মা – আনিসুল হক
মা – আনিসুল হক
১ম প্রকাশ ফেব্রুয়ারী বইমেলা
প্রকাশক : ফরিদ আহমেদ, সময় প্রকাশন, ৩৮/২ক, বাংলাবাজার, ঢাকা।
উৎসর্গ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নিযুত শহীদের প্রত্যেকের মা-কে
প্রথম সংস্করণের ভূমিকা
এই কাহিনীর সন্ধান সর্বপ্রথম আমাকে দেন মুক্তিযোদ্ধা নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ৷ তারপর অনেক দিন এই কাহিনী আমাকে তাড়িয়ে ফেরে ৷ অতঃপর আমি একটা উপন্যাস লেখার আশায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে শুরু করি ৷ শহীদ আজাদের আত্মীয়স্বজনের খোঁজ পাওয়ার জন্যে আমি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলাম ৷ বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরেই শহীদ আজাদ সম্পর্কে যাঁরা জানেন, এমন অনেকের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে ৷ তাঁরা আমাকে দিনের পর দিন তথ্য দিয়ে, উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করেছেন ৷ যাঁদের সাক্ষাৎকার আমি নিয়েছি, তাঁদের নামের তালিকা এ বইয়ের শেষে সংযুক্ত করে দিলাম ৷ তাঁদের সকলের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ ৷ আর বেশ কিছু বইয়েরও সাহায্য দরকার হয়েছে ৷ সেই তালিকাটাও এই বইয়ের শেষে থাকল ৷
এই উপন্যাস রচনা করতে গিয়ে আমি নানা জনের কাছ থেকে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা পেয়েছি ৷ ফেরদৌস আহমেদ জায়েদের কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় ৷ সাপ্তাহিক ২০০০-এর সম্পাদক শাহাদত চৌধুরী আমাকে দিনের পর দিন সময় দিয়েছেন, সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন এবং এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি সংশোধন করে দিয়েছেন ৷ তাঁদের কাছে আমার ঋণ জীবনেও শোধ হওয়ার নয় ৷
এই উপন্যাস রচনাকালে এবং ঈদসংখ্যা প্রথম আলো ২০০২-এ এর সংক্ষিপ্ত রূপ প্রকাশের পর অনেকের কাছ থেকেই আমি অনেক উৎসাহ পেয়েছি ৷ বিশেষ করে পাঠকেরা, তাঁরা ঈদসংখ্যা প্রথম আলো পড়ে এবং সাপ্তাহিক ২০০০-এ ১৬ ডিসেম্বর ২০০২-এ প্রকাশিত আমার লেখা প্রচ্ছদকাহিনী শহীদ আজাদের মায়ের সন্ধানে পড়ে ফোনে, চিঠিতে ও সরাসরি কথা বলে আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন ৷ আলাদা করে আমি আর তাঁদের নাম বলতে চাই না, তাঁরা নিশ্চয়ই এই লেখা থেকেই আমার কৃতজ্ঞতাটুকু গ্রহণ করে নেবেন ৷
এখন একটা দরকারি কথা ৷ এই উপন্যাস সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত ৷ তবে এটা ইতিহাস নয়, উপন্যাস ৷ ইংরেজিতে যাকে বলে ফিকশন ৷ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর বেলায় সত্যতা রক্ষার চেষ্টা করেছি পুরোপুরি ৷ যেমন শহীদ আজাদের চিঠিগুলো আসল ৷ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ঘটনাগুলোর বেলায় অনেক জায়গায় কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছে, এটা বোধহয় বলাই বাহুল্য ৷ সব ফিকশনেই এটা নেওয়া হয় ৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মিলি-সংক্রান্ত বিবরণগুলো পুরোটাই বানানো ৷ কিন্তু একটি মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা আজাদ নিজেই লিখেছিলেন তাঁর মাকে লেখা চিঠিতে ৷
এই উপন্যাস কাউকে আঘাত দেওয়ার বাসনা থেকে রচিত নয়, বরং বাঙালির এক বীরোচিত আখ্যানকে তুলে ধরার আশায় লিখিত ও প্রকাশিত ৷ যদি কোনো অংশ কাউকে সামান্যতম অস্বস্তিতে ফেলে, তবে আমি তাঁকে বলব, ওই অংশটুকু সম্পূর্ণ কাল্পনিক ধরে নেবেন ৷
প্রিয় পাঠক, আপনার মঙ্গল হোক, মঙ্গল হোক এই দেশটার ৷
এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা আনিসুল হক
২৪ জানুয়ারি, ২০০৩
.
দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা
মা বই হিসাবে প্রকাশিত হওয়ার পর আমি আরো তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণের সুযোগ পাই ৷ তাঁরা হলেন: শহীদ আজাদের আরেক খালাতো ভাই, আজাদের ধরা পড়ার রাতে গুলিবিদ্ধ মুসলেহ উদ্দিন চৌধুরী টগর, আজাদের আরেক সার্বক্ষণিক সঙ্গী ক্রিকেটার সৈয়দ আশরাফুল হক এবং তাঁদের আরেক বন্ধু ইব্রাহিম সাবের ৷ তাঁদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রাপ্ত কিছু তথ্য ও ঘটনা আমার কাছে অপরিহার্য বিবেচিত হওয়ায় এই বইয়ে তা সংযুক্ত না করে পারলাম না ৷ এর বাইরেও কিছু সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করা হলো, যা হয়তো প্রথম সংস্করণের চেয়ে এই সংস্করণটাকে কিছুটা পরিপূর্ণ করে তুলবে ৷
উপন্যাসের ব্যাপারে আমি একটা পুরনো সূত্র এখনও মাথা থেকে তাড়াতে পারি না-কী বলা হলো তার চেয়েও কীভাবে বলা হলো, সেটা গুরুত্বপূর্ণ ৷
মা বই হিসাবে প্রকাশিত হওয়ার পর সর্বস্তরের পাঠকের কাছ থেকে আমি যে সাড়া পেয়েছি-এরই মধ্যে এটির তিনটি মুদ্রণ হয়ে গেছে, এবং এটি এ বইয়ের চতুর্থ মুদ্রণ-শুধু বিক্রি বড় কথা নয়, পড়ার পর পাঠকের প্রতিক্রিয়াটাই হলো আসল, সেই জায়গায় আমি অভিভূত ৷ শ্রদ্ধেয় জ্যেষ্ঠ লেখক থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্মের রাগী/অনুরাগী সদস্যটিও যেভাবে আমাকে ফোনে/চিঠিতে/ই-মেইলে/আলোচনায়/সাক্ষাতে তাদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন, তাতে আমি সত্যি অনুপ্রাণিত ৷
আমি জানি, এই ভালোবাসা বা ভালো লাগাটা আমার কৃতিত্ব নয়; এটা আসলে দেশের জন্যে, মুক্তিযুদ্ধের জন্যে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে, শহীদদের জন্যে, মায়ের জন্যে, সন্তানের জন্যে মানুষের ভালোবাসারই উৎসারণ ৷
দ্বিতীয় সংস্করণটির পাণ্ডুলিপিও সংশোধন করে দেওয়ার জন্যে দিয়েছিলাম সাপ্তাহিক ২০০০-এর সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শ্রদ্ধেয় শাহাদত চৌধুরীকে ৷ তিনি দ্বিতীয়বারও কষ্ট করে বইখানা পড়েছেন ৷ তারপর একটা মন্তব্য জুড়ে দিয়েছেন : ‘এটা ডকু-ফিকশন ৷ তোমার লেখায় ঢাকার গেরিলাদের চিত্রটা তো চমৎকার এসেছে ৷ আমিও তো অনেক কথা ভুলে গিয়েছিলাম ৷ তোমার উপন্যাস পড়ে মনে পড়ল ৷ তুমি যেভাবে দেখেছ, শুনেছ, সেভাবেই থাকুক ৷ ঘটনা কিন্তু একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা করে ৷ সেইভাবে দেখলে সংশোধন করাটা দরকারি নয় ৷’
তথাস্তু ৷ নানা জনের কাছে শুনে, নানা বইপত্র ঘেঁটে যা পেয়েছি, সেভাবেই থাকুক ৷ তবে কুশীলবদের কারো যদি মনে হয়, বড় রকমের কোনো ভুল রয়ে গেছে, নিশ্চয় ভবিষ্যতে সেটা সংশোধনের চেষ্টা করব ৷
আসলে তো, এরপরও ভুলত্রুটি থাকবে এবং থাকবে বিরূপ সমালোচনাও, তা থেকে আমরা আবারও নিশ্চিত হতে পারব যে আমরা কাজ করছি ৷
আনিসুল হক
১লা এপ্রিল, ২০০৩
Elma
I went to read this book