লালন ফকির : জীবন ও সাধনা – পৃথ্বীরাজ সেন
প্রথম প্রকাশ : কলকাতা বইমেলা, জানুয়ারি, ২০১১
প্রকাশক : প্রশান্ত চক্রবর্ত্তী, গিরিজা লাইব্রেরী
প্রচ্ছদ শিল্পী : সঞ্জয় মাইতি
.
‘মনের মানুষ’ চলচ্চিত্রের স্রষ্টা
গৌতম ঘোষকে
শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়
পৃথ্বীরাজ সেন
কলকাতা বইমেলা, ২০১১
.
ইদানীং দুই বাংলার বুদ্ধিজীবি মহল থেকে শুরু করে সাধারণ জনমানসে লালন ফকিরের বর্ণময় জীবন এবং সংগীত সাধনা সম্পর্কে ব্যাপক ঔৎসুক্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভাবতে ভালো লাগে, একুশ শতকের এই ইনটারনেট শাসিত সমাজে লালন আবার নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। অনেক উন্নাসিক সমালোচক বলে থাকেন এ হল বাঙালির তাৎক্ষণিক আবেগের মাহূর্তিক বহিঃপ্রকাশ। এর অন্তরালে অনুঘটকের কাজ করেছে লালন জীবনভিত্তিক দুটি অসামান্য চলচ্চিত্র—অচিন পাখি ও মনের মানুষ।
এ কথা অনস্বীকার্য যে সেলুলয়েড মাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজের এক বৃহত্তর অংশ এই দুই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে লালনের বিতর্কিত জীবন আর তাঁর সংগীত সাধনা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এভাবে বাংলার সাংস্কৃতিক মহলে শুরু হয়েছে লালন চর্চার নতুন অধ্যায়।
আমি এক সামান্য লেখক, লালন গবেষক হবার স্পর্ধা অথবা দুঃসাহস আমার নেই। তাই আমি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত আবেগের রঙে রাঙিয়েছি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে। জনশ্রুতি এবং প্রতিবেদনের কাঠামোর ওপর সাজানো হয়েছে লালনের মূর্তিখানি। হয়তো কোথাও কষ্ট কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছে—সেইজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
এই বই-এর দ্বিতীয় পর্বে এক সাধারণ লালনপ্রেমী মানুষের মনন-দর্পণে প্রতিফলিত লালনের সাধনার ছবিখানি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মারফতি অথবা শরিয়তী তত্ত্বের রহস্য তন্ময়তার কথা আমার জানা নেই, কিন্তু আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি সেই অল্পশিক্ষিত প্রান্তিক, ব্রাত্য মানুষটির দিকে, যিনি অনায়াস দক্ষতায় উচ্চারণ করেন—
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়?
এই গানের মধ্যে বিধৃত হয়েছে বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক সাধনার রূপরেখা।
সন্ত্রাসদীর্ণ এই পৃথিবীতে লালনের মত মুক্তমনের মানুষের বড় বেশি প্রয়োজন। এই গ্রন্থের তৃতীয় পর্বে তাই নির্মোহ দৃষ্টিতে লালনের জন্মরহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করেছি। লালন সারা জীবনের সাধনায় ধর্মবিহীন মানবিকতার কথা বলে গেছেন—তাঁর জাত জেনে কি লাভ?
প্রসঙ্গত উল্লেখ করি এই বইটি আমার সাহিত্য জীবনের একটি দিকচিহ্ন স্পর্শ করেছে। প্রথম বছর বইমেলায় যে সদ্য তরুণের কুন্ঠিত আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে, আজ অনেক উপলব্যথিত পথ পার হয়ে সে স্পর্শ করেছে এক হাজার বই-এর লেখকের স্বীকৃতি। এভাবেই বইমেলার সঙ্গে রচিত হয়েছে এক মহান পরম্পরা। এই শুভমুহূর্তে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি সেই সব পাঠক-পাঠিকা এবং প্রকাশক বৃন্দকে—যাঁদের ধারাবাহিক সহযোগিতা ছাড়া আমি কখনই এই কৃতিত্ব অর্জন করতে পারতাম না। আর ধন্যবাদ জানাই গিরিজা লাইব্রেরীর কর্ণধার শ্রীপ্রশান্ত চক্রবর্ত্তীকে, যাঁর উদ্দীপনা ছাড়া এই বই এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রকাশ করা সম্ভব হোত না।
ফিউসান আর র্যাপ মিউজিকের নিনাদিত মুহূর্তে ঐ শোনা যায় লালনগীতি—
আমি একদিনও না দেখলেম তারে!
আমার বাড়ির কাছে আরশীনগর
পড়শী বসত করে।
তাহলে আমরা কি আর একবার সেই চিরন্তন গানের জগতের বাসিন্দা হয়ে যাব যেখানে মাথার ওপর নির্মল নীল আকাশ আর পায়ের নীচে সবুজ ঘাসের জাজিম?
বইমেলার শুভেচ্ছায়
পৃথ্বীরাজ সেন
কলকাতা বইমেলা,
২০১১
Leave a Reply