সত্যার্থ প্রকাশ – স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী
Bangla Translation of SATYARTH PRAKASH written by SWAMI DAYANAND SARASWATI
[সত্যার্থ প্রকাশ – মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী রচিত এক অনন্যসাধারন গ্রন্থ। সত্যার্থ প্রকাশ (হিন্দি: সত্য প্রকাশ) “সত্যের অর্থের আলো” বা সত্যের আলো) – একটি প্রভাবশালী ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারক এবং আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতী (স্বামী দয়ানন্দ)র মূলত হিন্দিতে রচিত একটি বই যা ১৮৭৫ সালে প্রকাশিত হয়। এটি তাঁর অন্যতম বড় বিদ্বান রচনা হিসাবে বিবেচিত হয়। ‘ওসিআর ভার্সন’ – ভুল সংশোধন করা হয়নি]
.
ভূমিকা
ওম্। সচ্চিদানন্দেশ্বরায় নমো নমঃ
অথ সত্যার্থ–প্রকাশস্য ভূমিকা
যে সময় আমি এই “সত্যার্থ-প্রকাশ” গ্রন্থ রচনা করি, সেই সময় ও তাহার পূর্বে সংস্কৃত ভাষায় ভাষণ দিতাম এবং অধ্যয়নও অধ্যাপনাতেও সংস্কৃতই বলিতাম–যদিও আমার মাতৃভাষা গুজরাটী। এই সব কারণে এই (হিন্দী) ভাষায় আমার বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল না। এখন ভাষা (হিন্দী) বলিবার ও লিখিবার অভ্যাস হইয়াছে। এইজন্য এই গ্রন্থকে ভাষা-ব্যাকরণ অনুসারে সংশোধিত করিয়া দ্বিতীয়বার মুদ্রিত করা হইল। কোথাও কোথাও শব্দ, বাক্য ও রচনার পার্থক্য ঘটিয়াছে; এইরূপ করা উচিতই হইয়াছিল। কারণ পরিবর্তন না করিলে ভাষার প্রণালী সংশোধন করা কঠিন হইত। কিন্তু অর্থের কোনও পরিবর্তন করা হয় নাই, প্রত্যুত বিশেষ লেখা হইয়াছে। প্রথম মুদ্রাঙ্কনের স্থানে স্থানে যে সকল ভুল ছিল, সে সকল অবশ্য বাহির করিয়া সংশোধন করা হইয়াছে।
এই গ্রন্থ ১৪ চতুর্দর্শ সমুল্লাসে অর্থাৎ চতুদর্শ বিভাগে রচিত হইয়াছে তন্মধ্যে দশ সমুল্লাস। লইয়া পূর্বাৰ্দ্ধ এবং চারি সমুল্লাস লইয়া উত্তরার্ধ রচিত। কিন্তু শেষের দুই সমুল্লাস এবং পরবর্তী স্বসিদ্ধান্ত কোনও কারণ বশতঃ প্রথমে মুদ্রিত হইতে পারে নাই। এখন ঐ সকলও মুদ্রিত হইয়াছে।
প্রথম সমুল্লাসে — ঈশ্বরের ওঙ্কারাদিনামের ব্যাখ্যা।
দ্বিতীয় সমুল্লাসে –সন্তানদিগের শিক্ষা।
তৃতীয় সমুল্লাসে –ব্রহ্মচর্য্য, পঠন পাঠন ব্যবস্থা, সত্য ও অসত্য গ্রন্থসমূহের নাম এবং অধ্যয়ন অধ্যাপনার রীতি।
চতুর্থ সমুল্লাসে –বিবাহ ও গৃহাশ্রমের ব্যবহার।
পঞ্চম সমুল্লাসে –বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস আশ্রমের বিধি।
ষষ্ঠ সমুল্লাসে– রাজধর্ম।
সপ্তম সমুল্লাসে– বেদ ও ঈশ্বরের বিষয়।
অষ্টম সমুল্লাসে –জগতের উৎপত্তি, স্থিতি ও প্রলয়।
