল। এমন অভাবনীয় একটা দৃশ্য দেখে অনেকেই বাইরে বেরিয়ে এলো।
ডেপুটির রাতের নেশা এখনও কাটেনি। এরফান সরাসরি তার পুরস্কার দাবি করল শেরিফের কাছে।
ডেপুটি বোকার মত প্রশ্ন করল, তুমি কি চাও?
কেন? আত্মসমর্পণ করে পুরস্কারের টাকা দাবি করতে এসেছি। তাছাড়া আমি ক্লান্ত, একটা বিছানা আমার কাছে এখন ভালই ঠেকবে, একগাল হেসে বলল এরফান।
না, তোমাকে কিছুতেই ওই টাকা দেয়া যাবে না। ডেপুটির নেশাগ্রস্ত মাথাটা এখন কিছুটা পরিষ্কার হয়ে আসছে।
এতক্ষণে সবগুলো বাড়ি থেকেই লোকজন বেরিয়ে এসেছে এই অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখার জন্যে। একজন ক্রিমিনাল নিজেই কিনা ফের গ্রেপ্তার হতে এসেছে! অভাবনীয় ব্যাপারই বটে!
এমন ওরা ভাববে সে-জন্যেই খেলছিল এরফান।
এটা কোন ধরনের শহর, ক্ষুব্ধ স্বরে প্রশ্ন করল ও। জেমস গ্রীনকে ধরে আনার জন্যে পুরস্কার ঘোষণা করা হলো, আমি এটা পূর্ণ করার পরেও বলা হচ্ছে আমাকে টাকা দেয়া হবে না-এটা কোন ধরনের বিচার? শহরবাসীদের কাছেই বিচার চাইল এরফান।
অনেকেই বলল, টাকাটা খুশি মনেই দিয়ে দাও, টেলর। কিপটেমি তোমার কোনমতেই শোভা পায় না।
তুমি কোথায় গিয়েছিলে? প্রশ্ন করল টেলর
তোমার চক্রান্তে একটু বাগড়া দিতে গেছিলাম, বলল সে।
এতে শেরিফের মনে হলো ওকে সবার সামনে অপমান করা হচ্ছে। তাই সে কঠিন স্বরে প্রশ্ন করল, কোথায় গেছিলে তুমি?
একটু বেড়াতে পেছিলাম, জবাব দিল সে।
একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলে, তাই না? ভাল, কিন্তু এরপর তোমার পরবর্তী হাঁটা হবে ফাঁসিতে ঝোলানোর গাছ পর্যন্ত।
আমার বিচার তাহলে হয়ে গেছে? শান্ত স্বরে প্রশ্ন করল এরফান।
ওর ডেপুটি দুজন এতক্ষণে এসে হাজির হয়েছে। রাগের দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকাল টেলর।
ওকে নিয়ে যাও, বলল সে। এবার হাতের সাথে ওর পাও বেঁধে রাখবে, আদেশ দিল। এরফানকে ডেপুটিরা ভিতরে নিয়ে যাওয়ার পর শেরিফ নিজেও ভিতরে অদৃশ্য হলো।
দর্শকদের একজন মন্তব্য করল, লোকটা হয় পাগল, নইলে নির্দোষ। এই পরিস্থিতি দেখে এটুকুই উদ্ধার করতে পারল এরফান।
২০.
বার্ট ওকে ছেড়ে যাওয়ার পর চার ঘণ্টা পার হয়ে গেছে এখনও ফিল বেঞ্চের ওপর ঠায় বসে আছে। ভয় পাচ্ছে কখন লোকটা আবার ফিরে আসবে। তার চারপাশে পুরো জগৎটাই যেন ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। কোনরকম আশার আলোই সে দেখতে পাচ্ছে না। বার বির মালিককে বিয়ে করাটা তার কাছে নেহাত ঘূণ্য বলে মনে হচ্ছে। এটা সে পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে বার্ট কি ধরনের লোক। এর মধ্যে কেবল একবার নীরবতা ছিন্ন হয়েছে-পরপর দুটো গুলি ছোড়ার আওয়াজ তাকে চমকে দিয়েছিল।
চাবি দিয়ে তালা খোলার শব্দ বার্টের ফিরে আসার কথা ওকে স্মরণ করিয়ে দিল। লোকটা তার জবাব জানতে আসছে। উঠে দাঁড়াল ফিল। কিও বার্টের বিরাট দেহের পরিবর্তে দরজায় দেখা গেল সেই চোখে ঠুলি পরা লোকটাকে। হাতের ইশারায় ফিলকে সে ডাকল।
চলে এসো, খসখসে স্বরে বলল সে।
কিন্তু ভয়ে একটু পিছিয়ে গেল ফিল? কোথায়? নার্ভাস স্বরে প্রশ্ন করল মেয়েটা। কেন?
আমি তোমাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যেতে এসেছি, বলল ঠলি। গুড়ির ফাঁক দিয়ে ফিসফিস করে আমি তোমাকে যে উপদেশ দিয়েছিলাম সেটা তুমি মানায় আমি খুশি হয়েছি।
তাহলে তুমিই ছিলে? একটু আশ্বস্ত হলো ফিল, কিন্তু তবু সংশয় ওর পুরো কাটল না।
লোকটা মাথা ঝাঁকাল, কিন্তু মেয়েটা তবু ইতস্তত করছে দেখে শান্ত স্বরে বলল, আমি তোমাকে আমার এক বন্ধুর কাছে নিয়ে যাচ্ছি। অবশ্য তুমি যদি ব্ল্যাক বার্টের জন্যেই অপেক্ষা
না, না, আমি তোমার সাথেই আসছি, দ্রুত বলে উঠল ফিল।
পাইন গাছের ভিতর দিয়ে পথ দেখিয়ে লোকটা একই রকম আরেকটা কেবিনের সামনে থেমে ওটার তালা খুলে ফিলকে ভিতরে ঢুকতে বলল। ভিতরে দরজার দিকে চেয়ে বিষণ্ণ মুখে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ, যাকে দেখেই ফিল চিনল।
জাজ এমারি! খুশিতে চেঁচিয়ে উঠল সে, কিন্তু পরক্ষণেই ওর মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল এই লোকটাই এরফানের বন্ধু মনে পড়ায়। বার্টের কথা অনুযায়ী এ-ও তার বিরুদ্ধে চক্রান্তে জড়িত। জাজের চেহারা পাল্টে গেল অন্য। ভিজিটরকে দেখে।
তাহলে এটা তুমি, বার বির সেই কুকুরটা নয়, বলল সে। ঠুলি পরা লোকটার দিকে তাকাল জাজ। এটা আবার কি খেলা, বন্ধু? প্রশ্ন করল সে।
কাঁধ উঁচাল লোকটা। এটা কোন খেলা নয়, জাজ, জবাব দিল সে। আমি তোমার সাথে একটা ডীল করতে চাই। সপ্রশ্ন চোখে ওর দিকে চাইল জাজ।
এখানে একটা লোক আছে, এখন যার শেষ অবস্থা। লোকটা একটু থামলে বোঝার ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল এমারি। না, আমি ওকে গুলি করিনি, বলে চলল মুখোশধারী। লোকটা সেদিন জেমসের দলের বিরুদ্ধে গোলাগুলিতে গুহায় আহত হয়েছে। ওর মনে কিছু কথা জমে আছে। ওটার লিখিত একটা বিবৃতি তোমাকে দিয়ে লিখিয়ে মেয়েটাকে সাক্ষী রেখে সই করে যেতে না পারলে মরেও সে শান্তি পাবে না। তুমি যদি আমার সাথে এসে ওর বিবৃতিটা লিখে দাও, তাহলে কথা দিচ্ছি, আমি নিজে তোমাদের এখান থেকে বেরোবার ব্যবস্থা করে দেব।
এমারি কেবল এক মুহূর্ত চিন্তা করেই বলল, পথ দেখাও।
ওই লোকটাকে অনুসরণ করে পাইনের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে একটা ছোট মালভূমি পেরিয়ে বড় ধরনের কেবিনে পৌঁছল। এক বান্ডিল কম্বল রাখা আছে ওখানে। একপাশে দুটো কম্বলের ওপর দুজন লোক অনড় হয়ে পড়ে আছে। অন্যপাশে একজন লোক দুর্বলভাবে একটু ককিয়ে উঠল।
ওই লোকটা কে? যে ককিয়ে উঠল তার পাশের লোকটাকে দেখিয়ে প্রশ্ন করল জাজ।
ওহ্, ওর নাম কি, এই আউটফিটের অস্থায়ী বস্। এখন সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, জবাব দিল সে।
বেপরোয়া স্বরে কথাটা বলা হলেও ফিল শিউরে উঠল। ওর দুটো গুলির শব্দ শোনার কথা স্পষ্ট মনে আছে।
হ্যালো, প্যাঁচ, দুর্বল স্বরে বলল আহত লোকটা।
হ্যালো, জন, তুমি এখন কেমন বোধ করছ? এক চোখের লোকটা জানতে চাইলেও জবাবের অপেক্ষা না করে আবার বলল, আমার দেয়া কথা মত আমি জাজ আর মেয়েটাকে এখানে নিয়ে এসেছি। এমারির দিকে ফিরে সে ফিসফিস করে বলল, তুমি কাজ শুরু করে দাও, ওর সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
কাগজ-পেনসিল বের করে মেয়েটাকেও কথাগুলো শুনতে ইঙ্গিত করল জাজ। অসুস্থ লোকটা বুঝল।
আমার হাতে বেশি সময় নেই, জাজ, এবং কথাগুলো তাই আমি সরাসরিই বলছি, শুরু করল সে। তোমার নিশ্চয় ডেজার্ট এজের কয়েক বছর আগের সেই ডাকাতির কথা মনে আছে? স্টেজ ড্রাইভার ডাগ যে রেইডে মারা গেছিল? জাজকে নড় করে সম্মতি জানাতে দেখে সে আবার বলে চলল, ওই চারজনের মধ্যে আমিও ছিলাম। আমিই ডাগকে গুলি করেছিলাম। তবে আমার ভুল ধারণার জন্যেই সেটা ঘটেছিল। হঠাৎ লোকটা লাগাম ছেড়ে পিছন দিকে হাত বাড়াল দেখে আমি ভেবেছিলাম সে বন্দুক তুলতে যাচ্ছে। কিন্তু আসলে যে ও তামাক খোজার জন্যে হাতাচ্ছে তা আমি পরে জেনেছি-ওর কাছে কোন বন্দুক ছিল না-ওর সাথে আমার কোন শত্রুতা ছিল না; ওটা ছিল একটা ভুল। কিন্তু তোমাকে এখানে আনার আসল কারণ হচ্ছে ওই রবারির পর আমাকে দিয়ে বাধ্য করে একটা কাগজে লিখিয়ে সই করিয়ে নেয়া হয় খুনটা অন্য একজন করেছে যে ওই ডাকাতির সাথে মোটেও জড়িত ছিল না।
দুর্বল স্বরটা আরও দুর্বল হয়ে এলো, শেষে ভীষণ কাশতে শুরু করল জন। দুহাতে কম্বলটা খামচে ধরেছে লোকটা, মনে হচ্ছে যেন ওর রোদে পোড়া চামড়া ভেদ করে আঙুলের হাড়গুলো আবার যখন সে কথা বলতে সক্ষম হলো তখন সেটা ফিসফিসানি থেকে বেশি জোরে শোনা গেল না।
যে নামটা আমাকে লিখতে বাধ্য করা হয়েছিল সেটা হচ্ছে-জ্যাক মাস্টারসন, ব্যথায় মুখ কুঁচকে কথাটা শেষ করল জন।
আমার বাবা! বলে উঠল ফিল।
হাত নেড়ে ওকে চুপ করাল এমারি। সামনের দিকে ঝুঁকে সে প্রশ্ন করল, কে তোমাকে ওটা লিখতে বাধ্য করেছিল? কেন?
বার বির মালিক, ব্ল্যাক বার্ট! ফুপিয়ে শ্বাস নিয়ে বলল গানম্যান।
মানুষটার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে বুঝেই জাজ কি লিখেছে সেটা পড়ে শোনাল বেচারা। প্যাচের সাহায্য নিয়ে একটু উঁচু হয়ে কাগজটাতে সই করে দিল জন। তারপর সে আগ্রহের সাথে জাজ আর মেয়েটাকেও ওই কাগজে সই করতে দেখল। এবার সে একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে পরিশ্রান্ত অবস্থায় চিৎ হয়ে শুয়ে, পড়ল।
বার্ট হচ্ছে- শুরু করেছিল সে, কিন্তু আর মুখ খুলল না।
জাজ কম্বল দিয়ে ওর মুখ ঢেকে দিয়ে কাগজটা ভাঁজ করে পকেটে রাখল। তারপর চোখে পট্টি বাঁধা লোকটার দিকে ফিরে প্রশ্ন করল, এখন?… তোমাকেই বা আমরা কি নামে ডাকব?
