সমরেশ বসু রচনাবলী ৭ (সপ্তম খণ্ড)
সম্পাদনা – সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়
আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ৭০০০০৯
প্রথম সংস্করণ ডিসেম্বর ২০০২
পথসন্ধিতে সমরেশ বসু
সমরেশ বসুর সাহিত্য জীবনে একটা নিগূঢ় নিয়তি আমাকে অন্তত সর্বদাই ভাবায়। যেখানে তিনি যন্ত্রণায় অস্থির, যেখানে তিনি আক্রমণাত্মক তিনি আলোচিত হয়ে আছেন প্রধানত সেই সব লেখার জন্য। তার স্বীকারোক্তি, বিবর, প্রজাপতি, পাতক যতটা না শৈল্পিক কারণে বৃত, সমাদৃত ও গৃহীত তার থেকে ঢের বেশি তারা সাহিত্যের কারণে তুলকালাম করেছে। আমি বইগুলিকে মোটেই কটাক্ষ করছি না, আমি বইগুলি সম্বন্ধে পাঠকমণ্ডলীর অসুস্থ কৌতূহলকে কটাক্ষ করছি। এই জাতীয় কৌতূহলবাহুল্য শান্ত সাহিত্য বিচারের যে পরিপন্থী তার প্রমাণস্বরূপ একটি প্রসঙ্গ এখানে উত্থাপন করছি। প্রজাপতি বা পাতকের খোঁজ যতজন পাঠক করেন, বাথান উপন্যাসটির খোঁজ কি ততজন পাঠক করেন? অথচ লেখক নিজে বাথানকে কতটা গুরুত্ব দিতেন তা আমাদের অজানা থাকার কথা নয়। দিব্যেন্দু পালিতের সঙ্গে আলাপচারির কালে একাধিকবার বাথান এবং টানাপোড়েনের কথা উঠেছে। লেখকের কাছে তার সব বইই আপন আপন স্বাতন্ত্রে বিশিষ্ট–তবু তার মধ্যে দু-চারখানি বইয়ের আলাদা স্থান থাকে তার মনের মধ্যে। কথাটা অবশ্যই কিন্তু এই নয় যে অন্য বইগুলি অযত্নসিদ্ধ আর আলাদা মাপের বইগুলি লেখকের কাছে দাবি করেছিল অন্যতর মনোযোগ, অন্যতর শ্রম। কথাটা বরঞ্চ এই যে গঙ্গা বাথান বা টানাপোড়েন লেখকের সেই জাতীয় রচনা যার জন্য লেখকের দীর্ঘ প্রতীক্ষা লালিত হয়েছে, তা সৃষ্টিরসে জারিত হয়েছে–তাদের অন্তর্লোকে ধারণ করার দায় তাঁকে বহন করতে হয়েছে। শুধু তাই নয় এগুলি হচ্ছে সমরেশের সেই জাতীয় লেখা যেগুলিতে সমরেশ সামাজিক-রাজনৈতিক বা নৈতিক সমস্যার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে পড়েছেন জীবনের মুক্তাঙ্গনে। সেখানে জীবনের অনন্যতাই অনুসন্ধেয়–বিষয়গত সেই অনন্যতাতেই উপন্যাসগুলির অসাধারণত্ব। লেখকও যেন সেই অজানিতপূর্ব জীবন-জীবিকার অদ্বয় বিন্যাসের স্বরূপ সন্ধানে তন্নিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। অশোকরঞ্জন সেনগুপ্ত একটা সরলীকৃত ব্যাখ্যা দেন, ‘বিষয়ান্তরের ভাবনা নিয়েই তার (সমরেশের) বাথান লেখার বাসনা হয়।‘ একথা বললে যেন মনে হয় বাথান লেখার পিছনে আছে হাওয়াবদলের বাসনা। কিন্তু অশোকরঞ্জনের কথা থেকেই আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাই। অশোকরঞ্জন বলছেন—’বাথান নিয়ে লেখার কথা প্রথম উত্থাপন করেন সোমনাথ ভট্টাচার্য। সময়টা সম্ভবত উনসত্তর সাল হবে। নদিয়া জেলার আঁটলে গ্রামে একটা বাথান এসেছে। সমরেশদার সঙ্গে আমি এবং সোমনাথ সেখানে গিয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে সমরেশদা কথাবার্তা চালান।