নিবেদন
‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ’-এর পঞ্চম খণ্ড প্রকাশিত হইল। ব্রাহ্মভক্তগণের সহিত প্রথম পরিচয়ের কাল হইতে আরম্ভ করিয়া গলরোগে আক্রান্ত হইয়া তাঁহার চিকিত্সার্থ কলিকাতায় আগমনপূর্বক শ্যামপুকুরে অবস্থানকাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ঠাকুরের জীবনের ঘটনাবলী ইহাতে যথাসম্ভব সন্নিবেশিত হইয়াছে। ঠাকুর এই কালে নিরন্তর দিব্যভাবারূঢ় থাকিয়া প্রত্যেক ব্যক্তির সহিত ব্যবহার ও প্রতি কার্যের অনুষ্ঠান করিতেন। আবার, এখন হইতে তাঁহার অবশিষ্ট জীবনকাল শ্রীযুক্ত নরেন্দ্রের (স্বামী বিবেকানন্দের) জীবনের সহিত ঈদৃশ মধুর সম্বন্ধে চিরকালের নিমিত্ত মিলিত হইয়াছিল যে, উহার কথা আলোচনা করিতে যাইলে সঙ্গে সঙ্গে নরেন্দ্রের জীবন-কথা উপস্থিত হইয়া পড়ে। সুতরাং বর্তমান গ্রন্থখানির “ঠাকুরের দিব্যভাব ও নরেন্দ্রনাথ” নামে অভিহিত হওয়াই আমাদের নিকট যুক্তিযুক্ত মনে হইয়াছে।
ঠাকুরের জীবন-লীলা-প্রসঙ্গ যখন প্রথম লিপিবদ্ধ করিতে আরম্ভ করি তখন আমরা এতদূর অগ্রসর হইতে পারিব, এ কথা কল্পনায় আনিতে পারি নাই। কিন্তু তাঁহার অচিন্ত্য কৃপায় উহাও সম্ভবপর হইল! অতএব তাঁহার শ্রীপাদপদ্মে বারংবার প্রণামপূর্বক আমরা গ্রন্থখানি পাঠকের সম্মুখে উপস্থিত করিলাম। ইতি –
বিনীত –
গ্রন্থকার
শুক্লা দ্বিতীয়া
২০ ফাল্গুন, ১৩২৫ সাল
প্রকাশকের নিবেদন
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ, পঞ্চম খণ্ডের চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশিত হইল। শ্রীশ্রীঠাকুরের কাশীপুর-উদ্যানে থাকাকালীন ঘটনাবলীর কিয়দংশ ১৩২৬ সালে ‘উদ্বোধন’-এর শ্রাবণ, ভাদ্র এবং আশ্বিন-সংখ্যায় প্রকাশিত হইয়াছিল, ইতঃপূর্বে কোন পুস্তকে সন্নিবেশিত হয় নাই। এই সংস্করণে পুস্তকের শেষাংশে পরিশিষ্টাকারে সেগুলি সংযোজিত হইল। ইতি –
বিনীত –
প্রকাশক
১৩ আশ্বিন,
১৩৪২ সন
পঞ্চম খণ্ড – পূর্বকথা
দিব্যভাবের বিশেষ প্রকাশ ঠাকুরের জীবনে কতকাল ছিল – তন্নির্ণয়
৺ষোড়শীপূজার অনুষ্ঠান করিয়া ঠাকুর নিজ সাধন-যজ্ঞ সম্পূর্ণ করিয়াছিলেন, একথা আমরা ইতঃপূর্বে উল্লেখ করিয়াছি। উহা সন ১২৮০ সালে, ইংরাজী ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে সম্পাদিত হইয়াছিল। অতএব এখন হইতে তিনি দিব্যভাবের প্রেরণায় জীবনের সকল কার্য অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন, এ কথা বলিলে অসঙ্গত হইবে না। ঠাকুরের বয়স তখন আটত্রিশ বৎসর ছিল। সুতরাং ঊনচল্লিশ বর্ষ হইতে আরম্ভ করিয়া কিঞ্চিদধিক দ্বাদশ বর্ষকাল তাঁহার জীবনে ঐ ভাব নিরন্তর প্রবাহিত ছিল। শ্রীশ্রীজগদম্বার ইচ্ছায় তাঁহার