লক্ষ্মণ সেন (উপন্যাস) – দুর্গাদাস লাহিড়ী
ভূমিকা (লক্ষ্মণ সেন)
“সাহিত্য সংবাদ” মাসিক পত্রে ‘লক্ষ্মণ সেন’ উপন্যাস প্রকাশিত হইতেছিল। “সাহিত্য-সংবাদের” গ্রাহকগণ এবং অন্যান্য অনেকেই ‘লক্ষ্মণ সেন’ সম্পূর্ণ-ভাবে পুস্তকাকারে প্রকাশ করিবার জন্য অনুরোধ করেন। তাঁহাদের আগ্রহাতিশয্য নিবন্ধন ‘লক্ষ্মণ সেন’ উপন্যাস, “সাহিত্য সংবাদে” শেষ হইবার পূর্ব্বেই, পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইল।
‘লক্ষ্মণ সেন’—ইতিহাস নয়—উপন্যাস। তবে ইহাকে ইতিহাস বলিবেন, কি উপন্যাস বলিবেন,—সুধী সহৃদয় পাঠকগণই তাহার বিচার করিবেন। এ কথা বলিবার তাৎপর্য্য এই যে,—এদেশে অনেক ইতিহাস উপন্যাস হইয়া আছে, আবার অনেক উপন্যাস ইতিহাস হইয়া আছে। একখানি ইতিহাস হইতে দুই চারি পংক্তি উদ্ধৃত করিতেছি,—‘লক্ষ্মণেয় বঙ্গদেশের রাজা ছিলেন।…তিনি ভূমিষ্ঠ হইবার পূর্ব্বে তাঁহার পিতা ইহলোক ত্যাগ করেন। প্রসবের সময় নিকটবর্ত্তী হইলে জ্যোতির্ব্বিদগণ বলিল,—‘এ বড় অশুভ সময়; এ সময় ভূমিষ্ঠ হইলে সন্তান কখনও রাজ্য-প্রাপ্ত হইবেন না; কিন্তু যদি দুই ঘণ্টা পরে জন্মগ্রহণ করেন, তাহা হইলে ৮০ বৎসর পর্য্যন্ত নির্ব্বিঘ্নে রাজত্ব করিতে পারিবেন।’…জ্যোতির্ব্বিদদিগের বাক্য শ্রবণ মাত্র রাজ্ঞী তাঁহার পদদ্বয় উর্দ্ধদিকে বাঁধিয়া, মস্তক নীচের দিকে ঝুলাইয়া দিতে আদেশ করিলেন। তৎক্ষণাৎ তাঁহার আদেশ পালিত হইল। তৎপরে শুভ সময় সমাগত হইবামাত্র রাজ্ঞী বন্ধনমোচনের আদেশ দিলেন; লাক্ষ্মণেয় ভূমিষ্ঠ হইলেন।” বলা বাহুল্য, ইতিহাসখানি শিক্ষাবিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্ম্মচারীর লিখিত এবং পাঠ্যপুস্তক মধ্যে পরিগণিত। ইহা যদি ইতিহাস হয়, তাহা হইলে আমাদের এই ‘লক্ষ্মণ সেন’ উপন্যাসও ইতিহাস। মূল বিষয় ইতিহাস-মূলক হইলেও অনেক স্থানে কল্পনার সাহায্য লইতে হইয়াছে বলিয়াই আমরা এই গ্রন্থকে উপন্যাস আখ্যা প্রদান করিয়াছি। ‘লক্ষ্মণ সেন’ উপন্যাসে পাঠকগণ যদি কিঞ্চিৎ সার সামগ্রী প্রাপ্ত হন, তাহা হইলেই পরিশ্রম সার্থক জ্ঞান করিব।
উপসংহারে উল্লেখ আবশ্যক—এই গ্রন্থ-প্রণয়নে ‘সাহিত্য-সংবাদ’ সম্পাদক শ্রীমান প্রমথনাথ সান্যালের সহায়তার বিষয়। এই গ্রন্থের প্রণয়ণে, ইহার শৃঙ্খলা-সাধনে, তাঁহার ভাব, ভাষা ও কল্পনা পর্য্যন্ত অনেক স্থানে সাহায্য করিয়াছে। সুতরাং এই গ্রন্থের সহিত তাঁহার নাম চিতসম্বন্ধযুক্ত হইয়া রহিল। ইতি—
নিবেদক,
শ্রীদুর্গাদাস লাহিড়ী
হাওড়া,
২৬শে বৈশাখ, ১৩২০ সাল।
Leave a Reply