লার্নিং হাউ টু ফ্লাই : লাইফ লেসন্স ফর দি ইয়ুথ – এ পি জে আবদুল কালাম
অনুবাদক – মনোজিৎ কুমার দাস
সম্পাদনা – অধ্যাপক কে এম এ বারী
অ্যালবাট্রস পাবলিকেশনস
Learning How to Fly Life Lessons for the Youth -এর বাংলা অনুবাদ
প্ৰকাশ জুলাই, ২০১৮
A P J Abdul Kalam, Learning How to Fly: Life Lessons for the Youth translated by Monojit Kumar Das Published by Albatross Publications
অনুবাদকের উৎসর্গ
শ্রেষ্ঠত্বের জন্য সংগ্রামরত তরুণ তরুণীদেরকে
ভূমিকা
আমার জীবনের ছোটোবেলা থেকে আজ পর্যন্ত অর্জিত কয়েকটি চমৎকার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করছি। এখন আমার বয়স বিরাশি বছর। পেছনে ফেলে আসা বছরগুলোতে আমি অনেক অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করি। সেই সব অভিজ্ঞতা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষালাভ করেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এই যে একজন মানুষ কঠিন পরিশ্রম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে। যদি আমরা কঠিন কাজ করতে পারি, তবে সাফল্য অবশ্যই আসবে। বিভিন্ন মানুষের সাক্ষাতে আমি সব সময়ই বলি, ‘আমরা ঘুমের মাঝে যে স্বপ্ন দেখি তা স্বপ্ন নয়; যা আমাদের ঘুমাতে দেয় না সেটাই হলো স্বপ্ন।’
বাগানে হাঁটতে হাঁটতে এই বইটি লেখার কথা আমার মনে আসে। অন্যদিনের মতো সেদিনও আমি শত বছরের পুরনো বড়ো অর্জুন গাছটির নীচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি উপরের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম গাছের ডালে পাখিরা নতুন কোনো বাসা বেঁধেছে কিনা বা কোনো নতুন মৌমাছির চাক দেখা যায় কিনা। দিল্লী নগরীর এই গাছটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে আমার বাবার কথা মনে পড়ল। তিনি দিন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির সঙ্গে কাটাতেন। তিনি তাঁর নারকেল গাছগুলোর দেখাশোনা করতেন। শহরে বসবাস করার সময়ে আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতাম। শৈশবে আমি হাঁটাহাঁটি করার সময় মানুষের হাসি মুখ দেখতে পেতাম। সে সব কথা আমার এখনো মনে পড়ে। তারপর থেকে আমিও আমার জীবনে অসাধারণ পথের কথা ভাবতে থাকি। আমি ভ্রমণ করে অনেক জিনিস প্রত্যক্ষ করেছি। আমি এক সময় ওই সব জিনিসের অংশ হয়ে পড়ি। আমার ভ্রমণের স্মৃতিগুলো অবশ্যই আমার অসংখ্য পাঠক, পরিবারের সদস্যদের সাথে ভাগাভাগি করতে পারি আমার পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা প্রকাণ্ড বটগাছের অসংখ্য শিকড়ের মতো প্রচুর নাতি নাতনি ও নাতির নাতি পরম্পরায় ছড়ানো!
এ পর্যন্ত আমি বেশ কয়েকটি বই লিখেছি, যার কয়েকটিতে আমি আমার শৈশবের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছি। আমি যখন আমার জীবন সম্বন্ধে প্রথম বইটি লিখলাম, আমি ভাবছিলাম, এ বই পাঠককে কতটা আনন্দ দেবে। আমার অন্যান্য বইয়ের থেকে আলাদা ‘মাই জার্নি’ বইটিতে আমার জীবনের ছোটো ছোটো ঘটনাকে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি। আমার বাবা ও মাকে ঘিরে আবর্তিত ঘটনাগুলোকে আমি এই বইতে লিখেছি, যা আমার বিরাশি বছর বয়সেও আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে আছে। তারা আমাকে যে সমস্ত মূল্যবোধ ও ন্যায়পরায়ণতা আমাকে শিখিয়েছিলেন তাতে আমি এখনো মুগ্ধ। তারা আমার মধ্যে যে সব গুণাবলি গেঁথে দিয়েছিলেন তা আমার জীবনের পাথেয় হয়ে আছে। আমি সেসব উপলব্ধি করে অনেক কিছু শিখেছিলাম। সমস্যার মুখোমুখি তাদের প্রতিক্রিয়া আমাকে ভালোভাবে চলতে সাহায্য করেছিল। আমার বাবা-মায়ের সেই সব মূল্যবোধগুলো এখনো আমার মনে গভীরভাবে গেঁথে আছে। আমার বাবা মানুষের মনের বোধশক্তির গুরুত্ব সম্বন্ধে বা সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার যে সব কথা বলতেন সেগুলোর কথা অনেক বছর পরেও এখনো আমার মনে পড়ে। আমার মায়ের স্নেহের পরশ ও আদর যত্নে তাঁর সন্তানরা বড়ো হয়ে ওঠে। সন্তানদের বড়ো করে তোলার মাঝে মায়ের ভালোবাসা ও দয়ার জগৎকে আমি উপলব্ধি করতাম। আমি আমার বোন জোহরার মধ্যেও মহানুভবতা দেখেছি। আমাদের প্রতি আমার বোনের অবদানের কথাও আমার মনে গাঁথা হয়ে আছে। আমার জীবনের প্রথম বিজ্ঞ পরামর্শদাতা আহমেদ জালালউদ্দিন। আমার পড়াশোনায় তিনি আমাকে উৎসাহিত করেন। উদাহরণ হিসাবে বলতে হয়, ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের যোগদান করতে আমি ব্যর্থ হলাম; অনেক প্রতিবন্ধকতা আমার জীবনে দেখা দিল। আমার পরামর্শদাতা বললেন যে, যদি কারো হৃদয়ে দৃঢ়তা থাকে তবে সত্যিকারভাবে কোনো কষ্টই কষ্ট থাকে না।
সম্প্রতি আমি আমার বন্ধু অধ্যাপক অরুণ তিওয়রির সঙ্গে আলাপ করছিলাম। হঠাৎ করে তিনি আমাকে একটি অস্বাভাবিক প্রশ্ন করে বসলেন, ‘কালাম সাহেব, আপনি কি একটি বাক্যে আপনার জীবনের সারসংক্ষেপ বলতে পারেন?”
আমাকে কিছু সময় ভাবতে হলো। তারপর আমি বললাম, ‘অরুণ, হ্যাঁ, আমার জীবনের সারসংক্ষেপ কয়েকটি শব্দ দ্বারা প্রকাশ করতে পারি: শিশুর প্রতি ভালোবাসা বর্ষণ সংগ্রাম আরো সংগ্রাম তিক্ত অশ্রুজল, তারপর মিষ্টি অশ্রুজল . . . পরিশেষে একটি পরিপূর্ণ সুন্দর জীবন ঠিক পূর্ণিমার চাঁদের জন্ম দেখার মতো।’
আমি আশা করি, এ গল্পগুলো আমার সকল পাঠককে তাদের স্বপ্ন কি তা বুঝতে সাহায্য করবে এবং তাদের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করতে বাধ্য করবে যা তাদের জাগিয়ে রাখবে।
এ পি জে আবদুল কালাম
anik ranjon
I want read this book…