‘ তারপর চুরাশি সাল পর্যন্ত আর কোনও সাড়া শব্দ নেই। তার মানে অবশ্যই এই নয় যে বিষয়টা সম্বন্ধে নিস্পৃহ হয়ে গিয়েছিলেন। লিখবেন কি লিখবেন না ঠিক করতে পারছিলেন না এমনটা নয়। তিনি বিষয়টাকে মনে মনে বিন্যস্ত করছিলেন। কয়েক বছর পরে তিনি তার অভিযান সঙ্গী সোমনাথকে জিজ্ঞাসা করেন সোমনাথ বিষয়টি নিয়ে লিখবেন কিনা–সোমনাথ অসম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং তাঁর সংগৃহীত ম্যাপ ও কিছু অনুপুঙ্খ সমরেশকে দিয়ে দেন। কিন্তু এবার যা দাঁড়াল তা সম্পূর্ণভাবে স্বতন্ত্র রূপে সমরেশের নিজস্ব জীবনভাষ্য। তার অনুভূতি, তার চিন্তন ও সবকিছুর অভিব্যক্তি একান্ত হয়ে উঠল সমরেশসম্ভব রচনা। তথ্যবাহুল্য অতিক্রম করে সমরেশ পৌঁছে গেলেন এক জীবন্ত জীবনের প্রত্যক্ষতায়। একথায় কোনও ভুল নেই যে গঙ্গা বাথান টানাপোড়েন এই তিনখানি উপন্যাসের মধ্যে একটা নাতিদুর্লক্ষ্য মিল আছে তাদের অন্তর্বর্তী প্রভূত পার্থক্য সত্ত্বেও সে মিলটা হল বাস্তবের মাটি থেকে পা–তুলে দূর বা দূরেরও পরে দূর দিগন্তের পারে দৃষ্টিকে মেলে ধরায়। বিলাস এবং গদাধর সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। কিন্তু ওয়াইড স্পেসের স্বপ্ন দুজনেই দেখেছে। বিলাসের সমুদ্র এবং গদাধরের মাঠ নিহিতার্থ এক। আনুরিয়ার বিশাল মাঠ সুজাদিয়ার মাঠ যেন না-দেখা সমুদ্রের বিকল্প। কালো মোষের সঙ্গে কালো কালো মেঘের উপমায় আছে গতির মোটিফ। গঙ্গার মতো বাথানও তো যাত্রা। সে জন্যই গঙ্গা ও বাথানকে সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা বলা যাবে না। দুটোই জীবনরস সমৃদ্ধ শিল্পকর্ম। বিপর্যস্ত, অশ্লীল, দিগন্ত ইত্যাদি উপন্যাসে বিষয় মধ্যবিত্ত জীবন। বিশেষ করে নাগরিক মধ্যবিত্ত জীবনের ব্যক্তিসম্পর্ক, তার প্রতিক্রিয়া, অন্বয় অনন্বয়ের সংকট এমনকী বিপন্নতা ও অসহায়তা কম বেশি এই জাতীয় উপন্যাসের আসল কথা। প্রসঙ্গত আমরা তার বিজন বির্ভুই উপন্যাসটির কথা একটু আলাদা করে তুলতে পারি। বিজন বিভুঁই নামটির মধ্যে আছে একটা সর্বৈব সংকটের আভাস। আজকের প্রেক্ষিতে আভার গল্প যেন আরও সত্য বলে মনে হয়। এ কি কলকাতা? কোন কলকাতা? পিছনে কি শুকনো পাতায় কারো পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে? আভা দেখবে না। ভোরের পাতা ঝরা বাতাসে, এই ত্রাসপুরীর ওপর দিয়ে ও হেঁটে যাবে। যতক্ষণ পারে। এ কি পর ভূমি? কী পরিচয় এই দেশের? যেন মনে হয় এক রুদ্ধশ্বাস রিক্ত বিজন বির্ভুই। আততায়ীর হাত থেকে সপুত্ৰক বাঁচার জন্য আজ ছুটছে। কে বাঁচাবে