নবম সমুল্লাসে– বিদ্যা, অবিদ্যা, বন্ধন ও মোক্ষের ব্যাখ্যা।
দশম সমুল্লাসে –আচার, অনাচার ও ভক্ষ্যাভক্ষ্য বিষয়।
একাদশ সমুল্লাসে –আৰ্য্যাবৰ্ত্তীয় মত মতান্তরের খণ্ডন-মণ্ডন বিষয়।
দ্বাদশ সমুল্লাসে –চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন মত বিষয়।
ত্রয়োদশ সমুল্লাসে –খৃষ্টান মত বিষয়।
চতুর্দশ সমুল্লাসে মুসলমানদের বিষয় এবং চতুর্দর্শ সমুল্লাসের শেষে আৰ্য্যদিগের সনাতন বেদবিহিতমতের বিশেষ ব্যাখ্যা লিখিত হইয়াছে, আমিও তাহা যথাবৎ স্বীকার করি।
আমার এই গ্রন্থ প্রণয়নের মুখ্য প্রয়োজন-সত্য-সত্য অর্থের প্রকাশ করা অর্থাৎ যাহা সত্য তাহাকে সত্য এবং যাহা মিথ্যা তাহাকে মিথ্যাই প্রতিপাদন করাকে আমি সত্যার্থের প্রকাশ বলিয়া বুঝিয়াছি। সত্যের স্থানে অসত্য ও অসত্যের স্থানে সত্য প্রকাশ করাকে সত্য বলা যায় না। কিন্তু যে মানুষ পক্ষপাতী, সে নিজের অসত্যকে সত্য এবং অন্য বিরুদ্ধ মতালম্বীর সত্যকেও অসত্য সিদ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হয়। এজন্য সে সত্য মতকে প্রাপ্ত হইতে পারে না। অতএব উপদেশ বা লেখার দ্বারা সব মানুষের সম্মুখে সত্যাসত্যের স্বরূপ উপস্থিত করাই বিদ্বান্ আপ্ত-পুরুষদের মুখ্য কর্ম। ইহার পর তাহারা সকলে নিজনিজ হিতাহিত বুঝিয়া নিজেরাই সত্যার্থ গ্রহণ ও মিথ্যার্থ। বর্জন করিয়া সর্বদা আনন্দে থাকিবেন। মনুষ্যের আত্মা সত্যাসত্যের জ্ঞাতা। তথাপি সে স্বীয় প্রয়োজন-সিদ্ধি, হঠকারিতা, দুরাগ্রহ এবং অবিদ্যাদির দোষ বশতঃ সত্য পরিত্যাগ করিয়া অসত্যের প্রতি ঝুঁকিয়া পড়ে। কিন্তু এই গ্রন্থে সেইরূপ কোনও কথা রাখা হয় নাই এবং কাহারও মনে ব্যথা দেওয়া বা কাহারও অনিষ্ট করা আমার অভিপ্রায় নহে। কিন্তু যাহাতে মনুষ্য জাতির উন্নতি ও উপকার হয় এবং মনুষ্যগণ সত্যাসত্য জানিয়া সত্যাগ্রহণ ও অসত্য পরিত্যাগ করে তাহাই অভিপ্রায়। কেননা সত্যোপদেশ ব্যতীত মানবজাতির উন্নতির অপর কোনও উপায় নেই।
এই গ্রন্থে কোনও স্থলে যদি অনবধানতা বশতঃ সংশোধনে এবং মুদ্রণে ভুল ভ্রান্তি থাকিয়া যায়, তাহা আমি জানিলে অথবা কেহ আমাকে জানাইলে যাহা সত্য হইবে, তাহাই করা যাইবে। কিন্তু যদি কেহ তাহা না করিয়া পক্ষপাত বশতঃশঙ্কা বা খণ্ডন-মণ্ডন করেন তাহা হইলে সে বিষয়ে বিবেচনা করা হইবে না। অবশ্য যদি কেহ মনুষ্য মাত্রের হিতৈষী হইয়া কিছু জানান, তাহা হইলে। যাহা সত্য বলিয়া বুঝা যাইবে, তাহারই মত গৃহীত হইবে।