চেষ্টাসমূহ এই কালে অদৃষ্টপূর্ব অভিনব আকার ধারণ করিয়াছিল। উহার প্রেরণায় তিনি এখন বর্তমান যুগের পাশ্চাত্য-শিক্ষাসম্পন্ন ব্যক্তিদিগের মধ্যে ধর্ম-সংস্থাপনে মনোনিবেশ করিয়াছিলেন। অতএব বুঝা যাইতেছে, পূর্ণ দ্বাদশবর্ষব্যাপী তপস্যার অন্তে ঠাকুর নিজ শক্তির এবং জনসাধারণের আধ্যাত্মিক অবস্থার সহিত পরিচিত হইতে ছয় বৎসর কাল অতিবাহিত করিয়াছিলেন; পরে, ইহকালসর্বস্ব পাশ্চাত্যভাবসমূহের প্রবল প্রেরণায় ভারতে যে ধর্মগ্লানি উপস্থিত হইয়াছিল তন্নিবারণ ও সনাতন ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকল্পে বিশেষভাবে ব্রতী হইয়া দ্বাদশবৎসরান্তে উক্ত ব্রতের উদ্যাপনপূর্বক সংসার হইতে অবসরগ্রহণ করিয়াছিলেন। উক্ত কার্য তিনি যেরূপে সম্পন্ন করিয়াছিলেন, তাহাই এখন আমরা যথাসাধ্য লিপিবদ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হইব।
ঠাকুরের জীবনের শেষ দ্বাদশ বর্ষে ঐ ভাবের বিশেষ প্রকাশ কেন বলা যায়
পাঠক হয়তো আমাদিগের পূর্বোক্ত কথায় স্থির করিবেন যে, ঊনচল্লিশ বৎসর পর্যন্ত ঠাকুর সাধকের ভাবেই অবস্থান করিয়াছিলেন; তাহা নহে। ‘গুরুভাব’-শীর্ষক গ্রন্থে আমরা ইতঃপূর্বে বুঝাইবার প্রয়াস পাইয়াছি যে, গুরু নেতা বা ধর্মসংস্থাপকের পদবী স্বভাবতঃ গ্রহণপূর্বক যাঁহারা মানবের হিতসাধন করিয়া চিরকালের নিমিত্ত জগতে পূজ্য হইয়াছেন, বাল্যকাল হইতেই তাঁহাদিগের জীবনে ঐসকল গুণের স্ফূর্তি দেখিতে পাওয়া যায়। সেইজন্য ঠাকুরের জীবনে বাল্যকাল হইতে আমরা ঐসকল ভাবের পরিচয় পাইয়া থাকি – যৌবনে, সাধনকালে উহাদের প্রেরণায় তিনি অনেক কার্য সম্পন্ন করিয়াছেন এ কথা বুঝিতে পারি – এবং সাধনাবস্থার অবসানে, তাঁহার বত্রিশ বৎসর বয়সে শ্রীযুত মথুরের সহিত তীর্থপর্যটনকালে এবং পরে, উহাদিগের সহায়ে প্রায় সকল কার্য করিতেছেন, ইহা দেখিতে পাই। অতএব সন ১২৮১ সাল হইতে তাঁহাতে দিব্যভাবের প্রকাশ এবং তাঁহার ধর্মসংস্থাপনকার্যে মনোনিবেশ বলিয়া যে এখানে নির্দেশ করিতেছি তাহার কারণ, এখন হইতে তিনি দিব্যভাবের নিরন্তর প্রেরণায়, পাশ্চাত্যের জড়বাদ ও জড়বিজ্ঞানমূলক যে শিক্ষা ও সভ্যতা ভারতে প্রবিষ্ট হইয়া ভারত-ভারতীকে প্রতিদিন বিপরীত-ভাবাপন্ন করিয়া সনাতন ধর্মমার্গ হইতে দূরে লইয়া যাইতেছিল, তাহার বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইয়া ইংরাজী শিক্ষাসম্পন্ন ব্যক্তিদিগের মধ্যে ধর্মের প্রতিষ্ঠাকল্পে সর্বদা নিযুক্ত থাকিয়া জনসাধারণের জীবন ধন্য করিয়াছিলেন।
দিব্যভাবের সহায়ে ঠাকুর পাশ্চাত্য ভাব-বন্যার গ্লানি হইতে ভারতকে মুক্ত করিয়াছেন