তোমরা শুনেছ ও আমাকে কি নামে ডেকেছে, বুড়ো আঙুল দিয়ে বিছানার দিকে দেখিয়ে জবাব দিল আগন্তুক। এখানে আর কোন নামের মত ওটাও ভাল চলবে।
জাজ আড়চোখে কামরায় ঘুমন্ত অন্য লোকটার দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল। ওই লোকটার ঘুম খুব গভীর বলে মনে হচ্ছে, মন্তব্য করল সে।
হ্যাঁ, স্লিকের ঘুম অত্যন্ত গভীর, মড়ার মতই সে ঘুমাচ্ছে, বলে প্রসঙ্গ পাল্টাল লোকটা। এখান থেকে আমাদের তাড়াতাড়ি সরে পড়তে হবে। বাকি চারজনের ফেরার সময় হয়ে এসেছে-ওরা এসে পড়লে ঝামেলা বাধাবে।
অন্য চারজন? প্রশ্ন করল এমারি।
হ্যাঁ, আমি আর কি ছাড়া ব্ল্যাক মাস্ক দলে কেবল ওই কয়জনই বেঁচে আছে এখন-বাকি সবাই গুহায় জেমসের বিরুদ্ধে লড়ে মারা পড়েছে, ব্যাখ্যা করল প্যাঁচ।
বোঝা যাচ্ছে লোকটা আগে থেকেই প্ল্যান করে সব ব্যবস্থা করে রেখেছে, দেখা গেল কেবিনের পিছনে অন্ধকার ছায়ায় তিনটে ঘোড়া আগে থেকেই জিন। চাপিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে। অন্ধকার এখন কেশ গাঢ়, কারণ চাঁদটা একটা মাঝারি আকারের মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে। কিন্তু যেটুকু আলো আছে তাতেই আকাশের গায়ে বিশাল আকারের পাহাড়ের চূড়াটা দেখা যাচ্ছে। ফিল আঁচ করল ওটা পাহাড়ের দ্বিতীয় চূড়া। কিন্তু ওদের গাইড ওই দৃশ্য দেখার জন্যে বেশি সময় দিল না।
আমাদের দ্রুত ছুটতে হবে, প্রথম কয়েক মাইল কেবল একটা ট্রেইলই গেছে, খসখসে স্বরে জানাল প্যাঁচ।
ঘোড়ার পিঠে ওঠার পর পথ দেখিয়ে প্রথমে এগোল লোকটা, তাকে অনুসরণ করছে ফিল, সবার শেষে এমারি। এই পথ তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় পেরোতে হয়েছে মনে করে শিউরে উঠল ফিল।
ওর মনটা এখন বর্তমান বিপদ নিয়েও ভাবতে পারছে না। মৃত ডাকাতের স্বীকারোক্তি থেকে সে এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছে কেন ওর বাবা বার্টকে ঘৃণা করলেও সহ্য করতে বাধ্য হত। কিন্তু এতে বাবার অদৃশ্য হওয়ার কারণটা মোটেও পরিষ্কার হলো না ওর কাছে। তাই জেমস সম্পর্কে তার মনে সন্দেহ রয়েই গেল। এবং এই ছোট গড়নের আউটল, যে ওদের পালাতে সাহায্য করছে! সে-ই বা এসবের সাথে নিজেকে কেন জড়াচ্ছে? এই চক্রান্তের সাথেই বা তার কি সম্পর্ক? সামনের লোকটা কুঁজো হয়ে জিনের ওপর বসে ঘোড়াকে হাঁটিয়ে নিয়ে এগোচ্ছে। রাস্তাটা এতই সরু যে হাঁটার বেশি জোরে গতিতে চলা অসম্ভব।
একঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঢাল বেয়ে নিচে নামার পর কতগুলো পাইন গাছের ভিতর ওদের গাইড ট্রেইল ছেড়ে জঙ্গলের ভিতর ঢুকে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল।
কিসের শব্দ এলো-আমি ঘুরে দেখি, কম কথায় প্রকাশ করল প্যাঁচ। নীরব থাকো তোমরা। নিঃশব্দে পাইনের ভিতর অদৃশ্য হলো সে। জবাবের জন্যে অপেক্ষা না করেই ঢাল বেয়ে উঠে অন্ধকারে মিশে গেল। ফিল নিজের ঘোড়াটা সঙ্গীর আরও কাছে হাঁটিয়ে নিয়ে এলো।
তোমার কি মনে হয় ওকে বিশ্বাস করা যায়? ফিসফিস করে প্রশ্ন করল সে
আমার তো তাই বিশ্বাস, এবং সে-ই একমাত্র ভরসা, জবাব দিল জাজ। তাছাড়া ব্যক্তিগত ভাবে কুচক্রী বার্টের প্ল্যান পণ্ড করতে সময়মত হোপে পৌঁছতে আমি যে-কোন ঝুঁকি নিতে রাজি। ওরা যদি জেমসকে ফাঁসি —
আউটল ফিরে আসায় ওদের কথা ওখানেই শেষ হলো। ওর তাড়া দেখে বোঝা গেল কোন জরুরী খবর আছে।
ওরা আসছে-সময়ের আগেই ফিরেছে। লাফিয়ে ঘোড়ায় উঠে বসল সে। লুকাবার চেষ্টা করে কোন লাভ নেই, এই এলাকা ওদের কাছে নিজের বাড়ির সিঁড়ির মতই পরিচিত। যে করেই হোক লড়াই করে ওদের ঠেকাতে হবে। তোমার ঘোড়ার খাপে একটা উইনচেস্টার আছে, জাজ, আর আমি একটা ভাল জায়গা চিনি।
জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে একটা খোলা জায়গা পেরিয়ে ওরা কিছু বড়বড় পাথরের আড়ালে আশ্রয় নিল। ঘোড়াগুলোকে সবথেকে বড় পাথরের আড়ালে লুকিয়ে রেখে, ফিলকে একটা নিরাপদ আশ্রয়ে লুকিয়ে ওরা দুজন রাইফেল হাতে তৈরী থাকল।
চাঁদটা আর মেঘের আড়াল থেকে বেরোবার সময় পেল না, প্যাঁচ বিরক্তি প্রকাশ করল।
এতে ওদের চেয়ে আমাদেরই বেশি সুবিধা হবে, মন্তব্য করল জাজ। ওরা আমাদের খোলা জায়গা পেরিয়ে আক্রমণ করতে পারবে না।
সেটা ঠিক, কিন্তু আমরাও সহজে সটকে পড়তে পারব না। ওই যে ওরা।…কিন্তু ব্যাপারটা কি?
সন্ধি-চুক্তির নিশান-ওরা কথা বলতে চায়, বলল এমারি।
চারজন রাইডার পাইন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসেছে। সবার আগে যে এগিয়ে আসছে তার হাতে সাদা নিশান। লোকটা যখন দুশো গজের মধ্যে এসে পৌঁছেছে, তখন প্যাঁচ উঠে দাঁড়াল।
যথেষ্ট এগিয়েছ, বলল সে। কিছু বলার থাকলে বলো।
এভাবে বন্দিদের নিয়ে পালাবার মানে কি, প্যাঁচ? ওদের লীডার প্রশ্ন করল।
সেটা আমার নিজস্ব ব্যাপার, তোমাকে বলতে যাব না, জবাব দিল প্যাঁচ। তবে তোমাদের একটা ভাল পরামর্শ দিচ্ছি, এই তল্লাট ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এখনও আছে।
আউটল হাসল। খুব ভড়কে গেছ, তাই না? ঠাট্টা করল সে। সময় এলেই আমরা যাব, কিন্তু তার আগে আমরা ওই মেয়ে আর জাজকে চাই।
এগিয়ে এসে চেষ্টা করে দেখতে পারো, হুমকি দিল প্যাঁচ। ঝুঁকি নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই, তোমাদের পালাবার সব পথ বন্ধ। আমরা সাহায্যের জন্যে লোক পাঠিয়েছি, ওরা পৌঁছা’নো পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, এই যা।
তোমরা কাকে পাঠালে-স্লিককে? প্রশ্ন করল প্যাঁচ। এতে ওদিক থেকে যেসব গালি এলো তাতে প্যাঁচ খিকখিক করে হাসল।
তুমি এখন কি করবে? জানতে চাইল আউটল।
তোমরা এখনই না পালালে গুলি করব। দাঁড়ানো অবস্থাতেই রাইফেল তাক করল প্যাঁচ।
তড়িঘড়ি ঘোড়া ঘুরিয়ে নিয়ে ছুটল লোকটা। তার পিছন থেকে তিনটে গুলি এলো বটে, কিন্তু একটাও প্যাচের গায়ে লাগল না, জাজও পাল্টা গুলি ছুঁড়ল, কিন্তু তাতে ডাকাতদেরও কোন ক্ষতি হলো না। তারা ততক্ষণে পাইন জঙ্গলে অদৃশ্য হয়েছে।
কিছুক্ষণের জন্যে সব নীরব হলো।
প্যাঁচ বলল, সাহায্যের জন্যে লোক পাঠানোর কথাটা পুরো একটা ধাপ্পা, পাঠাবার মত কোন লোকই ওদের নেই। এখন হয়ত ওরা আমাদের ওপর ইন্ডিয়ান খেলা খেলবে। অবশ্য জাদের ধারে এক খণ্ড মেঘ আসছে এখন। প্যাচের মনে হলো সে যেন ঘাসের উপর দিয়ে কালো একটা কিছু এগিয়ে আসতে দেখতে পাচ্ছে। সাবধানে তাক করে ট্রিগার টিপে দিল সে। কালো জিনিসটা একটা ঝাঁকি খেয়ে স্থির হয়ে গেল। পর মুহূর্তেই একটা দড়ির ফাঁস ওর গলা বেয়ে কনুই পর্যন্ত নামল, ওটার একটা ঝটকায় রাইফেলটা হাত থেকে ছিটকে পড়ল ওর। ঢাল বেয়ে কয়েক পাক গড়িয়ে নামায় দড়িটা ওর গায়ে আরও পেঁচিয়ে গেল। এখন একেবারে অসহায় অবস্থা ওর। সঙ্গীদের দিকে সাহায্যের আশায় চেয়ে দেখল ওদের ওর মত একই অবস্থা। তিক্ত মনে সে টের পেল বুদ্ধির খেলায় ওরা শয়তানদের কাছে হেরে গেছে। তাদেরই একজন সামনে দিয়ে এগোবার সময়ে অন্যরা ঘুরে পিছন দিক দিয়ে উপরে উঠেছে। যে লোকটা সাদা পতাকা নিয়ে এগিয়েছিল, সে এখন ওর দিকে বিষদৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
প্যাঁচ, তোমাকে এবার আমাদের সাথে গাদ্দারী করার উচিত সাজাই পেতে হবে, হিসহিস করে বলল সে।
নিজের পিস্তলটা বের করল লোকটা। পরবর্তী সেকেন্ডেই অসহায় প্যাচের দেহ ফুটো হয়ে যেত, কিন্তু একটা ঠাণ্ডা ভারী স্বর বাধ সাধল।
এক্সকিউজ মি, জেন্টস, এটা কি ব্যক্তিগত লড়াই, নাকি যে কেউ যোগ দিতে পারে? প্রশ্ন এলো।
চমকে উঠে আউটল ঘুরে চেয়ে দেখল পরিস্থিতি পাল্টে গেছে, উদ্যত পিস্তল হাতে দুজন শক্ত চেহারার লোক ওদের কাভার করে আছে।
বাঁধা অবস্থায় একটা অসহায় মানুষকে গুলি করে মারা আমার কাছে মোটেও পছন্দ হচ্ছে না, বলে চলল নবাগত লোকটা। আকাশের দিকে হাত তোলো, কয়োটির দল! ধমকে উঠল লোকটা।
দুজন ডাকাত ওর নির্দেশ মত হাত তুলল বটে, কিন্তু যে-লোকটা প্যাঁচকে গুলি করতে যাচ্ছিল সে পিস্তল ঘুরিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করল। কিন্তু তার আগেই অন্য পিস্তলটা গর্জে উঠল। ঘোড়ার পিঠ থেকে উল্টে অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে মাটিতে পড়ল লোকটা। এক নজরেই বোঝা গেল মারা গেছে যে গুলি করেছিল সে নড করে তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করল। তারপর ফিলের দিকে এগিয়ে গেল।
তাহলে শেষ পর্যন্ত আমরা তোমাকে ঠিকই খুঁজে পেয়েছি, মিস মাস্টারসন, বলল সে।
খুশিতে চিৎকার করে উঠল ফিল। আরে! রে এদারটন! তুমি এখানে কিভাবে এলে? প্রশ্ন করল সে।
গুহায় তোমাকে না পেয়ে জেমস আমাকে আর এক্স টি থেকে পলকে তোমার খোঁজে এই পাহাড়গুলো চষে ফেলার নির্দেশ দিয়ে গেছে, ব্যাখ্যা করল কাউবয়। এবারে অন্যজনের দিকে চেয়ে ওর চোখ বিস্ফারিত হলো। অবাক কাণ্ড! জাজ এমারিও দেখি রয়েছে তোমার সাথে!
যত কম কথায় সম্ভব বর্তমান পরিস্থিতিটা ওকে জানাল জাজ। এরফানের বিপদের কথা জেনে একটা গালি দিয়ে জিভে কামড় দিল রে। ওখানে ফিলের উপস্থিতির কথা ওর মনে ছিল না।
তাহলে এখন আমরা কি করব? প্রশ্ন করল সে। মিস মাস্টারসন, আমি, আর এই প্যাঁচ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাহাড় থেকে নেমে হোপের দিকে রওনা হচ্ছি; তুমি আর পল নিজেদের আউটফিট নিয়ে আমাদের অনুসরণ করো। কপাল ভাল থাকলে হয়ত আমরা সময়মত পৌঁছতে পারব।
প্যাঁচকে দড়ির প্যাঁচ থেকে ছাড়িয়ে নেয়া হলো; ডাকাত দুজনকে নিরস্ত্র করে এই এলাকায় আবার দেখা গেলে গুলি করে মারার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়ার পর পল আর রে নিজের নিজের ব্যাঞ্চের পথ ধকল। বাকি তিনজন হোপের ট্রেইলের দিকে রওনা হলো।
মাথা নিচু করে নীরবে ঘোড়া ছোটাচ্ছে এমারি। সামান্য দেরি হলেও সে মেজাজ দেখাচেছ। ফিল বুঝতে পারছে যে জেমসের জন্যে দুশ্চিন্তাতেই লোকটা এমন করছে। জাজের দুশ্চিন্তা ওকেও গভীর ভাবে প্রভাবিত করল। মাত্র একবার সাহস সঞ্চয় করে ফিল ওকে প্রশ্নটা করেই বসল।
এটা কি সত্যি যে জেমসই একসময়ে আউটলু বিদ্যুৎ এরফান নামে পরিচিত ছিল?
