রুদ্র – খাদিজা মিম
ছাপাখানা প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশঃ বইমেলা, ২০২৪
প্রচ্ছদ: ফাইজা ইসলাম
.
উৎসর্গ
— “জাফনা”
যে বলেছিল এবারের মেলায় রুদ্রকে আনো।
.
ভূমিকা
সাল ২০২২। সে বছর আমার মাথায় একজন নায়ক উঁকি দিলো যার গল্পটা হবে আমার অন্যসব নায়কদের চেয়ে ভিন্ন। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল থাকবে না। বাড়াবাড়ি রকমের কাল্পনিক এক চরিত্র হবে সে এবং তার কাহিনী। বংশ পরম্পরায় সে হবে একইসঙ্গে রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী। প্রচন্ড প্রভাবশালী এবং বেপরোয়া একজন নায়ক হবে সে। রাজনীতি কিংবা ব্যবসায়ের মাঠে দাপিয়ে বেড়ানো অমন একটা চরিত্র যখন জীবনে প্রথম প্রেমে পড়ে তখন তার আচরণ, ভাবনাগুলো কেমন হবে কিংবা ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পেতে, আঁকড়ে রাখতে কতটা বেপরোয়া সে হতে পারে তা-ই ভাবতে ভাবতে লিখে ফেললাম সেই গল্প। নায়কের নামেই তার গল্পের নাম দিলাম, “রুদ্র”।
অতি মাত্রায় কাল্পনিক এই গল্পটি পড়তে গিয়ে পাঠক খুঁজে পাবে, অর্থবিত্ত কিংবা ক্ষমতার মাঝে থেকেও একজন মানুষের একাকিত্ব, অস্থিরতা, মানসিক যন্ত্রণা। তার মাঝে দেখতে পাবে কখনো তার রুদ্ররূপ আবার কখনো ভীষণ যত্নশীল, আবেগী একজন পুরুষ!
নায়ক কেন্দ্রিক এই গল্পটা যখন লিখবো লিখবো করছিলাম তখন বারবার ভাবনায় এসেছিল, অতিরিক্ত কাল্পনিক এই গল্পটা লিখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? কিংবা চরিত্রের স্বার্থে, গল্পের স্বার্থে ব্যবহৃত কটু শব্দ কিংবা স্পর্শকাতর দৃশ্যগুলো পাঠকের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে? পরবর্তী সময়ে মনে হলো, ঠিক আছে! বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখেই লিখতে হবে এমন তো কথা নেই! চরিত্র কিংবা গল্পের স্বার্থে যোগ করলাম নাহয় কিছু কটু শব্দ কিংবা সংবেদনশীল দৃশ্য। পূর্বে কি কখনো এমন কিছু হয়নি? হয়েছে তো! তবে রুদ্রের গল্পে কেন নয়? নায়ক যেহেতু মাথার ভেতর উঁকি দিয়েছেই, তাকে আমি লিখবো। সে যেই রূপে উঁকি দিয়েছে সেই রূপেই তাকে লেখা হবে। এর কোনো পরিবর্তন হবে না।
সবশেষে অনুরোধ রইলো, গল্পের প্রতিটি চরিত্র এবং দৃশ্য কাল্পনিক। কোনো ঘটনা যদি কারো জীবনের সঙ্গে মিলে যায়, গল্পের কোনো অংশ অথবা শব্দ কাউকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়, মন্দ লাগার সৃষ্টি করে তবে পাঠক যেন বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন।
রুদ্রের সাথে সময়টা পাঠকের সুন্দর কাটুক। এই কামনায়,
খাদিজা মিম
জানুয়ারি, ২০২৪
.
কাহিনি সংক্ষেপ:
এক জীবনে মানুষ যা চায় তার চেয়ে আরো অনেক বেশি আশীর্বাদপুষ্ট করে স্রষ্টা আমাকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সব আছে আমার, সব! একটা প্রবাদ আছে না- সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম! আমার বেলায় মনে হয় আমি সোনা নয়, হীরের চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নিয়েছি। টাকা, বাবার বিজনেস, প্রপার্টি, ক্ষমতা… কী নেই আমার! সরকার কোন সিদ্ধান্তটা নেবে মন্ত্রীপদে কারা বসবে সেসব আগে চলতো বাবার সিদ্ধান্তে। বাবার পর সবকিছু চলছে আমার সিদ্ধান্তে। বাসায়, অফিসে মন্ত্ৰী এম.পি.দের আনাগোনা আর তাদের তোষামোদি, দশ প্রজন্ম বসে বসে খেয়ে কাটিয়ে দেবার মতো ব্যাংক ব্যালেন্স, দেশ বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিজনেস… এতকিছুর পরও আমি ভালো নেই। আমার সব আছে অথচ আমি এক বিন্দুও ভালো নেই। রক্ত মাংসে গড়া এই শরীরের ভেতরে যে মনটা আছে, সেটা কখন যেন পাথর হয়ে গেল! আমি কাঁদতে ভুলে গেছি, হাসতে ভুলে গেছি। কখনো কখনো নিজেকে এতটাই অনুভূতিশূণ্য লাগে, মনে হয় যেন আমার মৃত্যুতেও আমার কষ্ট হবে না। আমার নিঃশ্বাস বেরিয়ে যাবার সময় একটা সূচ ফুটানোর কষ্টও আমি অনুভব করতে পারবো না। শেষ কবে আমি সুখের মুহূর্ত কাটিয়েছি আমার মনে নেই। শেষ কবে এক ঘুমে আমার সকাল হয়েছে তাও স্মরণ করতে পারি না। এই জীবনে আমার সব আছে, তবুও আমার আরেকবার জন্ম নিতে ইচ্ছে হয়। নতুন এক জীবন পেতে ইচ্ছে হয়। যে জীবন সহজ হবে। অর্থবিত্তের আধিক্য থাকবে না। মাথার রগে রক্তের বদলে এত এত দায়িত্ব বিষাক্ত তরল দ্রব্য হয়ে ছুটে বেড়াবে না। মুক্তি চাই আমি পাথর হয়ে যাওয়া এই আমিটার কাছ থেকে, প্রচন্ড অসুখী এই জীবন থেকে। কেউ কি নেই এই পৃথিবীতে আমাকে এক মুহূর্তের জন্য সুখ দেবে? এক মুহূর্তের জন্য আমি কে সেটা ভুলিয়ে দেবে? সমস্ত কিছু আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে? এক মুহূর্ত, শুধু এক মুহূর্ত! কেউই কি নেই এখানে আমার জন্য?
.
লেখক পরিচিতি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০১৭ সাল থেকে খাদিজা মিমের লেখালেখির শুরু। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, ঢাকায় বেড়ে ওঠা। বর্তমানে স্নাতক সম্পন্ন করে এক পুত্র সন্তানের মা। মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চারটি।
১) বিসর্জন- ২০১৯
২) বাতাসে গুনগুন- বইমেলা ২০২০
৩) মেঘের আড়ালে তুমি- ২০২১
৪) ইট’স কমপ্লিকেটেড- ২০২৩
“রুদ্র” বইমেলা ২০২৪ এ প্রকাশিত লেখকের পঞ্চম বই।
Leave a Reply