শ্যামাঙ্গীর ঈশ্বর সন্ধান – জর্জ বার্নাড শ
গ্রন্থনা বুক ফার্ম
জানুয়ারি ২০১৮
মূল প্রচ্ছদ : জন ফারলেই
প্রচ্ছদ রূপায়ণ ও লে আউট : সৌম্যেন পাল
সহায়তা : শিলাদিত্য সিনহা রায়
বর্ণসংস্থাপন : প্রদীপ গরাই
প্রূফ সংশোধন : অনমিত্র রায়
বুক ফার্ম-এর পক্ষে শান্তনু ঘোষ ও কৌশিক দত্ত কর্তৃক
৭ এল, কালীচরণ শেঠ লেন, কলকাতা ৭০০০৩০ থেকে প্রকাশিত
মুদ্রক : এস পি কমিউনিকেশন প্রা লি, কলকাতা ৭০০০০৯
.
কৈফিয়ত – প্রণব মুখোপাধ্যায়
কালো মেয়ের উপাখ্যানে যে উপাদানটি আমায় সর্বাগ্রে আকর্ষণ করেছিল তা তার ননসেন্স গুণপনা। বার্নার্ড শ-র সব লেখাই, বলার অপেক্ষা রাখে না, হিউমার আস্বাদনে ভরপুর। আর এই কাহিনির মজাটাও পূর্ণমাত্রায় বিরাজ করছে ‘ননসেন্স’ ঘরানায়। ‘অ্যালিস’-এ আমরা পাই ‘Mock Turtle’ কাকে বলে। না, যা দিয়ে ‘Mock Turtle’-এর ঝোল তৈরি হয়! এই গোত্রের মজা আর কি! ‘দেখতে পেলাম তিনটে শুয়োর মাথায় তাদের নেইকো টুপি’, এ সেই গোত্রের। গল্পটির পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে anti-logic-এর মজা, যার সংজ্ঞা হয় না। (শুয়োরের মাথায় টুপি থাকাই নাকি স্বাভাবিক ছিল!) কেন হাসি পায় বোঝানো যায় না। যেমন T S Eliot-এর এর ‘Old Possum’s Book of Practical Cats’-কবিতাগুচ্ছের খুঁটিনাটি অর্থ খুঁজতে গেলেই মজা নষ্ট হয়। শ-এর কাহিনির দৌড়ে শুধু কল্পনা নয়, কল্পনার ‘লজিক’টিও বাস্তববোধের ঊর্ধ্বে।
গল্পের দ্বিতীয় বিশেষত্বটি হল, এর নায়িকা কালো মেয়েটি নগ্নিকা। গল্পে সেকথার উল্লেখ কোথাও নেই, নগ্ন-ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যায় না না-নাটক, না-উপন্যাস আখ্যানটিতে। অথচ চিত্রকর যে স্বাধীনতা নিয়েছেন (শ-এর মতামত অনুযায়ী) তা পাঠকমহলে বিতর্কমূলক। ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সে শ্রীহীন, অথচ সরল, অকপট একটি স্ত্রীমূর্তি। (অকপট কথাবার্তাগুলির মধ্যে ধরা আছে শ-এর মুখের চাপান-উতোর।) বীর প্রমীলা সে। তথাকথিত অসভ্য শ্রেণিভুক্ত হয়েও ‘অ-সভ্যতা’কে সে শাসাতে পারে। কিন্তু তার বিতর্কেও আছে ননসেন্স আস্তরণ, যা কোনো নীতিশাস্ত্রকেই মাথা তুলতে দেয়নি। সভ্যজগতের চলনবলন হোঁচট খায় মেয়েটির কাছে। এর অঙ্গে কী আবরণ উঠবে? যা-ই উঠুক না কেন, সে চিহ্নিত হয়ে যাবে বিশেষ কোনো প্রজাতিরূপে, তার জাত ধর্ম বর্ণ, এইসব পরিচয়ে। সে নামগোত্রহীন নিরপেক্ষ এক প্রতিভূ, যে ঈশ্বর সন্ধানে ব্যস্ত। এই বিবস্ত্র চেহারার কোনো পরিচয় নেই, শুধু তার চামড়ার চাকচিক্যের বর্ণনা ছাড়া। তার নগ্নরূপ দিয়েই তার যা কিছু অজ্ঞতা ও সরলতা। তার বহিরঙ্গ বর্ণনার কোনো প্রয়োজনই হয়নি গল্পের পরিকল্পনায়। সে নির্বোধ, সে আবরণকে আভরণ করতে শেখেনি। অথচ তার সরলতার মধ্যেই প্রকট হচ্ছে নির্বুদ্ধিতার এক নূতন সংজ্ঞা। তার নগ্ন চেহারা ঢুঁড়ে আর কোনো কিছুই পাওয়া যাবে না, শুধু পাওয়া যাবে তার মাতৃত্বে অভিষেকের উল্লেখ। তার সঙ্গে ছবির নগ্নতার কোনো যোগাযোগ নেই। তার নগ্নতা ও মাতৃত্বে অভিষেকের যে সংক্ষিপ্ত উল্লেখ আছে গল্পের উপসংহারে, তা নানা পাঠক নানাভাবে বিশ্লেষণের অধিকারী। অম্লান বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর শ-এর এই মহিলাটি আলোচিত হোক নানাভাবে।
Leave a Reply