আজকাল প্রত্যেক মতেই বহু বিদ্বান ব্যক্তি আছেন। যদি তাহারা পক্ষপাত পরিত্যাগ করিয়া সৰ্ব্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত অর্থাৎ যে সকল বিষয় সকলের অনুকূলে এবং সকল মতে সত্য, সেইসব গ্রহণ করিয়া এবং পরস্পরের বিরুদ্ধ সমুহ বৰ্জন করিয়া প্রীতি পূৰ্ব্বক আচরণ করেন ও করান তাহা হইলে জগতের পূর্ণ হিত সাধিত হইবে। কেননা, বিদ্বান ব্যক্তিদের মধ্যে বিরোধ হইলে অবিদ্বান। ব্যক্তিদের মধ্যে বিরোধের মাত্রা বৃদ্ধি হইয়া বহুবিধ দুঃখের ও সুখের হানি হইয়া থাকে। এই হানি স্বার্থপর মনুষ্যদিগের পক্ষে প্রীতিকর। ইহা মনুষ্যকে দুঃখ সাগরে নিমগ্ন করিয়াছে। ইহাদের মধ্যে যদি কেহ সার্বজনিক হিত লক্ষ্য করিয়া কাৰ্যে প্রবৃত্ত হন, তখন স্বার্থপর লোকেরা বিরোধ। করিতে তৎপর হইয়া নানা প্রকার বিঘ্ন সৃষ্টি করে। কিন্তু সত্যমেব জয়তে নামৃতং, সত্যেন পন্থা বিততো দেবয়ানঃ,অর্থাৎ সৰ্ব্বদা সত্যের বিজয় এবং অসত্যের পরাজয় এবং সত্যের দ্বারাই বিদ্বানদের পথ প্রশস্ত হয়। এই দৃঢ় নিশ্চয়ের অবলম্বন দ্বারা আপুরুষগণ পরোপকারে উদাসীন হইয়া কখনও সত্যার্থ প্রকাশ করিতে পশ্চাৎপদ হন না। আবার ইহাও দৃঢ় সত্য যে, ‘য়ত্তদগ্রে বিষমিব পরিণামেমৃতোপম।ইহা গীতার বচন ইহার অভিপ্রায় এই যে, বিদ্যা ধর্ম প্রাপ্তির কাৰ্য্য সমূহ বিষবৎ কিন্তু পরে অমৃততুল্য হইয়া থাকে। আমি এইরূপ কথা বিবেচনা করিয়া এই গ্রন্থ রচনা করিয়াছি। শ্রোতা এবং পাঠকবৃন্দও প্রথমে প্রীতি সহকারে। অবলোকন করিয়া গ্রন্থস্থ তাৎপর্য অবগত হইয়া যাহা অভীষ্ট তাহাই করিবেন।
ইহাতে এই অভিপ্রায় রাখা হইয়াছে বলিয়া মতমতান্তরের সমূহের মধ্যে যে সব সত্য কথা আছে, সেগুলি সকলের পক্ষে অবিরুদ্ধ হওয়া স্বীকার করা হইয়াছে এবং বিভিন্ন মতের মধ্যে যে সব মিথ্যা কথা আছে তাহার খণ্ডন করা হইয়াছে। মতমতান্তরের গুপ্ত বা প্রকাশ্য গর্হিত বাক্য সমূহ প্রকাশ করিয়া বিদ্বান ও অবিদ্বান্ জনসাধারণের সম্মুখে উপস্থিত করাও ইহার অভিপ্রায়, যাহাতে পরস্পর পরস্পরের মত আলোচনা পূৰ্ব্বক সকলে প্রীতির সহিত একই সত্য মত গ্রহণ করিতে পারে।
যদিও আমি আর্যাবর্ত দেশে জন্মগ্রহণ করিয়াছি এবংবাস করিতেছি, তথাপি, যেরূপ এতদ্দেশীয় বিভিন্ন মতের মিথ্যা বিষয়গুলির প্রতি পক্ষপাত না করিয়া উহা যথার্থরূপে প্রকাশ করিতেছি সেইরূপ ভিন্ন দেশীয় এবং ভিন্ন মতালম্বীদের সহিতও আচরণ করিতেছি। মনুষ্যোন্নতির জন্য স্বদেশ বাসীদের সহিত যেরূপ আচরণ করি বিদেশীদের সহিতও সেইরূপ আচরণ করিয়া থাকি। সকল সজ্জনেরই এইরূপ করা উচিত। আমি কোন মত বিশেষের প্রতি পক্ষপাতী হইলে আধুনিক মতবাদীরা যেমন স্বমতের স্তুতি, মণ্ডন ও প্রচার করিয়া এবং পরমতের নিন্দা, হানি ও প্রতিরোধ করিতে তৎপর হয়, আমিও সেইরূপ করিতাম কিন্তু এই কাৰ্য মনুষ্যত্বের বহির্ভূত। কারণ যেরূপ পশু বলবান হইয়া বলহীন প্রাণীদের দুঃখ দেয় এবং মারিয়াও ফেলে, মনুষ্যদেহ প্রাপ্ত হইয়া সেইরূপ কাৰ্য্য করিলে তাহারা মনুষ্য স্বভাব বিশিষ্টনহে, তাহারা পশুতুল্য। যাহারা বলবান হইয়া বলহীনকে রক্ষা করে, তাহাদিগকেই মনুষ্য বলে। যাহারা স্বার্থের বশবর্তী হইয়া কেবল পরের অনিষ্টসাধন করিতে তৎপর হন তাহাদিগকে পশুরও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলিয়া জানিবে।
একাদশ সমুল্লাস পৰ্য্যন্ত আৰ্য্যাবর্তীদের বিষয়ে বিশেষ করিয়া লিখিত হইয়াছে। এই সকল সমুল্লাসের মধ্যে যে সত্য মত প্রকাশ করা হইয়াছে, উহা বেদোক্ত বলিয়া আমার পক্ষে সর্বথা মান্য এবং নবীন এবং পুরাণ ও তন্ত্রাদি গ্রন্থোক্ত যে সকল বাক্যের খণ্ডন করিয়াছি ঐ সকল পরিত্যাজ্য।
দ্বাদশ সমুল্লাসে যে চার্বাক মত প্রদর্শিত হইয়াছে, উহা এখন ক্ষীণ ও লুপ্তপ্রায় এবং অনীশ্বরবাদ প্রভৃতি বিষয়ের সহিত চার্বাকের ও বৌদ্ধ, জৈন মতের নিগূঢ় সম্পর্ক রহিয়াছে। এই চার্বাক সর্বাপেক্ষা বড় নাস্তিক। তাঁহার প্রচেষ্টার প্রতিরোধ অবশ্য কর্তব্য। কারণ মিথ্যার প্রতিরোধ না হইলে জগতে বহু অনর্থ ঘটে। চার্বাকের এবং বৌদ্ধ ও জৈনদের যে মত তাহাও দ্বাদশ সমুল্লাসে সংক্ষেপে লিখিত হইয়াছে। বৌদ্ধ এবং জৈন মতেরও চাব্বাক এবং বৌদ্ধমতের সহিত বহুলাংশে সাদৃশ্যও আছে, কোন কোন বিষয়ে পার্থক্যও আছে। এজন্য জৈনদিগকে একটি ভিন্ন শাখা বলিয়া গণ্য করা হয়। দ্বাদশ সমুল্লাসে উক্ত পার্থক্য সম্বন্ধে লিখিত হইয়াছে। সে স্থলে উহা যথোচিত ভাবে জানিয়া লইবেন। যেখানে পার্থক্য তাহা দ্বাদশ সমুল্লাসে দেখান হইয়াছে। বৌদ্ধ ও জৈন মতের বিষয়ও লিখিত হইয়াছে এ সম্বন্ধে বৌদ্ধদের ‘দীপবংশ’ প্রভৃতি প্রাচীন গ্রন্থসমূহে, বৌদ্ধমত সংগ্রহ ‘সর্বদর্শন সংগ্রহ’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে। সেই সমস্ত গ্রন্থ হইতে উদ্ধৃত হইয়াছে। ইহা ছাড়া জৈনদের নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত গ্রন্থ আছে। তন্মধ্যে
চারিটি মূল সূত্র, যথা :– (১) আবশ্যক সূত্র, (২) বিশেষ আবশ্যকসূত্র, (৩) দশবৈকালিকসূত্র, এবং (৪) পাক্ষিক সূত্র। একাদশ অঙ্গ যথাঃ
(১) আচারঙ্গ সূত্র,(২) সুগডাঙ্গ সূত্র, (৩) থানাঙ্গ সূত্র, (৪) সমবায়ঙ্গ সূত্র, (৫) ভগবতী সূত্র, (৬) জ্ঞাতাধর্মকথা সূত্র, ((৭) উপাসক-দশা সূত্র (৮) অন্তগড়দশা সূত্র, (৯) অনুত্তরোব বাইসূত্র, (১০) বিপাক সূত্র, (১১) প্রশ্ন ব্যাকরণ সূত্র।
দ্বাদশ উপাঙ্গ, যথাঃ