হ্যাঁ, কিন্তু সে কখনও আউটল ছিল না। ওর নামে মিথ্যে কথা রটানো হয়েছিল। ওর আসল নাম এরফান জেসাপ। এখন সে গভর্নর ব্লেকের অধীনে ডেপুটি ইউ এস মার্শাল হিসেবে কাজ করছে, বলল জাজ। তুমি যে জেমসকে পছন্দ করো না তা আমি জানি। কিন্তু আমি আশা করি একদিন তুমি ওকে সত্যিই ঠিকমত চিনবে, এবং বুঝবে আসলে ওর কাছে তুমি কতটা ঋণী।
বুড়ো লোকটার স্বর অত্যন্ত কঠিন শোনাল। এবং তার কথার সুরেও ভসনার আভাস সুস্পষ্ট। ফিল চুপ করে থাকল।
২১.
এরফানের নাটকীয় ভাবে জেলে ফিরে আসায় সকাল থেকে শহরটা উত্তেজনায় একেবারে টগবগ করে ফুটছে। নতুন পরিস্থিতি অনেক নাগরিককেই বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
ভিতরে ভিতরে কিছু একটা চক্রান্ত চলেছে, কাভানার কাছে নিজের মত প্রকাশ করল ফেনটন। আজ এমন কিছু লোককে মদ খেতে দেখা যাচেচ্ছ যাদের কাছে কোনদিনই মদ কেনার মত পয়সা আগে ছিল না। আমার সেলুনেও আজ কিছু গ্রীজার এসেছে যাদের গতকালও পয়সা দিতে পারবে না জেনে আমি কান ধরে বের করে দিতাম।
ওই জেমস লোকটার ঘাড়ে কি ভূত চেপেছিল যে সে এভাবে আবার ফিরে আসতে গেল? প্রশ্ন করল ষ্টোরকীপার।
লোকটা ভাল মানুষ-পালাবার লোক নয়, বলল সেলুন মালিক। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে ন্যায় বিচার ও পাবে না।
তুমি ঠিক কথাই বলেছ। স্টোরের ওপর তুমি একটু নজর রেখো, আমি, সেই এরফান কাম এগেইনে একটা ফুঁ মেরে দেখে আসি আপটন ওখানে কি করছে।
স্টোরের মালিক রাস্তা ধরে এগোবার সময়ে লক্ষ করল চার দিকেই অসন্তোষের নিদর্শন সুস্পষ্ট। পাঁচ-ছয়জনের ছোটছোট চত্রে উত্তেজিত তর্ক বিতর্ক চলছে। প্রতি জটলার কেন্দ্রেই বার বির, একজন বা দুজন লোক রয়েছে।
বার্ট পুরো শহরের লোককে খেপিয়ে তুলছে, কিন্তু এর পিছনে উদ্দেশ্যটা কি? নিজেকেই প্রশ্ন করল কাভানা।
সেলুনের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখল বারের সামনে উত্তেজিত খদ্দেরের ভিড় থেকে দূরে কোনায় একটা টেবিলে বার্ট একজন লোককে আপ্যায়ন করছে। লোকটা চিকন আকৃতির ভগ্ন চেহারার একটা মানুষ। বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি। গলায় নেক-টাইয়ের বদলে বাঁধা রুমালে। কাঁপা আঙুলে ওটা বাধার যথেষ্ট আভাস দেখা যাচ্ছে। ফোলা মুখ, আর চোখ দেখেই বোঝা যায় লোকটা মদে কতটা আসক্ত। লোকটার পরনে রয়েছে চকচকে কালো কোট। ট্রাউজার্স উঁচু বুটের ভিতর ঢুকানো রয়েছে। এই লোকটাই জাজ আপটন। নিজের যোগ্যতায় সে জাজের পদ অর্জন করেনি, রাজনৈতিক দড়ির টানই তাকে ওই পদে বসিয়েছে। অনেক অযোগ্যতা সত্ত্বেও আজও সে পদটা উঁচু মহলের প্রভাবেই বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। কাভানা তাদের কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছে না-যদি শুনতে পেত তাহলে সে তার প্রশ্নের জবাব পেয়ে যেত।
তুমি খুব ভাল একটা সময়ে হোপে এসে হাজির হয়েছ, জাজ, গ্লাসটা আবার ভরে দেয়ার সময়ে বলছিল বার্ট। ঠিক তোমার মত একটা লোকই এখন এই শহরের দরকার।
নিজের চেয়ারে উৎসাহের সাথে সোজা হয়ে বসল, আপটন। একজন জনসাধারণের নগণ্য সেবক হিসেবে নাগরিকদের স্বার্থে আমার পক্ষে যতটা সম্ভব তা আমি করব, মিস্টার বার্ট, বলল সে। আমি কিভাবে?
এখানে বিচারের অপেক্ষায় একজন জঘন্য ক্রিমিন্যাল জেলে আটক রয়েছে, ওকে জানাল বার্ট। লোকটা ভয়ানক প্রকৃতির-গতকাল সে জেল থেকে পালিয়েছিল, কিন্তু ওকে শেরিফ আবার ধরে এনেছে। মিথ্যে কথাটা বলতে বার্টের মুখে একটুও বাধল না।
ওর অপরাধটা কি? প্রশ্ন করল আপটন।
ও এখানকার ব্যাঙ্কটা লুট করার সময়ে ম্যানেজারকে গুলি করেছে, আমার এক অন্তরঙ্গ বন্ধুকেও সে খুন করেছে, ঠাণ্ডা মাথায় কথাগুলো বলল বার্ট। এগুলো যদি যথেষ্ট না হয় তাহলে আরও অনেক চার্জ ওর বিরদ্ধে আছে।
ঈশ্বর আমাদের মাথাপ্রতি মাত্র একটাই গলা দিয়েছেন, তাই একবার ফাঁসি দেয়াই একজনের জন্যে যথেষ্ট, রসিকতা করে বলল আপটন। তুমি ওকে রাজধানীতে পাঠাচ্ছ না কেন?
পথে পালাবার সুযোগ দেয়ার জন্যে, নাকি সাজানো জুরির কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে, কারণ ওর খুঁটির জোর আছে বলে, আঁ? বার্ট পাল্টা জবাব দিল। না, স্যার, এই শহর নিজেদের বিচার নিজেরাই করতে সক্ষম। তোমাকে আগেই বলেছি, এই লোকটা সাংঘাতিক মানুষ। হয়ত তুমি শুনে অবাক হবে যে এই লোকটাই আউটল বিদ্যুৎ এরফান।
এটা শুনে আপটন সত্যিই অবাক হলো, তার শূন্য চোখ দুটো বিস্ফারিত হলো। কিন্তু আমি শুনেছি লোকটা এখন গভর্নরের হয়ে কাজ করছে, মন্তব্য করল সে।
তাহলেই বুঝতে পারছ ওর খুঁটির জোর কোথায়, বিজয়ের সুরে বলল বার্ট। তাহলে বুঝতেই পারছ কোথায় ওর জোর।
ওটা যদি ওর এখানেও থেকৈ থাকে- সন্দিগ্ধ আপটন বলতে শুরু করেছিল।
কিন্তু বাধা দিয়ে বার্ট বলে উঠল, ওর তা নেই, ওর কেসটা একেবারে নির্ভেজাল সত্য, এর থেকে ওর বেরোবার কোন রাস্তা নেই। ওর বিরুদ্ধে সব সাক্ষ্য প্রমাণই আমাদের হাতে আছে; বলতে গেলে এই কেসটা একেবারে সমাপ্ত। তোমার কেবল ওর বিচার করতে হবে, জুরি আগে থেকেই বাছাই করে রাখা হয়েছে। তুমি কেবল বিচার করবে, বাকিটা জুরি দেখবে।
এই অশুভ ইঙ্গিতে আপটন একটু চমকে উঠল। সে এমন কিছু মোটেও আশা করেনি।
ভুলে যেয়ো না যে আমি যথার্থ আইন প্রয়োগ করার প্রতিনিধি।
তোমার কেবল বিচারের পরে ফাঁসির রায় দিতে হবে। একবার ওই আদেশ দেয়ার পর ওর কি ঘটে তা তোমার দেখার কোন প্রয়োজন নেই।
কথাটার মধ্যে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতটা বুঝে চোখ তুলে তাকিয়ে বাটের কথার পুরো অর্থ বোঝার চেষ্টা করে বলল, তোমার ভোলা উচিত নয় যে আমি আইনের প্রতিনিধি, মিটার বাট। মর্যাদা বজায় রাখার একটা বৃথা চেষ্টা করল আপটন।
সেই কারণেই তো আমি তোমাকে এই বিচারের ভার নিতে বলছি, জবাব দিল র্যাঞ্চার। শোনো, জাজ এই শহরের লোকজন সবাই এই ডাকাতির ব্যাপারে উত্তেজিত হয়ে আছে। প্রায় সবাই টাকা হারিয়েছে-আমি কোনক্রমে ওদের এখনও ঠেকিয়ে রেখেছি। ওরা যদি সত্যিই খেপে ওঠে তাহলে লোকটাকে ধরে নিয়ে জোর করেই ফাঁসিতে ঝোলাবে। একজন শিক্ষিত এবং মাননীয় জাজ শহরে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও যদি লোকটাকে বিনা বিচারে এভাবে মরতে হয়, যে ন্যায়সঙ্গত ভাবেই কাজটা করতে পারত, সেটা কি ভাল দেখাবে?
আপটন তার গ্লাসটা খালি করে কম্পিত হাতে ওটা আবার ভরল। পশ্চিমের অভিজ্ঞতা তার আছে; সে দেখেছে উজ্জ্বল হয়ে উঠলে জনতা কি করতে পারে। শহরে কিরকম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে এটাও তার অজানা নয়। যেকোন একটা স্ফুলিঙ্গ থেকেই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে হলেও তার দেখা উচিত যেন ন্যায্য বিচার করে অপরাধীকে তার পাওনা সাজা দেয়া হয়। বার্টের পরের কথা তাকে মনোস্থির করতে সাহায্য করল।
এর জন্যে অবশ্য দুশো ডলারের একটা পারিশ্রমিক দেয়া হবে, বলল সে। অবশ্য তুমি যদি এমারির জন্যেই আমাদের।
স্পারের খোঁচা খাওয়া ঘোড়ার মতই লাফিয়ে উঠল আপটন। বার্ট ভাল করেই জানে যে এমারিকে মোটেও দেখতে পারে না লোকটা।
তার কোন দরকার নেই, আমিই কেসটা নিচ্ছি, বলল সে।
খুব খুশি হলাম আমি, কারণ এমারি আসামীর বন্ধু, বলল বার্ট। তাছাড়া এমারি এই এলাকায় মোটেও জনপ্রিয় নয়। এটা অনেকেরই ধারণা যে লেজি এম দখল করার চক্রান্তে সে-ও আসামীর সাথে জড়িত।
অশুভ একটা আলো জ্বলে উঠল আপটনের চোখে। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। সাধারণত পরিষ্কার পানির তলাতেই কাদা থাকে। তুমি বিচারটা কখন শুরু করতে চাও?
আধঘণ্টা পর, জবাব দিল র্যাঞ্চার। বেশি দেরি করাটা কোনমতেই নিরাপদ হবে না। আমি মালিককে টেবিল সরিয়ে জায়গা করার নির্দেশ দিচ্ছি।
আপটন যে এখনই আসামীর বিচার করতে যাচ্ছে এই খবর দাবানলের মত শহরে ছড়িয়ে পড়ল। বেশিরভাগ লোকই সন্তুষ্ট হলো এতে। কারণ হোপে এর আগেও শহরে খুন হয়েছে এবং বিচারও হয়েছে, কিন্তু সরকারি জাজের বিচার কখনও হয়নি। তার সম্মানে বারটাকে যতটা সম্ভব কোর্টের রূপ দেয়ার চেষ্টায় কোন ত্রুটি রাখা হয়নি। জাজের ব্যবহারের জন্যে একটা টেবিল রাখা হয়েছে সামনে। ওটার দুপাশে কিছু চেয়ার রাখা আছে সমাজে সম্মানীয় লোকদের বসার জন্যে। একপাশে জুরিদের বসার জন্যে বারোটা চেয়ার সাজানো হয়েছে। জাঁজের টেবিল থেকে কিছুটা দূরে টেবিলের দিকে মুখ করে রাখা হয়েছে তিনটে চেয়ার; মাঝের চেয়ারে বসবে আসামী আর তার দুপাশে দুজন ডেপুটি পাহারায় থাকবে। ওটাই হবে কাঠগড়া। দর্শকের দল যে যেখানে পেরেছে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে।
যাকে গতরাতেই নির্মম ভাবে আঘাত করেছিল এরফান, সেই জৈকই ওকে দরজার কাছে এসে হাসি মুখে সবার প্রথম খবরটা জানাল যে আজ রাতেই ওর বিচার হতে যাচ্ছে। চেহারায় রাগের কোন চিহ্নমাত্র নেই।
সে বলল, নিজেকে বাঁচানোর জন্যে কি যুক্তি দেখাবে তা এখনই ঠিক রাখো, জেমস, জাজ শিগগিরই তোমাকে ডেকে পাঠাবে।
তাহলে জাজ এমারি ফিরে এসেছে? প্রশ্ন করল সে।
না, আপটন তোমার বিচার করবে। তোমারই কপাল খারাপ, নইলে এই সময় সে এখানে এসে হাজির হতে যাবে কেন?