তাকে, যে যার ব্যক্তিগত কেন্দ্রে নিরাপদে অবস্থিত। বিপন্ন আভার কেউ নেই–থানা নেই, কোর্ট নেই, সাংবাদিকেরা নেই, সে কোথায় যাবে? কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে? সমরেশ আমাকে গল্পটি শোনানোর সময় গল্পের নাম ঠিক করেছিল পরভূমি, আমি তার লেখা থেকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করি বিজন বির্ভুই শব্দবন্ধটির দিকে। বিজন বির্ভুই শব্দবন্ধটি সমরেশের কাছে বেশি ব্যঞ্জনাগর্ভ বলে মনে হয়েছিল।
মানুষ শক্তির উৎস ও মহাকালের রথের ঘোড়া উপন্যাস দুটি রাজনৈতিক উপন্যাস। উপন্যাসে যখন রাজনৈতিক তত্ত্ব এবং ব্যক্তিপাত্রের সম্বন্ধ সংঘর্ষ–তত্ত্বের অভিঘাতে ব্যক্তিপাত্রের জ্বলন ফুটন প্রাধান্য পায়, ব্যক্তির উদ্বেগ আবৃত হয় রাজনৈতিক তত্ত্বের পাত্রে–পরিশেষে পাত্রটা ফেটে যায় অথবা ব্যক্তি সেই তত্ত্বের আগুনে স্বমহিম হয়ে ওঠে তখনই তা রাজনৈতিক উপন্যাস হিসাবে সার্থক। মানুষ শক্তির উৎস সেই রাজনৈতিক পটভূমিতে লেখা যখন ব্যক্তির উদ্বেগ ঘন হয়ে উঠেছে সমাজকে বদলে দেবার, শক্তির উৎস কোথায় তার অন্বেষায়। অব্যবহিত পূর্বে ঘটে গেছে আন্তর্জাতিক কম্যুনিস্ট শিবিরের বিভাজন। একদা পার্টি সদস্য সমরেশকেও ভাবতে হচ্ছে সেই মত বিপর্যয়ের গতি প্রকৃতির স্বরূপ। এই উপন্যাসে সমরেশের নিজস্ব তত্ত্বই শেষ পর্যন্ত উদভাসিত হয়েছে–বিশ্বাস রাখতে হবে মানুষে। মানুষের অদৃষ্ট মানুষই গড়ে তুলবে। অংশুমালী কবিতার জগতের মানুষ। তার কবি-ব্যক্তিত্বের দর্পণে মানুষের সংকট প্রতিফলিত হয়েছে এভাবে–যে কোনও তন্ত্রের জন্যই হোক না মানুষ মৌমাছিতন্ত্রে তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বিসর্জন দিতে পারে না। সে জেনেছে চরম ব্যবস্থা বলে জগতে কিছু থাকতে পারে না। তাই তার বিদ্রোহ বারে বারে। ইতিহাসই একথা বলে। কোনও কারণেই আপোস চলে না স্বাধীনতা নিয়ে।
কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন সমরেশের এ জাতীয় রচনা–বিশেষ করে মহাকালের রথের ঘোড়া প্রতিবিপ্লবী রচনা। আমাদের বক্তব্য এই সব সমালোচকেরা তো ঘরে বাইরে ও চার অধ্যায়ও প্রতিবিপ্লবী রচনা বলে ঘোষণা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য এই উপন্যাস তিনটিতে ভারতের বুকে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তশ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষণের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। প্রতিবিপ্লবী কিনা সে বিচার বিপ্লবীরা করবেন–কিন্তু শিল্পবিচার শিল্পরসজ্ঞের কাজ। অপর একজন সমালোচক যথেষ্ট অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে চার অধ্যায় ও মহাকালের রথের ঘোড়ার সমাপ্তি অংশের তুলনা করেছেন। দুটি উপন্যাসেই সমাপ্তিতে ঘুমের প্রসঙ্গ আছে। কিন্তু রুহিতনে কি শুধুই ঘুম? রুহিতন কাত হয়ে মাথাটা রাখল বন্দুকের জোড়া ব্যারেলের ওপর। ‘নতুন ছকে জীবনের উত্তরণ।