লিঙ্গপুরাণ – অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ : মাঘ, ১৪২৪
উৎসর্গ : প্রাণপ্রিয় কবি দেবযানী দত্তকে
.
সূচিমুখ
জ্যোতিষ : না শাস্ত্র, না বিজ্ঞান
গোহত্যা, গোমাংস ও গোমাতার ইতিবৃত্ত
সরস্বতী : বাস্তবে এবং অবাস্তবে
ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং ভারতীয় সমাজ
মনু, মনুসংহিতা এবং হিন্দুত্ববাদের ভারতবর্ষ
লিঙ্গপুরাণ
মোহে-নির্মোহে নগ্নতা
.
কথামুখ
গড্ডলিকা প্রবাহে ভেসে যাওয়া নয়। গতানুগতিকতায় প্রথাবদ্ধ হয়ে বন্দি না-হয়ে উল্টো সুরে উল্টো পথে যা ভাবি তাই লিখি। পূর্বপুরুষের শিখিয়ে দেওয়া তোতাপাখির বুলি আওড়ানোতে আমি স্বভাবসিদ্ধ নই। ভিন্ন ভাবনায়, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথানির্মাণে আমার অক্ষরমালার চরৈবেতি। প্রচলিত বিশ্বাস ও ধারণাকে পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করেছি গভীর নিবিড়তায়। উচিত-অনৌচিতের জ্ঞানবর্ষণ নয়, নিজের জীবন এবং যাপনেও এই বদলের রূপরেখা অনুসরণের চেষ্টা করি।
জ্যোতিষীগিরি একটা লাভজনক ব্যবসা। পাড়ায় পাড়ায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে জ্যোতিষীদের রমরমা ব্যবসা আমরা সবাই দেখেছি। জেনেছি তাঁরা ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, মানুষের হাত-পা-কপাল দেখে ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে। যদিও জ্যোতিষীদের কোনো বক্তব্য কোনোদিন কখনোই সত্য প্রমাণিত হয়নি, তা সত্ত্বেও জ্যোতিষীদের প্রতি মানুষের অগাধ ভক্তি। এইসব ভণ্ড জ্যোতিষীদের খপ্পরে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। তবু জ্যোতিষীরা যেন দেবদূত, অন্তর্যামী। অথচ এই জ্যোতিষীরা অন্তরালে এক একটা পাক্কা শয়তান, যমদূত। যে যত বড়ো জ্যোতিষী, সে তত বড়ো মিথ্যা, তার চেয়ে বড়ো ভণ্ড, প্রতারক। এঁরা নাকি কেউ কেউ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। জ্যোতিষীকে কেউ বলেন শাস্ত্র, কেউ বলেন বিজ্ঞান। আসলে জ্যোতিষজ্ঞান না শাস্ত্র, না বিজ্ঞান। পাথর ধারণ করলে ভাগ্য বদলে যায় না। জ্যোতিষবিদ্যা ও জ্যোতিষীদের পর্দাফাঁস করা হয়েছে ‘জ্যোতিষ : না শাস্ত্র, না বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে।
ছাগল, ভেড়া, মুরগি, শুয়োরের মাংসের মতো গোরুর মাংসও খেয়ে থাকে। আসলে মানুষ খায় না এমন একটি প্রাণী এ পৃথিবীতে নেই। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে মানুষের খাদ্যাভ্যাস হয়। তবুও মাংস খাওয়াকে কেন্দ্র ঘৃণা, হত্যা ইত্যাদি। যত গণ্ডগোল গোরুকে ঘিরে। গোমাংস কি শুধু মুসলিমরাই খায়? ‘গোহত্যা, গোমাংস ও গোমাতার ইতিবৃত্ত’ প্রবন্ধে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করা হয়েছে গোমাংসের ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান। ‘সরস্বতী : বাস্তবে এবং অবাস্তবে’ প্রবন্ধে হিন্দুদের পরমপূজ্য দেবী সরস্বতীর উৎস ও বিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। হিন্দুসমাজ ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। ভারতীয় সমাজ কীভাবে ব্রাহ্মণদের কজায় চলে এলো? এই ব্রাহ্মণ্যবাদ হিন্দুসমাজে কতটা ক্ষতি করেছে? ‘ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং ভারতীয় সমাজ’ প্রবন্ধে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।
‘মনু, মনুসংহিতা এবং হিন্দুত্ববাদের ভারতবর্ষ’ প্রবন্ধের শিরোনামই বলে দিচ্ছে ভারতবর্ষের হিন্দুত্ববাদে মনুসংহিতার প্রভাব কতখানি। বাবা সাহেব মনুসংহিতা পুড়িয়ে দিয়েছিল। কী এমন আছে মনুসংহিতায়? মনু কে? মনুর বিধান কীভাবে হিন্দুসমাজে কীভাবে বর্ণবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষের শিকড় ছড়িয়ে দিয়েছে এই প্রবন্ধে সেটাই উপজীব্য।
লিঙ্গপুরাণ প্রবন্ধে ‘লিঙ্গ’ শব্দটি থাকলেও কোনো যৌনতা নেই। তবে সমগ্র আলোচনাই হয়েছে লিঙ্গ নিয়ে। এসেছে শিবলিঙ্গ বিষয়ও। আলোচনা হয়েছে জাপানের পেনিস ফেস্টিভাল থেকে অমরনাথের প্রাকৃতিক বরফের লিঙ্গ নিয়ে। রহস্য উদ্মাটনের চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত কয়েকটি জরুরি কথা বলে রাখা প্রয়োজন– প্রথমত, লিঙ্গপুরাণ কখনোই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গ্রন্থ নয়। অনেকেই বইয়ের নাম দেখে ভাবেন, বইটিতে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট আছে। ১৮ অনুৰ্ধদের জন্য অপাঠ্য। ভুল ভেবে ভুল করবেন না। ইতোমধ্যে অনেকগুলি সাইট আমার চোখে পড়েছে, যেখানে আমার ‘লিঙ্গপুরাণ’ নামে বইটি অ্যাডাল্ট ক্যাটাগরিতে রেখেছেন। তাঁদের অনুরোধ করছি ক্যাটাগরি বদলে ফেলুন। বইটি অবশ্যই প্রাপ্তমনস্কদের জন্য, কখনোই প্রাপ্তবয়স্কদের নয়। সকল বয়সের পাঠকরা বইটা পড়তে পারেন। দ্বিতীয়ত, যারা এই বইটি পিডিএফ করে বিভিন্ন সাইটে রেখেছেন, তাঁরা কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করেছেন। আমি কারোকে পিডিএফ করার অনুমতি দিইনি। যত বেআইনি পিডিএফ আছে সব সাইট থেকে সরিয়ে ফেলুন। তৃতীয়ত, বিভিন্ন সাইটে ‘লিঙ্গপুরাণ’ নামে যে পিডিএফ আপনারা ডাউনলোড করে পড়ছেন, তাঁদের বলি ওই বইটার সঙ্গে এই বইটার অনেক অমিল। প্রচ্ছদ একই থাকলেও বিষয় এক নেই। বেশ কিছু নতুন প্রবন্ধ যেমন সংযোজন করা হয়েছে, কিছু প্রবন্ধ বাতিলও করা হয়েছে। আগের যে প্রবন্ধগুলি বর্তমান বইতে আছে সেগুলিতেও প্রচুর সংযোজন, সংশোধন, বর্জন, পরিমার্জন করা হয়েছে। বলা যায় সম্পূর্ণ নতুন রূপে এই বইটি আপনাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ এই বইয়ের আসল স্বাদ নিতে হলে পাইরেটেড পিডিএফ নয়, ই-বুক পড়ন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাবগম্ভীর বিষয় হলেও যতটা সম্ভব প্রাঞ্জল ভাষায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই সংকলনে যেসব প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে তা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। বিদগ্ধ ও অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের দাবিতে পাঠকদের কাছে সেগুলি দুই মলাটে করে বন্দি পৌঁছে দিতে পারলাম। এই গ্রন্থটির বিষয়বৈচিত্র্য নিশ্চয় পাঠকদের মন জয় করতে পারবে।
অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
Leave a Reply