এই সময়ে অন্য ডেপুটির গলা শোনা গেল। ওকে নিয়ে এসো, এইমাত্র নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ এসেছে।
মিছেই তোমার এতটা সময় নষ্ট করে দিলাম আমি, দুঃখের সাথে বলল জেক। চলো, য়াওয়ার পথেই না হয় কিছু ভেবে নিয়ে!
অবশ্যই এরফানের মাথায় বিভিন্ন রকম চিন্তা চলছে। দুপাশে দুজন সশস্ত্র গার্ড নিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছে সে। গতরাতের ঘটনা আর সুযোগের কথা বিচার করে এরফান ভেবেছিল হুজুগে মেতে ওঠা জনতার হাতে ফাঁসিতে ঝোলা ছাড়া তার আর অন্যকোন বিপদ এই মুহূর্তে নেই; হয় হোপে এসে জাজ এমারি তার বিচার করবে, অথবা তাকে বিচারের জন্যে স্টেটের রাজধানীতে পাঠানো হবে; কিন্তু এই মাতাল জাজের কাণ্ড ওর ভাল করেই জানা আছে, তাই তার হঠাৎ এখানে উপস্থিতি ওর কাছে মোটেও ভাল ঠেকছে না। এখন তার মনে হচ্ছে সে নিজের আউটফিটকে হোপ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ না দিলেই ভাল করত-কিন্তু এখন আর ওকথা ভেবে কোন লাভ নেই।
অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রবেশে কামরায় গুঞ্জন বেড়ে উঠল। দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ে ধীর পায়ে হেঁটে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে হ্যাট খুলে সে নিজের আসুনে বসল। ডেপুটি দুজন তাদের পিস্তল বের করে ওর দুপাশে তৈরি হয়ে বসল, কারণ এরফানের বাঁধন এখন খুলে দেয়া হয়েছে। সে প্রথমে জাজের দিকে একবার চেয়ে জুরিদের সবাইকে দেখল। ওদের আগেই বাছাই করে বসানো হয়েছে। সে নিজের অসহায় অবস্থা ভাল ভাবেই টের পাচ্ছে। ওদের বারোজনই বার্টের নিজস্ব লোক, এবং এই বিশেষ কারণেই ওদের বাছাই করা হয়েছে। ফেনটন, কাভানা, আর লরিকে সে দর্শকদের মধ্যে দেখতে পেল। আরও একজনকে খুঁজছে এরফান, এই সময়ে ইয়র্কিকে সে ঢুকতে দেখল। ওর পিছন পিছন ঢুকল বার বি র্যাঞ্চের চারজন লোক। ওর চেহারাই এরফানকে বুঝিয়ে দিল পুরো ঘটনা।
ইয়র্কির মাথায় খুন চেপে আছে, আঁচ করল সে। মনে হচ্ছে বিচারের কথা শুনেই ইয়র্কি লেজি এমের লোকজনকে আনতে যেতে ধরেছিল, পথে, ওই চারজন ওকে বাধা দিয়ে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছে। বার্ট এই বিচার কোন কারণেই পণ্ড হতে দিতে চায় না।
জাজের টেবিলের দুপাশে পাগলা মাটি আর তার কিছু লোকের সাথে বসে বার্ট। তার চোখ থেকে উপচে পড়া খুশি ঢাকার কোন চেষ্টাই করছে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রত্যাশা নিয়ে বারবার বার্ট দরজার দিকে তাকাচ্ছে। এরফান জানে লোকটা ভাবছে এই খুশির মধ্যে ফোরম্যান কেন এখনও উপস্থিত হচ্ছে না। এরফান মনেমনে একটু হাসল। জাজের টেবিলে কাঠের হাতুড়ির বাড়িতে কোর্ট নীরব হলো।
এবার বলো, শেরিফ, আসামীর বিরুদ্ধে তোমার কি কি চার্জ আছে? প্রশ্ন করল জাজ।
উঠে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে নিজেকে সম্মানিত প্রমাণ করার ব্যর্থ একটা চেষ্টা করল টেলর। আজ নিজের ওপর খুব সন্তুষ্ট সে।
অপরাধীর বিরুদ্ধে অনেক চার্জই আছে, জাজ, শুরু করল সে। মিস্টার মার্টিনকে হত্যার চেষ্টা, ব্যাঙ্ক-ডাকাতি এবং ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে গুলি করা, জ্যাক মাস্টারসনকে হত্যা, জেল থেকে পালানো-
ভাল, শুরু করার জন্যে এই কয়টাই যথেষ্ট, ওকে বাধা দিয়ে বলল আপটন। আমরা ব্যাঙ্ক-ডাকাতি আর খুনের বিচারই প্রথমে করব। সে যদি ওগুলোতে অপরাধী প্রমাণিত হয় তাহলে বাকি সব মাফ করে দিলেও কোন ক্ষতি নেই।
আপটনের তিক্ত রসিকতায় কামরার প্রায় সবাই হেসে উঠল। জাজ কেবল মুখ টিপে একটু হাসল।
কোর্টে প্রথমে ডাকাতির বিচারই করা হবে। তোমার সাক্ষীকে হাজির করো, শেরিফ।
ব্যাঙ্কার এগিয়ে এসে ডাকাতির বিবরণ দিল। জাজের প্রশ্নের উত্তরে সে জানাল কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা থাকায় কারও চেহারা সে দেখতে পায়নি বটে, কিন্তু উচ্চতা গড়ন আর পোশাকে সে এই লোকটাও হতে পারে। জেমস ডাকাতির আগে তার টাকা তুলে নিলেও গ্রেপ্তার হওয়ার আগে যে নোটগুলো সে ভাঙাতে এসেছিল সেগুলো ডাকাতি করা টাকা।
আপটনের কঠিন দৃষ্টি এবার বন্দির ওপর পড়ল।
সাক্ষীকে তোমার কিছু জিজ্ঞেস করার আছে? প্রশ্ন করল জাজ।
উঠে দাঁড়াল এরফান। নিশ্চয়, বলে সাক্ষীর দিকে ঘুরে তাকাল সে। তুমি নিশ্চিত যে তোমাকে গুলি করেছিল সে আমার চেয়ে ছোট ছিল না?
নিশ্চয়, জবাব দিল ব্যাঙ্কার। এখন তোমার দিকে চেয়ে মনে হচ্ছে যেন সে তোমার চেয়ে বরং কিছু বড়ই ছিল।
মাথা ঝাঁকাল এরফান। তাহলে তুমি যখন তার চেহারা দেখতে পাওনি তখন সে আমার সমান বা আমার চেয়ে কিছু বড় ছিল। ওর চোখ কামরার চারপাশে একবার ঘুরে এলো। যেমন ধরো, মিস্টার বার্টের মত?
সাক্ষী জোর গলায় আপত্তি জানাল। প্রস্তাবটা সম্পূর্ণ অবাস্তব! তার পাঁচ হাজার ডলার আমার ব্যাঙ্কে জমা ছিল; সে এত দয়ালু মানুষ যে ওই টাকাও দাবি করেনি।
যদি সে নিজেই ডাকাতিটা করে থাকে তবে এতে তার কোন ক্ষতি হবে কি? যুক্তি দেখাল এরফানআর আমিই যদি ডাকাতি করি তবে আমি আবার টাকা তোলার কষ্ট কেন করতে যাব?
তুমি কেন তুলেছিলে? প্রশ্ন করল জাজ।
পকেট থেকে কাগজের টুকরোটা বের করে জাজের হাতে দিয়ে ব্যাখ্যা করল এরফান। কাগজটা পড়ে দেখে জাজ ওটা জুরিদের পড়ে দেখতে দিল। ওরা সবাই একে একে ওটা পড়ে দেখার পর ওদের একজন তিক্ত স্বরে মন্তব্য করল, এত বড় একটা খবর তুমি কেন গোপন রেখেছিলে?
ফেনটন লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। জেমস ওই কাগজটা আমাকে আর টিমকে দেখিয়েছিল, বলল সে। এর পিছনে কোন সত্য আছে কিনা তা আমাদের তিনজনের কেউই জানতাম না। কিন্তু কেউ ঝুঁকি নিতে চাইনি বলে আমরা দুজনও সেদিন আমাদের সব টাকা তুলে নিয়েছিলাম। কেউ কি বলতে চাও ওই ডাকাতিতে আমরাও জড়িত ছিলাম?
অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া আর কাউকে কেউ দোষ দিচ্ছে না, বলে উঠল আপটন।
যদিও আড়ম্বরের সাথে জাজের জবাবে অনেকেই প্রভাবিত হলো, কিন্তু এতে এরফানের ঠোঁটে একটা ক্ষীণ হাসি ফুটে উঠল। ওখানেই তোমার ভুল হলো, জাজ, আমি অভিযোগ আনছি যে ওই তোমার পাশে বসা ব্ল্যাক বার্টই এই ডাকাতিটা করেছে। ওরই আমার বদলে এই জায়গায় বিচার হওয়া উচিত। আমার কাছে এর প্রমাণও আছে!
ওর এই মন্তব্যে দর্শকদের মধ্যে নড়াচড়া আর গলা বাড়িয়ে আরেকটু ভাল করে দেখার প্রবণতা বেড়ে গেল। এরফান নড় করে সম্মতি দেয়ায় ফেনটন বার বি থেকে নেয়া নোট বইটা ওর দিকে এগিয়ে দিল। অভিযোগটা বার্ট তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে উড়িয়ে দিল।
কই, তোমার প্রমাণ বের করো, চিৎকার করল সে।
হিসেবের বইটা উঁচু করে ধরল এরফান। এটা তোমার? প্রশ্ন করল সে।
অবাক হয়ে চেয়ে রইল র্যাঞ্চার। হ্যাঁ, বলল সে, কিন্তু ওটা তোমার কাছে কিভাবে।
এর ভিতর লেখাগুলোও তাহলে তোমার?
অবশ্যই, কিন্তু ডাকাতির সাথে এর কি সম্পর্ক?
বলছি। ব্ল্যাক মাস্কের দল যখন আমার একজন লোককে তুলে নিয়ে যায়। তখন ওকে ফেরত পেতে হলে আমাকে কি করতে হবে সেটা জানিয়ে একটা নোট রেখে গেছিল। সেটা এই খাতারই একটা নাম্বার লেখা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে লেখা হয়েছিল। এক নজরেই যে কেউ বলতে পারবে ছেড়া পৃষ্ঠার নাম্বার আর চিঠির পৃষ্ঠার নাম্বার আর হাতের লেখা হুবহু এক।
কোর্টে কোন রকম শব্দ নেই। বই আর কাগজটা আপটনের দিকে বাড়িয়ে দিল এরফান। জাজ ওগুলো ভাল করে পরীক্ষা করে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বার্টের দিকে চাইল র্যাঞ্চার খুব দ্রুত চিন্তা করছিল; এবং জবাবটা যেন তার ঠোঁটের আগাতেই ছিল। সে চট করে জবাব দিল, ওই খাতাটা মাসখানেক আগে খোয়া গেছিল। ওটা হেনডন নামে একটা লোক আমার থেকে চুরি করেছিল, ওর আমার ওপর ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল। সে এখন লেজি এমে কাজ করে। লেখাটাও আমার লেখার চমৎকার অনুকরণ।
যেটা তুমি চিনতে অস্বীকার করেছিলে যখন আমি শেডিকে ধরে এনেছিলাম। ওকে মনে করিয়ে দিল এরফান।
ধ্যাৎ, ওটা আমি ভাল করে পরীক্ষাই করিনি, মিথ্যা বলল বার্ট।
অবশ্য বইটা চুরি যাওয়ার কথাটা সত্যি। ওটা গতরাতে আমি বার বি র্যাঞ্চহাউস থেকে নিয়ে এসেছি। তোমার জন্যে এটা আরও একটা চার্জ, শেরিফ, হাসি মুখে বলল এরফান। আমি বার্টের দেরাজের তালা ছুরি দিয়ে খুলে এগুলো পেয়েছি। এগুলো কি তার ব্যাখ্যা মিস্টার রাস্টন ভাল দিতে পারবে।
নোটের বান্ডিলটা ব্যাঙ্কারের দিকে বাড়িয়ে দিল এরফান। সে দেখল বার্ট আর আপটনের মধ্যে ফিসফিস করে কি যেন আলাপ হলো। জেসাপ বুঝতে পারছে এখানে তাকে যেকোন উপায়ে হারাবার উদ্দেশেই আনা হয়েছে; সম্ভবত লোকটা এখন জাজের ফি আরও বাড়িয়ে দিল। কিন্তু সে হাল ছাড়ার পাত্র নয়।
তোমার এসব করার উদ্দেশ্যটা কি? প্রশ্ন করল আপটন।
এতে ব্যাখ্যা করার কিছুই নেই, তিক্তস্বরে, বলল সে। ওই বই আর নোটিসটাই প্রমাণ করছে যে বার্টই হচ্ছে ব্ল্যাক মাস্কের দলপতি। প্রমাণগুলো সংগ্রহ করার পর স্বেচ্ছায় জেলে ঢুকতেও আমাকে ঝামেলা করতে হয়েছে। অনেক প্রত্যক্ষদর্শী ও ওর কথা সমর্থন করল। বার্ট তার চেয়ারে হেলান দিয়ে হাঁসল। সে সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে জেমসের ছাড়া পাওয়ার কোন উপায়ই নেই।
চমৎকার, জেমস, তোমার বই চুরি করার বদলে নিজেই বই লেখা উচিত, বলল সে। ওর রসিকতায় সবাই হেসে উঠল। সে সেলুন মালিকের দিকে একটা অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই লোকটা অস্থায়ী ফোরম্যান হিসেবে বলে উঠল, শোনো, জাজ, এসব কথায়, এই মামলা কোন দিকেই এগোচ্ছে না।
ঠিক আছে, এবার তাহলে খুনের কেসটার দিকে এগোই, বলল আপটন। তোমাদের কি এ বিষয়ে কোন মতামত আছে?
