হারিয়ে যাওয়া খুনিরা – ৩ (মৃত্যুমেডেল) – দেবারতি মুখোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ : এপ্রিল ২০২১
.
মাননীয় শ্রীযুক্ত ডঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায় মহাশয় সমীপেষু,
নমস্কার স্যার। খুব ইচ্ছা ছিল আপনাকে নিয়ে একটি জীবনাশ্রয়ী উপন্যাস লেখার। যেখানে আপনার প্রাপ্য ছিল সেরা পুরস্কার, যেখানে আপনাকে নিয়ে গর্বিত হওয়ার কথা ছিল আপামর দেশবাসীর, সেখানে আপনার গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মৃত্যুমেডেল।
আমার লেখার মাধ্যমে যদি একজন বাঙালিও আপনার মত আলোকবর্তিকাকে জানতে পারে, সেই হবে আমার সবচেয়ে বড় অর্ঘ্য।
.
‘হারিয়ে যাওয়া খুনিরা’ আমার ‘ট্রু ক্রাইম’ গোত্রের একটি নন ফিকশন সিরিজ যা পাঠকমনে বিপুলভাবে স্থানাধিকার করে রয়েছে। বিদেশে বহুলজনপ্রিয় হলেও বাংলায় এই genre হয়তো কিছুটা হলেও ব্রাত্য। ”মৃত্যুমেডেল” এই ট্রু ক্রাইম সিরিজেরই তৃতীয় খণ্ড।
এই খণ্ডে রয়েছে ছয়টি সত্য ঘটনা, যেগুলো নানা সময়ে দেশের নানা প্রান্তে আলোড়ন তুলেছিল। সিরিজের নিয়ম মেনে প্রতিটি ঘটনারই কেন্দ্রে রয়েছে একেকটি রোমহর্ষক মৃত্যু, যে মৃত্যু সেইসময় জনমানসে সৃষ্টি করেছিল তীব্র প্রতিক্রিয়া। পরে ধীরে ধীরে সময়ের প্রলেপে তা হারিয়ে গিয়েছে ইতিহাসের গর্ভে। হারিয়ে গিয়েছে কাহিনীর কুশীলবরাও।
কিছু মৃত্যু আপাতদৃষ্টিতে আত্মহত্যা মনে হলেও তার প্রেক্ষাপটে হয়ত লুকিয়ে রয়েছে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আবার কিছু মৃত্যু একেবারেই শীতল মস্তিষ্কে হত্যা। তার ছক, নিষ্ঠুরতা জানলে শিহরিত হতে হয়।
গ্রন্থের প্রথম কাহিনী আবর্তিত হয়েছে ডঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে, যিনি দেশের প্রথম টেস্টটিউব বেবি দুর্গার রূপকার হলেও তীব্র গ্লানি, বঞ্চনা ও অপমানে অকালে নিজেকে শেষ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। যেখানে তাঁর জন্য গর্বিত হওয়া উচিৎ ছিল আপামর দেশবাসীর, যেখানে তাঁর ভূষিত হওয়া উচিৎ ছিল একাধিক জাতীয় পুরস্কারে, সেখানে কেন তাঁর কণ্ঠে জুটল এই মৃত্যুমেডেল?
প্রথম কাহিনীর নামেই গ্রন্থের নাম। বাকি কাহিনীগুলোর কোনটার প্রেক্ষাপট সাতের দশক, কোনটা পাঁচের দশক। কোনটা আবার ঘটেছে প্রাকস্বাধীনতাকালে। কোনটায় রাজকুমারী সত্যবতীর বীরত্ব আমাদের বিস্ময়ে মূক করে দেয়, কোনটায় দেবকী ও প্রভাকর দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যায় শোষকের বিরুদ্ধে। কোনটায় আবার অজানা এক যোগীর জন্য অকালে শেষ হয়ে যায় এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্রিটিশ সেনা অফিসারের জীবন।
আমি সমাজ নই। তাই কে ঠিক কে ভুল সেই বিচার করার দায়ও আমার নয়। সেই অধিকারও আমার নেই। প্রতিটি ঘটনার ফ্যাক্ট নেওয়া হয়েছে সংবাদপত্র, নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স ও নানাবিধ প্রবন্ধ থেকে। সেই সহায়কপঞ্জী উল্লিখিতও হয়েছে পরিশেষে। তাঁদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। পূর্ববর্তী দুই খণ্ডের মতোই সত্য ঘটনার আলেখ্যে লেখকের কল্পনায় রচনা করা হয়েছে কাহিনীগুলো। সাহিত্যরসের স্বার্থে এই স্বাধীনতাটুকু লেখকের অধিকার।
আশা করি, হারিয়ে যাওয়া খুনিরা ১, বাবু ও বারবনিতা-র মতো এই তৃতীয় খণ্ডটিও একইভাবে পাঠক হৃদয়কে তৃপ্তি দেবে।
ধন্যবাদ
দেবারতি মুখোপাধ্যায়
Leave a Reply