‘ ব্যর্থতা বোধ থেকে, বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণা থেকে সে এবার মুক্তি চাইছে। বিপ্লববিষয়ী উপন্যাসে, তা সে টুর্গেনিভের পিতাপুত্র উপন্যাসেই হোক অথবা শরৎচন্দ্রের পথের দাবী উপন্যাসেই হোক শেষ অবধি কোনও সমাধান সূত্র থাকে না। নিরন্তর অন্বেষা–ভিতরে এবং বাইরে একজন বিপ্লবীর কাজ। বিজিত দত্ত বলেছেন এ সময় গান্ধীবাদ সমরেশের চেতনায় সক্রিয় ছিল। থাকতেই পারে। সমরেশও একজন ব্যক্তি। সেও কিছু খুঁজছে। কিন্তু সে আর রুহিতন এক নয়। এবং আবার আমাদের ভুল হবে যদি আমরা রুহিতন আর বসাই টুডুকে পাশাপাশি রাখতে যাই। রুহিতন যেন বিষাদান্ত নাটকের পঞ্চমাঙ্কের নায়ক। তার প্রথম চার অঙ্ক, অর্থাৎ তার পটভূমিকা সম্বন্ধে লেখক আমাদের ততটা অবহিত করেননি। সেই জন্য বসাই টুডুর পূর্ণাঙ্গতা রুহিতনে নেই। লেখক এখানে শুধু পরাজিত নায়কের প্রবল একাকিত্বের বিষাদের সঙ্গী।
সে তুলনায় পুনর্যাত্রা পরিণততর শিল্পসৃষ্টি। বোঝা যায় মহাকালের রথের ঘোড়া লিখে লেখক শান্তি পাননি। যেন অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে গেল। এই বইটির নামকরণটিও সেই বোধের দিকে ইঙ্গিত করে পুনর্যাত্রা। তিনি কি বলতে চাইছিলেন অসমাপ্ত অভিযানকে নতুন করে সংগঠিত করতে হবে? শতাব্দীতে শতাব্দীতে এমনটাই ঘটেছে। তাই এই পুনর্যাত্রা–এ তো নবীকরণ নয়। পার্টি বনাম ব্যক্তি–রবীন্দ্রনাথের চার অধ্যায় থেকে যে প্রশ্ন উঠেছে, এমনকী শরৎচন্দ্রের পথের দাবীতেও যে প্রশ্ন অনুচ্চারিত নয়–সমরেশের ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতার সূত্রে প্রাসঙ্গিক হয়ে তার নানা লেখায় সে প্রশ্ন বারেবারে দেখা দিয়েছে। স্বীকারোক্তি অপদার্থ মহাকালের রথের ঘোড়া এবং পুনর্যাত্রা ও আরও কোনও কোনও লেখা এক্ষেত্রে আমাদের মনে পড়বে। ব্যক্তি এবং পার্টির সংঘর্ষের ভিতর দিয়ে গল্পের কথক নিজের নিয়তির মুখোমুখি। পার্টি সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবার পরে তাপস বুঝতে পারে অবলুপ্তি অনিবার্য। এমন সময়ে তার হাতে এল তার পূর্বপুরুষের লেখা মধ্যযুগীয় দিনপঞ্জিতে ধৃত ইতিহাসের নানা মোড় ফেরার বিবরণ। পুনর্যাত্রায় একটা তত্ত্ব আছে–ব্যক্তি নিজের ভবিতব্যতা নিজেই নির্মাণ করে। এই সূত্রে বিজিত দত্তের ‘সওদাগরশিব: সমরেশ বসুর পুনর্যাত্রা’ (সমরেশ বসু স্মরণ সমীক্ষণ–মুখ্য সম্পাদক সত্যজিৎ চৌধুরী) প্রবন্ধ থেকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ উদ্ধৃতির যোগ্য—’পাণ্ডুলিপিটি অনুবাদ করবার মুখে তাপসের মনে হল ‘এখন এ কাজটা ওর কাছে অমোঘ, নিয়তির নির্দেশের মতো।