কার খুন, আমার? ব্যঙ্গ করে এই মন্তব্য করল এরফান। আসলে তা-ই এখানে হতে যাচ্ছে এটা সবাই জানে। কারণ তার মৃত্যুতে আমার কোন লাভ নেই। যে এটা প্রমাণ করতে পারত সেই জাজ এমারি আজ এখানে উপস্থিত নেই।
তাকেই তো তোমার সহযোগী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, কঠিন স্বরে ঘোষণা করল আপটন। এবং তাকে যে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এতেও সেই রকমই ধারণা হয়। এই চাকরির জুনে ও সেই তোমাকে সুপারিশ করেছিল, তাই না?
ওর মাধ্যমেই মাস্টারসনের সাথে আমার পরিচয়, স্বীকার করল এরফান।
এবং তুমি ওই চাকরিতে যোগ দেয়ার পরপরই মাস্টারসনকে আর পাওয়া যাচ্ছে না, বলে চলল জাজ। ওর রাইফেলটা তোমার কাছে কিভাবে এলো? হঠাৎ প্রশ্ন করে বসল সে।
এই প্রশ্নে এরফানকে হতভম্ব করে দেয়ার আশা করে থাকলে সে নিরাশ হলো। কারণ সাথেসাথেই সে মারিওকে হত্যা করে ওটা পাওয়ার কথা সরাসরি খুলে বলল।
ওটা সম্পূর্ণ মিথ্যা! চিৎকার করে উঠল বার্ট, ওকে কিছুদিন আগে মেক্সিকোতে দেখা গেছে-আমার ফোরম্যান তার সাক্ষ্য দিতে পারবে।
ক্ষীণ একটু হাসল এরফান। ওই লোকটা যে আর কোনদিন ফিরে আসবে এ ব্যাপারে সে নিঃসন্দেহ। পকেট থেকে আরও এক টুকরো কাগজ সে বের করল। ওটা আপটনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে বলল, এটা বার্টের সাথে ওর যোগসাজস থাকার কথা প্রমাণ করবে।
ওটা এক নজর দেখেই বাটের দিকে সে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।
দেখা যাচ্ছে লেখালিখি তোমার বেশ প্রিয়। তুমি কি ওই গান পাওয়ার কথা আর কাউকে জানিয়েছ?
কেবল মিস মাস্টারসনকে, জবাব এলো।
এবং সে-ও নিখোঁজ; তোমার কথা যারা সত্য বলে প্রমাণ করতে পারে তাদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জাজ রুক্ষ স্বরে প্রশ্ন করল, আর কোন প্রমাণ আছে, শেরিফ?
এটা শেরিফের জন্যে কতৃত্ব ফলাবার বিরাট একটা সুযোগ, যার জন্যে সে আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে। সে গর্বের সাথে এগিয়ে এসে জানাল সে আর তার ডেপুটি বেসিন ধরে চলার পথে একটা ট্র্যাক দেখতে পেয়ে সেটা অনুসরণ করে কিভাবে নিখোঁজ র্যাঞ্চারের জামা-কাপড় খুঁজে পেয়েছে। একবারে একটা করে বের করে সে আপটনকে দেখাল। সবার শেষে সে বের করল ওই রাইফেলটা। এটা সে শেষ চমকের জন্যে রেখেছিল।
এসবের নিচে আমরা পেয়েছি এই মোক্ষম প্রমাণ, বলল সে। তারপর গর্বের সাথে চারপাশে তাকাল সে।
টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে কামরায়। তোমরা লক্ষ করো এর বাঁটে ওর নামও খোদাই করা আছে।
এটা কি তোমার? রাইফেলটা এরফানকে পরীক্ষা করতে দিয়ে প্রশ্ন করল আপটন।
হ্যাঁ, ব্ল্যাক মাস্করা আমাকে বন্দি করার সময়ে ওটা আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিল; তবে তখন ওটায় কোন নাম খোদাই করা ছিল না, বলল এরফান। তোমার লেখা যত ভাল, প্রিন্ট তত ভাল নয়, মিস্টার বার্ট।
জবাব খুঁজে বের করতে সে অত্যন্ত পটু, তাই না? যাদের উদ্দেশে এই প্রশ্নটা করা হয়েছে, সেই জুরিরা সবাই হেসে সমর্থন জানাল।
ফেনটন এগিয়ে এসে হাত তুলে প্রতিবাদ জানাল। আমি এই ট্রায়েল ন্যায্য হচ্ছে বলে মনে করি না, কারণ এটা এত তাড়াহুড়া করে করা হয়েছে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি তার কেস ঠিকমত তৈরি করার কোন সুযোগই পায়নি বা তার সাক্ষাদেরও হাজির করতে সক্ষম হয়নি। বাদি পক্ষ ওর জ্যাককে মেরে ফেলার পেছনে কোন যুক্তিও দেখাতে পারেনি। এখানে যেসব নিদর্শন ওর বিরুদ্ধে রাখা হয়েছে তাতে ওকে একটা বোকা গাধা বলে দেখানো হয়েছে, কিন্তু আমরা সবাই জানি সে নয়। যে ব্যাঙ্ক থেকে ডাকাতি করা হয়েছে, সেই ব্যাঙ্কেই কোন পাগলে টাকা ভাঙাতে যাবে? আর সে যদি জ্যাককে খুন করেই থাকে তাহলে বদ্ধ পাগল না হলে কেউ কি তার ইনিশিয়াল করা রাইফেল ওই কাপড়ের তলায় রাখবে? আমি জুরির কাছে প্রশ্ন রাখছি, তোমাদের কি জেমসকে দেখে এতই বোকা মনে হচ্ছে?
আপটনের জবাবটাও ফেনটনের প্রশ্নের মতই চৌকয়া হলো।
মিস্টার ফেনটন জেমসের বন্ধু, সুতরাং সে। তার পক্ষে কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক, সে জুরিকে বোঝাল। কিন্তু সে যা জানে না, সেটা হচ্ছে অত্যন্ত চালাক ক্রিমিন্যালেরও মাঝেমাঝে এমন ভুল করে বসায় আশ্চর্য হবার কিছু নেই-এমন অনেক কেসই আমি ডীল করেছি। এটা লেজি এম দখল করার একটা গভীর প্লট, তোমাদের যদি আরও নিদর্শনের প্রযোজন থাকে- বারের মালিক মাথা নাড়ল।
এবার বার্ট তার বোমাটা ফাটাল। তোমাদের মনে যদি এখনও কোন সন্দেহ থেকে থাকে তবে জেনে রাখো যে এই জেমস গ্রীনই হচ্ছে প্রসিদ্ধ আউটল বিদ্যুৎ এরফান।
একটা শিস আর সভয়ে শ্বাস টেনে জুরিরা তাদের শঙ্কা প্রকাশ করল। বার মালিক ওদের ফিসফিস করে কি যেন বলল। এতে ওরা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, আমাদের আলোচনা করার কিছু নেই-আমর রায় দিতে প্রস্তুত।
এবং তোমাদের রায়। পুরোপুরি দোয়ী।
আসামীর দিকে ফিরল জাজ। ওদের সিদ্ধান্ত তুমি শুনেছ, তুমি জুরির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছু বলতে চাও?
চোখ সরু করে আপটনের দিকে তাকাল সে। তুমি জাজ নামের একটা কলঙ্ক, স্যার, শান্ত ঠাণ্ডা স্বরে বলল এরফান।
মন্তব্যটা আপটনের মোটা চামড়াও ভেদ করল। ক্ষিপ্ত স্বরে বলল আপটন, ন্যায্য বিচারই করা হয়েছে তোমার। কিন্তু চেহারাটা একটু লাল হলো। ঠোঁটে একটা কুৎসিত ভাব ফুটে উঠল।
তোমাকে যথার্থই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, বলল সে। এখন যা বাকি রয়েছে সেটা হচ্ছে তোমার দণ্ডাদেশ দেয়া। তোমাকে যে সাজা আমি দিচ্ছি। সেটা হচ্ছে তুমি না মরা পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলবে। তারপর টেলরের দিকে ফিরে বলল, শেরিফ, ওকে ক্যাপিটালে নিয়ে এই সাজা যেন কার্যকর করা হয়, এটা দেখার ভার তোমাকে দেয়া হলো।
সে ভাল করেই জানে এখন কি ঘটবে, তাই চতুরতার সাথে পুরো দায়িত্ব আরেকজনের কাঁধে চাপিয়ে আয়েশ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে একটা চুরুট ধরাল। এক মুহূর্ত, নীরবতার পর এই আদেশের তাৎপর্য যখন সবার মাথায় ঢুকল তখন মুখের সামনে থেকে খাবার কেড়ে নেয়া জন্তুর মতই গর্জে উঠল রুষ্ট। জনতা। পাগলা মার্টি লাফিয়ে চেয়ারের ওপর উঠে দাঁড়াল।
জাহান্নামে যাক ক্যাপিটাল! আমাদের এখানেও দড়ি আর গাছের কোন অভাব নেই। ওখানে ওর প্রভাব আছে; ওখান থেকে আগেও সে বেঁচে গেছে। আবারও হয়ত তাই হবে। ওকে আমরাই ফাঁসি দিতে পারব।
ঠিক বলেছ, বলে উঠল আরেকজন। ওর সাথে সুর মেলাল আরও অনেকে।
বার্ট চুপ করে বসে আছে। ওর ঠোঁটের কোণে ঝুলছে নিষ্ঠুর, একটা সন্তোষের হাসি। টেবিলে হাতুড়ি ঠুকে নিজে একটা কথা বলার সুযোগ করে নিল আপটন।
শেরিফ, আইন রক্ষার জন্যে তুমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে দায়ী থাকবে, সাবধান করল সে।
আবার চিৎকার শুরু হলো। সম্প্রতি লব্ধ মান-সম্মান হারিয়ে শেরিফকেই এখন অভিযুক্ত আসামীর মত দেখাচ্ছে। হায্যের আশায় অনুনয়ের চোখে। বার্টের দিকে চাইল টেলর। লোকটা মাথা নেরে হাসল।
ওটা তোমার কাজ, শেরিফ, বলল সে।
দড়ি আর ঘোড়া, চিৎকার করল মার্টি। ওকে ধরে নিয়ে এসো, বয়েজ।
হুড়োহুড়ি বেধে গেল। যদিও কিছু লোক ওদের ঠেকাবার চেষ্টা করল, লোকজনের ধাক্কায় ওরা আর শেরিফসহ ডেপুটিরা সরে যেতে বাধ্য হলো। এরফানকে জোর করে ধরে খোলা রাস্তায় নামানো হলো।
এবার কোথায়? ডজনখানেক লোক প্রশ্ন তুলল।
ওকে হার্ভির ওখানে নিয়ে চলো, চিৎকার করে বলল মার্টি। ওখানকার ভূতগুলো আর একটা সঙ্গী পাবে।
এরফানকে ঘোড়ার পিঠে তুলে দিয়ে ওর গলায় একটা দড়ির ফাস পরিয়ে দেয়া হলো। ওকে ঘিরে আছে পিস্তল হাতে বারোজন লোক। যাত্রা শুরু হলো; পশ্চিমের উদ্ধৃঙ্খল জনতার সাথে জেসাপ পরিচিত। সুতরাং এটাই যে তার জীবনের শেষ রাইড হবে তাতে ওর মনে কোন সন্দেহ নেই।
যারা কোর্টরূমে ছিল তারা সবাই ওদের পিছু নিল। বার্ট যাচ্ছে শেরিফ আর আপটনের সাথে। জাজ যাচ্ছে কারণ সে জানে নিজের মান বাচাতে তাকে শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদ করে যেতে হবে।
এরফানের চেহারা পাথরের মূর্তির মতই নির্বিকার। খেলায় সে হেরে গেছে, তাই তাকে এর মূল্যও দিতে হবে; যদিও সাজানো তাস দিয়ে খেলেছে ওরা।
ওখানে পৌঁছতে বেশি সময় লাগল না। মার্টিই লীড় করছিল, সে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত স্বরে চিৎকার করে উঠল, আরে, ওখানে দেখছি আগে থেকেই একজন ঝুলছে!
একনজর তাকিয়েই ডোভারকে চিনল বার্ট। ওকে দড়ি খুলে নিচে নামাও, আদেশ দিল সে। তারপর বিষাক্ত দৃষ্টিতে এরফানের দিকে চেয়ে বলল, তাহলে। এই কাজেই তুমি গতরাতে জেল থেকে বেরিয়েছিলে? এর উচিত সাজাই তোমাকে দেয়া হবে, ওর জায়গায় এখন তুমি ঝুলবে।
কাজটা বেআইনী হবে, সাবধান করল আপটন। নিজের মান বাঁচাতে ওকে কথাটা বলতেই হলো।
গাছে উঠে ওকে দড়ি খুলে নিচে নামাল মার্টি।
এবার এরফানকে ঘোড়ার পিঠ থেকে টেনে নিচে নামানো হলো। আপটন লোক দেখানোর জন্যে শেরিফকে অনুরোধ করল ওদের ঠেকাতে। দোটানায় পড়ে শেরিফ কয়েক পা এগোল। তাকে বাধ্য হয়ে থামতে হলো কারণ তার মুখে পিস্তল ঠেসে ধরল ওদের একজন। সভয়ে পিছিয়ে এলো সে।
গাছ থেকে নেমে এসে আবার লীডারের ভূমিকা নিল মার্টি। সে এরফানের গলায় বাধা লম্বা দড়িটা ছুঁড়ে একটা ডালের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে নিচে নামাল। এরফান নির্বিকার চোখে ওকে ঘিরে দাঁড়ানো লোকগুলোর চেহারা একবার দেখল। ওদের পিছনে দেখা যাচ্ছে নিরুপায় অবস্থায় করুণ মুখে লরি দাঁড়িয়ে রয়েছে ফেনটন এবং আরও কয়েকজন সভ্য নাগরিকের পাশে। আপটন আর শেরিফ রয়েছে বার্টের পাশে। অদূরেই একটা গাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে ইয়র্কি। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যা ঘটছে তাতে ওর কোন কৌতূহল নেই। কিন্তু এরফান জানে, জীবন থাকতে সে ওকে মরতে দেবে না-শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে, তাতে যাই ঘটুক না কেন।
২২.
