সিডনি সেলডন রচনাসমগ্র ১ – প্রথম খণ্ড
ভাষান্তর – পৃথ্বীরাজ সেন
প্রথম প্রকাশ – কলকাতা বইমেলা, জানুয়ারি ২০০৮
.
ভূমিকা
যদি প্রশ্ন করা হয় এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীর সব থেকে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক কে, তাহলে অনেকে হয়তো হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে. কে. রাউলিং-এর নাম বলবেন। একথা অস্বীকার করার বিন্দুমাত্র উপায় নেই যে, এখন তিনিই হলেন কিংবদন্তীর মহানায়িকা। তবে তার পাশাপাশি আর একজন লেখকের কথা বলা উচিত, তিনি হলেন সিডনি সেলডন।
অনেকে সেলডনকে মহৎ সাহিত্যিকের পর্যায়ে উন্নীত করতে রাজী হন না। কারণ তার অধিকাংশ লেখনীর বিষয় হল তীব্র সেক্স ও দুরন্ত সাসপেন্স। আবার অনেকে বলেন, তিনি হলেন চলমান জীবনের এক বাস্তব কথাকার। যে সাহিত্যে সমকালীন সমাজের প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় না, তাকে আমরা কি সত্যিকারের সাহিত্য বলতে পারি?
যে যুগের মানুষ বৈদ্যুতিন মাধ্যমকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে, তাকেই বিনোদনের একমাত্র উপায় হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেই যুগের মানুষ যে এখনও বই পড়ছে, তার অন্তরালে আছেন সিডনি সেলডন এবং জে. কে. রাউলিং-এর মতো সাহিত্যিকরা।
সেলডন মূলত একজন সফল চিত্রনাট্য রচয়িতা। তাঁর লেখা অসংখ্য চিত্রনাট্য হলিউডে ব্লকবাস্টার সিনেমা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এরই ফাঁকে ফাঁকে নেহাত খেলার ছলে কলম ধরে তিনি যে ১৮টি উপন্যাস লিখেছেন, তাদের আমরা বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে গণ্য করতে পারি। সেলডনের একজন মুগ্ধ পাঠক হিসেবে আমি দীর্ঘদিন ধরে মনের ভেতর একটি বাসনা পোষণ করেছিলাম। তা হল, সেলডনের সমগ্র রচনাবলীকে অবিকৃত অবস্থায় পাঠক-পাঠিকার হাতে তুলে দেওয়া। অবশেষে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন কামিনী প্রকাশালয়ের কর্ণধার শ্রী শ্যামাপদ সরকার, যাঁর সঙ্গে সখ্যতার সম্পর্ক আমার দীর্ঘ তিন দশকের, বাংলা অনুবাদ সাহিত্যে যিনি নীরব বিস্ফোরণ সৃষ্টি করেছেন। আমার সৌভাগ্য যে, তার অধিকাংশ গ্রন্থের সাথে আমার নাম যুক্ত আছে। তার প্রকাশিত এক-একটি বইয়ের জনপ্রিয়তা শিখরস্পর্শী। তাতেই প্রমাণিত হয় যে, পাঠক-পাঠিকারা সানন্দে এই সব গ্রন্থকে গ্রহণ করেছেন।
এবছর বইমেলাতে আমরা সিডনি সেলডনের ১৮টি উপন্যাস দুটি খণ্ডে পরিবেশনের প্রয়াসে ব্রতী হয়েছি। প্রথম খণ্ডে আছে তার এগারোটি উপন্যাস, যার মধ্যে প্রথমেই তার সব থেকে আলোচিত এবং বিতর্কিত নেকেড ফেস-এর নাম করতে হয়। এছাড়া স্ট্রেঞ্জার ইন দ্য মিরর, ব্লাডলাইন, রেজ অফ এঞ্জেল, টেল মী ইয়োর ড্রিমস প্রভৃতি উপন্যাস এই খণ্ডে স্থান পেয়েছে। সিডনি সেলডনের লেখনীর সব থেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য হল তীব্র গতিময়তা। মনে হয় তিনি যেন জ্যাকপটের ছুটন্ত ঘোড়া, সোনার পদকের সন্ধানে ছুটে চলেছেন। তাঁর লেখা প্রতিটি উপন্যাসে সেই গতিময়তার আভাস আছে।
কথামুখ এখানেই শেষ হোক। যবনিকা উত্তোলিত হয়েছে, আসুন আমরা সিডনি সেলডনের সেই রহস্যময় জগতে প্রবেশের ছাড়পত্র গ্রহণ করি। সিডনি সেলডন রচনাসমগ্র-র প্রথম খণ্ডটি তুলে দেওয়া হল আমার প্রিয় বন্ধু সাংবাদিক ডাঃ মসিবুর রহমানের হাতে। আমার চলার পথে যার উৎসাহকে আমি পাথেয় করে রেখে দিয়েছি। সকলকে বইমেলার শুভেচ্ছা জানিয়ে।
পৃথ্বীরাজ সেন
Leave a Reply