ঐরূপ করিবার যে বিশেষ প্রয়োজন উপস্থিত হইয়াছিল, এ কথা বলিতে হইবে না। ঈশ্বরকৃপায় ঠাকুরের অলৌকিক আধ্যাত্মিকশক্তিসম্পন্ন দিব্যভাবময় জীবন উহার বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান না হইলে ভারতের নিজ জাতীয়ত্বের এবং সনাতন ধর্মের এককালে লোপসাধন হইত বলিয়া হৃদয়ঙ্গম হয়। বাস্তবিক, ভাবিয়া দেখিলে এ কথা বেশ বুঝা যায় যে, ঠাকুর নিজ জীবনে যাবতীয় সম্প্রদায়ের ধর্মমত সাধনপূর্বক ‘যত মত তত পথ’-রূপ সত্যের আবিষ্কার করিয়া যেমন পৃথিবীস্থ সর্বদেশের সর্বজাতির কল্যাণসাধন করিয়া গিয়াছেন, তদ্রূপ পাশ্চাত্যভাবাপন্ন ব্যক্তিদিগের সম্মুখে দীর্ঘ দ্বাদশ বৎসর নিজ আদর্শজীবন অতিবাহিত করিয়া তাহাদিগের মধ্যে এই কালে ধর্মসংস্থাপনের যে চেষ্টা করিয়াছেন, তদ্দ্বারা পাশ্চাত্যভাবরূপ বন্যা প্রতিরুদ্ধ হওয়ায় বিষম সঙ্কটে ভারত উত্তীর্ণ হইতে সমর্থ হইয়াছে। অতএব সনাতন ধর্মের সহিত পূর্বপ্রচলিত সর্বপ্রকার ধর্মমতকে সংযুক্ত করিয়া অধিকারিভেদে তাহাদিগের সম-সমান প্রয়োজনীয়তা সপ্রমাণ করা যেমন তাঁহার জীবনের বিশেষ কার্য বলিয়া বুঝিতে পারা যায়, তদ্রূপ পাশ্চাত্য জড়বাদের প্রবল স্রোতে নিমজ্জনোন্মুখ ভারতের উদ্ধারসাধন তাঁহার জীবনের ঐরূপ দ্বিতীয় কার্য বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। সন ১২৪২ সাল বা ১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দ হইতে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হয় এবং ঐ বৎসরেই ঠাকুর জন্ম-পরিগ্রহ করেন। অতএব পাশ্চাত্য শিক্ষার দোষভাগ যে শক্তির দ্বারা প্রতিরুদ্ধ হইবে এবং যাহার সহায়ে ভারত নিজ বিশেষত্ব রক্ষা করিয়া পাশ্চাত্য শিক্ষার গুণভাগকে মাত্র নিজস্ব করিয়া লইবে, বিধাতার বিধানে তদুভয় শক্তির ভারতে যুগপৎ উদয় দেখিয়া বিস্মিত হইতে হয়।
দিব্যভাবের প্রকাশ মানব-জীবনে কখন উপস্থিত হয়
আধ্যাত্মিক রাজ্যের শীর্ষস্থানে অবস্থিত দিব্যভাবের পূর্ণ প্রকাশ মানবজীবনে বিরল দেখিতে পাওয়া যায়। কর্মবন্ধনে আবদ্ধ জীব ঈশ্বরকৃপায় মুক্ত হইয়া উক্ত ভাবের সামান্যমাত্র-আস্বাদনেই সমর্থ হইয়া থাকে। কারণ, মানব যখন শমদমাদি গুণসমূহ শ্বাসপ্রশ্বাসের ন্যায় বিনায়াসে অনুষ্ঠান করিতে সমর্থ হয়, পরমাত্মার প্রেমে আত্মহারা হইয়া তাহার ক্ষুদ্র আমিত্ববোধ যখন চিরকালের নিমিত্ত অখণ্ডসচ্চিদানন্দ-সাগরে বিলীন হইয়া থাকে, নির্বিকল্প সমাধিতে ভস্মীভূত হইয়া তাহার মন-বুদ্ধি যখন সর্বপ্রকার মলিনতা পরিহারপূর্বক শুদ্ধসাত্ত্বিক বিগ্রহে পরিণত হয় এবং তাহার অন্তরের অনাদি বাসনাপ্রবাহ জ্ঞানসূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপে এককালে বিশুষ্ক হইয়া যখন নবীন সংস্কার ও কর্মপুঞ্জের উৎপাদনে আর