শহরের লোকজন তাদের মিশনে হার্ভির বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার পরপরই নবাগত একটা লোক হোপে পৌঁছল। রাস্তা ধরে এগোবার সময়ে একটা লোকও তার চোখে না পড়ায় সে খুব অবাক হলো। একটা খোলা দরজার মুখে এক মহিলাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে লোকটা হ্যাট খুলে তাকে সম্মান জানিয়ে জানতে চাইল শহরে একটা লোককেও দেখা যাচ্ছে না কেন।
হ্যাঁ, সব পুরুষই ফাঁসি দেখতে গেছে, জানাল মহিলা। আট বছর বয়েসের ছেলে আমার, সেও ওদের সাথে যাবার বায়না ধরে বসেছিল। আমি মার দিয়ে ঠেকিয়ে না রাখলে সে-ও যেত।
ফাঁসি? পুনরাবৃত্তি কৃরল লোকটা।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, ফাঁসি। আমার বিশ্বাস কথাটার মানে তুমি জানো, জবাব দিল সে। আজই ওর বিচার হয়েছে। ওকে ফাঁসি দিতে নিয়ে গেছে ওরা। লোকটা দেখতে চমৎকার, আমার কাছে ওকে খারাপ লোক বলে মনে হয়নি; তবে চেহারা দেখে অবশ্য সবসময় লোক চেনা যায় না। ওরা বলে সে নাকি ব্যাঙ্ক লুট করেছে, তার বসকেও খুন করেছে।
তাহলে তার ফাঁসিতে ঝোলাই উচিত, বলল স্ট্রেঞ্জার। তা ওই লোকটার নাম কি?
সে তো নিজেকে জেমস বলে পরিচয় দেয়, কিন্তু ওরা বলে সে নাকি আউটল বিদ্যুৎ এরফান।
কথাটা শুনে তার জিনের ওপর লোকটা সোজা হয়ে বসল। সে যখন আবার কথা বলল তখন তার স্বরটা তীক্ষ্ণ শোনাল।
এই ফাঁসিটা কোথায় দেয়া হচ্ছে?
হার্ভির ওখানে। এখান থেকে বেশি দূরে নয়। কাছাকাছি এত গাছ থাকতে ওরা যে ওখানে কেন গেল তা আমি জানি না।
পকেট থেকে একটা পাঁচ ডলারের নোট বের করে মহিলার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে লোকটা বলল, তোমার ছেলে যদি আমাকে পথ দেখিয়ে ওখানে নিয়ে যায় তবে আমি কথা দিতে পারি ওকে কোন ফাঁসি দেখতে হবে না।
ছোঁ মেরে টাকাটা নিয়ে হাঁক দিল মহিলা। জবাবে খালি পায়ে একটা ছোট বাচ্চা কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এলো।
রেব, তুমি এই ভদ্রলোককে হার্ভির বাড়ি যাওয়ার পথটা চিনিয়ে দেবে। যদি শুনি তুমি ফাঁসি দেখেছ তবে তোমার পিঠের চামড়া আমি তুলে নেব, সাবধান করল মহিলা।
ঝুঁকে বাচ্চাটাকে ঘোড়ার পিঠে তুলে নিল লোকটা। সবথেকে তাড়াতাড়ি পৌঁছা’নোর পথটা দেখাবে। সময় মত পৌঁছে দিলে তুমি এক ডলার পুরস্কার পাবে। কিন্তু যদি দেরি হয়ে যায়—
কথাটা শেষ করল না সে, কিন্তু ওর স্বর থেকে মধুরতা বিদায় নিয়েছে, এবং ওর তীক্ষ্ণ চোখেও কোন উষ্ণতা আর নেই।
*
পাগলা মার্টি নিজেকে এই নাটকের নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে নিলেও আসল নায়ক যে কে তা সবাই জানে। নিজের কোমরে হাত দুটো রেখে মার্টি এরফানের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছে। মুখে একটা অবজ্ঞার হাসি।
তোমার সাথে আমার বিরোধটার শোধ আমি আজ সুদে-আসলে তুলে নেব, জেমস, হিসহিসিয়ে বলল সে। তুমি ঝুলে পড়ার পর, এই চাবুক দিয়ে পিটিয়ে আমি তোমার সারা গায়ের চামড়া তুলে নেব!
তবু বার্টের সম্মতির অপেক্ষায় আছে সে। এই সময়ে গাছের ফাঁক গলে তিজন রাইডারকে বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে একজন চিৎকার করে উঠল, কারা যেন আসছে!
ওদের দিকে এক নজর তাকিয়েই একটা গালি দিল বার্ট।
ওকে ঝুলিয়ে দাও, আদেশ দিল সে।
খবরদার! বার্ট! হুঙ্কার দিয়ে উঠল ইয়র্কি। ওই দড়িতে প্রথম টানেই তুমি মরবে, একই সাথে মরবে মাটি!
ৰার্ট ঘুরে তাকিয়ে দেখল দুহাতে দুই পিস্তল নিয়ে পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে ওদের দুজনকেই কাভার করে আছে ইয়র্কি।
তুমি কে? এর মধ্যে তুমি কেন নাক গলাচ্ছ? গর্জে উঠল র্যাঞ্চার।
আমার নাম ইয়র্কি। আমি কেবল দেখতে চাই এখানে যেন কোন অন্যায় করা হয়। তোমরা দশ মিনিট পরেও ওকে ফাঁসি দিতে পারবে। কিন্তু তার আগে আমি জানতে চাই ওই লোকগুলো কি চায়। হয়ত ওরা ফাঁসিটা দেখতেই আসছে।
ইয়র্কিকে ওদের কেউ সামনা সামনি না দেখলেও ওর নামটা পশ্চিমের অনেকেই শুনেছে। এবং ব্যাঙ্ক থেকে জেমসকে গ্রেপ্তার করার সময়ে ওদের অনেকেই দেখেছে লোকটা কত ফাস্ট। বার্টও নতুন কোন উপায় ভেবে বের। করার আগেই রাইডার তিনজন এসে পৌঁছে গেল।
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা সময় মতই এসেছি! হাঁপাতে হাঁপাতে বলল এমারি। ক্লান্ত ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে মেয়েটাকে নামতে সাহাৰ্য্য করল সে।
এক চোখে প্যাঁচ লাগানো তৃতীয় লোকটার দিকে কেউ নজর দিচ্ছে না। সবাই জাজ এমারি আর মেয়েটাকেই দেখছে। লোকটা নিচে নেমে বোকার মত এদিক ওদিক দেখছে। সোজা আপটনের দিকে এগিয়ে গেল জাজ এমারি।
এর মানে কি, আপটন? কঠিন সুরে প্রশ্ন করল সে। তুমি একটা অবৈধ লিঞ্চিঙে সাহায্য করছ, এমন একটা দৃশ্য আমাকে নিজের চোখে দেখতে হবে। এটা আমি ভাবতেও পারিনি!
অবশ্যই না; আমি এখানে এসেছিলাম ঠেকাতে, জবাব দিল সে।
আর মিস্টার বার্ট? সে-ও কি প্রতিবাদ করেছে?
আপটনের মুখটা লাল হয়ে উঠল। আমাকে সে সব রকম সাহায্য করেছে, আড়ষ্ট ভাবে বলল সে।
এমনকি তোমাকে আসতে দেখে তার লোকজনকে জুলদি কাজ শেষ করার আদেশও দিয়েছে, বলে উঠল ফেনটন।
তাই নাকি! ক্ষিপ্ত স্বরে বলল এমারি।
আমি জানতাম না ওটা তুমি, মিথ্যা বলে বার্ট সেলুন মালিকের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আমি ভেবেছিলাম ওর র্যাঞ্চ থেকে একটা উদ্ধার পার্টি আসছে। আমরা কোন ঝামেলা চাইনি। যাই হোক, তোমার আসায় কোন কিছু বদলেছে বলে আমি মনে করি না। এখানে আমাদের যা খুশি করার মত লোকবল আছে।
ব্যাপারটা তোমার আবার ভেবে দেখা ভাল, কারণ আমার যদি ভুল না। হয়ে থাকে তবে অনেক লোক এখনই এসে পৌঁছবে যাদের অনেক কথাই বলার থাকবে।
অনেকগুলো ঘোড়ার দ্রুত ছুটে আসার শব্দ এখনই শোনা যাচ্ছে। বার বি মালিকের মুখটা এক্স টি আর লেজি এমের বারো-চোদ্দজন কঠিন লোককে ছুটে আসতে দেখে গম্ভীর হলো। কিন্তু সে ভাবছে যদি লড়তেই হয় তাহলে লোকবল তারও আছে। সে উদ্ধত ভাবে এমারির দিকে ফিরে বলল, বিচারের রায় হয়ে গেছে, এখন তোমার আর করার কি আছে?
হোপ আমার এলাকার মধ্যে পড়েছে, সুতরাং আমি নতুন ভাবে কেসটা বিচার করার আদেশ দিতে পারি, জবাব দিল সে।
আপটনের মুখটা আবার লাল হয়ে উঠল। অপরাধী প্রমাণিত ব্যক্তির পুনর্বিচার নেহাত রীতিবিরুদ্ধ কাজ হবে, যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবাদ জানাল সে।
ইতোমধ্যে বিপক্ষের লোকজন পৌঁছে গেছে। ওরা এরফানকে জীবিত দেখে উল্লাসে চিৎকার করছে।
ওর কথার জবাবে এমারি বলল, একজন নিরপরাধ লোককে ফাঁসি দেয়াটা অনেক বেশি রীতিবিরুদ্ধ হবে।
ফাঁসির সাজা প্রাপ্ত এই নাটকের নায়ক এরফান নির্বিকার চোখে দেখছে ঘটনা কোনদিকে গড়ায়। গলা থেকে ফসটা খুলে যে গাছে ওকে প্রায় ঝুলিয়ে দেয়ার জোগাড় করা হয়েছিল তাতেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। ওর, বন্ধুরা টিমের নিচু স্বরের নির্দেশে ঘোড়ার পিঠেই অর্ধচক্রাকারে মুহূর্তে অ্যাকশনে নামার জন্যে তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছে। বার্টের পক্ষের লোকজনও তৈরি লড়াই শুরু হওয়ার জন্যে, কেবল একটা স্ফুলিঙ্গই যথেষ্ট।
কেসটার পুনরায় বিচার কে করবে, আসামীর সহযোগী হিসেবে তুমি, নাকি নিরপেক্ষ জাজ আপটন? টিপ্পনী কেটে প্রশ্ন করল বার্ট।
তোমার ওই প্রশ্নের একটা মীমাংসা হয়ত আমি দিতে পারব জেন্টলমেন, শান্ত স্বরে বলল কেউ। এই লোকটাই শহরে ঢুকে কাউকে দেখতে না পেয়ে দরজায় দাঁড়ানো মহিলার সাহায্য নিয়েছিল।
এমারি ঘুরে তাকিয়ে বক্তাকে দেখল। চেহারা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার। গভর্নর ব্লেক! অবিশ্বাসের সাথে বলে উঠল সে, জীবনে আমি কাউকে দেখে এত খুশি হইনি! তুমি হঠাৎ বিনা নেটিসে-
শক্ত বেঁটে লোকটা কাঁধ উঁচাল। এমনি ঘুরতে ঘুরতে চলে এলাম, বলল সে। তারপর পকেট থেকে একটা ডলার বের করে বাচ্চাটার হাতে দিতেই রেব ঘোড়ার পিঠ থেকে পিছলে নেমে এক ছুটে বাড়ির পথ ধরল। গভর্নরের সাথে একই ঘোড়ায় চড়েছিল সে! কথাটা সবাইকে জানাতে হবে না? এই এলাকায় একটা ছোট বাচ্চার জন্যে এটা বিরাট একটা গর্বের বিষয়। ডলারটা তো ওর একটা ফাও পাওনা।
আপটনের দিকে চেয়ে ব্লেক নড় করল, যার চেহারা এখন ঠিক পনিরের মতই সাদা দেখাচ্ছে। এবার ব্ল্যাক বার্টের দিকে তাকাল ব্লেক।
এমারি পরিচয় করিয়ে দিল। বার বির মালিক, মিস্টার বার্ট।
ওর কথা আমি শুনেছি, অতি সাধারণ সুরে বলল ব্লেক, কিন্তু হাত মেলাবার জন্যে হাত বাড়াল না।
বার্টের রোদে পোড়া বাদামী রঙও কিছুটা ফেকাসে হলো। ঘটনার এই অস্বাভাবিক মোড়ের জন্যে সে মোটেও তৈরি ছিল না। প্রচণ্ড রাগে তার দম আটকে আসছে। কিন্তু বাধ্য হয়েই নিজেকে সংযত রাখতে হচ্ছে কারণ এখন। তার জোর খাটিয়ে কিছু করার উপায় নেই। উদ্ধতভাবে আপটন নিজেকে বাঁচিয়ে বিচার কিভাবে করেছে, তার বিবরণ শুনল।
বোঝার ভঙ্গিতে নড করল গভর্নর।
কেসটা আমি প্রয়োজন মনে করলে পুনরায় বিবেচনা করে দেখতে পারি, যদি কোন নতুন সাক্ষ্যপ্রমাণ তোমার কাছে থাকে, এমারি। সাধারণত এমন মনোরম পরিবেশে কোর্টের কাজ করার সুযোগ সচরাচর পাওয়া যায় না। হেঁটে এগিয়ে একটা উপড়ে পড়া গাছের গুড়ির ওপর বসল সে। আপাতত এটাই জাজের বেঞ্চের কাজ করবে। এবং ওই লেডিও এখানে বসবে। তবে জায়গা কম থাকায় বাকি সবার দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই।
বুদ্ধিদীপ্ত চোখের অধিকারী লোকটা ছোট হলেও সবার মনকে প্রভাবিত করে ফেলেছে। সবাই গভর্নরের সামনে কিছুটা গোল হয়ে দাড়াল। ওদের মধ্যে কিছু অসন্তুষ্ট চেহারাও যে দেখা যাচেছ না তা নয়। তবে কেউ সাহস করে প্রতিবাদ জানাল না। কেবল বার্ট নিচু স্বরে তার লোকজনকে আসামীর ওপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়ে বলল, ও এখনও নির্দোষ প্রমাণিত হয়নি।
ও যখন স্বেচ্ছায় জেলে ফেরত গেছিল আমার মনে হয় না সে পালাবে, মিস্টার বার্ট, মন্তব্য করল গভর্নর। কিন্তু সে আমার বাম পাশের ঘেরের ভিতর থাকবে। তুমি যদি ওর মুখোমুখি উল্টোপাশে দাঁড়াও তবে তুমি নিজেই ওর ওপর নজর রাখতে পারবে।
র্যাঞ্চার একটু ভুরু কুঁচকাল, কিন্তু যা বলা হয়েছে তাই করল; এরফান লক্ষ করল সে যেখানে দাঁড়িয়েছিল, ইয়র্কি ঠিক সেইখানে গিয়ে দাঁড়াল।
গভর্নর আপটনের দিকে ফিরে বলল, বন্দি যেসব প্রমাণ কোর্টে জমা দিয়েছিল সেগুলো আমি দেখতে চাই।
দুটো লেখা গভীর মনোযোগ দিয়ে মিলিয়ে দেখে ব্লেক বলল; এগুলো কি তোমার কাছে নকল বলে মনে হয়?