ভূমিকা (১) উপবাঈ সূত্র, (২) রাউয়পসেনী সূত্র, (৩) জীবাভীগম সূত্র, (৪) পন্নগণা সূত্র, (৫) জম্বুদ্বীপপন্নতী সূত্র, (৬) চন্দপন্নতী সূত্র, (৭) সূরপন্নতী সূত্র, (৮) নিরিয়াবলী সূত্র, (৯) কপ্পিয়া সূত্র, (১০) কপবড়ীসয়া সূত্র, (১১) পুঞ্জিয়া সূত্র, (১২) পুপচুলিয়া সূত্র।
পঞ্চকল্প সূত্র, যথাঃ –(১) উত্তরাধ্যয়ন সূত্র, (২) নিশীথ সূত্র, (৩)কল্প সূত্র, (৪) ব্যবহার সূত্র এবং জীত-কল্পসূত্র
ষটছেদ যথা :
(১)মহানিশীথ বৃহদ্বাচনা সূত্র, (২) মহানিশীথ লঘুবাচনা সূত্র, (৩) মধ্যম বাচনা সূত্র (৪) পিণ্ড-নিরুক্তি সূত্র, (৫) ঔঘনিরুক্তি সূত্র এবং (৬) পযূষণা সূত্র।
দশপয়ান্ন সূত্র :–
(১) চতুস্রণ সূত্র, (২) পঞ্চখাণ সূত্র, (৩) তদুল বৈয়ালিক সূত্র, (৪) ভক্তিপরিজ্ঞান সূত্র ও (৫) মহাপ্রত্যাখ্যান সূত্র, (৬) চন্দ্ৰাবিজয় সূত্র, (৭) গণীবিজয় সূত্র, (৮) দেবেন্দ্রস্তবন সূত্র। (৯) মরণ সমাধি সূত্র, ও (১০) সংসার সূত্র।
এতদ্ব্যতীত নন্দীসূত্র ও অনুযোগদ্বার সূত্রও প্রামাণিক বলিয়া স্বীকৃত হইয়া থাকে।
পঞ্চাঙ্গ, যথাঃ (১) পূর্বোক্ত সমস্ত গ্রন্থের টীকা, (২) নিরুক্তি,(৩) চরণী এবং (৪) ভাষ্য এই চারি অবয়ব এবং সমস্ত মূলভাগ মিলিয়া পঞ্চাঙ্গ কথিত হয়।
ঢুণ্টিয়াগণ এইসকল গ্রন্থের মধ্যে অবয়বসমূহকে স্বীকার করেন না। এই সকল গ্রন্থ ব্যতীত বহু গ্রন্থ জৈনগণ মানিয়া থাকেন। দ্বাদশ সমুল্লাসেইহাদেরমতসম্বন্ধে বিশেষ আলোচনা দ্রষ্টব্য।
জৈন-গ্রন্থ সমূহের মধ্যে লক্ষ লক্ষ পুনরুক্ত দোষ এবং ইহাদের এটাও স্বভাব যে, নিজস্ব গ্রন্থ কোন ভিন্ন মতালম্বীদের হাতে থাকিলে বা মুদ্রিত হইলে কেহ কেহ উহাকে অপ্রমাণ বলিয়া থাকেন।তাহাদের একথা মিথ্যা। কারণ যে গ্রন্থ কোন একজন জৈনমানেন এবং কোন একজন জৈন মানেন না, উহা জৈনমতের বহির্ভূত হইতে পারে না। অবশ্য যে গ্রন্থ কোনও জৈন মানেন না, এবং কোন জৈন কখনও মানেন নাই; উহা অগ্রাহ্য হইতে পারে। কিন্তু এমন কোনও জৈন গ্রন্থনাইযাহা কোন জৈনইমানেন না। সুতরাং যিনি যে গ্রন্থমানেন, সে গ্রন্থ বিষয়ক খণ্ডন-মণ্ডনও তাহারই জন্য বুঝিতে হইবে। কিন্তু এমন অনেক জৈন আছেন যে, তাঁহারা ঐ গ্রন্থ মানা এবং জানা সত্ত্বেও সভায় অথবা তর্ক-বিতর্ক স্থলে মত পরিবর্তন করেন। এই কারণ জৈনগণ নিজেদের গ্রন্থগুলি লুকাইয়া রাখেন এবং কোন ভিন্ন মতালম্বীকে দেন না, শুনান না এবং পড়ান না। কেননা, উক্ত গ্রন্থ সমূহ এইরূপ অসম্ভব কথায় পরিপূর্ণ যে, জৈনদিগের কেহই ঐ সকলের উত্তর দিতে পারেন না। মিথ্যা কথাগুলির বর্জন করাই ইহার উত্তর।
