সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস – ড. সুপর্ণা বসুমিশ্র
এম.এ.এম. ফিল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পি. এইচ. ডি. রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
করুণা প্রকাশনী কলকাতা
প্রথম প্রকাশ : আগস্ট, ২০১৩
প্ৰকাশক : শ্রী বামাচরণ মুখোপাধ্যায়, করুণা প্রকাশনী
শ্রদ্ধাভাজনেষু
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত
অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষ সুবুদ্ধিচরণ গোস্বামীর উদ্দেশ্যে
আমার এই গ্রন্থ নিবেদিত হল।
স্নেহাবনত
ডঃ সুপর্ণা বসুমিশ্র।
.
প্রস্তাবনা
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বর্ধমান, বিদ্যাসাগর, কল্যাণী, যাদবপুর, বারাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বি. এ. সংস্কৃত পাস, অনার্স ও এম. এ, পাঠক্রমের প্রতি দৃষ্টি রেখেই আমার এই গ্রন্থ রচনার প্রয়াস। সংস্কৃতের ছাত্র-ছাত্রী দিগের অধ্যয়নে এবং অধ্যাপনার কাজে যদি কিছুমাত্র সাহায্য হয়, তা হলে আমার এই সুদীর্ঘ কালের শ্রম সফল হবে।
ছাত্রাবস্থা থেকে লক্ষ্য করেছি যে সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের, ছাত্রছাত্রীদের যথাযথ প্রয়োজন পূরণে সমর্থ গ্রন্থের নিতান্তই অভাব ছিল। সেই হেতু ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে তাদের পরীক্ষায় সফল হওয়ার লক্ষ্য পূরণ করাই এই গ্রন্থ রচনার মূল উদ্দেশ্য।
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় বা আলোচনায়, প্রধানতঃ পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণের অবদান অসামান্য। তাঁরাই এই বিষয়ের পথপ্রদর্শক বলা যায়। তন্মধ্যে F. Maxmullar, A. Weber, A.A. Macdonell, M. Winternitz, A. B. keith অগ্রগণ্য। তাঁদের রচিত History of Sanskrit literature বা Indian literature – সর্বজনগ্রাহ্য বিষয়। পরবর্তীকালে বহু ভারতীয় পণ্ডিত ও বিদ্বজ্জনেরা এই কাজে ব্রতী হয়েছেন, তন্মধ্যে S.N. Dasgupta, S. K. De, M. Krishnamacharya, P. V. kane R.C. Hazra প্রভৃতি ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ্য। বাঙলাভাষায় সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস চর্চার পথ দেখান পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। প্রসঙ্গক্রমে অবশ্যস্বীকার্য যে আলোচ্য গ্রন্থে উক্ত পূর্বসূরীদের অকুণ্ঠ দান গ্রহণে আমি বাধ্য ছিলাম। তাঁদের দেখান পথ অনুসরণ করেই একদিকে সাহিত্য অন্য দিকে ইতিহাস, এই দুই এর মেলবন্ধনে সচেষ্ট হয়েছি। কারণ সাহিত্যকে বুঝতে গেলে তৎসম্পর্কিত ইতিহাস বিষয়ে অবহিত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যের বিপুল সম্ভার। আধুনিক কালের এমন কোন বিষয় নেই, যার মূল সেখানে নিহিত ছিল না। এক অর্থে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির মূল শিকড় খুঁজে পাওয়া যায় বেদ-উপনিষদের যুগে। সংস্কৃত সাহিত্যের বিশালতা কারুরই অবিদিত নয়, তথাপি পাঠক্রমের কথা মাথায় রেখে, গ্রন্থ কলেবরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে যথাসাধ্য সংক্ষেপিত করার চেষ্টা করেছি। পণ্ডিতদের পরামর্শ অনুযায়ী (অল্পাক্ষরম্ অসন্দিগ্ধং সারবৎ) অল্পকথায়, অসন্দিগ্ধভাবে ও সারগর্ভ ভাষায় লিখতে সচেষ্ট ছিলাম। গ্রন্থ কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় সর্বত্র মূল পাঠোদ্ধারের পাশাপাশি তার অনুবাদ দেওয়া সম্ভব হয় নি। মূলগ্রন্থের আলোচনাকে যথাসাধ্য সংক্ষিপ্ত ও বিষয়ানুগ রেখে বিশদ তথ্যাদির বিবরণ পাদটীকায় সন্নিবেশিত করেছি, অত্যুতসাহী পাঠকবৃন্দের কথা স্মরণে রেখে। অনুসন্ধানী পাঠকসমাজের সুবিধার্থে গ্রন্থশেষে গ্রন্থপঞ্জী সংযোজিত হয়েছে।
আলোচ্য গ্রন্থের সম্পূর্ণ বিষয় মোট একুশটি অধ্যায়ে বিভক্ত রয়েছে। এই বিষয়ে বিশদ পরিচয় সূচীপত্রে মিলবে। আন্তরিক সদিচ্ছা ও ঐকান্তিক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও কিছু ভুল ত্রুটি ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। অনবধানতা ও অজ্ঞানতাজনিত সমস্ত ভুল ত্রুটির দায় গ্রন্থকারের উপরেই ন্যস্ত থাকুক।
উক্তগ্রন্থ রচনায় যাঁরা আমাকে নিরন্তর উৎসাহ প্রদান করেছেন, তাঁদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এই বিষয়ে আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সোহারব হোসেন অগ্রগণ্য। তাঁর সক্রিয় সহযোগিতা আমাকে এই গ্রন্থের জন্ম দিতে সাহায্য করেছে। সমাজের বহু সুধীজন আমার এই কাজে নানাভাবে উৎসাহিত করে আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ রেখেছেন। সর্বোপরি আমার জীবন সঙ্গী অধ্যাপক অসিত মিশ্র এবং সুপুত্র শ্রীমান অনিকেত মিশ্র নিরন্তর আমার লেখার পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করে আমাকে মুগ্ধ করেছে।
কৃতজ্ঞতা জানাই করুণা প্রকাশনীর কর্ণধার বামাচরণ বাবুকে। এবং সংশ্লিষ্ট সকল কর্মীবৃন্দকে, যাঁদের নিরলস শ্রম ও ঐকান্তিক ইচ্ছা আলোচ্য গ্রন্থকে পাঠক সমাজের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
প্রচলিত গ্রন্থ সমাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক, আমার এই মৌলিক প্ৰয়াস সুধী পাঠকসমাজে সমাদৃত হলে, আমার দীর্ঘ পরিশ্রম সার্থক হবে। পাঠক সকলের প্রতি আমার বিনীত আবেদন, তাঁরা যেন তাঁদের মূল্যবান মতামত, এবং ভুল-ত্রুটি সম্বন্ধে আমাকে অবহিত করে বাধিত করেন। গঠন মূলক সমালোচনা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এবং পরবর্তী সংস্করণ গুলিতে সেই সমস্ত বিষয় পরিমার্জন ও পরিবর্ধনে গ্রন্থকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
গ্রন্থকার
ডঃ সুপর্ণা বসুমিশ্র
১ বৈশাখ, ১৪২০
Leave a Reply