এতে মনে হওয়ার কি আছে-আমি জানি ওগুলো নকল, আপটন জবাব দিল।
খুব দক্ষ হাতের নকল বলতে হবে, ব্লেকের কথায় কুঁকড়ে গেল আপটন। এবার তোমার কথা শোনা যাক, এমারি।
জাজ খুব সংক্ষেপে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বার বির মালিকের সাথে সাক্ষাতের বিবরণ দিল।
ওই আউটলদের ওপর তোমার এই প্রভাব, থাকার কি কারণ? বার্টের দিকে তাকাল গভর্নর।
ওদের চীফ তার জীবন রক্ষার জন্যে আমার কাছে ঋণী।
তুমি বিফল হয়ে হোপে ফিরে ওদের উদ্ধার করার কোন ব্যবস্থা কেন নেওনি?
আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম-সেটাই ছিল শর্ত-কাউকে কথা দিলে সেটা আমি রক্ষা করি।
ওই ডলার বিলগুলো তুমি কোথায় পেলে? পরবর্তী প্রশ্ন এলো।
ওগুলো আমার কাছে কখনও ছিল না, জেমস মিথ্যা বলেছে যে সে ওগুলো আমার দেরাজে পেয়েছে, জবাব দিল বার্ট।
র্যাঞ্চার তার আত্মবিশ্বাস ধীরেধীরে ফিরে পাচ্ছে। অবজ্ঞায় তার ঠোঁট বাঁকা হয়ে উঠেছে। এমারির ইশারায় চোখে ঠুলি পরা লোকটা এগিয়ে এলো। কিন্তু টুপি পরেই আছে দেখে জাজ ওকে ধমক দিল। এই লোক এই টেরিটোরির গভর্নর, টুপি নামাও!
যদি গভর্নর আমাকে কিছুক্ষণের জন্যে দয়া করে ক্ষমা করে তাহলে ওটা আমি আরও কিছুক্ষণ মাথায় রাখতে চাই, বলল সে।
ব্লেক হাত নেড়ে এমারিকে থামিয়ে দিল। তাতে কিছু ক্ষতি নেই, তুমি তোমার যা বলার বলো, তবে কথাগুলো সত্যি হওয়া চাই।
লোকটার নিচু করে টেনে নামানো হ্যাট আর দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখে কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করছে বার্ট, আগে সে লোকটাকে ভাল করে খেয়াল করে দেখেনি; কিন্তু এখন ওর মনে হচ্ছে ওই লোকও ব্ল্যাক মাস্কেরই একজন সদস্য।
লোকটা তার কথা শুরু করল, আমি ব্যাঙ্ক ডাকাতি থেকেই আমার কথা শুরু করছি। যদিও এটাই আসল শুরু নয়, বলল সাক্ষী। নিচু স্বরে কথা বললেও গলা কর্কশ হওয়ায় সবাই ওর কথা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে। যে-দুজন ব্যাঙ্কে ঢুকেছিল তাদের মধ্যে আমি একজন। বাইরে যে ঘোড়া নিয়ে অপেক্ষা করছিল সে মারা গেছে, কথাটা শুনে স্বস্তির শ্বাস ফেলল বার্ট। তবে রাস্টনকে আমি গুলি করিনি।
তবে কে করেছে? প্রশ্ন করল গভর্নর।
আঙুল তুলে দেখাল সাক্ষী। বার্ট, জবাব দিল সে।
বেশ কিছু নাগরিকের মুখ থেকে অবাক হওয়ার শব্দ বেরিয়ে এলো, আবার অনেকে হেসেও উঠল। অভিযুক্ত লোকটার হাসিই সব থেকে জোরালো শোনাল।
অথচ ডাকাতির আধঘণ্টার মধ্যেই আমি শহরে পৌঁছে ডাকাত ধরার জন্যে পাস জোগাড় করায় ব্যস্ত ছিলাম, বলল সে।
হ্যাঁ, কারণ শহর ছেড়ে এক মাইল দূরে গিয়েই তুমি পোশাক আর ঘোড়া বদলে ঝোঁপের ভিতর দিয়ে লুকিয়ে শহরে ফিরে এসেছিলে। আমি জানি; কারণ, আমি তোমার পিছনেই ছিলাম, শান্ত স্বরে বলল লোকটা।
এটা একটা ডাহা মিথ্যে কথা, আমি তোমার
লোকটাকে তার কথা শেষ করতে দাও; তোমার কথা আমি পরে শুনব, বাট, ওকে বাধা দিয়ে বলল ব্লেক। খাতা এবং লেখা, যেগুলোকে বার্ট মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছিল সেগুলো ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে আবার বলল, এগুলো সম্পর্কে তুমি কি জানো?
ওগুলো বার্ট নিজে লিখেছে, কোন দ্বিধা না করে বলল সে। মারিওকে সে জেমসকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিল, কিন্তু ওকে অ্যামবুশ করে মারতে গিয়ে সে নিজেই মারা পড়েছে।
মারিও এখনও, বেঁচেই আছে। প্রতিবাদ করল বার্ট।
আমি নিজে ওকে গুলি খেয়ে মরতে দেখেছি, সাক্ষী বলে চলল অবিচল স্বরে। বার্টের আদেশেই মিস মাস্টারসনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই সময়েই জেমসের টাকা সরিয়ে ডাকাতির টাকা রেখে ওই টাকা বার্টকে দেয়া হয়, বার্ট নিজেই ব্ল্যাক মাস্ক দলের লীডার।
ভর্ৎসনার সুরে হাসল বার্ট।
তুমি নিজের বন্ধুকে বাঁচাবার জন্যে চোর এবং আউটল বলে স্বীকৃত ওই লোকটাকে সব শিখিয়ে পড়িয়ে এনেছ, এমারি।
জাজ তার জবাবটা গভর্নরকে দিল। আমি জানতাম না এই লোকটা কি বলবে। সে আমাদের পালাতে সাহায্য করার পর নিজেই আমাদের সাথে শহরে আসতে চাইল, কিন্তু এর কোন কারণ সে আমাদের বলেনি।
মাথা কঁকাল ব্লেক, কিন্তু ওর চোখ এবং চেহারা ঠাণ্ডা আর নির্বিকার থাকল। কারণ এখন সে একজন জাজ, বন্ধু বা শত্ৰু না বেছে তাকে নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করতে হবে।
তুমি মাস্টারসন সম্পর্কে কি জানো? প্রশ্ন করল সে।
অনেক কিছুই জানি, বলল লোকটা। আমি জানি তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সে একেবারে ভেঙে পড়েছিল। সব ভুলে থাকার জন্যে কিছু কঠিন লোকের সাথে ভিড়ে সে মদ খাওয়া আর জুয়া খেলা শুরু করল। একদিন ডেজার্ট এজে একটা স্টেজ ডাকাতির ঘটনা ঘটল। স্টেজের ড্রাইভার তাতে মারা পড়ল। হয়ত ওই ঘটনার কথা এখনও কিছু লোকের মনে আছে।
সবাই একযোগে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল।
ভাল, মাস্টারসন যাদের সাথে মিশত ওই কাজটা সেই দলের লোকেরাই করেছিল, বলে চলল লোকটা। ওই ঘটনার পরদিন সকালে মাস্টারসন যখন সেই এরফান তার মাতাল অবস্থা কাটিয়ে উঠল তখন সে শুনল ওই রেইডে সে কেবল অংশই নেয়নি, স্টেজ ড্রাইভারকেও সে-ই হত্যা করেছে। এই মর্মে লেখা একটা বিবৃতিও ওকে দেখানো হলো, যেটাতে ওদেরই দলের একজনের সই রয়েছে। যার কাছে সেই কাগজটা আছে সে তাকে অভয় দিল যে ওটা কোনদিন ব্যবহার করা হবে না, কেবল দলের নিরাপত্তার জন্য ওটা রাখা হয়েছে। তোমরা সবাই জানো যে ওই ডাকাত দল আর ধরা পড়েনি।
এই ঘটনার প্রচণ্ড ধাক্কা মাস্টারসনকে আবার সোজা পথে নিয়ে এলো। সে আবার তার র্যাঞ্চে ফিরে গেল বটে, কিন্তু ওই মর্মান্তিক অপরাধ করার অনুশোচনা তাকে কুরেকুরে খেতে শুরু করল। সেইসাথে যার কাছে ওই কাগজটা ছিল, সে-ও তাকে শুষে খেতে শুরু করল।
এতগুলো কথা বলে একটু থামল নোকটা। সবাই নীরব রয়েছে, কেবল পাখির ডাক আর মাঝেমাঝে মাটিতে ঘোড়ার পা ঠোকার শব্দ ছাড়া আর কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। বার্টের আগের সেই আত্মবিশ্বাস আর এখন নেই। অবিশ্বাসের চোখে সে লোকটার দিকে চেয়ে আছে। আবার বলতে শুরু করল সে।
প্রথম দিকে কেবল ছোট অঙ্কের টাকা দাবি করা হত। কিন্তু টাকার অঙ্ক ক্রমেই বাড়তে শুরু করল। শেষে যখন টাকা ফুরিয়ে গেল তখন সে গরু দাবি করা আরম্ভ করল। যখন মাস্টারসন বুঝল ওই বন্ধুবেশী জোঁকের নজর ওর মেয়ের ওপর পড়েছে, তাকে শেষ করে লোকটা তার মেয়েকে বিয়ে করে র্যাঞ্চটাও দখল করতে চাইছে তখন তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলল; একজন বিশ্বাসী আর যোগ্য লোকের হাতে র্যাঞ্চের ভার তুলে দিয়ে সে যদি অদৃশ্য হয় তাহলে আর কাউকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে না ওই লোক। এবং তা-ই সে করল।
এই ব্ল্যাকমেইলারের নাম কি? প্রশ্ন করল গভর্নর।
আবার আঙুল তুলে দেখিয়ে সে শান্ত স্বরে বলল, বার্ট।
র্যাঞ্চার আগেই টের পেয়ে জবাবের জন্যে তৈরি হয়েই ছিল! সে বলে উঠল, এমারি, তোমার বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারছি না, তুমি সত্যিই চমৎকার একটা চক্রান্ত কেঁদেছ। কিন্তু কথা বলা খুব সহজ। এতে কিছুই প্রমাণ হয় না। এবার সে প্যাচের দিকে ফিরল। তুমি ওর সম্পর্কে এত কিছু কিভাবে জানো? হয়ত তুমি নিজেই ওকে খুন করেছ।
আউটল এবার জবাব দিতে একটু সময় নিয়ে বলল, হ্যাঁ, এক অর্থে তোমার কথাটাই ঠিক। লেজি এমের লোকজনের মধ্যে উত্তজিত হয়ে ওঠার স্পষ্ট একটা ভাব দেখা গেল। পিছন দিকে মাথা হেলিয়ে হো হো করে হেসে উঠল লোকটা। ঠিক আছে, বয়েজ, ওর স্বর থেকে এখন কর্কশ ভাবটা পুরো বিদায় নিয়েছে। এত উত্তেজিত হয়ে ওঠার কোন কারণ নেই। তোমাদের বসকে আমি আবার ফিরিয়ে আনছি। একটানে হ্যাট খুলে চোখ থেকে ঠলি সরিয়ে ফেলে সে ডাকল, ফিল!
যাকে দেখার আশা সে একেবারেই ছেড়ে দিয়েছিল তাকেই চোখের সামনে দেখে নিজের চোখকেই ওর বিশ্বাস হচ্ছে না।
ড্যাডি! বলে বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল সে।
২৩.