‘ আবার সেই নিয়তি প্রসঙ্গ। কিন্তু এবারের উচ্চারণে তাপস যেন নিয়তির একটা মানে করতে চায়।‘ আসন্ন অবসানের মুখোমুখি হয়ে পাণ্ডুলিপির অনুবাদ করতে করতে তাপস জানতে পারে বোধ হয় সংঘ নয় শক্তি নয়, বিবর্ণ বৌদ্ধিকতায় নয়–মানুষের কাছে সবথেকে বড় তার স্বাধীনতা। শিকল ভেঁড়া হাতের খোঁজে মানুষের যাত্রা। ইতিহাসের শতকে শতকে তার পুনর্যাত্রা– অন্তবিহীন রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অভিব্যক্ত হয় চির অতৃপ্ত জীবন-পিপাসা। সমরেশ একদা পার্টি সদস্য। কিন্তু একথা যেন আমরা না ভাবি তিনি পার্টি বিরোধিতায় মেতে উঠলেন। বরঞ্চ আমাদের দেখার কথা তার তথাকথিত গান্ধী ভাবনায় গোলমালটা কোনখানে। পাটি সদস্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অলৌকিকে অপ্রাকৃতে বিশ্বাসী হয়েছিলেন। কিন্তু তা নিয়ে কোনও কথা ওঠে না। কারণ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় এই ব্যক্তিগত ভাবান্তর কোনও ছায়া ফেলেনি। সুবোধ ঘোষ মার্কসবাদ থেকে দূরে সরে গিয়ে কম্যুনিস্ট পার্টি বিরোধী রচনা লিখেছেন। সমরেশের ব্যক্তি জীবনে কোথাও গান্ধীজির ভাবাদর্শের প্রতিফলন কেউ লক্ষ করেননি। তবে বোধহয় সে ব্যাপারটা তার বৌদ্ধিক স্তরেই আবদ্ধ ছিল। লেখকদের তত্ত্বান্তর লেখকদের রচনার আলোকেই বিচার্য। সে প্রেক্ষাপটে পুনর্যাত্রাকে স্থাপন। করলে আমাদের কাছে অনেক কিছু অস্পষ্ট থেকে যায়।
বর্তমান সংকলনে উপন্যাসের চাপে ছোটগল্প সংখ্যায় সংকুচিত হয়েছে। পরবর্তী সংকলনে ছোটগল্প আবার তার সংখ্যাগত অধিকার ফিরে পাবে। বলা দরকার তার অনেক ছোটগল্প অগ্রন্থিত রয়ে গেছে। বর্তমান সংকলনে যে ছোটগল্পগুলি আছে সেগুলি সমরেশের বিচিত্র বিষয় সন্ধানী ক্ষমতার পরিচয়ই যে শুধু বহন করছে তাই নয়, এই ছোট গল্পগুলির একদিকে প্রতিফলিত হয়েছে লেখকের সহানুভূতি, তাঁর সর্বস্তরের জীবন সম্বন্ধে আগ্রহ, অভিজ্ঞতা, জীবনের নিগুঢ় পরিচয়ের জন্য অসামান্য কৌতূহল। এবং সমস্ত কিছুকেই তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার অব্যর্থ শিল্পকৃতিতে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমরেশের নিপুণ গল্প কথকতা অম্লান। তার সাক্ষ্য মিলবে সংকলিত গল্পগুলিতে।
আনন্দ পাবলিশার্সের সকলে এই সংকলন প্রস্তুতিতে অশেষ সহযোগিতা করেছেন। গরিফা কেশব পাঠাগারের কাছে এবং নৈহাটি সরস্বতী বুকস্টলের অসীম সরকারের কাছে আমার কৃতজ্ঞ থাকার কারণ আছে।
সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়
৮৭ অরবিন্দ রোড
নৈহাটি
উত্তর চব্বিশ পরগণা
৭৪৩১৬৫
Leave a Reply