শতবর্ষের ফেরারি : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় – আহমদ ছফা
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৭
উৎসর্গ : পরলোকগত বন্ধু-ভাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
মুখবন্ধ
ছাত্র থাকার সময়ে আমি ইংরেজিতে লিটারারি আইডিয়েল অব বেঙ্গল শিরোনামে একটা প্রবন্ধ লিখি। সেই রচনাটি বাংলা একাডেমীর ইংরেজি জার্নালে প্রকাশিতও হয়েছিলো। উনিশশো আটষট্টি উনসতুর সালের দিকে হবে। সেই সময়েই আমার প্রবন্ধের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অংশ লিখতে গিয়ে মনে স্বতঃই কতিপয় প্রশ্ন জেগেছিলো। তারপর থেকেই বঙ্কিম সম্পর্কে আমি সচেতনভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমার প্রশ্নগুলোর বাব খুঁজতে থাকি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ওপর লিখিত যতোগুলো গ্রস্থ, পত্রপত্রিকা এবং জার্নালে প্রকাশিত রচনা আমার হাতে এসেছে, আগ্রহ সহকারে পাঠ করতে আরম্ভ করি। বঙ্কিম সম্পর্কে যে বিতর্ক দীর্ঘকাল থকে চলে আসছিলো, রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত তাতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারেননি। তারপর সামাঙ্কি, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রশ্নের জ্বটসমূহ যখন ক্রমবর্ধিত হারে জটিল আকার ধারণ করতে থাকে, বঙ্কিম সম্পর্কিত বিতর্কও নতুন নতুন মাত্রা অর্জন করতে থাকে। আমাদের দেশে সাম্প্রতিককালে বঙ্কিম সম্পর্কিত বিতর্ক যেখানে এসে থেমেছে, সেটাকে বিচার বল বোধকরি সঙ্গত হবে না। একদল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে রবীন্দ্রনাথেরও ওপরে স্থান দিতে চান, অনাপল তাঁকে একেবারে খারিজ করতে পারলে বেঁচে যান।
আমার এই রচনাটিতে বল বিতৰ্কসম্মাহের কে ধারাবাহিকতা তার বেশ একেবারে অনুপস্থিত সে কথা আমি বলতে পারবে না। বরঞ্চ বলতে চাই বিতর্কটা চলে আসছিলো বলেই আমি রচনাটা লেখার দায়িত্ব স্বীকার করতে প্রলুব্ধ হয়েছি। এই রচনা আমি প্রত্যক্ষভাবে কোনো ব্যক্তি বা মহল বিশেষের পক্ষে বা বিপক্ষে সমর্থন অসমর্থন জানানোর জন্য লিখতে প্রবৃত্ত হইনি। বিগত পঁচিশ বছর সময়ের পরিধিতে যে সকল চিন্তা আমার মনে সঞ্চিত হয়েছে, সেগুলো একটা সূত্রাকারে প্রকাশ করার জন্যই এ লেখা। অন্যান্য কাজের চাপের মধ্যে লেখার কাজটি করতে হয়েছিলো বলে মাঝে মাঝে পুনরুক্তি দেষ ঘটেছে। আমার লেখাটিকে সঠিক অর্থে গবেষণা কর্ম বলা শোভন হবে না। আগামীতে যাঁরা গবেষণা করবেন, আমি আশা করি তাঁদের সামনে এই রচনাটি কতিপয় নতুন দিক উন্মোচন করবে এবং সেটাই হবে এই রচনার সার্থকতা।
আমার ভ্রাতুস্পুত্র মুহম্মদ নূরুল আনোয়ার এবং স্নেহভাজন রতন বাঙালী রত্নেশ্বর দেবনাথ) রচনাটি কম্পিউটারে টাইপ এবং সংশোধন করার সময়ে বিস্তর কষ্ট স্বীকার করেছে। প্রাচ্যবিদ্যা প্রকাশনীর ডঃ লেনিন আজাদ আগ্রহী হয়ে লেখাটি প্রকাশের জন্য গ্রহণ করেছেন, তাঁকে কৃতজ্ঞতা নিবেদন করি।
বিনীত
আহমদ ছফা
ইহা
৭১ আজিজ সুপার মার্কেট
শাহবাগ, ঢাকা-১০০০
২১শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৭
Leave a Reply