ব্ল্যাক বার্টের কাছে জ্যাকের এভাবে ফিরে আসাটা একটা বিরাট ধাক্কা। পুরো খেলাতেই হেরে গেছে সে। সাজানো তাস দিয়ে খেলেও তাকে এভাবে হারতে হবে এটা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। পালাবার মতলবে সে গুটিগুটি পিছনে সরতে শুরু করল; কিন্তু কয়েকগজ মাত্র সরেছে এই সময়ে কে যেন বলল:
সবার থেকে বিদায় না নিয়ে এভাবে চলে যাওয়াটা কি ঠিক হবে, বার্ট? তোমাকে যে সবার থেকে বিদায় নিয়ে যেতে হবে।
বার্ট ঘুরে দেখল কথাটা ইয়র্কি বলেছে। ওর হাত দুটো টিলে ভাবে পিস্তলের বাঁটের কাছে ঝুলছে। ওর সরু চোখ আর শক্ত চোয়ালে কেবল হুমকিটা প্রকাশ পাচ্ছে।
গভর্নরের গলা শোনা গেল। আমার মনে হয় জ্যাকের সব কথা শেষ হয়নি, বলল সে।
একহাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সে শুরু করল। আর বেশি কিছু আমার বলার নেই-তবে যেটুকু আছে সেটা আমার কাছে অনেক। লেজি এম ছেড়ে বেরিয়ে আমি সোজা সিঙ্কে গেলাম। ওখানে আমি আগে থেকেই ঘোড়া, খাবার, আর জামা-কাপড় রেখে এসেছিলাম। একটা খরগোস মেরে তার রক্ত জিনে লাগিয়ে ঘোড়াটাকে ছেড়ে দিয়ে পোশাক বদলে কাপড়গুলো একটা ঝোপে লুকিয়ে রেখে অন্য ঘোড়া নিয়ে আমি রওনা হয়ে গেলাম।
রাইফেলটাও রাখলে কাপড়ের তলায়, শেরিফের দিকে চেয়ে মন্তব্য করল এরফান। টেলর চোখ নামিয়ে নিল লজ্জায়।
না, ওটা আমি ঘোড়ার পিঠে খাপেই রেখে দিয়েছিলা। আমি চেয়েছিলাম সবাই ভাবুক আমি মরে গেছি। ভাল কথা, তুমি আমার লেখা নোটগুলো পেয়েছিলে তো, জেমস?
হা, ওগুলোর জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
নিজের সম্পত্তি রক্ষা সবাই করতে চায়। শেডি ছিল ওখানের অস্থায়ী বস্, কিন্তু আসল বস্ ছিল বার্ট।
কাঁধ উঁচাল বার্ট। হ্যাঁ, আমি কি নিজের লোককে ধরিয়ে দিতে পাসি নিয়ে বেরিয়েছিলাম নাকি?
যাদের টিকিটাও তুমি খুঁজে পাওনি, রুষ্ট স্বরে মনে করিয়ে দিল ফেনটন। সেদিন পাসির সাথে আমিও ছিলাম।
ফাঁদে পড়া জন্তুর মত বার্ট গভর্নরের দিকে চাইল। সে বুঝতে পারছে হোপে তার রাজত্বের দিন শেষ।
তবু সে একটা শেষ চেষ্টা করল। এগুলো সব একগাদা মিছে কথা, ওই লইয়ার লোকটাকে জেমস লেজি এম গ্রাস করতে সাহায্য করছে, বলল বার্ট।
ওর কথায় হো হো করে হেসে উঠল জ্যাক। আসলেই তোমার মাথা মোটা, বার্ট, জেমস র্যাঞ্চ গ্রাস করার চেষ্টা করবে কেন, সে তো ধরতে গেলে এখনই ওটার মালিক। ওর কাছে র্যাঞ্চ মর্টগেজ রেখে, আমি তো তোমাকে ওর টাকাই এতদিন দিয়ে এসেছি। অবশ্য সে আমার ফোরম্যান হয়ে আসার সময়ে এটা আমি জানতাম না। আসলে বিরাট ধনী তোক জেমস, একটা সোনার খনিও আছে ওর।
নিষ্ঠুর হাসার চেষ্টা করল বার্ট। তুমি নিজেকে খুব চালাক, মনে করো, না? কিন্তু মনে রেখো তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবার মত যথেষ্ট প্রমাণ এখনও আমার হাতে আছে।
ওই লেখাটা যে মিথ্যে এর প্রমাণ এমারির কাছে আছে, বলল জ্যাক।
এমারির হাত থেকে কাগজটা নিয়ে পড়ে দেখে গভর্নর কঠিন দৃষ্টিতে বার্টের দিকে চাইল।
এটা মৃত্যু শয্যায় শুয়ে সই করা জনের একটা বিবৃতি। মরার আগে সে সব কথা স্বীকার করে গেছে। এতে সে বলে গেছে তার গুলিতেই স্টেজ ড্রাইভার। মারা গেছিল, কিন্তু তোমার প্ররোচনায় জ্যাক ওই রেইডে উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও সে ওটা লিখে দিতে বাধ্য হয়েছিল।
বার্ট কথাটাকে হেসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে শেষে ব্লেকের কঠিন দৃষ্টির সামনে মিইয়ে গেল। সে ওই গাছের ডালটার ওপর থেকে আর চোখ সরাতে পারছে না দেখে ওর মনের কথা বুঝেই এরফান বলল, অনেক বছর আগে তুমি ওই ডালেই নিরপরাধ এক বুড়োকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলে, কঠিন স্বরে বলল এরফান।
নিজের শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে চেটে ভেজাবার চেষ্টা করে বার্ট বলল, এর কোন প্রমাণ নেই।
হেনডনকে দেখিয়ে এরফান বলল, ওই লোকটাও তখন তোমার সাথে ছিল। কিন্তু সে প্রতিবাদ করেছিল বলে ওকে মাফ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তোমার সাথে সেদিন আর যারা ছিল তুমি জানো তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে, বার্ট।
নির্ভীক হয়েও একটা অজানা ভয়ে শিউরে উঠল বার্ট। ওকে আমি বরখাস্ত করেছি-সুতরাং সে যা খুশি বলতে পরে, যুক্তি দেখাল। তাছাড়া এটা কেবল তার কথার বিরুদ্ধে আমার কথা।
না, ওই ঘটনার আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী আছে।
লরিকে এরফানের ইশারায় এগিয়ে আসতে দেখে বার্টের চোখ বিস্ময়ে বিস্ফারিত হলো। ও? সে তো তখন ছোট বাচ্চা ছিল।
এখন সে যা চেয়েছিল তার সবই পাবে এই ছেলেটা। বিদ্বেষে আর রাগে খেপে উঠল বার্ট। তখনই ওকে আমার শেষ করে দেয়া উচিত ছিল, বলে ক্ষিপ্র হাতে পিস্তল বের করে সে লরির বুকে তাক করল। ওদিকে শঙ্কায় চিৎকার করে উঠল ফিল। কিন্তু সে ট্রিগার টেপার আগেই এরফানের হাত থেকে একটা পিস্তল গর্জে উঠল, শূন্যে হাত ছুড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল শিথিল বার্ট।
এরফান একটু সামনে ঝুঁকে শত্রুকে এক নজর দেখে ইয়র্কির পিস্তল ওকে ফেরত দিয়ে দিল। অপ্রত্যাশিত ঘটনার পর নীরবতার মাঝে বার বির একটা লোক ঝুঁকে দেহটা পরীক্ষা করে দেখল।
ঠিক দুই চোখের মাঝখানে, তাও আরেকজনের খাপ থেকে একটা পিস্তল তুলে নিয়ে! বিদ্যুৎ এরফান? তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বসকে মরণে টেনেছিল।
*
ওই সন্ধ্যাতেই এরফান যখন তার জিনিসিপত্র গোছাচ্ছে তখন একটা মুখ তার খোলা দরজা দিয়ে উঁকি দিল।
বাবা জিজ্ঞেস করেছে তুমি কি আজ আমাদের সাথে সাপার খাবে?
ফোরম্যান মুখ তুলে চাইল। চেহারাটা গম্ভীর, কিন্তু ওর চোখের কোণে কৌতুকের হাসি।
আমি কৃতজ্ঞ, কিন্তু আজকের এই শেষ রাতে আমি আমাদের আউটফিটের সাথেই খেতে চাই, জবাব দিল সে।
মেয়েটা খুশিতে হেসে উঠল। আমি জিতেছি, বাইরে দাঁড়ানো কাউকে চিৎকার করে জানাল সে। লরির সাথে আমি দশ ডলার বাজি ধরেছিলাম। আমি জানতাম তুমি ঠিক এই কথাই বলবে।
এরফান দরজার সামনে এসে লরিকে খুঁটিয়ে দেখে মন্তব্য করল, আমি জানি না কেন, আমার তো ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও হেরেই যেন বেশি খুশি হয়েছে!
ফিলের মুখটা গোলাপী হলো। কিছুকিছু সময় আছে যখন আমার তোমাকে মোটেও ভাল লাগে না। মুখে ওকথা বললেও ওর চেহারা কিন্তু অন্য কথা বলছে।
অথচ দেখো আমিই তোমাকে বাজিটা জিতিয়ে দিলাম।
ওহ, তুমি একটা সাংঘাতিক বাজে লোক। লরি, তুমি ওকে জলদি নিয়ে এসো, দেরি করলে ড্যানিয়েল খেপে যাবে। সে আস্ত একজন গভর্নরকে খাওয়াবার সুযোগ কোনদিন পায়নি, তাই ওরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খুব তটস্থ হয়ে আছে।
মেয়েটা লাফাতে লাফাতে আগে আগে চলল, পেছনে ওরা ওকে ধীর গতিতে অনুসরণ করল।
এরফান, বলল লরি, ওর গলার স্বর আবেগে কাঁপছে, আমি ওই মেয়ের যোগ্য নই।
কথাটাকে হালকা করার উদ্দেশ্যে জেসাপ হেসে বলল, তুমি কি মনে করেছ আমাকে তুমি কোন নতুন খবর শোনাচ্ছ?
খাবারটা লেজি এমের জীবনে সবথেকে সুস্বাদু খাবার ছিল। খাওয়ার শেষে জাজ এমারি গভর্নরকে প্রশ্ন করল, আচ্ছা, তোমার হঠাৎ এখানে এসে হাজির হওয়াটা কি সত্যিই দৈবাৎ?
শক্ত বেঁটে লোকটার চোখ দুষ্টুমির হাসিতে ভরে উঠল। তোমার মত ঝানু পোকার খেলোয়াড়কে ধোকা দেয়া কঠিন, জাজ, জাবাব দিল সে। হয়ত এদিকে কোন মরিয়া আউটলর খবর আমার কানে এসেছিল- এরফানের দিকে চেয়ে হাসল সে-কিংবা হয়ত বার্টের কুকীর্তির খবর আশাতীত ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ওই বিষয়ে এর চেয়ে বেশি আর কিছুই বলল না সে।
খাবার শেষে গভর্নর উঠে দাঁড়াল। বলল, এখানে আমার কিছু বক্তব্য আছে। অবশ্য এটা আমার বিচার শেষ হওয়ার পরেই সব শহরবাসীর সামনে ঘোষণা করা উচিত ছিল, তবে আমার মনে হয় যেহেতু এখানে শহরের সব গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত আছে, এটা এখন বলাও অযৌক্তিক হবে না। আমি আমার বিচারে এই রায় দিচ্ছি যে, যেহেতু বার্টের কোন ওয়ারিস নেই, তাই আমি ওর র্যাঞ্চ এবং সব সম্পত্তি ওর চক্রান্তের প্রধান শিকার হওয়ায় এই স্টেটের গভর্নর হিসেবে লরিকেই দিয়ে যাচ্ছি। কথা শেষে প্রচণ্ড হর্ষধ্বনি আর করতালির মাধ্যমে সবাই তাকে সমর্থন করল। এবার সে জাজ এমারির দিকে চেয়ে বলল, এই সব বাজেয়াপ্ত কাগজপত্র ঠিকঠাক করে আমাকে দিয়ে সই করিয়ে নেয়ার দায়িত্ব আমি তোমার ওপর ছেড়ে দিলাম, এমারি, তবে এরফান যখন এখানে থাকতে পারছে না, তখন আমি লরিকে যে বাঁচিয়েছে তাকেই তার ফোরম্যান করা, এবং জাজ, জ্যাক আর ফিলকে যে বঁচিয়েছে, সেই অভিজ্ঞ লোককেই এই র্যাঞ্চের প্রধান নির্বাচিত করার পরামর্শ দিচ্ছি। বলেই সে তার বক্তব্য শেষ করল। হর্ষধ্বনি আর সমর্থনের মধ্যে তার বক্তর শেষ হলো।
পরে সবার অলক্ষে নিরিবিলি বসে লরি আর ফিল দেখল জেমস তার কামরার বাতি জ্বালিয়ে কামরার বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরাল। একটা ধূসর ঘোড়া পায়ে পায়ে এগিয়ে ওর পায়ে নাক ঘষল। ওকে আদর করে দিয়ে এরফান বলল, কালই আমরা বাড়ির পথে রওনা হব, গ্রে, রাকা আমার আর ওই ইয়র্কির পথ চেয়ে বসে আছে।
*
কয়েকদিন পরেই লরি আর ফিলের নামে একটা বড় চিঠি এলো। তার ভিতরে রয়েছে কতগুলো দলিল আর একটা ছোট্ট চিঠি। শুভ বিয়েতে অংশ নিতে পারলাম না-আমার তরফ থেকে তোমাদের বিয়ের উপহার হিসেবে এই মর্টগেজগুলো তোমরা উপহার নিলে আমি খুশি হব।
***
Leave a Reply