সমর্থ হয় না – তখনই তাহাতে দিব্যভাবের উদয় হইয়া তাহার জীবন কৃতার্থ হইয়া থাকে। অতএব দিব্যভাবের পূর্ণ প্রকাশে চিরপরিতৃপ্ত ব্যক্তির দর্শনলাভ যেমন অতীব বিরল, তেমনি আবার ঐরূপ ব্যক্তির কার্যকলাপ কোনপ্রকার অভাববোধ হইতে প্রসূত না হওয়ায় উদ্দেশ্যবিহীন বলিয়া প্রতীত হইয়া সাধারণ মন-বুদ্ধির নিকটে চিরকাল দুর্বোধ্য থাকে। সুতরাং দিব্যভাবের স্বরূপ যথার্থরূপে হৃদয়ঙ্গম করিতে কেবলমাত্র দিব্যভাবারূঢ় ব্যক্তিই সমর্থ হয়েন এবং উক্ত ভাবের প্রেরণায় যে-সকল অলৌকিক কার্যাবলী সম্পাদিত হয়, সে-সকলের আলোচনা প্রগাঢ় শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের সহিত না করিলে তাহাদিগের কিঞ্চিন্মাত্র মর্মগ্রহণও আমাদের ন্যায় মন-বুদ্ধির কখনও সম্ভবপর হয় না।
অবতারপুরুষদিগের জীবনে ঐ স্বভাবের বিশেষ প্রকাশ থাকায় তাঁহাদিগের চরিত্র এত দুর্বোধ্য ও রহস্যময়
দিব্যভাবের পূর্ণপ্রকাশ একমাত্র অবতার-পুরুষসকলেই দেখিতে পাওয়া যায়। জগতের আধ্যাত্মিক ইতিহাস ঐ বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রদান করে। ঐজন্যই অবতারচরিত্র আমাদিগের নিকটে চির-রহস্যময় বলিয়া প্রতীয়মান হয়। বাস্তবিক, আমরা কল্পনা-সহায়ে মায়ারহিত ব্রহ্মজ্ঞানাবস্থার আংশিক চিত্র মনোমধ্যে অঙ্কিত করিতে পারি, কিন্তু ঐ অবস্থায় যাঁহারা সহজ ও স্বাভাবিকভাবে সর্বদা অবস্থান করেন, তাঁহারা কি ভাবে কোন্ উদ্দেশ্যে – কখনও আমাদিগের ন্যায় এবং কখনও অসীম শক্তিসম্পন্ন দেবতার ন্যায় – কার্যাদির অনুষ্ঠান করেন, তাহা ধরিতে বুঝিতে পারি না। আমাদিগের মন-বুদ্ধি দূরে থাকুক, কল্পনা পর্যন্ত ঐ বিষয়ে অগ্রসর হইয়া সর্বতোভাবে পরাজয়স্বীকার করে। অতএব শ্রীরামকৃষ্ণ-জীবনের এই কালের কার্যাবলীর সম্যক আলোচনা যে সম্ভবপর নহে, তাহা আর বলিতে হইবে না। সুতরাং তাঁহার এই কালের কার্যপরম্পরার উল্লেখমাত্র করিয়া উহাদিগের সফলতাদর্শনে যেটি যে উদ্দেশ্যে সম্পাদিত বলিয়া আমরা ধারণা করিয়াছি, তাহাই কেবল পাঠককে বলিয়া যাইব। কার্যের গুরুত্ব দেখিয়াই আমরা কারণের মহত্ত্বের সর্বত্র পরিমাণ করিয়া থাকি। ঠাকুরের এই কালের কার্যাবলীর অলৌকিকত্ব অনুধাবন করিয়া তাঁহার অন্তরে দিব্যভাবের কতদূর অদৃষ্টপূর্ব প্রকাশ উপস্থিত হইয়াছিল, তাহা হৃদয়ঙ্গম করিতে আমাদিগের বিলম্ব হইবে না।
উক্ত ভাবাবলম্বনে ঠাকুর যে-সকল কার্য করিয়াছেন তাহাদিগের সাতটি প্রধান বিভাগ-নির্দেশ
দিব্যভাবারূঢ় শ্রীরামকৃষ্ণদেবের কার্যসকল অতঃপর কেবলমাত্র ধর্মসংস্থাপনোদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হইলেও, উহাদিগের মধ্যে সাতটি প্রধান বিভাগ দৃষ্ট হয়। দেখিতে পাওয়া যায় –