ত্রয়োদশ সমুল্লাসে খৃষ্টানদের মত লিখিত হইয়াছে। খৃষ্টানগণ বাইবেলকে তাহাদের ধর্মপুস্তক। বলিয়া মানেন। ত্রয়োদশ সমুল্লাসে তাহাদের বিশেষ সমাচার দ্রষ্টব্য। চতুদর্শ সমুল্লাসে মুসলমানদের মত সম্বন্ধে লিখিত হইয়াছে। মুসলমানগণ কোরাণকে তাহাদের মতের মূল পুস্তক বলিয়া মানেন। ইহাদেরও বিশেষ আচরণ সম্বন্ধে চর্তুদশ সমুল্লাসে দ্রষ্টব্য। ইহার পর বৈদিক ধর্ম সম্বন্ধে লিখিত হইয়াছে।
যিনি গ্রন্থকারের তাৎপর্যের বিরুদ্ধ মনোভাবলইয়া ইহাকে দেখিবেন, তিনি ইহার কিছুমাত্র তাৎপর্য জানিতে পারিবেন না। কারণ বাক্যার্থ বোধের চারটি কারণ থাকে-আকাঙ্ক্ষা, যোগ্যতা, আসত্তি এবং তাৎপর্য। যিনি এই চারটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখিয়া পাঠ করেন, তিনি গ্রন্থের অভিপ্রায় যথোচিত অবগত হন।
“আকাঙ্ক্ষা” : কোন বিষয় সম্বন্ধে বক্তা ও বাক্যস্থ পদ সমূহের মধ্যে পরস্পর আকাঙ্ক্ষা থাকে।”যোগ্যতা”? যাহা দ্বারা যাহা হইতে পারে, তাহাকে তাহার যোগ্যতা বলে, যথা জল দ্বারা সিঞ্চন।”আসত্তি” যে পদের সহিত যাহার সম্বন্ধ, তাহারইসমীপে সেই পদ বলা অথবা লেখার নাম আসক্তি। “তাৎপর্যঃ”বক্তা যে অর্থে যে শব্দ উচ্চারণ করেন অথবা লেখেন সেই অর্থের সহিত সেই বচন অথবা লেখাকে যুক্ত করার নাম তাৎপর্য।
এরূপ বহু হঠকারী ও দুরাগ্রহকারী ব্যক্তি আছেন, যাঁহারা বক্তার অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধ কল্পনা করিয়া থাকেন। বিশেষত মতালম্বীরাই এইরূপ করিয়া থাকেন। কারণ মতের প্রতি আগ্রহ বশত তাঁহাদের বুদ্ধি অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইয়া যায়। অতএব যেমন আমি পুরাণ, জৈনগ্রন্থ, বাইবেল এবং কোরাণকে প্রথমে কুদৃষ্টিতে না দেখিয়া ঐ সকলের মধ্য হইতে গুণ সমূহের গ্রহণ, দোষ সমূহের বর্জন করিয়া এবং যাহাতে মানব জাতির উন্নতি হয় সে জন্য চেষ্টা করিতেছি, সকলেরই সেইরূপ করা কর্তব্য।
এই সকল মতের দোষ অল্পমাত্রই প্রকাশ করিয়াছি, যাহাতে এই সকল দেখিয়া মনুষ্যজাতির সত্য ও অসত্য মতের নির্ণয় এবং সত্য গ্রহণ ও অসত্য বৰ্জন করিতে ও করাইতে সমর্থ হয়। কারণ মনুষ্যদিগকে বিভ্রান্ত করিয়া একই মনুষ্য জাতিতে বিরুদ্ধ বুদ্ধি উৎপন্ন করা, একে অপরের। সহিত শত্রুভাব উৎপন্ন করা এবং কলহ-বিবাদ বাধাইয়া দেওয়া বিদ্বান্ব্যক্তিদের স্বভাববিরুদ্ধ। অবিদ্বান ব্যক্তি এইগ্রন্থ পাঠ করিয়া যদিও অন্যরূপ মনে করে, কিন্তু যাহারা বুদ্ধিমান তাহারা ইহার অভিপ্রায় যথোচিত উপলব্ধি করিবেন। এইজন্য আমি আমার পরিশ্রমকে সফল মনে করিতেছি এবং আমার অভিপ্রায় সজ্জনদিগের সম্মুখে উপস্থিত করিতেছি। তাহারা ইহা দেখিয়া ও অপরকে দেখাইয়া আমার পরিশ্রম সফল করিবেন। এইরূপে পক্ষপাত না করিয়া সত্যের অর্থ করা আমার এবং সকল সদাশয় ব্যক্তির মুখ্য কর্ম।