১ম। তিনি তাঁহার সতী সাধ্বী সহধর্মিণীর ধর্মজীবন অপূর্বভাবে গঠিত করিয়া তাঁহাকে অপরে ধর্মশক্তিসঞ্চারের প্রবল কেন্দ্রস্বরূপা করিয়া তুলিয়াছিলেন।
২য়। উচ্চাদর্শে জীবন পরিচালিত করিয়া যে-সকল ব্যক্তি তৎকালে কলিকাতা মহানগরীতে ধর্মবিষয়ে নেতা বলিয়া পরিগণিত হইয়াছিলেন, তাঁহাদিগের সহিত সাক্ষাৎপূর্বক নিজ আধ্যাত্মিক শক্তিসহায়ে তাঁহাদিগের জীবন সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ করিতে সচেষ্ট হইয়াছিলেন।
৩য়। দক্ষিণেশ্বরে সমাগত সর্ববিধ সম্প্রদায়ের পিপাসু ব্যক্তিসকলকে ধর্মালোকপ্রদানে পরিতৃপ্ত করিয়াছিলেন।
৪র্থ। যোগদৃষ্টিসহায়ে পূর্বপরিদৃষ্ট ব্যক্তিগণকে নিজ সকাশে আগমন করিতে দেখিয়া অধিকারিভেদে শ্রেণীবিভাগপূর্বক তাহাদিগের ধর্মজীবন গঠন করিয়া দিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন।
৫ম। ঐসকল ব্যক্তিদিগের মধ্যে কতকগুলিকে ঈশ্বরলাভের জন্য সর্বস্বত্যাগরূপ ব্রতে দীক্ষিত করিয়া সংসারে নিজ অভিনব উদার মতপ্রচারের কেন্দ্র স্থাপন করিয়াছিলেন।
৬ষ্ঠ। কলিকাতা-নিবাসী নিজ ভক্তগণের বাটীতে পুনঃপুনঃ আগমনপূর্বক ধর্মালাপ ও কীর্তনাদি-সহায়ে তাহাদিগের পরিবারবর্গের এবং পল্লীবাসিগণের জীবনে ধর্মভাব বিশেষভাবে প্রদীপ্ত করিয়াছিলেন।
৭ম। অপূর্ব প্রেমবন্ধনে নিজ ভক্তগণকে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করিয়া তাহাদিগের মধ্যে এমন অদ্ভুত একপ্রাণতা আনয়ন করিয়াছিলেন যে, উহার ফলে তাহারা পরস্পরের প্রতি অনুরক্ত হইয়া ক্রমে এক উদার ধর্মসঙ্ঘে স্বভাবতঃ পরিণত হইয়াছিল।
উক্ত সাত প্রকারের কার্যাবলীর মধ্যে প্রথমোক্তটি ঠাকুর কিরূপে সন ১২৮০ সালে আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহা আমরা পাঠককে ‘সাধকভাব’-শীর্ষক গ্রন্থের শেষভাগে বলিয়াছি। উহার পরবৎসরে সন ১২৮১ সালে তিনি ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের নেতা আচার্য কেশবচন্দ্রের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইয়া কিভাবে দ্বিতীয় প্রকারের কার্যাবলী আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহাও উক্ত গ্রন্থের পরিশিষ্টে আমরা আলোচনা করিয়াছি। আবার পূর্বোক্ত বিভাগের তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণীর কার্যাবলীর সামান্য পরিচয় আমরা ‘গুরুভাব’ গ্রন্থের উত্তরার্ধের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তমাধ্যায়ে পাঠককে প্রদান করিয়াছি। অতএব অবশিষ্ট প্রকারের কার্যসকল তিনি কখন কিভাবে আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহাই আমরা সর্বাগ্রে আলোচনা করিব।
Leave a Reply