সৰ্বাত্মা, সৰ্বান্তর্যামী, সচ্চিদানন্দ পরমাত্মা নিজ কৃপায় এই উদ্দেশ্যকে প্রসারিত ও চিরস্থায়ী করুন।
অলমতিবিস্তরেণ বুদ্ধিমদ্বর শিরোমণিষু।
ইতি ভূমিকা।
(স্বামী) দয়ানন্দ সরস্বতী
ভাদ্রপদ শুক্ল পক্ষ সংবৎ ১৯৩৯
স্থান ও মহারাণজীর উদয়পুর
Rudrajyoti Ray
সত্যার্থ প্রকাশ বই টি সত্য এবং অসত্য বিচারের এক অনবদ্য সৃষ্টি। আমাদের উচিত বইটি পৃথিবীর সকল মানুষের পড়ার সুযোগ করে দেওয়া। যাতে সকলে সত্য উপলদ্ধি করতে পারে।
Amran
মূর্খ পন্ডিত! আল্লাহ তায়ালা কিছু প্রাণীকে খাদ্য। আর কিছু প্রনীকে খাদক হিসেবে সৃষ্টি করেছে। কিছু প্রানী তৃণভোজী। আবার কিছু প্রাণী মাংসাশী। আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুটো ক্ষমতায় দান করেছেন। মানুষকে তৃণ এবং মাংস হজম করার ক্ষমতা দিয়েছে। তুমি সিংহকে কখনো তৃণভোজন করতে দেখেছো। কারন সে এটা হজম করার ক্ষমতা নেই। আবার তুমি কখনো হরিণকে মাংস খেতে দেখেছো।
তোমারে কিতাব পড়ে আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি। তোমরা গো-মাতা কে রক্ষা করার জন্য। সকল মাংসাশী প্রাণী খাওয়া অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করেছে এখানে।
তুমি যে প্রথম পয়েন্ট উল্লেখ করেছ। যদি সৃষ্টিকর্তাইএ কিতাব সৃষ্টি করতো। তাহলে বলতো না আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। এখানে সৃষ্টিকর্তা নিজে তার প্রশংসা করেনি। মানুষকে সৃষ্টি কর্তা প্রশংসা করার জন্য বলা হয়েছে। কিভাবে মানুষ তার স্রষ্টার প্রশংসা করবে। সেটা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আজ সাড়ে ১৪ শত বছর। পবিত্র কোরআনের একটা হরফ পরিবর্তন হয় নাই। তোমাদের সনাতন যত ধর্মগ্রন্থ আছে । একটা সাথে আরেকটা কোন মিল নেই। সব মানুষের হাতের লেখা। মুসলমানদের যত হাদিসের কিতাব আছে সকল হাদিস রেফারেন্স কৃত এবং প্রমাণ দলিল সহকারে। এক একটা হাদিস কার থেকে রচিত হয়েছে তা উল্লেখ আছে প্রতিটি হাদিস। তোমাদের সনাতন ধর্মের তোমরা এত বড় বড় করে লিখছো। একেকটা শব্দ কে বলেছে কোথা থেকে এর উৎপত্তি কোন উল্লেখ নেই। এগুলা কোন রেফারেন্স নেই। এগুলো সব তোমাদের মনগড়া। ইচ্ছেমতে একেক জন একটা বই লিখে দিছে। দীর্ঘ ৫০ বছরে ইতিহাসে। কতজন লোক হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে। আর কতজন শান্তির ধর্ম ইসলাম ে প্রবেশ করেছে। তোমাদের কি কোন ধারণা আছে। তোমাদের ধর্ম যদি সত্যি হতো তাহলে পৃথিবীর সকল প্রান্তে তোমাদের ধর্মের বিস্তৃত হত। হিন্দু ধর্ম ইন্ডিয়াতে ছাড়া আর কোথাও নেই। যেখানে অজ্ঞ মূর্খ মানুষদের বোকা বানিয়ে তোমরা নিজেদের পকেট ভারী করছ।